এক_পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়,পর্ব_৭

এক_পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়,পর্ব_৭
নিশাত_জাহান_নিশি

“হিংস্রতায় তুমি কখনও আমার সাথে পেরে উঠবে না অনল! এক্ষেত্রে আমিই সেরা!”

কপালের কাঁটা অংশে হাত ঠেকিয়ে ঐথির যাওয়ার পথে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনল! যদিও পূর্বের তুলনায় আহামরি ব্যথার অনুভূতি হয় নি কাঁটা অংশটায়, তবে অতি তুচ্ছ ব্যথার আঁচ উপলব্ধি করতে পারছে খুব প্রয়োজনীয়তার সহিত! দৃষ্টি গুটিয়ে নিলো অনল। কামরার ডান পার্শ্বের দেয়ালে ঝুলানো ছোট্ট একক্রলিক ঘড়িটায় দৃষ্টি আবদ্ধ করল। দুপুর বারোটা বেজে বিশ মিনিট বাজতে চলল ঘড়িতে। অথচ বাইরের আবহাওয়া দেখে বুঝাই যাচ্ছে না, এতটা বেলা গড়িয়েছে। ঘন কুয়াশায় আবৃত শীতের শহর। সূর্য্যের এক ফোঁটা আলোক রশ্মি পাওয়া ও সেখানে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাবতেই গাঁয়ের লোম কাটা দিয়ে উঠল অনলের। মুহূর্তের মধ্যেই যেন খু্ব গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ভেবে অনলের কপাল কুঁচকে এলো! ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে প্যান্টের পকেটে হাত রাখল। অস্থিরমনা হয়ে সেলফোনটি পকেটে থেকে বের করল। অতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সেলফোনটির স্ক্রিনে! ভাববার বিষয়টি কোনো ভাবে মিলে যেতেই বোধ হয় অনলের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল! হাসির রেখা মিলিয়ে যেতেই অতি তৎপর ভঙ্গিতে অনল কারো নাম্বারে ডায়াল করল। ফোনটি কানে গুজে হাতে গোনা কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতেই অপর প্রান্ত থেকে ফোনটি রিসিভ হলো। পুনরায় ম্লান হেসে অনল অপর প্রান্তের ব্যক্তিটিকে অতি নম্রতার সহিত সালাম জানিয়ে বলল,,

“কেমন আছেন শিমুল ভাই?”

বিস্ময়তার সহিত লোকটি তাৎক্ষণিক সালামের জবাব নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কে? ঠিক চিনতে পারলাম না?”

“অনল। আমি অনল বলছি ভাই!”

“অনল? তোমার ফোন নাম্বার চেইঞ্জ কেন?”

“সে অনেক কথা ভাই। আগে বলুন, আপনি কেমন আছেন?”

মৃদু হাসির সহিত লোকটি প্রশ্নের উত্তরে বললেন,,

“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি অনল। তোমার কি অবস্থা? দিনকাল কেমন চলছে?”

“এই তো চলছে ভাই, কোনো রকম! আপনার তো জানারই কথা, বর্তমানে আমি ঠিক কতোটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি!”

“হ্যাঁ। কাল রাতে শুনেছিলাম, নিয়াজের মুখ থেকে। যদিও নিয়াজ সম্পূর্ণ বিষয়টি আমার কাছে খোলসা করে বলে নি! তাই অচেনা নাম্বার থেকে তোমার কল পাওয়া মাত্রই খানিকটা অবাক হয়েছি।”

“সেই বিষয়টি সম্পর্কেই আপনার সাথে কথা বলতে চাইছি ভাই! আপনার যদি সময় হয় তো, বিষয়টি আপনার কাছে খোলসা করে বলতে পারি।”

“অবশ্যই। বলো বলো, কি বলতে চাইছ?”

অনল এক এক করে মৃদুলের বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্য এবং অভিযোগ তুলে ধরল মিস্টার শিমুল হকের কাছে। সমস্ত ঘটনা মন দিয়ে শ্রবণ করার পর মিস্টার শিমুল হক অনলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“তুমি যা যা বলছ, তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে তো তোমার কাছে?”

“আছে ভাই। ভিকটিমই হলো এই ঘটনার মূল প্রমাণ!”

