কাগজের_তুমি_আমি দ্বিতীয়_অধ্যায়,৯ম_পর্ব,১০ম_পর্ব

কাগজের_তুমি_আমি
দ্বিতীয়_অধ্যায়,৯ম_পর্ব,১০ম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
৯ম_পর্ব

কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটি কল আসে অনলের ফোনে। নাম্বারটা অচেনা লাগছে অনলের। কলটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে অচেনা স্বরের কেউ বলে উঠে,
– আপনার সাথে একান্ত গোপনীয় কথা আছে মিস্টার অনল মাহমুদ। আপনার কি সময় হবে?
– আপনি কে বলছেন? আমি মনে হয় আপনাকে চিনি না। আপনার পরিচয়টা আমাকে দিবেন প্লিজ

বেশ স্বাভাবিক ভাবেই অনল বলে। সে আসলেই অপরপাশের পুরুষালি কন্ঠটিকে চিনতে পারছে না। হুট করে কে এমন একান্ত গোপনীয় কথা তাকে বলতে চায়? অনলের উত্তরের স্বপক্ষে অপজিটের মানুষটি বলে,
– আমাকে আপনি চিনবেন না। কিন্তু আমি আপনার স্ত্রীর খুব পরিচিত।
– নামটা বলা যায় কি?
– দিগন্ত

অনল নামটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। ধারার মুখে নামটি কখনো শুনে নি, কিন্তু কেনো যেন মন বলছে এই ছেলেটা ধারার বাচ্চার বাবা। বেশ ঠান্ডা ভাবে অনল তাকে বলে,
– জ্বী বলুন কি কথা?
– আপনি ধারার সম্পর্কে সব জেনে শুনে কি বিয়েটা করেছেন?
– মানে?
– মানেটা খুব সোজা, আপনার বউ যাকে আপনি সতীসাবিত্রী ভাবছেন সে আসলে তা নয়।

কথাটা কানে যেতেই মাথা গরম হয়ে গেলো অনলের। ধীরে ধীরে কান লাল হতে লাগলো, চোয়াল শক্ত হতে লাগলো। শক্ত কন্ঠে বললো,
– একটু খোলসা করে বলবেন।
– আপনি হয়তো জানেন না আপনার ওয়াইফ কিছুদিন আগে প্রেগন্যান্ট হয়েছিলো, আমার বাচ্চার সাথে।
-……
– বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? এটাই স্বাভাবিক। নিজের নতুন বউ এর সম্পর্কে এরকম কথা শুনলে যে কারোর মাথা ঘুরে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা সত্যি, চাইলে আপনি ওকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। অবশ্য ও যে মেয়ে ও নিশ্চিত চেপে যাবে। আপনার সাথে বিয়ের তাগিদায় সে আমার বাচ্চাটিকে মেরে ফেলেছে। আমি জানি আপনার আমাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি একটা কথাও মিথ্যে বলি নি। আপনার ওয়াইফ ভার্জিন নয়। আপনাকে বিশ্বাস করানোর মতো কোনো প্রমাণ আমার কাছে নেই। কিন্তু আমি এটা বলতে পারবো তার শরীরে কতটা তিল আছে। এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন।
– আপনি কিভাবে জানলেন যে, আমাকে তারা এতো বড় কথাটা লুকিয়ে গেছে?

এতোক্ষণ চুপ করে দিগন্তের সব কথাগুলো শুনছিলো অনল। কিন্তু দিগন্তের শেষ কথায় যেন মেজাজ তুঙে উঠে যায়। তাই এই প্রশ্নটা বেশ কড়া ভাবেই ছুড়ে মারে অনল। দিগন্ত যেন বেকুব হয়ে যায় প্রশ্নটি শুনে। অনল একটু থেমে বলা শুরু করে,
– আমার নাম যেহেতু আপনি জানেন, তাহলে এটা আমি আশা করতেই পারি আপনি এটাও জানেন সম্পর্কে আমার বউ হওয়ার আগে ধারা আমার মামাতো বোন। এতো বড় ব্যাপারটা যে আমার কাছ থেকে মামা-মামী লুকিয়ে যাবেন না এটাই স্বাভাবিক। আমি আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে দেই আমি সব জানি এব্যাপারে। আর ধারার প্রেগ্ন্যাসির কথাটা আমি ই মামা-মামীকে জানিয়েছিলাম। আর এবোর্শনের কথাটা বলছেন তো। আমি নিজে ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম এবোর্শন করাতে।

