এক_পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়,পর্ব_১০
নিশাত_জাহান_নিশি
নিয়াজকে প্রত্যত্তুর করার কোনো সুযোগ না দিয়েই অনল তাড়াহুড়ো করে নিয়াজের কাঁধে হাত রেখে কামরা থেকে প্রস্থান নিলো! পরমুহূর্তেই অনল বাঁকা হেসে পিছু ফিরে তাকাল! স্তম্ভিত ঐথিকে এক চোখ মেরে বলল,,
“এসো তাড়াতাড়ি!”
মগ্নতা থেকে বেরিয়ে এলো ঐথি। অস্থির চাহনিতে মাথা ঝাঁকিয়ে ইশারায় বলল আসছি। নিয়াজকে সঙ্গে করে অনল দ্রুত কদমে হেঁটে চলল লজের মেইন গেইটের উদ্দেশ্যে। তড়িঘড়ি করে ঐথি বাহির থেকে দরজায় খিল লাগিয়ে অনুসরন করতে লাগল অনল এবং নিয়াজকে। গম্ভীর চিত্তে জীপে অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছিলেন মিস্টার শিমুল হক, আহির এবং রুহাজ। পালাক্রমে অনল, নিয়াজ এবং ঐথিকে দেখা মাত্রই তারা যেন স্বস্তি খুঁজে পেল। অনল এবং নিয়াজ এক প্রকার তাড়াহুড়ো করেই উঠে বসল মিস্টার শিমুল হকের পাশের সিটটিতে। পেছনের সিটে পাকাপোক্তভাবে এঁটে বসেছে আহির, রুহাজ এবং ঐথি। পলকহীন দৃষ্টি ঐথির সামনের সারির লুকিং গ্লাসটির দিকে সীমাবদ্ধ। অনলের মূর্তায়মান মলিন প্রতিচ্ছবিটির দিকে তার এক রোঁখা দৃষ্টি। বিষয়টি অনলের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেল। ভুলক্রমেও একটি বার দৃষ্টি পড়ল না লুকিং গ্লাসটির দিকে। ঐথি খানিক বিরক্তিবোধ করল। তবে তার প্রকাশ ঘটাল না। মগ্ন চিত্তে কেবল তাকিয়েই রইল। ইতোমধ্যেই জীপ ছেড়ে দিলেন মিস্টার শিমুল হক। ঐথিও চট জলদি দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। শাঁই শাঁই গতিতে জীপ ছুটে চলল নির্দিষ্ট গন্তব্য পথে।
,
,
শীতের রাত। চারদিকে মারাত্নক হিম ভাব বহমান।শিশির ঝরা এই রাতে যেন বাইরে বের হওয়াটাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত শীতে গরম বস্ত্রও যেন শরীরকে উষ্ণতার যোগান দিতে পারছে না যর্থাথ ভাবে। শিথিলতা, শুষ্কতা, রুক্ষতা উভয় দিক থেকে সমভাবে জড়িয়ে ধরেছে। হিম শীতল বাতাসে যানবাহনে চলাচল করাটাই যেন দুর্বিসহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাঁই শাঁই করে চারদিকের হিম বাতাস একজোট হয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে জীপের ভেতরে। শরীরকে অসাড় করে যেন লোমকূপে কাঁটা তুলে দিচ্ছে এই সর্বনাশা হিম বাতাস। ঐথি এবং অনলের শরীরে কোনো গরম বস্ত্র না থাকায় তারা দুজনই শীতে প্রায় বরফের টুকরোয় পরিণত হয়েছে। ঐথির অবস্থা খুবই সূচনীয়। অবস হয়ে আসছিল তার সারাটা শরীর। দাঁতে দাঁত সংঘর্ষ হয়ে করুন এক অবস্থা। ঐথির এই অসহনীয় অবস্থা দেখে এই পর্যায়ে এসে অনল বাধ্য হলো মাঝ রাস্তায় জীপ থামিয়ে তাদের দুজনের জন্য গরম বস্ত্র ক্রয় করতে। লাল রংয়ের ভারী সোয়েটারটা গাঁয়ে পরিধান করতেই যেন ঐথির কিঞ্চিৎ স্বস্তি মিলল। শীতের প্রকোপ স্বল্প হলেও অবসান হলো। অসাড় হওয়া শরীরটিও মুহূর্তের মধ্যে সচল হয়ে উঠল। ঐথির সন্তোষজনক অবস্থা দেখে অনল ও যেন নিশ্চিন্ত হলো। ঐথিকে নিয়ে পুনরায় জীপে উঠে বসল।
