আশিকী❤ #Madness_Of_Love,15,16

❤#আশিকী❤
#Madness_Of_Love,15,16
#Writer_Sanjana_Fahmida_Shabnam
#Part_15

আমালঃ ইউ নো হোয়াট সানাহ আমার ড্যাড ওয়ার্ল্ড এর বেস্ট ফাদার। ( ড্রাইভ করতে করতে)
ছোট বেলা থেকেই আমি যা চেয়েছি যেই আবদার করেছি যেভাবেই হোক আমার সেই আবদার আমার ড্যাড পুরোন করেছে। যখন আমি তোমার কথা ড্যাড কে বলেছিলাম না ড্যাড তখনি আমাকে বলে দিয়েছেন আমালের লাইফ পার্টনার তুমিই হবে। ড্যাড তোমাকে দেখার জন্য এতোই কিউরিয়াস যে নিজের সব কাজ ফেলে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছেন।

সানাহঃ তাও আমাল আ’ম ফিলিং নার্ভাস,,, প্রথম বার আঙ্কেলের সামনে কিভাবে কি করবো,,,

আমালঃ ডোন্ট প্যানিক সানাহ, আমার ড্যাড অনেক ফ্রেন্ডলি তুমি একবার উনার সাথে দেখা করলেই উনার ফ্যান হয়ে যাবে।

কথা বলতে বলতে আমাল আর সানাহ খান ভিলার সামনে চলে আসে। আমালের গাড়ি দেখতেই দারোয়ান গেইট খুলে দেয় আর ওরা ভিতরে প্রবেশ করে।

সানার অনেক নার্ভাস লাগছে কিন্তু আমালকে নিজের পাশে পেয়ে কিছুটা সাহস যোগাচ্ছে মনে।

ভিতরে ঢুকতেই একজন লোক দেখতে পেলো সানাহ। সোফায় বসে কিছু কাগজ চেক করছিলো লোকটি। লোকটি দেশের নামকরা হোটেল বিজনেস অর্গানাইজেশন এর মালিক আদহাম খান।

আমালঃ ড্যাডডডডড,,,,

আমালের কন্ঠ শুনে আদহাম দাঁড়িয়ে যায় আমাল দ্রুত গিয়ে আদহামকে জড়িয়ে ধরে।

আমালঃ আই মিস্ড ইউউউ সোও মাচ্ ড্যাড,,,

আদহামঃ আই মিস ইউ টু মাই সান্। তো কোথায় আমার প্রিন্সের চয়েজ করা প্রিন্সেস।

আমাল সানার দিকে ইশারা করে বলল,,,

আমালঃ হেয়ার ইজ শি,,, মাই প্রিন্সেস,,,

আদহাম সানার দিকে তাকাতেই সানাহ নার্ভাস কন্ঠেই বলল,,,

সানাহঃ আ আসসালামু আলায়কুম আঙ্কেল,,,

আদহামঃ ওযালাইকুম আসসালাম ডিয়ার,,

আদহাম সানার কাছে এগিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,

আদহামঃ মাশাল্লাহ,, আমার ছেলের চয়েজ আছে দেখতে হবে। একদম পুতুলের মত মেয়ে খুঁজে এনেছে আমার জন্য।

সানাহ কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

আমাল এসে সানার পেছনে দাঁড়িয়ে বলল,,

আমালঃ ছেলে কার দেখতে হবে না। লুক ড্যাড আমাদের দেখতে একদম মেড ফর ইচ আদার লাগে না?

