কুঞ্জবাড়ি,পর্ব-২

কুঞ্জবাড়ি,পর্ব-২
মাহফুজা মনিরা

নেহাল বিষ্মিত গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” তুমি কাঁপছো কেনো চন্দ্রি? একা বাড়িতে ভয় পেয়েছিলে?”
চন্দ্রিকা নিজেকে শক্ত করলো। মুখ তুলে কোনোরকমে বলল,
-” তোমার কি আমাকে ভীতু মনে হয়? আমি পাবো ভয়? মোটেও না..”
নেহাল হাসলো। রুমে ঢুকে ডায়নিং টেবিলে গিয়ে বসলো।
-” ভেবে বলছো তো? এই পুরো বাড়িতে কিন্তু আমরা দুই টোনাটুনিই। আর কেউ নেই।”
চন্দ্রিকা ঢোক লুকিয়ে বলল,
-” আমি সত্যিই ভয় পাইনা নেহাল।”
চন্দ্রিকা লাইট জ্বালিয়ে দেয় রুমের। নিজ থেকে জিজ্ঞেস করে,
-” আচ্ছা, অন্য রুম দুটোয় তালা দেওয়া কেনো?”
-” আমিও জানিনা। বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল ওগুলোতে নাকি তাদের আসবাবপত্র দিয়ে ভরা। তাই…”
-” বাড়িওয়ালা কোথায় থাকে?”
-” নারায়ণগঞ্জ। ওখানে আরেকটা বাড়ি আছে তাদের। সেখানেই…”
-” ওহ।”
-” তো ম্যাডামের প্রশ্নের ঝুড়ি শেষ হলে খাবার বাড়েন। অনেক ক্ষিদা লাগছে।”
ক্ষিদার নাম শুনতেই চন্দ্রিকার পেটের ভেতর গুটগুট করে উঠলো। সে ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বলল,
-” তুমি ফ্রেশ হও। আমি খাবার দিচ্ছি।”

রান্নাঘরে যাওয়া মাত্রই আরেকটা শক খেলো চন্দ্রিকা। বেগুন ভাজা গুলো বাটিতেই পড়ে আছে। তাহলে তখন যে হাজার খুঁজেও পেলো না! সে কি পাগল হয়ে গেলো? নাকি ঘুম থেকে উঠার কারনে ঠিকঠাক দেখেনি। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি তার সাথে। চন্দ্রিকা বিড়বিড় করে বলল,
-” কি অদ্ভুত!!”

খাবার টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখে চন্দ্রিকা। নেহাল ফ্রেশ হয়ে এলে দুজনে একসাথে বসে খাওয়া টা শেষ করে। খাওয়া শেষে নেহাল বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। শরীর টা একদম ছেড়ে দিয়েছে তার…
চন্দ্রিকা টেবিল গুছিয়ে বিছানায় এসে বসা মাত্রই নেহাল বলল,
-” ডার্লিং। আরেকটা কাজ দিবো এখন। প্লীজ কাজ টা করে দাও।”
চন্দ্রিকা মৃদু হেসে বলল,
-” এমন ভাবে বলছো যেন তুমি কিছু বললে আমি করিনা! আচ্ছা কি কাজ বলো..”
-” এক কাপ চা। তোমার হাতের চা না খেলে মোর পরাণ যে জুরায় না।”
নেহাল কথা খানা বলল, সুর করে করে। চন্দ্রিকা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
-” নেহাল! ইউ আর সাচ এ সুইটি! আমি যাচ্ছি। জাস্ট পাঁচ মিনিট দাও।”

চন্দ্রিকা চলে যায়। নেহাল বুকে প্রশান্তি নিয়ে চোখ দুটো বুজে। চোখের পাতায় ভেসে আসে ৪ বছর আগের সেই দিনটি….

