একটু_একটু_ভালোবাসি
পর্বঃ০৪,০৫
লেখিকাঃ শাদিয়া চৌধুরী নোন
পর্বঃ০৪
—- আচ্ছা, আপনি কি পাগল?
— ঠিক ধরেছো। আমি বেশ কয়েকমাস পাগলাগারদেই ছিলাম।
সিরাতের মাথা এবার ভনভন করতে শুরু করলো। ইচ্ছে হলো, লোকটাকে সে নিজেই নিজ খরচে পাবনা পাঠিয়ে দেয়। উনার আরো দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন।
—– তারমানে আপনি সত্যিই পাগল?
—– আমি অনেক আগেই রিকভার করেছি রাত। নাও আ’ম টোটালি ফাইন।
সিরাত মনে মনে বললো, না! আপনি এখনো পাগল। যেমন তেমন পাগল না, একটা বদ্ধ পাগল!
সিরাত এবার একটু নিজেকে গুটিয়ে নিলো। এই লোকটা তো আসলেই পাগল! গলা শক্ত করে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু সমস্যা হলো, গলা শক্ত করতে গিয়ে, তার কণ্ঠ আরো নরম শোনায়।
— আপনি আমার সাথে এমন করেন কেনো?
লোকটা এবার নিজের মাথার ঝাগড়া চুলগুলোকে হাত দিয়ে এলোমেলো করে, মাথা নিচু করে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করলো। ঠোঁট বা দিকে প্রসারিত করে বললো,
— তোমাকে লজ্জা পেতে দেখলে, ভড়কাতে দেখলে আমার ভীষণ ভালো লাগে।
—– আপনি আমার পিছু কেনো নিয়েছেন? আপনি আর আমার সাথে কোনো অশোভন আচরণ করবেন না। বুঝেছেন?
সিরাত মুখে রক্তিম আভা নিয়ে দেখলো, লোকটা তার কথা শোনে আবারও হাসছে। আজব তো! সে কি হাসার মতো কোনো কথা বলেছে? তার কণ্ঠস্বর কি কঠিন শোনায়নি? সিরাত গলা খাকারি দিয়ে ঢোক গিললো একটা। তার লজ্জা লাগছে। লোকটা এমন কেন?
—– মিস আনজুমান সিরাত, তুমি কি জানো? আমি গত একবছর ধরে তোমাকে পাগলের মতো খুঁজছি। আমি একজন এনএসআই অফিসার। সময় সুযোগের অভাবে তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন। কিন্তু এটলাস্ট তোমার খুঁজ পাই গত দু’মাস আগে। সেই থেকে শুরু….
লোকটা বিরতহীনভাবে আরও বলতে লাগলো,
—– হুটহাট লজ্জা পাওয়া মেয়েটাকে আমার ভীষণ ভালো লেগে গেলো একদিন। সে নিজেতেই সীমাবদ্ধ জানি, কিন্তু আমার একদিন ইচ্ছে জাগলো ইশ! যদি তার পৃথিবীতে আমিও থাকতে পারতাম! আমি ধীরে ধীরে অনুভব করতে লাগলাম, তুমি আমার কাছে অনেক স্পেশাল একজন৷ খুবই স্পেশাল….. আমার জীবনে তোমার উপস্থিতি খুবই জরুরি। আমি তোমাকেই চাই। তুমি আমার আশেপাশে থাকলে, আমার কি যে যায় রাত! আমি জাস্ট বুঝাতে পারবো না।
সিরাত একটু ছোটখাটো চিৎকার দিলো,
—- নাউজুবিল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ! ছিহ্ ছিহ্ আপনার লজ্জা করছে না, আপনি একটা মেয়েকে এসব বলছেন? এসব কথা শুনে আমার নিজেরই তো কেমন কেমন লাগছে। আপনি আমার সামনে আর আসবেন না। কখনোই আসবেন না।
সিরাত ডোর খুলে বেরিয়ে এলো। কি অসভ্য লোকরে রে বাবা! অসভ্যের মতোন তার সাথে বেরিয়ে এসেছে। লোকটা আবার পেছন পেছন আসছে কি-না দেখার জন্য, সিরাত পেছন ফিরে তাকালো। লোকটা মুখে হাসি নিয়েই তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি ঘাড় ফিরিয়ে সামনে তাকাতেই পেছন থেকে একটা আওয়াজ আসলো,
—- তুমি হাজারবার বললেও তোমাকে ছাড়ছি না রাত! তুমি যেখানে, আমিও সেখানে। আমার নামটা মনে রেখো, সাবির! সাবির মোস্তফা….
