কৃষ্ণকলির গল্প-02

#কৃষ্ণকলির গল্প-02
লেখনীতে-বর্ষা ইসলাম

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। সারা টা দিন প্রিয়তার উপর নজর রাখছি। আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রিয়তার অবস্থার কোনো অবনতি আমার চোখে পড়ছেনা। জগের পানি তলানিতে। তার মানে এই দাড়ায় প্রিয়তা মেডিসিন মেশানো সমস্ত পানি খেয়ে নিয়েছে। কিন্তু ডক্টর বলেছিলো এই মেডিসিন খাওয়ার ঘন্টা খানিকের মধ্যেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হবে। সাথে ব্লিডিং। একটু একটু করে বাচ্চা টা রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। অথচ তিন চার ঘন্টা পার হয়ে গেলেও কোনো ফলাফল আমি দেখতে পাচ্ছি না। প্রিয়তা দিব্যি রান্না ঘরে ঢুকে সন্ধ্যার নাস্তার আয়োজন করছে। তবে কি ডক্টর তাকে ভুল ঔষধ দিলো? ধোকা দিলো?

মাথা কাজ করছে না। সাত পাচ ভাবতে ভাবতে ডক্টরের নাম্বারে ডায়াল করে ফোন কানে ধরতেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো প্রিয়তা। এক হাতে চায়ের কাপ অন্য হাতে ধোঁয়া উঠা গরম গরম নুডুলস। মুখে তার অদ্ভুত হাসি। আজকের এই হাসিতে একটু অন্য রকম লাগছে তাকে। নিজের ভেতরে ভেতরে কেমন ভয় হতে লাগলো। চায়ের কাপ আর নুডুলসের বাটি টা টেবিলের উপর রেখে সোফায় বসে পড়লো প্রিয়তা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। প্রচন্ড গরমে ভিজে উঠেছে শাড়ি হতে পিঠে ল্যাপ্টে থাকা ব্লাউজের ভাজ। কপালের ঘাম গুলো শাড়ির আঁচলে মুছে ফেলে আমার চোখে চোখ রাখলো। ঠোঁটের কোনে শুষ্ক হাসি ফুটিয়ে তুলে ঠান্ডা মেজাজে শক্ত গলায় বললো,

‘জগের পানিতে মেডিসিন না মিশিয়ে বিষ মিশিয়ে দিলে বোধ একটু বেশি ভালো হতো। কোন ঝড় ঝামেলা ছাড়াই মা সন্তান দুজনেই আল্লাহর মেহমান হয়ে যেতাম। তাই না শুভ্র?

প্রিয়তার এমন সোজা সাপটা কথাও আমার কাছে কঠিন মনে হলো। বুঝেও যেনো কিছু বুঝলাম না। না বুঝতে পেরে খানিক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রিয়তা আবারও হাসলো। হেসে হেসেই আবার বলে উঠলো,

‘আমি তখনো ঠিকঠাক ঘুমায়নি শুভ্র। ঘুমের ভান ধরে ছিলাম। নয়তো তোমার এমন অমানুষের মুখোশ টা কি দেখতে পেতাম বলো? শুভ্র একজন সুন্দর চামড়ার অসুন্দর,অযোগ্য স্বামী বলে জানতাম। সে যে একজন খুনী আর কুলাঙ্গার পিতা সেটা জানতাম না।

‘,প্রিয়তার এমন বাকা কথা শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে সর্বশক্তি দিয়ে প্রিয়তার গলা চেপে ধরলাম। প্রিয়তা ছটফট করতে লাগলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এতোদিনের সমস্ত রাগ যেনো আজ ঠেলেঠুলে বের হয়ে আসতে লাগলো। প্রিয়তার গলা চেপে ধরেই দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

‘এই, তোর সাহস কি করে হয় আমার মুখের উপর কথা বলার? পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ আমি। তবে মনে রাখিস এটা শুধুই তোর জন্য। আমি তোর বেলাতেই খারাপ। অন্য কোথাও না। আর কি যেনো বললি? আমি কুলাঙ্গার? হ্যা? আমি কুলাঙ্গার? কথাটা মুখ ফুটে বলতে একবারও বুক কাঁপলো না তোর? কাঁপলো না?