আদহামঃ হুম একদম পারফেক্ট পেয়ার তোমাদের দুজনের। আল্লাহ ব্লেস ইউউ,,

সানাহ আমার আমাল একটু পাগলাটে টাইপ কিন্তু তোমাকে বড্ড বেশী ভালোবাসে সামলে রেখো ওকে। কখনো দূরে সরিয়ে দিও না যতটুকু আমি ওকে চিনি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না ও। ওর হাত কখনো ছেড়ো না।

আমালঃ ওফফো ড্যাড আমার সানাহ আমাকে অনেক বেশী ভালোবাসে ও কখনো আমাকে ছাড়তে পারবে না রাইট সানাহ,,

সানাহ মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলল,,,

সানাহঃ আই প্রমিস আঙ্কেল আপনার এই পাগলাটে ছেলের হাত আমি কখনো ছারবো না।

আদহামঃ আজকে রাতে আমাদের অফিসিয়াল সাক্সেসের জন্য একটা পার্টি থ্রো করা হয়েছে আমাল আর এই পার্টিতে তোমাদের দুজনের উপস্থিতি আশা করি আমি।

আমালঃ ইয়েস ড্যাড আমার মনে আছে,,, আমরা পৌঁছে যাবো।

আদহামঃ তাহলে আমি একটু অফিস থেকে আসি। সেখানের খোঁজ খবর নিয়ে দেখি সব ঠিকঠাক আছে কি না।

আমালঃ ওকেই বাই,,,

সানাহঃ বাই আঙ্কেল,,,

আদহামঃ নিজের খেয়াল রেখো তোমরা আসি,,,

আদহাম বেড়িয়ে যায়,,,, আমাল ফোন করতে করতে বলে,,,

আমালঃ জান আমি আবিদ কে কল করে ইনফর্ম করে দিচ্ছি আজকের পার্টির কথা,,

সানাহঃ ওকে,,

আমাল ফোন নাম্বার ডায়েল করতে করতে এক সাইডে চলে যায়।

সানাহ ঘুরে ঘুরে আশেপাশে দেখছে। সানাহ এই বাড়িতে অনেক বার এসেছে। এই বাড়ির প্রতিটা দেয়াল প্রতিটি কোনা ওর চেনা। ড্র‌ইং রুমের বরাবর অনেক বড় ফ্রেম করে একটা ছবি টানানো। সেটাতে আমাল আর ওর ড্যাড দুই সাইডে আর আমালের মা মাঝে। আমাল তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন ওর মা একটা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়। তখন থেকেই আমালকে ওর ড্যাড একা হাতে মানুষ করেছে। মায়ের কথা তত একটা মনে নেই আমালের ওর কাছে ওর ড্যাড ই ওর দুনিয়া।

ছবিটার দিকে তাকিয়ে আনমনে কিছু একটা ভাবছে সানাহ। আমাল এসেই ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করে,,,

আমালঃ কিছু দিন পর তুমিও আমার ফ্যামিলির একজন হয়ে যাবে সানাহ। আমি জানো আমাদের বিয়ের ছবি বড় করে ফ্রেম করে আমাদের রুমে টানাবো।

আমালের কথায় সানাহ শুধু হালকা হাসলো।

আমালঃ চলো এখন,,, ( সানার হাত ধরে টেনে)

সানাহঃ কিন্তু কোথায়???

আমালঃ শপিং সানাহহ,,, আজকে রাতে পার্টির জন্য শপিং করতে হবে না।

আমাল সানাহকে নিয়ে শপিং মলে চলে গেল।

রাতে,,,,

পার্টিতে সবাই যার যার মতো করে ব্যস্ত। আবিদ আর আদহাম দাঁড়িয়ে কথা বলছে তাদের সাথে কয়েকজন বিজনেস ক্লাইন্ট ও আছে। বাকিরা যে যার মতো করে ব্যস্ত।

হঠাৎ দরজার দিকে চোখ যেতেই আবিদ বলে উঠে,,,

আবিদঃ আপনার প্রিন্স ও তার প্রিন্সেস চলে এসেছে আঙ্কেল,,,

আবিদের কথায় আদহাম সহ বাকিরাও তাকায় সেদিকে,,,

আমাল আর সানাহকে দেখে আদহাম মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আদহাম সহ সবাইই আমাল সানাহকে দেখে মুগ্ধ। সবাই একটা কথাই ভাবছে দে আর মেড ফর ইচ্ আদার।

