খুব_ভালোবাসি_তারে,পার্টঃ4

খুব_ভালোবাসি_তারে,পার্টঃ4
লেখক_সাব্বির_আহাম্মেদ

__দেখতে দেখতে একটি সপ্তাহ কেটে গেলো। রাত পোহালেই বিয়ে। বিয়েকে ঘিরে তেমন কোন ঝামেলা নেই। নেই এতো চোখ ধাধানো কোন আয়োজন। একেবারে সবকিছুই সাদামাটাভাবে করা হচ্ছে।

__আত্মীয়স্বজনের অনেকেই ইতোমধ্যে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছেন।

__ মা’ই সবাইকে আসতে বলেছেন। গোটা বাড়ি এতদিন পর আত্মীয়স্বজনদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠলো। শেষ বাবা যখন মারা গিয়েছিলেন সেদিন সবাই এসেছিলো। আর আজ আসলো।

__ আমাদের মানুষের জীবনচক্র আসলে কতইনা অদ্ভুত! আমরা মোট বিশজন যাব বলে তাঁদেরকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। তাই তিনটি গাড়ি ঠিক করা হলো। এগুলো মামাই দেখেছেন।

__ আমি ঐ গায়ে হলুদের নামে অন্যের হাতে গোসল করিনি, হলুদও মাখিনি। করতেও দিইনি কোন রং মাখামাখি। সবকিছু একদম সিম্পলিই হচ্ছে। অবশ্য, এনিয়ে আমার সামনে আপত্তি তুলার সাহস কেউ এসে দেখায়নি।

__ আশা করছি আর কেউ দেখাবেওনা কারণ, ওরা আমায় খুব ভালো করেই চেনে।

____সবকিছুই প্রস্তুত। ঘরে আগত আত্মীয় মেয়েলোকরা তাদের সাজসজ্জার বিষয়াবলী নিয়ে ব্যস্ত। এটা তারা করতেই পারে। ঘড়ির কাটা তখন রাত এগারোটায় পৌঁছে গেছে। ছাদে নিরিবিলি একা বসে আছি আমি। ভাবলাম, তানহাকে একটা কল দিলে কেমন হয়।

__ পরক্ষণেই আবার ভাবলাম নাহ, কল দিবনা একটা টেক্সট পাঠানো যাক। কিন্ত কি লিখবো? মনে মনে নিজেকেই নিজে বললাম, ‘কিরে রাফাত, কাল যে মেয়েটি তোর বউ হতে চলেছে তাকে তুই কল দিতে আর মেসেজ পাঠাতে এত ভাবছিস! তোকে দিয়ে কিছুই হবেনা। বলদ কোথাকার!’ আবার বলি, ‘নাহ সাহস করে একটা মেসেজ পাঠিয়েই দেখনা কি হয়!’ মনের কথা শুনলাম। দিলাম পাঠিয়ে মেসেজ;

মেসেজে লিখলাম,
-আসসালামুআলাইকুম। সজাগ আছেন কি?

___মেসেজ পাঠিয়েই ভাবছি, ইস! কি করলাম এটা! কেন মেসেজটা পাঠালাম। কি না কি ভেবে বসে কে জানে। যদি ভাবে, দেখো, কাল বিয়ে আর আজ এত রাতে মেসেজ পাঠিয়েছে। যেন তার আর তর সইছেনা! আবার নিজেকে নিজে বললাম, কুল রাফাত কুল! এত ভয় পেলে চলবে বল! মেসেজ পাঠিয়েছিস বেশ করেছিস এবার ওয়েট কর। দেখ কোন রিপলাই আসে কিনা।

__ অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি। মিনিট দশেক পার হয়ে গেলেও কোন রিপলাই এলোনা। ভাবলাম, হয়ত ঘুমিয়ে পরেছে ও।

__ হতাশ হলাম কিছুটা। কিন্ত কিছুই করার ছিলোনা আমার। এভাবে আরো বেশ কিছু সময় কেটে গেল। ঠিক করলাম ঘুমোতে যাব এমন সময় টুংটাং শব্দ করে উঠলো ফোনটা। আঁতকে উঠলাম আমি। হাতে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়েই দেখি তানহা মেসেজ পাঠিয়েছে,

-ওয়ালাইকুমুসসালাম। বান্ধবীরা এসেছে। ওদের সাথেই ছিলাম এতক্ষণ। কি করেন আপনি?

আমি,
-এইতো ছাদে বসে আছি। খেয়েছেন রাতে?

তানহা,
-জ্বী খেয়েছি। আপনি?

আমি,
-জ্বী, খেয়েছি।

তানহা,
-এত রাতে ছাদে বসে কি তারা গুনছেন নাকি?

আমি,
-একা একা কি আর তারা গননা করা যায় বলুন! কেউ থাকলে না একটা কথা ছিলো।

তানহা,
-আচ্ছা, তা তারা গুনে দিলে কি দিবেন শুনি!

আমি,
-এখনই বলতে পারছিনা। কেউ তারা গুনে দিক আগে পরে দেখা যাবে।

তানহা,
-অনেক রাত হয়েছে, যান, ঘুমোন গিয়ে।

আমি,
-আচ্ছা ঠিক আছে। আপনিও।

তানহা,
-আচ্ছা, আল্লাহ্ হাফেজ।

আমি,
-আল্লাহ্ হাফেজ।

___অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি। প্রতিটি মানুষের জীবনেই এই দিনটি একটি বিশেষ দিন। বিয়ে, হ্যা বিয়ের দিন। আমাদের খেয়াল হলো জুমার নামাজ পড়বো নরসিংদির বড় মসজিদে গিয়ে।

__ সে অনুযায়ী বেলা বারোটার দিকে রওয়ানা হলাম। আমাদের বাড়ি থেকে গাড়ি দিয়ে মাধবদি বাজারে আসতে এক মিনিটও লাগেনা। বাজারে প্রবেশ করবো অমনি ড্রাইভার হার্ডব্রেক চেপে ধরলো। থমকে উঠলাম সবাই। ব্যাপার কি?

___ দেখি, হিজরা সম্প্রদায়ের একদল লোক এসে সবগুলো গাড়িকে ঘেরাও করে ফেলেছে। ছন্দের তালে তালে কি জানি কি সমস্বরে বলছে সবাই আর হাত তালি দিচ্ছে। সাথে থাকা ছোটভাই আতিককে

-আতিক, দেখতো নেমে ওরা কি চায়।

আতিক নেমে গিয়ে ওদের সাথে কথা বলে এসে বললো,
-ভাই, ওরা দশ হাজার টাকা দাবি করেছে। না দিলে নাকি গাড়িগুলোকে যেতে দিবেনা। কি করবা?

চলেব….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here