এই তুমিটা আমার ❤,পর্ব:০৯,১০(অন্তিম পর্ব)

এই তুমিটা আমার ❤,পর্ব:০৯,১০(অন্তিম পর্ব)
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:০৯

শুভ্র পিছনে ঘুরে দেখে কয়েকজন পথচারী শিশু দৌঁড়ে এদিকে আসছে। মিহু তাদের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই তারা দৌড়ে এসে মিহুকে জড়িয়ে ধরে।। মিহু হাসি মুখে তাদের সাথে কথা বলছে।। শুভ্র অবাক চোখে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।।

শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি সে হা করে আমাদের দেখছে। হয়তো কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। তাই সবাইকে নিয়ে শুভ্রর সামনে এসে…
–বাচ্চারা,,,এটাই হলো তোমাদের শুভ্র ভাইয়া।। আর শুভ্র,,,এরা এক একটা হলো আমার ভালোবাসা,,,আমার পিচ্চি ফ্রেন্ড।। পরিচিত হও..মিনু,,বাবলি,,সুমন,,রবিন আর জয়।
–((তাকিয়ে দেখে বাচ্চা গুলো সর্বোচ্চ ৪-৭ বছর বয়সী হবে,,,একটা মুচকি হাসি দিয়ে)) কেমন আছো তোমরা?? (শুভ্র)
–((সবাই একসাথে)) ভালো আছি।।
–আচ্ছা চলো। সবাই মিলে বসে গল্প করি।।(আমি)

সবাই একসাথে বসে গল্প করছি। বাচ্চাদের মধ্যে একটা আলাদা শক্তি থাকে।। তারা খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে,,,তাদের মায়ায় ফেলে দিতে পারে।। শুভ্রর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।। এই বাচ্চা গুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শুভ্রর সাথে মিশে গিয়েছে।। আমিও বসে বসে তাদের বলা কথাগুলো শুনছি….
–ভাইয়া দেখো,,,মিহু আপা আমাদের সবাইরে নতুন জামা কিনে দিছে।। কেমন হইছে?? ((মিনু))
–তাই নাকি?? খুব সুন্দর হয়েছে।। তোমাদের সবাইকে খুব সুন্দর লাগছে।।((শুভ্র))
–আমি একটা কথা বলি?? ((বাবলি))
–হ্যা অবশ্যই।। বলো।।((শুভ্র))
–তুমি আর মিহু আপা কি প্রেম করো?? ((বাবলি))
চার বছর বয়সী বাবলির মুখে কথাটা শুনে আমি আর শুভ থতমত খেয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর শুভ্র মুখ টিপে একটা হাসি দিয়ে….
–বাবলি বুড়ি,,,,তুমি জানো প্রেম মানে কি??((শুভ্র))
–জানি তো।। আমি সিনেমায় দেখছি,,,নায়ক হইলো প্রেমিক আর নাইকা হইলো প্রেমিকা।।(বাবলি)
–((বাবলির কথা শুনে ফিক করে হেসে দিয়ে)) বাবলি বুড়ি তো দেখি অনেক কিছুই জানে।। কিন্তু মিহু তো আমার প্রেমিকা না।। আমার প্রেমিকা হবে তোমার মতো কিউট একজন।। তোমার মিহু আপুর মতো এমন ডাইনি ভুত না।। ((শুভ্র))
–((শুভ্রর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রাগী কণ্ঠে)) আমি ডাইনি ভুত????
–সত্যি আপা,,,চোখ বড় বড় কইরা তাকাইলে তোমারে পুরাই ভুতের মতো লাগে।।((রবিন))
রবিনের কথায় সবাই একসাথে হেসে ওঠে।। শুভ্র তো হাসতে হাসতে শেষ।। রাগে দুঃখে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বসে আছি।। আমি নাকি ডাইনি ভুত!!😒

পিচ্চিগুলোর বিশেষ অনুরোধে শুভ্র তাদের সাথে ফুটবল খেলছে।। দূরে বসে তাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,ঠোঁটে লেগে আছে মুচকি হাসি।।। বাচ্চাদের সাথে খেলতে গিয়ে শুভ্র নিজেও বাচ্চা হয়ে গিয়েছে।।। একটু পর পর তাদের মিষ্টি হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে।। এই প্রথম শুভ্রকে এতোটা হাসি খুশি দেখছি আমি।। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি শুভ্রর কাছে গিয়ে বলি…..

