আরেকটি_বার #পর্বসংখ্যা_২১ #Esrat_Ety

#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_২১
#Esrat_Ety

হু হু করে বাতাস বইছে বাইরে। অসময়ের বৃষ্টি বেশ গুছিয়েই তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিতে।
উর্বী একটা মোমবাতি জালিয়ে রাওনাফের কাছে, বিছানার পাশের টেবিলে রেখে দেয়। রাওনাফ উর্বীর দিকে তাকিয়ে আছে।
মোমবাতির আলোয় কাছে থেকে উর্বীর ফরসা গোল মুখটা সোনালী বর্ণের দেখাচ্ছে।

রাওনাফ একটা বালিশ টেনে নেয় নিজের হাতের নিচে, বেশ গুছিয়ে বসে আছে সে, তাকিয়ে আছে উর্বীর চোখের দিকে।

উর্বী রাওনাফের থেকে একটু দূরেই, মুখোমুখি হয়ে বসে।
তাকে অনেকটা শান্ত লাগছে। চোখ মুখ স্বাভাবিক। বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে।
উর্বী নীরাবতা ভেঙে বলা শুরু করে, “বিয়ের আগে আমার একজনের সাথে সম্পর্ক ছিলো। বহু বছরের সম্পর্ক। আমার কলেজ জীবনের শুরু থেকে। সিনিয়র ছিলো সে আমার। অপজিশন পার্টির একজন ফরমার মিনিস্টারের ছেলে। এজন্য তার অনেক ঠাট বাট ছিলো শহরে।
প্রনয় অত্যন্ত গভীর ছিলো। সময় যতো যেতে থাকলো, সম্পর্ক যতো পুরনো হতে থাকলো আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম সে একটু অস্বাভাবিক। আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত ছিলো সবকিছু তার। প্রথম প্রথম বিষয়টা প্রেমিকের পাগলামি ভেবে মানিয়ে নিতাম, কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু অতিরিক্ত হয়ে উঠলো। সে স্বভাবে ছিলো বদরাগী,জেদী। এতটুকুই দোষ চোখে পরেছিলো শুরুতে। মানিয়ে নিয়েই অনুভূতি দেওয়া নেওয়া করেছি। কিন্তু একটা সময় আবিষ্কার করলাম মানুষটা খুবই ত্রুটিপূর্ণ। বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলের যত বদ গুণ থাকতে পারে প্রায় সবগুলো গুণই তার মধ্যে ছিলো। গুন্ডামি, নেশা করা, মারামারি। সবকিছুই করতো সে।

আমি সব মেনে নিয়েছিলাম। ভাবতাম সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, দিন দিন সে আরো উচ্ছন্নে যেতে থাকে। তার সাথে বাড়তে থাকে আমার প্রতি তার মানসিক অত্যাচার। প্রচুর পাগলামি করতো আমায় নিয়ে, ভালোবাসার নামে গলার কাটা হয়ে বিঁধে যাচ্ছিলো সে। যাকে উপড়ানোর ক্ষমতা আমার ছিলো না। না ছিলো মানিয়ে নেওয়ার।

ভাইয়া সব জানতে পেরে আমার ওপর ভীষণ ক্ষে’পে গেলেন। ভাইয়া ওকে শুরু থেকেই জানতো, ওর স্বভাব সম্পর্কে সবাই জানতো শুধু আমি অন্ধ ছিলাম। নিজের জীবনে অমানিশা নামিয়ে আনবার জন্যই আমি অন্ধ ছিলাম। একদিকে ওকে শোধরাতে পারিনি,অন্যদিকে ভাইয়া আমার জন্য ছেলে দেখতে লাগলেন।

একটা সময় আমি পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়লাম ওর মানসিক টর্চার নিতে না পেরে। আমার স্বাধীনতা একেবারে কব্জা করে নিয়ে বসেছিলো।

তারপর অনেক ভেবে ওর সাথে বিচ্ছেদ ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। স্নিগ্ধ একটা শুরু থেকে তিক্ত একটা বিচ্ছেদ। অনেকটা মানসিক শক্তি যোগার করে সিদ্ধান্তটা নিলাম। ওকে বললাম , ভালো করে বুঝিয়ে বললাম আমি এই সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছি না। ও খুবই ঠাণ্ডা মাথায় শুনলো। আমাকে বললো আমার সাথে দেখা করতে চায়। একটা সুযোগ চায় আলোচনা করার।

এবং…..”

