#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_১১
#Esrat_Ety
উর্বী লজ্জিত ভঙ্গিতে বসে আছে। সে তার গায়ে একটা কালো রঙের শাল জরিয়ে রেখেছে। কাল রাতে তার জন্য কতগুলো মানুষের ঘুম ন’ষ্ট হয়েছে। এটা ভেবেই তার সুপ্ত অপরাধবোধ হচ্ছে। মোহনার কাছ থেকে সে জানতে পেরেছে সব। কাল রাতের পর আর জ্বর আসেনি। তবে শরীরটা অস্বাভাবিক ক্লান্ত। বিছানা থেকে উঠে সে বারান্দায় হাটতে থাকে। সামিউল এদিকেই আসছিলো। উর্বীকে বারান্দায় দেখে দাঁড়িয়ে পরে। উর্বীর সামনে পরলেই তার ভিষন লজ্জা লাগে। সহজে সে উর্বীর সামনে পরে না। জড়তা কাটিয়ে সে উর্বীকে বলে,”আপনার জ্বর সেরেছে…….ভাবী?”
উর্বী হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়। এই লোকটাকে কোনো এক কারণে উর্বী বেশ পছন্দ করে। স্বভাবে ভীতু শ্রেনীর পুরুষ হলেও অন্তরার প্রতি সামিউলের ভালোবাসা দেখেই সামিউলকে ভালো লাগে উর্বীর।
সামিউল চলে যায়। যে পথ দিয়ে সামিউল গিয়েছে সে পথ দিয়ে রাওনাফকে আসতে দেখা যায়। উর্বী মানুষটার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়, বিয়ের পর থেকে সমঝোতা হচ্ছে নাকি হচ্ছে না উর্বী বুঝতে পারছে না,তবে উর্বীর জন্য রাওনাফ নামের এই লোকটার ভোগান্তি বেড়েই চলছে। অবশ্য এসব তো উর্বী জানতোই। রাওনাফ উর্বীকে দেখে বলে,”এখন কি অবস্থা! হাঁটাহাঁটি শুরু করে দিয়েছো দেখছি!”
-আমি ঠিক আছি। জ্বর আর ওঠেনি।
নিচু স্বরে বলে ওঠে উর্বী।
-বেশ ভালো। তাহলে জ্বরের ওষুধ টা স্কিপ করে যেও। ওটা জ্বর থাকলেই খেয়ো। আর এভাবে জ্বর উঠলে আন্দাজে কোনো ওষুধ খাওয়া উচিৎ না।
উর্বী মুচকি হাসে। বাইরে থেকে সকালের মিষ্টি রোদ উর্বীর মুখের উপরে পরায় উর্বীকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। তার চুলগুলী এলোমেলো হয়ে আছে, চুলে বিনুনি করা ছিলো।
উর্বী বলে ওঠে,”কাল রাতে আপনাদের অনেক বিরক্ত করেছি!আসলে আমার এরকম হয় মাঝে মাঝে।”
-হুম বুঝতে পেরেছি। এভাবে হঠাত করে জ্বর আসা আবার হঠাত করে চলে যাওয়া স্বাভাবিক কোনো বিষয় না।
-এরকম আমার ছোটোবেলা থেকেই হয়।
-তোমার জ্বরের মুড সুইং হয় সম্ভবত।
উর্বী হাসে। রাওনাফের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আপনার হাতের ব্যাথা সেরেছে?”
রাওনাফ নিজের হাত উল্টে পাল্টে বলে,”হাতে ব্যাথা পেয়েছি কিনা সেটাই মনে পরছে না। যাও গিয়ে রেস্ট নাও। আমরা বিকেলে চলে যাবো।”
***
শর্মী উর্বীর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। উর্বী বলে, “এসো এদিকে এসো। কিছু লাগবে?”
-আমীরুন খালামনিকে দেখেছেন?