🍁শুভ্র……
আমি জানি তোমার অতীতে অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে।। ভালোবাসা নামক এক বিশ্বাস ঘাতক তোমার মনের কোণে যে গভীর আঁচড় কেটে দিয়ে গিয়েছিল…সময়ের সাথে সাথে হয়তো সেই আঁচড়ের ক্ষত পূরণ হয়ে যাবে কিন্তু তার দাগ থেকেই যাবে।। কিন্তু তাই বলে তোমার জীবন থেমে থাকবে না,,,,কেননা জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না।। যার জন্য তোমার প্রথম ভালোলাগার অনুভূতি,,যাকে পাওয়ার জন্য তুমি দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছিলে।। দেখো সেই তোমার হাত টেনে নিয়ে অন্ধকার ঘেরা পথে একা ফেলে চলে গিয়েছে।। এখন তোমাকে সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানোর জন্য কাউকে প্রয়োজন।। আর আমিই সেই জন হতে চাই,,,,যে তোমার হাত শক্ত করে ধরে তোমায় আলোর পথ দেখাবে।। আমি তোমায় বুঝাতে চাই ভালোবাসার আসল অর্থ।। ভালোবাসার সম্পর্ক হওয়া উচিত একদম পবিত্র,,,যেখানে বিশ্বাস ঘাতকের কোন স্থান থাকে না।। আমি জানি না মানুষের কাছে ভালোবাসা আসল মানে কি।। তবে আমার কাছে,,ভালোবাসার মানে হলো — ভালোবাসার মানুষটাকে সুখে রাখা। তার অপূর্ণগুলো পূরণের চেষ্টা করা।। তার হাত ধরে নির্দ্বিধায় সারাজীবন পারি দেওয়া।।
ভালোবাসা লুকিয়ে নেই বিলাসিতায় বরং লুকিয়ে আছে জীবনের প্রতিটি স্তরে।। সাধ্যের মধ্যে সবটা ভালোবাসা নিয়ে আমি তোমার সামনে হাজির হতে চাই। তোমার চোখে চোখ রেখে মন থেকে বলতে চাই #এই_তুমিটা_আমার শুধুই আমার❤

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মুচকি হাসি দিয়ে একটু দূরে এগিয়ে গেলাম।।।
এদিকে শুভ্র খেলার মাঝে একবার মিহুর দিকে তাকিয়ে দেখে মিহু সেখানে নেই।।। আশেপাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে,,মিহু কোথাও নেই। এবার বেশ চিন্তায় পড়ে যায় সে। দৌড়ে এদিক সেদিক মিহুকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও মিহু নেই। সে আবার দৌড়ে ফিরে এসে দেখে…..
সব বাচ্চাদের সাথে মিহু দাঁড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে মুচকি হেসে যাচ্ছে,,,,সবার হাতে এতোগুলো বেলুন।। তাকে এভাবে চিন্তায় ফেলে দিয়ে মিহুকে এমন স্বাভাবিক থাকতে দেখে রেগে যায় শুভ্র।। মিহুকে ঝাড়ি দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই সবাই একসাথে বলে ওঠে…

Happy birthday to you
Happy birthday to you….Happy birthday dear Shuvro…Happy birthday to you ❤

শুভ্র অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।। আজকে তার জন্মদিন!!! ভুলেই গিয়েছিলো সে।
–চলো চলো,,,কেক কাটবো।।((আমি))
–ইয়েহহহ!!কেক কাটবো।((সব পিচ্চি একসাথে))
–((শুভ্রর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম)) কিহহহ?? সারপ্রাইজটা কেমন ছিলো??
–((অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে)) তুমি কিভাবে…??
–((ভালোবাসার মানুষের সব খবরই রাখতে হয়)) শ্রেয়া বলেছিলো।। এখন কথা না বাড়িয়ে কেক কাটো।
শুভ্র কেক কাটার পর পিচ্চিগুলোর মাঝে ভাগ করে দিলাম।। সবাই খুব খুশি ছিলো আজ। সত্যিই দিনটা ভালো ছিলো।। পিচ্চিগুলো চলে যাওয়ার পর আমি আর শুভ্র পার্কে পাশাপাশি হাঁটছি।।

