ক্রাশ_যখন_বউ,পর্ব ০৭,০৮
মেহেদী
পর্ব ০৭
তারপর হঠাৎ একদিন আমার জ্ঞান ফিরে
আসে আর নিজেকে একটা চারকোনা
দেয়ালের মাঝে আবিষ্কার করি।
কিন্তু আমি এখানে কি করে আসলাম।
কে আমাকে নিয়ে আসলো এখানে। আর
আমার তো বাঁচার কথা ছিলো না তাহলে
আমি কি ভাবে বেঁচে আছি।
হয়তো কেউ আমাকে উদ্ধার করে সেবা দিয়ে বাঁচিয়েছে। আল্লাহ চায়নি আমার মৃত্যু।
আমার যে ফিরতে হবে প্রতিশোধ নিতে হবে।
কিন্তু আমি তো উঠতে পারছি না তার মানে
কি আমি আর হাঁটতে পারবো না।
ভাবতেই দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে।
হঠাৎ করে একজন লোকের আগমন।
মাঝ বয়সী মাঝারি উচ্চতার দেখে মনে হচ্ছে
ডাক্তার হবে।তার মানে এই ডাক্তার আমার
চিকিৎসা করছে।
কিছুক্ষণ পর একজন বৃদ্ধ আসলো আর
ডাক্তার কে কি যেনো বললো আমি বুঝতে
পারলাম না কারণ আমি বাঙালি আর এরা তো ইন্দোনেশিয়ান।
তাই তাদের কথা আমার বোধগম্য নয়।
তারপর ডাক্তার কাছে এসে আমাকে ইশারা
করলো উঠে বসতে কিন্তু আমি যে উঠতে
পারছি না।এতো বাজে ভাবে আমাকে
মেরেছে ঐ হায়েনার দল যে আমি উঠতে পারছি না।
আমার কোনো হাত পা নাড়াতে পারছি না।
আমি কি কখনো সুস্থ হবো না তাহলে।
আর আমি কবে আমার মায়ের কাছে যাবো।
হয়তো বা ঐ কালনাগিনী গিয়ে বলেছে
আমি আর বেঁচে নেই। আমার মা কেমন
আছে কি করছে কিছু জানার উপায় নেই।
আর ওদিকে কালনাগিনী সম্ভবত ডাক্তার
কে বিয়ে করে সুখের সংসার করছে।
সুখ সবার কপালে থাকে না। আজ আমি বেঁচে
থাকার পরও মৃত। আমার কোনো ক্ষমতা
নেই হাতে। আজ আমি অসহায়।
আমার ফোন টাকা পয়সা যা ছিলো সব নিয়ে
নিছে। আমি কবে সুস্থ হবো আর কবেই
বা মায়ের কাছে ফিরে যাবো।
হয়তো মা এতদিনে ছেলের মিথ্যা মৃত্যুর
খবর পেয়ে ভেঙে পড়ছে আর হয়তো
মনেও নেই আমাকে।
ডাক্তার তার ব্যাগ থেকে ঔষধ বের করে
খাইয়ে দিয়ে বৃদ্ধ লোকটাকে কি যেনো বলে চলে গেলেন। অনেক ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু
খাবো কি করে। ইশারা দিলাম বৃদ্ধকে।
বৃদ্ধ সাড়া দিলো তাকে হাত মুখের দিকে
নিয়ে বুঝালাম আমার খিদে পেয়েছে।
তারপর বৃদ্ধ গেলেন আর আমার জন্য
খাবার নিয়ে এলেন।
এগুলো কি সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী
মনে হচ্ছে কোনো রকম সিদ্ধ করা।
হয়তো আমি এতোদিন যাবৎ এসবই
খেয়ে আসছি। তারপর বৃদ্ধ তাদের
নিজস্ব ভাষায় কাউকে ডাকলেন কিছুক্ষণ
পর একটি তরুণী দেখতে সাদা বর্ণের
খাটো করে এগিয়ে আসলো।
বৃদ্ধের কাছ থেকে খাবার গুলি নিয়ে আমাকে
খাইয়ে দিতে লাগলো।বিদঘুটে স্বাদ বমি
চলে আসার উপক্রম তবুও আমি খেয়ে
যাচ্ছি কারণ আমাকে বাঁচতে হবে আর
