খুব ভালোবাসি তারে,পার্টঃ2

খুব ভালোবাসি তারে,পার্টঃ2
লেখক:সাব্বির আহাম্মেদ

_প্রায় মিনিট পনেরো বাদে মা ফিরে এলেন। মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে আমি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।

__মুখে কোন কথা নেই আমার। যা জিজ্ঞেস করার মাকে চোখের ভাষায় জিজ্ঞেস করে নিয়েছি। মাও তাঁর চাঁদ মুখের মুচকি হাসিতে উত্তর জানিয়ে দিলেন, ‘ভাবিসনা খোকা, মেয়েটা একদম মাশাআল্লাহ্! খুব পছন্দ হয়েছে আমার।’ মায়ের হাসি দেখে আমার তো তাই মনে হলো। হ্যা, আমরা ধারণাই সঠিক। কাছে এসে চুপিচুপি মা আমাকে এবার সেটা বলেই নিশ্চিত করলেন।

এবার কাঁপা কাঁপা স্বরে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-সবকথাই কি সেরে ফেলেছ নাকি?

মা সোফায় বসতে বসতে বললেন,
-না, মেয়েটি তোর সাথে কথা বলতে চায়। শুধু কি আমাদের তাকে পছন্দ করলে হবে? তারও তো একটা পছন্দের ব্যপার আছে, মতামতের ব্যপার আছে তাইনা?

আমি মাথা নেড়ে বললাম,
-হুমম, তা তো অবশ্যই আছে। তো আমার সাথে মেয়েটি আবার কিসের কথা বলবে?

মা তাঁর চোখদুটো বড় বড় করে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-বলদ কোথাকার! মেয়েটা তোর সাথে কি কথা বলতে চায় সেটা কি আমাকে বলেছে? নিশ্চয় মেয়েটা তোকে এটা-সেটা জিজ্ঞেস করবে। অনেকটা ইন্টারভিউয়ের মতোই ধরে নিতে পারিস। এতে তোকে পাশ করতেই হবে।

__এই মেয়েকেই আমি আমার ঘরের বউ হিসেবে চাই। আর যদি সেটা তোর কারণে সম্ভব না হয় তাহলে চিরকুমার হয়ে থাকতে হবে তোর বলে দিলাম আমি।

আরে বাবা বাবারে বাবা! এতো দেখছি সুনামির চেয়েও ভয়ংকর কিছু। এটা তো রীতিমতো টর্চারের শামিল। অতীতেও মা আমাকে আদর করে বলদ, ছাগল, গাধা ইত্যাদি আরো কতো কি বলে গালি দিতো কিন্ত এত সিরিয়াস হতোনা।

_আজ তাঁকে এত সিরিয়াস দেখে আমি ইতোমধ্যেই নার্ভাস ফিল করতে শুরু করলাম। জানিনা সামনে কপালে কি আছে। তবে, ভালো কিছু হলে তো ভালোই, আর খারাপ কিছু হলে ঠিক কি হতে পারে সেটা ভেবেই আমি প্রায় নাজেহাল।

চুপচাপ বসে আছি আমি। সামনে মা বসা। এমনসময় ঐ ভদ্রমহিলা আসলেন। মাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন,
-তানহা আসতে চাইছে। আপনি কি এখানেই থাকবেন নাকি ওরা ওরাই কথা বলবে?

মা মুচকি হেসে উনাকে বললেন,
-অসুবিধে নেই, আমরা বাইরে বসি আর ওরা নিজেদের মধ্যে যা কথা বলার বলে নিক।

মা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন এবার। আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-যা জিজ্ঞেস করে অনেস্টলি উত্তর দিস। মিথ্যা বলতে যাসনা। আর তোরও কোনকিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করে নিস। এটি সারাজীবনের বিষয়। বি কেয়ারফুল।

মায়ের মুখে কথাগুলো শুনে খানিকটা ভরসা পেলাম। চলে গেলেন মা। আমি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কয়েক মুহুর্ত পর দরজায় কেউ নক করলো। দরজা খোলাই ছিলো। তবুও নক করলো। আমি সেদিকে তাকাতেই সে বলে উঠলো,

-ভেতরে আসতে পারি?