–মাহি!! সত্যি বলছি,,,আজ আমি অনেক বড় সারপ্রাইজ পেয়েছি। আজকে আমার লাইফের বেস্ট জন্মদিন ছিলো।। বাই দ্য ওয়ে,,,তুমি কিভাবে জানলে আমার অসহায় বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে??
–((শুভ্রর দিকে তাকিয়ে)) বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে কম বেশি সবারই ভালো লাগে।। মাঝেমধ্যে পার্কে এসেই তাদের সাথে আমার পরিচয়। অদ্ভুত হলেও,,,তাদের ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকে না,,,শুধু মাত্র একটু ভালোবাসা আর ভাল ব্যবহার পাওয়ার জন্য তারা বারবার ছুটে আসে।।
বাচ্চাগুলো আগে কখনো কারো জন্মদিন উদযাপন করেনি। তাই ভাবলাম…..।।
–((এক দৃষ্টিতে মিহুর দিকে তাকিয়ে ছিলো তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে)) খুব ভালো করেছো। তাদের সাথে আমার সময়টা অনেক ভালো ছিলো।।
–((ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে)) চলো।। শিউলি ফুপির সাথে একটু দেখা করে আসি।
–হুম,,,চলো।।

শুভ্রর সাথে তাদের বাসায় আসলাম।। শুভ্র অনেক্ষণ ধরেই কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউই দরজা খুলে দিচ্ছে না।।
–বাসায় কি কেউ নেই নাকি?? এমন তো হওয়ার কথা না।।(শুভ্র)
–তোমার কাছে চাবি নেই??
–আমার কাছে….হ্যা!! আছে তো।।(শুভ্র)
শুভ্র দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে পুরো বাসাই অন্ধকার।। শুভ্র অবাক হয়ে কোনমতে লাইট অন করতেই…
ঠাসসস!!!!!

–চলবে🍁

এই_তুমিটা_আমার❤
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:১০((অন্তিম পর্ব))

আচমকা শব্দ হওয়ায় শুভ্র চমকে উঠে সামনে তাকাতেই দেখে শ্রেয়া,,সাদ,,মেঘ,,হিমিকা,,শুভ্রর মা আর মিহুর বাবা দাঁড়িয়ে আছেন।। সবাই মিলে শুভ্রকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।।
শুভ্র অবাক চোখে একবার আমার দিকে তাকালো। বিনিময়ে শুধু একটা মুচকি হাসি দিলাম।। শিউলি ফুপি এসে শুভ্রর কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলেন।।
–শুভ জন্মদিন বাবা।।((ফুপি))
–ধন্যবাদ আম্মু।।((আমার দিকে তাকিয়ে শুভ্র))
–একটু ধন্যবাদ মাহি আপুকেও দিও ভাইয়া।। এসব তো আপুরই প্ল্যান ছিল।।((শ্রেয়া))
–((মুচকি হাসি দিয়ে)) ধন্যবাদ মাহি।।
–((প্রিয় মানুষের জন্য এটা খুব স্বাভাবিক,,,আমি চাই তুমি ঠিক এভাবেই হাসি খুশি থাকো।।))হুম।।

((((নিচের নোটগুলো একটু পড়বেন। প্লিজ))))
সারাটা দিন সবাই মিলে খুব আড্ডা দিলাম।। বেশ হাসি খুশি ভাবে আজকের দিনটা ভালোই কাটলো।। সন্ধ্যার পর সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।।

🍁রাতে…..

কফির মগ হাতে বারান্দায় বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।। জানি না শুভ্রর মনে কোনদিন জায়গা করে নিতে পারবো কিনা,,,কখনো তাকে মনের কথাগুলো বলতে পারবো কিনা।। তবে যতো যাই হোক,,,আমি সবসময় চাইবো শুভ্র যেন ভালো থাকে।।
কথাগুলো ভাবছি হঠাত করে ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে।।।
“””আজকে সারপ্রাইজ গুলো এতটাই স্পেশাল ছিলো যে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে এর শোধ করা যাবে না।। এর জন্য প্রয়োজন স্পেশাল ট্রিট।। হিসাবের খাতায় লিখে রাখো একদিন সুদে আসলে ফিরিয়ে দিবো। আমিও একদিন তোমায় একটা বড় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিবো।। -শুভ্র””””

ম্যাসেজটা পড়ে আনমনে মুচকি হাসি দিলাম।।
–আমার জন্য তো বড় সারপ্রাইজ সেটাই হবে যখন তুমি আমার ভালোবাসা বুঝতে পেরে,,, তোমার মনের কোণে আমার জন্য ছোট্ট একটা জায়গা করে দিবে।।((মনে মনে কথাগুলো বললাম))

🍁ছয় মাস পর…..