বেঁচে থাকার জন্য যে খাবার আনুক
আমি তাই খেয়ে নিবো।
পেট ভরে খেয়ে নিলাম তারপর মেয়েটি আবার
চলে গেলো।এভাবে রোজ আমাকে মেয়েটি
খাওয়ানোর পর চলে যায়।
এর মধ্যে অনেকদিন কেটে গেলো আমি
এখন দাড়াতে পারি । হাঁটতেও পারি।
মেয়েটি আমাকে ধরে ধরে হাঁটায়।
আর ইতিমধ্যে মেয়েটির নাম ও জানা হয়ে গেছে।
মেয়েটির নাম নিরা।মুসলিম সম্প্রদায়ের মেয়ে। ইন্দোনেশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম।
আর বৃদ্ধ হলো এই মেয়েটির দাদা। থাকতে
থাকতে এই পরিবেশের সাথে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি। এখানকার ভাষাও রপ্ত করে
নিয়েছি এখন তাদের সাথে আমার ভাবের
আদান প্রদান করতে কোনো সমস্যা হয় না।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো। এখন মিরা আসবে
আমাকে খাওয়াতে।
নিরা :- আসবো ভিতরে ( স্থানীয় ভাষাকে বাংলায় অনুবাদ করা হলো এখন থেকে)
আমি :- হ্যাঁ আসো অনেক ক্ষুধা লাগছে আজ
পেট ভরে খাবো আর তুমিও আমার সাথে খাবে।
নিরা :- আচ্ছা ঠিক আছে আপনার সাথে
আজ আমিও না হয় খাবো।
আমি :- মেয়েটি খুবই ভদ্র সহজ সরল মিষ্টি
ব্যবহার। এরকম মেয়ে জীবনসঙ্গী হবে সে খুবই ভাগ্যবান। আমি মেয়েটিকে আমার বোনের
মতোই দেখি আর মেয়েটিও আমাকে
ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখে।
তারপর দুজন খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।
এখন আর এসব খাইতে আমার কোনো সমস্যা
বরং আরো ভালো লাগে।ও চলে গেলো
আমিও দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকাল বেলায়
আমি :- আজ এক বছর যাবৎ আমি এখানে আছি। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।সময় হয়েছে
ফিরে যাওয়ার।
আর এর মধ্যে নিরার দাদা ও পৃথিবী ছেড়ে
চলে গেছে। নিরার আপন বলতে কেউ নাই।
তাই আমি ওরে নিয়ে দেশে ফিরে যাবো।
কারণ ও আমার জন্য যা করেছে তার ঋণ
শোধ করা যাবে না কখনো তাই ওকে সাথে
নিয়ে গিয়ে ঋণের বোঝা কমাতে চাই।
নিরা :- দাদা দেশে যাবা কবে?
আমি :- যাবো রে বোন আগে কাজ করে টাকা
জোগাড় করি । হ্যাঁ যা শুনলেন তা একদম ঠিক।
আমি এখন কাজ করি একটি হোটেলে যা
বেতন পাই তা দিয়ে দুজনের জীবন কেটে
যায় কোনো রকমে আর দেশে যাবার জন্য
কিছু করে টাকা জমাই।
অতঃপর আরো ছয় মাস অতিবাহিত হবার
পর আমরা দেশে যাবার জন্য প্লেনের টিকেট
সংগ্রহ করেছি। আজ নিজের জংলী রূপ
কে পরিবর্তন করে আসছি।
আবার সেই আগের মেহেদী হয়ে গেছি।
নিরা :- দাদা আমার আজ সত্যিই খুব খুশি লাগছে।
আমি :- কেন রে বোন তুই আজ এতো খুশি
কারণটা কি ?