___________________________________________
রাত ১০ টা বেজে ১৫ মিনিট বাজছে ঘড়িতে। কনকনে শীতে বসার ঘরে ঐথির বাবা-মা এবং মুনাকে কেন্দ্র করে জট পাকিয়ে বসে আছে মিস্টার শিমুল হক, অনল, ঐথি, নিয়াজ, আহির এবং রুহাজ! সকলের মুখে গম্ভীরতার ছাপ। ঐথির লেলিহান দৃষ্টি তার বাবার রূঢ় দৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ। ঐথির মা কপাল কুঁচকে উপস্থির সবার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। মধ্যখান থেকে মুনা ভয়ে এক প্রকার সিঁটিয়ে আছে। জড়তা এবং উদ্বিগ্নতায় মাথা নুঁইয়ে রেখেছে। মিস্টার শিমুল হক সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে সূচালো দৃষ্টিতে ঐথির বাবা-মাকে পরখ করছেন। হয়তো তাদের দুজনকে অভিজ্ঞ দৃষ্টি দ্বারা যাচাই-বাছাই করছেন। নিস্তব্ধতা ভেঙে হঠাৎ ঐথির বাবা ঐথির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“কি হচ্ছে কি এসব ঐথি? ভর রাতে কাদের নিয়ে এসেছ তুমি? তোমার চাচা-চাচীমা তো বলছিলেন, বিগত একদিন যাবত তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ডায়েরী পর্যন্ত করিয়েছিলেন আমাকে দিয়ে। রাত-বিরাতে জীপ নিয়ে আমিও তোমাকে হন্ন হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছি। এত খোঁজার পরেও তোমার সন্ধান মিলল না। আজ হঠাৎ ভর রাতে তুমি দলবল নিয়ে কোথা থেকে উঁকি দিলে?”
ঐথি হেয় হাসল! ভেতরে নিগূঢ় যন্ত্রণা নিয়েও ঠোঁটে অট্ট হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল,,
“লাইক সিরিয়াসলি বাবা? তুমি আমায় খুঁজছিলে? তাও আবার রাত-বিরাতে হন্ন হয়ে আমায় খুঁজছিলে? থানায় মিসিং ডায়েরি পর্যন্ত করিয়েছিলে? আসলেই কি এসব সত্যি বাবা?”
হাসি থামিয়ে ঐথি এবার তৎপর গলায় বলল,,
“তা হঠাৎ আমার প্রতি এত ভালোবাসা, উদ্বিগ্নতা, মায়া-মমতা কিভাবে তোমার জন্ম নিলো বাবা? রাতারাতি এত আদর, মোহাব্বত কোথা থেকে উদয় হলো? খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু!”
থতমত খেয়ে উঠলেন রাজন হাওলাদার। অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি গলা খাঁকিয়ে বললেন,,
“এসব তুমি কি বলছ ঐথি? বাবা হিসেবে তোমার প্রতি আমার কোনো আদর, ভালোবাসা, মায়া-মমতা থাকতে পারে না? এতে হঠাৎ হাসির কি হলো? অবিশ্বাসেরই বা কি হলো? আবার বলছ হঠাৎ করেই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা উদয় হয়েছে!”
ঐথি রেগে উঠল! ভীষণ রেগে উঠল। উঁচু গলায় বলল,,
“আপনার সাথে অহেতুক কথা বাড়াতে আমরা এখানে আসি নি মিস্টার রাজন হাওলাদার। আমার বোন অর্থাৎ আপনার দ্বিতীয় মেয়েকে আমরা সাথে করে নিয়ে যেতে এসেছি। বাবা-মা হয়ে যে দায়িত্বটা পালন করা আপনাদের করণীয় ছিল? সেই দায়িত্বটিই এখন আমি বড় বোন হয়ে পালন করতে এসেছি!”