এই পর্যন্ত এসে উর্বীর গলা কাঁপতে শুরু করে।

রাওনাফ উর্বীর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। সে দেখছে উর্বী কান্না আটকে রাখার কঠিন প্রচেষ্টা করছে।

উর্বী একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কান্নাটা দমিয়ে ফেলে,তারপর বলতে শুরু করে,”সে তো আমাকে ছাড়বে না। ভালোবাসা নামে জেদ ছিলাম তো আমি তার। যখন দেখলো কিছুতেই কিছু হবে না, আমি বিচ্ছেদ ঘটাবোই,তারপর সে আমাকে আঁটকে রাখার একটা অভিনব উপায় বের করলো। হি টাচড্ মি উইদাউট মাই কনসেন্ট!”

উর্বী তুমুল প্রচেষ্টা করছে না কাঁদার। থেমে থেমে বলতে থাকে,”শত পাগলামি করলেও কখনো আমার গাঁয়ে হাত না দেওয়া ছেলেটা আমাকে আটকে রাখতে তার নিকৃষ্ট রুপটা দেখালো। তার মনে হয়েছিল,মন না আটকাতে পারলে কি হবে! শরীর আটকে দেবো!
এ্যান্ড হি রেইপড মি!”

উর্বী ফুঁপিয়ে ওঠে। রাওনাফ একই ভাবে দেখছে উর্বীকে। উর্বী দু’চোখ বন্ধ করে একটা গভীর নিঃশ্বাস নেয়। চোখের পানি গড়িয়ে পরতেই বলতে থাকে,”এবং সে আমাকে বললো,”এখন কিভাবে আমাকে ছাড়িস আমি দেখবো!”
চার বছরের ভালোবাসা হিংস্রতা হয়ে আমার চুলের মুঠি ধরে বলেছিলো এই কথাটা জানেন।”

বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেও যখন পারলো না তখন হাল ছেড়ে দিয়ে গোঙানির মতো আওয়াজ করতে থাকে কিছুক্ষণ। অনেকটা সময় নিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে বলতে থাকে,”তারপর আমাকে বললো, তৈরি থাকতে। বিয়ে করবে আমাকে। কিন্তু আমি তো একজন রে’পিস্টকে বিয়ে করবো না। সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম।

মানসিক ভাবে ভেঙে পরলেও কাউকে কিছু বুঝতে দিইনি বাড়ির। ভাইয়া আমার জন্য ছেলে দেখতে লাগলেন। দিন যায়, ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারলাম আমি সন্তানসম্ভবা।”

উর্বী থামে। হাপাচ্ছে সে। মাথা নিচু করে রেখেছে সে এখন। কাঁদছে না, কিন্তু কথাগুলো বলছে খুবই কষ্টে। কন্ঠনালী থেকে যেনো বেরোতে চাইছে না।
রাওনাফ ঐ মুখটার দিকে কোনো এক অজানা কারনে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ সরিয়ে উর্বীর হাতের দিকে তাকায়, হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে রেখেছে উর্বী।

“পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো যেন। কি করবো! কি হবে! কিছু বুঝতে পারছিলাম না। তারপর নিজের মনের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাধ্য হয়ে, নিরুপায় হয়ে ঐ হীন মানুষটার কাছে বলতে গিয়েছিলাম “আমাকে বিয়ে করো।”

কিন্তু নিয়তি আমার সাথে এখানেও তামাশা করলো। খবর পেলাম তাকে পুলিশ এ্যারেস্ট করেছে। তার নামে জোরা খুন মামলা সহ মোট তিনটা চার্জ লাগানো হয়েছে।

আমি অসহায়ের মতো তরপাতে থাকি।
হাজতে গিয়েছিলাম তার সাথে দেখা করতে। দেখা করতে পারি নি।

বাড়িতে যখন জানালাম আমার কথা। মা ঘে’ন্নায় সু’ই’সাইড করতে গেলো। ভাইয়া নিশ্চুপ হয়ে রইলো। গোটা পৃথিবী আমার কাছে মিথ্যে মনে হতে লাগলো। জানেন সবসময়ই আমার ইচ্ছে করতো আমি ম’রে যাই, কিন্তু আমার অত সাহস নেই। আমি ভীতু। আমি ম’রতে ভীষণ ভ’য় পাই।