চার বছর আগে…
এক শুক্রবার……অফিস ছুটির দিন। সন্ধ্যার পরে নেহাল আর তার বন্ধু জুয়েল মিলে বারে যায়। জুয়েল সচরাচর ড্রিংকস করতো। কিন্তু নেহাল এর আগে কখনোই করেনি। সেবারই প্রথম যাওয়া তাও জুয়েলের খপ্পরে পড়ে….
একছিপ ড্রিংকস নিতেই নেহাল বেশামাল হয়ে পড়ে। মাতালের মতো এদিক সেদিক ছোটাছুটি লাগায়। জুয়েল বুঝলো, ব্যাপার বেগতিক। তাই নেহাল কে ধরে তার বাসায় নিয়ে আসে। নেহাল থাকতো তখন বারিধারায়…এক বিল্ডিং এর ছ’তলায়। একাই…
জুয়েল বাড়ির এড্রেস জানতো। কিন্তু জানতো না কত তালায়… এর আগে কোনোদিনই এই বাসায় আসা হয়ে উঠেনি তার। নেহাল কে জিজ্ঞেস করলে, নেহাল উত্তরে বলে,
-” ৫ তলা…”
জুয়েল নিয়ে যায়। ৫ তলায় দুটো ইউনিট। একটার দরজায় তালা মারা,আরেকটা তালা ছাড়া…
জুয়েল তালাছাড়া ফ্ল্যাট টার কলিং বেল চাঁপলে বেরিয়ে আসে গোল গাল চেহারার এক প্রিয়দর্শিনী। জুয়েল থতমত খায়। বলে,
-” এটা তো নেহালের ফ্ল্যাট!”
মেয়েটা তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,
-” এখানে কোনো নেহাল থাকে না।”
জুয়েল এককাধে ভর দিয়ে নেহাল তখন ঝিমাচ্ছিল। উঁচু কথায় সে পিটপিট করে চোখ খুলে বিড়বিড় করে বলে,
-” আমার বউ!”
মেয়েটা তৎক্ষনাৎ দু ভ্রু কুঁচকে ফেলে। কিছু বলতে নেওয়ার আগেই নেহাল ঝুকে গিয়ে বমি করে দেয়। বমির কিছু অংশ গিয়ে পড়ে চন্দ্রিকার গায়ে, পায়ে।

এভাবেই প্রথম পরিচয় হয়েছিল দুজনার। তারপর ৪ মাস দেখাদেখির পালা। তারপর আড়াই বছর চুটিয়ে প্রেম করে ফ্যামিলি সহমতে বিয়ে….
আহ! জীবন কত সুন্দর!

হঠাৎই চন্দ্রিকার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ,সমস্ত ভাবনার সুতো ছিড়ে ফালা ফালা করে দিলো। চন্দ্রিকা চেঁচিয়ে ডাকছে,
-” চা-পাতি কই? এই নেহাল..এই বয়রা। চা-পাতি কই রাখছো?”

নেহাল বিরষ মুখে রান্না ঘরে আসে। চন্দ্রিকা কোমরে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে।
-” বলছিলাম সব কিছু গুছিয়ে রাখতে। কিন্তু কোথায় যে কি রাখছো,কিচ্ছু খুঁজে পাইনা।”

নেহাল বিনা বাক্যে মিটসেলফের উপর আঙুল তাক করে।
-” ওইটা কী? আমার মাথা নাকি তোমার মাথা?”

চন্দ্রিকা চেয়ে দেখে এতক্ষণ যেখানে তন্নতন্ন করে চা-পাতি খুঁজছিল সেখানেই আছে জিনিসটা…অথচ সে পেলো না! চন্দ্রিকা হতবাক হয়ে পড়ে। আমতাআমতা করে বলে,
-” আমি এতক্ষণ ধরে খুঁজলাম….”
-” তবুও তো পাবে না। কারন তোমার তো চোখ নাই। তোমার চোখ হাঁসে খাইছে!!”
নেহাল গজগজ করতে করতে রুমের দিকে আগায়। আর চন্দ্রিকা ভাবে,এসব কি হচ্ছে তার সাথে????

_______________________________________

সকাল সকাল নেহাল অফিসের জন্য বেরিয়ে যায়। কাজ টাজ সেড়ে চন্দ্রিকা ছাদে এসে বসে। ছাদ টাও ছোট,চারপাশে কোনো রেলিং নেই। তবে এখানে লেখালেখি করতে ভালোই লাগবে তার।
চেয়ার নিয়ে এসেছে সাথে একটা ডায়েরি। এখন চলছে জুন মাস। আর মাত্র ৮ মাস বাকি ফেব্রুয়ারীর। অথচ উপন্যাসের একটা অক্ষর ও লেখা হয়নি তার। চন্দ্রিকা আপনমনে বসে ধ্যানে ডুবে যায়। ভাবছে কোথা থেকে গুছাবে গল্পের….

ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। পরিবেশ একেবারেই শান্ত। হঠাৎ করে ঝুপ করে পানিতে কিছু পড়ার শব্দ হয়। চন্দ্রিকা লাফিয়ে উঠে। চেয়ারে বসে থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। এখান থেকে স্পষ্ট পুকুর টা…
পুকুরের পানি টলমল করছে মাঝটায়। ওখানেই কিছু একটা পড়েছে নির্ঘাত। চন্দ্রিকার ভেতরের মন বলে,হয়তো নারিকেল পড়ছে! চন্দ্রিকা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবার ধ্যানে ডুবার চেষ্টা করে। কিন্তু হচ্ছে না আর…বারবার মনোযোগে বাধা ঘটছে। একসময় বিরক্তি নিয়ে সে উঠে পড়ে। ধাপধাপ সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে আসে ঘরে। কিছুই ভাল লাগছে না তার। একলা বাড়ি,সঙ্গী নেই কোনো….

ডায়েরি ঘরে রেখে চন্দ্রিকা বাহিরে বের হয়। বাগান টায় ঘুরে ঘুরে দেখে। ফুলের গাছ নেই একটিও। কিছু বুনো গাছ, আর হাবিজাবি গাছে ভরপুর। চন্দ্রিকা মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, জায়গা টা পরিষ্কার করে একটা ছোট বাগান করবে এখানে। বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসে। চন্দ্রিকা মুখ তুলে তাকায়। লম্বা পা ফেলে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দেখে একজন প্রৌঢ়া মহিলা দাঁড়িয়ে।
চন্দ্রিকা জিজ্ঞেস করলো,
-” কাকে চান?”
-” কাউকেই না। তোমরা কি এখানে নতুন এসেছো?”
চন্দ্রিকা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
-” আর কেউ নেই বাসায়?”
-” আছে। আমি আর আমার স্বামী থাকি। এখন আপাতত ও অফিসে তাই বাসায় আমি একাই।”
কথাটা শোনামাত্র মহিলার কপাল কুঁচকে আসে আপনা আপনি। তিনি বললেন,
-” আমি জাবেদা। ঐ যে দূরে যে বাড়িটা দেখছো,ওখানেই থাকি। সাথে দুই ছেলে,ছেলের বউও আছে। নতুন এসেছো তাই পরিচিত হতে এলাম।”
চন্দ্রিকা মুখে সৌজন্যমূলক হাসি ফুটিয়ে বলল,
-” আসুন। ভেতরে আসুন। এক কাপ চা খেয়ে যান।”
-” না না। আজ না। অন্য কোনোদিন। আজ আসি…”
মহিলা চলে যেতে নিয়ে আবার পেছন ফিরে ব্যাক আসে।
-” শোনো,সাবধানে থাকবে। যদি কোনো সমস্যা হয়,আমার বাসায় যেও। কেমন?”
চন্দ্রিকা এই সাবধানে থাকতে বলার অর্থ বুঝলো না। তবুও ঘাড় কাত করে বলল,
-” জ্বি খালা।”
-” আজ আসি মা..”
মহিলা চলে গেলেন। চন্দ্রিকা দরজা আটকে ভেতরে আসে। আবারো একা লাগছে তার নিজেকে….