আমি উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। বললাম,
-জ্বী, আসুন!

মুখের দিকে তাকানোর সাহস করতে পারলামনা আমি। পায়ের দিকেই তাকালাম। নাহ, কিছুই দেখা গেলোনা। সেলোয়ারটা একেবারে মেঝেতে ঘেঁষে ঘেঁষে আসছে। সোফার কাছে আসতেই বললাম,
-বসুন!
বসলো সে। আমিও বসলাম। সেলোয়ার-কামিজ পরে এসেছে ও। মাথায় ওড়না দেয়া। মুখটা দেখা যাচ্ছেনা। বুঝে ফেললাম, ‘অযথাই দেখার বৃথাই চেষ্টা করে কোন লাভ নেই।

___নিজে থেকে দেখতে না দিলে দেখার সুযোগ পাবোনা।’ গতকাল ফুচকা খাওয়ার সময় মুখটা ভালোভাবে দেখতে পারিনি। তবে, যেটুকুই দেখেছিলাম সেটুকু মাশাআল্লাহ্ একেবারে লাজওয়াব।

চুপচাপ বসে রইলাম আমি। এমন সময় নিরবতা ভেঙে দিয়ে সে বললো,
-আপনার নাম কি?

আমি,
-সাব্বির আহাম্মেদ ( রাফাত) । আপনার নাম?

সে,
-সানজানা মেহজাবিন তানহা। কি করেন আপনি?( তানহা বললো)

আমি,
-সরকারি চাকুরী। সেলারি….

সেলারির কথা বলতে চাইতেই তানহা থামিয়ে দিলো আমায়। বললো,
-থাক, সেলারির কথা বলতে হবেনা। ঘুষ খান? কিছু মনে করবেননা আমার কথায়। আজকাল তো সরকারি চাকরি পেতে হলে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়, লাখ লাখ টাকা ঘুস দিতে হয় আরো নানান অসদুপায়ে সরকারি চাকরীতে লোকেরা ঢুকে।

__আপনিও কি সেভাবে ঢুকেছিলেন?

আর কর্মক্ষেত্রে ঘুষের বিনিময়ে কোন কাজ করেন কিনা?

আমি এবার বুক ফুলিয়েই বললাম,
-না, আল্লাহর রহমতে আমাকে তেমন কিছুই করতে হয়নি। নিজের যোগ্যতায় আর স্বচ্ছভাবেই চাকরীতে ঢুকেছি। আর ঘুষ নিয়ে কোন কাজ করিনা।

তানহা,
-আলহামদুলিল্লাহ্। খুশি হলাম। তা, ধুমপান করেন?

আমি,
-মাঝেমধ্যে চলে একটু-আধটু…..

তানহা,
-এই একটু-আধটুও আর চালানো যাবেনা। রাজি?

আমি,
-জ্বী, রাজি।

তানহা,
-নামাজ পড়েন?

আমি,
-পড়ি তবে, নিয়মিত না।

সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
তানহা,
-অফিস টাইমে কি নামাজ পড়তে দেয়না?( তানহা জিজ্ঞাসা করলো.)

-আমি, বললাম দেয়।

তানহা,
-আজ আর এখন থেকে নামাজে নিয়মিত হতে হবে। পারবেন?

আমি,বললাম,
-ইনশাআল্লাহ্ পারবো।

-আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করতে পারেন। ( তানহা বললো.)

আমি,বললাম,
-না, আমার আর জিজ্ঞেস করার কিছুই নেই। তবে, আপনি তো আমাকে এখনো দেখেনি নি। সেটার কি হবে?

তানহা এবার তাকালো আমার দিকে। ওর চেহারায় নজর পড়তেই মনে হলো, এ যেন তরতাজা লাল টকটকে কোন গোলাপ! বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম আমি।

এমন সময় ও বলে উঠলো, দেখা হয়েছে?( তানহা.)

আমি থতমত খেয়ে গেলাম। বললাম,
-জ্বী, হয়েছে।

তানহাঃআমারো দেখা হয়ে গেছে। এবার কি আসতে পারি আমি?