খবর পেলাম তাকে কেরানীগঞ্জ শিফট করেছে। সাথে দশ বছরের জেল। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হলো আমার কিছু আত্মীয় স্বজন, জীবনটা আমার ন’রক করে ফেলেছিলো। কোনোভাবে আমার প্রেগ’ন্যা’ন্সির খবরটা ছড়িয়ে গেলো। বাড়ির কেউ কোথাও বেরোতে পারতো না।
তখন আমি ঠান্ডা মাথায় পৃথিবীর সবথেকে নি’কৃষ্ট কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এ্যা’বর্শন করে ফেললাম। মে’রে দিলাম আমি।”

শেষের বাক্যটা বলে উর্বী কান্নায় ভেঙে পড়ে। শরীর কাঁপিয়ে কাঁদছে সে। বৃষ্টির শব্দের সাথে মিশে অদ্ভুত শোনাচ্ছে সে কান্না।

রাওনাফ ফ্যালফ্যাল করে দেখছে উর্বীকে। একবার ভাবলো সে বলবে,”বুঝেছি পুরোটা। আর বলতে হবে না!”
কিন্তু সে বললো না।
উর্বী হু হু করে কাঁদছে। মোমবাতির আলোয় তার সে চোখের পানি চিকচিক করছে।

কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে উর্বী রাওনাফের দিকে তাকায়, হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”জানেন। আমি না চাইনি আমার এই নষ্ট জীবনটা কোনো ভালো, নিষ্পাপ জীবনের সাথে জ’ড়াতে। একেবারেই চাইনি। একা একা বেশ চলে যেতো জীবনটা। আমি শুরু থেকেই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু বাড়ির মানুষগুলো ! তারা আর মানলো কই। তার ওপর উপমার বয়স বেড়ে যাচ্ছিলো! পাত্রপক্ষের কাছে উপমার চরিত্রের চাইতে আমার বিয়ে নিয়ে বেশি মাথাব্যথা ছিলো। উপমার সব গুণ ছাপিয়ে যেতে থাকলো আমার কলঙ্কের দোষে। জেদ করে ঠেলতে ঠেলতে ত্রিশের কোঠায় এনেছিলাম ধূসর রঙের এই জীবনটাকে। আর পারিনি। ভাবলাম আবার একটু নিজের জীবনটাকে নিয়ে খেলে দেখি।

যখন সামিউলের সাথে বিয়ের দিন বিয়েটা ভেঙ্গে যায়। আমি তখন খুব হেসেছি। এটা ভেবে যে,কারো জীবন নষ্ট হবে না। কিন্তু দেখুন, শেষমেষ আপনি জরিয়ে গেলেন।”

উর্বী থেমে যায়, তার গাল বেয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে,ধীর গতিতে, ‌যেনো তার কান্নাগুলোও এখন ক্লান্ত। সে একহাত দিয়ে বিছানার চাদর খামছে ধরে বসে আছে।

খানিক বাদে আবারও বলতে শুরু করে,” এই পাঁচ মাসে বিয়েটা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত, চাপিয়ে দেওয়াই রয়ে গিয়েছে কি না জানি না। তবে আমার কাছে না থাকেনি জানেন? জানিনা কি অদৃশ্য শক্তি রয়েছে ঐ একটা কাগজের। যে কিনা মানুষের অনূভুতি প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। রোজ আপনি এলে আপনাকে এক কাপ কফি এগিয়ে দেওয়া, আমি ঘুমিয়ে থাকলে আমার গায়ে আপনার চাদর টেনে দেওয়া,প্রতিদিন সময় করে আমীরুনকে দিয়ে আমার জন্য একগ্লাস দুধ পাঠানোর নিয়ম, কিংবা আপনার বাচ্চাদের জন্য আগ বাড়িয়ে আমার কনসার্ন দেখানো। এগুলো আমার কাছে,আমার চোখে শুধুমাত্র দায়বদ্ধতা হয়েই থাকেনি। অন্যকিছু হয়ে গিয়েছে।

বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত আপনার সাথে কাটানো আমার সব মুহুর্ত আমার কাছে বিশুদ্ধ স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি খুব শান্তি পেয়েছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। স্বামী স্ত্রী না হতে পারলেও আমি এটা ভেবে শান্তি পাবো যে আমি একজন অতি ভালো লোকের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। যার যোগ্য আমি না।