নিমিষের মধ্যেই ভড়কে উঠলেন রাজন হাওলাদার। সাথে উনার স্ত্রী প্রীতি হাওলাদার এবং তাদের মেয়ে মুনা হাওলাদার! ভয়ে, উদগ্রীবতায় মুনা ওড়নার আঁচল চেপে কেঁদে উঠতেই ঐথি উদ্বিগ্নমনা হয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে গেল মুনার দিকে। মুনাকে বাহুডোরে জড়িয়ে বলল,,
“ডোন্ট বি ক্রাই মুনা। দেখো, আমি এসে গেছি। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম না? এই ঝঞ্জাট থেকে তোমাকে আমি উদ্ধার করব? দেখো? আমি আমার কথা রেখেছি। তোমাকে এই জাহান্নাম থেকে নিয়ে যেতে এসেছি। সত্যি বলছি মুনা, এবার তুমি ন্যায় পাবে। তোমার প্রতি করা প্রতিটি অন্যায়ের তুমি ন্যায় পাবে!”
মুনা হেঁচকি তুলে কেঁদে অস্পষ্ট গলায় বলল,,
“কিন্তু ভিডিও? ঐ জানোয়ার লোকটা তো আমার ভিডিও ভাইরাল করে দিবে আপু!”
ঐথিকে প্রত্যত্তুর করার কোনো সময়, সুযোগ না দিয়েই রাজন হাওলাদার আক্রোশিত গলায় ঐথিকে শুধিয়ে বললেন,,
“ঐথি জাস্ট শাট আপ! মুখ বন্ধ করো তুমি। ঝঞ্জাট তুমি কাকে বলছ হুম? জাহান্নাম বলতে কি মিন করতে চাইছ? মুনার প্রতি থাকা কোন দায়িত্বটা আমরা পালন করছি না? কোন করণীয় কাজটা আমরা করছি না? কি বলতে চাইছ কি তুমি?”
মিস্টার শিমুল হক এবার গর্জে উঠলেন! সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ঝাঁঝালো গলায় রাজন হাওলাদারকে থামিয়ে বললেন,,
“ইউ জাস্ট শাট আপ! আপনি একটু চুপ থাকুন। এতদিন ধরে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে আসার পরেও কিভাবে পারছেন এত উঁচু গলায় কথা বলতে? বিবেকে বাঁধছে না আপনার? দীর্ঘ দু, তিন বছর ধরে আপনার ছোট মেয়েকে বিভিন্নভাবে মলেস্ট করা হচ্ছিল, জানতে না আপনি? চাইল্ড সেক্সুয়েল এবিউজ করা হচ্ছিল তাকে, বুঝতে পারেন নি আপনি? একই বাড়িতে থেকেও কখনও কিছু টের পান নি, না? কেমন বাবা-মা আপনারা? মেয়ের বাহ্যিক অবনতি দেখেও ভেতরের কষ্টটা পরিমাপ করতে পারেন নি!”
প্রীতি হাওলাদার অতি উত্তেজিত হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। সন্দিহান গলায় মিস্টার শিমুল হককে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“মিথ্যে বলছেন আপনারা এসব! ঐথির সাথে আপনারাও এক জোট হয়ে এসেছেন আমাদের মান-সম্মান নষ্ট করতে! ঐথির মত আপনারাও চান না, সমাজে আমরা মাথা উঁচিয়ে বাঁচি। আমার মেয়ে তার ভালো স্বভাব-চরিত্র নিয়ে বুক ফুলিয়ে সমাজে চলাফেরা করুক।”
এই পর্যায়ে এসে অনল ভীষণ ক্ষীপ্ত হয়ে উঠল। ঘাড়ের রোগ টানটান করে মিস্টার শিমুল হকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“এসব কি হচ্ছে স্যার? আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের অযৌক্তিক উপস্থাপন শুনছেন? আমরা তো আপনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আপনি এখানে এসেছেন। এমনকি সেই অভিযোগ অনুযায়ী মূল ভিকটিমও কিন্তু একটু আগে ঐথির কাছে সেই গোপন ভিডিও সম্পর্কে নিজের ভয় প্রকাশ করেছে। এ থেকেই তো বুঝা যায় ভুক্ত ভোগী তার বিরুদ্ধে করা অন্যায় সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে। এখন আপনার উচিত এখানে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ভিকটিমকে নিয়ে থানায় যাওয়া। নতুন করে তার অভিযোগ নথিভুক্ত করা।”
রাজন হাওলাদারও এবার বিস্ফোরিত হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। অনলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দু’চক্ষু বুলিয়ে বাজখাঁই গলায় অনলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“এই? তুই সেই ছেলেটি না? যে ছেলেটি আমার মেয়েকে রেপ করেছিল? তোর ছবিই তো রাফিন আমায় দেখিয়েছিল! তুই ই তো হলি সেই ধর্ষক! ধর্ষক হয়েও তুই আমার বাড়িতে কি করছিস? আমার মেয়ের সাথে কি করছিস?”
