গল্পটা_তোমারই,পর্বঃ3

গল্পটা_তোমারই,পর্বঃ3
Writer :Mst_Meghla_Akter_Mim

সকাল সাতটা বেজে গেছে এখনও ঘুমিয়ে আছে মৌ।স্বভাবত ফজরের সময়েই ঘুম ভেঙ্গে যায় মৌ এর। এতক্ষণ মৌ এর ঘুমিয়ে থাকায় নিল খুব চিন্তা করতে শুরু করলেন। কিছু হলো কি না তাও জানেন না, হয়তো জ্বর এসেছে এইসব ভাবছেন। দেখতে দেখতে আর কিছুক্ষণ চলে গেলো। মিস্টার নিল এইবার মৌ কে ডাকতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর মৌ দরজা খুলে দিয়ে আবার খাটে গিয়ে বসলো। মিস্টার নিল দুশ্চিন্তা নিয়ে বললেন,

“এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলে যে? কাল কে তো শরীর খারাপ লাগছিল এখনো কি খারাপ লাগছে?”

মৌ আস্তে আস্তে বললেন, “একটু! মাথা ঘুরিয়ে যাচ্ছে বারবার।” – বলতে বলতে মৌ এর কাশি উঠলো।

কাশি থামিয়ে বললো, “এমনিতে একটু কাশি হয়েছে চিন্তা করো না।”

মিস্টার নিল মৌ এর দিকে তাকিয়ে আর কিছু বললেন না। গরম পানি, লেবু আর নিজে রান্না করে নিয়ে মৌ এর কাছে আসলেন। বাহিরে থেকে এইসব দিয়ে মৌ কে বললেন,

” আজ সারাদিন তো আমি থাকব না নিয়ম করে লেবু আর গরম পানি খাবে। খাইতে না ইচ্ছা হলেও জোর করেই খাবে আর মনের জোর রাখো।”

-ঠিক আছে।(মৌ)

-আর শোনো ফল গুলো বেশি বেশি খেয়ে নিবে বুঝলে? ঠান্ডা লাগিয়ো না। আর একটা কথা তোমাকে বলাই হয়নি।(নিল)

“কি আবার বলা হয়নি?” – মৌ পেয়ারা খাওয়ার চেষ্টা করছে আর বললো।

-আব্বা – আম্মা কে আজ দেশে পাঠিয়ে দেই কেমন? এমনিতে তোমার করোনা পজিটিভ আসছে উনারা তো তোমার সাথেই ছিল। বাহাত্তর ঘন্টা পেরিয়ে গেলে দেশে যাওয়ার জন্য আবার করোনা টেস্ট করতে হবে। তখন যদি কারো করোনা পজিটিভ আসে আমি একা কি করব।(নিল)

মৌ কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, “তাহলে তাই করো। কখন ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবে?আর বর্ডার থেকে কিভাবে একা যাবে?”

-রান্না করে দিয়ে আসলাম আম্মা খেয়ে নিয়েছেন আর আব্বা কিছু খাইতে পারছেন না।সুমন [মোজাম্মেল সাহেবের নাতনি শারমিন এর স্বামী] কে কল করেছি ও এসে নিয়ে যাবে। আমি গিয়ে রেখে আসবো বর্ডার পর্যন্ত আর সুমন আসার পর এইখানে আবার আসব। (নিল)

-আব্বা তো এমনিতেই তেমন কিছু খেতে চান না কিন্তু আরো কি অসুস্থ হয়েছে?(মৌ)

-না মৌ তুমি এতো চিন্তা করো না। বেশি চিন্তা করলে সমস্যা হবে তো।(নিল)

-হুম।(মৌ)

মিস্টার নিল মৌ এর কাছে থেকে যাওয়ার সময় ভাবছেন,”আব্বার কখন যে কি হবে কোনো ভরসা নেই মৌ। তোমার থেকে সত্যি লুকানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তোমার সুস্থ হতে হবে।”

.
ডক্টর এর কাছে যাওয়ার আগে জ্যোৎস্না বেগম মেয়ের কাছে এসে কান্না করতে করতে বললেন,

“মা আজ আমরা চলে যাব, নিজের খেয়াল রাখিস। তোকে রেখে যেতে মন চাইছে না কিন্তু তোর আব্বা অসুস্থ নিল একা দু দিকে কিভাবে সামলাবে।”

মৌ কান্না করতে করতে বললেন,” কান্না করো না মা। দোয়া করো আমি যেনো সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে পারি আর আব্বা কে আবার দেখতে পারি।”

-হ্যাঁ মা।

মৌ আরো কান্নায় ভেঙে পড়ে বললো,” মা তোমাকে হাত জোর করে অনুরোধ করতেছি আমার করোনা হয়েছে এইটা আমার ছেলে মেয়েকে বল না। কাউকেই বল না, কাউকে বললেও ওরা জানতে পারবে।”

-কি বলে বুঝাবো ওদের তাহলে?

