একটু_একটু_ভালোবাসি পর্বঃ০৬,০৭

একটু_একটু_ভালোবাসি
পর্বঃ০৬,০৭
লেখিকাঃ শাদিয়া_চৌধুরী_নোন
পর্বঃ০৬

—— এই ছেলে! তোমার সাহস তো কম না! তুমি ওকে জড়িয়ে ধরলে কেনো?

সাবিরের চোখমুখ কঠোর দেখালো খুব। ঠোঁট বা দিকে চেপে হাসলো সে।
—- সাহসের কি দেখেছেন আপু?

বলেই সে সিরাতকে কাছে টেনে আরও একবার জড়িয়ে ধরলো। সিরাতের মাথা আবার ভনভন করতে শুরু করলো। এই মুহূর্তে ওর যে কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া করা উচিত, তা যেন ভুলেই গেলো। ইফতি দু’হাতে দু’টো পেয়ারা নিয়ে হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তানিশা আন্টির চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে বেশ অবাক হয়েছে।
সিরাতকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই সাবির বললো,
—- আপু, আর কিছু করতে হবে?

ভাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিরাতের এবার টনক নড়লো। সাবিরের হাত কাঁধ থেকে সরাতে চাইলো সে। তোতলাতে তোতলাতে বললো,
—- তানিশা আন্টি! এই লোকটাই সেই পাগল। এই লোকটা খুব বাজে।

সাবিরের গলায় অভিমানের সুর,
—– জান! তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে? তোমাকে না আমি ভালোবাসি? এভাবে বলতে হয়না। আর এই যে আপনি ( তানিশাকে উদ্দেশ্য করে) আমার সাহস কতটুকু সেটা আপনি ভাবতেও পারবেন না। শুধুমাত্র সিরাতের জন্য আমি সহ্য করছি। এখনো চেনেন নি আমাকে….

সাবির কথাগুলো বেশ গম্ভীর শোনালো। তানিশা সাবিরকে আগাগোড়া স্ক্যান করলো একবার। বেশ বলিষ্ঠ শরীর। বামহাতের কালো রোলেক্স ঘড়ি আর পায়ের চকচকে শো দেখে আন্দাজ করলো, ছেলেটা বেশ অভিজাত পরিবারের। কথা বলার ধরণও দারুণ। মনে মনে হাসলো তানিশা। বিড়বিড় করলো সে।
—- তেজ আছে বটে!

পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে গলা খাকারি দিয়ে বললো,
—– তুমি আমার সামনে আমার ভাতিজীকে জড়িয়ে ধরে, তোমার সাহস দেখাচ্ছো? তুমি তো বেশ খারা….

সাবির বলতে দিলো না,
—- ওহ্! আপনি তাহলে সিরাতের খালা? সরি শাশুড়ী মা। আসলে বুঝতে পারিনি। মাফ করবেন তখন আপু ডাকলাম। এবার থেকে খালা শাশুড়ী বলেই ডাকবো।

তানিশা বেকুব বনে সিরাতের দিকে তাকালো। সিরাতকে দেখে মনে হবে, সে যেকোনো মুহূর্তে কেঁদে দিতে পারে। ইফতি যদি বাড়িতে গিয়ে মা’কে বলে দেয় তাহলে তো সব শেষ! এক ধাক্কায় সাবিরকে দূরে সরিয়ে দিলো সে। বোকা বোকা কণ্ঠে বলতে লাগলো,
—- আপনি এখানেও চলে এসেছেন? আপনাকে না বলেছিলাম আমার সামনে আসবেন না? আপনি এক্ষুনি চলে যান প্লিজ! বাড়ির কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আল্লাহর দোহায় আপনাকে। আপনি আমার সাথে যা করছেন, আমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে এসব একদমই সহ্য করতে পারতো না।

—- আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে, মেয়েরা এমনিতেই গলায় ঝুলতে চায়। আর তুমি আমাকে দেখলে শুধু চলে যান! চলে যান! পালাই!পালাই করো।

সিরাত এবার হাতজোড় করে বললো,
—- আপনি চলে যান দয়া করে…..

সাবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ। তবুও হাসি নিয়ে বললো,
—- আমি এমনিতেও চলে যেতাম রাত! তোমাকে একবার দেখতেই এতদূর আসা। ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।

সাবির পেয়ারা বাগানের সামনের ছোট গেইটটা পেরিয়ে হেঁটে চলে গেলো। পথের বাঁকে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। সিরাত, তানিশা সবার চোখ সাবিরের দিকে স্থির। চারদিকে আঁধার নেমে আসছে। কোনো এক অজানা পাখি ভুতুড়ে কণ্ঠে ডাকছে। তানিশার গলায় হতাশার সুর,
—- এভাবে না বললেও পারতি সিরাত! ছেলেটাকে আমার খারাপ মনে হয়নি। যা একটু পাগলাটে স্বভাব, তাও তোর জন্য।

সিরাত আরও হতাশভাবে উত্তর দিলো,
—- তুমি আমাকে কি করতে বলো আন্টি? কেউ যদি দেখে ফেলতো? তোমার বোনকে তো চেনোই, দুদিন পরপর সম্বন্ধ আনছে। তারউপর এই লোকটা! এসব কি কখনো সম্ভব? তুমিই বলো… আমি এসবে জড়াতে চাইনা। আমার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। ঠিকটাক কথাটাই বলতে পারিনা। সবচেয়ে বড় কথা, আমি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছি আন্টি। আমার এসব ভালো লাগছে না। কত বয়স আমার? মা কেনো আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে? আমার স্থানে যদি কোনো ছেলে থাকতো তখনি কি তাকে বিয়ে নিয়ে এতো কথা শুনতে হতো? আমাকেই কেন সবসময় বোকা হতে হবে? সবসময় মা-বাবার ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে? আমি কেনো কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না? আল্লাহ কেনো আমাকে এতো ভীতু বানিয়েছে?

সিরাতের অসহায় কণ্ঠে গুমরে কেঁদে দিলো। নিজের প্রতি ব্যর্থতায় সে নিরাশ। তানিশা তাকে সামলালো,
—- ছিহ্! এসব বলতে হয়না। পাপ হয়। প্রত্যেক মানুষই সেরা। নিজস্ব স্বকীয়তায়, প্রত্যেক মানুষ সেরা। আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। তোর জীবনও একদিন ভীষণ সুন্দর হবে সিরাত। একটু ধৈর্য্য ধর। চল বাড়ি ফিরে যাই।

তানিশা ইফতির দিকে তাকালো। বেচারা বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তানিশাকে সে ভীষণ ভয় পায়। কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ভয় পায়। তানিশাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে দৌড়ে বোনের আড়ালে চলে গেলো সে। তানিশা কঠোর গলায় বললো,
—– কিছু দেখেছিস তুই?

— ঐ ছেলেটা আপুকে জড়িয়ে ধরেছিলো কেন? আমি আম্মুকে বলে দেবো।

তানিশা এবার ভয় দেখিয়ে বললো,
—– কি বললি তুই? বলে দিবি? ঠিকআছে তোকে আমি রাত তিনটাই তেঁতুল গাছের তলায় রেখে আসবো। একটা রাক্ষসী বুড়ি তোকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে। রেখে আসবো? আবার বল কিছু দেখেছিস?