সিরাত বিড়বিড় করলো,
—- সাবির না কাবির! হুহ্! অসভ্য পাগল অফিসার!
সিরাত বাড়ি আসতেই মাকে ব্যাগ গোছাতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
—- মা কোথায় যাচ্ছো? আমরা কি আজ কোথাও যাচ্ছি?
সিরাতের কথায় কথায় তার মা বেশ রেগে গেলো।
—– কোথায় যাচ্ছি মানে? তোর ছোট খালা তানিশার আকদ্ তুই জানিস না? আমার হয়েছে যত জ্বালা! কি পড়ালেখা করিস রে তুই? সামান্য এই কথাটাও মনে রাখতে পারলি না?
সিরাত ভাবুক কণ্ঠে বললো,
— আমাদের তো কাল যাওয়ার কথা!
—- হ্যাঁ! কিন্তু তোকে তো সকালেই বললাম আজই যাবো আমরা। কাল থেকে হরতাল চলবে। গাড়ি, ট্রেইন সব বন্ধ। তখন গিয়ে লাভ আছে?
সিরাত বিরস মুখে নিজের রুমে ব্যাগ গোছাতে চলে গেলো। হাজার বার ভেবেও কূল করতে পারলো না যে, তার মা আসলেই সকালে যাওয়ার কথা বলেছিলো কি-না। আবার মনে মনে খুশিও হলো। গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে। ঐ পাগল লোকের কথা কয়েকদিনের জন্য অন্তত ভুলা যাবে। তানিশা আন্টির সাথেও বেশ মজা করা যাবে। খুশিতে সিরাতের বাকবাকুম অবস্থা……
————-
প্রথমে ট্রেন, বাস তারপর ফেরিতে করে নদী পার করে অবশেষে সিরাত আর তার পরিবার পৌঁছুল তাদের মামাবাড়ি। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সবার নাজেহাল অবস্থা। গভীর রাত। সবাই প্রায় ঘুমিয়ে গেছে। শুধুমাত্র বড় মামি আর মেঝমামি সিরাতরা আসবে বলে জেগে ছিলো। ফ্রেশ হয়ে কোনোরকম কম কথায়,খেয়েদেয়ে ঘুমোতে চলে গেলো। এর মাঝে হুট কটে সিরাতের বাটন ফোনে কল আসাই তার মা আর বাবা দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সিরাতের বাবা গম্ভীর গলায় বললেন,
—- এতো রাতে তোমাকে কে কল করেছে?
সিরাত ভয়ে এতুটুকু হয়ে গেলো। এই আননোন নাম্বারের চক্করে তার বাবা পর্যন্ত তাকে সন্দেহ করছে। আমতা আমতা করে বললো,
— শি-শিলা বাবা! আমি পৌছেছি কি-না তাই জিজ্ঞেস করতে কল দিয়েছে হয়তো।
— ও কীভাবে জানলো যে, তুমি আজ এখানে আসবে?
সিরাতের গলা বেয়ে টুপটাপ ঘাম ধরছে। মিথ্যা কথা বলার সময় তার গলা কাঁপে।
—- আমি শিলাকে আজ কলেজে বলেছিলাম বাবা। ও আমার খুব ভালো বান্ধবী। অনেক খেয়াল রাখে।
চলবে……
#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন
—- ও কীভাবে জানলো যে, তুমি আজ এখানে আসবে?