নিরা :- এই যে দাদা আজ আমি তোমার
সাথে তোমার দেশে তোমার বাসায় যাবো।
আমার তো কেউ নাই ছোটো বেলায় বাপ মা
মারা গেছে অসুখে।দাদার কাছে বড়ো হয়েছি
তারপর একদিন দাদা তোমাকে সমূদ্রে মাছ
ধরতে গিয়ে উদ্ধার করে আনে ।
তারপর থেকে তোমাকে আমি নিজের হাতে
খাইয়ে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছি।দাদা
ও চলে গেলো এখন আপন বলতে তুমি
ছাড়া আমার আর কেউই নাই।
তোমার সাথে যেতে পারবো তোমার মাকে
নিজের মা করে পাবো। মায়ের আদর তো
পাওয়া হয়নি কখনো ।
তোমার মায়ের আদর পেয়ে সেটা ভুলে যাবো
তাই আজ আমার জন্য অনেক সুখের দিন।
আমি :- পাগলিটা এসব বলেই কেঁদে দিয়েছে ।
বড্ড ইমোশনাল।এই পাগলি কাঁদছিস কেন
তোর সাথে আমি আছি না।
তোকে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না তুই
যে আমাকে আমার বিপদের সময় রক্ষা
করেছিস। আর আমার মা মানে তোর মা।
তুই অতীতের সব কষ্ট ভুলে যাবি। আমার
মা যখন সব জানবে তখন তোকে অনেক
আদর করবে । চোখের পানি মুছে ফেল
আর কাঁদবি না।
জানিস না তুই কাঁদলে আমার ভালো লাগে না।
নিরা :- দাদা কোথায় আমি কাঁদছি না তো
দেখো এই যে আমি আজ কত খুশি।
ঐটা তো সুখের কান্না ছিলো দাদা।
আমি আর কাঁদবো না।
আমি :- এই তো লক্ষ্মী বোন আমার।
নিরা :- আচ্ছা দাদা রেডি হও আমিও রেডি
হয়ে আসছি তারপর দুই ভাইবোন বের হবো।
আমি :- আচ্ছা বোন রেডি হচ্ছি।
নিরা :- দাদা বের হও দেখ তোমার বোনকে কেমন লাগছে। তোমার কিনে দেওয়া বাঙালী কাপড় পরেছি আজ।
আমি :- বাহ তোকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে একদম বাঙালী।
নিরা :- সুন্দর তো লাগবেই। বোনটা যে হিরো ভাইয়ের। দাদা তোমাকে আজ নায়কের মতো লাগছে।
আমি :- তাই নাকি ! নায়িকা কি পাবো তাহলে ?
নিরা :- পাবে না মানে সিরিয়াল লেগে যাবে।যে মেয়ে আমার ভাইকে পছন্দ না করবে তার চোখ নষ্ট।
আমি :- পছন্দ যদি করতো বোন তাহলে কি আমার সাথে এমন দূর্ঘটনা ঘটতো?
নিরা :- চুপ করো তো। তোমাকে না কতবার
বলেছি ঐসব আর মনে আনবে না।আল্লাহ
যা করে ভালোর জন্যই করে।
এমন দূর্ঘটনা না ঘটলে তুমি তো তার
মনটা বুঝতে পারতে না। আর সবথেকে
বড় কথা আমি দাদাকে পেতাম না।
তাই যা হবার হয়ছে তা ভুলে যাও।
আমি :- আচ্ছা বোন আমি ভুলে গেলাম।
এখন চল আমরা বের হই।
নিরা :- ওকে দাদা চলো।
আমি :- তারপর আমরা এয়ারপোর্টে এসে
আমাদের ফ্লাইটের প্লেনে গিয়ে উঠি।
অতঃপর ৩ ঘণ্টার যাত্রা শেষে প্রিয় জন্মভূমিতে
প্লেন অবতরণ করলো।
দেড় বছর পর আজ দেশের মাটিতে পা
রাখলাম। আজ আমার চেয়ে খুশি হবার
মতো আর কেউ নাই। তারপর ট্যাক্সি নিয়ে
সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
নিরা :- দাদা তোমাদের দেশ তো অনেক সুন্দর। চারদিকে সবুজের সমারোহ। কি সুন্দর লাগছে।
আমি :- তোমাদের দেশ মানে কি হুম বল
আমাদের দেশ।
নিরা :- ওহ স্যরি দাদা আমাদের দেশ। রাগ
করবে না ভুলে বলে ফেলছি।
আমি :- আচ্ছা।
সবকিছুই কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে ।
দেড় বছরে অনেক উন্নত হয়ে গেছে
আমাদের দেশের।
নিরা :- আর কতক্ষণ লাগবে বাসায় যেতে দাদা।
আমি :- এই তো আর দশ মিনিট।
অবশেষে আমি আমার বাসার সামনে।
বাসাটা একদম নিস্তব্ধ হয়ে আছে আমার অভাবে।
দরজা তে নক করবো কি বোন। আমাকে
দেখে কি চিনতে পারবে। না জানি আমাকে
ভুলে গেছে। দরজা খুলে হয় তো চোখের
ভুল ভেবে আবার লাগিয়ে দিবে না হয়
ভুত ভেবে চিৎকার করে উঠবে।
নিরা :- আরে দাদা কিছু হবে না। আল্লাহ ভরসা
তুমি নক করেই দেখো।
আমি :- সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে নক করলাম।
দরজা খুলতেই আমি অবাক!
