কোকিলারা,চতুর্থ পর্ব
মোর্শেদা হোসেন রুবি
গত সাতদিন হয় আমি আম্মুর বাসায় আছি। এর মধ্যে মাত্র দুদিন ফোন করেছিল খালিদ। সেও কেবল বাপির কথা জানতে চেয়ে। আর একদিন এসে আমার কিছু কাপড় চোপড় দিয়ে গেছে। তারপর আর খবর নেই। পরদিন হিয়াকে দিয়ে আমার কাপড় পাঠানোর কথা থাকলেও সে নিজে এসেই নাকি আমার লাগেজ দিয়ে গেছে। তবে যখন সে এসেছিল তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম বলে ডাকতে দেয়নি আমাকে। শুনে আমার কেন যেন মনে হয়েছিল সে আসলে আমার সাথে কথা বলতে চায়নি নইলে যেচে এসেও চোরের মত চলে যাওয়া কেন। এরপরে আরেকদিন ফোন দিলেও রুটিন ওয়ার্ক মাফিক কেবল বাপি আর আম্মুর খোঁজ খবরটুুকুই নিয়েছে। আলাদা করে রুনার ব্যপারে কিছু জানতে চায়নি। আমার ব্যপারে তো নয়ই। যেন আমি ওর কেউ নই। ওর যাবতীয় সম্পর্ক বাপি আর আম্মুর সাথে। একবার বলতে খুব ইচ্ছে হয়েছিল, অত যে বাপি আম্মু করছেন। তাদের সাথে আপনার সম্পর্কের সূত্র কে ? তারা আপনার কোন জনমের বাপ-মা শুনি ? কিন্তু কিছুই বলিনি, কারণ আমার নিজের আচরণটাও ওর পরিবারের সাথে এমনই হয়ে আসছে। সেই বিয়ের পর থেকেই। বরং সে তুলনায় আমার পরিবারের ব্যপারে খালিদের ব্যবহার যথেষ্ট সৌজন্যতামূলক । যেটা আমি খালিদের পরিবারের প্রতি সিকিভাগও দেখাইনি। আরো ভাল করে বলতে গেলে, দেখাবার প্রয়োজন বোধ করিনি। কারণ যে বাড়িতে থাকবোই না সেখানে অহেতুক খাতির বাড়ানোর কোন যুক্তি আমি খুঁজে পাইনি।
ফোন বাজছে। ডাইরি সরিয়ে রেখে ফোন কানে চাপলাম।
” হাই দোস্ত।” মুনের কণ্ঠস্বর।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম।
” ও তুই। ”
” রুনু কেমন আছে ? ”
” এই তো। ভালই। তবে প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে ওর।”
” ওটা তো হবেই। একটু ভাল করে খাওয়া দাওয়া করা আর ঔষধগুলো ঠিকঠাক মত খাওয়া। সেরে যাবে।”
” তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু একটা কথা বলতো ! দেশে কী গাইনি ডাক্তারের আকাল পড়েছিল যে রুনাকে তোর ঐ কসাই বেটির কাছে নিতে হলো? আমার তো যথেষ্ট সন্দেহ আছে ঐ মহিলা গাইনোকলজিস্ট কিনা। ” রাগ করবো না ভেবেও রাগটা সামলাতে পারলাম না। রুনার এবরশনের দৃশ্য মনে পড়তেই সারা গা শিউরে উঠল আমার। জীবনে কোনদিন কোন মেয়েকে এভাবে চিৎকার করতে শুনিনি আমি। এমনিতেও পরিবেশটা অস্বস্তিকর ছিল। তাই মুন শত বলার পরেও ভেতরে ঢুকিনি। আমাকে অস্বস্তিবোধ করতে দেখে শেষ পর্যন্ত মুন নিজেই ভেতরে গিয়েছিল রুনার সাথে। আর আমি বাইরে বসে সেই আর্তচিৎকারে থরথর করে কেঁপেছি। দৃশ্যটা দেখার সাহস তো ছিলই না উল্টো সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম জীবনে আর যাই করি কোনদিন এসব করাব না। আমার কথার ধরণে মুন ওর চিরাচরিত