ইফতি এবার জোরে জোরে ডানে-বামে মাথা নাড়লো। যার অর্থ “সে কিছুই দেখেনি”।

খানিকটা আঁধারের ভীড়ে সিরাতরাও ধীরেধীরে বাড়িতে ফিরে গেলো। বাড়িতে সবকিছুই স্বাভাবিক। কেউই তাদের খুঁজেনি। শুধু তানিশাকে ওর ভাবী খুঁজছিলো, কিছু একটা বলার ব্যাপারে।

কেটে গেলো আরো কয়েকটা দিন। সিরাতদের এবার শহরে ফেরার পালা এলো। বাবার অফিস, ভাইয়ের স্কুল, সিরাতের কলেজ সবকিছু মিলিয়ে আর থাকা যাবে না। সিরাত খুশি মনে ব্যাপ প্যাক করছে। কারণ তানিশাও যাবে তাদের সাথে। সিরাতের মা নিজেই বলেছে, কয়েকদিন থেকে আসতে। সিরাত বাড়িতে মনমরা হয়ে থাকে। দুজন কয়েকদিন একসাথে থাকলো, ঘুরলে-ফিরলে মন্দ হবে না। তানিশা যাওয়ার ইচ্ছে হলো। কারণ ঐ ছেলেকে নিয়ে তার কৌতুহল কাটছেই না। কিছু একটা ব্যাপার তো আছেই ওই ছেলের মধ্যে।

চলবে

#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৭
লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন

সেদিন তানিশাও সিরাতদের সাথে শহরে চলে আসে। শুরু হয়ে গেলো আবার আগের ব্যস্তময় জীবন। তার ফাঁকেফাঁকে তানিশার আগমন নিয়ে হালকা ঘুরাঘুরি। আবার তানিশার আর সিরাতের মাঝে ঐ ছেলে নিয়ে বিশদ গোপন আলোচনাও চলে। সিরাত শুধু শোনে আর তানিশা কৌতুহল নিয়ে একটার পর একটা কথা বলেই যায়, “আচ্ছা ঐ ছেলে কে? কেনো এমন করে? ঐ ছেলে কি সত্যিই পাগল? দেখে তো মনে হয়না! ছেলেটা আগে কোথায় দেখেছিলো তোকে? বাপরে বাপ, একনজর দেখতে একেবারে গ্রামের চলে গিয়েছিলো কেমন ভালোবাসে তোকে বুঝেছিস কিছু? আর আমাকে দেখ, জামাই পাইছি একটা সারাদিন কোনো খুঁজ খবর নাই, আমি কল করলেই তার কথা বেরুবে। ঐ ছেলেটা তোর কত কেয়ার করে তাইনা? ”
তখন সিরাত শুধু মুখ গোমড়া করে বলে, ” আন্টি আমি এতকিছু জানি না। উনাকে দেখলেই আমার খুব ভয় করে। ইচ্ছে হয় দৌড়ে কোথাও পালিয়ে যায়। উনি যদি কোনো অপরিচিত লোক হতো, এতো ভয় পেতাম না। ”

সিরাত আরো মুখ গোমড়া করে বলে, ” তানিশা আন্টি! প্লিজ অন্য কিছু বলো। ঐ সাবিরের কথা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে। তুমি শুধু বারবার বারবার উনার কথা বলো কেনো? ”

তানিশা পেট ফাটা হাসি নিয়ে বলে,
—- ” আরে গাধী! তুই আসলেই একটা নিরামিষ। তোর এখন ব্লাশিং করার কথা। আর তুই বলছিস তানিশা আন্টি! এসব বলো না (মুখ বিকৃত করে) । তোর দ্বারা কিচ্ছু হতো না। আমি থাকলে এতোক্ষণে আরো কতকিছু যে হয়ে যেতো….. তুই তো এখনো ‘চলে যান! কথা বলবেন না!’ তেই পড়ে আছিস।’

সিরাত অনেকক্ষণ ভেবেও তানিশার কথার অর্থ কুল করতে পারলো না।
—- “এতোক্ষণে কি হয়ে যেতো আন্টি।”

তানিশা শুধু বিরস ভঙ্গিতে তাকালো,
—-তোর মাথা আর আমার মুন্ডু হতো! তোকে এ টু জেড সব বলা লাগে। যা তো! কিছুই বলতাম না আর। আরে ভাই প্রেম হতো প্রেম! বুঝস নাই?