“ভিকটিম মানে ঐথি? যার সাথে চাচী আম্মা তোমার বিয়ে ঠিক করেছিল?”

“জ্বি ভাই! ঐথিই হলো এই সব ঘটনার মূল প্রমাণ। ঐথি এবং তার সৎ বোনের সাথেই দীর্ঘ দু, তিন বছর ধরে এসব ঘটে আসছে৷ আপনি তো ধানমন্ডি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়াও সম্পর্কে আমার জেঠাতো ভাই! যদিও সম্পর্কটা বহু দূরের। তবুও রক্তের সম্পর্কের চেয়েও কিন্তু কম দুর্বল নয় আমাদের সম্পর্কটা! আশা করি, অন্তত আমার মায়ের দিকে চেয়ে হলেও আপনি আমার সঙ্গ দিবেন। গোড়া থেকে সমস্ত সত্যের মূল উদঘাটন করবেন। সত্যের সাথে সঙ্গ দিয়ে এই মহা ষড়যন্ত্র থেকে আমাকে এবং আমার কাছের মানুষদের উদ্ধার করবেন।”

মিস্টার শিমুল হক কিঞ্চিৎ মুহূর্ত নিস্তব্ধ রইলেন। বোঝা পড়ায় হয়তো ভীষণভাবে ব্যস্ত। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তিনি গলা ঝেড়ে তৎপর গলায় বললেন,,

“ভিকটিম কি এখন তোমার সাথেই আছে?”

“জ্বি ভাই, আমার সাথেই আছে!”

“আচ্ছা, আমি দেখছি বিষয়টা। উপর মহলের সাথে কথা বলার ও কিছু প্রয়োজনীয়তা আছে। তাদের থেকে অনুমতি পেলেই আমি কথা দিচ্ছি, তোমার কেইসটা হাতে নিব। সো, এই বিষয়টা নিয়ে তোমার বিশেষ ভাবতে হবে না।”

“কিন্তু ভাই, আমার খুব বেশি একটা মনে হচ্ছে না উপর মহল আপনাকে খুব সহজে এই কেইসটায় অনুমতি দিবেন বলে! কারণটা নিশ্চয়ই আপনার জানা!”

“আমি জানি অনল, হায়দার সাহেব এবং মৃদুলের ক্ষমতা সম্পর্কে। তবে অফিসিয়াল ভাবে আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি। যদি না হয়, তো অন্য ব্যবস্থা নিব!”

“অন্য ব্যবস্থা বলতে?”

“পোশাকের বাইরে যা হয় আর কি!”

“মানে? গুপ্ত অভিযান?”

“ঠিক তাই! তোমার সহযোগিতা ও কিন্তু কাম্য!”

অনল ক্রুর হেসে বলল,,

“আমি তো আপনার প্রথম কাতারেই থাকব ভাই। প্রয়োজনটা আমার। সহযোগিতা তো আপনি আমায় করবেন!”

মিস্টার শিমুল হক স্মিত হেসে বললেন,,

“তাহলে এখন রাখছি অনল। সন্ধ্যার দিকে আমি তোমাকে সমস্ত আপডেট জানাচ্ছি। ততক্ষন অবধি নিজেকে এবং ভিকটিমকে যতটা পার আড়ালে রাখার চেষ্টা কর। পুলিশের টহলে আটকা পড়ে গেলে কিন্তু কঠিন হয়ে দাঁড়াবে সমস্ত সত্যিটা খুঁজে বের করা। আই হোপ, তুমি বুঝতে পেরেছ?”

“জ্বি ভাই, আমি বুঝতে পেরেছি। যথেষ্ট সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি।”

“সিমটা ও আপাতত বন্ধ রাখ। পারলে ফোনটাই চেইঞ্জ করে নাও।”

“গতকাল রাতেই ফোন চেইঞ্জ করা হয়ে গেছে ভাই। সিমটাও সম্পূর্ণ নতুন।”

“কাজের কাজ করেছ। এখন রাখছি তাহলে। সন্ধ্যায় কথা হচ্ছে।”

টুংটাং শব্দে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে অনল বিছানায় ছুড়ে মারল। ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক হাসি ফুটিয়ে নিম্ন গলায় বলল,,