আমাল আকাশি রঙের শার্ট আর সাদা প্যান্ট আর ব্লেজার পরেছে। সানাহ আকাশি আর সাদা কম্বিনেশন এর গাউন পরেছে। একে অপরের সাথে ম্যাচিং করে রেডি হয়েছে তারা। আমালের হাতে সানার হাত আবদ্ধ।

আমাল সানার হাত ধরেই ভিতরে প্রবেশ করে,,, সবাই ই ওদের জুরির প্রশংসা করছে। করবেই তো আমালের পাশে সানাহকে একদম পারফেক্ট মানিয়েছে।

আবিদঃ এজন্যই তোদের দেরি হলো,,, বাব্বাহ পুরো রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট এর জুরি লাগছে,,,

আমালঃ একদম না,, আমাদের রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট এর সাথে কম্পের করবি না আবিদ,,, কারন রোমিও আর জুলিয়েট এর লাভ স্টোরি কখনো কম্প্লিট হয় নি তাদের লাভ স্টোরি পেইনফুল ছিল,,, কিন্তু আমাল আর সানাহর লাভ স্টোরি তো ইউনিক,, আমাদের লাভ স্টোরিতে পেইন নামক জিনিসটা আমি আসতে দিব না,,,

আবিদঃ এতো সুন্দর থট্ নিয়ে থাকিস কিভাবে,, সবাই রোমিও জুলিয়েট হতে চাস আর তুই??

আমালঃ সবার আর আমার মধ্যে পার্থক্য আছে,,, আমাল সবার থেকে ইউনিক তাই ওর লাভ স্টোরি ও সবচেয়ে ইউনিক হবে।

আবিদঃ তোর সাথে আমি কথায় কখনো পারবো না,,, আচ্ছা সানাহ তুমি কিভাবে ওকে হ্যান্ডেল করো এয়ার,,,

সানাহঃ জানি না,, ( হেসে)

সবাই কথা বলছে এই ফাঁকে হলে লাইট লো হয়ে যায়। আর সফ্ট মিউজিক বাজতে শুরু করে,,,

আবিদঃ তোদের ইউনিক লাভ স্টোরির জন্য ইউনিক সং,,,

“এই মন পরেছে আমার বড় দোটানায়
প্রেম বয়ে আনলো হঠাৎ দমকা হাওয়া,,, ”

আমালঃ মাই ফেভারেট সং,,, সানাহ কাম,,,

সানাহঃ আরেহহ আমাল সবাই আছে এখানে,,,

আমালঃ তো আমরা আমাদের মতো করে ডান্স করবো তাতে কার কি,,,

আমাল সানাহকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে গানের লিরিক বলতে শুরু করে,,,

এই মন পরেছে আমার বড় দোটানায়
প্রেম বয়ে আনলো হঠাৎ দমকা হাওয়া,,,,

এই আশিকি আশিকি করল কি জাদু হায়
এই আশিকি আশিকি করল কি জাদু হায়য়

পুরতে বসেছি প্রেমে পুরতে বসেছি
কখনো আগে হয়নি এমন আমার সাথে।

সানাহ আমালের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে,,,,

“বুঝতে চেয়েছি তোকে খুঁজতে চেয়েছি
লিখা আছে সে সবির কারন আমার হাতে,,,

এই আশিকি আশিকি করল কি জাদু হায়য়
এই আশিকি আশিকি করল কি জাদু হায়য়

আজকে দুজনে চল বলতে শিখেনি
চোখে চোখে চলার ভাষা কি করে হয়।

আজকে জেনে নে এই স্বপ্ন মেনে নে
তুই যদি না চাশ তো এ সব আমারো নয়

এই আশিকি আশিকি করল কি জাদু হায়
এইন আশিকি আশিকি করল কি জাদু হায়য়।”

To be continued……

❤#আশিকী❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Fahmida_Shabnam
#Part_16

আমাল সানাহ আবিদ আর কিছু ফ্রেন্ডস মিলে হলের এক সাইডে গল্প করছে। আমাল এক হাত দিয়ে জুসের গ্লাসে সিপ্ দিচ্ছে। আরেক হাত দিয়ে সানার হাত ধরে আছে।

অন্য সাইডে আদহাম তার বিজনেস এর ব্যাপারে কথা বলছে তার লোকদের সাথে। একটু পর পর আমাল আর সানার দিকে তাকাচ্ছেন তিনি। আমাল আর সানাহকে দেখে মনে মনে প্রসান্তি পাচ্ছেন তিনি।

হঠাৎ করেই পুরো হলের লাইট অফ হয়ে যায় আর মনিটরে প্রজেক্টর অন হয়ে যায়।

আবিদঃ এটা কি হলো??