ইতোমধ্যেই একদল পুলিশ এসে রাজন হাওলাদারের বসার ঘর দখল করে নিলো! কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই মিস্টার শিমুল হক একজন লেডি কনস্টেবলকে ইশারা করে বললেন মুনাকে নিয়ে জীপে উঠতে। কনস্টেবলটি ইশারা বুঝে নমনীয় হাতে মুনাকে নিয়ে ছুটে চললেন বাড়ির বাইরে অবস্থান করা পুলিশ জীপটির উদ্দেশ্যে। অতি ভয়ের বশবর্তী হয়ে মুনা ফুপিয়ে কেঁদে উঠতেই ঐথিও মুনার পিছু পিছু ছুটে চলল জীপটির দিকে। রাজন হাওলাদার এবং প্রীতি হাওলাদার তেড়েমেড়ে এলেন মিস্টার শিমুল হকের দিকে। রাজন হাওলাদার তেজী গলায় মিস্টার শিমুল হককে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“কোন অভিযোগের ভিত্তিতে আপনি আমার মেয়েকে জীপে তুলে নিলেন? কি করেছে আমার মেয়ে? কি করতে চাইছেন কি আপনারা? আপনি জানেন? আমি এবং আমার ওয়াইফ কত বড় জার্নালিস্ট? আপনার ধারনা আছে? আপনার এই অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে আমরা আপনাকে ঠিক কতটা নিচে নামাতে পারি? আপনার চাকরী মুহূর্তের মধ্যেই খেয়ে নিতে পারি, সেই ভয় রাখেন আপনি?”
মিস্টার শিমুল হক অট্ট হাসলেন। ঠোঁটের কোণে হাসি রেখেই প্রত্যত্তুরে বললেন,,
“আমার বিরুদ্ধে যা যা করার দরকার আপনারা করতে পারেন। আর এ ও মাথায় রাখুন, আপনার মেয়েকে আসামি হিসেবে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না! ভিকটিমের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই ভিকটিমকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর খবরটা পারলে আপনার বন্ধুর ছেলে, মৃদুলকেও জানিয়ে দিবেন। একটু পরে তাকেও জীপে তুলা হবে!”
মিস্টার শিমুল হক বেশ দাপটের সহিত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। মিস্টার শিমুল হকের পিছু পিছু নিয়াজ, আহির, রুহাজও বাড়ি থেকে প্রস্থান নিলো। অনল বাঁকা হেসে রাজন হাওলাদের মুখোমুখি দাঁড়াল! টেরামি চাহনিতে রাজন হাওলাদারকে মন্থর গলায় শাসিয়ে বলল,,
“কি স্যার? খুব ভয় কাজ করছে তাই না? ভাবছেন, কেঁচো খুঁড়তে না কেউটে বের হয়ে আসে! বহু পূর্বের করা আপনাদের পাপ কাজটি না সামনে চলে আসে! আপনার এবং আপনার সো কল্ড ওয়াইফের করা কুকীর্তি না আইনের হাতে ধরা পড়ে যায়। খুব আতঙ্কে আছেন তাই না? খুব আতঙ্কে?”
রাজন হাওলাদার আংগুল উঁচিয়ে অনলকে শাসিয়ে উঠার পূর্বেই অনল কড়া গলায় রাজন হাওলাদারকে পাল্টা শাসিয়ে বলল,,
“আংগুল নামিয়ে কথা বলুন। আমার দিকে এভাবে তেড়ে আসার সামন্য সাহসটুকুও আপনি দেখাতে পারেন না। আর একটা কথা মাথায় রাখুন, মৃদুল এবং হায়দার সাহেবের কানে যেন কিছুতেই এই মাত্র হওয়া কোনো ঘটনা না পৌঁছায়! সাবধান করে গেলাম আপনাকে!”