কথা গুলো বলেই প্রিয়তার গলা ছেড়ে দিয়ে গালে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলাম। প্রিয়তা সোফা ছেড়ে ছিটকে পড়ে গেলো।আধ সোয়া হয়ে ফ্লোরে উল্টো হয়ে পড়ে আছে। নড়তে চড়তে পারছেনা। আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। দৌড়ে উঠে গিয়ে পিঠ আর কোমড়ের মাঝ বরাবর লাগাতার কয়েকবার লাথি বসিয়ে দিলাম। আল্লাহ গো, বলে চিৎকার দিয়ে প্রিয়তা পুরোপুরি ভাবে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর মুখে আর চিৎকার করতে পারছে না। শুধু গোঙানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। থেমে থেমে ব্যথায় কুকিয়ে উঠছে। হঠাৎ পায়ের দিকে চোখ পড়তেই ভয়ে খানিক আৎকে উঠলাম আমি। প্রিয়তার পা বেয়ে রক্তের স্রোত ধরেছে। ফ্লোর,শাড়ি রক্তে মাখামাখি অবস্থা। ততক্ষণে প্রিয়তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অচেতন হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মেঝের উপরে।

আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। আসিফ, আমার বন্ধু। ওকে ফোন করলাম। আসিফ বললো যত তাড়াতাড়ি পারিস হসপিটালে নিয়ে যা। বাকীটা পড়ে দেখা যাবে। আসিফের সাথে কথা শেষ করে প্রিয়তাকে পাঁজা কোলে নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। রাস্তায় একটা সিএনজি ডেকে চলে গেলে হসপিটালে।

‘প্রিয়তার এমন করুন অবস্থা দেখে ডক্টর, নার্স বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে লাগলো। এমন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি হিমশিম খাচ্ছি। তবুও যা পারছি তাই বলে প্রশ্ন কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রিয়তা কে কেবিনে নেওয়ার আগে নার্স আবারও প্রশ্ন করলো, সত্যি করে বলুন এই অবস্থা কিভাবে হলো?

‘আমি বরাবরের মতো একই উত্তর দিলাম,

‘ওয়াশরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে।

পাশ থেকে ডক্টর বললেন,

‘রোগিকে ইমিডিয়েট ওটিতে নিতে হবে। এই ভাবে কেবিনে ফেলে রাখলে খারাপ কিছু হতে পারে।

‘উপরে অসস্তি ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে খুশীই হলাম। খারাপ কিছু হয়ে মরে গেলেই ভালো। আমার রাস্তা ক্লিয়ার। ডিভোর্স, মানহানি, লোকজনের কথা শোনা,এসব বিষয়ে অন্তত ঝামেলা পোহাতে হবেনা।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে ডক্টর আবার বলে উঠলেন,

‘যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আপনি পেপার গুলোতে সই করে পেমেন্ট করে আসুন। আমরা রোগীর অপারেশনের ব্যবস্থা করছি।

‘আমার মনে হলো আমি বিপদে পড়ে গেলাম। এ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে বুদ্ধি খাটাতে হবে। নিজেকে ইতস্তত করে দুঃখী গলায় বললাম,

‘এই মুহূর্তে আমার কাছে টাকা পয়সা কিচ্ছু নেই। আপনারা বরং ঘন্টা খানিক সময় দেন। আমি টাকার ব্যবস্থা করে আসছি।

এই কথা বলে কোনোমতে হসপিটাল থেকে এক প্রকার চোরের মতো পালিয়ে চলে আসলাম। দিনের পর দিন চলে গেলো প্রিয়তার আর কোনো খোঁজ খবর নিলাম না।