আমালঃ প্রজেক্টর অন করলো কে??

সবাই অবাক হয়ে যায় বিষয়টায়। হঠাৎ করে কেইবা লাইট অফ করে মনিটর অন করলো। সবাই উৎসুখ চোখে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মনিটরের দিকে।

মনিটরে একের পর এক ছবি স্লাইড শো করতে শুরু করে। ছবি গুলো দেখে আমালের পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়। হৃদ স্পন্দনের গতীও বাড়তে শুরু করে ওর।

সানার হাতটা অটোমেটিকলি ছুটে যায় আমালের হাত থেকে। সানাহ একবার আমালের দিকে তো একবার আবিদের দিকে তাকাচ্ছে। আবিদ অসহায় ভাবে সানাহ বুঝাচ্ছে ও এই ব্যাপারে কিছু জানে না।

ছবি গুলো আবিদ আর সানার। কয়েকটা ছবিতে আবিদ সানাহকে জড়িয়ে ধরে আছে কয়েকটাতে
তারা অনেক ক্লোজলি দাঁড়িয়ে আছে। কিছু ছবিতে আবিদের পাশে সানাহ বসে আছে আর সানার মাথা আবিদের বুকে। আবিদ সানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

ছবি গুলো দেখেই যে কেউ ভাববে ওদের মাঝে কিছু একটা চলছে।

আশেপাশে সবাই ফিসফিস করছে। আদহাম‌ও ব্যাপারটায় অনেক শক্ড। আমালের চোখ দুটো লাল হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে ওর।

সানার সাহস হচ্ছে না আমালের কাছে গিয়ে কিছু বলার বা ওকে এক্সপ্লেইন করার।

আবিদঃ আমাল আমি তোকে এক্সপ্লেইন করছি আসলে…..

আবিদ আমালের সামনে আসতেই আমাল রাগের বসে ওকে কিক করে বসে আর আবিদ হুমড়ি খেয়ে দূরে ছিটকে পরে। টেবিলের কোনায় লেগে হাতে ব্যাথা পায় ও।

আবিদকে পরে যেতে দেখে সানাহ ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে আর দৌড়ে আবিদের সামনে যায়। আবিদের পাশে বসে সানাহ ওক বলতে শুরু করে,,,

সানাহঃ আ আবিদ আ আর ইউ অল রাইট,,,

আবিদঃ ইয়াহ সানাহ ঠিক আছি আমি,,, ( উঠতে উঠতে)

সানাহকে আবিদের কাছে যেতে দেখে আমালের রাগ আরো বেড়ে যায়। আবিদের জন্য সানার চিন্তা যেন আমালের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।

আবিদঃ আমাল আগে আমার কথাটা শুন তারপর যা…. ( উঠে আমালের কাছে গিয়ে)

আমালঃ ইউউ চিট,,, ( আবিদের কলার ধরে ) বন্ধু কম ভাই বেশি ভেবেছিলাম তোকে আর তুই আমার সাথে এভাবে বেইমানি করলি,,, আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে আমার আড়ালে সম্পর্ক কিভাবে করলি তুই,,, তুই এতো নীচ হতে পারিস আমি ভাবিও নি,,,

আমাল চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলছে আর আবিদকে হিট করছে। আবিদ আমালের উপর এক বারের জন্যও হাত তুলছে না বরং ওকে বুঝানোর চেষ্টা করছে।