ওই বাড়িটা আমায় খুব শান্তি দিয়েছে,ওবাড়ির প্রতিটা ইট আমায় খুব শান্তি দিয়েছে। আমি চির কৃতজ্ঞ।

উর্বী মুখে আঁচল গুজে কাঁদছে। রাওনাফ এক মনে উর্বীকে কাঁদতে দেখছে। তার কোনো ভাবান্তর নেই।

পুনরায় দম নিয়ে উর্বী বলে, “আপনি কাল চলে যান,দয়া করে চলে যান। মায়ের সাথে ফোনে আমি কথা বলে নেবো। করবে না বকাবকি আপনাকে। আপনি ভাবতেও পারবেন না আমার কতটা শান্তি লাগছে এখন আপনাকে সবটা বলে। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য।”

এবার হাঁটুতে মাথা রেখে উর্বী কাঁদতে থাকে। কেঁদে কেঁদেই বলে,”আমি ওবাড়ির প্রত্যেকটা লোককে মিস করবো।‌ আপনাকে সবথেকে বেশি মিস করবো ডক্টর খান।”

উর্বীর খুবই দুর্বল লাগছে এখন, শরীর ভেঙে আসছে, সে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার এতো খারাপ লাগছে কেনো। সে কি মরে যাচ্ছে!

রাওনাফ উর্বীর অদ্ভুত সেসব আচরন দেখতে থাকে। গলাকাটা মুরগির মতো তড়পাচ্ছে।

“ধীরে ধীরে কিভাবে কিভাবে যেনো আমি আপনার মায়ায় পরে যাচ্ছিলাম। মনের ভীতর একটা সুপ্ত বাসনা জেগে উঠলো আপনার সাথে সংসার করার। কিন্তু তা আর হলো না, আমি এসব থেকে কখনোই বের হতেই পারবো না,বরং আপনার জীবনটা ও নোংরা করে দেবো।”

একটু থেমে উর্বী আবারও বলে ওঠে,”সবার মতো আপনিও প্লিজ এখন আমাকে এই প্রশ্ন করবেন না যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিলো,আমি কোন সাহসে,কোন ভরসাতে একটা পুরুষের কাছে গিয়েছিলাম বোকার মতো। না গেলে তো এত বড় সর্বনাশ হতোই না আমার। করবেন না এমন প্রশ্ন। এর ব্যখ্যা তেইশের উর্বী দিতে পারেনি,ত্রিশের উর্বীও দিতে পারবে না। আমি শুধু জানি আমার সর্বনাশ হয়েছে। এটুকুই জানি।”

উর্বী থেমে যায়, তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। রাওনাফ এবার উঠে আসে।

“উর্বী কি হয়েছে? তোমার কি হয়েছে?”

উর্বী তার জবাব দেয়না, বিড়বিড় করে বলতে থাকে,”আপনি চলে যান, এখান থেকে প্লিজ চলে যান। আমি আর দুর্বল হতে চাই না।”

“আচ্ছা সেটা দেখা যাবে। তুমি ওঠো। ঠিক হয়ে শুয়ে পরো। এখন ঘুমাও।”

উর্বী ওঠে না। কাঁদছে।
রাওনাফ উর্বীর হাত ধরে তাকে উঠানোর জন্য। উর্বী রাওনাফের হাত সরিয়ে দেয়,”আমাকে ধরবেন না দয়া করে। আপনার হাত নোংরা হবে।”
রাওনাফ উর্বীকে বলে,”আচ্ছা ধরবো না। শান্ত হও।”

উর্বী শান্ত হয়না। কাঁদতে থাকে। উন্মাদের মতো কাঁদতে থাকে বিছানার চাদর খামচে ধরে। রাওনাফ তাকে দেখতে থাকে অপলক।

দীর্ঘসময় পরে চুপচাপ হয়ে যায় উর্বী। সে না চাইতেও চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই হিং’স্রতার দৃশ্যটি। উর্বী ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। সে মনে করতে চায়না। দেখতেই চায়না সেই দৃশ্যটা আবারও। কিন্তু সে দেখে ফেলে।

“উচ্ছাস চুপচাপ পায়ের ওপর পা তুলে ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে। দৃষ্টি উর্বীর মুখের দিকে। উচ্ছাসের চোখ দেখে উর্বী আজ কিছুই পড়তে পারছে না। শীতল দৃষ্টি। ঐ দু’চোখে না আছে রাগ,না আছে অন্যকোনো অনুভূতি। কেমন শান্ত হয়ে বসে আছে। অথচ যে উচ্ছাসকে উর্বী চেনে,এতক্ষণে সবকিছু ভাঙচুর করে ফেলার কথা।

উর্বী মাথা নিচু করে বলে,”সম্ভব না আর সম্পর্ক কনটিনিউ করা। তুমি তো কখনও শোধরাবে না। তারচেয়ে তুমি তোমার মতো থাকো। আমি মুক্তি চাই।”

উচ্ছাস ম্লান হাসে উর্বীর কথা শুনে, নীরবতা ভেঙে বলে,”মুক্তি চাও?”