-আমীরুন আপা তো বাইরে গিয়েছেন। কি দরকার আমায় বলো।আমি ফ্রি আছি।
-আসলে আমার চুল বেধে দেয় আমীরুন খালামনি। আমি ভাইয়া আপির সাথে বের হবো।
-এজন্য আমীরুন আপাকে ডাকতে হবে? এসো আমি বেধে দিচ্ছি।
শর্মী এদিক ওদিক তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ঘরে ঢোকে। আপি ভাইয়া যদি দেখতে পায় এই মেয়েটা তার চুল বাধছে তাহলে নির্ঘাত ব’ক’বে।
তবুও শর্মী ঘরে ঢোকে, শর্মী বড়দের ফিরিয়ে দিতে পারে না কখনোই। ঘরে ঢুকে উর্বীর কাছে এসে বসে সে।
নিচু স্বরে বলে,
-আপনার জ্বর সেরেছে?
-হ্যা। দেখি মাথা টা সোজা করো। দুটো বেনী করবো না একটা?
-দুটো। আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-হ্যা অবশ্যই বলো।
-না থাক। কি দেখে হাসছিলেন ফোনে?
-একটা খুবই মজার কমেডী শো। তুমি দেখবে?
শর্মী কিছু বলার আগেই উর্বী তার ফোন টা শর্মীর হাতে দেয়।
শর্মী একটু পরপর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। উর্বী শর্মীর ছেলেমানুষি দেখে খুবই মজা পাচ্ছে। এমন সময় শায়মী দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শর্মী কে ডাকে।
উর্বী বলে,”এসো ভেতরে এসো। ”
-এটা আমার পাপার ঘর। আপনার আমাকে আসতে বলার প্রয়োজন নেই।
এতো বড় কড়া কথাটি শায়মী খুবই ঠাণ্ডা গলায় বলে।
উর্বী চুপ করে থাকে। শর্মী মোবাইল টা রেখে উঠে দাঁড়ায়।
নাবিল শর্মীর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। শর্মী বুঝতে পারছে না ভাইয়া এমন করছে কেনো!
-আজকাল নতুন মায়ের সাথে বেশ ভাব জমিয়েছিস তাইনা শর্মী!
দাঁত খিচিয়ে বলে ওঠে নাবিল।
-আমিতো শুধু চুল বাধতে গিয়েছিলাম ভাইয়া।
-ওহহ। আপনি চুল বাধতে গিয়ে নতুন মায়ের কোলে উঠে হাসাহাসি করছিলেন?
শর্মীর মন খারাপ হয়ে যায়। ভাইয়া তাকে খুবই কড়া করে কথাগুলি বলছে।
“উনি কিন্তু অতটাও খারাপ না ভাইয়া।” শর্মি খুব ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে কথাটি।
নাবিল কয়েক মূহুর্ত শর্মীর দিকে শীতল দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে,
-শায়মী ওকে চুপ থাকতে বল নয়তো গাড়ি থেকে ওকে ছু’ড়ে বাইরে ফেলে দেবো।
শর্মী নাবিলের কথা শুনে চুপ করে বসে থাকে।
***
শাফিউলের কলেজ থেকে ট্রান্সফার লেটার এসেছে। তাকে চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য কলেজে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে যেতে হবে সেখানে। রওশান আরা মোহনাকেও সাথে যাওয়ার আদেশ দিয়েছেন। মোহনা বুঝতে পারছে না এতো বড় সংসার ছেড়ে কিভাবে সে অন্যখানে গিয়ে থাকবে।
রওশান আরা তার শাশুড়িকে বলে,”মা,আমি গেলে এদিকটা কে সামলাবে?”