·
·
·
চলবে…………………
#ক্রাশ_যখন_বউ (পর্ব ০৮)
#মেহেদী
·
·
·
দরজা খুলে দেখতেই আমি অবাক মনে
হলো সামনে আলিফা দাঁড়িয়ে ছিলো।
তাহলে আবার কোথায় চলে গেলো।
আমি ভুল দেখছি হয় তো।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার
জননী। চেহারার একি হাল চেনা যাচ্ছে না ।
পাগলদের মতো হয়ে গেছে।
মা আমাকে দেখে বলে।
মা :- কে ! দেখতে তো মেহেদীর মতো
লাগছে। কে তুমি বাবা?
আমি :- যা বলেছিলাম তাই হলো মা
আমাকে চিনতে পারছেন না।
অবশ্য না চিনতে পারাটাই স্বাভাবিক।
কারণ সকলের কাছে আজ আমি মৃত।
আমি মা তোমার ছেলে মেহেদী।
মা :- আমার ছেলে ! হাহা আমার ছেলে
তো চলে গেছে ওপারে চলে গেছে
আমাকে রেখে।
স্বার্থপর ছেলে মাকে সাথে নিয়ে যায়নি।
আমি :- মা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না যে
আমিই মেহেদী। আমি কি করে মাকে
বিশ্বাস করবো যে আমিই তার
সেই ছেলে মেহেদী।
ও হ্যাঁ মনে পরছে।
মা আমাকে নিজে গলায় হার পড়িয়ে দিছে ছোটোবেলায় ।
সব কিছু হায়েনারা নিয়ে গেলেও ওটা
নিতে পারেনি। আমি আস্তে করে শার্ট
এর ভেতর থেকে হার টা বের করে
মাকে দেখিয়ে বললাম দেখো এই হার
তুমি আমাকে তোমার নিজের
হাতে পড়িয়ে দিয়োছো।
এবার তো বিশ্বাস করো আমি তোমার ছেলে।
মা :- হ্যাঁ তাই তো। তুই আমার ছেলে বাবা।
জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলো ছোটো
বেলার মতো করে। জানিস তোর মৃত্যুর
খবর শুনার পর আমি স্ট্রোক করেছিলাম।
বেঁচে ফিরবো কখনো ভাবিনি।
বউমা যখন বলেছিলো যে সন্ত্রাসীরা তোকে
মেরে সমুদ্রে বিশাল ঢেউয়ের সাথে
ভাসিয়ে দিয়েছে তখন আমি কথাটি
শুনেই স্ট্রোক করেছিলাম।
কখনো ভাবিনি যে তোর দেখা পাবো!
আজ আমি অনেক খুশি বাবা। আজ যে
মহা খুশির দিন।
বাবা তোর সাথে এই মেয়েটি কে?
