#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম-শেষ পর্ব [১১]
লেখিকা:- ইশানূর ইনায়াত
লাবনীর ইউনিভার্সিটির ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম চলছে। একবছর হয়ে গিয়েছে প্রায় লাবনীর আর রোদ্রের সংসারের। মাঝখানে মান-অভিমান হয়েছে আমার
দুজনে দুজনের কাছেই ফিরেছে। আর এই বছরেই লাবনীর ননদ রুশমী ও শশুর রোহান খান ফিরছেন।
এক্সামের পড়া লাবনীর আগে থেকেই কভার হয়ে থাকার পরও রিভিশন দিতে হিমশিম খাচ্ছে লাবনী।
কোনটা ছেড়ে কোনটা রিভিশন দিবে নিয়ে কনফিউশানে ভোগে লাবনী।
রোদ্র ও নিজের রুমে স্টাডি টেবিলে পড়া রিভাইজ করছিল লাবনী। রোদ্র ও ল্যাপটপে কাজ করছে।
এই একবছর সময়ে ওদের সম্পর্কে লাবনীর আপনি থেকে তুমিতে এসেছে। সে এখন আপনি না তুমিই ডাকে রোদ্র কে।
পড়তে পড়তে ক্লান্ত বোধ করে পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়ে কোমড় চেপে দাঁড়িয়ে আবার চেয়ারে বসে পরলো লাবনী। রোদ্র চোখ ল্যাপটপে থাকলে চোখকোণ হতে বিষয় টা দৃষ্টিগোচর হলো না।
-” লাবনী? একটু এখানে এসে বসো তো…,কাজ আছে”
-” এখন আবার কি কাজ? ওয়েট করো আসছি। ” হাতের নোট প্যাড টা বন্ধ করে টেবিলে রেখে কলম টলম গুছিয়ে রেখে তারপর আসলো লাবনী।
-” বলো কি কাজ?”
-“কিছু না এমনেই!”
-” কিছু না মানে? এমনে এমনে মজা করার জন্য ডাকসো তুমি আমাকে? দেখছিলা পড়তাসি তাও? ফাজলামো না করলে দিন পার হয় না! ” তেতেঁ গিয়ে লাবনী বললো।
রোদ্র লাবনীর হাত মুঠোয় নিয়ে বললো,
-” আমি না ডাকলে তো আপনি নিজের কোমড় ব্যথায় নজর না দিয়ে ওই কাঠের চেয়ারেই সারা রাত পাড় করে দিতেন? নিজের খেয়াল তো আর আপনি রাখবেন না। যেহেতু আমি বান্দা আছি! আমারই খেয়াল রাখতে হবে তাই না?” বলতে বলতে লাবনীকে শুইয়ে দিল রোদ্র। গা কাঁথা দিয়ে ঢেকে দিল।
-“তুমি শুয়ে রেস্ট নাও। আমি স্ন্যাক্স নিয়ে আসছি।
খালি পেটে পড়া হয়না জনাবা! বুঝলেন?”
রোদ্র চলে গেল স্ন্যাক্স আনতে।
লাবনী রোদ্রের কেয়ারে সিক্ত।
-লেখিকা:ইশানূর ইনায়াত
এমন কেয়ার পাওয়া ভাগ্যের ও ভাগ্য!
রোদ্রের ফোনের রিংটোনে লাবনীর ভাবনায় ব্যঘাত ঘটলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ”Shoshur moshai”
নামে সেভ করা।
ফোন পিক করে বললো,
-“হ্যালো বাবা?”
-” কি রে মা! কেমন আছিস? নিজের বুড়ো বাপকে মনে পরে নাকি বিয়ে করে পর করে দিয়েছিস?”
-” কখনই না। মা-বাবা কখনই পর হতে পারে না। মরলেও না। আর আমি ফোন করলেই তো তুমি ব্যস্ত থাকো। ”
-” এখন আর ব্যস্ত থাকবাে না। এক কথা বলার ছিল রোদ্রকে কিন্তু এখন ভাবছি তোকেই বলি।.”
-” বলো বাবা…, আর একটা কথা তুমি বাংলাদেশে কবে আসছো?”