-কেনো! আমার বড় ছেলের বৌ। এখন থেকে সে সব সামলাবে।
মোহনা উর্বীর দিকে তাকায়। রওশান আরা মোহনাকে বলে,”এটা তোমার সংসার না, স্বামীর সাথে যেখানে থাকবে সেটাই তোমার সংসার। একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীই সবকিছু।”
রওশান আরা উর্বীর দিকে তাকিয়ে মোহনাকে বলে,”আমার বড় বৌমার উপরে আমার আস্থা রয়েছে। তুমি নিশ্চিন্তে শাফিউলের সাথে যাও মেজো বৌমা।”
দু একদিনের মধ্যে সব গুছিয়ে নিয়ে মোহনা আর শাফিউল চলে যায়। বাড়িতে দু দুজন মানুষের অনুপস্থিতি বেশ উপলব্ধি করা যাচ্ছে।
মোহনা প্রতিদিন ফোন করে বাড়ির সবার সাথে কথা বলে। তারা দুজন সেখানে বেশ ভালোই আছে নিজেদের ছোট্ট সংসার নিয়ে।
শর্মীর ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হতে চলেছে। তাকে সবসময় তার পড়ার টেবিলেই পাওয়া যায়।
শায়মী আর শান্তর মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে। তারা দুজনেই জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। এখন দুজনেই মন লাগিয়ে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্তরা খুবই যত্নের সাথে তার দুই রুমের সংসার টাকে সাজাচ্ছে। সামিউলের একটা বিজ্ঞাপন কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। খুবই ভালো বেতন। তারাও বেশ সুখে আছে। তবে রওশান আরা এখনও তাদের মেনে নেন নি।
***
আগামী কাল থেকে উর্বীর অফিস শুরু। কিছু জরুরী কাগজপত্র দেখে উর্বী ফাইলে ঢুকিয়ে রাখে।
শর্মী এসে বারবার বাইরে থেকে উকি দিচ্ছে। উর্বী অনেক আগেই তা খেয়াল করেছে। সে ঠান্ডা গলায় ডাকে, “শর্মী! এদিকে এসো।”
শর্মী ঘরে ঢোকে। তার হাতে অংক বই। উর্বী তাকে বলে,”কিছু বলবে?”
-পাপার কাছে এসেছিলাম।
ঝটপট উত্তর দেয় শর্মী।
-কিন্তু তোমার পাপা তো তোমার দাদুর ঘরে। তোমার দাদুর প্রেশার চেক করতে গিয়েছেন। মা অসুস্থ বোধ করছেন হঠাৎ।
-ও আচ্ছা।
শুকনো গলায় বলে শর্মী চলে যেতে গেলে উর্বী বলে ওঠে,
-অংক নিয়ে কোনো প্রবলেম হলে আমায় বলতে পারো। আমি অংক ভালোই বুঝি।
শর্মী উর্বীর দিকে ফিরে তাকায়। তার জ্যামিতি চ্যাপ্টারে একটু সমস্যা হয়েছে। এটা কাল সন্ধ্যায় তার টিচার আর রাতে তার পাপাও বুঝিয়ে দিয়েছিলো। এখন আবার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। নাবিল আর শায়মী কেউ বাসায় নেই নয়তো সে তাদের কাছেই যেতো। শর্মী ভাবে, তার পাপাকে জিজ্ঞেস করলে যদি পাপা বিরক্ত হয়। তার চেয়ে উর্বীর থেকে বুঝে নেওয়া যাক।
শর্মী বিছানার একপাশে বসে তার অংকের বইটা উর্বীর দিকে এগিয়ে দেয়।
উর্বী বইটা হাতে নিয়ে বলে,”ওহ এইটা। এইটা তো পানির মতো সহজ। এদিকে এগিয়ে বসো। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
শর্মী এগিয়ে বসে।
রাওনাফ এসে দরজার বাইরে থেকে দেখে অবাক হয়ে যায়। শর্মী চোখ বড় বড় করে উর্বীরর দিকে তাকিয়ে উর্বীর কথা শুনছে।
রাওনাফ ঘরে ঢোকে না, সেখান থেকে সরে যায়।
***
রওশান আরা চোখ বন্ধ করে তার আরাম কেদারায় শুয়ে আছেন। উর্বী এসে তাকে ডাকে,”মা আমায় ডেকেছিলেন?”
-হু। এদিকে এসো। বসো।
উর্বী রওশান আরার কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে। রওশান আরা উর্বীকে দেখে,কি সুন্দর মুখশ্রী! দেখলেই রওশান আরা এক অদ্ভুত টান অনুভব করে। প্রথম দিন থেকেই।
রওশান আরা বলেন,”রাওনাফ এসেছে?”
-না,এখনো ফেরেননি।
-আচ্ছা। আজ তোমার ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো। তুমি নাকি ওবাড়িতে যেতে চাচ্ছো না। কোনো সমস্যা?