আমিঃ জ্বী, আসনু!

তানহা বেরিয়ে গেল রুম থেকে। নিজের চোখকেও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলামনা। এটা কি দেখলাম আমি! এমনসময় মা ভেতরে আসলেন। এসেই আমার কান টেনে ধরে বললেন,
-কিরে গাধা, এতদিনে একটা কাজের কাজ করলি তাহলে!

আমি,
-এজন্য তুমি আমার কান টেনে ধরবে?

মা,
-হুমম ধরবোই তো।

এই বলে আমার কান ছেড়ে দিলেন। মা আমার এমনই। আমাকে যেমন আদর করেন তেমন বকাঝকাও করেন। কখনোসখনো তো আমাকে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেও শাস্তি দেন! আমি বললাম,

-মা, এবার কি আমরা উঠবো তাহলে?

মা,
-একটু বস। দেখি ওরা কি বলে। যদি আজই সবকথা পাকাপাকি করতে চায় সেটা তো ভালোই। আর সময় নিতে চাইলে তো নিবেই। একটু অপেক্ষা কর।

আমিঃআচ্ছা ঠিক আছে।

আমরা মা ছেলে বসে কথা বলছি এমন সময় ভদ্রমহিলা আসলেন। বললেন,
-আমাদের সায়ানের বাবা বাসায় আসলে উনার সাথে কথা বলে তারপর চূড়ান্ত কথা বলতে পারবো। আপনারা একটু বসুন, খাওয়াদাওয়া করে তারপর যাবেন।

এমনসময় মা বলে উঠলেন,
-না না, থাক। আমরা খাওয়াদাওয়া করেই এসেছি। আপনারা নিজেরা আলোচনা করে আমাদেরকে জানাইয়েন। ফোন নম্বর তো আছেই। আমরা উঠবো এবার।

এই বলে মা উঠে দাঁড়ালেন। আমিও উঠলাম। মাঝে হালকা নাস্তা করা হয়েছে। ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলতে বলতে মা বাইরের দিকে যেতে লাগলেন। আমিও তাঁদের পিছুপিছু যেতে লাগলাম।

আমি এতটাই টেনশনে ছিলাম যে আমাদের সাথে নিয়ে আসা সিএনজি ড্রাইভারের কথা মনেই ছিলোনা আমার। বাইরে এসে দেখি বেচারা গাড়ির ভেতরে ঘুমোচ্ছে। ডাক দিলাম আমি। উঠে গাড়িতে থাকা পানির বোতল নিয়ে মুখ ধুয়ে অলিগলির মধ্য দিয়ে চলতে লাগলো সে। মেইন রোডে ওঠার পর তাকে বললাম,

-ভাই, ভালো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটি দাঁড় করিয়েন তো।

ড্রাইভারঃ আচ্ছা।

মাঃকিরে, তোর ক্ষিদে লেগেছে আগে বললেই তো পারতি। খেয়ে আসতি ওদের বাসা থেকে।

আমিঃনা মা, আমার ক্ষিদে পায়নি।

___এই বলে ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম, ‘ড্রাইভারকে খাওয়ানো দরকার। এতটা পথ আমাদেরকে নিয়ে ড্রাইভিং করছে। তাকে খাওয়ানো উচিৎ।’ মা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। তাঁর হাসির মাঝে আমি গর্ববোধ লক্ষ্য করলাম। সে তাঁর ছেলেকে নিয়ে গর্বিত বলে মনে হলো আমার কাছে।

কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার একটি রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটি দাঁড় করিয়ে বললো,
-নামেন, এটি ভালো রেস্টুরেন্ট। এতে খাওয়াদাওয়া করতে পারেন।

আমি তার দিকে একটি পাঁচশো টাকার নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
-এটা নিন, আর এখান থেকে গিয়ে পেট ভরে খেয়ে আসুন। আমরা নাস্তা করে এসেছি। ক্ষিদে নেই।

