গল্পঃকালো_পাথর,পর্বঃপাঁচ(শেষ পর্ব)
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)
সিয়াম পাথর হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ওদের অবস্থান জানার চেষ্টা করলো আর তখন দেখলো ওর ওই চারজন বন্ধুকে একটা জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।জেলটা অনেকটা পুরনো ধরনের।সিয়াম অনাহিতার হাতে ধরে দুইজন একসাথে চোখ বন্ধ করলো তারপর চোখ খুলতে দেখলো তারা যেখানে দাড়িয়ে ছিলো ঠিক সেখানে দাড়িয়ে আছে।ব্যাপারটা দেখে দুইজনই বেশ অবাক হলো।অনাহিতা বলল
->এই পাথরটা কাজ করছে না কেন?এটার আবার কি হলো?
->সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না।
এমন সময় সেই পাথরের রং একদম কালো থেকে নীল রং ধারন করলো।এটা দেখে দুইজনই বেশ ভয় পেলো।অনাহিতা ভীত চাহনি নিয়ে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল
->এটা হঠাৎ এভাবে রং পরিবর্তন করলো কেন?
->কি জানি।
আর তখন পাথর হতে লম্বা নীল রশ্মি বের হয়ে ওদেরকে সামনের দিক নির্দেশনা করতে লাগলো।সিয়াম বলল
->এটা কি আমাদের বন্ধুরা যেখানে আছে সেখানকার দিক নির্দেশনা করছে?
->মনে হয় এটাই হবে।হয়তো কোনো কারনে এই পাথর আমাদের সেখানে নিয়ে যেতে অক্ষম তাই এভাবে দিক নির্দেশনা করছে।
->ঠিক আছে চলো।
ওরা সামনে এগিয়ে যেতে দেখলো নদীর ধারে একটা বোট রাখা আর পাথরটা সেই বোটের দিক নির্দশন করছে।সিয়াম আর অনাহিতা কোনো কিছু না ভেবে সেই বোটে উঠে পড়লো।পাথর হতে বের হওয়া রশ্মি নদীর উত্তর দিকে নির্দেশ করছে।সিয়াম বোট সেদিকে নিয়ে যেতে লাগলো।অনাহিতা সিয়ামকে বলল
->আচ্ছা আমি দ্বীপে তোমার সাথে যে কাজ করেছিলাম তোমার পায়ের ওপর পা রেখে এটা কি তোমার মনে আছে?
সিয়াম মুচকি হেসে জবাব দিলো
->তোমার এরকম মিষ্টি আদর মনে থাকবে না তা কখনো হয়?খু্ব মনে আছে।তুমি তো প্রায় সুযোগ পেলেই আমার সাথে এমনটা করতে।
অনাহিতা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো।আর তখন অনাহিতা দেখলো ওদের বোট হতে একটু দুরে একটা দ্বীপের মতো দেখা যাচ্ছে।অনাহিতা বলল
->সিয়াম দেখো একটা দ্বীপ না কি যেন দেখা যাচ্ছে?
সিয়াম সেদিকে তাকাতেই সেই পাথর থেকে বের হওয়া রশ্মি ওই দ্বীপের দিকে চলে যাচ্ছে।সিয়াম বোট সেদিকে নিয়ে গেলো।সেখানে আসার পর দেখলো এটা একটা দ্বীপ হলেও এটা একটা পরিত্যক্ত জেলখানা।এখানে আগে অনেক ভয়ানক কয়েদিকে রাখা হতো কিন্তু এটাকে এখন স্থানান্তর করা হয়েছে তাই এটা এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।ওরা বোট থেকে নামলো আর তখন সিয়াম বলল
->এটার ভিতরে ওরা রয়েছে চলো।
ওরা যখনি ভিতরে যাবে তার আগে চারদিক থেকে এক প্রকার কালো ধোঁয়া ওদের ঘিরে ধরলো।ধোঁয়ার কারনে ওরা ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছিলো না।ওরা সেখানে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।সিয়ামকে কেউ ধাক্কাচ্ছে আর ওর নাম ধরে ডাকছে।যখন সিয়াম চোখ খুললো তখন দেখলো ওর সামনে অনাহিতা সহ ওর বন্ধু জাহিদ,রাকিব আর ইসরাত,লিমা বসে আছে।সিয়াম তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো আর বলল
->তোমরা এখানে?