“এবার তোর খেলা শেষ মৃদুল। তোর পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। গারোদের ওপারে তুই থাকবি। অন্যদিকে, আমি এবং ঐথি সুখে সংসার করব। মুনাও তার নিরাপদ জীবন খুঁজে পাবে।”

নিশ্চিন্ত মনে অনল ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। কিছু সময়ের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে শিথিল শরীর নিয়ে কামরায় পা বাড়াল। অমনি দেখতে পেল বিছানার এক কর্ণারে হাত-পা গুটিয়ে মাথা নুঁইয়ে বসে আছে ঐথি। মুখমন্ডলে তার মন খারাপের ছাপ৷ অনল ভীষণ অবাক হলো। উদ্বিগ্ন চিত্তে দ্রুত কদমে ঐথির দিকে এগিয়ে এলো। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কি হয়েছে? মন খারাপ কেন?”

মাথা উঁচিয়ে ঐথি কাতর দৃষ্টিতে অনলের উত্তাল চক্ষু জোড়ায় দৃষ্টি আবদ্ধ করল। দুর্বল গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“তোমরা বন্ধুরা কি এতোটাই ফকির?”

অনল তাজ্জব বনে গেল! কপালের ভাঁজে উৎকন্ঠা ভর করতেই ঐথি পুনরায় বলল,,

“সামান্য পঞ্চাশ টাকা ও কি তাদের জেবে থাকে না?”

“মানে?”

“মানে বুঝছ না, না? সামান্য পরোটা আর ওমলেট খেতে চেয়েছিলাম লজের ঐ ছোট্ট হোটেলটি থেকে। তোমার বন্ধুরা মুখের উপর বলে দিল, আমাদের কাছে কোনো টাকা-পয়সা নেই।”

অট্ট হাসি চেপে অনল গম্ভীর গলায় বলল,,

“তো? জেব গুলো চেইক করো নি তাদের?”

“করতে চেয়েছিলাম তো! তারাই তো দিল না। পালিয়ে গেল কোথায় যেন!”

“সত্যিই পালিয়ে গেল?”

“হ্যাঁ, সত্যি। অনেক খুঁজেও তাদের সন্ধান মিলল না। তাই তো বাধ্য হয়ে তোমার কাছে এলাম।”

“যাক বাবা। এক দিক থেকে ভালোই হলো!”

“কি ভালোটা হলো শুনি?”

“ভেবেই দেখ! একটু ভাবলেই বুঝতে পারবে।”

ঐথির কৌতুহলী দৃষ্টি হঠাৎ অনলের বলিষ্ঠ এবং উন্মুক্ত বুকের পাজরে পড়ল! দৃষ্টি জোড়া মোহচ্ছন্ন হয়ে আসতেই ঐথি দৃষ্টি সংকুচিত করে মাথা নুঁইয়ে নিলো। স্মিত হেসে মন্থর গলায় বলল,,

“ধ্যাত বাবা! চোখের সামনে অমন উন্মুক্ত নেশা ভরা পাজর দেখলে অন্য কিছু ভাবা যায় নাকি?”

ঐথির বলা ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো অনলের কর্নগোচর হতেই অনল ক্রুর হাসল! ঐথির দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে লাগামহীন গলায় বলল,,

“একটুতেই এত আসক্তি? এত লজ্জা, এত কুন্ঠা? যুগ যুগ তো রয়েই গেছে। আরও তো অনেক কিছু দেখার বাকি রয়ে গেছে!”

লজ্জায় কুঁকড়ে উঠল ঐথি। বুকটা যেন তার ধড়ফড় ধড়ফড় করে কেঁপে উঠল! এই অসহনীয় লজ্জা কাটাতে ঐথি প্রসঙ্গ পাল্টাতে মরিয়া হয়ে উঠল। গলা ঝাকিয়ে অস্থির কন্ঠে বলল,,

“ক্ষিদে পেয়েছে আমার৷ এক্ষুনি কিছু খেতে হবে আমার।”

মাথা উঁচিয়ে ঐথি এবার অনলের শান্ত দৃষ্টিতে রাগী দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল,,

“তোমার বন্ধুদের কিন্তু কিছুতেই খেতে দেওয়া চলবে না! তারা যেমন আমাকে খেতে দেয় নি, তেমনি তুমি ও তাদের খেতে দিবে না। একটা টাকা ও জেব থেকে খসাবে না৷ বলে দিলাম কিন্তু!”

