গল্পঃকালো_পাথর,পর্বঃচার
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)
সিয়াম অনাহিতাকে নিয়ে একটা হোটেলরুম বুক করে।ওদের বন্ধু-বান্ধবিরাও ওদের সাথে আসে।অনাহিতা বিছানার ওপর বসে আছে আর সিয়াম দাড়িয়ে আছে।ওকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে বলে অনাহিতা ওর কাছে এসে বলে
->আজকের এইরকম একটা দিনে তোমাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
সিয়াম অনাহিতার দিকে তাকিয়ে বলে
->অনি জানো আমি এমন একটা জিনিস খুজে পেয়েছি।যেটার অনেক অলৌকিক ক্ষমতা আছে।
অনাহিতা ভ্রু কুচকে সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে
->কি জিনিস সেটা?
সিয়াম তখন সেই কালো পাথর বের করে অনাহিতার হাতে দিয়ে বলে
->এটাই সেই জিনিস।এটার অনেক ক্ষমতা আছে।
->যেমন?
->এই পাথরের সাহায্যে তুমি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সহজে টেলিপোর্ট হয়ে যেতে পারবে,এটার মাধ্যমে তুমি যেটা দেখতে চাও সেটা স্মরন করে চোখ বন্ধ করবে তাহলে তুমি সেটাই দেখতে পারবে।আর যেখানে তুমি যেতে সেখানে যেতে পারবে তবে শর্ত হলো,তুমি সে জায়গায় যাওয়ার সময় যদি অন্য কিছু চিন্তা করো তাহলে এটার প্রভাব হয় তোমার ওপর পড়বে নয়তো তোমার বিপরীতে যে থাকবে তার ওপর পড়বে।
->সত্যি?আমি কি তাহলে দেখতে পারি এটা?
->হুম দেখো।
অনাহিতা সিয়ামের হাত থেকে সেই পাথর নিয়ে ওর বাড়ির কথা স্মরন করে চোখ বন্ধ করলো আর তখন দেখতে পেলো,”অনাহিতার মা-বাবা বেশ চিন্তায় আছেন তবে তারা অনাহিতাকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।কিন্তু অনাহিতার ফুফাতো ভাই সৌরভ যার সাথে ওর বিয়ের হওয়ার কথা ছিলো সে বেশ রেগে আছে।রীতিমতো সে অনাহিতার মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে”।
অনাহিতা চোখ খুললো সে বিশ্বাস করতে পারছে না এটা কি করে হতে পারে?তবে সৌরভের ওপর অনাহিতার বেশ রাগ হচ্ছে।সিয়াম বলল
->কি হলো অনাহিতা কোনো সমস্যা?
->না কাজ হয়েছে।সত্যি এটা একটা অসাধারন জিনিস।কোথায় পেয়েছো এটা?
সিয়াম বলতে যাবে এমন সময় ওর বন্ধু জাহিদ বাইরে থেকে বলল
->মাম্মু সব ঠিক ঠাক আছে তো?
সিয়াম একটু রেগে বলল
->ধুর বেটা যা তো এখন।
এমন সময় সিয়ামের ফোন বেজে উঠলো।সিয়াম ফোন হাতে নিয়ে দেখলো জাহিদ ফোন দিয়েছে।সিয়াম বিরক্ত হয়ে জোরে বলল
->ওই শালা আবার ফোন দিয়েছিস কেন?
কিন্তু এবার কোনো উত্তর এলো না দরজার বাইরে থেকে।এদিকে জাহিদ একের পর এক ফোন দিয়ে চলেছে।সিয়াম ভাবলো হয়তো ওদের বিরক্ত করছে তাই ধরছে না।একটু বাদে সিয়ামের ফোনে মেসেজ এলো।সিয়াম মেসেজ অপেন করতে দেখলো”রাকিব লিখেছে,সিয়াম বাঁচতে চাইলে অনাহিতাকে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে আয়।আমাদের রুপ নিয়ে তোদের ওখানে অন্য কেউ ঢুকেছে”।
সিয়াম মেসেজ দেখে ভাবতে লাগলো এটা ওরা কি বলছে,ওদের রুপ নিয়ে ঢুকেছে মানেটা কি?এমন সময় কেউ দরজা ধাক্কাতে লাগলো।অনাহিতা বলল
->এই সময় কে আবার দরজায় আসলো।
সিয়াম অনাহিতার হাতে সেই পাথর দিয়ে বলল
->এটা ধরে থাকো এটা কাউকে দিবে না যত যাই হয়ে যাক বুঝতে পেরেছো।আমি দরজা খুলছি।
->আচ্ছা।
সিয়াম গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলো ওর সামনে তিনজন কালো পোশাক পড়া লোক দাড়িয়ে আছে।তাদের চোখ থেকে বেগুনি রংয়ের আভা বের হচ্ছে।হাতে কুড়ালের মতো এক ধরনের অস্ত্র।সিয়াম বলল
->কারা আপনারা?
তারা কোনো জবাব না দিয়ে সিয়ামের গলা চেপে ধরলো।আর বলতে লাগলো
->ওই পাথর কোথায়?