আদহাম এসে আমালকে থামানোর চেষ্টা করলেও আমাল থামছে না।

আমালেরঃ আই উইল কিল ইউ ড্যাম ইট। তোর সাহস কি করে হয় আমার সানার কাছে যাওয়ার। ওকে স্পর্শ করার অধিকার কে দিল তোকে।

আবিদের অবস্থা খারাপ দেখে আমালের কাছে এসে ওকে আবিদের থেকে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,,,

সানাহঃ আ আমাল প্লিজ ওকে ছাড়ো ওর কোন দোষ নেই,,, প্লিজ একবার আমার কথা টা শুনো আমি তোমাকে সব বলছি,,, প্লিজ লিভ হিম,, ( কান্না করতে করতে)

আমালঃ কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি কিচ্ছু না,,, ইউ বোওথ আর চিটার,,,, আই হেইট ইউউউউউ সানাহ,,,

তিন জনের হাতাপায়ের মধ্যেই আমালের ধাক্কা লেগে সানাহ ফ্লোরে পরে যায়,,,

ব্যাথা পাওয়া সত্বেও সানাহ আবার উঠে আমালকে থামানোর চেষ্টা করে,,

আমাল এতোই রেগে আছে যে ওর আশেপাশে ও কাকে হার্ট করছে সেটা বুঝতে পারছে না।

আমালের অজান্তেই ওর হাত উঠে যায় সানার উপর। থাপ্পড় টা সানার গালে না পরলেও ওর মুখের বরাবর তাক করা আমালের হাত।

এমনটা হবে আমাল বুঝতে পারে নি,,, নিজের হাত মুঠো করে নামিয়ে নেয় আমাল,,, কিন্তু রাগ কিছুতেই কমছে না ওর। আবিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আমাল বারের সাইডে গিয়ে হাত দিয়ে জোরে আঘাত করে আর বোতল গুলো ভেঙে আমালের হাতে বিধতে শুরু করে। আমাল এমন করে বারের বড় কাচের মিরর টাও ভেঙে পরে,,, মিররের টুকরো গুলো উড়ে আমালের কপালে বিধে যায়,,,

আদহামঃ আআমালল,,

আমাল তাও থামছে না ভাঙচুর করতে করতে ও চেঁচিয়ে বলতে থাকে,,,

আমালঃ কেন সানাহ হোয়াই?? আমি তোমাকে এতো ভালোবেসেছি এতো বিশ্বাস করেছি আর তুমি আমাকে ধোঁকা দিলে,,,,

আই হেইট ইউ সানাহ,,, তোমাকে এখন আমার সহ্য হচ্ছে না চলে যাও এখান থেকে আমার জীবন থেকে,,,

আই হেইট ইউউউ,,, ইউ চিটেট অন মি,,, তুমি আমালের ভালোবাসার যোগ্য‌ই না,,

জাস্টট গোওও (টেবিল উল্টিয়ে ফেলে)

আমালের প্রতিটা কথা সানার মনে দাগ কেটে দিচ্ছে। এটা কেমন ভালোবাসা যেখানে কোন কিছু এক্সপ্লেইন পর্যন্ত করার সুযোগ নেই,, আর বিশ্বাস সেটাতো বাদ‌ই দিলাম,,,,

সানার কানে কানে শুধু আমালের বলা কথা গুলো ঘুরঘুর করছে। কদম পিছিয়ে নেয় সানাহ। এক বারের জন্য ও পেছনে ফিরে নি ও। নিজের চোখের পানি আর আমালকে দেখাতে চাচ্ছে না সানা। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাও হাটছে ও।

আমাল আরেকটা টেবিলে কিক করে সেটাকে ফেলে দিয়ে বের হয়ে যায় হল থেকে ওর পেছনে আদহাম‌ও ছুটে যায়।

আবিদকে ওর কিছু ফ্রেন্ডস মিলে হসপিটাল নিয়ে যায়।

After Two Days….