এরই মাঝে সিরাতের জন্য আরো একটা সম্বন্ধ আসে। এটাও তার বাবা রিজেক্ট করে দেয়। সিরাতের মা’র তখন নাজেহাল অবস্থা। রান্নাঘরের মেঝেতে পা ছড়িয়ে মরা কান্না জুড়ে দেন তিনি। স্বামীকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে থাকেন,
—– ” মইরা যামু গাাাা….. সব মাইয়াগো বিয়া হইয়া যাইতাছেগা আর আমার মাইয়াডা এখনো ঘরে বইসা আংগুল চুষতাছে। বলি নিজেরে কোন রাজার বংশধর ভাবো তুমি? নিজের মাইয়ারে কোনহানের কোন রাজপুত্তুরের লগে বিয়া দাও আমিও দেখুম। ওর জন্য কি রাজপুত্তুর বইয়া থাকছে? দুদিন পরে যখন মাইয়ার চোখ বাইরে বের হইয়া যাইবো তখন বুঝবা। সময় থাকতে বিয়া দাও……..

একদিকে সিরাতের মা কাঁদে অন্যদিকে সিরাত বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদে। কারণ মায়ের কথার উপর কিছু বলার ক্ষমতা তার নেই। মা কেন এমন করে? সে কি কখনো তাদের কথার বাইরে গিয়েছে? তবুও কেন মায়ের মুখে এমন খারাপ কথা শুনতে হয়? কই শিলার মা তো ওর সাথে এমন ব্যবহার করে না। মায়ের কথামতে চলেও, সব কথা শোনেও, এসব কথা শুনতে কোন মেয়ের ভালো লাগবে!

তানিশা সিরাতকে স্বান্তনা দেয়,
—- সিরাত তুই আপার কথায় কিছু মনে করিস না। আপা গোপনে তোর সুনামও করে। রাগের সময় মাথা ঠিক থাকে না। আমরা সবাই জানি, তুই খুব ভালো মেয়ে। তোর মতো মেয়ে এই যুগে দশবার খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। তুই সুন্দরী বলে আপার চিন্তা হয়। সবসময় চোখে চোখে রাখে। আজকাল মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেশি খারাপ। ভুলিয়ে ভালিয়ে তোকে কোথায় নিয়ে যাবে টেরও পাবি না। জানিস তো যুগ কত খারাপ! আর কাঁদিস না রে….

সিরাত তবুও কাঁদে। তার দুঃখের যেন শেষ নেই। প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে সে কাঁদে। কোথায় যেন শুনেছিলাম, রুপবতী মেয়েরা ভীষণ বোকা হয়!

আরো কয়েকদিন পরের কথা,
কলেজের বাস মিস হয়ে যাওয়ায় সিরাত আর অপেক্ষা করলো না। একটা পাবলিক বাসে উঠে একেবারে জানালার সিটের সাথে মিশে গেলো। খুব কমই এই ধরনের বাসে যাতায়াত করার সুযোগ হয়েছে। এই প্রথমবার একা একা উঠলো। শিলাও আজ কলেজে আসেনি। তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার তাড়া হলো, আজ এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত আছে। সবাই নিশ্চয়ই এখন রেডি হয়ে ওর আসার অপেক্ষায় বসে আছে। ওর জন্য হয়তো তানিশা আন্টিও রেডি না হয়ে বসে আছে। সিরাত ভয়ভয় চোখে বাসের আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করলো। এই সময় যাত্রী থাকে না বেশি। সিরাত একবার পাশের খালি সিটটার দিকে অসহায় চোখে তাকালো। খুব করে চাইতে লাগলো, কোনো মেয়ে যাতে এই সিটে বসে। কেনো ছেলের পাশে যাতে ওকে বসতে না হয়।