-না মা আসলে নতুন চাকরি,এখনি ছুটিছাটা নিতে চাচ্ছি না।
-বুঝলাম। কিন্তু তাই বলে নতুন বিয়ে হয়েছে সেই মেয়ে আর মেয়ে জামাই তাদের বাড়িতে যায়নি,বিয়ের দেড় মাস হয়ে গিয়েছে। এটা তো ভালো দেখায় না মা। সবচেয়ে বড় কথা তোমার ছোটো বোনের বিয়ে।
উর্বী চুপ করে থাকে। রওশান আরা বলে,”রাওনাফ কি যেতে চাচ্ছে না? এরকম কিছু?”
-না মা,সেরকম টা না।
-তাহলে আমি রেজাউল কে ফোন করে বলছি তোমরা সামনের সপ্তাহে যাবে। রাওনাফ আসলে আমার ঘরে পাঠিয়ে দিও। এখন তুমি যাও।
উর্বী উঠতে যাবে অমনি রাওনাফ এসে রুমে ঢোকে। রওশান আরার দিকে তাকিয়ে বলে,”মা আমিরুনকে কোথাও দেখছি না!”
-আমিরুন একটু দেশের বাড়ি গিয়েছে। তার বাবা অসুস্থ।
-ও আচ্ছা।
-তুই কখন এলি। আর আমিরুনকে ডাকছিলি কেনো।
-এই তো এইমাত্র এসেছি,আমিরুনকে ডাকছিলাম একটু কফির জন্য।
-সব সময় আমিরুন আমিরুন করিস কেনো। কিছু লাগলে বৌমাকে তো বলতে পারিস।
রাওনাফ উর্বীর দিকে তাকায়।
রওশান আরা বলেন,”বৌমা তুমি রাওনাফ আর আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এসো। আর রাওনাফ তুই বোস, তোর সাথে আমার কথা আছে।”
***
অফিস থেকে বেরিয়ে গেইটের কাছে এসে উর্বী দাঁড়িয়ে পরে। রাওনাফের গাড়ি ঠিক অফিস ছুটির টাইমেই এসে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। রাওনাফের নির্দেশে আব্দুল ভাই প্রতিদিন উর্বীকে অফিসে দিয়ে আসে,নিয়ে যায়।
গাড়ির দরজা খুলে উর্বী দেখে ভেতরে শর্মী বসে আছে। উর্বী কিছুটা অবাক হয়ে বলে,”তুমি!”
শর্মী তার হাতের ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মাথা তুলে উর্বীর দিকে তাকিয়ে বলে,”বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে গিয়েছিলাম।”
উর্বী উঠে বসে। আব্দুল ভাই গাড়ি স্টার্ট করে। শর্মী আবারও ফোনে মনোযোগ দেয়। উর্বী শর্মীর হাতের ফোনটার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আবার দেখছো এটা! কতবার দেখবে এটা?”
শর্মী লাজুক হেসে বলে,”আমার খুব পছন্দের মুভি।”
উর্বী শর্মীর দিকে তাকায়। দিনকে দিন মেয়েটা তার সাথে খুবই স্বাভাবিক আচরণ করছে। সে ঠান্ডা গলায় বলে,”এই মুভিটার নাম কি?”
শর্মী উৎফুল্ল হয়ে বলে,”বিউটি এ্যান্ড দ্যা বিস্ট।”
_এটা ফেইরি টেইল? আমি আসলে দেখিনি। আমরা ছোটো থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সিসিমপুর,মিনা রাজু,মনের কথা,এসব দেখে বড় হয়েছি। এগুলো সম্পর্কে ধারণা নেই। আচ্ছা এই লোকটা এমন দেখতে কেনো? পশুর মতো দেখতে, রাজকুমারীর সাথে এমন ব্যবহার করছে কেনো? এর রাজকুমার কোথায়?
_এটাই রাজকুমার। ও শুরুতে অভিশপ্ত থাকে। কিন্তু খুব ভালো। নায়িকাকে পরে ভালোবাসে।
শর্মী খুব আন্তরিকতার সাথে বলতে থাকে উর্বীকে।
উর্বী হেসে বলে,”তুমি ভালোবাসা বোঝো?”