এর পরেই শুরু হলো প্রকৃতির প্রতিশোধ। এক দিন,দু দিন করে মাস চলে গেলো। পুরো বাড়িতে আমি একা। প্রিয়তা কে হসপিটালে ফেলে আসার দু দিন পরই বিয়ে করি রাফিয়াত কে। বিয়ের কিছুদিন ভালোভাবেই কেটে গেলো। সপ্তাহ দুয়েক পর খেয়াল করলাম আমি শারিরীক ভাবে খুবই দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। হাত পা শুকিয়ে যাচ্ছে। চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পর পর দম আটকে যাওয়া কাশিও শুরু হয়েছে। থেকে থেকে কাশির সাথে গলগল করে মেঝেতে ঢেলে পড়ছে তাজা রক্ত।

আর দেরি না করে রাফিয়াত কে সাথে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেলাম। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেদিনের মতো বাসায় ফিরে আসলাম। পরদিন সকাল বেলা আসিফ সমস্ত রিপোর্ট নিয়ে আমার বাসায় আসলো। আসিফের মুখ কেমন শুকনো দেখাচ্ছে। বিধ্বস্ত লাগছে। আমি আধশোয়া হয়ে বিছানায় বসে আছি। আসিফ দেখে মুচকি হাসলাম। হেসে হেসেই জিজ্ঞেস করলাম,

‘রিপোর্ট এনেছিস? সব ঠিকঠাক আছে তো?

আসিফ কোনো কথা বললো না। রিপোর্ট গুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

‘তুই সময় করে দেখে নিস। আমার একটু কাজ আছে। আমি আসি এখন। পরে কথা হবে।

কথা গুলো বলেই আসিফ চলে গেলো। আমার আর দেরি সইলো না। আসিফ চলে যাওয়া মাত্রই রিপোর্ট গুলো খুলে পড়তে লাগলাম। এক এক করে দেখতে লাগলাম। যতই রিপোর্টের পাতা উল্টোচ্ছি ততই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো। মাথার উপর ভনভন করে ফ্যান চলা সত্বেও অনবরত ঘামছি আমি। আমার পৃথিবী ঘুরছে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যাচ্ছে। রিপোর্টে স্পষ্ট করে লেখা আছে,

‘আমি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত সাথে এইডস পজেটিভ’

চলবে,,
লেখনীতে-বর্ষা ইসলাম

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। সারা টা দিন প্রিয়তার উপর নজর রাখছি। আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রিয়তার অবস্থার কোনো অবনতি আমার চোখে পড়ছেনা। জগের পানি তলানিতে। তার মানে এই দাড়ায় প্রিয়তা মেডিসিন মেশানো সমস্ত পানি খেয়ে নিয়েছে। কিন্তু ডক্টর বলেছিলো এই মেডিসিন খাওয়ার ঘন্টা খানিকের মধ্যেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হবে। সাথে ব্লিডিং। একটু একটু করে বাচ্চা টা রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। অথচ তিন চার ঘন্টা পার হয়ে গেলেও কোনো ফলাফল আমি দেখতে পাচ্ছি না। প্রিয়তা দিব্যি রান্না ঘরে ঢুকে সন্ধ্যার নাস্তার আয়োজন করছে। তবে কি ডক্টর তাকে ভুল ঔষধ দিলো? ধোকা দিলো?

মাথা কাজ করছে না। সাত পাচ ভাবতে ভাবতে ডক্টরের নাম্বারে ডায়াল করে ফোন কানে ধরতেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো প্রিয়তা। এক হাতে চায়ের কাপ অন্য হাতে ধোঁয়া উঠা গরম গরম নুডুলস। মুখে তার অদ্ভুত হাসি। আজকের এই হাসিতে একটু অন্য রকম লাগছে তাকে। নিজের ভেতরে ভেতরে কেমন ভয় হতে লাগলো। চায়ের কাপ আর নুডুলসের বাটি টা টেবিলের উপর রেখে সোফায় বসে পড়লো প্রিয়তা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। প্রচন্ড গরমে ভিজে উঠেছে শাড়ি হতে পিঠে ল্যাপ্টে থাকা ব্লাউজের ভাজ। কপালের ঘাম গুলো শাড়ির আঁচলে মুছে ফেলে আমার চোখে চোখ রাখলো। ঠোঁটের কোনে শুষ্ক হাসি ফুটিয়ে তুলে ঠান্ডা মেজাজে শক্ত গলায় বললো,

‘জগের পানিতে মেডিসিন না মিশিয়ে বিষ মিশিয়ে দিলে বোধ একটু বেশি ভালো হতো। কোন ঝড় ঝামেলা ছাড়াই মা সন্তান দুজনেই আল্লাহর মেহমান হয়ে যেতাম। তাই না শুভ্র?