________________________________________

দুপুরের পর….
গোসল সেড়ে নিজ রুমে আসে চন্দ্রিকা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল গুলো আঁচড়াচ্ছিল আর গুনগুন করে গানের সুর তুলছিল। এমন সময় রুমের জানালা টা তড়াক করে লেগে যায়। আদিকালের কাঠের জানালা৷ ভীষণ শব্দ করে উঠে। চন্দ্রিকা ভয়ে আৎকে উঠে। যখন বুঝলো ব্যাপার খানা,একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে জানালা টা খুলে দেয়। বাহিরের পেলব রোদ্দুর অবশিষ্ট নেই…কালো মেঘে ভরা আকাশ। বাতাস ও আছে মৃদুমন্দ। চন্দ্রিকা ভাবে,বৃষ্টি হবে। এর আগে বৃষ্টির সময়টায় চন্দ্রিকার একটা উত্তেজনা কাজ করতো ভেতরে ভেতরে। ভালো লাগা কাজ করতো। এককাপ কফি,আর সামান্য কিছু ভাজাপোড়া নিয়ে বসে পড়তো জানালার পাশে…কিন্তু আজ,একদমই উত্তেজনা লাগছে না। বরং লাগছে ভয়৷ এবাসায় আসার পর সবকিছুই যেন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে….
জানালা আটকে দেয় চন্দ্রিকা। রান্নাঘরে গিয়ে সেখানের জানালাও আটকায়। হঠাৎ একটা চাপা আওয়াজ শুনতে পায় সে। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলে বুঝে,আওয়াজ টা আসছে রান্নাঘরের দেয়াল থেকে….
ভয়ে চন্দ্রিকার গলা শুকিয়ে আসে। চন্দ্রিকা কাঁপা শরীরে দেয়ালের কাছাকাছি যায়। কান রাখতেই শুনতে পায়, কে যেন ভেতরে আছে! গোঙাচ্ছে….!
সেই গোঙানীর শব্দে তীব্র যন্ত্রণা,তীব্র কষ্ট স্পষ্ট! চন্দ্রিকা কাঁপা কাঁপা গলায় কয়েকবার বলে,
-” কেউ কি আছেন? কে?”
কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। হুট করেই গোঙানির আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। ভয়ে শরীরের পশম সব কাটা কাটা হয়ে উঠেছে। চন্দ্রিকা একদণ্ড দেড়ি করে না। দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দেয়। বুকটা হাপরের মতো উঠছে নামছে। চন্দ্রিকা ফোন হাতে নিয়ে নেহাল কে ফোন করে। কিন্তু ওপাশ থেকে নেহালের সাড়াশব্দ নেই। ভয়ে আর আতংকে চন্দ্রিকা কেঁদেই ফেলে….