আমি :- ওহ মা ওর নাম নিরা।ওর আর
ওর দাদুর উছিলায় আমি আজ বেঁচে আছি।
ওর দাদু আমাকে সমুদ্রের তীরে ভেসে
আসতে দেখে তারপর আমাকে উদ্ধার
করে ওরা দীর্ঘ ১ বছর চিকিৎসা
ও আমার সেবা করে আমাকে বাঁচিয়ে তুলছে।
ওর মা বাবা ও ছোটো থাকা অবস্থায় মারা
গেছে আর কিছুদিন আগে বৃদ্ধ দাদাও
না ফেরার দেশে চলে যায়।
তাই ওর আপন বলতে আমি ছাড়া
কেউ নেই।এজন্যই আমি ওকে সাথে
নিয়ে আনছি।
মা :- কে বলছে ওর কেউ নেই । ও আমার
ছেলের জন্য যা করেছে তার ঋণ শোধ
করতে পারবো না কিন্তু ওরে আমি আজ
থেকে আমার নিজের মেয়ে মনে করবো
এছাড়া আমার তো কোনো মেয়েই নাই
ভালোই হলো একটা মেয়ে পেলাম।
আমি :- আমিও ওকে এই কথা বলেছি।
মা :- কিন্তু ও যে কোনো কথা বলছে না।
আমি :- ও যে ইন্দোনেশিয়ান তাই বাংলা
বুঝতে পারছে না। আমি ওকে তোমার
বাংলা ভাষার কথাগুলো ওর ভাষায় বুঝাবো।
মা :- আচ্ছা তাহলে তুই ফ্রেস হয়ে আয়
আর আমিও ওকে আমার সাথে নিয়ে যায়।
আমি :- আচ্ছা মা ঠিক আছে।
তারপর ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলাম।
আমি ঘুমাতে চলে গেলাম আর আম্মুও
নিরা কে নিয়ে ঘুমাতে চলে গেলো।
দীর্ঘ দেড় বছর পর নিজের বাসায় ঘুমাবো।
কিন্তু কেনো জানি বারবার মনে হচ্ছে আমার কাছাকাছি কেউ আছে যে আমাকে প্রতি
মুহূর্তে ফলো করছে।
ধুর এসব মনের ভুল দিলাম এক লম্বা ঘুম।
এক ঘুমেই রাত গড়িয়ে দিন হয়ে গেছে।
নিরার ডাকে ঘুম ভেঙে যায়।
নিরা :- দাদা উঠো ফ্রেস হয়ে নাস্তা
করতে আসবে।
আমি :- আচ্ছা যা বোন আমি আসছি।
নিরা :- আচ্ছা আমি গেলাম ।
তুমি তারাতারি আসো।
আমি :- ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নিলাম।
তারপর মাকে বললাম মা সবাইকে
আজ ডিনারে ইনভাইট করো যেনো
আমাকে দেখে চমকে যায়।
মা:- আচ্ছা ঠিক আছে আজ তোর বন্ধুদের
আত্মীয় স্বজনদের ইনভাইট করবো।
আমি :- ওকে তারপর আমি আমার রুমে গেলাম।
ভাবলাম এখন বাইরে যাবো না রাতে
সবাইকে চমকে দিবো কাল থেকে বের
হবো এখন বরং ছাদে যাই রুমে
আর ভালো লাগছে না।
তারপর সোজা ছাদে চলে গেলাম।
ছাদের যে পাশে কাঠ গোলাপের গাছ
ঐ পাশে গিয়ে অতীতের সব কথা
ভাবতে থাকলাম।
আলিফার কথা অনেক বেশি মনে পড়ছে।
না জানি কেমন আছে ভালোই আছে
হয়তো ডাক্তারের সাথে।
কিন্তু কেনো মনে হচ্ছে আমার সাথে কেউ
আছে যে আমাকে ফলো করছে।
মনে হচ্ছে আমার পেছনেই কেউ
দাঁড়িয়ে আছে।
পেছন ফিরে তাকাতেই কিছুই তো নেই
তাহলে এসব আমার মনের ভুল।
কিন্তু চিলেকোঠার রুমের কর্ণারে কিসের
যেনো শব্দ হচ্ছে।
যা আছে কপালে ঐখানে কি আছে
আমাকে দেখতেই হবে।
এগিয়ে গিয়ে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
একটি সাদা ছেঁড়া শাড়ি পরে একটি
মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। উশকো খুুশকো
চুলগুলি উড়ছে। জীর্ণশীর্ণ দেহ।
কি যেনো বিড়বিড় করে বলতাছে।
আমি কিছু না ভেবে মা কে ডাকলাম।
মা ও মা ছাদে আসো তো।মা হাজির হয়ে বললো
মা :- কি হয়েছে এই অসময়ে ছাদে কি
করিস আর আমাকে ডাকলি কেন?
আমি :- ছাদে ঐ অচেনা পাগলীর মতো
দেখতে কে ঐখানে দাঁড়িয়ে আছে দেখো তো।
মা :- আচ্ছা সরে দাঁড়া আমাকে দেখতে দে।
ওহ ওকে চিনিস নাই?