_হ্যা। ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করো।

_কিন্তু উচ্ছাস তো ভুলের শা’স্তি দেয়! ক্ষমা নয়।

উর্বী মাথা তুলে তাকায়। উচ্ছাস বলতে থাকে,”আমাকে ভালোবেসেই ভুল করেছো। মাফ করেছি । আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েও ভুল করেছো। মাফ করেছি। তবে এখন যেটা করতে চাইছো,মানে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে। এজন্য তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে! কোনো মাফ হবে না।”

উর্বী অবাক চোখে উচ্ছাসের দিকে তাকিয়ে থাকে। উচ্ছাস উঠে দাঁড়ায়। দরজা বন্ধ করে উর্বীর দিকে তাকায়, তার চোখ মুখ ভাবলেশহীন। উর্বী তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে,কাঁপা গলায় বলে,”দরজা আটকালে কেনো!”

উচ্ছাস কোনো কথার জবাব না দিয়ে উর্বীর সামনে এসে দাঁড়ায়। এক টানে উর্বীর ওড়না ফেলে দিয়ে উর্বীকে ধাক্কা দিয়ে ডিভানে ফেলে দেয়। হতভম্ব,আহত, শংকিত উর্বী নিজেকে সামলে নেওয়ার আগেই উচ্ছাস এসে উর্বীকে চেপে ধরে ডিভানের সাথে। উর্বীর গলা থেকে আর্তনাদের মতো আওয়াজ বের হওয়ার আগেই উচ্ছাস তার মুখ চেপে ধরে। উর্বী কাঁদছে। উচ্ছাস দীর্ঘসময় উর্বীর সে কান্না দেখতে থাকে, তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,”আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না পাখি, আমার সহ্য হয়না।”

উর্বী তড়পাতে থাকে। শরীরটা ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে যেতে শুরু করে। উর্বীর মনে হচ্ছিলো উর্বী মরে যাচ্ছে,তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।”

আর কিছু কল্পনা করতে পারে না উর্বী। শুধু নিশ্চুপ কেঁদে যায়। রাওনাফকেও সে কিছু বলে না আর ।

কাঁদতে কাঁদতে একসময় উর্বী ঘুমিয়ে পরে। চোখের পানি গালে শুকিয়ে লেপ্টে আছে। মোমবাতি ফুরিয়ে যাচ্ছে। মোমবাতির সে ক্ষীণ আলোয় উর্বীর মুখটা চিনামাটির একটি বিবর্ণ পুতুলের মতো লাগছে।

রাওনাফ উঠে উর্বীর গায়ে চাদর টেনে দিয়ে আরেকটা মোমবাতি জ্বেলে নেয়। তারপর চুপচাপ জেগে বসে থাকে যতক্ষন ঐ মোমবাতিটা আলো দিচ্ছিলো ততক্ষন। কাছের মসজিদে ফজরের আযান দিয়ে দেয়।
উঠে ওযু করে সালাত আদায় করে সেও বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয়, পরপর রাওনাফের চোখ দুটোও লেগে যায়।

সদর দরজার বাইরে থেকে রেজাউল কবির আর তহুরা দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। নুরুন্নাহারের বাড়ি থেকে শুধুমাত্র সে, তহুরা আর লুৎফুন্নাহার ফিরে এসেছে সকাল সকাল। বাকিরা বিকেলে আসবে। কিন্তু উর্বী দরজা খুলছে না দেখে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পরে রেজাউল। তহুরার দিকে তাকিয়ে বলে,”জ্ঞান হারিয়ে ফেললো নাকি আবার! পেছনের দরজা বাইরে থেকে লক করা ছিলো না? যাও গিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে দাও।”

তহুরা মাথা নাড়িয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বাড়ির পেছনের দরজার কাছে চলে যায়।