অনাহিতা দৌড়ে এসে বললো
->পাথর আমার কাছে আছে নিন।তবু ওকে ছেড়ে দিন।
লোকগুলো সিয়ামকে ছেড়ে দিয়ে অনাহিতার দিকে আসতে লাগলো।আর তখন অনাহিতা পাথর সিয়ামের দিকে ছুড়ে মেরে ওই লোক গুলোর পাশ কেটে সিয়ামের কাছে গেলো।সিয়াম অনাহিতার হাত ধরে বাইরে দিকে পালিয়ে আসতে লাগলো।আসার সময় দেখলো হোটেলের সব লোক অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে।সিয়াম দেরি না করে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো অনাহিতাকে নিয়ে।বাইরে আসতেই দেখলো।জাহিদ,রাকিব,ইসরাত আর লিমা দাড়িয়ে আছে।জাহিদ বলল
->দোস্ত তোদের কাছে নাকি কি যেন একটা পাথর আছে সেটা নেওয়ার জন্য ওরা এসেছে।
ইসরাত বলল
->ভুলেও এটা ওদের হাতে দিও না কিন্তু ওরা এটার সাহায্য ওই পুরাতন সেই মমিটাকে জাগিয়ে তুলবে।
সিয়াম তখন বলল
->তোমরা এটা কি করে জানলে?
তখন রাকিব বলল
->আমরা এসব বলতে শুনেছি।তাই তোরা আর দেরি না করে এখান থেকে চলে যা।
->তোরা সাবধানে থাকিস কেমন?
->আমাদের চিন্তা করিস না আমাদের কিছু হবেনা।
সিয়াম আর কথা না বাড়িয়ে অনাহিতাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলো।অনাহিতা পিছনে তাকিয়ে দেখলো সেই লোক গুলো শূন্য ভাসতে ভাসতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।সিয়াম অনাহিতাকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করলো আর তখন ওরা চারদিক থেকে ওদের দুইজনকে ঘিরে ধরলো।ওদের মধ্যে থাকা একজন বলল
->বাঁচতে চাইলে পাথর আমাদের হাতে দে নয়তো তোরা সহ তোর বন্ধুরা মারা যাবে।
সিয়াম তখন পাথর দিতে চাচ্ছিলো আর ঠিক সেই সময় অনাহিতা ওই পাথরের ব্যবহার করে আর সাথে সাথে ওরা টেলিপোর্ট হয়ে ওই দ্বীপে এসে পড়ে।কিন্তু তাড়াহুরার কারনে অনাহিতা পাথরের ভুল ব্যবহার করে যার কারনে সিয়াম সাময়িক স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে।আর বেশ কয়েকদিন অজ্ঞান অবস্থায় থাকে।এমন অবস্থার কারনে অনাহিতা আর পাথরের ব্যবহার করেনি।তাই সে তার নিজের মতো করে সিয়ামের স্মৃতি ফেরানোর চেষ্টা করেছিলো।
বর্তমানে,,,
সিয়াম আর অনাহিতা জঙ্গলের মধ্যে হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতে দুইজন জঙ্গল থেকে বের হয়ে একটা নদীর সামনে এসে দাড়ালো।নদীটা বিশাল বড় আর খরস্রোতা ছিলো।অনাহিতা এখানে এসে বসে পড়লো।সিয়াম অনাহিতার কাছে বসে ওকে বলল
->তুমি ঠিক আছো তো অনি?
->হুমম কিন্তু শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে।
->আচ্ছা এসো একটু বিশ্রাম নিই।
সিয়াম একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসলো।অনাহিতা সিয়ামের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।সিয়াম অনাহিতার মাথা হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।একটু বাদে অনাহিতার চোখে ঘুম এসে যায়।বসে থাকার কারনে সিয়ামও ঘুমিয়ে পড়ে।যখন সিয়ামের ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখে অনাহিতা এখনও ঘুমিয়ে আছে।একদম বাঁচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।সিয়াম অনাহিতাকে দেখে হাসলো।সিয়াম নড়ে উঠতে অনাহিতার ঘুম ভাঙ্গলো।অনাহিতা সিয়ামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।সিয়াম বলল
->আমার বউটার ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে?
->হু।আমার ক্ষিদে পেয়েছে?
->উমম তাহলে এখন কি খাবে বলো?এখানে তো খাওয়ার কিছু নেই।
->আছে?
->কি?
অনাহিতা সিয়ামের ঠোঁটের দিকে ইশারা করে দুই হাত দিয়ে ওর চোখ ঢেকে ফেললো।সিয়াম অনাহিতার গাল টেনে বলল
->ওরে দুষ্টু রে?
->এসব ছাড়ো এখন খাওয়াও বলছি।তোমার এই পাথরটার কারনে আমার বিয়ে নিয়ে যত স্বপ্ন ছিলো একটাও পুরন করতে পারিনি।এখন না খাওয়ালে খবর আছে।
->ওকে ওকে খাওয়াবো।
সিয়াম অনাহিতার ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
সিয়াম নদীর ধারে দাড়িয়ে আছে।পাথর হাতের মধ্যে নিয়ে চোখ বন্ধ করলো ওর বন্ধুদের অবস্থান জানার জন্য।তখন দেখলো ওদের চার বন্ধু একটা অন্ধকার রুমের মধ্যে পড়ে আছে।ওদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে।খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই তারা।আর তখনি সিয়াম চোখ খুললো।অনাহিতা বলল
->কিছু জানতে পারলে?
->হুমম পেরেছি।ওদের অবস্থা খু্ব খারাপ।ওদের ওপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে।
->কি বলছো তুমি?এখন ওরা কোথায় আছে?
দেখছি।সিয়াম চোখ বন্ধ করে আবার ওদের অবস্থান জানার চেষ্টা করলো আর তখন দেখলো,,,
চলবে,,,,,,।