পুরুষালি ভঙ্গিতে হেসে উঠে বলল,” দোস্ত, তুই আসলেই এখনও যথেষ্ট ম্যাচিওরড হোসনি। এগুলো এখন ওয়ান টুর ব্যপার। আর গাইনোকলজিস্ট দেখাতে গেলে উনি দশটা কারণ জানতে চাইবে তারপর সোজা মানা করে দেবে। এমনিতেই এদেশে গর্ভপাত অবৈধ। কাজেই এসব কাজের জন্য রানু খালাম্মা বেস্ট। তাছাড়া রুনাকে তো আর তিস্তার মত দুই বালতি কাপড় ধুতে হচ্ছে না। যে ট্যাবলেট দিয়েছে ওতেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।” শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম, ” তিস্তা কে? ”
” সুমিতের স্ত্রী? ”
” সুমিত আবার কে ? ”
” আহ্, সমরেশদার উপন্যাসের একটা চরিত্র। তিস্তা বিয়ে ছাড়া ছুঁতে দিবেনা বলে শালা নামকাওয়াস্তে বিয়ে করে এই কাহিনী করসে।”
” মুনের বাচ্চা। লাত্থি চিনোস?”
” চিনি। তবে খাইনি কখনও। দিয়েছি প্রচুর। তোকেও তো বুঝি দান করেছিলাম কয়েকটা।”
” মুন, আ’ম নট জোকিং। রুনা পুরা কাহিল হয়ে পড়েছে। একদিনেই চোখমুখ বসে গেছে। আম্মা তো কান্না। বলে, একবারে মরে গেলে শান্তি পেতাম। চিন্তা কর কেমন মা। ”
” চিন্তা করার কিছু নাই দোস্ত। যুগটাই এমন। মায়েদের ভালবাসাও সময়মত গাঢ় লিকার থেকে পাতলা হয়ে যায়। রুনাকে বলিস, ভালবাসলে খেসারত দেয়া লাগে। আন্টিদের যুগ তো এমন ছিল না। অবশ্য তারা খেসারত দিত ঘরে বসে। একজনের কাছে। আর আমরা দিচ্ছি জনে জনে। পরিস্থিতি পুরা উল্টা। ”
” তোর লেকচার বন্ধ কর তো। লেকচার শুনতে অসহ্য লাগে। খেসারত দিলে দুজন দেবে। একজন কেন দেবে? ”
” কিছু করার নাই। আল্লাহ আমগোরে বানাইসেই এমন কইরা। এই কারণেই আল্লাহর সাথে আমার আড়ি। আমার নিজেরও জানতে ইচ্ছা করে, কেন আমাদেরকেই সব খেসারত দিতে হবে। ”
” এটা জানতে হলে তোকে আগে মরতে হবে। কারণ এর উত্তর আমি নিজেও জানিনা।”
” আচ্ছা, ইমোশনাল কথা বহুত হইসে। এখন অন্য কথায় আয়। রাজিব্যার খবর কী? ”
” মুন। আমি তোরে হাজার দিন বলসি ওরে রাজিব্যা বলবি না। তোর এভাবে নাম বিকৃত করে কথা বলা আমার একদম পছন্দ না।”
” ওকে, স্যরি। রাজিব। রাজুর খবর কী ওর। কবে গাঁটছড়া বাঁধছিস তোরা?”
” আগে তো গাঁটে জোর হোক, তারপর না ছড়া বাঁধা।”
” কার গাঁটে জোর ? তোর না ওর ? ফোন টোন করে ? ”
” বিয়ের পর আমিই করেছিলাম। রুনার ঝামেলায় গত কয়েকদিন যোগাযোগ করতে পারিনি। দেখি আজ সময় পেলে করব। ভাল কথা, বিকেলে চাঁদনি চক যাব একটু। যাবি নাকি? ”
” আবার জিগায়। আমি তো সারাদিনই হাওয়ার উপ্রে। বাপ-মা দুইজন দুইদিকে আমি আরেক দিকে। নো জমাখরচ।
” ওকে। তাহলে সময়মত চলে আসিস। বাই। ”
ফোন রাখতে না রাখতেই রাজিবের ফোন এল। সে ফোন ধরেই প্রথমে শতবার ক্ষমা চাইলো আমার খোঁজখবর রাখতে না পারার জন্য। আমি ম্লান গলায় বললাম,” বাদ দাও এসব। তোমার ব্যবসাপত্র কী অবস্থা ? কতদূর এগিয়েছো?”