রাওনাফের ঘুম ভাঙ্গে রেজাউলের গলা পেয়ে। তহুরা অনবরত উর্বীর রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে।

“এই উর্বী। দরজা খোল। বেলা এগারোটা বেজে গেছে। এতবেলা অবধি ঘুমাচ্ছিস কেনো! এই উর্বী।”

রাওনাফ উর্বীর দিকে তাকায়। উর্বী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সে ডাকতে গিয়েও ডাকে না। নিজে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

লুৎফুন্নাহার চমকে ওঠেন তাঁর মেয়ে জামাইকে দেখে।

তহুরা আর রেজাউল একে অপরের দিকে তাকায়।

রাওনাফ তাদের তাকিয়ে থাকার ধরন দেখে বিব্রত বোধ করতে থাকে,কয়েকমুহুর্ত পরে হাসি দিয়ে তাদের সালাম দেয়,”আসসালামুয়ালাইকুম। আপনারা ভালো আছেন?”

লুৎফুন্নাহার প্রচন্ড খুশি হয়ে যান। তার মেয়ে জামাই মেয়ের কাছে এসেছে,এটা তার কাছে অনেক আনন্দের একটি ব্যাপার।

উর্বী তখনো ঘুমাচ্ছে।

***
হাসাহাসির শব্দে উর্বীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। বসার ঘর থেকে আসছে। রেজাউল কবিরের গলা। ভাইয়া কার সাথে হাসছে?

উর্বী উঠে বসতে যেয়ে টের পায় তার মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কাদলেই তার এমন হয়। অসহ্য যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম,তবু সে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়ায়। রাওনাফকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। টেবিলের ওপর তার ফোন,ওয়ালেট আর ঘড়ি দেখা যাচ্ছে। তার মানে সে চলে যায়নি।

উর্বী ধীরপায়ে হেটে বসার ঘরে যায়। রাওনাফ তার ভাইয়ার সাথে হেসে হেসে গল্প করছে। উর্বী অবাক হয়ে যায়। রাওনাফকে সে এভাবে কথা বলতে কখনোই দেখেনি। আড্ডা বেশ জমে গেছে মনে হচ্ছে।
উর্বীকে দেখে তার ভাইয়া বলে,”তুই উঠেছিস। যা হাত মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে যা। দেখ তোর ভাবীর নাস্তা বানানো হয়েছে কি না।”

উর্বী রাওনাফের দিকে চায়। রাওনাফ তার দিকে তাকায় না,সে মাথা নিচু করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।

রান্নাঘরে তহুরা পরোটা বেলছে , চুলোয় বসিয়েছে মুরগী ভুনা। লুৎফুন্নাহার পিঠা বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ তাকে খুবই আনন্দিত দেখাচ্ছে। তার মেয়ে জামাই এসেছে। এর থেকে আনন্দের বিষয় তার কাছে আর কি হতে পারে !

উর্বী গিয়ে তহুরার পাশে দাঁড়ায় ‌। তহুরা মাথা ঘুরিয়ে উর্বীকে দেখে বলে,”মাংসটা একটু নেড়ে দে তো,তলায় লেগে যাবে।”

উর্বী মাংস নেড়ে তার দিকে তাকায়। বলে,
“কি ব্যাপার! খুশি চোখ মুখ থেকে ফেটে পরছে যে!”

_পরবে না? তুই কি বুঝবি!

উর্বী শুকনো হাসি হাসে।
লুৎফুন্নাহার বলে,”আমি তো ভেবেছিলাম জামাইটা গোমরা মুখো পেয়েছি। কথাই বলতে জানে না। কিন্তু আমার ধারনা ভুল। কি সুন্দর গল্প করছে রেজাউলের সাথে! মন ভরে যায় দেখে। ”

উর্বী তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে,তার মা খুশিতে বাচ্চা বাচ্চা গলায় কথা বলছে।
লুৎফুন্নাহার বলতে থাকে,”কতটা বিনয়ী, সভ্য শান্ত। এতো সম্মান করে আমাদের,ভাবা যায় ! তোর উচ্ছাসের মতো বেয়াদব আর উশৃঙ্খল নয়,এর পায়ের নখের যোগ্যও নয় ওই কু’লাঙ্গার।”

উর্বী তার মায়ের দিকে তাকায়। লুৎফুন্নাহার নিজের জিভ কাটে। মুখ ফসকে এসব কেনো বলতে গেলো মেয়েকে!