অনলের কথাটা শুনে দিগন্ত কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। চুপ করে শুধু কথাগুলো হজম করে যাচ্ছিলো। অনল আবার বলতে শুরু করে,
– আসলে কি বলুন তো, আপনাদের মতো ছেলেদের কারণেই মেয়েরা ছেলেদের বিশ্বাস করতে চায় না। আপনাদের মতো মানুষের কারণে মানুষ ভাবে ভালোবাসা মানেই মেয়েদের শরীরের খাজে নিজের কামনা মিটানো। আজ এতো সাহস নিয়ে আমাকে ফোন করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার কারণটা এটাই যে আপনি চেয়েছিলেন আমি যাতে আপনার কথায় এক্সাইটেড হয়ে ধারাকে ছেড়ে দেই। আচ্ছা, যখন হাত ধরার সময়টা আসে তখন কেনো এই সাহস টা থাকে না। পারতেন তো এই সাহসটা দেখিয়ে ধারার হাতটা ধরতে। তাহলে হয়তো আমার ধারার সম্মান বাঁচাতে তাকে বিয়ে করতে হতো না। যাক গে, আপনার কথা আমি শুনেছি। ভালো লাগলো আপনি আমার এতোটা বড় শুভাকাঙ্ক্ষী এটা ভেবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন, সামনে থেকে আমাকে আর ফোন করে ডিসটার্ব করবেন না। ধারা ভার্জিন কি না তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমি আপনার মতো শরীরের খাজে ভালোবাসা খুজি না।

বলেই ফোনটা কেটে দিলো অনল। রাগে গা রি রি করছে, দিগন্তকে সামনে পেলে হয়তো মেরেই ফেলতো। এতো বড় কাপুরুষ হয়তো জীবনেও দেখে নি সে। অপরদিকে, দিগন্ত সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই ঠায় বসে পড়লো। তার কাপুরুষত্ব তাকে ধারার কাছ থেকে এতোটা দূর করে দিয়েছে। নিজের মনের ভেতর একটা হাহাকার শুরু হয়েছে তার। এই হাহাকার অগ্নির ফুলকির মতো তাকে জ্বালাচ্ছে, হয়তো সারাটাজীবন জ্বালাবে_____

ফোনটা রেখে পেছনে ফিরতেই চমকে উঠে অনল। তার পেছনে ধারা দাঁড়িয়ে আছে। ছলছল নয়নে সেক নজরে তাকে দেখে যাচ্ছে। অনলের বুঝতে বাকি রইলো না ধারা তার এবং দিগন্তের কথোপকথন শুনেছে। হয়তো এজন্যই লজ্জা পাচ্ছে। নিজের কৃতকর্মের গ্লানি তার চোখের অশ্রুর রুপ নিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। অনল ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো, মুখের কণায় দুষ্টু হাসি টেনে বললো,
– তুই আমার স্পাইগিরি করা থামাবি না তাই না?

অনলের কথাটা শোনা মাত্র আশেপাশে না দেখেই ধারা তার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। হু হু করে কেঁদে উঠলো সে। অনলের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা অশ্রুর রুপে প্রকাশ করতে লাগলো৷ ঘটনার আকর্ষিকতায় বেশ অনাক হয়ে গেলো অনল৷ পরক্ষণে নিজেকে সামলে ধারার মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– আর কতো কাঁদবি? এমনেই সাকচুন্নির মতো দেখতে, এখন তো সারারা গুলো হয়ে যাবি। মেহমান সব ভেগে যাবে রে।

অনলের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো ধারা। নিজেকে সামলে অনলকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। অনুগত স্বরে বললো,
– তুমি এতো ভালো কেনো অনল ভাই?
– ওমা তুই আমার প্রশংসা করছিস বুঝি? আমি তো ভাবতাম তুই শুধু গালি দিতেই পারিস। মতলব কি রে?
– তোমার মতো মতলব খুজি বেড়াই নাকি আমি?
– তাহলে আজ প্রশংসা করছিস যে?
– ইচ্ছে হলো তাই, আর একটা কথা ধন্যবাদ
– বাব্বাহ মেয়ে এখন ধন্যবাদ দিতেও পারে! তা কেনো বলতো?
– এতোদিন বলতে পারি নি, আজ তোমাকে ধন্যবাদ বলতে খুব ইচ্ছে করছে তাই।