নিল এসে বললো,” ওদের আমি বুঝিয়ে বলব। ওদের আম্মুর ডক্টর দেখানো বাকি সেজন্য কয়েকদিন পর যাবো আর আপনি ও তাই বলবেন।”

-হুম।

-তুমি সাবধানে থেকো আব্বা আম্মা কে নিয়ে ডক্টর এর কাছে যাই এখন।(নিল)

মৌ কাঁদতে কাঁদতে বললো ,” হুম।”

মিস্টার নিল উনাদের নিয়ে ডক্টর এর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরোলেন। মোজাম্মেল সাহেব আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, নিজের পায়ে হেঁটে যাওয়ার মতো শক্তি ও নেই। আস্তে আস্তে যেনো জ্ঞান শূন্য হয়ে যাচ্ছেন। হোস্টেল থেকে হাসপাতাল এ যেতে পাঁচ মিনিট লাগবে রিকশায়। কোনোমতে মোজাম্মেল সাহেব কে হাসপাতাল এ নিয়ে গেলেন। ডক্টর এর কাছে গিয়ে যে মানুষ মনের জোরেই কথা বলে সে আজ কিছুই বলছে না। শুধু বলছে,” আমাকে ধরে রাখো কষ্ট হচ্ছে।”

ডক্টর উনাকে দেখেই বললেন,” তাড়াতাড়ি দেশে নিয়ে যান এইখানে কোনো চিকিৎসা করা যাবে না এখন। এই অবস্থায় রোগী কে বিদেশে আনা ঠিক হয়নি।”

নিল বললেন, “actually করোনা এর জন্য আসা যায় নি আগে। আর আমরাও জানি উনার অবস্থা খারাপ। বিগত কয়েক বছর ধরে উনি অসুস্থ আর বাংলাদেশ এর সবচেয়ে বড় ডক্টর ও বলেছেন উনার অবস্থা অবনতির দিকেই। কিডনি ড্রায়ালাইসিস করার জন্য বলেছিলো কয়েক মাস আগে কিন্তু উনি এতে রাজি হোন নি। শুধু বলতেন ইন্ডিয়া তে আসবেন।”

-হুম বুঝতে পেরেছি। এইখানে রাখলে হয়তো জীবিত অবস্থায় উনাকে দেশে নিতে পারবেন না।

-ঠিক আছে ডক্টর।

মিস্টার নিল ডক্টর এর কথা শুনে অনেক ভেঙ্গে পড়লেন। ভাবতে পারেননি ডক্টর এইভাবে না বলবেন! ডক্টর এর কাছে থেকে আবারো শেষ বারের মতো মৌ এর সাথে দেখা করানোর জন্য হোস্টেল এ আসলেন উনারা। মৌ নিল কে জিজ্ঞেস করলেন, “ডক্টর কি বললো?”

মিস্টার নিল কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “কোনো মেডিসিন prescribed করেন নি মৌ। বলেছে তাড়াতাড়ি দেশে নিয়ে যেতে।”

মিস্টার নিল মোজাম্মেল সাহেব কে খুব ভালবাসেন আর মোজাম্মেল সাহেব উনাকে নিজের ছেলের মত ভাবে।

মৌ এর পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে গেলো। কান্না করতে শুরু করলো আর বললো,” আমি আব্বা কে একটু দেখব। ”

মিস্টার নিল মোজাম্মেল সাহেব কে কোলে নিয়ে মৌ কে দেখালেন। মৌ এর চোখ থেকে শুধু পানি পড়ছে। মোজাম্মেল সাহেব আর একবারও মৌ এর কথা বললেন না। জোৎস্না বেগম, মোজাম্মেল সাহেব গাড়িতে বসে আছেন। নিল মৌ কে বললেন,