” আর বোলোনা জান। চমৎকার ভাবে সব গুছিয়ে এনেছি। বাড়িতেও বলে দিয়েছি মাস দুয়েকের মধ্যেই বিয়ে করব আমি। তারপর সোজা হানিমুন। এখন সামান্য কিছু টাকার জন্য আটকে গেছি। দুই বন্ধুকে নক করলাম কিছু লোন দেবার জন্য কিন্তু সময় খারাপ হলে যা হয়।”
” কত টাকার জন্য আটকে গেছো? ”
” তোমাকে বলতে খারাপ লাগে। কিন্তু না বলেও পারিনা। আমার সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী বলতে তো এই একজনই। সে হলে তুমি।”
” টাকাটার কথা বলো।”
“খুবই সামান্য। ধরো হাজার পঞ্চাশেক। আমার অবশ্য আরো কিছু হলে ভাল হতো কিন্তু পঞ্চাশ হলে চালিয়ে নিতাম আরকি।”
” ওহ। আমার তো আর তেমন ব্যালান্স নেই। আচ্ছা, ঠিকআছে। আমি তোমার একাউন্টে টাকাটা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি। চেক করে জানিও। তবে এরপর তোমাকে দেবার মত তেমন টাকা কিন্তু আর থাকবেনা।”
” কী যে বল জান। তোমার কাছ থেকে যা নিয়েছি এবার তা দেবার পালা। ব্যবসাটা শুধু একটু জমতে দাও, তারপর দেখো। এরপর থেকে তুমি শুধু নিয়ে যাবে।”
” আচ্ছা শোনো, আজ একবার দেখা করতে পারবে ? ”
” না জান। আজ না। আজ আমার হাতে অনেক কাজ। মরব যে সেই সময়ও নেই।”
ফোন রেখে রুনার কাছে এলাম। সে বসে বসে স্যুপ খাচ্ছে। হেনা বসে আছে ওর সামনে। গুনগুন করে কী যেন বলছে। আমাকে দেখেই থেমে গেল। কাছে গিয়ে বললাম, “হেনা তুই একটু বাইরে যা।”
বলার ভঙ্গিতে বড়বোন মার্কা একটা দাপট তো ছিলই। আরো কিছু হয়ত ছিল যার কারণে হেনা ভীত চোখে আমাকে একবার দেখেই বেরিয়ে গেল। রুনাও গুটিয়ে গেল খানিকটা। আমি ওর সামনে গিয়ে বসলাম,” কী অবস্থা এখন ? ব্যথা কমেছে ? ”
রুনা ভীত চাহনী দিয়ে মাথা ওপর নিচ করল। হঠাৎ দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,” হারামজাদার নাম কী ? ”
-” কার নাম।? ” রুনার চাহনী আরো ভীত হলো।
” যে *** বাচ্চার সাথে গিয়েছিল এসব করতে ? তার নাম ।”
” ওর নাম বললে তো লাভ হবেনা আপু। ওরা অনেক ধনী। তাছাড়া আমি ঠিক জানিনা।”
” মানে ? জানিসনা মানে কী ? ” হতভম্ব হলাম আমি। রুনা মুখ নামিয়ে বলল,
” তুমি যা ভাবছ তা না। আমি ওভাবে যাইনি আপু। ”
” তাহলে কীভাবে গিয়েছিলি ? কথা বলিস না কেন ? ” রুনা আবারও মুখ নামাল। আমি এবার চাপা স্বরে গর্জন করে উঠে বললাম , ” নাম বল ওর, রাজিবকে দিয়ে সাইজ করব ওকে। রাজিব এখনও ঐ কলেজের ক্যাডার। প্রচুর ছেলেপেলে আছে ওর হাতে । ”
” কিন্তু এখানে কাকে দায়ী করব আপু। রাজন যদিও আমাকে ওখানে নিয়ে গিয়েছে কিন্তু ও তো এটা স্বীকার করছেনা। তাছাড়া আমি নিজেও তখন হুঁশে ছিলাম না।”
