এক প্রহরের খেলা,১

এক প্রহরের খেলা,১
মোর্শেদা হোসেন রুবি

বজ্রাহতের মত বসে আছি অনেকক্ষণ হয়। কী করব বা কী বলব সেটার চেয়ে বড় কথা হলো, এখন আমি কী ভাববো সেটাই বুঝতে পারছিনা। একটু আগেও তিন তিনবার ভাইব্রেট করেছে আমার মোবাইলটা। কিন্তু আমি রিসিভ করিনি। করতে পারিনি। রিসিভ করব তো দুরের কথা। প্রথমবার কলারের নাম দেখার পর পরের কলগুলো চেয়েও দেখিনি।

প্রথমবারই সাইলেন্ট মোড দিয়ে ফেলেছি। পরের কলগুলো না দেখলেও ভাল করেই জানি যে নায়লার কল ওগুলো। ফোন ধরলেই ও জানতে চাইবে এদিকে কী খবর। আর তখন ওকে আমার সব বলতে হবে। নায়লা বড় ছটফটে স্বভাবের মেয়ে। প্রচুর প্রশ্ন করে আর সবটা শুনতে চায়। গোঁজামিল দিয়ে ওকে থামিয়ে দেয়া যায় না। কাজেই ওকে আমার সত্যটাই বলতে হবে। আর আমার পক্ষে ওকে এতবড় দুঃসংবাদটা শোনানো সম্ভব হবে না। অন্তত এই পরিবেশে তো নয়ই। তাছাড়া কথাটা শুনলে ও সহ্য করতে পারবে না। কেঁদেকেটে একাকার করবে। কিন্তু তারপরেও ওকে জানাতে হবে কথাটা। কিভাবে জানাব সেটাই ভাবছি। নাকি ভণিতা না করে ফোন করে সরাসরি বলব, ” হ্যালো নায়লা। এন একসিডেন্ট হ্যাপেন্ড হিয়ার। আমি বাবা আর দাদুর চাপে পড়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছি !! এটা বলব ? ফোনে তো অনেক কথা সহজে বলা যায় কারণ ফোনে মুখ দেখাতে হয় না। পরিস্থিতি ফেস করতে হয় না। সামলে নেবার অনেক সময় পাওয়া যায়। আমাকেও সেই সুযোগটাই নিতে হবে।

এতটুকু ভাবতে গিয়েই কালঘাম ছুটে গেল। নায়লাকে বলার সময় কী হবে কে জানে। অজান্তেই পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালে চেপে ধরলাম। অসাঢ় ভঙ্গিতে তাকিয়ে দেখলাম কনে বিদায় পর্ব চলছে। মোটামুটি একটা ভিরমি খাওয়া পরিবেশ। মহিলা যে ক’জন দাঁড়িয়ে আছেন তাদের প্রত্যেকে ভুতুড়ে কালো বোরকায় আপাদমস্তক ঢাকা। এদের মধ্যে কনে মানে আমার বউ কোনটা বোঝা যাচ্ছে না। কী অদ্ভুত, বউটাকে পর্যন্ত বোরকায় ঢুকিয়েছে এরা। কী আজব ধরণের মানুষ। এরা আসলে লাইফটাকে জাস্ট ইমপসিবল বানিয়ে রেখেছে।

বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। লক্ষ্য করলাম বোরকা পড়া দলটি আমার দিকে আসছে। কিছুটা সচেতন হবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যদিও এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। তারপরেও সভ্যতা আর আদবের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বিনয়ী ভঙ্গিতে তাকালাম আমার শ্বশুড়ের দিকে।
সৌম্যকান্ত শশ্রুষামন্ডিত মুখাবয়বে বিষাদের ছায়া। রুমালে চোখ মুছে বললেন, ” বাবাজি, তোমার হাতে আমার কলিজাটা তুলে দিলাম। তার যত্ন নিও। ভুল ত্রুটি হলে নিজগুণে মাফ করে দিও।”