বলেই চোখের পানি মুছে নিলো ধারা। মনের মাঝে একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে ধারার। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে ধন্যবাদ বলাটাও কম হবে। সারাটাজীবন তার দাসি হয়ে থাকলেও বোধ হয় এই ঋণ দিতে পারবে না সে। বেশ অনুগত স্বরে বলে উঠে,
– এতো ভালো হওয়ো না অনলভাই, আমি এই ঋণ দিতে পারবো না তোমার।
– এতো বকিস কেনো রে তুই? জানিস তাওকে সকাল বিকাল শুধু চাপড়ানো দরকার। আমি কি তোকে কিছু বলেছি? আমি কি বলেছি তুই আমার ঋণ কিভাবে দিবি? একটা কথা মাথায় রাখবি আমি যা করছি সেটা আমার মায়ের জন্য করছি। আর যে আসছে তার জন্য করছি। তাই ঋণের কথা তো আসবেই না। আরেকবার যদি শুনি না চাপরে গাল লাল করে দিবো।

ধমকের স্বরে গড়গড় করে কথাগুলো বলে হাটা দিলো অনল। ধারা অনলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। লোকটাকে যত দেখে তত অবাক হয়, উপরওয়ালা একে কি দিয়ে বানিয়েছে কে জানে। সারাক্ষণ বকবে সে ধারাকে কিন্তু অন্য কেউ ধারাকে নিয়ে কোনো কথা বললেই ক্ষেপে তার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে দিবে। একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে লোকটার প্রতি, এটা কেনো সেটা ধারা নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। এই ভালোলাগাটা কেবলমাত্র কৃতজ্ঞতার কারণেই। কারণ সে তো অনলকে পছন্দ করে না আর তাকে পছন্দ করাটাও সম্ভব নয়। এই যুক্তিতর্ক দিয়ে ধারা নিজের মনকে বেশ শক্ত করে বুঝেই দিলো। নিজের মনকে বুঝ দিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে হাটা দেয় সে অনুষ্ঠানের দিকে। দুটো আলাদা মানুষের ভাগ্য তাদের এক সম্পর্কে বেধেছে, না জানি এর পরিণতিটা কি রুপ হবে তা তারা কেউ জানে না___

সকাল ৯টা,
ধারাদের বাসার ডাইনিং টেবিলে বসা অনল এবং ধারা। সুরাইয়া বেগম জামাই আদরের কমতি করছেন না। এমনেই অনলকে ছেলে হিসেবে তার খুব পছন্দ। এখন তো সে তার জামাই, তাই আদরটাও দ্বিগুণ। ধারা মাথা নিচু করে শুধু খাবারটা গিলছে। সুরাইয়া বেগম এখনো তার সাথে দেইড়া কোনো কথা বলেন নি। এমনকি জিজ্ঞেস ও করেন নি সে কেমন আছে। ধারা তাই চুপচাপ শুধু একটা শৈবালের মতো ডাইনিং টেবিলে বসে রয়েছে। সে শুধু দিন গুনছে কখন এ বাড়ি থেকে যাবে। হঠাৎ……..

চলবে

কাগজের_তুমি_আমি
দ্বিতীয়_অধ্যায়
১০ম_পর্ব

সুরাইয়া বেগম এখনো তার সাথে দেইড়া কোনো কথা বলেন নি। এমনকি জিজ্ঞেস ও করেন নি সে কেমন আছে। ধারা তাই চুপচাপ শুধু একটা শৈবালের মতো ডাইনিং টেবিলে বসে রয়েছে। সে শুধু দিন গুনছে কখন এ বাড়ি থেকে যাবে। হঠাৎ অনল বলে উঠলো,
– মামী মা, আপনি আমাকে এতো কিছু সাধছেন, আমার বউ কে তো কিছুই বেড়ে দিচ্ছেন না। আমার বউএর সাথে কি আপনার কোনো ইস্যু আছে?