সিরাত দোয়া কবুল হলো না। অল্পক্ষণের মধ্যেই এক লোক বসলো সিরাতের পাশের সিটে। সিরাতের দৃষ্টি তখন জানলার বাইরে। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ভীতু চাহনিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো। লোকটা ভাবলেশহীনভাবে রুমাল নিয়ে মুখ মুছছিলো। সিরাত হাত দিয়ে মুখ ঢেকে এক ঝটকায় আবার বাইরে চোখ রাখলো। মাথার ওড়নাটা আরো সামনে এনে, ওড়নার এক অংশ কামড়ে ধরলো। লোকটার গা থেকে এক তীব্র স্মেলে সিরাতের গা বেয়ে ঝরঝর করে ঘাম ঝরতে লাগলো। আল্লাহ প্লিজ! সাবির যাতে আমাকে না দেখে!

সিরাতকে এমন অবস্থায় দেখে সাবির ঠোঁট টিপে হাসলো। তারপর এক ঝটকায় সিরাতের তার দিকে ঘরিয়ে মুখটা ওড়নার আড়াল থেকে দৃশ্যমান করলো। সিরাতের চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে থ মেরে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে অবিশ্বাস। চোখের কোণা দিয়ে বাসের আশেবাসে তাকালো। একটা মহিলা তার দিকে তাকিয়ে আছে। সিরাত আশেপাশে এবার লজ্জারা এসে ঘিরে ধরলো। মুখে রক্তিম আভা নিয়ে ভাবতে লাগলো, এতো কিছু করেও কিভাবে বুঝলো? সাবির হয়তো তার অবস্থা বুঝতে পারলো। ফিচেল গলায় বললো,
—- তোমার কি মনে হয় রাত? আমাদের কোইন্সিডেন্সলি দেখা হয়েছে? মোটেও না। তোমার অবস্থা দেখে আমার খুব মায়া হলো তাই তোমার পাশে এসে বসলাম। তুমি এতো কিপটে কেনো বলোতো?

সিরাত অবাক হয়ে বললো,
— মানে?

—- এইযে, টাকা খরচ হবে বলে তুমি এই সিটটাও বুক্ড করতে পারোনি। কত আর খরচ হতো? দশ টাকা ; বিশ টাকা এনিথিং! কত সাহস দেখেছো তোমার? একা একা বাচ্চা একটা মেয়ে হুট করে পাবলিক বাসে উঠলে…

সিরাত এবার সত্যি সত্যিই লজ্জা পেলো। সিট আর বাসের দেওয়ালের সাথে একেবারে সিঁটিয়ে গেলো সে।
— আপনার সাহায্যের কোনো প্রয়োজন নেই। চলে যান।

—- তুমি কি ভেবেছো? আমি কোথাও যাচ্ছি? আমি শুধু তোমাকে গাইড দিতেই এখানে এলাম। আমার গাড়িটা ড্রাইবার ড্রাইভ করছে। তোমার পাশ বরাবর। দেখো…

সিরাত সন্দিহান দৃষ্টিতে জানলার বাইরে তাকালো। একটা লাল রঙের গাড়ি তাদের সাথেসাথে চলছে।

— চলোনা একটা হাগ করি?

সিরাত একটা ঢোক গিলে আবার আশেপাশে তাকালো। মহিলাটা এখনো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাবির এগিয়ে আসছে তার দিকে। সিরাত ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলে জানালার দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে বসলো। পাশ থেকে সাবিরের হু হা হাসির আওয়াজ আসছে। সিরাতের গন্তব্যে গাড়ি থামতেই, সাবিরকে ‘ওদিকে একটু যাবো’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলো। বাস থেকে নেমে একেবারে জোর কদমে গলি বাঁক নেওয়ার জায়গাতে এসে থামলো। সামান্য মাথা ঘুরিয়ে দেখলো কেউ আসছে কি না? সাবির স্টপের পাশে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। সিরাত তাকাতেই ‘বাই’ জানালো হাত নেড়ে। সিরাত বুকে থুঃথুঃ ছিটিয়ে আরো জোর পায়ে হাঁটা ধরলো। জোর বাঁচান বেঁচে গেছে আজ!

চলবে
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here