#ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼
#লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury
#১১_পর্ব
মাগরিবের নামাজ পড়ে পড়তে বসেছে ফালাক। দুপুরে তার স্টুডেন্টের বাসায় গিয়েছিল ফালাক। জমজ ছেলে মেয়ে দুজনেই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে ফালাকের কাছে পড়ে।
আন্টি যেন খুশিতে আটখানা।ফালাককে না খাইয়া ছাড়েননি দুপুরবেলায়। আরো রাত্রে যাতে তার অসুবিধা না হয় তার জন্য টিফিন কারিতে করে রাত্রের খাবার দিয়ে দিয়েছে। যা খাবার দিয়েছে তা দিয়ে পরবর্তী দিন সকালবেলাও হয়ে যাবে ফালাকের।
দুপুরে সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া করে সোজা নিজের ফ্ল্যাটে চলে এসেছিল। এই ১৮০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লাটে ফালাক একাই থাকে। সে যখন মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল তখন তার বাবা এই ফ্ল্যাটটা তাকে কিনে দিয়েছিল।
ফালাক প্রথমে এই ফ্ল্যাটটা নিতে চাইনি সে হোস্টেলেই থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বাবা তাকে বলেছিল,
— আমার যা কিছু পরিশ্রমের উপার্জন সব তোর আর তোর বোনের জন্য। সেখানে যদি আমার ছেলে মেয়েরা কষ্টে থাকে। তাহলে আমার এই উপার্জন দিয়ে আমি কি করবো আব্বু?
পরে বাবাকে আর কিছু বলতে পারেনি ফালাক। নিজের সবকিছু নিয়ে এসে উঠেছিল এই ফ্ল্যাটে, এই নিরিবিলি পরিবেশ ফালাককে বেশ আকৃষ্ট খুশি করেছিল। পড়াশোনার জন্য একটা আদর্শ জায়গায়।
নিজের মন মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল নিজের ফ্ল্যাটটিকে। এই ফ্ল্যাটে ফালাকের ফ্যামিলি ছাড়া বাহিরের একজন মাত্র আসে তাহলে ফালাকের বেস্ট ফ্রেন্ড তাজিম।
কাল মেডিকেলে ফালাকের একটা আইটেম আছে। যার প্রিপারেশন নিচ্ছে সে । প্রায় তিন ঘন্টা পড়াশোনা করার পর ফালাক টেবিল থেকে উঠলো ইশারের নামাজ পড়ে রাতের খাবারটা খেয়ে নিল। এরপর বিছানার পাশে ডেক্স এর ওপর থেকে ফোনটা চার্জার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় বসলো ফালাক।
বেশ কয়েকটা মিসকল ভেসে উঠলো মোবাইল স্ক্রিনে। বাবা, মা , ফারিহার নাম্বার থেকে এসেছে কলগুলো। মাকে কল ব্যাক করলো ফালাক। বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পরে ফালাকের মা রিসিভ করলেন,
—- আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম আব্বু। কেমন আছো তুমি?
— আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো আম্মু?
— এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। রাতে খাওয়া দাওয়া করেছ তুমি?
— জ্বী আম্মু। কিছুক্ষণ আগে। আচ্ছা বাড়িতে কি কিছু হয়েছে। সবাই আমাকে এতবার ফোন দিয়েছো আসলে ফোনটা চার্জারে লাগানো ছিল আর সাইলেন্ট ছিল।
— হ্যাঁ। আসলে ফারিহার জন্য তোর বাবা একটা পাত্র ঠিক করেছে।
শালা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
— পুঁটি মাছের জন্য! কিন্তু ও তো সবেমাত্র অনার্স থার্ড ইয়ার। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার কী দরকার আম্মু? ও আগে ওর অনার্সটা কমপ্লিট করুক তারপর এসব নিয়ে ভাবা যাবে।
ফালাকের আম্মু কৌতুক স্বরে বললেন,
তোমার বোনই তো মন দিয়ে বসে আছে বাবা। এখন বাধা দেই কী করে বলো?
ফালাক চমকে উঠে বলল,
— কীহ! পুঁটি মাছ প্রেম করেছে?
— হ্যাঁ । তার ল ডিপার্টমেন্টের প্রফেসরকে মন দিয়ে বসে আছে।
— ও আচ্ছা এজন্য এতবার ফোন দিয়েছে ওই পুটি মাছ। ওর ফোন আমি তুলবো না। যার সাথে প্রেম করে তাকে ফোন দিক।আমাকে কেন ফোন দিছে? আমি তো ওর কেউ না।
হঠাৎ মায়ের হাত থেকে ফারিয়া ফোন কেড়ে নিয়ে কানে দিয়ে বলল,
— তুই তো আমার সব ভাইয়া। বিশ্বাস কর আমি তোকে বলতে চাইছিলাম। কিন্তু লজ্জা আর ভয়ে বলতে পারিনি। প্রতিদিন ফোন দিতাম তোকে আমি বারবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু বলতেই পারিনি। ভাবলাম তুই যখন বাসায় আসবি তখন তোর সামনে বসে তোর মাইর খেতে খেতে তোকে সব বলে দেব।
কিন্তু ওই খাটাশ ব্যাটা! সব ঘেটে ঘ করে দিল। আমাকে কিচ্ছু না জানিয়ে পুরো ফ্যামিলি নিয়ে এসে হাজির হয়েছে এখানে।
আর আমার মা। সেতো আইনস্টাইনের নাতনি। খ উচ্চারণ করলে খেয়া পর্যন্ত চলে যায়। যা বোঝার সব বুঝে আমাকে সাজিয়ে গুজিয়ে ওদের সামনে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে সব কেমন জানি কিভাবে হয়ে গেছে।সরি ভাইয়া।
ফালাক চুপচাপ বসে বোনের কথাগুলো শুনলো, বোনকে ভয়ে দমে যেতে দেখে এ পাশে নিঃশব্দে হাসলো সে,
— তা প্রফেসরদের তো তুই দুচোখে সহ্য করতে পারতিস না। শেষে কিনা প্রফেসরকেই মন দিয়ে বসলি। আমারও তো প্রফেসর পছন্দ না। বিয়েটা না করে দেই?