সিরাতের গলা বেয়ে টুপটাপ ঘাম ধরছে। মিথ্যা কথা বলার সময় তার গলা কাঁপে।
—- আমি শিলাকে আজ কলেজে বলেছিলাম বাবা। ও আমার খুব ভালো বান্ধবী। অনেক খেয়াল রাখে।
সিরাতের মা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হবে, কোনো কিছুর সমীকরণ মেলাতে চিন্তায় তিনি মগ্ন। সিরাতের বাবা এবার বললেন,
—- তোমার মোবাইল দাও। দেখি…
অমনি সিরাতের মুখ শুকিয়ে গেলো। ভয়ে তার হাঁটু কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। এখন যদি বাবা ঐ নাম্বারটা শিলার নয়, তা বুঝতে পারে কি হবে? মোবাইলে তো স্পষ্ট নাম্বারটা আনসেইভ করা। মিথ্যে বলার কারণ জানতে চাইলেই-বা কি বলবে? এর আগেও অনেকবার বাবা ফোন চেক করেছে কিন্তু তখন এতো ভয় লাগেনি। এই আননোন নাম্বারের চক্করে বাবা-মায়ের কাছে কি ছোট হবে সে?
সিরাতকে ভীতু চোখে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তার বাবা আবারও ধমকালেন,
—- তোমাকে কি বলছি শুনতে পাচ্ছো না? মোবাইল দাও। আমি দেখি কার কল।
—-তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো বাবা?
বাবার চোখ এবার আরও কঠোর হলো,
—- তোমাকে বিশ্বাসের ফল যাচাই করছি।
সিরাত এবার কি বলবে খুঁজে পেলো না। মোবাইলটাকে মুঠ করে শক্ত হাতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে প্রার্থনা করলো, আল্লাহ! এইবারের মতো বাঁচিয়ে দাও।
এমন সময় সিরাতের ছোট খালা তানিশা রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সিরাতকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমো ঘুমো কণ্ঠে বললো,
—- তোরা চলে এসেছিস? খেয়েছিস কিছু? চল আমার সাথে ঘুমাবি তুই।
সিরাতের বড় মামিও তানিশার সাথে তাল মেলালো,
—- হ্যাঁ, নিয়ে যাও তো। দেখ দু’জন মিলে মেয়েটার সাথে কি শুরু করে দিয়েছে। কে না কে কল করেছে! ও তো বললো, ওর বান্ধবীর কল। এতো পুলিশি জেরার কি আছে? তানিশা যাও, সিরাতকে নিয়ে ঘরে যাও।
বড় মামির কথায় সিরাতের মা-বাবা আর কোনো কথা বলার সুযোগ পেলো না। তানিশা সিরাতের ব্যাগ উঠিয়ে সিরাতকে নিয়ে, নিজের রুমে চলে এলো। সিরাত মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বাঁচা গেলো!
তানিশা হলো সিরাতের ছোট খালা। সিরাত তাকে আন্টি বলেই ডাকে। তাদের বয়সের পার্থক্য মাত্র চারবছর। সিরাতের মা ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড়। তার বিয়ের দুবছর আগে তানিশার জন্ম হয়। সিরাতের সাথে তার গলায় গলায় ভাব। সে সিরাতকে কত কিছুই বুঝাক না কেন, সিরাত সিরাতই৷ একেবারে ঘুর কুণো, খুবই স্বল্পভাষী। ক্লাসে কোনো পড়া না বুঝলেও তার ক্ষমতা নেই টিচারকে আরেকবার বলতে যে, “স্যার আমি বিষয়টা বুঝিনি”। কিন্তু তানিশা একেবারেই উল্টো, সিরাতের বিপরীতমুখী। তবুও তাদের গলায় গলায় ভাব।
রুমে আসতেই সিরাত আবার কেঁদে দিলো। শুকনো মুখে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—- তানিশা আন্টি, আমাকে না একটা লোক কি করেছে জানো? আমি নিশ্চিত ঐ পাগল লোকটাই আমাকে কল করে।
