কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম-৭

#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম-৭
লেখিকা:-ইশানূর ইনায়াত

লাবনী মাথা নিচু করে ডাইনিং এ বসে খাবার খাচ্ছে। সাথে রোদ্র ও রোদ্রের মা রুপালী বেগম ও। খেতে খেতেই আক্রোশ নিয়ে রুপালী বেগমকে রোদ্র তীক্ত কন্ঠে বললো,

“মা তুমি ফুপু কিছু না বলে বলে একদম বেশি পাওয়ার দিয়ে ফেলেছো। উনি এ বাসায় আসলে যেন নিজেকে বাড়ির কর্তা মনে করা শুরু করেন! করেন ভালো কিন্তু উনি যে ভালো মানুষ নন! কমনসেন্স জিনিস টা একদমই ওনার মধ্যে নেই আর শিক্ষা…. ”

রুপালী বেগম হঠাৎ রোদ্রকে হঠাৎ এত রেগে যেতে দেখে অবাক হোন,

“ব্যস ব্যস রোদ্র…, হয়েছে টা কি? তুই হঠাৎ তোর ফুপুর ওপর এতো রেগে আছিস কেন রে? উনি তো আর এখানে নেই..। যাওয়ার সময় কি আবারও উল্টাপাল্টা কিছু বলেছেন? বললেই কি এমন রাগ করতেই বাবা বয়স্ক মানুষ তোর থেকে বড় আর যতই হোক তোর তো ফুপু হোন। ”

রোদ্র খাবার খাওয়া থামিয়ে বললো,

“আচ্ছা আমার ফুপু তাই বলে আমার বউকে ডে যা মন চায় বলার অধিকার পেয়ে যান? হু?”

“কি বলেছে তোর ফুপু লাবনী কে?” অবাক হয়ে ও মনে আশংকা নিয়ে প্রশ্ন করলেন রুপালী বেগম।

রোদ্র ওনাকে সবকিছু ওনাকে জানানোর পর তিনও নিজেই অনুতপ্ত বোধ করেন। অনুতপ্তের সুরে লাবনী কে বলেন,

“লাবনী মা! আমাকে ক্ষমা করে দিস!… আমি তোকে নিজের মেয়ের মতো বললেও নিজের মেয়ের মতো প্রটেক্ট করতে পারলাম না..” আক্ষেপ নিয়ে বলেন।

“মা, প্লিজ এভাবে বলিয়েন না! আমার যত না ফুপুর কথা শুনো খারাপ লাগা কাজ করেছে আপনি এভাবে চাওয়ায় তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে…! ”

“কিন্তু লাবনী…”

“কোনো কিন্তু না মা.., আপনি খাবার খান তো…। এসব নিয়ে যত ভাববেন মন ততটাই খারাপ হবে। এরকম কথা আরো শুনেছি আমি বহু বার তাই এই নিয়ে কষ্ট নিচ্ছি না মনে। আর রোদ্র আপনিও প্লিজ এসব বলে মা’কে আর খারাপ ফিল করাবেন না। ওনার এতে হাত নেই কোনোভাবেই..”

রোদ্রর খারাপ লাগলো বিষয় টা লাবনী কেন তার কেয়ার এর কোনো মূল্য দিল না। খাবার তাড়াতাড়ি শেষ করে রুমে গিয়ে লাবনীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

লাবনী পেছনে ফিরতেই রোদ্রের বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলেই রোদ্র বাম হাত কোমড়ে পেঁচিয়ে আঁকড়ে ধরে।

লাবনীর চোখ রোদ্রের চোখে পরে যায়। লাবনী আমতা আমতা করে বলে,

“আ..আপনি? ”

রোদ্র নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলো লাবনীর দিকে লাবনী এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর দেখছে মা এসে না পরে। এই লোকটার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই মনে হয়। নিজে তো ফাঁসবেই আমাকে লজ্জায় ফেলে দিবে।

“সরুন!”

“না সরবো না! ”

“সরবেন না বললেই হলো? আমি মা’কে ডাকবো?”

রোদ্র আকাশ-সম বিস্ময় নিয়ে লাবনীর দিকে তাকিয়ে কোমড়ের বাঁধন হালকা করে। “এই মেয়ে বলে কি? ও মা’কে ডাকবে এখন? ডেকে বলবে কি? মানে..”
বাঁধন হালকা হওয়ায় ছুটে পালিয়ে যায় লাবনী।

রোদ্র হালকা হেঁসে বলে,

“পাগল মেয়ে!”