আমি :- আমি তো তাকে দেখিই নাই চিনবো
কেমনে । মনে হচ্ছে পাগলী।
মা :- তাহলে দেখ।
আমি :- দেখেই অবাক! ও আর কেউ না
আমার পরী যাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম ।
আর আমার ভালোবাসার দূর্বলতা
কে পুঁজি করে আমাকে পৃথিবী থেকেই
বিদায় করে দিতে চেয়েছিলো মা।
কিন্তু ওর এই অবস্থা হলো কি করে?
মা :- তুই কিছুই জানিস না।
আমি :- কি জানি না আমি খোলাসা
করে বলো শুনি।
মা :- শুন তাহলে, তোর উপর সন্ত্রাসী হামলায়
ওর কোনো হাত নেই যা করার ঐ ডাক্তার করেছে।
আমি :- কি বলতেছো! আমি নিজ কানে শুনেছি।
মা :- ওকে দিয়ে ডাক্তার এসব বলতে বাধ্য
করছে আর তোকে মারার কোনোই
ইচ্ছে ছিলো না ওর।
আমি :- তাহলে আমার সাথে এসব
ঘটলো কি করে?
মা :- ও যখন তোর সাথে হানিমুনে যায় তখন
ও আস্তে আস্তে দূর্বল হতে থাকে আর ঐ
ছেলের সাথে ঠিক মতো কথাও বলে না।
ঐ ছেলেকে ইগনোর করতে থাকে।
আর ছেলেটি এসব মেনে নিতে পারেনি
তাই ঐ ছেলেও ইন্দোনেশিয়া চলে যায়।
আর সন্ত্রাসদের টাকা দিয়ে কব্জা
করে তোর উপর আক্রমণ চালায়।
এটা যখন আলিফা জানতে পারে তখন
তোকে বাঁচাতে চায় কিন্তু ছেলেটা আলিফা
কে ব্লেক মেইল করে। আলিফা কে বাধ্য
করে ওসব বলতে।
আমি :- তারপর
মা :- তারপর আলিফা কে দেশে এনে
মারাত্মক ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে।
আমি :- আলিফা কিছু বলেনি।
আমি :- আলিফা অনেক বলছে। ভিক্ষে
চেয়েছে ছেলেটার ভালোবাসা। কিন্তু ছেলেটা
বলে ও না কি আলিফা কে ভালোই বাসেনি।
শুধুমাত্র ব্যবহার করার জন্য এসব করছে।
আলিফা এসব শুনে অনেক কান্না করে
আর তোর জন্য আফসোস করে। ও তখন
বুঝতে পারে ছেলেটি ওর জন্য ভুল ছিলো।
ছেলেটা অনেক নির্যাতন করে আমাদের
বাসার সামনে এনে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
তারপর আমি বাইরে বের হলে ওকে
উদ্ধার করি আর ওর মুখে সব ঘটনা শুনি।
ও তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করার
জন্য নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে
আর পাগলামি শুরু করে দেয়।
সুইসাইড ও করতে গেছিলো আমি বাধা দিয়েছি।
এরপর তোর শোকেই মেয়েটি আস্তে
আস্তে পাগল হয়ে যায়।
ঠিকমতো খায় না ঘুমায় না শুধু তোর
কথা বিড়বিড় করে বলে একা একা ।
আমি :- অজান্তেই চোখের পানি বের
হয়ে আসলো।
আমি যখন চেয়েছি বুঝেনি আর এখন
আমাকেই এতো ভালোবাসে।একদম চিনার
উপায় নেই। কি হয়েছে শরীরের অবস্থা।
কত সুন্দরী ছিলো আর কি হয়ে গেলো।
মা ওরে চিকিৎসা করাওনি সুস্থ করে
তুলার জন্য?
মা :- অনেক চিকিৎসা করেছি কোনো লাভ হয়নি। ডাক্তার বলছে ও কোনো দিন সুস্থ হবে না তবে!
আমি :- তবে কি মা কোনো সুযোগ আছে নিশ্চয়ই। আমি ওকে সুস্থ করে তুলবোই।
মা :- হ্যাঁ সুযোগ টা হলো…..
·
·
·
চলবে……….