সে দ্রুত প্রসঙ্গ পালটে বলে,”জামাই রাতে কটায় এসেছে রে?”
_সারে দশটা নাগাদ ‌।

_কি দিয়েছিলি খেতে?

_ডিম দিয়ে ভাত ভেজে।

লুৎফুন্নাহার মুখ দিয়ে “ওহহহ” বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এতো বড় একজন ডাক্তার,এতো টাকা যার। সে নতুন শশুরবাড়িতে এসে বাসি ভাত ভাজা খেয়েছে! এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে।
লুৎফুন্নাহারের লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।

উর্বী মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,” বড়লোক জামাইকে ভাত ভাজি খাইয়েছি দেখে লজ্জা পাচ্ছো? উনি তেমন মানুষ নয়। বাদ দাও।”

_জানি তো, জামাইটা পেয়েছি সেরা! ওবাড়ির সবাই সেরা। কপাল তোর বুঝলি। হ্যা রে! ছেলেমেয়ে তিনটা তোকে পছন্দ করে? জালায় না তো তোকে?

_নাহ,ওরাও ওদের বাবার মতো।

লুৎফুন্নাহার খুব খুশি হয়। বলে,”হ্যা। দেখেছি তো। ছোটো টা খুব মিষ্টি। ওকে আমার ভালোবাসা দিস গিয়ে। আচ্ছা ভালো কথা, আমি কি পিঠা বানিয়ে দেবো কিছু? ঝাল পিঠা? যাওয়ার সময় নিয়ে যাবি ওবাড়ির জন্য?

_কোথায় যাবো আমি?
উর্বী মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

তহুরা অবাক হয়ে তার ননদের দিকে তাকায়, বলে,”তোর বাড়িতে, আবার কোথায়?”

_আমি কোথাও যাচ্ছি না ভাবী। আর তোমার রাওনাফ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে দেখো সে পিঠা নিয়ে যাবে কি না।

কথাটি বলে উর্বী রান্নাঘর থেকে বের হয়। তহুরা আর লুৎফুন্নাহার একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ।

***
নাস্তা সেরে রাওনাফ রুমে ঢোকে। উর্বী তার দিকে একবার তাকিয়ে বলে,”আপনার জামা কাপড় শুকিয়ে ইস্ত্রি করে দিয়েছি।”

রাওনাফ কিছু না বলে ফোনটা উর্বীর দিকে দিয়ে বলে,”মা ! কথা বলো।”

উর্বী কি করবে বুঝতে পারে না ‌। সে ফোনটা নেয়। ভিডিও কলে রওশান আরা। রওশান আরা কটমট দৃষ্টি দিয়ে উর্বীর দিকে তাকিয়ে আছে। উর্বী সালাম দেয়। রওশান আরা সালামের জবাব দিয়ে বলে,
” আগের বার যে তেঁতুল নিয়ে এসেছিলে ও বাড়ি থেকে সেটা ফুরিয়ে গেছে। তোমার ছোটো জা,পোয়াতি মানুষ খেতে চাইছে খুব। নিয়ে এসো ‌। আর হ্যা শোনো, বেয়ানকে বলো শুটকি দিয়ে দিতে আমার জন্য। আর পিঠাও নিয়ে এসো। আর হ্যা, রাওনাফের আবার রাজশাহী যেতে হবে,ওর সাথে পারলে আজই ফিরে আসো। তোমার ননদেরাও এসেছে। বাপের বাড়ি বেরাতে এসে এখন কি তারা রান্না করে খাবে?”

উর্বী চুপ করে তাকিয়ে থাকে।
রওশান আরা বলে,”তোমার শর্মী খুব ক্ষেপে আছে তোমার উপরে। কিভাবে তার রাগ ভাঙাবে জানি না। এখন রাখো,আমার ছেলের যেনো কোনো অযত্ন না হয়।”

রওশান আরা ফোন কেটে দেয়। উর্বীর খুব হাসি পায় তার শাশুড়ির রাগী রাগী হওয়ার ভান দেখলে।

রাওনাফ উর্বীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলে, ” আমরা তাহলে দুপুরে খেয়েই রওনা দেই! কি বলো!”

উর্বী অবাক হয়ে রাওনাফের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে নিশ্চুপ।

রাওনাফ উর্বীর দিকে একটু এগিয়ে আসে।
“কিছু বোলছো না যে!