সুবোধ বালকের মত মাথা নেড়ে আড়চোখে পিতার দিকে তাকিয়ে সংকুচিত হয়ে গেলাম কিছুটা। আমার বাবা মাহিউদ্দিন কাদের তার বড় বড় চোখে আমাকে কিছুক্ষণ দেখে অবশেষে নিজেই এগিয়ে এলেন। সম্ভবত পুত্রের নির্বুদ্ধিতায় তিনি বিরক্ত ।
আমার বাবা আমার শ্বশুড়ের হাত চেপে ধরে বললেন, ” আব্দুল্লাহ ভাই। এত মন খারাপ করো না। তোমার মেয়ে আমার বাড়ীতে বউ হয়ে না, মেয়ে হয়ে যাচ্ছে। ওর জন্য তুমি একদম চিন্তা করো না। আমি ওর কোন অমর্যাদা হতে দেব না ইনশাআল্লাহ। ” বলে আমার দিকে গরম চোখে তাকালেন আর সাথে সাথেই পিতাজির কোড নাম্বার বুঝে ফেললাম আমি।
দ্রুত শ্বশুরকে সান্তনা দিয়ে বিড়বিড় করে বললাম, ” কাঁদবেন না আঙ্কেল।” বলেই মনে হল শ্বশুরকে আঙ্কেল ডাকাটা কী ঠিক হলো ? পরক্ষণেই বাবার দিকে তাকালাম। নাহ্, তিনি তাঁর বন্ধুকে সান্তনা দিতেই ব্যস্ত। সম্ভবত আমার আঙ্কেল ডাকটা খেয়াল করেননি।

গাড়ীতে পাশাপাশি এলাম দুজনে। বোরকায় ঢাকা উনি তখন মুখ নামিয়ে চোখ মুছে চলেছেন। মাঝে মধ্যে হালকা নাক টানার শব্দ। সম্ভবত কান্না পর্বের রেশ এখনও কাটেনি। কিছু বলা উচিত কী আমার ? দুউর। এখন এসব নিয়ে ভাবার কী সময় আছে ? আমার তো চিন্তা লাগছে নায়লার জন্য। কেঁদেকেটে তুলকালাম করবে মেয়েটা। ওর চিন্তায় আমার নিজেরই কান্না আসছে। কিন্তু পুরুষ মানুষ বলে কাঁদতে পারছিনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদাস ভঙ্গিতে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। চরম বিতৃষ্ণা নিয়ে ভাবতে লাগলাম পরবর্তী সময়গুলো নিয়ে।

গাড়ী বাড়ীর গেটে থামার সাথে সাথেই মহিলারা দৌড়ে এল। আমি গেট খুলে সোজা হনহনিয়ে দোতলায় আমার রুমে চলে এসেছি ততক্ষণে। নিজের ঘরে ঢুকে প্রথমেই নায়লাকে ফোন দিলাম। কারণ এই সুযোগ। ওরা এখন কনেকে বরণ করবে। সবাই উপরে আসার আগেই নায়লাকে আগে ঠান্ডা করা দরকার। দ্রুত ফোন বের করে তাকালাম। গলা শুকিয়ে এল আমার। উনিশটা মিসকল। যদিও আমি জানি, নায়লা বড় অধৈর্য মেয়ে। তার ফোন বাজার সাথে সাথে রিসিভ না করলে সে বড় ঝামেলা করে। রেগে কাঁই হয়ে যায়। দ্রুত কল ব্যাক করলাম।

-” কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? কয়টা কল দিয়েছি দেখো তো ? ” নায়লার থমথমে কণ্ঠ পেলাম।

-” ইয়ে, মানে। এদিকে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে নায়লা।” কিছুটা হতাশ সুরে বললাম আমিও।

-” তোমার বাড়ীর মানুষরা তো পারেই ঐ এক কাজ করতে, ঝামেলা। এটা আর নতুন কী ? ” মুহূর্তেই তেতে উঠল নায়লা। তারপরেই শান্ত হয়ে বলল, ” কী ঝামেলা হয়েছে সেটা বল ? ”

