এক_ফালি_রোদ ৬ষ্ঠ_পর্ব

এক_ফালি_রোদ
৬ষ্ঠ_পর্ব

অয়নের কন্ঠ কাঁপছে। আবরার অয়নের কথাগুলো শুনে মুচকি হাসে। পাশে বসতে বসতে বলে,
– সত্যি কি আমি তোর জিনিস কেড়ে নেই অয়ন? আমি যতটুকু জানি ছোটবেলা থেকে এমনটা তুই করে এসেছিস। আর থাকলো কথা রাইসার। তুই ও জানিস আমিও জানি সত্যিটা কি! রাইসা কখনো তোর ছিলোই না। সেটা রাইসা না জানলেও তুই জানিস। তোদের সম্পর্কটা নিছক একটা মায়া মাত্র। যে সম্পর্কের কোনো ভিত্তি ই নেই, সেই সম্পর্কের বড়াই করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না অয়ন। আর আমি তোর জিনিস কখনোই কেড়ে নেই নি। শুধুমাত্র নিজের ভালোবাসাটা বুঝে নিয়েছি। আর সে এখন তোর প্রাক্তন নয়, আমার স্ত্রী। সুতরাং
– ভালোবাসা? হাসালি, ভাই জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না। তোর সত্যি মনে হয় আজ যদি আমি নিজ থেকে তোদের মাঝ থেকে সরে না যেতাম রাইসা তোকে বিয়ে করতো?

অয়নের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় আবরার। কপাল কুচকে আসে। ভ্রুযুহগল একত্রিত করে তাকিয়ে থাকে সে অয়নের দিকে। অয়ন পকেট থেকে একটি নতুন সিগারেট বের করে মুখে নেয়। লাইটার দিয়ে সিগারেটটি নিপুনভাবে ধরায়। এরপর সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে ধীর কন্ঠে বলে,
– এটা ঠিক যে রাইসা আর আমার সম্পর্কটা মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু আমি রাইসাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছিলাম ভাই৷ এটা তুই ও জানতি
– সেজন্যই তো আমার রাইসার কাছে খারাপ হতে হলো, তাকে জোর করতে হলো। কারণ তুই আমাকে দেওয়া কথা রাখিস নি। ভুলে যাস না রাইসার সাথে তোর সম্পর্কটা নিছক অভিনয় ছিলো। যার সূত্রপাত ও তুই করেছিলি। তোর ছেলেমানুষির জন্য আজ আমাদের তিনটে জীবন এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি চাইলেও রাইসাকে বলতে পারবো না, আমিই সেই মানুষ যার সাথে সে ছয়টা মাস কথা বলেছিলো। আমি ই সেই মানুষ যার সাথে সে “প্রোফাউন্ডলি মি” তে কথা বলতো। বিশ্বাস ভাঙ্গার কাজটা তুই শুরু করেছিলি। আর এখন আমাকে বলছিস আমি তোর জিনিস কেড়ে নেই। একটা কথা মনে রাখিস, রাইসা তোকে কখনো ভালোবাসেই নি। সে আমাকে ভালোবেসেছিলো। তুই তাকে মিথ্যে বলে আমার পরিচয়ে তার সামনে গিয়েছিলি। তাই বলছি, এখন রাইসাকে ভুলে যা। জীবনটা অনেক বড়, ভালো থাকবি।

কথাটা বলেই উঠে যেতে নিলে অয়ন ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠে,
– মিথ্যের সূচনাটাও তুই করেছিলি। রাইসাকে তুই একটা কথাও সত্যি বলিস নি, তোর নাম হতে, পছন্দ অপছন্দ সব মিথ্যে ছিলো। তাই তুই চাইলেও ওকে সত্যি বলতে পারবি না। কারণ তুই নিজের মিথ্যের জালে নিজেই জড়িয়ে গেছিস। একটা কথা কি ভাই? মিথ্যের সম্পর্কের কোনো শুরু শেষ থাকে না। আমার মিথ্যের জন্য আজ রাইসা আমার নয়। ঠিক তেমন তোর মিথ্যের জন্য রাইসা কখনো তোর ও হবে না। আর একটা কথা আমি তোর মতো নিচ নই, ভাইয়ের বউ এর উপর কু নজর দেবার ইচ্ছে আমার নেই। থাকলে সেই সকালে যখন রাইসা সব কিছু আমাকে বলতে এসেছিলো আমি তাকে ফিরিয়ে দিতাম না। একটা উপদেশ দিবো, ছোট ভাইয়ের উপদেশটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখ। ভালোবাসা জোর করে হয় না, যদি সত্যি তুই রাইসাকে ভালোবেসে থাকিস ওকে সম্মান করতে শিখ। ওর মনে নিজের জন্য ভয় নয়, ঘৃণা নয়, সম্মান তৈরি কর।

অয়নের কন্ঠে ক্ষোভ ছিলো। ছাই চাপা আগুনের মতো উত্তপ্ত ছিলো বুকের অদৃশ্য আগুন। হ্যা তার দোষ ছিলো। একটা মিথ্যের জালে নিজেকে জড়িয়েছিলো। কিন্তু সেই মিথ্যেটা নিজের অস্তিত্ব হয়ে উঠবে এটা অয়নের জানা ছিলো না। এক মূহুর্ত সেখানে দাঁড়াতে ইচ্ছে হলো না তার। গটগট করে নিজের রুমের দিকে হাটা দিলো সে। এদিকে সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো আবরার। অয়নের বলা একটা কথাও ভুল নয়, সেদিন যদি অয়নের বদলে নিজে যেয়ে দেখা করতো অয়নের সাথে তাহলে হয়তো তার এবং রাইসার সম্পর্কটা এমন হতো না। বুক চিরে অচিরেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয় আবরারের। ধীর পায়ে নিজের রুমে যায় আবরার। রাইসা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। চাঁদের মৃদু আলোতে কি মায়াবী লাগছে মেয়েটিকে! চোখের উপরে আসা চুলগুলো সরিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
– তুমি যদি কখনো জানতে পারো আমার সত্যিটা তবে কি ভালোবাসবে আমায়?