রোদ্র লাবনীর ব্যবহার কেন যেন মুগ্ধ হয়। লাবনীর ব্যবহার বোঝা যায় সে মন থেকে বলছে বলা প্রত্যেক টি কথা। কোনো খুশি করবার জন্য বানিয়ে বলা কথা নয়। লাবনীর আন্তরিক ব্যবহার দেখে রোদ্র আত্মতৃপ্তি পায়।
অজান্তে লাবনীকে ভালোলেগে গিয়েছে ওর। তবে সেটা ভালোলাগার চেয়েও বেশি অনুভব হয় তার।

_____________

রুপালী বেগম রুমে শুয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিচ্ছিলেন। দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখতে পান যে, লাবনী দাঁড়িয়ে আছে মুখে অস্বস্তি স্পষ্ট দৃশ্যমান।
তিনি ক্লান্তি নিয়েই মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন,
“আয় ভেতরে আয়। ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

লাবনী ভেতরে এসে রুপালী বেগমের পায়ের কাছে বসে। লাবনীর ভীষণ খারাপ লাগলো রুপালী বেগম কে ওমন কে ওমন ক্লান্ত দেখে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে বললো,

“মা…, আপনি আমাকে ও তো রান্না টা করতে দিতে পারেন। খারাপ হলে শিখিয়ে দিবেন নাহয়। আপনাকে এরকম প্রতিদিন এতো কাজ করতে দেখে ভালো লাগে না। কই একটু রেস্ট নিবেন আমাকে বলবেন এটা করে দেয় ওটা করে দেয় নিজের মেয়ে মনে করেই বলবেন। আর আমিও মনের আনন্দে মা ভেবে নিজের মায়ের অডার স্ব আনন্দে পালন করবো!”

রুপালী বেগম হালকা হাসেন লাবনীর কথা শুনে। মেয়েটার প্রতিটস কোথায় কেমন তৃপ্তি জড়ানো থাকে। মায়ায় মোড়ানো থাকে। ভালোলাগায় মন ভরে ওঠে মেয়েটার কথা শুনলে।

“আচ্ছা তুই জানিস তোকে আমি নিজের মেয়ে মনে করি না!”

লাবনী এমন কথায় কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
তবে কথার বাকি অংশ শুনে এই হুট করে খারাপ লাগাটা উবে গেলো।
“তুই আমার নিজের মেয়েই! তবে তুই আসলে আমাকে নিজের মা ভাবতেই পারিস নি। নাহলে আপনি আপনি করতি না ওমন। রোদ্রের মতো তুমি করে বলতি! ”

“আরে না মা। এখন থেকে তোমাকে তুমি করেই বলবো খুশি?”

“অনেক খুশি! এবার বল কিছু বলতে এসেছিলি? আর একটা কথা! তোকে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম তোর না ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়া বাকি..আমি এটা নিয়ে রোদ্রের সাথে কথা বলেছি আগামী কাল-পরশুর মধ্যে তোরা যাবি রোদ্র একটা ভালো দেখে ভার্সিটি ঠিক করেছে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ৷ তারপরও যদি তের অন্য কোথাও ভর্তি ইচ্ছে থাকে তাহলে সেটা রোদ্রকে জানাবি ঠিকাছে? এবার বল তুই কি বলবি..”

লাবনী অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। ও তে এটাই বলতে এসেছিল যে ওর এডমিশন নিতে হবে। এখন কথাটা কিভাবে বলবে বুঝছিল না। একটু চিন্তা হচ্ছিল কিন্তু সমস্যাই সমাধান হয়ে গেল এখন।
আর তাও এতো ভালো একটা ইউনিভার্সিটি তে! ও খুশি তে পারলে নেচে দেয়। রুমে গিয়ে এখন এটাই করবে। তারপর নামাজের সময় আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করবে।

“আসলে আমি ভার্সিটি এডমিশন নিয়েই বলতে এসেছিলাম। আর আমার কোনো প্রবলেম নেই ড্যাফোডিল তো অনেক ভালো ইউনিভার্সিটি। ”

“হুম ভালো মেয়ের জন্য ভালো ইউনিভার্সিটি ” কথাটা বলে রুপালী বেগম বর লাবনী দুজনই হেঁসে দেয়।

________________

নিজের রুমে বসে অনলাইনে ই-বুকিং করছিল লাবনী।
কিছুক্ষণ পড়ার পরও বিরক্ত হয়ে ওঠে। বই কে এভাবে পড়তে ভালো লাগে? ভালো লাগে হাতে করে বই নিয়ে সেই বইয়ে মুখ ডুবিয়ে পড়তে।

-“এভাবে বই পড়া তোর পক্ষে অসম্ভব লাবনী! ” লাবনী ব্রেন ও মন দুটোই একসাথে বলে ওঠে এই কথা।

মনে হলো ওর হোস্টেল থেকে ওর সব বই উপন্যাস তো ওর এক সিনিওর আপু প্রিতার ফ্ল্যাটে রেখেছিল ওই হোস্টেল ছেড়ে দিবে বলে। প্রিতাকে ফোন করা প্রয়োজন ভাবলো লাবনী। বিয়ের দিন ব্রাইডাল মেকাপ শেষে সব বান্ধবী আর সিনিওর দুই আপু প্রিতা ও হিয়া আপু দের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছিল তারপর আর কথা হয়নি ওদের সাথে। আজকে সবাই কেই ফোন করবে ভালো লাবনী। এই সিনিওর আপু আর বান্ধবীরা ওর ছোটখাটো ফ্যামিলি-ই ছিল হোস্টেল লাইফে। এখন তাদের কি করে ভুলে যাবে লাবনী!
শুরু টা প্রিতা কে দিয়েই করলো।
জুড়ে দিল আলাপ। আলাপ চললো রুপালী বেগমের ডাক পরা পর্যন্ত!

-“চলবে”

#writer_ishanur_inayat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here