খাটের কার্ণিশ থেকে অনল শার্টটা গাঁয়ে জড়িয়ে ভাবশূণ্য গলায় বলল,,

“সে না হয় দেখা যাবে। এখন চলো। খেয়ে আসি।”

“আমি কিন্তু সিরিয়াস অনল। তোমার বন্ধুদের কিছুতেই খেতে দেওয়া যাবে না। তবে এখানেও কথা আছে। যদি তারা নিজের টাকা দিয়ে খেতে চায়, তাহলে খেতে পারবে। নতুবা না! আমি জাস্ট দেখতে চাই, নিজেদের বেলায় কিভাবে তাদের জেব থেকে টাকা বের হয়!”

অনল দরজার চৌকাঠে পা বাড়িয়ে ব্যস্ত গলায় বলল,,

“হয়েছে হয়েছে। এবার চলো। না হয় এবার লাঞ্চের সময়টা ও পার হয়ে যাবে।”

রাগে গজগজ করে অনলকে অনুসরন করল ঐথি। মনে মনে নিয়াজ, আহির এবং রুহাজকে ব্লিচিং পাউডার দ্বারা আচ্ছা মতো ধুঁয়ে চলছে। লজের ঠিক পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত ছোট থাবার মতো হোটেলটিতে প্রবেশ করল অনল। তার পেছনেই আছে ঐথি। হোটেলটির শেষ প্রান্তের ঠিক পশ্চিম পার্শ্বের সারিতে কব্জি ডুবিয়ে দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত নিয়াজ, আহির এবং রুহাজ! আশেপাশে নজর নেই তাদের। পেট পূজোতে ভারী ব্যস্ত তারা৷ তাদের তিনজনকে একত্রে দেখা মাত্রই ঐথির চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। কোমড়ে দু’হাত গুঁজে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“খাদকের দল! একেকটা স্বার্থপরের জ্বলন্ত নমুনা। আমাদের ছেড়েই কি সুন্দর গপাগপ খেয়ে চলছে! কি আশ্চর্য! আমার বেলাতেই যত রাজ্যের কৃপণতা দেখাতে হলো? দাঁড়াও খাদকের দলেরা৷ আজ তোমাদের পেটুক স্বভাব এবং কৃপণতার বদ অভ্যেস বের করছি আমি!”

অনলকে উপেক্ষা করে ঐথি দ্রুত কদমে হেঁটে চলল তিন খাদকের উদ্দেশ্যে! অনল বিষয়টিতে পুরো সচকিত! চ্যালচেলিয়ে হেঁটে ঐথি কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই তাদের তিনজনের মুখোমুখি দাঁড়াল। তারা এখনও দিন দুনিয়া ভুলে একই খাদক ভঙ্গিতে খেয়েই চলছে। গলা খাঁকিয়ে ঐথি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইল। তবে এই চেষ্টাটিও ঐথির বৃথা চেষ্টায় পরিণত হলো! কিছুতেই যেন তারা দিকবিগিক তাকানোর প্রয়োজন বোধ করছে না! পরিশেষে তিক্ত হয়ে ঐথি কাঠের বেঞ্চিতে সজোরে হাত দুটো স্থাপন করল! অমনি সশব্দে আওয়াজ হয়ে উঠল। কাঠের বেঞ্চিটি ও খানিক নড়েচড়ে উঠল! সঙ্গে সঙ্গেই নিয়াজ, আহির এবং রুহাজ মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে সম্মুখে ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! ঐথির রাগী মুখশ্রী দেখা মাত্রই তিনজন গপাস করে মুখ ভর্তি খাবার এক ঢোকে গিলে নিল। ঐথি দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাদের তিনজনের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,,

“এখন টাকা এলো কোত্থেকে শুনি? টাকা এলো কোত্থেকে?”