-” ইয়ে মানে, শুনলে তুমি কষ্ট পা..পাবে তবু আমাকে বলতে হচ্ছে কারণ..! না বলে উপায় নেই ।”

-” এত ভণিতা না করে বলে ফেলছ না কেন ? ”

-” ইয়ে, মানে । আ….আমি বি…বিয়ে করে ফেলেছি। আই গট ম্যারিড নায়লা।” এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে থেমে গেলাম আমি। ওপাশে নায়লার কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছি না। কয়েক সেকেন্ড পর আমি নিজেই হ্যালো হ্যালো করলাম কতক্ষন। তারপরই ওপাশ থেকে নায়লার তীক্ষ্ম চিৎকার শোনা গেল।
-” সবসময় ফাজলামী না করলে তোমার চলে না, তাই না? আমাকে না রাগালে বুঝি তোমার ভাল লাগে না ?”

চেপে রাখা দমটা ফোঁস করে ফেললাম, ” ওহ্, গড। নায়লা ধরেই নিয়েছে আমি মিথ্যে বলছি। আহারে, আমার সোনা পাখিটা। কী করে ওকে বিশ্বাস করাই যে এটা ওর জীবনের এক কঠিন সত্য !
লম্বা করে দম নিয়ে ফের বলতে শুরু করলাম, ” নায়লা। আই এম নট জোকিং সুইটহার্ট। গত পরশু তোমায় না বলে আমাকে এক ঘন্টার নোটিশে ঝিনাইদা চলে যেতে হয়েছিল বলে তোমাকে ফোন দিতে পারিনি। কারণ তোমার বার্থডে ছিল গত পরশু আর আমার আপান তখন মৃত্যুশয্যায়। বাবা যখন গতকাল রাতে আমাকে কথাটা জানালেন তখন ডান বাম ভাবার সুযোগ ছিল না। স্রেফ মনে হয়েছিল, আপানের সাথে আমার শেষ দেখা হতেই হবে। উনি আমাকে এভাবে একা ছেড়ে যেতে পারেন না।”

-” আপান “কে? ”

– ” আমার দাদু। তিনি যদিও আমার দাদু কিন্তু তিনি আমার মায়ের চেয়ে বেশী। তার কোলে পিঠেই আমি মানুষ। আমার যাবতীয় আদর আব্দার তাঁর কাছেই। সেই তিনি কথা বলতে পারছেন না শুনে আমরা আর থাকতে পারিনি। পুরো পরিবারের সবাই ঝিনেদা চলে যাই। সারারাত উনার হাত ধরে বসে থাকি। যমে মানুষে টানাটানি অবস্থা যাকে বলে। সেরকম অবস্থার মধ্যেই তিনি ইশারায় একজন বয়স্ক ভদ্রলোককে ডেকে তার হাতের সাথে আমার হাত বেঁধে দেন। বিষয়টা বুঝতে পারিনি তখনও। পরে বুঝেছি। ঘন্টাখানেক পর আপানের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয় তখন তিনি আমার হাত ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকলে আম্মু এসে কানে কানে জানায় আপানের শেষ ইচ্ছানুযায়ী তাঁর চোখের সামনেই আমার বিয়েটা রুমকির সাথে দিয়ে দিতে চান তারা। আজ কোনমতে আকদ হয়ে যাবে। পরে একসময় পরিস্থিতি বুঝে ওয়ালিমা। ” এটুকু বলেই থেমে গেলাম আমি। ওপাশে নায়লার কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না এতক্ষণ। এই মুহূর্তে সে রুদ্ধশ্বাসে বলে উঠল।

-” ইউ মিন টু সে, তুমি বিয়ে করে ফেলেছ ? এবং সেটা আমি নই, আরেকটা মেয়ে ? ”

