গল্প-জ্বীন রহস্য,(পর্ব-০২)

গল্প-জ্বীন রহস্য,(পর্ব-০২)
লেখক- Riaz Raj

তাজকিয়া দরজা খোলেনা। ভিতরে সে ভীতুর মতো বসে কান্না করছে। রিয়াজ তাজকিয়াকে ডেকে যাচ্ছে। তাজকিয়া বিশ্বাস করতে পারছেনা যে,এইটা রিয়াজ। হয়তো এইটাও কোনো জ্বীন। রিয়াজের প্রতি ডাকে তাজকিয়া আরো জোরে কান্না করতে লাগলো।

রিয়াজ দরজা ধাক্কানো বন্ধ করে থেমে যায়। তাজকিয়া রুমে বসেই কান্না করছে। তাজকিয়ার মা সহ বাকি মেহমানরাও উপরে আসে। তাজকিয়ার মা রিয়াজকে জিজ্ঞেস করলো।
– কি হয়েছে বাবা। তোমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে?
– না আন্টি। তাজকিয়া আমাকে বাসার নিছে আসতে বলল। আমি নিছে এলাম। এরপর সে আমাকে দেখে হটাৎ ভয় পেয়ে যায়। আমি ডাক দিতেই সে দৌড়ে বাসায় চলে এলো। কিছুই বুঝিনি।
– এইটা কেমন কথা। হুট করে এমন কেন করবে সে।
তাজকিয়ার আম্মুর কথার মাঝেই তাজকিয়া দরজা খোলে। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাজকিয়া সবার সামনে বলল,
– মা,আমি রিয়াজের সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাই। আপনারা নিছে যান।
– কিন্তু কি হয়েছে মা,তা তো বল।
– তোমাদের বলতে পারলে এতক্ষণে তো বলেই দিতাম তাইনা?
– আচ্ছা রাগের কিছু হয়নি। আমরা নিছে যাচ্ছি। তুই কথা বল।

তাজকিয়ার মা কথাটা বলতেই সবাই নিছে নেমে আসে। এদিকে তাজকিয়া রিয়াজকে রুমে ডাকে। রিয়াজ রুমে ঢুকার সাথে সাথে তাজকিয়া দরজা বন্ধ করে দেয়। রিয়াজ কিছুটা বিষ্ময়কর চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে। তাজকিয়া দরজা বন্ধ করে দৌড়ে এসে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে। রিয়াজ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তাজকিয়ার চোখের পানি রিয়াজের সাদা শার্টটা ভিজিয়ে দেয়। রিয়াজও কিছু বলেনা। বলবেও বা কি। যেখানে সে কিছুই জানেনা৷ অজানা রহস্যটা জানার জন্য রিয়াজ তাজকিয়ার দুই ঘাড়ে হাত রাখে। এরপর সামনে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে ” কি হয়েছে? বলবে আমাকে? “। কথাটার জবাব দেওয়ার আগেই তাজকিয়া দেখে,রিয়াজের পিছনে একটা কালো ছায়া দাঁড়িয়ে। তাজকিয়া চোখ বড় বড় করে ফেলে। রিয়াজ তাজকিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝতে পারে সব। এরপর রিয়াজও পিছনে তাকায়,কিন্তু কিছুই নেই পিছনে। তাজকিয়া বলল,” আপনি কালো ছায়াটা দেখতে পাচ্ছেন না?”। রিয়াজ তাজকিয়ার কথায় বলল,” কই,কিসের কালো ছায়া”। তাজকিয়া আবার রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে৷ আবার সে কান্না করতে লাগলো। রিয়াজ তাজকিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” আমি ব্যাপারটা বোঝে নিলাম।নিশ্চয়ই কোনো এক অশরীরী তোমার পিছু নিয়েছে। কিন্তু চিন্তা করার কারণ নেই।আমি আছি তো। এসব জ্বীন ভূত আমি হাতের উপর নাচাই”।

হটাৎ রিয়াজের মুখে এমন কথা শুনে তাজকিয়া মাথা তুলে সোজা হয়।অবাক হয়ে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিয়াজ হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত দিয়ে আবার বলল,” ঠিকই শুনেছো। চলো আমার সাথে”। তাজকিয়ার হাত ধরে রিয়াজ তাকে নিছে নিয়ে আসে। সবাই ওদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ তাজকিয়াকে তার মায়ের কাছে দাড় করিয়ে বলল,” তাজকিয়া কোনো একটা কারণ নিয়ে আপসেট আছে। তাকে একটু দেখে শুনে রাখুন। আমি বোঝাতে চাচ্ছি,তাজকিয়াকে এই দুইদিন আপনার সাথেই রাখুন। বিয়েটা হয়ে যেতে দিন। এরপর আমি সব ঠিক করে নিবো”।