আদহামের একটা ছোট্ট বার আছে বাড়িতে সেখানেই বসে বসে ড্রিংক করছে আমাল। এই দুইদিনে সানাহ বা আবিদ কারো খবর নেয় নি আমাল,,, আর না ওরা কোন কন্টেক্ট করেছে। আমাল অপেক্ষায় আছে এখনো কখন সানাহ নিজ থেকে ওকে কল করবে বা ওর কাছে আসবে কিন্তু এর কিছুই হলো না।

রাগে আরো বেশী করে ড্রিংক করছে আমাল,,,,

হঠাৎ পায়ের কাছে কেউ হুমড়ি খেয়ে পরতেই চমকে দাঁড়িয়ে যায় আমাল।

সামনেই আবিদ দাঁড়িয়ে আছে মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ করা ওর।

নিচে পরে থাকা লোকটি উঠতেই আমাল হতভম্ব হয়ে যায়। কারন ছেলেটি অনিক। অনিককে হয়তো পেটানো হয়েছে তাই অবস্থা খারাপ ওর।

( অনিক কলেজে ওদের সাথে পড়তো। কিন্তু একটা পার্টিতে ও সানার সাথে মিসবিহেভ করে এতে আমাল আর আবিদের হাতে প্রচুর মার খায়। আমাল ওকে কলেজ থেকে রাস্টিগেট করে দেয় আর থ্রেট দেয় যেন সানার আশেপাশে ও না আসে। অনিককে আর ওদের আশেপাশে দেখা যায় নি কিন্তু আজ হঠাৎ ওকে এভাবে এখানে দেখে অবাক হয় ও।

আমালঃ তুই এখানে কি করছিস আর এটাকে কেন এনেছিস ( আবিদকে বলল)

আবিদঃ তুই সব বলবি নাকি আমি….( তেরে এসে)

অনিকঃ ন নাহ আমি বলছি,,, ( ভয়ে ভয়ে)

আবিদের ভয়ে অনিক সত্যটা আমালকে ভয়ে ভয়ে বলতে শুরু করে,,,,

অনিকঃ সেই দিন প্রজেক্টের এ যে ছবি গুলি দেখানো হয়েছিল সে গুলো আমি তুলিয়েছি। আবিদ আর সানার মধ্যে কিছু নেই আমাল,,,

অনিকের কথায় আমাল অবাক হ‌ওয়ার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

অনিক আবার বলতে শুরু করে,,,

অনিকঃ তুই আর আবিদ ওই মেয়ের জন্য পুরো কলেজের সামনে আমাকে অপমান করেছিলি তোদের জন্য আমাকে কলেজ থেকে রাস্টিগেট করা হয়। এই ক্ষোভে তোদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি এমনটা করেছি,,, তোদের তিনজনের সম্পর্ক ছিন্ন করতেই এরমটা করেছি আমি,,,

কিছু দিন আগে যখন তুই শহরের বাইরে গিয়েছিলি কিছু কাজে আমি লোক দিয়ে সানার উপর হামলা করাই। আমি জানতাম আবিদ সানাহকে প্রটেক্ট করবে তোর অনুপস্থিতিতে আর এটাই হয়েছে।

তখন সানার ভয় আর কান্না দূর করার জন্য আবিদ ওকে জড়িয়ে ধরে ছিল ওর কাছাকাছি ছিল সেই সুযোগে আমি ওদের ছবি তুলি। আর প্লান এক্সিগিউট করি তোর ড্যাডের পার্টিতে,,,

আ আম স্যরি আমাল,,, আমার ভূল হয়ে গিয়েছে,,, ক্ষমা করে দে প্লিজ,,, আমি….