-“আসছি শিগ্রই! শোন আমি চাচ্ছি রোদ্র আমাদের বিজনেস এ জয়ন করুক..”
-” মানে? রোদ্র? রোদ্র বিজনেসে? ও আমাদের পারিবারিক বিজনেস এ? হঠাৎ? ”
-” কথা টা গত সপ্তাহ থেকেই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু বলবার মতন সাহস জোগাতে পারছি না। রোদ্র যতই হোক আমার জামাই এখন ওকে বললেও তো ভেবে বলতে হয়। তুই একটু বলিস ওকে এই ব্যাপারে। আমার আপন বলতে একমাত্র তোরা দুজনই সম্বল। তাই রোদ্রকে ফেলে অন্য কারোর হাতে বিজনেসের ভাড় তুলে দিতেও বাঁধ সাজছে। তুই যদি বিজনেস সামলানোর মতো এডাল্ট হতি তাহলে এই চিন্তা টা থাকতো না হয়তো। আশা করি তুই বুজতে পারছিস”
-“আচ্ছা। আমি তাহলে ওকে বলবো।”
-” হুম। ফোন করে জানাস। আর শোন তোর দাদীর শরীর টা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। পারলে রোদ্রকে নিয়ে দেখা করে আসিস আর নয়তো তুই একাই যাস।”
-“হুম।”
______________
নীল আকাশে সাদা তুলোর ন্যায় মেঘকুঞ্জ ভেসে বেড়াচ্ছে। সূর্যের মিষ্টি আলোয় ধরণীর সতেজতা
প্রকাশ হচ্ছে। সবুজে নীলে সাদায় মিলে প্রাকৃতিক এক অপূর্ব দৃষ্টি প্রকাশ পাচ্ছে। রোদ্র লাবনী পাশাপাশি হাঁটছে হাত ধরে। আজকে লাস্ট পরীক্ষা দিয়ে আসলো লাবনী। লাবনীর মুখে অসন্তুষ্টি প্রকাশ পাচ্ছে।
অসন্তুষ্টির কারণ পরীক্ষা নয় ইউভার্সিটির লু*চ্চা মহিলাগণ। যারা লাবনীর স্বামীকে নিজের স্বামী মনে করেই হ্যাংলার মতন চেয়েছিল।
লাবনীর মন চাচ্ছিল চোখ গুলো প্লাস্টিকরাপ দিয়ে রেপিং করে দিতে। আর রোদ্র কে বস্তায় ভরে রাখতে লুচি মহিলা গণ থেকে বাঁচানোর জন্য।
…….
কিছু প্রহরের অপেক্ষা সন্ধ্যার ফ্লাইটে ল্যান্ড করবে
রুশমী, রোহান খান।
বাসা জাঁকজমকপূর্ণ। দীর্ঘ প্রহরের অপেক্ষার শেষ মুহুর্তে যেন কাটছেই না। রুপালী বেগমের মুখে সেই আনন্দের ঝলক প্রতিমুহূর্তেই ঝলকে উঠছে।
রুশমীর রুম পরিষ্কার করিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন রুপালী বেগম।
লাবনীও বিয়ের পর ভিডিও কল ও ছাড়া ওদের সাথে সামনাসামনি দেখা করা হয়নি।
রুশমী মেয়েটা ভীষণ চঞ্চল সেটা লাবনীর এই গত এক বছরে ভিডিও কলের কথায় -ই জানা হয়ে গিয়েছে।
ভাবী বলতে পাগল মেয়েটা।
আর লাবনীর এখন দুইটা বাবা।
রোহান খান ফোন করলেই ওর সাথে কথা বলার জন্য ফোন চান। গল্প করেন, কি খেয়েছে না খেয়েছে জিজ্ঞেস করেন। ওনার ব্যবহারের নিজের পিতা স্নেহ অনুভব করে লাবনী। জীবনটা এতটাও সুখের হতে পারে সেটা এই পরিবারে আল্লাহ বিয়ে না করালে হয়তো জানতেই পারতো না লাবনী।
লাবনী আর রূপালী বেগম বাড়ির বাইরে গার্ডেনে দাঁড়িয়ে আছে ওদের অপেক্ষায়। পা ব্যথা করায় একজন গার্ডকে বলিয়ে একটা চেয়ার আনতে বলছিল লাবনী তখনই একটা বিড়াল ওর পায়ের সাথে চেপে বসে জড়সড় হয়ে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে একদম ৩/৪ দিনের বিড়াল ছানা। দেখে খুব মায়া হলো লাবনীর।
কোলে তুলে নিল। সাদার মধ্যে খয়েরী ছোপ ছোপ বিড়ালটা।
রুপালী বেগম বাম ভ্রু কুঁচকে শুধালেন,
“বিড়াল এলো কোথা থেকে?”