তাজকিয়া রিয়াজের কথা শুনে ভরসা পায়৷ রিয়াজ এই সময়ে তার পাশে দাঁড়াবে,সে হয়তো ভাবেও নি। কিন্তু কথায় আছে,আমরা যা দেখি, তা হয়না। আর যা দেখিনা,সেটা ঘটে যায়। চলুন পরিস্কার করে বলি।
বাসায় গিয়ে রিয়াজ দরজা লাথি মেরে খুলে ফেলে।রিয়াজের আম্মু আচমকা লাফিয়ে উঠে সোফায়। রিয়াজ রাগম্বিত চেহারা নিয়ে দৌড়ে এসে কাচের টেবিলটায় সজোরে লাথি মারে। কাচের টুকরো গুলো পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে যায়। এতে রিয়াজের পা টাও কিছুটা ক্ষত হয়ে যায়। বাসার সবাই রিয়াজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ওর হটাৎ হয়েছে কি। রিয়াজ রাগে গজগজ করে সোজা সোফায় গিয়ে বসে। রিয়াজের মা এসে রিয়াজকে জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে,হটাৎ কি হয়েছে তোর। এইভাবে সব ভাঙচুর করছিস কেন।
– তুমিও পারো মা। বিয়ে ঠিক করার আগে মেয়ের সম্মন্ধে জানা উচিৎ ছিলো না? কি ভূত জ্বীনের সাথে বিয়ে ঠিক করলা আমার।
– ভূত জ্বীন? তা কোথা থেকে এলো।
– ওইজে তোমার পছন্দের মেয়ে তাজকিয়া। মাথায় জ্বীন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তুমি জানো,আমি এসব ভয় পাই। আর তুমি ওমন মেয়ের সাথেই বিয়ে ঠিক করলা। এই বিয়ে ভেঙ্গে দাও।
– কি বলছিস রিয়াজ! বিয়ে কিভাবে ভাঙবো। কালকেই তোর গায়ে হলুদ।
– যে যাইহোক। আমি এই বিয়ে করতে পরবো না। সোজা করে বলতে গেলে আমি এই তাজকিয়াকেই বিয়ে করতে পারবো না। অন্য মেয়ে দেখো
– রিয়াজ,বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। আমরা তাজকিয়াকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যেতে পারি।
– সে যা মন চায় করো। কিন্তু এমন ভূত জ্বীন ওয়ালা মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না,এইটাই ফাইনাল।
– একটা থাপ্পড় দিবো তোকে। কি বলছিস ভেবে বলছিস?
– shut up…

বলেই রিয়াজ সোফা থেকে উঠে সোফায় লাথি মারে। সোফাটা অদ্ভুত ভাবে উড়ে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খায়। আর পরের মুহূর্তেই ভেঙ্গে যায় সোফা। রিয়াজের মা হা করে তাকিয়ে আছে। হটাৎ রিয়াজের কি হলো,আর ওর গায়ে এতো শক্তি এলো কিভাবে। রিয়াজের মা থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজু রিয়াজের মায়ের পিছনে গিয়ে লুকায়। রিয়াজ তার মায়ের দিকে আঙ্গুল তুলে কড়াভাবে বলে,

– এই বিয়ে হবেনা। এইটাই ফাইনাল সিদ্ধান্ত।

চলবে…….?

[ হটাৎ কি হয় রিয়াজের৷ যদি বিয়ে ভাঙ্গার উদ্দেশ্য থাকে তবে তাজকিয়াকে ভরসা দিয়ে এলো কেন? আচ্ছা,এইটা কি রিয়াজ? নাকি রিয়াজ রুপের অন্য কেও। তবে রিয়াজ কোথায়? আর যদি এইটাই রিয়াজ হয়,তবে অদ্ভুত আচরণ সে কেনো করলো। আর তাজকিয়াকে ভরসা দেওয়ার পিছনে রহস্য কি? রহস্যের গভীরতা যেমন বাড়ছে,তার অধীনে গল্পের মোড় একেকদিকে যাচ্ছে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here