সিরাত একে একে সব ঘটনা তানিশাকে খুলে বললো। তানিশার বিস্ময়ে থ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এটা আবার কেমন ছেলে? আসলেই পাগল নাকি? সে বোঝানোর ভঙ্গিতে সিরাতকে বললো,
—- তুই চিন্তা করিস না। তোর মোবাইলটা আপাতত কয়েকদিনের জন্য আমার কাছে রাখ। টেনশনমুক্ত থাক। আমার আকদ্ অনুষ্ঠান ইনজয় কর।
তানিশার এক কথায় সিরাত নিজের মোবাইল দিয়ে দিলো। এই মোবাইলটাকে আর সহ্য হচ্ছে না। তানিশা মোবাইলটাকে ড্রয়ারে রাখতে যাবে, তার আগেই কল আসা শুরু হলো। কয়েকবার কল কেটে দিলেও, আবার শুরু। তানিশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কল রিসিভ করে এক লহমায় বলতে লাগলো,
—- থাবড় চিনস তুই? এতো রাইতে মাইয়্যা মাইষের মোবাইলে কল করস তুই ব্যাডা লুইচ্চা, বেহায়া, বেশরম! সামনে থাকলে জুতো দিয়া মালা গলায় দিতাম তোর। তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী বাদাইম্মা।
ওপাশের লোকটা কি বললো শোনা গেলো না। খানিক্ষণ পর তানিশা চেতে গিয়ে আরো বড় বড় করে বললো,
—- কি কইলি তুই? আমারে ভয় দেখাস? সিরাত তোর কি লাগে? সিরাতরে দিয়া কি করবি? আমার ভাষা খারাপ? তোর সাহস থাকলে জো***গঞ্জের সওদাগর বাড়িতে আয়…..
সিরাত এতক্ষণ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তানিশার বকবকানি শুনছিলো।শেষের দিকে তার মামাবাড়ির ঠিকানা বলে দেওয়ায় কপাল চাপড়ালো। মোবাইলটা তানিশার কাছ থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে কলটা কেটে দিলো। তারপর ভয় ভয় কণ্ঠে বললো,
—- আন্টি এটা কি করলে তুমি? ঠিকানা দিয়ে দিলে কেনো? এখন যদি এখানেও চলে আসে কি করবে তখন?
—- আসলে আসবে! আসার জন্যই তো এতোকিছু বললাম। আমি দেখতে চাই লোকটা আসলে কে!
তানিশা স্বাভাবিক কণ্ঠে উত্তর দিলো।
— আন্টি তুমি জেনেবুঝে এটা করতে পারলে? এটা যদি ঐ পাগল লোকটা হয়, তাহলে আমার কপালে শনি আছে।
— ধূর! এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? তুই কোনো কারণ ছাড়াই ভয় পাস সবসময়। এখানে আসা এতো সহজ নাকি? চল ঘুমো। যা হবে দেখা যাবে। আমি আছি না?
—হুম৷
সিরাত মুখ কাচুমাচু করে একপাশে শুয়ে পড়লো। মনে সংশয়ের দানা বাঁধছে। কি হবে সামনে? ঐ লোকটা যাতে আর ওর সামনে না আসে আল্লাহ!
—————————
মামাবাড়িতে সিরাতের সময় বেশ ভালো কাটছে। সকল মামাতো ভাইবোনদের সাথে মজা-আড্ডায় বেশ ভালোভাবে মেতে আছে সে। প্রতি বিকেলে গ্রামে ঘুরতে বের হওয়া, সকলের একসাথে বসে নাস্তা করা, রাতে না ঘুমিয়ে সবাই একসাথে গল্প করে রাত পার করে দেওয়া, ডিভিডি প্লেয়ারে গান বাজিয়ে নাচা ;খুব সুন্দর সময়গুলো যেনো চোখের পলকেই চলে গেলো। এরমধ্যে একদিন শুভক্ষণে তানিশার আকদ্ও হয়ে গেলো। তানিশাকে এখনি উঠিয়ে নেওয়া হয়নি। তার বর এবরডে একটা কোম্পানিতে কর্মরত। একমাসের ছুটিতে এসেছিলো মাত্র। পরে ছয়মাসের ছুটি নিয়ে আসলে বড় করে অনুষ্ঠান করে, তানিশাকে শ্বশুরবাড়িতে তুলে দেওয়া হবে।