” ম…মানে ? ”
” আমি যেদিন হৃদিতার জন্মদিনে গেলাম সেদিনই ওরা দুষ্টুমি করে আমার কোকের সাথে কীসব মিশিয়ে দিয়েছিল। সেটা খেয়ে সেন্স হারিয়েছিলাম আমি। তখনও জানতাম না যে আমাকে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। ” বলে রুনা ভেজা চোখে তাকাল। ঠোঁট কাঁপছে ওর। আর আমি তখন স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছি। কখন যে আমার চোখগুলো বিস্ফারিত হয়ে উঠেছিল বলতে পারব না। ঘোর যখন কাটল তখন দেখলাম, আমার প্রচন্ড চড়ে রুনার হাতে ধরা বাটিটা ঠোঁটে লেগে মুহূর্তেই ঠোঁটের কোনা ফুলে গেছে আর সমস্ত স্যুপ গড়িয়ে ওর জামার ওপর। রুনা এবার ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল,” তুমি আমাকে মারলে কেন ? কী করেছি আমি? ”
” কী করেছিস মানে? কেন গেলি ঐ বাটপারের সাথে? নিশ্চয়ই এটা ওর চাল ছিল। ”
” ও যে বাটপার তা তো আমি জানতাম না। তোমরাও তো রাজনকে চিনতে। বাড়ি এলে আম্মু ওকে চা কফি বানিয়ে দিত। তোমাদের সামনে দিয়েই তো ও কতদিন আমার রুমে চলে এসেছে। কই, কোনদিন তো বলোনি যে রাজন বাটপার ? ”
” চুপ কর। ওর সাথে তুই মিশেছিস, আমরা না। আমরা শুধু দুর থেকে দেখেছি। আমরা কী করে জানব যে ও কেমন ? তাছাড়া তুই যে এত বড় বেকুব তা তো জানতাম না।”
” আমি মোটেও বেকুব না আপা। আমি ইচ্ছে করে এসব ঘটাইনি। ” রুনার ফোলা ঠোঁট আরো ফুলে গিয়ে বিশ্রী দেখাচ্ছে। হঠাৎ রাগে ক্ষোভে বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠতে চাইল আমার। অক্ষম আক্রোশে কিছুক্ষণ তড়পালাম। তখনও বুঝতে পারছিলাম না রাগটা আসলে কার ওপর। বাপি আম্মু, নাকি রুনার বন্ধুরা। কী ভেবে দ্রুত রাজিবকে ফোন দিলাম। ওকে আমার আজই দরকার। কিন্তু ওর ফোনটা বন্ধ পেয়ে বিরক্তই লাগল।
বিকেলে মুনকে নিয়ে মার্কেটে চলে এলাম। রুনার ব্যাপারটা জানালাম ওকে। মুনও সায় দিল আমার কথায়। এটা নিয়ে বসে থাকা উচিত হবে না। সিদ্ধান্ত নিলাম, কেনাকাটা শেষ করেই রাজিবকে ফোন করব। ওকে বলব, সব ফেলে এখানে আসো আগে। তখনও জানতাম না যে, রুনার চেয়ে বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছিল আমার জন্য।
সাদাকালোর শপ থেকে বেরিয়ে কে-ক্র্যাফটে ঢুকতে যাবার মুখেই হঠাৎ দেখা হয়ে গেল রাজিবের সাথে। ঠিক দেখা হলো বলা যাবেনা, আমিই ওকে আগে দেখলাম। রীতিমত আছাড় খাবার মত অনুভূতি হল আমার। রাজিব বলেছিল ওর জরুরী কাজ আছে। কাজটা যে এখানে তা বলেনি। রাজিবের সাথে আজ একটা মেয়ে আছে। ওকে আমার খুব চেনা চেনা মনে হতে লাগল কিন্তু কিছুতেই নামটা মনে করতে পারলাম না। পরক্ষণেই মুন পাশ থেকে