প্রিয়তার এমন সোজা সাপটা কথাও আমার কাছে কঠিন মনে হলো। বুঝেও যেনো কিছু বুঝলাম না। না বুঝতে পেরে খানিক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রিয়তা আবারও হাসলো। হেসে হেসেই আবার বলে উঠলো,

‘আমি তখনো ঠিকঠাক ঘুমায়নি শুভ্র। ঘুমের ভান ধরে ছিলাম। নয়তো তোমার এমন অমানুষের মুখোশ টা কি দেখতে পেতাম বলো? শুভ্র একজন সুন্দর চামড়ার অসুন্দর,অযোগ্য স্বামী বলে জানতাম। সে যে একজন খুনী আর কুলাঙ্গার পিতা সেটা জানতাম না।

‘,প্রিয়তার এমন বাকা কথা শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে সর্বশক্তি দিয়ে প্রিয়তার গলা চেপে ধরলাম। প্রিয়তা ছটফট করতে লাগলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এতোদিনের সমস্ত রাগ যেনো আজ ঠেলেঠুলে বের হয়ে আসতে লাগলো। প্রিয়তার গলা চেপে ধরেই দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

‘এই, তোর সাহস কি করে হয় আমার মুখের উপর কথা বলার? পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ আমি। তবে মনে রাখিস এটা শুধুই তোর জন্য। আমি তোর বেলাতেই খারাপ। অন্য কোথাও না। আর কি যেনো বললি? আমি কুলাঙ্গার? হ্যা? আমি কুলাঙ্গার? কথাটা মুখ ফুটে বলতে একবারও বুক কাঁপলো না তোর? কাঁপলো না?

কথা গুলো বলেই প্রিয়তার গলা ছেড়ে দিয়ে গালে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলাম। প্রিয়তা সোফা ছেড়ে ছিটকে পড়ে গেলো।আধ সোয়া হয়ে ফ্লোরে উল্টো হয়ে পড়ে আছে। নড়তে চড়তে পারছেনা। আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। দৌড়ে উঠে গিয়ে পিঠ আর কোমড়ের মাঝ বরাবর লাগাতার কয়েকবার লাথি বসিয়ে দিলাম। আল্লাহ গো, বলে চিৎকার দিয়ে প্রিয়তা পুরোপুরি ভাবে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর মুখে আর চিৎকার করতে পারছে না। শুধু গোঙানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। থেমে থেমে ব্যথায় কুকিয়ে উঠছে। হঠাৎ পায়ের দিকে চোখ পড়তেই ভয়ে খানিক আৎকে উঠলাম আমি। প্রিয়তার পা বেয়ে রক্তের স্রোত ধরেছে। ফ্লোর,শাড়ি রক্তে মাখামাখি অবস্থা। ততক্ষণে প্রিয়তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অচেতন হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মেঝের উপরে।

আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। আসিফ, আমার বন্ধু। ওকে ফোন করলাম। আসিফ বললো যত তাড়াতাড়ি পারিস হসপিটালে নিয়ে যা। বাকীটা পড়ে দেখা যাবে। আসিফের সাথে কথা শেষ করে প্রিয়তাকে পাঁজা কোলে নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। রাস্তায় একটা সিএনজি ডেকে চলে গেলে হসপিটালে।

‘প্রিয়তার এমন করুন অবস্থা দেখে ডক্টর, নার্স বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে লাগলো। এমন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি হিমশিম খাচ্ছি। তবুও যা পারছি তাই বলে প্রশ্ন কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রিয়তা কে কেবিনে নেওয়ার আগে নার্স আবারও প্রশ্ন করলো, সত্যি করে বলুন এই অবস্থা কিভাবে হলো?

