এক দেখায়,অন্তিম পর্ব
Writer_Sumaiya Nasrin
বরযাত্রী এসে গেছে শুরু হয়ে গেছে মৌ কে সাজানোর তোরজোড়। হিমি কিছুতেই এখানে চাচ্ছিলো না যার একমাত্র কারন সাদমান। হিমি জানে এখানেই আসলেই তাকে সাদমানের সামনে পড়তে হবে। হিমি না করলে ও শেফা জোড় করে নিয়ে আসো। তার একটাই কথা হিমি না আসলে সে ও আসবে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই হিমি কে আসতে হলো।
হিমি ভয়ে আছে সাদমান যদি আবার তাকে একা পেলে আক্রমণ করে বসে?? তাই সে মৌয়ের সাথেই বসা। একদম নড়াচড়া করছে না। মন কি ডাকছে। সাদমান কে আসার পর থেকে দেখে নি তাও কেমন ভয় ভয় লাগছে এবং এটা কেন তা সে নিজেও জানে না।
সাদমান একে একে সব জায়গা খোঁজা শেষে হিমি কে পেলো মৌয়ের কাছে। হিমি সাদমান কে দেখা মাত্রই শেফা মাথার পেছনে নিজেকে আড়াল করতে গিয়ে ও পারলো না। সাদমান দেখেই ফেললো। সে মুচকি হেসে বললো,
-মৌ এখানে কি লুকোচুরি খেলা হচ্ছে?
মৌ কথা না বলে মাথা নাড়ালো। হিমি ও বুঝলো কথা টা তাকেই উদ্দেশ্য করে ছিলো।
-আচ্ছা আপনারা ছোট বড় একজন বাদে বাকি সব আপু মনি রা কেমন আছেন?
সবাই জবাব দিলো ভালো পছে। সাদমান কে দেখেই অনেকে ফিদা হয়ে মনে মনে অনেক স্বপ্ন ও দেখে ফেলেছে। শেফা সাদমানের পুরো কথাটা বুঝা শেষে নিজের চাঞ্চল্যিকতা থেকে বলে উঠলো,
-তা ভাই সাহেব সেই একজন বাদ কেন?
-বউ কে কি কেউ আপু বলে?
-বউউউউ??
সবাই বড় বড় চোখ করে তাকায়। সাদমান হেসে চলে যায়। এখানে থাকলে বউ টা কে সেটা ও বলতে হবে তাই কেটে পড়াই শ্রেয়।
বসে থাকতে থাকতে বোরিং লাগছিলো হিমির। তাই সে উঠে দাঁড়ায়। একা গেলে ও বিপদ তাই সে শেফা কে বললি,
-আমার সাথে একটু চলো তো শেফা!
—কোথায়??
-বোরিং লাগছে একটু হাটি…
-আচ্ছা চলো।
হিমি শেফার হাত ধরেই ছিলো হঠাৎ আনমনে কখন ছেড়ে দিয়েছে সেটা ও নিজেও জানে না। কথায় আছে যেখাবে বাঘের ভয় সেখানেই
সন্ধ্যা হয়। অবশেষে তাই হলো।
সাদমান শেফা কে ইশারা করলো চলে যেতে শেফা চুপিচুপি চলে যায়। হঠাৎ হিমির শেফার কথা মনে পড়লো।
-শেফা শুনছো?
একি শেফা তো নেই। হিমি পেছন ফিরে দেখে সাদমান হাত গুটিয়ে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি চোখে বাঁকা চাহনি। ভ্রুঁ জোড়া দিয়ে হিমির দিকে ইশারা করলো। হিমি ভয়ে শেষ।
-আ্ আপ্ আপনি?
-জ্বি আমি!
-শেফা কোথায়?
-চলে গেছে!
-ও আচ্ছা।
হিমি ও চলে যেতে নিবে সাদমান বলে উঠে,
-আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?
—কককই না তো!
-আমি বুঝতে পেরেছি সেটা খুব ভালো করেই…
সাদমান হিমির কে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। হিমির ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা।
-আপনি আমায় বিয়ে করতে রাজি তো?
হিমি কথা বলার ভাষাই যেনো হারিয়ে ফেলেছে।
-ভালোয় ভালোয় থাকুন আমি ও কিছু করবো না। এটলিস্ট আপনার ক্ষতি করবো না এই টুকু বিশ্বাস রাখতেই পারেন। বলুন আমাকে বিয়ে করবেন না?