বলে উঠল ,” লে হালুয়া। এ দেখি প্রিয়তা আর রাজিব মিয়া ! কাম সারছে।” বলেই আমার দিকে তাকাল। আমার চোখ তখনও ওদের দিকে নিবদ্ধ। দুজনেই শপের বাইরে সাজানো ডলের গায়ের জামাটা দেখছে। প্রিয়তা নামটা মুনের কথাতেই মনে পড়ল আমার। কলেজের সবচেয়ে ঢংগি মেয়ে প্রিয়তা। পোশাক বদলানোর মত বয়ফ্রেন্ড বদলায়। হাঁটা চলা দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে সারাক্ষণ আহ্লাদ ঝরে পড়ে ওর। ছেলেদের দেখলে ওটার ফ্লো বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। প্রিয়তাকে ভাল করেই জানি আমি। কিন্তু ওর সাথে রাজিব কেন ? রাজিব তো ওকে দেখতে পারত না বলেই জানি।
প্রিয়তার দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা বড় মোহনীয়। কোমড় বাঁকা করে দাঁড়ানোয় বেশ লাস্যময়ী লাগছে ওকে। আর কোমড়ের ঐ বাঁকটাতেই যেটা পিছলে নেমে গেছে নিচের দিকে ঠিক সেখানটাতেই ছুঁয়ে আছে রাজিবের হাত। সমস্ত গায়ে আগুন ধরে যাবার অনুভূতি হলো আমার। অনেকটা তেড়ে এগোতে গিয়ে বাঁধা পেলাম। ঝট করে মুখ ফিরিয়ে মুনকে দেখে চাপা ঝাঁঝের সাথে বললাম,” কী হয়েছে। হাত টানিস কেন? ”
” টানি কারণ এমনে শালা টাকি মাছের মত স্লিপ কাটবো। তারচে চল টেকনিক করে শালারে ধরি। আমি আগে যাই, তুই পাঁচ মিনিট পরে আয়। ” বলেই মুন হাঁটা ধরল রাজিবের দিকে। আর আমি মুনের ধাক্কায় ততক্ষণে শপের ভেতরে ঢুকে পড়েছি। স্বচ্ছ কাঁচের আড়াল থেকেই দেখতে পেলাম ওদেরকে। মুন কথা বলছে রাজিবের সাথে। রাজিব ততক্ষণে প্রিয়তার কোমড় ছেড়ে ব্যাগ সামলাতে ব্যস্ত। মুনের কথামত ঠিক পাঁচ মিনিট পর ওদের মুখোমুখি হলাম। রাজিবের অবস্থা দেখে মনে হলো সে যেন সদ্য ভূমিষ্ট একটা নিষ্পাপ শিশু। পার্থক্য এই সদ্যজাত শিশু কাঁদে আর রাজিব স্টাক মেরে গেছে। এ সময় সাধারণত চাপড় মেরে শিশুকে কাঁদাতে হয়। নিয়ম মেনে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রবল চড় কষালাম ওর গালে। রাজিব কাঁদল না বটে কিন্তু বেশ বেসামাল হয়ে গেল। হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল ব্যাগগুলো। কিছু লোকজনও জড়ো হয়ে গেল মুহূর্তে।
হিসিয়ে উঠে বললাম, ” আমি যখন বললাম, আজ দেখা করো, তখন বললি যে জরুরী কাজ আছে। এটাই তোর সেই জরুরী কাজ ? আমার টাকায় ব্যবসা ফেঁদে এখন ফুর্তি করা হচ্ছে, তাই না? ”
প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলেও মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো রাজিব। পরক্ষণেই সে যা করল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।
[চলবে]