এলাকার বড় আপু_2 #পার্ট:৬

#নাম: এলাকার বড় আপু_2
#পার্ট:৬
#লেখক: Osman

👉মুরাদের প্রতি নিলার ভালোবাসা অনেক বেড়ে যায়‌। কিন্তু এসব কিছুর ইতি ঘটলো ঐদিন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে । দেখলো মুরাদের বই কাপড় চোপড় কিছুই নেই। আর টেবিলের উপর একটা চিঠি পেলো। নিলা ওঠে পুরো রুম দেখলো। তেমন কিছুই নেই। কয়েকটা বই আর কিছু কাপড় চোপড় পরে আছে সেগুলো পুরাতন। আলমারি খুলে দেখলো মুরাদের কিছুই নেই। তাহলে কি মুরাদ চলে গেলো কোথায়? নিলা জুড়ে জুড়ে মুরাদ বলে ডাক দিলো। তার শব্দই আবার ফিরে আসলো। পুরো ফ্ল্যাট চেক করলো । প্রয়োজনীয় সব কিছু আছে। নিলা আস্তে আস্তে চিঠির কাছে আসলো । নিলার বুকটা কাঁপছে মুরাদ কি চলে গেছে? আগে মোবাইল নিয়ে কল করলো মুরাদের নাম্বারে । ফোন বন্ধ। এবার চিঠির কাছে এসে চিঠি হাতে নিলো কাঁপা কাঁপা হাতে। চিঠি খুলে পড়তে লাগলো। চিঠিতে লেখা আছে ।

“নিলা আমি কোনো চিঠি লেখছি না । যাতে পরে উত্তর দিতে না পারো। নিলা একটা কথাতো জানো ‘স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন’।
আমার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারিনি। নিলা আমি তোমার সাথে মোটামুটি অনেক সময় কাটিয়েছি। নিলা তুমি যখন বলতে আমি কোথাও চলে গেলে আমাকে যেখান থেকে পারো ধরে নিয়ে আনবে। তখন আমার খুব অহংকার হতো। আনলে আবার কি হবে ? আমার একি কথা নির্বাচন করো না। সেরকম কথা তোমাকে শুনতে আর হবে না। আমি চলে গেলাম এখন তুমি নির্বাচনে বেশি ফোকাস করতে পারবে। দোয়া করি নির্বাচনে পাস করে এলাকার উন্নতি করতে পারো । সবাই একটা চেয়ারম্যান থেকে এটায় আশা করে । আর সব সময় গরিব দুঃখীদের পাশে থাকবে । দেখবে তুমি ভালো একটা চেয়ারম্যান হতে পারবে। নিলা আমি দুঃখিত আমি ভালো একটা স্বামী হতে পারিনি তোমার কথায় রাজি হতে পারিনি। তোমার সামনে জীবন পরে রয়েছে ভালো একটা ছেলেকে বিয়ে করে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখো। খুব ইচ্ছে ছিলো বাবা হওয়ার কিন্তু সেটা হলো না। নিলা আমি তোমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে এসেছি। আমার খুঁজে তুমি বের হয়ো না। কারন তুমি আমাকে খুঁজে পাবে না। আমি পিছনের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছি। তুমি যেনে খুশি হবে আমি একটা চাকরি পাইছি। তোমার অন্তরে কি ছিলো সেটা আমি আধো চিন্তা করে বের করতে পারিনি। শেষ কয়েক দিন তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছি কারণ তুমি যাতে বুঝতে পারো তোমার জীবনে আমি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম। কিন্তু তুমি সময় থাকতে গুরুত্ব দাওনি । আহহ …..নিলা… তুমি যদি আমার কথা শুনতে তাহলে হয়তো পৃথিবীর একমাত্র সুখি সংসার আমরা হতাম। নিলা তুমি চেয়ারম্যান হতে চাও সেটা বিয়ের আগে বলতে । তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না। কারন আমি সিমপল একটা সুখের সংসার দেখতাম। এখন বুঝতে পারছি বড় লোকেরা বড় লোকের ঘরে মানায় । গরিব গরিবের ঘরে মানায়‌ । বড়লোক যখন গরিবের ঘরে যায় তখন শুরু হয় সমস্যা। সেটা হয়েছে তোমার আর আমার মাঝে তুমি দেখতে বড় হওয়ার স্বপ্ন আর আমি দেখতাম সিম্পল জীবন যাপন। তোমার স্মৃতি হিসেবে তোমার দেয়া চড় গুলো থাকবে আমার সাথে। আর হে অবশ্যই নামাজ পরবে। নির্বাচনে পাস করতে পারো সে জন্য দোয়া করবে । আমি ও দোয়া করি তুমি ভালো একটা চেয়ারম্যান হও। আমাকে পাওয়ার জন্য কখনো দোয়া করবে না । কারণ আল্লাহ করো দোয়া ফালায় না। সর্বশেষ বলবো তুমি ভালো একটা স্বামী নেও। মা হওয়ার স্বপ্ন দেখো । আর ভালো একটা চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করো। আর তোমার বাবার দেয়া টাকা গুলো আমার বালিসের নিচে আছে। অআলাইকুম আসসালামুয়ালাইকুম নিলা আমার বউ আমার ভালোবাসা সারাজীবন সুখে থেকো।”