গ্লানির স্তরটা যেনো বেড়েই গেলো আবরারের। নিজেকে খুব হিন্য মানুষ মনে হচ্ছে। নিজের মিথ্যের জালে আজ নিজেই আটকে গেছে। একটু সাহস নিয়ে সত্যিটা বলে দিলে কি হতো!
“ Everything is fair in love and war” _______ উক্তিটি শুধু নামেই উক্তি, ভালোবাসায় মিথ্যের কোনো জায়গা নেই। একটা মিথ্যে আরোও মিথ্যের আবির্ভাব ঘটায়, আজ আবরার সেটার জীবন্ত উদাহরণ। সেদিন যখন রাইসার সাথে মিথ্যে না বললে হয়তো তাদের দূরত্বটা এতোটাও হতো না।
__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
সকাল ৯টা,
ডাইনিং রুমে পেপার হাতে বসে রয়েছেন ইসামাইল সাহেব। নাসিমা বেগম তাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। সকাল সকাল পেপার না পড়লে তার ভালো লাগে না। পেপারটা ভাজ করে খাবারে হাত দিবেন তখনই প্রাপ্তি সেখানে উপস্থিত হয়। প্রাপ্তি সাধারণত আরোও সকালে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। ইসমাইল সাহেব তাকে দেখে খানিকটা অবাক ই হন। নাসিমা বেগম প্রাপ্তিকে আদুরে গলায় বলেন,
– খেতে বস, আজ পরোটা আর ডিম পোচ। তোর তো এটা খুব পছন্দ। দেরি হয়েছে যখন আর দশ মিনিট দেরি হলে কিছুই হবে না।
– আসলে খালা, কিছু কথা ছিলো।
– খালা বলছে যখন খেতে বসো। তুমি আসলে এতো ব্যস্ত হয়ে গেছো যে, কাজ বা কোনো জরুরি কথা ছাড়া তোমাকে পাওয়াওই যায় না। সেদিন বিয়ের দিন ও টিউশনির কথা বলে বেরিয়ে গিয়েছিলে। এভাবে চলতে থাকলে তোমার ভবিষ্যত নিয়ে আমি চিন্তায় পড়ে যাবো। সেই সকালে যাও আর রাতে ফিরো। আমরা একটা ভদ্র সমাজে থাকি সেটা যেনো তোমার জানাই নেই।

হিনহিনে কন্ঠে কথাগুলো বললেন ইসমাইল সাহেব। নাসিমা বেগম তাকে বাধা দিতে গেলে চোখ গরম করে তাকালেন তিনি। প্রাপ্তি নিজের খালুর কথাগুলো মাথানত করে শুনলো। খালুর সাথে বেয়াদবি করার শিক্ষা তাকে কখনোই দেওয়া হয় নি। সুতরাং সেটা সে করবে না। আজ হয়তো খালুর জায়গায় বাবা থাকলেও এভাবেই শাসন করতো। মাথা কাত করে চুপচাপ আস্তা করলো সে। নাস্তা শেষে ধীর কন্ঠে বললো,
– খালু একটা কথা ছিলো
– হুম বলো
– কিছু টাকা লাগতো
– কিসের টাকা?
– আমার একটা ক্যামেরা কিনতে হবে, আসলে এই সেমিস্টারে ফটোগ্রাফির কোর্স আছে কিনা।
– বারবার বলেছিলাম একটা ভালো সাবজেক্টে পড়ো। রাইসাকে দেখো সে একটা কলেজের লেকচারার। না তুমি তো সেটা শুনবে না। কি এক ফাইন আর্টস, এটা কোন সাবজেক্ট হলো? আজাইরা টাকা নষ্ট।
– খালু বেশি না বিশ হাজারের মতো লাগবে, বাকি টাকা আমার কাছেই আছে।
– টাকার গরম দেখিও না বুঝলে, সামান্য টিউশনি ই তো করাও তার কি গরম। আজাইরা।

বলেই উঠে চলে গেলেন ইসমেইল সাহেব। প্রাপ্তি মাথা নিচু করে বসে রইলো। চোখের কোনায় নোনাজল জমতে লাগলো। আজ বাবা থাকলেও কি এভাবেই ব্যাবহার করতেন? কে জানে!

আজ কলেজ পৌছাতে পৌছাতে দেরি হয়ে গেলো প্রাপ্তির। ফটোগ্রাফি ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন সেমিস্টারের নতুন ক্লাস। শুনেছে স্যারও নাকি বাইরের কেউ। না জানি দেরি হবার জন্য কত কথাই না শুনতে হয়। ক্লাসের সামনে এসে বুকে দোয়া পড়ে ফু দিলো প্রাপ্তি। ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। স্যার বোর্ডে কিছু লিখছেন। সেই ফাকে পেছনের দরজা দিয়ে চাইলে ঢুকে পড়তে পারবে। যা ভাবা তাই কাজ। যেই না পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে…………………………।

চলবে

[ সরি দেরি হবার জন্য, এ নিয়ে দুবার লেখা হয়েছে গল্পটি। প্রথমবার ডিলেট হয়ে গিয়েছিলো। প রবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ আজ রাতে পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here