আর কিছু বলার আগেই আমালের আনলিমিটেড ধোলাই পরতে শুরু করলো অনিকের উপর,,,

আমালঃ ইউউ বাস্টার্ড,,,, ( স্যরি ফর দ্য বকা 🙊)

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আবিদ আমালকে আটকানোর চেষ্টা করে,,,

আবিদঃ ছাড় ওকে আমাল,,, ওর যা শাস্তি হবে তা পুলিশ দিবে তুই না,,,,

আমাল থেমে যায় আবিদের কথায়,,, আবিদ ফোন করে কাউকে ভিতরে আসতে বলল,,, কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিশ এসে অনিককে ধরে নিয়ে যায়।

আমাল ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে ক্ষমা চাইবে ও আবিদ আর সানার কাছ থেকে। চোখ মেলাবে কিভাবে ভাবছে ও।

আবিদঃ তোকে জানাতে না করেছিল সানাহ তাই সেদিনের কথা তোর কাছ থেকে লুকিয়েছি। সানাহকে সব সময় আমি নিজের ছোট বোন ভেবেছি আমাল। আর তুই আমাদের সম্পর্কটাকে এতো বাজে ভাবে নিয়েছিস ভাবতেই অবাক লাগে আমার। এতো বছরের বন্ধুত্ব সামান্য ছবির কাছে হেরে গেল,,, যদি সেদিন সানার বদলে আমার ছোট বোন ও থাকতো তাহলে আমি তাকেও এভাবেই আগলে রাখতাম।

আমালঃ এয়ার আ’ম স্যরি প্লিজ ক্ষমা করে দে,, ওসব দেখে আমার মাথা ঠিক ছিল না। তুইতো জানিস আমি সানাহকে নিয়ে কতটা পজেসিভ ওর পাশে কাউকে সহ্য করতে পারি না,,,

আ’ম রিয়েলি স্যরি আবিদ ক্ষমা করে দে আমি তোকে হার্ট করেছি,,,

আবিদকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই আবিদ সরে যায়।

আবিদঃ আমি নাহয় ক্ষমা করলাম কিন্তু সানাহ!! ও কি তোকে ক্ষমা করবে? একবারো কি ওর কথা ভেবে দেখেছিস তুই!!

সানার কথা খেয়ালেই ছিল না আমালের। আবিদের কথা শুনে সানাহকে নিয়ে ভয় হতে শুরু করে ওর।

আমালঃ আই হ্যাভ টু গো টু হার,,, আ আমি ওকে কষ্ট দিয়েছি আবিদ ওকে হার্ট করেছি,,,, আমার সানার কাছে যেতে হবে ও অবশ্যই আমাকে ক্ষমা করে দিবে কজ শি লাভ্স মি,,,

আমাল দেরী না করে বেরিয়ে যায় হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। যত দ্রুত সম্ভব ড্রাইভ করছে আমাল। সানাহকে ফোন দিচ্ছে ও কিন্তু সানার ফোন বন্ধ।

হোস্টেলের বাইরে গাড়ি থামিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ও। কিন্তু কয়েক জন গার্ড ওকে আটকিয়ে নেয়,,,

১ম গার্ডঃ আরে কোথায় যাচ্ছেন গার্লস হোস্টেলে ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ।

২য় গার্ডঃ বের এক্ষুনি,,,

আমালঃ দেখেন আমি এখানে সানার সাথে দেখা করতে এসেছি ওকে ডেকে দিন আমি চলে যাবো।

মিসঃ সানাহ তো কালকেই চলে গিয়েছে।

মিসের কথায় আমাল পেছনে ঘুরলো তার দিকে তারপর কাপাকাপা কন্ঠে বলল,,,

আমালঃ চ চলে গিয়েছে মানে?? ক কোথায় গিয়েছে??

মিসঃ ওদের বাসায় চলে গিয়েছে। সানাহ এখানে থেকে স্টাডি কন্টিনিউ করতে চাচ্ছিল না। হয়তো কোন প্রবলেম হবে তাই চলে গিয়েছে।

আমালের পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গিয়েছে। দম আটকে আসছে ওর। তাও নিজেকে সামলে নিয়ে ও বলল,,,

আমালঃ ওর এড্রেস টা প্লিজ আমাকে দিন মিস

মিসঃ স্যরি মাই সান কিন্তু হোস্টেলের নিয়ম যে কাউকে কারো ইনফরমেশন দেয়া যাবে না। তাছাড়া সানাহ আমাকে অনেক রিকোয়েস্ট করে বলেছে যে ওর বিষয়ে কোন তথ্য যেন আমি কাউকে না দেই,,, আমার হাতে কিছু নেই,,,