ইসরাতঃ-হ্যাঁ ওই অশরীরী আমাদের এখানে ধরে নিয়ে এসেছে তোমাকে না পাওয়ায়?
সিয়ামঃ-অশরীরী ওরা,?
জাহিদঃ-হ্যাঁ দোস্ত ওদের অনেক অলৌকিক ক্ষমতা আছে।
রাকিবঃ-তোর কাছে কি যেন একটা পাথর আছে সেটা পাওয়ার জন্য এত কান্ড?
সিয়ামঃ-বুঝতে পারছি।
সিয়াম সেই পাথর খুজতে লাগলো কিন্তু পাথরটি কোথাও খুজে পেলো না।
অনাহিতাঃ-মনে হয় আমরা যখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম তখন ওরা পাথরটি নিয়ে নিয়েছে।
লিমাঃ-তোমাদের ওরা জ্ঞান হারানো অবস্থায় এখানে এনেছে।
সিয়ামঃ-আচ্ছা তোমরা কি জানো ওই পাথর দিয়ে ওরা কি করবে?
এমন সময় কেউ একজন বলে উঠলো,,”সেটা ওরা কি করে বলবে,এটা তো বলবো আমি”।
কথা শুনে সিয়াম উঠে দাড়ালো আর ওর সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে বলল
->খুরশেদ আংকেল আপনি?
->হ্যাঁ বাছা আমি।আমি এই পাথরটা পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছি আর সেটা তুমি সহজে নিয়ে নিলে তাই তো এটা করতে বাধ্য হলাম।
->কিন্তু আপনি এই পাথর সম্পর্কে জানেন কি করে?আর এই পাথর দিয়ে আপনি কি করবেন?
->ওই যে মমিটা দেখেছো সেটা কোনো মৃত মমি নয়।সে ঘুমন্ত অবস্থায় বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে।এটা এমন এক রাজার মমি যে অনেক বছর এক শক্তি লাভ করেছিলো যার মাধ্যমে সে সমস্ত পিশাচ শক্তি কে নিজের আয়ত্বে এনেছিলো কিন্তু সে সময়কার কোনো এক শুভ শক্তিধারী রাজা এসে তাকে আটকে দেয় আর এরকম চিরনিদ্রায় পাঠিয়ে এমন জায়গায় ওকে পুতে দেয় যে কেউ তাে খুজে পায়না।তবে ওর জাগ্রত হওয়ার শর্ত হলো এই মমিকে একমাত্র সে খুজে পাবে যে এই রাজার মতো হওয়ার যোগ্য।আর খুজে পাওয়া মাত্র সেই পাথর দিয়ে ওকে স্পর্শ করা মাত্র ওর পুরোনো সৈন জাগ্রত হয়ে যাবে আর তার হয়ে কাজ করবে যে ওকে খুজে পেয়েছে।তবে আমি নিজে জাগ্রত করার আগে তুমি ওর সৈন্যদের জাগ্রত করেছো।
সিয়াম এখন বুঝতে পারছে যে ওই পাথর ওই মমির গায়ে পড়ে যাওয়ায় এরা জাগ্রত হয়ে ওর পিছু পড়েছে।সিয়াম বলল
->আপনি এখন কি করবেন?
->আমি আমার রক্ত আর ওই পাথর দ্বারা মমিটাকে জাগ্রত করবো।তারপর সেটাকে আমার শরীরে প্রবেশ করাবো আর তখন আমি হয়ে যাবে এই দুনিয়ার শক্তিধর।
এটা বলে খুরশেদ হাসতে হাসতে চলে গেলো।সিয়াম ভাবছে এখন যে করে হোক এটা করা হতে আটকাতে হবে নয়তো খুরশেদ এটা করার পর একজন সাধারন মানুষের পক্ষে ওকে আটকে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
রাকিবঃ-দোস্ত ওই বেটাকে আটকাতে হবে?