‘আমি বরাবরের মতো একই উত্তর দিলাম,

‘ওয়াশরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে।

পাশ থেকে ডক্টর বললেন,

‘রোগিকে ইমিডিয়েট ওটিতে নিতে হবে। এই ভাবে কেবিনে ফেলে রাখলে খারাপ কিছু হতে পারে।

‘উপরে অসস্তি ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে খুশীই হলাম। খারাপ কিছু হয়ে মরে গেলেই ভালো। আমার রাস্তা ক্লিয়ার। ডিভোর্স, মানহানি, লোকজনের কথা শোনা,এসব বিষয়ে অন্তত ঝামেলা পোহাতে হবেনা।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে ডক্টর আবার বলে উঠলেন,

‘যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আপনি পেপার গুলোতে সই করে পেমেন্ট করে আসুন। আমরা রোগীর অপারেশনের ব্যবস্থা করছি।

‘আমার মনে হলো আমি বিপদে পড়ে গেলাম। এ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে বুদ্ধি খাটাতে হবে। নিজেকে ইতস্তত করে দুঃখী গলায় বললাম,

‘এই মুহূর্তে আমার কাছে টাকা পয়সা কিচ্ছু নেই। আপনারা বরং ঘন্টা খানিক সময় দেন। আমি টাকার ব্যবস্থা করে আসছি।

এই কথা বলে কোনোমতে হসপিটাল থেকে এক প্রকার চোরের মতো পালিয়ে চলে আসলাম। দিনের পর দিন চলে গেলো প্রিয়তার আর কোনো খোঁজ খবর নিলাম না।

এর পরেই শুরু হলো প্রকৃতির প্রতিশোধ। এক দিন,দু দিন করে মাস চলে গেলো। পুরো বাড়িতে আমি একা। প্রিয়তা কে হসপিটালে ফেলে আসার দু দিন পরই বিয়ে করি রাফিয়াত কে। বিয়ের কিছুদিন ভালোভাবেই কেটে গেলো। সপ্তাহ দুয়েক পর খেয়াল করলাম আমি শারিরীক ভাবে খুবই দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। হাত পা শুকিয়ে যাচ্ছে। চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পর পর দম আটকে যাওয়া কাশিও শুরু হয়েছে। থেকে থেকে কাশির সাথে গলগল করে মেঝেতে ঢেলে পড়ছে তাজা রক্ত।

আর দেরি না করে রাফিয়াত কে সাথে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেলাম। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেদিনের মতো বাসায় ফিরে আসলাম। পরদিন সকাল বেলা আসিফ সমস্ত রিপোর্ট নিয়ে আমার বাসায় আসলো। আসিফের মুখ কেমন শুকনো দেখাচ্ছে। বিধ্বস্ত লাগছে। আমি আধশোয়া হয়ে বিছানায় বসে আছি। আসিফ দেখে মুচকি হাসলাম। হেসে হেসেই জিজ্ঞেস করলাম,

‘রিপোর্ট এনেছিস? সব ঠিকঠাক আছে তো?

আসিফ কোনো কথা বললো না। রিপোর্ট গুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

‘তুই সময় করে দেখে নিস। আমার একটু কাজ আছে। আমি আসি এখন। পরে কথা হবে।

কথা গুলো বলেই আসিফ চলে গেলো। আমার আর দেরি সইলো না। আসিফ চলে যাওয়া মাত্রই রিপোর্ট গুলো খুলে পড়তে লাগলাম। এক এক করে দেখতে লাগলাম। যতই রিপোর্টের পাতা উল্টোচ্ছি ততই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো। মাথার উপর ভনভন করে ফ্যান চলা সত্বেও অনবরত ঘামছি আমি। আমার পৃথিবী ঘুরছে। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যাচ্ছে। রিপোর্টে স্পষ্ট করে লেখা আছে,

‘আমি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত সাথে এইডস পজেটিভ’

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here