অনলের এরুপ কথায় বেশ হতচকিত হয়ে যান সুরাইয়া বেগম। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে অনলের দিকে তাকিয়ে আছে। ধারা এতোক্ষণ মাথা নিচু করে খাচ্ছিলো। অনলের কথা শুনে তড়িৎ গতিতে অনলের মুখের দিকে তাকালো। অনলের বেশ ভাবলেশহীন ভাবেই সুরাইয়া বেগমের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। সুরাইয়া বেগম অনলের প্রশ্নের ধারে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। আমতাআমতা করে বলতে থাকেন,
– হঠাৎ এ কথা বাবা?
– কি করবো বলুন মামী মা, ধারা প্রেগন্যান্ট এ কথাটা জানা সত্ত্বেও ওর খাওয়া দাওয়ার কোনো খেয়াল আপনি করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে এই কথাটা বলতে হচ্ছে।

অনলের কথাটা শুনে বেশ লজ্জায় পড়ে যান সুরাইয়া বেগম। কথাটা একেবারেই ভুল বলে নি অনল, ধারার এখন যত্নটা আরো ও বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু ধারা আসার পর থেকে তার যত্ন তো দূরে থাক তার সাথে কথাটাও বলেন নি সুরাইয়া বেগম। তার খাওয়া দাওয়া যত্নের কোনো খেয়াল ই নেই সুরাইয়া বেগমের। অনলের এরুপ কথায় সেলিমের সাহেব ও চুপ হয়ে যান। বাবা হিসেবে এই দায়িত্বটা তার উপরও বর্তায়। হ্যা ধারা ভুল করেছে ঠিক ই কিন্তু তাদের সম্মানের কোনো ঘাটতি অনলের কারণে হয় নি। অথচ সুরাইয়া বেগম এবং সেলিম সাহেব উভয়ই ধারার প্রতি গম্ভীর মনোভাব ধরে রেখেছে। সুরাইয়া বেগমকে চুপ করে থাকতে দেখে অনল ভাবলেশহীন ভাবেই পুনরায় বলে,
– মামী মা, একটা কথা স্পষ্ট করে দেওয়াটা হয়তো ভালো হবে। বেয়াদবি নিবেন না তবে কথাটা বলতে বাধ্য হচ্ছি। ধারা ভুল করেছে এটা যেমন সত্যি, ধারাকে শাস্তি দেবার অধিকার যেমন আপনাদের আছে ঠিক তেমন ধারা এখন প্রেগন্যান্ট, তার যত্নের পরিমাণটা অধিক প্রয়োজন এবং তার এখন আপনাদের মেন্টাল সাপোর্টের প্রয়োজনটা ও অনেকগুণ বেশি হওয়া দরকার এটাও তেমন সত্যি। আপনারা তার প্রতি এখনো ক্ষুদ্ধ হয়ে আছেন, কিন্তু সেটায় কি আপনারা হ্যাপি আছেন নাকি ধারা হ্যাপি আছে। মামু,মামী মা আমি চাই না ধারার কোনো শারীরিক অসুবিধা হোক, এখন আপনাদের এই রূঢ় আচারণ তাকে মেন্টালি ভেঙ্গে ফেলছে। এই আচারণ গুলো আমি বা মা করলে যৌক্তিক হতো। কিন্তু আপনারা কেনো করছেন এটাই আমার মাথায় ঢুকছে না। ধারা অনেক বড় পাপ করেছে, সেটার গ্লানি তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আপনাদের অবহেলা তাকে আরো ও ভেতরে ভেতরে মেরে ফেলছে। আপনারা যদি আমার বউ এবং বাচ্চার প্রতি এমন মনোভাব ই রাখেন তাহলে আমি আর এবাড়িতে আসবো না এবং আমার বউ বাচ্চাকেও এ বাড়িতে পা রাখতে দিবো না। যদি আমার কথায় আপনারা ক্ষুদ্ধ হয়ে থাকেন তবে আমাকে ক্ষমা করবেন