উর্বী বলে,”আপনি কিন্তু জেনে শুনে ভুল করছেন,আমি বারবার বলছি আপনাকে!”

রাওনাফ ঘুরে উর্বীর বিছানায় বসে পরে।

উর্বী বলে,”ভুল করছেন আপনি”

রাওনাফ বলতে থাকে,”সমস্যা কোথায়? কেনো নিজেকে নিচু করে দেখছো? দ্যা প্রবলেম ইজ,ইউ আর নট ভার্জিন, রাইট? সো হোয়্যাট! আমিও তো ভার্জিন নই। তিনটা বাচ্চার বাবা আমি!”

উর্বী ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলে,”মজা করছেন আপনি?”

_না।
ঠান্ডা গলায় জবাব দেয় রাওনাফ। তারপর বলে ওঠে,”শরীর কখনো নোংরা হয়না মৃদুলা উর্বী। যেটা হয় সেটা আমাদের মন আর মস্তিষ্ক। তোমার কি মনে হয়? আমি গতকাল রাতে তোমার অতীত জানবার জন্য তোমার অতীত জানতে চেয়েছি? না, আমি তোমার অতীত জানতে চেয়েছি যাতে তুমি বলতে পারো। আমার যা জানার, বোঝার, আমি আমীরুনের থেকে জেনে নিয়েছি।

উর্বী চুপ। রাওনাফ আবার বলে ওঠে,”গুছিয়ে নাও। ঐ বাড়ির কিছু মানুষ তোমাকে মিস করছে। ঐ বাড়ির ইট গুলো, যারা তোমাকে স্বস্তি দিয়েছে তারা তোমাকে মিস করছে, হয়তোবা তোমাকে ওদের প্রয়োজন।”

_আর আপনার?

উর্বী তাকিয়ে আছে রাওনাফের দিকে উত্তরের অপেক্ষায়।

রাওনাফ একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে, কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ধীরে তবে স্পষ্ট করে বলে,”হয়তোবা আমারো তোমাকে প্রয়োজন মৃদুলা উর্বী। হয়তোবা সম্পর্ক টা কেবল কফির কাপ এগিয়ে দেওয়া,গায়ে চাদর টেনে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি।”

উর্বী কিছুক্ষণ রাওনাফের মুখপানে চেয়ে থেকে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রাওনাফ শুয়ে পরে। তার দু’চোখ ঘুমে জরিয়ে যাচ্ছে। কাল রাত ঘুম হয়নি তাই।

উর্বী দৌড়ে সোজা কলঘরে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে সে কাঁদতে থাকে।
পেছন থেকে তহুরা উর্বীর কাঁধে হাত রাখে।
উর্বী তাকায়।
তহুরা চিন্তিত হয়ে বলে,”কাঁদছিস কেনো?”

উর্বী নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”শুটকি বানিয়েছিলে না? দিয়ে দিও। আমার শাশুড়ি খেতে চেয়েছেন। আর ভাইয়াকে বলো গাছ থেকে লোক খাটিয়ে পাকা তেঁতুল তুলে আনতে। ছোটো জা’য়ের জন্য নেবো। আমাদের বড় মোরগটা জবাই করে রান্না করে দিও ভাবী। আমার ননদদের বাচ্চাদের জন্য নিয়ে যাবো। আর হ্যা, ভাইয়াকে বলো লোকজন দিয়ে পুকুর থেকে গলদা চিংড়ি ধরতে, তোমার রাওনাফ ভাইয়ের খুব পছন্দ শুনেছি। দুপুরে খেয়ে যাবো আমরা।”

তহুরা উর্বীর দিকে তাকিয়ে আছে। উর্বী কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে তহুরাকে জরিয়ে ধরে,”আমি, আমি ওনার সাথে যেতে চাই ভাবী। ভাবী আমি ওনার সাথে থাকতে চাই, সংসার করতে চাই ওনার সাথে।”
তহুরা উর্বীর মাথায় হাত বুলাতে থাকে। সে মনে মনে আল্লাহকে বলে,”আল্লাহ! তুমি এই মেয়েটাকে খুব সুখী রাখো,খুব সুখী!”

চলমান….

[ কমেন্ট বক্স খোলা, মতামত জানিয়ে যাবেন। আর হ্যা, আগামীকাল গল্প আসবে না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here