সিয়ামঃ-হুমম।তার আগে এখান থেকে বের হওয়াটা জরুরি।
কি করে এটার তালা খুলে বের হবে বুঝতে পারছে না।তখন অনাহিতা বলল
->চুলের ক্লিপ দিয়ে তালা খুলতে পারবে কে?
জাহিদঃআমি খুলতে পারবো।
অনাহিতা দেরি না করে চুলের ক্লিপ খুলে জাহিদের হাতে দিলো।জাহিদ একটু চেষ্টা করতেই তালা খুলে গেলো।ওরা ছয়জন বেরিয়ে এসে দেখলো খুরশেদ ওর হাত কেটে ওই মমিকে রক্ত খাওয়াচ্ছে আর তখন সেই মমির শরীর হতে বেগুনি আলো বের হচ্ছে।আর ওদের চারদিকে কালো মানুষ গুলো ঘিরে ধরে আছে আর গোঙ্গানির মতো করছে।সিয়াম ওর সব বন্ধুদের নিজেদের প্লান মতো কাজ করতে বললো।
খুরশেদ মমির বুকে ওই পাথর রাখতে যাবে আর তখন রাকিব একটা ইট ছুড়ে মারলো খুরশেদের মাথায় আর তখন খুরশেদের হাত থেকে সে পাথর মাটিতে পড়ে গেলো।আর তখন একলাফে সিয়াম আর জাহিদ দুইজন রড নিয়ে ওই মমির সামনে এসে মমির বুকে রড ঢুকে দিতেই ওই মমি ভয়ানক চিৎকার করে উঠলো।মমির চিৎকারে সকলে নিজেদের কান চেপে ধরলো।আর প্রতিটা কালো পোশাকে থাকা পিশাচ অদৃশ্য হয়ে গেলো।এমনকি মমির গায়ে আগুন ধরে গেলো।যেটা দেখে খুরশেদ রেগে গেলো পরক্ষণেই হাসতে হাসতে বলল
->মমি মারা গেছে তো কি কি হয়েছে পাথরটা তো আছে এটার ভেঙ্গে আমার শরীরে এর ক্ষমতা প্রবেশ করাবো।
খুরশেদ পাথর নিতে যাবে তার আগে সেখান থেকে অনাহিতা পাথর তুলে নিলো আর জাহিদ,রাকিব মিলে খুরশেদকে চেপে ধরলো।এরপর সিয়াম পাথরটার সাহায্য নিজেদের জায়গায় ফিরে এলো।
ফিরে এসে সিয়াম পাথরটা ভেঙ্গে ফেলে দিলো যাতে আর কেউ এটার ব্যবহার করতে না পারে।খুরশেদ অনেক বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত ছিলো যার কারনে পুলিশ ওকে গ্রেফতার করে।সিয়াম খুরশেদের তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় সে এই যাত্রায় বেঁচে যায়।
বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলো।সিয়াম আর অনাহিতাকে দুইজনের পরিবার থেকে মেনে নেওয়া হয়েছে।সিয়াম কিছুদিন হলো ছোটো খাটো একটা ব্যবসা শুরু করেছে।আর আজ ওদের দুই ফ্যামিলি হতে বেশ ধুমধামের সাথে আবার বিয়ে দেওয়া হলো।বাসর ঘরে সিয়াম আর অনাহিতা বসে আছে।অনাহিতার মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব।সিয়াম বলল
->আমাদের দুই বার বিয়ে হলো অথচ একবারো বিলাই মারতে পারলাম না।কিন্তু এবার কিন্তু আর ছাড়ছি না।
অনাহিতা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালো।সিয়াম আর কোনো সুযোগ না দিয়ে অনাহিতার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললো।
(সমাপ্ত)