টাকাটা দেখে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ড্রাইভার লোকটি। মুহুর্তেই যেন তার চোখদুটো টলমলে হয়ে গেল। সে টাকাটা নিবে কি নিবেনা দ্বিধায় পড়ে গেলো। এমনসময় মা বলে উঠলেন,

-টাকাটা নাও, গিয়ে খেয়ে এসো। আমরা বসছি।

__লোকটি এবার টাকাটা নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলে গেলো। খুব ভালো লাগছিলো আমার। আমার এ কাজে মাও খুব খুশি হলেন। জানিনা এমনটি করার তাড়না কোথা থেকে আসলো। তবে মনে হচ্ছিলো খুব ভালো কিছুই হয়তো করেছি। সন্ধার দিকে বাড়ি ফিরলাম আমরা। সচরাচর মা এমন জার্নি করেননা।

__তাই অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পরেছেন। আমিও কিছুটা ক্লান্ত। গোসল করে হালকা নাস্তা সেরে দিলাম এক ঘুম।

__তানহাকে কথা দিয়েছিলাম এখন থেকে নিয়মিত নামাজ আদায় করবো। নামাজ যদিও আদায় করবো একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য কিন্ত, এটির জন্য তাগিদ দিয়েছে সে। তাঁর কারণেই আজ ফজরের নামাজ আদায় করলাম। শেষ কবে ফজরের নামাজ পড়েছিলাম আমার মনেও নেই। বাহ! নামাজ পড়ে তো বেশ ভালোই লাগছে। চনমনে লাগছে অনেক। বাজারে চায়ের দোকানে বসে আছি এমনসময় কল আসলো একটা।
*

*

*

পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিতেই দেখি তানহার নম্বর! রিসিভ করলাম আমি। সালাম দিলাম আমি,

-আসসালামুআলাইকুম।

ওপাশ থেকে,
-ওয়ালাইকুমুসসালাম।

তানহার ফুফুর কণ্ঠ বলে মনে হলো। বললেন,
-তোমার মা কোথায়?

আমি,
-মা বাসায়। আমি বাজারে এসেছিলাম।

ভদ্রমহিলা,
-তানহার ফুফার সাথে বিষয়টি নিয়ে কাল রাতে কথা হয়েছে। উনার কোন দ্বিমত নেই। তোমার মা চাইলেই এবার কথা বলে দিনতারিখ ঠিক করে নিতে পারেন।

আমি,
-আলহামদুলিল্লাহ্। আমি কিছুক্ষণ পরই মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দিব।

ভদ্রমহিলা,
-আচ্ছা ঠিক আছে।

এই বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন। চায়ের বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। বাইক নেই সাথে। হেঁটেই যাচ্ছি আর ভাবছি, ‘কত স্বপ্ন দেখতাম একদিন বিয়ে করবো, আমারো একটা বউ হবে একেবারে চাঁদের মতো বউ। যাকে এক নজর দেখলেই শুধু যে চোখ জুড়াবে তা নয় সাথে মনও জুড়াবে। তাঁকে স্বপ্নের মতো করে সাজাবো।

__খুব খুব ভালোবাসবো তাঁকে। কারণে অকারণে সে আমার সাথে অভিমান করবে আর আমি তা ভাঙাবো।’ এমন হাজারো ভাবনায় বিভোর হয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলাম আমি।

মিনিট পাঁচেক পর এসে বাড়ি পৌঁছালাম। মা বারান্দায় বসে আছেন। আমাকে দেখেই বললেন,
-কিরে, কোথায় ছিলি? আমি আরো ভাবছিলাম তোকে এখন কল দিবো।

আমি,
-এইতো, বাজারে গিয়েছিলাম।

এই বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে তানহার নম্বরে কল দিতে যাব এমন সময় মা বলে উঠলেন,

-তোর মামা নাকি তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছে। কল দিয়েছিলো একটু আগে। তোকে নাকি ছবিও পাঠিয়েছে বললো। দেখেছিস?

মায়ের মুখে এমন কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম আমি! বললাম,
-মামা মেয়ে দেখেছে মানে? কি সব বলছো তুমি?

মা নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-হুম, আমি ঠিকই বলছি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here