-ন্ ন্ না…
সাদমানের গায়ে কফি কালারের শার্ট। সে শার্টের বোতাম একে একে খুলতে খুলতে হিমির দিকে এগিয়ে আসছে। হিমি এটা দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এই বুঝি আজ সব শেষ। হিমি ভয়ে ভয়ে বললো
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপনাকে বিয়ে করবো…
সাদমান হাসতে হাসতে গড়াগড়ির মতো অবস্থা। হিমি দেঝে সাদমান ঠিকি ই আছে। শার্টের উপরের দুটি বোতাম ই খুলেছে। তাতে করে সাদমানের বুকের অংশ টা দেখে যাচ্ছে। সাদমান বললো,
-বুঝলেন খুব গরম পড়েছে।
সাদমানের হাসি দেখে খুব রাগ হলো হিমির। সহ্য হচ্ছে না একদম। এদিকে সাদমান তো হিমির ভয়ার্ত মুখ দেখে ফিদা। এতো সুন্দর কেন মেয়েটা বুঝতে পারে না সাদমান।
হিমি বললো,
-আমি যাবো…
-আচ্ছা যান। আমি আপনার আম্মুর সাথে কথা বলবো…
হিমি ভয়ে আর বাঁধা দিলো না। শিশির আর মৌয়ের বিয়ে শেষে বাড়ি চলে আসে হিমি। সব অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই করা হয়। বিয়ে বৌভাত সব মিলিয়েই দারূন উপভোগ্য হলেও হিমি কিছুই করতে পারে নি। কারণ মাথায় সাদমান নামক আতঙ্ক। ফুপি আরো কদিন থাকতে বলেছিলো সে চলে আসে। কারণ এখানে থাকলে সাদমানের উপদ্রব বাড়বে। উল্টা পাল্টা কিছু করে বসলে সবাই ছিঃ ছিঃ করবে। হিমি বারান্দায় বসে ছিলো এমন সময় তার মা আসে।
-আম্মু তুমি আসো…. কিছু বলবে?
-হিমি মা বলছিলাম যে সাদমান কে তোর মনে আছে?
হিমি আতঁকে উঠে,
-সা্ সাদ্ সাদমান কে?
-আরে ওই যে তোকে দেখতে এসেছিলো। ঐ ছেলেটা….
-ও..
-সাদমানের নাকি তোকে খুব পছন্দ ও তোকে ভালোবেসে ফেলেছে। তোকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। আমার কাছে কান্নাকাটি করে গেছে।
-মানে?
-তুই যখন ভার্সিটি তে ছিলো তখন এসেছিলো…
-কিহহ…
-দেখ মা ছেলেটা আমার কাছে এসে সব সত্যি স্বিকার করে গেছে। সাদমানের বাবা মা নেই। সাদমানের ভাবী তার ভাই কে মেরে ফেলেছে টাকা আর সম্পত্তির লোভে। তার চরিত্র ভালো ছিলো না। সাদমানের ও মনে হতো সব মেয়ে সমান। তাই কখনো কোনো মেয়ে কে ভালোবাসে নি। তোকেই ওর প্রথম ভালো লেগেছে তাও এক দেখায়। ছেলেটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে সত্যি ই সাদমান খুব ভালো একটা ছেলে আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি। তুই ওকে বিয়ে করলে অসুখী হবি না মা…
-বাহ এখন তোমাদের পছন্দ বড় হয়ে গেলি আমি কিছু না?
হিমির মা বুঝলো হিমি নারাজ। অনেক বলে কয়ে কোনো লাভ হলো না। তাই তিনি এক প্রকার বাধ্য হয়ে সাদমান কে কল করে বলে দেন যে হিমি এই বিয়ে তে রাজি না। সাদমান হতাশ হয়ে ভারী। সে হিমির মাকে জানালো সে আসছে।
হিমি দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কেউ দরজায় বারবার নক করছে দেখে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিলো সে। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টি কে দেখে হিমি আর ভয় নয় রেগেই যায়।
-কি পেয়েছেন টা কি? নিজের যা ইচ্ছে তাই করবেন? জীবন টা আমার আপনার নয়। তাই বলে আপনি যা নয় তা করতে পারেন না। আর কয়বার বলবো আপনাকে আমার পছন্দ না।
হিমি রেগে একাধারে কথা গুলো বলে দেয়। সাদমানের হাতে একটা নতুন চকচকে ব্লেড। সাদমান বললো,
—সেদিন আমি আপনাকে কথা টা বলে ভুল করেছি। আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমাকে করতেই হবে!
বলেই সাদমান হাতে ব্কেড দিয়ে একটা টান দেয়। হাত কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। হিমি হতভম্ব হয়ে গেলো। সাদমান আবার আঘাত করতে যাবে হিমি ব্রেড টা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। দৌড়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসে। হিমি নিজেই কান্না করে দেয়। সাদমান চুপ করে আছে। হিমি ডেটল পানি নিয়ে সাদমানের হাতের রক্ত বন্ধ করে। সাদমান ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল।
-খুব বড় কাজ করে ফেলেছেন তাই না?ভুলের শাস্তি এভাবে দিতে হয় কে বলেছে আপনাকে?
সাদমান চুপ। সাদমানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় হিমি।
হিমি বুঝলো সাদমান সত্যি ই তাকে ভালোবাসে। #এক_দেখায় এই ভালোবাসা। শুধু ভালোবাসা নয় একে বলে পাগলের মতো ভালোবাসা। নাহলে কেউ এমন পাগলামি করে?
-এক দেখায় কাউকে ভালোবাসা সম্ভব?
-ভালোবাসার মতো বাসলে এক দেখায় কেন এক পলকেই ভালোবাসা সম্ভব।
সাদমান হিমি কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আমি আপনাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি তা জানি না তবে সত্যি ই. ভালোবাসি আপনাকে হিমি!!
সাদমানের কথায় মিথ্যা নেই। সাদমানের হার্টবিটের শব্দ কান পেতে শুনছে হিমি। সেই শব্দ জানান দিচ্ছে,,,,
ভালোবাসি
ভালোবাসি
খুব ভালোবাসি
সমাপ্ত