দেখতে দেখতে ছয়টা মাস পার হয়ে গেল।। আমার আর শুভ্রর বন্ধুত্বটা এখন আরও গভীর হয়ে গিয়েছে।। কেনো জানি না আমার মনে হয় শুভ্রর মনেও আমার জন্য এক ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করে।।
প্রতিটি দিনই আমরা দেখা করি।। কোনদিন দেখা না হলে শুভ্র দিনে কয়েকবার ফোন দেয়।। ঘন্টার পর ঘন্টা দুজন গল্প করি তবুও তার সাথে কথা বলার আক্ষেপ থেকেই যায়।। শুভ্র এখন আগের থেকে পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে।। এখন রাত হলেও সে বাসায় ফিরে যায়।। ফুপি শুভ্রর এই পরিবর্তনে খুব খুশি।। সেদিন শ্রেয়া বাসায় এসেছিলো।। কথায় কথায় বলে উঠলো,,,,শুভ্র নাকি এখন সেতুর কথা একবারও মনে করে না।। সারাদিন ব্যাস্ত সময়ের পরও পরিবারের সাথে সময় কাটায়।। কথাগুলো শুনে খুব ভালো লেগেছিল।।।

শুভ্র আর আমি নদীর ধারে পাশাপাশি বসে আছি।। শুভ্র মাঝেমাঝে বাদাম ছিঁড়ে আমার হাতে দিচ্ছে।। তার এসব ছোটখাট পাগলামী গুলো আমার মন ছুঁয়ে দেয়।।

–জায়গাটা খুব সুন্দর। তাই না??((শুভ্র))
–হুম,,,খুব সুন্দর।। দেখো কতো মানুষ তার প্রিয় মানুষটার কাধে মাথা রেখে প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ পরিবেশটা উপভোগ করতে এসেছে।।
–((কিছুক্ষণ চুপ থেকে)) মা বাবা ভাই বোন ছাড়া আর কেউ প্রিয় মানুষ হয়না মাহি।। তারা হয় সাময়িক ভালো লাগার সঙ্গী।। দিন শেষ তোমার বিশ্বাসকে ছিঁড়ে দিয়ে তারা আসল রূপ প্রকাশ করে।।((শুভ্র))
–((শুভ্রর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)) সবাই তো আর সেতু আপুর মতো হয় না শুভ্র।।
–((অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)) সেতু…!! তুমি কিভাবে…???
–((অন্যদিকে ফিরে)) শ্রেয়া বলেছিলো।। তুমি এক বিশ্বাস ঘাতককে নিজের মনে জায়গা করে দিয়েছিলে।।
–((নিচের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে)) প্রথম দেখায় তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।। দুদিন পর যখন সেতু বললো সেও আমাকে পছন্দ করে,,,তখন কোনকিছু না ভেবেই আমি তাকে হ্যা বলে দেই।। আর দেখো…দুই বছরে একবারও আমার কাছে একবারও সন্দেহ হয়নি যে সে আমাকে নিয়ে গেইম খেলছে।। সেতুর কাছে শর্তে জিতে যাওয়া,,,কারো মন ভাঙা থেকেও জরুরি মনে হলো।।(শুভ্র)