ফারিহা তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো,
ভাইয়া আরাভ সাময়িক প্রফেসর। বিসিএস দিয়েছে। এখন শুধু রেজাল্ট আসার অপেক্ষা।
বোনের এমন পাগলামি দেখে ফালাক এবার শব্দ করে হেসে উঠলো।
ভাই কে হাসতে শুনে ফারিহার ঠোঁটেও হাসি ফুটে উঠলো।
— ভাইয়া আমার ওপরে রাগ করে নেই তো তুমি?
— আমার পুঁটি মাছের উপরে আমি কক্ষনো রেগে থাকতে পারিনা।
ফালাকের আম্মু মেয়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে বলল,
— তাহলে আর কি তাড়াতাড়ি চলে আয় বাড়ি। তোর একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা। ঢাকায় বসে থাকলে তো চলবে না। কত কাজ আছে এদিকে জানিস। বিয়েটা এক মাস পরে ঠিক হয়েছে। কিন্তু বিয়ে বাড়ির কাজ তো আর এইটুকু না আগের থেকে অনেক প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। সামনের সপ্তাহে চলে আয় বাড়িতে। কোন গাইগুই শুনবো না।
ফালাক এবার অসহায় গলায় বলল,
— আম্মু। মেডিকেল ফাইনাল ইয়ার। বুঝতেই তো পারছো কতটা চাপের মধ্যে আছি। আর এর মধ্যে এভাবে 20-25 দিন ছুটি নিলে অনেক ঝামেলায় পড়ে যাব। একটু বোঝার চেষ্টা করো।
— এই তুই চুপ কর । কিছুদিন আগে তুই বললি না তোর টার্ম ফাইনাল শেষ হয়েছে। তাহলে?
— আম্মু এখনো তো প্রফ বা পেশাগত পরীক্ষাটা বাকি। এখন আমাদেরকে ডাক্তারদের সাথে ওয়ার্ডে গিয়ে গিয়ে রোগী দেখতে হয়।
— আমি এতকিছু বুঝি না বাবা। তুই আসছিস তাই জানি আমি। নেক্সট উইকের শুক্রবারে চলে আসবে। এটাই আমার শেষ কথা।
______🤎______
মাইশারা খালামণির বাসা থেকে ফিরে এসেছে ঘন্টাখানেক আগে। সারাদিন অনেক ধকল গেছে মেয়েটার উপরে। তার ওপর গতকাল রাতে রেজাল্ট টেনশনে ঘুমাতে পারেনি সে। ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু তার।
তাই মাইশা আর দেরি না করে দ্রুত নিজের রুমের দিকে ছুটেছে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপরে গিয়ে ধরাম করে পড়েছে আর সাথে সাথেই ঘুমের তলিয়ে গেছে সে।
মিসেস মেহেরিমা চৌধুরী ফ্রেশ হয়ে আসার পর মেয়ের রুমের দিকে গেলেন। দরজা খুলে দেখলেন পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে রুমের লাইটটা নিভিয়ে বেরিয়ে আসলেন মেয়ের রুমের থেকে।
নিজের বেডরুমে এসে দেখলেন মিস্টার শারাফাত চৌধুরী ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপরে বসলেন মাত্র। টেনের দরজা আটকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলেন। চিরুনি দিয়ে চুলগুলো আঁচড়ে নিয়ে বেনুনি করতে লাগলেন।
আয়নার দিকে তাকিয়ে স্বামীকে দেখলেন। আজকে তাকে বড্ড অন্যমনস্ক লাগছে। মিস্টার শারাফাত চৌধুরী চশমাটা খুলে পাশের ডেক্সের উপরে রেখে লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। হাতটা ভাঁজ করে কপালের উপরে রাখলেন।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে এসে স্বামীর পাশে বসে বললেন,
— তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? বড় আপার কথাগুলো নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছো?
কপালের উপর থেকে হাত সরালেন সারাফত চৌধুরী। খাটের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,
— এটা কি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না। আমার মেয়েটা এখনো ছোট রিমা। এসব এনগেজমেন্ট ওর পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরে করা যাবে না।বড় আপা কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি শুরু করছেন।
#চলবে…🤎
[ শরীরটা ভালো নাই ।আমার জন্য দোয়া করবেন।]