রাগে গজগজ করে প্রস্থান নিলো অনল। রাজন হাওলাদার এবং প্রীতি হাওলাদার মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন। দুজনের চক্ষুজোড়াতেই অপার ভয় এবং উদগ্রীবতার ছাপ। ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন এক্ষুণি দুজনের মিনি হার্ট এ্যাটাক হয়ে যাবে!
মধ্য রাতের দিকে ধানমন্ডি থানায় পৌঁছে গেল পুলিশের জীপ। মুনাকে নিয়ে সবাই এক এক করে জীপ থেকে নেমে থানার ভেতর প্রবেশ করল। ভয়ার্ত মুনার হাত জোড়া এখনও ঐথি শক্ত হাতে চেপে ধরে আছে। ঐথির ভরসাতেই যেন মুনা এখনও অবধি সুস্থ, স্বাভাবিক ভাবে আছে। মুনা সহ ঐথি, নিয়াজ, আহির, রুহাজকে থানায় রেখে মিস্টার শিমুল হক পুনরায় উনার পুলিশ টিম নিয়ে উত্তরায় মৃদুলের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তাদের সাথে অবশ্য অনলও আছে। এক প্রকার জোরাজুরি করেই অনল মিস্টার শিমুল হককে রাজি করিয়েছিলেন এই অভিযানে যাওয়ার।
ঘন্টা খানিক বাদে মৃদুলের বিশাল বড় তিল তলা বিশিষ্ট বাড়ির সামনে জীপ গাড়িটি থামালেন মিস্টার শিমুল হক! আভিজাত্যপূর্ণ সাদা টাইলসের তৈরি বাড়িটির দিকে তাকিয়ে মিস্টার শিমুল হক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অনলকে বললেন,,
“জীবন ভর কি করলাম অনল? এত বড় রাজপ্রাসাদ তৈরি করা কি স্বপ্নই রয়ে যাবে?”
“ভাই। আপনার মতো একজন সৎ পুলিশ অফিসারের মুখে এসব কথা একদমই মানায় না। সৎ পথে থেকে কখনও একজন ভালো মানুষ এত আভিজাত্যে মোড়ানো রাজপ্রাসাদ তৈরি করতে পারে না। তার সৎ মনটাই হলো তার জন্য বিশাল এক রাজপ্রাসাদ! আপনার মনেই তো সেই রাজপ্রাসাদ বিরাজ করছে ভাই। আখিরাতে সেই রাজপ্রাসাদ নরলোকের সবাই দেখবে! এই দুনিয়ার তৈরি রাজপ্রাসাদ তো শুধু লোক দেখানোর জন্য ভাই। আখিরাতে এর কোনো মূল্য নাই।”
ম্লান হাসলেন মিস্টার শিমুল হক! অনলের দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“এবার হয়তো আর সৎ পথে হাঁটা হবে না অনল! একটা সত্যি বের করতে অনেক গুলো মিথ্যের আশ্রয় নিতে হবে। পূণ্য এবার কিভাবে অর্জন হবে অনল?”
অনল সন্দিহান গলায় বলল,,
“আপনি কোন মিথ্যের কথা বলছেন স্যার?”
“দুদিন পরেই বুঝতে পারবে! যখন তুমিও এই মিথ্যের পথে হাঁটবে!”
তড়িঘড়ি করে মিস্টার শিমুল হক বাড়ির ওয়াচ ম্যানকে শাসিয়ে বাড়ির মেইন গেইট খুলতে সমর্থ হলেন। অনল স্তব্ধ ভঙ্গিতে এখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এই পর্যায়ে এসে মিস্টার শিমুল হককে অনলের খুব রহস্যময় মনে হচ্ছে। এসব ভাবনা চিন্তার মধ্যেই মিস্টার শিমুল হক পুলিশ টিম নিয়ে মৃদুলের দু’তলা ফ্ল্যাটে উঠে গেলেন। মৃদুলের ফ্ল্যাটের দরজাটা সম্পূর্ণ খোলা! হনহনিয়ে সবাই ফ্ল্যাটের ভেতর প্রবেশ করতেই দেখলেন মৃদুল ড্রিংকস করা অবস্থায় অচেতন হয়ে সোফার উপর হাত-পা ছিটিয়ে পড়ে আছে!
#চলবে….?