সিরাতের মা ভাই-বোনদের সবার বড় হওয়ায় তার কাজের অন্ত নেই যেন। এই কারণে আকদ্ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরও তাদের বেশ কয়েকদিন এখানেই থাকতে হবে। এই নিয়ে সিরাত আর তার ভাই ইফতির খুশির সীমা নেই। ইফতি এখানে এসেই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে। শহরে থাকলে সারাদিন চুপচাপ বসে থাকে, খেলার মতো কেউ নেই।
বিকেলবেলা,
সবার নাস্তা পর্ব চলছে। বাড়িতে এখনো বেশ অনেকজন মেহমান রয়ে গেছে। সিরাতের বাবা গেছে তাদের দাদুবাড়িতে। মা সারাদিন ব্যস্ত থাকে। শুধু খাওয়ায় সময় যা একটু সিরাত আর ইফতিকে নজরে রাখেন। নাস্তা শেষে সিরাত আর তানিশা বের হলো বাড়ির সামনে উঠানে হাঁটতে। তানিশাকে দেখে মনেই হবে না, সে একজন কনে। বাকিদের মতোই হেসেখেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছেদাচ্ছে। মুখে লজ্জার কোনো আভা নেই।
ওরা কথা বলতে বলতে অনেকদূর হেঁটে চলে এলো। ইফতি সিরাতের এক আঙুল ধরে লাফাতে লাফাতে হাঁটছে। গোধূলির আলোমাখা আকাশপট বড়ই স্নিগ্ধ দেখালো। পাখিরা ধীরেধীরে নীড়ে ফিরছে। ওরা একটা পেয়ারা বাগানে এসে পা থামালো। বড় বড় ডাঁসা পেয়ারা ধরেছে। ইফতি বায়না ধরেছে, সে পেয়ারা খাবে। তানিশা আশেপাশে তাকালো। বাড়িঘর চোখে পড়ছে না, কোনো মানুষজনও নেই। সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—– তুই দাঁড়া এখানে। আমি ইফতিকে নিয়ে পেয়ারা পাড়তে যাচ্ছি। বাঁশ পাই নাকি দেখি একটা।
সিরাত আশেপাশে তাকিয়ে ভয়াতুর কণ্ঠে বললো,
— আমি একা দাঁড়িয়ে কি করবো?
— আরে কেউ আসছে কি-না পাহারা দিবি গাধী! কেউ আসলেই দৌড়ে আমাদের বলবি। এই ইফতি চল…..
তানিশা আর ইফতি চলে গেলো পেয়ারা বাগানের ভেতরে। আর এদিকে সিরাত অস্থিরপায়ে এদিকওদিক হাঁটছে। আবার উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো, কেউ আসছে কি-না।
বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেলো তানিশা আসছে না। সিরাতের এবার ভয় করছে। ইতি-উতি করে তাকিয়ে তানিশাকে বেশ কয়েকবার ডাকলো। তার আওয়াজ সামনের নারকেল গাছটা পর্যন্ত পৌঁছেছে কিনা সন্দেহ!
এবার ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা। কেউ সিরাতকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরলো। সিরাত চিৎকার দেওয়ায় ক্ষমতাও হারিয়ে ফেললো। কান্নামুখ করে বললো,
—– আমি চোর না। আমি চুরি করিনি। সত্যি আমি কিছু করিনি।
আগুন্তক তাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
—– তুমি তো সবচেয়ে বড় চোর। হৃদয়হরণকারীনি।
সিরাত এক ঝটকায় পেছন ফিরে তাকালো। একটা চিৎকার দিতে চাইলো কিন্তু তার আগেই সাবির অর্থাৎ ওই আগুন্তক তার মুখ চেপে ধরলো। সামনে থেকে ভেসে এলো এক আওয়াজ।
—- এই ছেলে! তোমার সাহস তো কম না! তুমি ওকে জড়িয়ে ধরলে কেনো?
সাবিরের চোখমুখ কঠোর দেখালো খুব। ঠোঁট বা দিকে চেপে হাসলো সে।
—- সাহসের কি দেখেছেন আপু?
বলেই সে সিরাতকে কাছে টেনে আরও একবার জড়িয়ে ধরলো। সিরাতের মাথা আবার ভনভন করতে শুরু করলো।
চলবে….