লাবনী স্নিগ্ধ হেঁসে বিড়ালের গায়ে হাত বুলিয়ে
দিয়ে বললো,
“জানিনা। এসেই পায়ের কাছে জড়সড় হয়ে বসে পরলো। একদম বাচ্চা পুচকে বিড়াল ছানা! কি কিউট..”
রোদ্রের গাড়ি এসে পরেছে।রুশমী গাড়ি থেকে নেমেই ওর মা’কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। চোখ হালকা পানি।এটা সুখের। রুপালী বেগম মেয়ের মাথায় অনবরত হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তারপর রুশমী গিয়ে লাবনী কেও জড়িয়ে ধরলো।
-“কেমন আছো ভাবি? ”
-” কেমন ছিলাম সেটা কথা নয় এখন তুমি এসে পরেছো এখন ভালোই থাকবো..”
-“ভালো ভাবি…..উম্মাহ.. ”
রুশমীর বাচ্চামো স্বভাব গুলোও সবার খুব প্রিয়।
রোহান শেখ গাড়িতে নেমে রুপালী বেগমের সামনে
রুপালী বেগম শুধু তৃপ্ত চোখে তাকিয়ে থাকলেন। সকলের সামনে কিছু না বললেও একা অনেক কথা বলার আছে দু’জনের।
______________
আজকে লাবনী আর রোদ্রের রিসেপশন। অনেক মানুষ জন এসেছে।
লাবনীর বাবাও এসেছে। ফুপু, রুহা ও এসেছে।
গতমাসে লাবনী আর রোদ্র একসাথে দেখা করে এসেছিল। তার একসপ্তাহের মাথায় উনি মারা যান।
লাবনীর মন খারাপ ছিল অনেক, তবুও শান্তি পেয়েছিল
যে দেখা টা অন্তত করে আসতে পেরেছে মানুষটার সাথে।
..…
রুহার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৫ মাস আগে। লাবনীর শাশুড়ি লাবনী রোদ্র গিয়েছিল। রুহা এখন নিজের কাজের জন্য লাবনীর কাছে লজ্জিত আগে যেই ব্যবহার করেছে সেই জন্য ফোন করে ক্ষমা চেয়েছে
এখন দেখা হওয়ার পরও ক্ষমা চেয়েছে।
রুপালী বেগমের বোন আর মিশুও এসেছে।
-“আপা রিসেপশন না আর এক মাস পরে হওয়ার কথা ছিল?”
-“আসলে রিসেপশন টা হঠাৎ করে করার কারণ একটা সুখবর আসত চলেছে আমাদের জীবনে সেইজন্যই রিসেশন টা করা। বুঝলি?”
-” মানে? ও লাবনী কোথায় মেয়েটার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলা হয়নি আসার পর থেকে। মিশু কে এখন বলবো না বললেই লাফানো শুরু করবে..”
মিশু উদয় হয়ে বললো,
“কি বলবা না আমাকে আম্মু?
-” ও কিছু না সর লাবনীর সাথে দেখা করে আসি।”
লাবনী ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।
বাসায় সুখবরের ছড়াছড়ি রোদ্র এই ভীরের মধ্যে লাবনীর হাত চেপে ধরে রেখেছে।
লাবনী বারবার ছাড়তে বলার পরও ছাড়ছেই না।
-” ছাড়ো তো!”
-“জীবনেও ছাড়বো না।”
-” এই সময়ে প্রেম করতে মন চাইছে তোমার? আজব”
-” আজবের কি আছে হু? আমার এই কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম সারাজীবন চলবে”
-“হইছে” ভেঙচি কাটলো লাবনী।
-” সমাপ্ত”