তিনজনই থতমত খেয়ে গেল! পেছনে ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা অনলের দিকে অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। পকেটে দু’হাত গুঁজে অনল ইশারায় বুঝিয়ে দিল, ‘সে অপারগ! নিজেদের বিষয় নিজেরাই বুঝে নাও!’ তিনজন বিক্ষুব্ধ হয়ে অনলের দিকে দৃষ্টিগোচর করতেই অনল মিটিমিটি হেসে পাশের বেঞ্চির চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়ল। শার্টের পেছনের কলারটা ঠিক করে হেয়ালী গলায় হোটেলের কর্মচারীকে ডেকে বলল,,

“দুপুরের খাবারে কি কি আছে ভাই? দেখি, খাবার লিস্টটা দেখান।”

তাদের তিনজনের দৃষ্টি এখনও অনলের দিকে সীমাবদ্ধ! ঐথি পুনরায় বেঞ্চিতে সশব্দে হাত রেখে বলল,,

“কি হলো? জবাব দিচ্ছেন না কেন? এখন টাকা এলো কোত্থেকে বলুন?”

তাদের ভয়ার্ত দৃষ্টি পুনরায় ঐথির দিকে স্থির হলো। এরই মধ্যে নিয়াজ রাগে গজগজ করে অনলকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“বউকে লাগিয়ে দিয়েছিস না? আমাদের থেকে শোধ নেওয়ার জন্য?”

অনল হিংস্রাত্নক হয়ে কিছু বলার পূর্বেই ঐথি নিয়াজকে শাসিয়ে বলল,,

“কাকে কি বলছেন আপনি? আপনার বন্ধু কেন আপনাদের পেছনে আমাকে লাগাতে যাবে? আপনারা নিজেদেরাই তো নিজেদের দোষে আমার চক্করে ফেঁসে গেছেন! কি দরকার ছিল বলুন? ঐ সময় কিপ্টেমো করার?”

পাশ থেকে আহির হেয় গলায় ঐথিকে বলল,,

“এ্যাঁ, এসেছে আমাদের উদারতা শিখাতে! ঐ যে, তোমার জামাই অনলকে দেখছ না? সে হলো আমাদের চেয়ে মহা কিপ্টে! জিজ্ঞেস করে দেখ না, কখনও আমাদের জন্য পকেট থেকে এক টাকা খসিয়েছে কিনা? সবসময় ছেঁচড়ামো করে চলেছে। এখন আমরা একটু ছেঁচড়ামো করলেই দোষ না?”

অনল চুপসে গেল। ভেজা বেড়ালের মতো মাথা নুঁইয়ে নিল! ঐথির আক্রমনাত্নক দৃষ্টি পড়ল অনলের দিকে। তাদের তিনজনকে ছেড়ে ঐথি এবার অনলের মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসে পড়ল। এরই মধ্যে কর্মচারী চলে এলো খাবারের মেন্যু হাতে নিয়ে। পিঁপড়ের মতো হাত চালিয়ে অনল মেন্যু কার্ডটি হাতে নেওয়ার পূর্বেই ঐথি খপ করে মেন্যু কার্ডটি নিজের অধীনে নিয়ে এলো! আগ পাছ না তাকিয়ে ঐথি দু প্লেইট ভাত, ডাল, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, খাসির মাংস সব দামী দামী খাবার অর্ডার করে দিলো! অনল শুকনো ঢোক গিলে ঐথির দিকে ভ্যাবাচ্যাকা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“এই? কি করছ কি তুমি? এক মাসেও তো আমি
অতো দামী দামী খাবার খাই না! আর তুমি কিনা এক বেলাতেই এত এত দামী খাবার অর্ডার করে দিলে? এই তুমি কি আমার জেব খালি করার ধান্দাতে আছো?”

সমস্ত অর্ডার কনফার্ম করে ঐথি জোর পূর্বক হাসি টেনে অনলের দিকে তাকাল। এক নিশ্বাসে গড়গড় করে বলল,,

“শুধু এটাই নয়! নিয়াজ ভাই, আহির ভাই এবং রুহাজ ভাইয়ার খাবারের বিলটাও তুমিই পরিশোধ করবে!”

অনলের চক্ষু জোড়া চড়কগাছ হয়ে উঠতেই নিয়াজ, আহির এবং রুহাজ সশব্দে হেসে উঠল। ঐথি অনলের দিকে আরেকটু তেড়েফুঁড়ে এসে ঝাঁঝাল গলায় বলল,,

“আগে তো এমন ছিলে না তুমি! ইদানিং কি এদের সাথে চলাফেরা করে স্বভাব পাল্টেছ?”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here