শর্মীর মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সে তো কিছু কিছু বোঝে। উর্বী বলে,”এই হিরো কি এভাবেই থাকবে? এমন পশুর মতো দেখতে থাকবে?”
_না না,ও তো মানুষই। রাজকুমার ও। পশুর রূপ নিয়ে আছে এখন।
উর্বী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ম্লান হেসে বলে,”এসব ফেইরি টেলেই সম্ভব। রাজকুমার বিস্টের বেশে থাকে। বাস্তবে কি হয় জানো? উল্টো হয়। বাস্তবে রাজকুমারের বেশে একটা বিস্ট আসে, একটা পশু থাকে রাজকুমার সেজে। তারা রাজকুমারীদের কষ্ট দেয় শুধু।”
শর্মী অবাক হয়ে উর্বীর দিকে তাকিয়ে থাকে। উর্বী কথাটা বলে নিজেই চ’ম’কে ওঠে! এতটুকু বাচ্চা মেয়ের সাথে কিসব কথা বলছে সে!
প্রসঙ্গ পালটে বলে,”ফুচকা খাবে?”
ফুচকার কথা শুনেই শর্মীর জিভে পানি চলে আসে। কিন্তু সে আমতা আমতা করে বলে,”পাপা!”
_তোমার পাপা জানবে না। আমি বলবো না, আব্দুল ভাই আপনি বলবেন?”
আব্দুল হেসে মাথা নাড়ায়। সেও বলবে না।
উর্বী বলে,”ঠিকাছে তবে গাড়ি থামান।”
সেদিন বিকেলটা উর্বী শর্মী নামের সরল কিশোরীর সাথে দারুন উপভোগ করেছে। দুজন একসাথে ফুচকা খেয়েছে, কিছু কেনাকাটা করেছে।
রওশান মঞ্জিলে ফিরে হাসিহাসি মুখ করে শর্মী উর্বীর দিকে তাকায়। কোনো এক অজানা কারনে শর্মীর এই মহিলাকে ভয় লাগছে না,খারাপ লাগছে না। বরং ভালো লাগছে কিছুটা। কিছুটা নয়। বেশ ভালো লাগছে।
সদর দরজা খুলে দেয় আমীরুন। হাতের শপিং ব্যাগপত্র নিয়ে উর্বী আর শর্মী ভেতরে ঢোকে। নিচতলার লিভিং রুমে শায়মী আর নাবিল চুপচাপ বসেছিলো। শর্মীকে উর্বীর সাথে দেখে নাবিল ক’ট’ম’ট দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। শর্মী ভাইয়ার দৃষ্টি দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে উর্বীর থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে দোতলায় চলে যায়।
***
রাওনাফকে ঘরে ঢুকতে দেখে উর্বী উঠে দাঁড়ায়। রাওনাফ নিচুগলায় বলে ওঠে,”কফি খেয়ে এসেছি। আনতে হবে না।”
উর্বী ম্লান হেসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তারা হচ্ছে কফি কাপল। সম্পর্কটা কফি দেওয়া নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। রোজ চব্বিশ ঘন্টায় স্বামীর প্রতি কেবল মাত্র এই একটা দায়িত্ব এসে বর্তায় উর্বীর ঘাড়ে। আজ তাতেও ছুটি!
হাতের ব্যাগটা আলমারিতে তুলে রেখে রাওনাফ হাত ঘড়ি খুলে রাখে। আড়চোখে উর্বীকে একপলক দেখে স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে,”অফিসে কেমন কাটছে তোমার!”