বাহিরে ততক্ষণে তান্ডব শুরু হয়ে গেছে। ঝড়ো হাওয়া উড়ে যাচ্ছে উত্তর থেকে দক্ষিণে। কলিং বেল বাজে। চন্দ্রিকার হৃদপিণ্ড আরেকবার জানান দেয় ভয়ের। ফোন রেখে কাঁপা কাঁপা পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” কে?”
ওপাশ থেকে ভারী মিষ্টি একটা কণ্ঠ ভেসে আসে,
-” একটু দরজাটা খুলবেন আপু? আমি মণিকা।”
চন্দ্রিকা মনে আবার সাহস ফিরে পায়। তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে দেখে নীল শাড়ি পরিহিতা একটা রূপবতী মেয়ে দাঁড়িয়ে। মেয়েটা অন্তসত্তা। মণিকা বলল,
-” বাহিরে খুব ঝড় হচ্ছে। একটু আশ্রয় পাওয়া যাবে? এ অবস্থায় কোথাও যেতে পারছি না।”
চন্দ্রিকা হাসিমুখে মেয়েটাকে ভেতরে আসতে বলে। নিয়ে যায় সোফার রুমে। মণিকা বসতে বসতে বলল,
-” এক গ্লাস পানি হবে?”
-” হ্যাঁ। আনছি এখুনি।”
চন্দ্রিকা পানি এনে দেয়। তবে মেয়েটা খেলো না। গ্লাস ভর্তি পানি টেবিলের উপর রেখে দিলো।
-” একাই থাকেন?”
-” নাহ। আমার স্বামীও থাকে। এখন অফিসে আছে।”
চন্দ্রিকা অপরপাশের সোফায় বসলো।
-” কয় মাস?”
মণিকা লাজুক ভাবে বলল,
-” ৫ মাস।”
-” মেয়ে নাকি ছেলে?”
-” জানিনা এখনো।”
-” আপনার প্রথমে কার শখ? মেয়ের নাকি ছেলের?”
মণিকার মুখ মলিন দেখায়। সে বলে,
-” মেয়ের। কিন্তু ওর বাবার কোনোটাই শখ নেই। সে এই বাচ্চা টাই রাখতে চায় না।”
চন্দ্রিকা ভারী অবাক হয়ে বলে,
-” মানে?”
-” আমি বিবাহিত না।”
মণিকার কথার আগামাথা কোনোটাই চন্দ্রিকার মাথায় ঢুকছে না। তাই সে বলে,
-” একটু এক্সপ্লেন করবেন প্লীজ?”
-” আসলে ওর বাবা আমার প্রেমিকা। মানে আমার বয়ফ্রেন্ড। বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে আমার স্বত্তা কেড়ে নেয়। ভুল করে পেটে চলে এসেছে ও। আমি ওর বাবাকে বলতেই সে বলল,বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দিতে। একটা পাপ লুকোতে গিয়ে আর কয়টা পাপ লুকাবো বলেন? বাসায় জানাই। বাবা মা আমাকে তাজ্য করে। বাসা থেকে বের করে দেয়।”
চন্দ্রিকা অবাক হয়ে শুনছিল সবটা। কথার মাঝে এবার প্রশ্ন করে,
-” তাহলে এখন?”
-” কোথায় যাবো জানিনা। তবে আমার কপালে কি ঘটবে সেটা আমি জানি।”
বলেই কেমন করে হাসলো মেয়েটা! চন্দ্রিকা পাল্টা প্রশ্ন করতে নিবে,এমন সময় ফোন বাজে তার।
-” একটু ওয়েট। ফোন টা নিয়ে আসি।”
উঠে গিয়ে বেডরুম থেকে ফোন নেয়। নেহাল ফোন করেছে…
-” হ্যালো। তখন ফোন দিয়েছিলে? আমি মিটিং এ ছিলাম।”
-” আসলে কেমন জানি লাগছিল একা একা। তাই…”
-” এখন ঠিক আছো তো তুমি?”
-” হ্যাঁ আছি। একজন এসেছে, তার সাথেই গল্প করছিলাম।”
-” কে এসেছে?”
-” মণিকা নামের একটা মেয়ে।”
-” চেনা নেই জানা নেই কাকে ঢুকতে দাও তুমি! সে কই?”
-” আছে সোফার ঘরে।”
-” তার সামনেই কথা বলছো?”
-” নাহ। আমি তো বেডরুমে।”
-” একটা অপরিচিত মেয়েকে একা এক ঘরে বসিয়ে রাখছো কোন আক্কেলে? কখন কি নিয়ে দৌড় দিবে টের ও পাবে না। যাও এখুনি সোফার ঘরে যাও…”
চন্দ্রিকা মুচকি হেসে সোফার ঘরে গেলো। নেহাল একটু বেশিই চিন্তা করে সব সময়। কিন্তু সোফার ঘরে যেতেই তার কপাল দিয়ে ঘাম ছুটলো। মেয়েটা সত্যিই নেই! মণিকাকে এদিক ওদিক খুঁজে চন্দ্রিকা বলল,
-” সে নেই।”
-” হলো তো? এবার দেখো কি নিয়ে ভাগছে। একটু সেফ থাকবা না তুমি চন্দ্রি? চোর টোর বেড়ে যাচ্ছে ইদানীং।”
চন্দ্রিকা দৌড়ে দরজার কাছে এলো। দরজা টা ভেতর থেকে বন্ধ। তাহলে গেলো কীভাবে? দরজা খুলে বাহিরের মেইন দরজার দিকে চোখ পড়তেই চন্দ্রিকার মনে পড়ে যায়,সে তো মেইন দরজা আটকে রেখেছিল। তবে মেয়েটা এলোই বা কীভাবে!
চন্দ্রিকার হাত পা আবার কাঁপছে। বাহিরের ঝড় কমে এলেও বুকের ভেতরে ঝড় চলছে তার। চন্দ্রিকা অচেতন হয়ে পড়বে মনে হচ্ছে….!
কোনোরকমে নেহাল কে বলল,
-” নেহাল। প্লীজ বাড়ি এসো। আমি বোধহয় সেন্স হারাবো।”

চলবে….
~কেমন লাগছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here