“কান্না করলে তোমার সমস্যা হবে আর কান্না করো না ।আমরা এখন আসি।”

-হুম।

মৌ দরজায় দাঁড়িয়ে উনার মা বাবা কে দেখছেন আর কান্না করছেন। জ্যোৎস্না বেগম ও কান্না করছেন। উনার মেয়েকে রেখে যেতে কষ্ট হচ্ছে। মৌ হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, “কান্না করো না, সাবধানে যাও আর আমার ছেলে মেয়েকে একটু দেখে রেখো তোমরা। ”

_______________

প্রায় বারো টা বাজে তবুও নিল মিম এর কাছে কল করেনি। মিম ও রাগ করে কল করেনি। মোর্শেদা বেগম উনার মেয়ে শারমিন এর সাথে কথা বলছেন। কেউ জানে না যে আজ মোজাম্মেল সাহেব দেশে আসবেন। শারমিন মোজাম্মেল সাহেব দেশে আসার কথা বললেন তা শুনে মোর্শেদা জিজ্ঞেস করলেন, “আব্বা কি বেশি অসুস্থ?”

-হুম নানু নাকি অসুস্থ আর আন্টি এর কিছু হয়েছে মনে হয় তাই উনারা আসবে না। মিম কে বলেন না যে আন্টি এর কিছু হৈছে তাহলে আবার কান্না কাটি করবে।

কিন্তু মিম এর কানে এই কথাটা ঠিক গেলো কারণ বাহিরে শব্দের জন্য ফোন লাউডে দিয়ে কথা বলছিলেন। মৌ এর কিছু হয়েছে শুনেই মিম তাড়াহুড়ো করে মোর্শেদা বেগম এর হাত থেকে ফোন নিয়ে শারমিন কে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে আম্মুর? আপু বল না।”

-কিছু হয়নি মিম। আন্টি রা পরে আসবে তাই বললো তোমার ভাইয়া (সুমন)।

. শারমিন এর কথা মিম এর কোনো মতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। মাহি তখনই বাড়িতে আসলো। মিম ওকে দেখে কান্না করতে করতে বললো,” ভাই আম্মুর কিছু হয়েছে। সেজন্য ই কথা বলেনি।”

মাহিও কান্না করছে।

মিম মিস্টার নিল এর কাছে কল করতেই উনি কল ধরতেই মিম বললো, “আপনি কোথায়? আম্মুর কি হয়েছে? আম্মুর সাথে কথা বলবো।”

-আমি রাস্তায় আছি তোমার নানী দের সাথে। আর তোমার আম্মুর কি হবে আবার? তোমার নানুভাই এর কয়েকটা টেস্ট এর রিপোর্ট কয়েকদিন পর দিবে আর তোমার আম্মুর ও ডক্টর দেখানো হয়নি তাই কয়েকদিন পর যাবো আমরা। (নিল)

-না আপনি মিথ্যা বলছেন। (নিল)

-সত্যি বলছি। কান্না করো না, আমি হোস্টেল এ গিয়ে তোমার আম্মুর সাথে কথা বলাবো। (নিল)

.
মিস্টার নিল এর কথা মিম এর একটুও বিশ্বাস হলো না। ও কান্না করছে আর মিস রেহেনার কল পেলো তখনই। রেহেনা মৌ এর ছোট বোন। রেহেনার কল পেয়েই মিম বললো,

“খালামনি আম্মুর কি হয়েছে জানো তুমি?”

রেহেনা কান্না করছে আর বলছে,” জানি না আমিও কিন্তু কিছু একটা হয়েছে। তুমি মাহিকে নিয়ে এইখানে চলে আসো।”

-হুম খালামনি। জানো আব্বুর কাছে কল করেছিলাম আব্বু বলেনি কি হয়েছে, আম্মুর সাথে গিয়ে থেকে কথা হয় নি আমাদের। (মিম)

-আমিও কল করেছিলাম কিছু বলেনা। আর তোমার আম্মুর সাথে আমিও কথা বলতে চাইছি কিন্তু বলে যে কোথাও গেছে নাহলে ওয়াশ রুম এ। (রেহেনা)

-তাহলে আম্মুর কিছু তো হয়েছে ই খালামনি। ফোন রাখছি আমরা এখনই তোমার ওইখানে যাচ্ছি। (মিম)

-হুম তাড়াতাড়ি আসো ।(রেহেনা)

চলবে…..

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here