–এখনো ভালোবাসো তাকে??
–ভালোবাসা জীবনে একবারই আসে।। আর প্রথম ভালোবাসা ভুলে যাওয়া যায়না।। সময়ের সাথে সাথে হয়তো নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারা যায়,,,তবুও মনের কোণে কোথাও না কোথাও সে থেকেই যায়।।।
–প্রথম ভালোবাসা…!! ((একটু নীরব থেকে)) শুভ্র,,,তুমি এখনো জানোই না ভালোবাসা মানে কি।। হ্যা,,,এটা ঠিক যে প্রথম ভালোবাসা সহজে ভুলে যাওয়া যায় না।। কিন্তু প্রথম ভালোবাসা মানে দুজন দুজনকে মন থেকে ভালোবাসা।। সে যদি সত্যিই তোমাকে মন থেকে ভালোবাসার পর বিশ্বাস ঘাতকতা করে চলেও যায় তবুও সেটাকে প্রথম ভালোবাসা বলা যায়।। কিন্তু সেতু আপু তো কখনও তোমায় ভালোবাসেনি,,,শুধু জেতার জন্য নাটক করেছে।।
সেদিক থেকে বলতে গেলে তোমার ভালোবাসা ছিলো একতরফা।।
–একতরফা ভালোবাসাও তো সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব না।।((শুভ্র))
–((শুভ্রর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে)) আমার ধারণা,,,তোমার মনেও কখনো সেতু আপুর জন্য ভালোবাসা ছিলোই না।। মানে এটা একতরফা ভালোবাসাও না।।।
–মাহি…!! তুমি কি বলতে চাও ঠিক ভাবে বলো?? ((শুভ্র))
–তুমি সেতু আপুর সৌন্দর্যের পূজারী ছিলে শুভ্র।। কাউকে প্রথম দেখায় ভালোবাসা স্বাভাবিক।। কিন্তু তার পরের দেখাই তার মনের অনুভূতি প্রকাশ করা একটু অদ্ভুত।। তুমি সেতু আপুর প্রতি এতটাই মুগ্ধ ছিলে যে তার মনের কথাগুলো বলার সাথে সাথে হ্যা বলে দিয়েছো।। কোনদিক চিন্তা করনি,,,,একবার তার সম্পর্কে জানার প্রয়োজন মনে করো নি।। যদি সেতু আপুর জায়গায় একজন শ্যামবর্ণের কেউ থাকতো,,,,তাহলেও তুমি একবার হলেও ভেবে দেখতে।।
–মাহি হয়েছে থামো।।
অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।। চলো ফিরে যাই।।
–((একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)) হুম চলো।।

🍁সেদিনের পর আজ দুদিন।। এই দুদিনে শুভ্র একবারের জন্য হলেও ফোন করেনি।। আমিও তাকে আগ বাড়িয়ে ফোন দেইনি।।
রাতে,,,,বই নিয়ে পড়ছিলাম এমন সময় ভাবি রুমে আসে।।
–কি করছো??((ভাবি))
–এই তো,,,পড়ছিলাম একটু।।
–((একটু চুপ থেকে)) আমার মনে হয় শুভ্রকে তোমার মনের কথা বলে দেওয়া উচিত।।
–((একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবির দিকে তাকিয়ে)) আর সম্ভব না ভাবি।। সেদিন শুভ্রর কথাগুলো দিয়ে বুঝেছি,,,আমার জন্য তার মনে কোন অনুভূতি নেই।।
–তবুও একবার শেষ চেষ্টা করেই দেখো।।((ভাবি))
–লাভ নেই ভাবি।। শুধু শুধু বন্ধুত্বটা নষ্ট হবে।। তখন একবারেই তাকে হারিয়ে ফেলবো।।
সক্রেটিস কি বলেছে জানো তো….
“””কারো সাথে তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব করবে না,
কিন্তু একবার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে সেটাকে দৃঢ় এবং স্থায়ী করবে।।”””
আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে পেরেছি কিনা জানি না তবে স্থায়ী করতে চাই।।
–((আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)) তবুও কাল আমার কথায় একবার গিয়ে বলেই দেখো।।
–((কিছুক্ষণ ভাবির দিকে তাকিয়ে)) হুম।।

🍁পরদিন….

হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়ালাম।। জানি এখন শুভ্র হাসপাতালেই আছে।। শুভ্রর কেবিনের সামনে এসে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে প্রবেশ করতেই থমকে গেলাম।।।
একটা মেয়ে শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।। শুভ্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।
–সেতু তুমি….((দরজার দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখেই))) মা…হি..!!!!((শুভ্র))
–((শুভ্রর মুখে মাহি শব্দ শুনে সেতুও ঘুরে তাকালো।।। আমি একবার সেতুর দিকে তাকিয়ে আবার শুভ্রর দিকে তাকালাম।। সবাই ঠিক বলেছিলো সেতু সত্যিই অসম্ভব সুন্দরী।। কিন্তু সে এখানে কি করছে??? তাদের মাঝে কি সব ঠিক হয়ে গিয়েছে???))) আ…আমি সরি।।।

আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করেই বাসায় চলে আসলাম।। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।। তাহলে,,,শেষ পর্যন্ত শুভ্রকে হারিয়েই ফেললাম।। এই জন্যই দুদিন আমাকে কল দেয়নি!!! নাহ,,,আমি আর বিরক্ত করবো না তাদের।। শুভ্র যার সাথেই থাকুক আমি চাই সে ভালো থাকুক।।

🍁শুভ্রর সাথে দেখা হয়না আজ দু’মাস।। সে অবশ্য অনেক বার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি করিনি।। দুই মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে ভুলে থাকার।। কিন্তু সম্ভব হয়নি।। তাহলে আমার ভালোবাসাটাও কি একতরফা ছিলো?? নাকি শুধু মোহ???

বিকালে বারান্দায় বসে ছিলাম হঠাত শ্রেয়া আসে।।
–মাহি আপু!! মাহি আপু,,,,আমার সাথে একটু চলো না।।
–কোথায়??
–এই নদীর ধারে।।((লাজুক হেসে)) আসলে আমি একজনের সাথে দেখা করবো।। কিন্তু একা যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।। তুমি সাথে চলো,,,প্লিজ।।।
–কিন্তু আমি…..!!
–প্লিজ প্লিজ প্লিজ।।
অবশেষে বাধ্য হয়ে শ্রেয়ার সাথে নদীর ধারে আসলাম।। শ্রেয়া আমাকে একটা বেঞ্চে বসতে বলে একটা দূরে চলে গেলো।। আমিও চুপচাপ বসে আছি।।

হঠাত একটা ছোট্ট বাচ্চা এসে আমার হাতে একটা কাঠগোলাপ দিয়ে দৌড় দিলো।। আমি অবাক হয়ে বাচ্চাটাকে ডাকতে যাবো তার আগেই একজনের পর একজন বাচ্চা আমার হাতে কাঠগোলাপ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমি হতভম্বের মতো তাকিয়ে সব দেখছি।। হটাত একটা পরিচিত কণ্ঠ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র!!

ধীর পায়ে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।। শুভ্রকে দেখে সেই প্রথম দিনের মতো আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো।। আমি ধীরে ধীরে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই শুভ্র আমার খুব কাছে চলে আসলো।।। আমার হাতের আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙুল দিয়ে শক্ত করে হাত দুটো চেপে ধরে আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো….
–এই অভিমানী মায়াবতী!!((শীতল কণ্ঠে))
–((শুভ্রর এতোটা কাছে আসায় আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি আর হঠাত তার শীতল কণ্ঠ শুনে কেঁপে উঠলাম)) শ…শ…শুভ্র!!!
—((আমার গালে তার নাম ঘষে)) হুমম….।।।
–ক..কি করছো ত…তুমি??((কথাও ঠিক ভাবে বলতে পারছি না))
–(((আমার কোমরে ধরে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে))) এতোদিন আমার থেকে দূরে দূরে ছিলে….তাই একদম কাছে চলে আসলাম।। নিজের কি অবস্থা করেছো তুমি?? চোখের নিচে কালি পরে গিয়েছে,,,আগের থেকেও শুকিয়ে গিয়েছো।।
–ছাড়ো আমাকে।। আমি একদম ঠিক আছি।। ছাড়ো,,,সবাই দেখছে।।
–দেখুক।। ছেড়ে যাও জন্য কি ভালোবেসে ছিলে??
সেদিন তোমার বলা কথাগুলো অনেক ভেবে দেখেছি।। তুমি ঠিকই বলেছিলে,,,সেতু কখনও আমার ভালোবাসা ছিলো না।। আমার মোহ ছিলো।। সেদিন এসব ভাবতে ভাবতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম,,,,আমার প্রথম ভালো লাগার অনুভূতি সেতুর জন্য না বরং তোমার জন্য।। সেদিন ভেবেছিলাম তোমার সাথে দেখা করে সব বলবো কিন্তু তার আগেই সেতু চলে আসে। আর তুমিও ভুল বুঝে দূরে সরে যাও।। যাকে সত্যি ভালোবাসো তাকে পাওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা করতে হয়।। কিন্তু তুমি আমাকে সেই সুযোগটাও দেওনি।(শুভ্র)
–((একটু চুপ থেকে)) সেতু কেনো এসেছিলো??
–((দীর্ঘশ্বাস ফেলে)) সে তার ভুল বুঝতে পেরে আবার ফিরে আসতে চেয়েছিলো।। হয়তো এখন আর কেউ তাকে পাত্তা দেয়না।। আমিও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি,,;,শুধু মাত্র আমার মায়াবতীর জন্য।। যার টানা টানা চোখে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই প্রথম দেখাতেই।। সাদ সব জানতো তাই সেদিন তোমায় ভাবি বলে ডেকেছিলো।।((শুভ্র))
–((শুভ্রর চোখে তাকিয়ে)) যাকে এতো ভালোবাসতে,,,,আমার জন্য তাকে ফিরিয়ে দিলে??
—হুম দিলাম।। কারণ সে কখনো আমার জন্য অপেক্ষা করতো না।। কিন্তু একটা মেয়ে ছিলো যে আমাকে এক নজর দেখার জন্য হাসপাতালের বাহিরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতো।। চা বিক্রেতা মামা কিন্তু সব বলেছে আমাকে।।((শুভ্র))