-” নায়লা, আমি পরিস্থিতির স্বীকার নায়লা।” কাতর স্বরে বললাম আমি।

-” সেই মেয়ে এখন কোথায় ? নিশ্চয়ই লাল পরী সেজে তোমার খাটে বসে আছে ? ”

-” আরে নাহ্, সে এখন নিচে। এখনও ওপরে আসেনি।”

-” ওহ্, তারমানে আজ তোমার বাসররাত ? ”
-” নায়লা আমার কথাটা শোন আগে।”

-” কী শুনব ? তোমাদের সবক’টা পুরুষ মানুষরে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। তোমরা সুন্দর মেয়ে দেখলে হুঁশ হারিয়ে ফেল। ”

-” ওফ্, নায়লা। আমি তাকে এখনও দেখিনি।”

-” ও রিয়েলি ? তা উনি কোন কলেজ থেকে পাশ করেছেন শুনি ? তুমি তো আমাকে বলেছিলে যে তোমার বউকে মিনিমাম সিএ সিসি হতে হবে। আমরা যখন একসাথে ক্লাস করেছি, অডিট করতে ঢাকার বাইরে গেছি তখন এটাই ছিল তোমার বুলি।”

-” ওটা আমি তোমাকে পাবার জন্য বলেছি, এখনও বলি। কারণ আমরা দুজন একসাথে সিএ সিসি করেছি।”

-” তা তোমার বউও নিশ্চয়ই সেরকমই হবেন। নইলে তো রাজী হতে না, তাই না ?”

-” কী বলব নায়লা ! আমার কপালটাই খারাপ। আমার সাথে একটা ডিজাস্টার ঘটে গেছে নায়লা। মেয়েটা আপাদমস্তক বোরকা পড়ে আমার সাথে ঢাকা এসেছে। পুরোটা পথ সে আমার সাথে কোন কথা বলেনি, আমি তো প্রশ্নই ওঠে না। সম্ভবত সে মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছে।”

-” হোয়াহাহাও…! হোয়াট আ প্লেজান্ট সারপ্রাইজ। আমাদের রূপম রিজভী তাহলে মাদ্রাসার মেয়ে বিয়ে করেছেন এবং কোনরকম তর্ক ছাড়াই ? আর আমাকেও সেটা বিশ্বাস করতে হচ্ছে?” নায়লা হাসছে। তবে আমি জানি ওটা সুখের হাসি না। রাগ আর বিতৃষ্ণা থেকে অমন হাসি জন্ম নেয়।

আমি কোন জবাব দিলাম না। কেবল শুনে গেলাম ওর হাসি । নায়লার সামনে না দাঁড়িয়েও বুঝতে পারছি সে খুব কষ্ট পেয়েছে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শুনতে পেলাম নায়লা কাঁদছে। বিড়বিড় করে আমাকে গালি দিচ্ছে। অভিশাপ দিচ্ছে। এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হলাম।

-” আমি তোমাকেই বিয়ে করব নায়লা। এটা কোন বিয়ে ছিল না। আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন বর্ষীয়ানকে শেষ মুহূর্তে কষ্ট দিতে চাইনি বলেই আমাকে নিরবে সবকিছু মেনে নিতে হয়েছে। ঐ মুহূর্তে আপানের কিছু হয়ে গেলে কেউ আমাকে ছাড়ত না। আমি নিজেও সারাক্ষণ অপরাধী হয়ে থাকতাম। ”

-” আমি রাখছি।”

-” নায়লা, শোনো প্লিজ। কাল একবার দেখা করি আমরা চলো। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। আমরা অবশ্যই এক হব। তবে কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে আমাদের এই যা। অন্তত আমার আপান যে ক’দিন আছেন। ওনার অবস্থা এমনিতেই সংকটাপন্ন। ”

-” সত্যি বলছ ? প্রমিজ।”

-” গড প্রমিজ।”