মিস চলে গেল সাথে গার্ড গুলোও। আমাল নিজের শরীরে ব্যালেন্স করতে পারছে না। সব কিছু ওর কাছে ঘোলাটে লাগছে। সব যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে ওর কাছে। সানাহকে কিভাবে খুঁজবে ও,,,

আমাল কোন রকমে নিজের গাড়ির সামনে আসে তারপর নিঃস্বব্দে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,,,,

হঠাৎ আবিদের গাড়ি আমালের সামনে এসে থামে আর আবিদ বেড়িয়ে আমালের সামনে আসে,,,,

আবিদকে দেখে আমালের চোখের পানি বাধ ভেঙে গেল,,, এতক্ষন নিজেকে সামলে রাখলেও আবিদকে দেখে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না ও

আমাল আবিদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,

আমালঃ আ আমার সানাহ আমাকে ছ ছেড়ে চলে গিয়েছে আবিদ,,, ও আমাকে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে,,, শাস্তি দিচ্ছে ও আমাকে আমার ভূলের। আ আমি কোথায় খুঁজবো ওকে ত তুই আমাকে সাহায্য করবি তাইনা,,, আমি জানি সবাই আমাকে একা ছাড়লেও তুই কখনো আমাকে একা ফেলবি না। আ আমার সানাহকে খুঁজতে আমার হেল্প কর প্লিজ,,,, ( অনুনয় স্বরে)

আবিদঃ আজকে আমার ফ্লাইট আমাল,,, ( শান্ত কন্ঠে)

আবিদের কথায় আমাল ওকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,

আমালঃ ফ্লাইট তুই কোথায় যাচ্ছিস??

আবিদঃ কানাডা যাচ্ছি সেখানে গিয়ে নিজের বিজনেস সেট‌আপ করে ওখানেই সেটেল হয়ে যাবো। আজকে রাতের ফ্লাইট,,,

আমালঃ ত তুই আমাকে একা ফেলে যাওয়ার চিন্তা করছিস। দেখ তুই আমাকে মার বকা দে তাও প্লিজ ডোন্ট লিভ মি এয়ার। তোদের ছাড়া আমি নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবো। আমার সানাহ‌ও আমাকে ফেলে চলে গিয়েছে ওকে খুজতে হবে আমার। আর এখন তুই বলছিস যে তুই ও চলে যাবি। আমি একা হয়ে যাবো আবিদ।

আবিদঃ স্যরি এয়ার বাট সম্পর্কে একবার ফাটল ধরলে সেটা আর ঠিক হয় না। তোর এই রাগ এই পজেসিভনেস এর জন্য তুই সানাহকে হাড়িয়েছিস। শুধু সানাহ না আমাল আজ তুই আমার মতো বন্ধু কেও হারালি,,, যদি বেঁচে থাকি আবার দেখা হবে আল্লাহ হাফেজ,,

আবিদ আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে চলে যায়। ওর চোখেও পানি ছিল যা আমালকে ও দেখাতে চায় নি,,,

আবিদ চলে যেতেই আমাল হাটু গেড়ে বসে পরে ওখানেই,,, আকাশ কালো মেঘ দিয়ে ঢেকে যায় আর ঝুম বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে যায়।

আমাল আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে সানার নাম ধরে ডাকতে শুরু করে,,,

আমালঃ সানাহহহহহহহহহহহহ

বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে আমালকে। চার বছর আগে এই বৃষ্টির দিনেই ভালোবাসা ওর জীবনে এসেছিল কিন্তু আজ এই বৃষ্টির দিনেই ওর জীবন থেকে ওর সব ভালবাসা আর ভালবাসার মানুষ দূরে চলে গেল,,,

Feel the song ” Tera yaar hoo main ”
( আজকে গান লিখতে ইচ্ছে করছে না 😪)

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here