চুপচাপ শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।। জানি না স্বপ্ন দেখছি কিনা। যদি স্বপ্ন হয় তবে যেন এ ঘুম না ভাঙে।।
–((আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে)) মিস মাহিরা তাসনীম,,,আমার প্রিয় মাহি!!! এই_তুমিটা_আমার হবে??? সারাজীবন পাশে থাকবে?? হবে আমার মিসেস??((শুভ্র))
–((আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।। কি বলবো আমি?? আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। তাহলে এখন এমন স্তব্ধ হয়ে গেলাম কেনো??))
–((আমার অবস্থা বুঝতে পেরে)) ভালোয় ভালোয় হ্যা বলে দাও।। নয়তো আমার কাছে কিন্তু ইনজেকশন আছে।।
—((হুশ ফিরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হাত থেকে গোলাপ নিয়ে))) হ্যা হ্যা হ্যা।। আমি তো এতোদিন এই কথাগুলো শোনার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম।।
–((উঠে দাঁড়িয়ে হালকা হেসে আমার কপালে গভীর ভাবে একটা চুমু খেয়ে)) চলো এখন হিসাবের সারপ্রাইজটা বাকি।।

শুভ্রর সাথে তাদের বাসায় প্রবেশ করেই দেখি।। সবাই এখানে উপস্থিত।। কি হচ্ছে এসব?? শ্রেয়া দৌড়ে এসে আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলো।। তারপর ড্রইং রুমে এসে দেখি শুভ্র পাঞ্জাবী পরে আছে আর তার পাশে কাজী।। আমি চোখ বড় বড় করে শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই
–তোমাকে ভাবি করে নেওয়ার জন্যই তো এতো প্ল্যান।। ভাইয়া সবাইকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে।((শ্রেয়া))

অবশেষে দুই পরিবারের সম্মতিতে আমরা এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হই।।
শুভ্রর রুমে বসে আছি এমন সময় শুভ্র প্রবেশ করে।। ধীরে ধীরে আমার কাছে এসে আচমকা আমাকে কোলে নিয়ে ছাদে চলে আসে।।।
–মাহি,,,,কেমন লাগলো সারপ্রাইজ??((শুভ্র))
–আমি তো ভাবতেও পারিনি এমন হবে।।
–অনেক অপেক্ষার পর একটা সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ পেয়েছি।। তাই নিজের করে নিলাম।।।

শুভ্র আমার কাছে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের পিঠে আলতো করে চুমু খেয়ে কাধে মাথা রেখে….
—ভালোবাসি।।((শুভ্র))
–আমিও ভালোবাসি।।
অবশেষে শুভ্র নামক এই তুমিটা আমার হলো।।।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here