বলেই নিজে ধারার প্লেটে খাবার বেড়ে দেয় সে। ধারার মুখে কোনো কথা নাই, কৃতজ্ঞতার নজরে শুধু অনলকেই দেখে যাচ্ছে সে। অনল তখন বেশ ধমকের স্বরেই নিচু গলায় বললো,
– আমার মুখে না তাকিয়ে এই সম্পূর্ণ খাবারটা শেষ করো। একটা খাবার যাতে প্লেটে না থাকে।

বলেই একগাদা খাবার ভর্তি প্লেট এগিয়ে দিলো তার সামনে। এতো খাবার ধারা কেনো দুটো ধারাও খেতে পারবে না। ধারা তার দিকে অসহায় চাহনী দিতেই কড়া এক নজর দিয়ে তাকালো অনল তার দিকে তাতেই মোটামুটি কাজ হয়ে গেলো। ধারা কোনো কথা না বলে রোবটের মতো অনলের কথামত খেতে লাগলো। সে জানে যদি অনলের কথা না শুনে কপালে দূর্ভোগ আছে। সেলিম সাহেব এবং সুরাইয়া বেগম বিমুগ্ধ নজরে অনলধারাকে দেখছেন। অনলের মতো জামাই পেয়ে তাদের মন যেনো নিশ্চিন্ত। যেমন পরিস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়েছে সেই পরিস্থিতিতে কেউ যে ধারাকে বিয়ে করবে এটাই যেনো কল্পনার বাহিরে ছিলো তাদের। তার উপরে অনল যেভাবে তার মেয়েকে সহযোগিতা করছে এটা যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আজ অনল ভুল কিছুই বলে নি, তার কথাগুলো তাদের ভেতরটাকে নাড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। সত্যি ই তো এখন রাগ দেখিয়ে কি হবে, যে আসছে তার তো কোনো দোষ নেই। আর ধারার ভুলের শাস্তি সে পাচ্ছে, বিশ্বাস করে যে ভুলটা সে করেছিলো তার কারণে আজ সে নিজের বাচ্চাকে বৈধ বলে দাবি অবধি করতে পারছে না। যে সময়টা সব মেয়েদের কাছে সুখময় মূহুর্ত হয় সেই সময়টা তার গলার কাটা হয়ে গিয়েছিলো। তাই এখন তার উপর ক্ষুদ্ধতা দেখিয়ে মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া বাদে আর কিছুই হবে না। একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের আশ্বস্ত করলেন তারা।

আয়নার সামনে হাসপাতালের জন্য তৈরি হচ্ছে অনল। ধারা এক নজরে তাকে দেখেই যাচ্ছে। শ্যাম বর্ণের উচু লম্বা পুরুষটিকে বেশ নিপুণ নজরে দেখে যাচ্ছে সে। নীল শার্টে বেশ মানিয়েছে তাকে। অনলের প্রতি যে মেয়েরা দূর্বল ব্যাপারটা আন্দাজেও আচ করতে পারছে ধারা।
– আমার কি রুপ গজিয়েছে? হঠাৎ এভাবে হা করে দেখার কি হলো?

আয়নার দিকে তাকিয়ে কপালের উপরের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠেলে পেছনে সরাতে সরাতে বলে উঠলো অনল। ধারাও চুপ না থেকে কথার পেছনেই বলে উঠলো,
– নিজের জিনিস দেখতে কি কারোর পারমিশন লাগবে? আমার তো মনে হয় না এতে কোনো বিশেষ কারণের দরকার হয়।

ধারার তড়িৎ উত্তরে মুচকি হাসি টেনে পেছনে ফিরলো অনল। গালটা টেনে বলতে লাগলো,
– বেশ পেকেছিস তো, আমার কথার উপরে কথা বলতেও শিখেছিস। এখন আমাকে আর ভয় লাগে না বুঝি?
– ভয় লাগবে কেনো গো?
– ওমা তোর থেকে পাক্কা এগারো বছরের বড় আমি।
– তো?
– তো কি? আমার কথার পিছে কথা বলছিস, সম্মান বলেও তো জিনিস আছে নাকি?

অনলের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো ধারা। যেনো অনল খুব মজার একটা জোক্স বলেছে তাকে। ধারার উচ্ছলতা দেখে অনলের ও ভালো লাগছে। এখন তার মন ভালো থাকাটা অধিক দরকার। মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
– থাক আমি হাসপাতালে যাচ্ছি।

বলে যেতে নিলেই….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here