👉নিলার চোখের পানি । চিঠির অনেক খানি ভিজে গেছে। নিলা কি করবে বুঝতে পারছে না। এখন কেমন যেনো একা একা লাগছে। আরেকবার নিলার মনে হচ্ছে ভালই হয়েছে। খালি খালি সারাক্ষণ গ্যাং গ্যাং করতো। নিলা আস্তে আস্তে চোখের পানি মুছলো । বিছানায় এলিয়ে চিন্তা করতে লাগলো।
এখন আমি কি করবো । বাড়িতে চলে যাবো? বালিশের তলে হাত দিয়ে দেখে টাকা অনেক টাকা।
নিলার কেমন যেনো ভয় ভয় করছে । নিলা একা এই বাসায় থাকতে পারবে না। মুরাদ বলছে চাকরি পেয়েছে কোথায় পেয়েছে ? সেটা জানতে হবে। সেটা জানতে পারলে তার ঠিকানা বের করা যাবে । নিলা পুরো ফ্ল্যাট খুঁজলো এরকম কিছুই পেলো না। নিলার মনে হলো কে জানি দরজায় টোকা দিচ্ছে। খুলে দেখে জোৎস্না। জোৎস্নাকে দেখে নিলা হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠলো । আর জোৎস্নাকে জড়িয়ে ধরলো। জোৎস্না বলল

জোৎস্না: নিলা কাদছস কেনো ? আর মুরাদ কোথায়?

নিলা: চলে গেছে । আমাকে ছেড়ে।

জোৎস্না: সেটা তর জন্য আরো ভালো হয়েছে। এখন শান্তি মতো তুই নির্বাচন করতে পারবি । আর তকে কেউ বাধা দিবে না।

নিলা: না! না! । এ হতে পারে না। সেজন্য মুরাদ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?

জোৎস্না: আমি তকে আগেই বলেছি। মুরাদের কথা মতো চল।

নিলা: হুম। কিন্তু সে চলে যাবে কেনো?

জোৎস্না: তুই তার কথা ষোলো কনা শুনস নাই। তুই যদি তার কথা মতো চলতি? ইস তর যায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে আমি কোনো কথার অবাধ্য হতাম না।

নিলা: এখন আমি কি করবো তাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?

জোৎস্না: তর যেটা প্রাপ্প তুই সেটাই পাইছত।

নিলা: তাকে আমি ভালোবাসি।

জোৎস্না: এমন ছেলেও পাওয়া যায়। বউয়ের কারণে বাড়ি থেকে চলে যায়।

নিলা: আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। তাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি আল্লাহ তুমি তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেও।

জোৎস্না: শুন সে মনে হয় আর আসবেনা। তুই এখানে থাকতে পারবি না। ঘন্টা তিনেক আগে আমার কাছে মুরাদ গিয়েছিলো। তারপর এই কাগজটা আমার কাছে দিয়ে যায় ।

নিলা: কাগজে কি আছে?

জোৎস্না: শুনবি ?

নিলা: বল

জোৎস্না:

জোৎস্না আপু তুমি আমার একটা কাজ করে দিয়ো। আমি চলে যাচ্ছি নিলাকে ছেড়ে। নিলাতো এখানে একা থাকতে পারবে না। আর যদি থাকে তাহলে বলবেন কাওকে সাথে নিয়ে থাকতো । কারন রাতে বুঝতে পারবে রাতরা তার জন্য কতোটা নিষ্ঠুর। নিলা যদি চলে যায় । তাহলে ফার্নিচার গুলো নিচের দেয়া ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েন।

জোৎস্না: আর কিছু টাকা আছে।

নিলা: না! আমি এখানেই থাকবো। শেষমেষ মুরাদের আমি এই ঘরটা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমি সিউর মুরাদ আমাকে অনেক ভালোবাসে । সে একদিন ফিরে আসবে। সে একদিন ফিরে আসবে।

জোৎস্না: সেটা তর কপাল। তার আগে তকে নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

নিলা: হুম। তর নির্বাচনের আর কয়দিন আছে।

জোৎস্না: আর ১৩ দিন।

নিলা: এখন থেকে নিয়ে বাকি দিন গুলো। তুই আমার সাথে থাকবি রাতে।

জোৎস্না: ওকে।পরে

নিলা: দেখি ।

জোৎস্না: আমি যাই মনে হয় মা ডাকছে।

নিলা: একটু পর একেবারে চলে আসিস।

জোৎস্না: ওকে‌ ।

👉জোৎস্না চলে গেলে। নিলা ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

👉ভাগ্যের জুড়ে অফিসের পাশে একটা ব্যাচেলর ফ্ল্যাট পেয়ে যাই। সেখান ওঠি। ভাবলাম আজ সব কিছুর সমাপ্তি হলো । নিলাকে ভালো লাগতো কিন্তু নিলার নির্বাচন ভালো লাগতো না। আমি যে রুমে সিট নিলাম সেই রুমে আরো দুজন আছে। তারা দুজন চাকরিজীবী। তাই আমাদের ফাজলামো করার কোনো প্রশ্নই আসেনা। যাইহোক পরদিন সকালে অফিসে গেলাম। আমার মুখ থেকে হাসি নামক শব্দটি উধাও হয়ে গেছে। অধিকাংশ সময় আমি নিলাকে নিয়ে চিন্তা করি। ফেলে এসেছি আবার কোনো ভুল করেনিতো। যদি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। কিছু ভালো লাগছে না। অফিসে কতো মানুষ হাসাহাসি করে। আমি সারাক্ষন আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। সারাক্ষন নিলার মুখটা সামনে ভাসে। অফিসের ম্যানেজার সবাইকে ডাক দিলো। আমি ও গেলাম। আমি গিয়ে পিছনে এক কোনায় দাঁড়িয়ে রইলাম। একেক জনকে একেক কাজ দিয়ে বিদায় করছে ম্যাডাম। সবার পরে আমার সিরিয়াল আসলো। মেয়েটা আমার থেকে মনে হয় তিন বছরের ছোট। ছোট হলে কি হবে বসতো বসই। আমাকে আমার কাজ দিলে আমিও চলে আসি ।

Wait for next……..🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here