-” ওকে। তোমার কথা বিশ্বাস করলাম। এখন আমাকে বলো, এই মেয়ের পিছু ছাড়াবে কিভাবে তুমি ? ”

-” সেটা নাহয় সামনাসামনি বসে প্ল্যান করব দুজনে ? আপাতত আমি খুব ক্লান্ত নায়লা। চারঘন্টার টানা জার্নি।”

-” ওকে তুমি রেস্ট নাও। আচ্ছা, শোন। মেয়েটা কী তোমার ঘরেই ঘুমাবে নাকী আজকে? ”

-” খুবই স্বাভাবিক। তাকে তো একটু পরেই এই রুমে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। তবে ভেব না। বিড়াল আমি প্রথম রাতেই মারব।”

-” মানে ? ইন্টিমেসি করার কথা ভাবছ না তো ? ”
-” আরে ধুর। ঋভূর রুচি অত নিম্নমানের না। বিড়াল মারব মানে, তাকে আজ রাতেই বলে দেব যে তার আমার সাথে সুখের সংসার করার খোয়াব দেখা বাদ দিতে হবে কারণ আমার মনোজগতের রানী নায়লা নামের এক সম্রাজ্ঞী যিনি তার দখল ছাড়তে নারাজ।”

-” গুড, মনে থাকে যেন। দরকার হলে তুমি সোফায় বা ফ্লোরে চলে যাও।”

-” হম, দেখি। সেরকমই কিছু একটা করব। আচ্ছা রাখি, কেউ বোধহয় ওপরে আসছে।”

কথা শেষ করতে না করতেই মহিলাদের সম্মিলিত শব্দ পেয়ে ঘাড় ফেরালাম। তাকিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে নববধূর সাজে সুসজ্জিত হয়ে আমার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথমটায় ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও পরে বুঝতে পারলাম ওটা সেই ভুতুড়ে বোরকাওয়ালী পাবলিকটা যেটা সারা রাস্তা আমার পাশে বসে ফিঁচফিঁচ করে কেঁদেছে। তবে এক ঝলক দেখেই যা বুঝলাম তা হলো, মেয়েটা উপরে সোয়ারীঘাট হলেও ভেতরে বেশ ফিটফাট। অন্তত আমার ভাবনার সাথে মেলেনি। আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম মেয়েটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট খ্যাত মার্কা হবে। বউয়ের সাজ হিসেবে চোখে থাকবে ধ্যাবড়ানো মোটা কাজল আর ঠোঁটে থাকবে গোলাপী রঙা লিপস্টিক। চুলে তেল থাকবে আর অবশ্যই ফিতা দিয়ে বেণী করা। কিন্তু একে যথেষ্ট মার্জিত মনে হচ্ছে। যাক্, একেবারে গাবর না। মনে মনে চাপা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
মেয়েটা লজ্জাবনতা ভঙ্গিতে মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার দুইপাশে তাকে ধরে আছে আমার ছোটবোন প্রীতি আর আমার খালাত বোন রিয়া। দুজনেই মিটিমিটি হাসছে।

-” ঋভু ভাইয়া আসব ? ইজাজাত হ্যায় কেয়া ? ”
আমি ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছি। মুখ গম্ভীর করে বললাম, ” আম্মু কই রে ?”

-” আম্মু নিচে। তোর শ্বশুর আর শ্যালক মহাশয়কে আপ্যায়নে ব্যস্ত। ”

-” অহ্…!” বলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। অশান্তির প্রাথমিক রেশ কেটে গেলেও পরবর্তী রাতের চিন্তায় কাঁটা হয়ে আছি। যে করেই হোক, এই মেয়ের এক্সপেক্টেশনস তৈরী হওয়ার আগেই তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে ঋভূ এভাবে নিজের জীবন নষ্ট করতে পারবে না। তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে বসে আছে এক রেশম কোমল নারী নায়লা। আর এটা মেনে নিয়েই তাকে ঋভুর জীবন থেকে সরে যেতে হবে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here