_ভালো।
উর্বী একশব্দে জবাব দেয়। রাওনাফ আর কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যায়। আলমারি খুলে সে দাঁড়িয়ে থাকে। পুরো আলমারি ভর্তি উর্বীর শাড়ি! তার জামাকাপড় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। না চাইতেও উর্বীর শাড়ি গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে সে নিজের পোশাক খুঁজতে থাকে। উর্বী বুঝতে পেরে এগিয়ে গিয়ে বলে,”আপনার জামাকাপড় নিচের সাড়িতে। আমীরুন এসে গুছিয়ে দিয়ে গিয়েছে। দাঁড়ান আমি বের করে দিচ্ছি।”
কথাটি বলে উর্বী সামনে এগোয়,রাওনাফ পেছনে এগোতেই উর্বীর সাথে ধাক্কা লেগে উর্বী পরে যেতে নেয় ঠিক তখনই রাওনাফ শক্ত করে উর্বীকে ধরে ফেলে। দু’জনে বিব্রত হয়ে কয়েক মূহুর্ত একে অপরকে দেখে। উর্বীর লতানো কোমর থেকে রাওনাফের হাতের বাঁধন আলগা হতেই উর্বী লাফিয়ে দুকদম ডানে সরে দাঁড়ায়। রাওনাফের চোখে মুখে অস্বস্তি। উর্বী ঝটপট করে রাওনাফের ঘরে পরার পোশাক বের করে তার হাতে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
রাওনাফ ফ্রেশ হয়ে চলে যায় ছেলেমেয়েদের খোঁজ নিতে।
রাওনাফ করিম খানের তিন ছানা নিচতলার লিভিং রুমে বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে বসে আছে। আমীরুন দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে পাশে। রাওনাফ গম্ভীর কন্ঠে তার ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,”আজ আমি একটু আগে ভাগে চলে আসায় খুব অসুবিধা হয়ে গেলো তোমাদের তাই না? ভেবেছিলে দুধ না খেয়েই চুপচাপ কেটে পরবে।”
তিন ছানার কেউ কোনো কথা বলে না। রাওনাফ আমীরুনকে বলে,”শাস্তিস্বরূপ ওদের দু গ্লাস দুধ খাইয়ে ছাড়বি আজ।”
_জে,আইচ্ছা ভাইজান!
হাসতে হাসতে জবাব দেয় আমীরুন। রাওনাফ গম্ভীর কন্ঠে বলতে থাকে,”একটু নাইট ওয়াকে বেড়োবো। আমার ঘরেও এক গ্লাস দুধ দিয়ে আয়। বলবি খেয়ে নিতে।”
আমীরুন মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। রাওনাফ গ্রে কালারের জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
বারান্দায় কিছু সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে উর্বী রুমে ঢোকে। বিছানা ঠিক করে আয়নার সামনে গিয়ে চুল আঁচড়ে নেয়। তখনই দরজায় টোকা পরে,বাইরে থেকে আমীরুন নিচু গলায় বলে ওঠে,”আসবো ভাবী?”
_এসো।
আমীরুন ঘরে ঢোকে। তার হাতে একটা দুধের গ্লাস। উর্বী গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানে এটা কে পাঠিয়েছে। তবুও আমীরুন গলার স্বর উঁচু করে আহ্লাদী গলায় বলে ওঠে,”ভাইজান পাঠাইলো ভাবী।”
উর্বী জানে এখন শুরু হবে আমীরুনের কন্ঠে তার বড় ভাইজানকে নিয়ে রাঙিয়ে চাঙিয়ে কথা। সে স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে,”ঠিকাছে! ওটা ওখানে রেখে দাও।”
আমীরুন তার ঠোঁট নাড়াতে শুরু করে,”না না। এইটা আপনি এখন আমার সামনে দাড়ায়া থাইকা খাইবেন। বড় ভাইজান তো বারবার করে বলে দিছে, “আমীরুন,তোর বড় ভাবীকে না খাইয়ে আসবি না খবরদার।”
উর্বীর বেশ হাসি পাচ্ছে আমীরুনের মিথ্যা কথা গুলো শুনে। রাওনাফ কখনোই এভাবে বলেই নি। কিন্তু আমীরুন তার বড় ভাইজানকে উর্বীর সামনে অত্যন্ত ভালো ডেডিকেটেড স্বামী প্রমাণ করেই ছাড়বে।
***
পরপর দু’টো অপারেশন শেষ করে আধাঘণ্টার জন্য নিজের কেবিনে ঢুকে সার্জিক্যাল এপ্রোন টা খুলে ফেলে চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় রাওনাফ। কপালে ডানহাত টা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকে দীর্ঘসময়। বাইরে থেকে ডক্টর কিশোর উঁকি দিয়ে বলে,”মে আই কাম ইন?”
_হ্যা।
রাওনাফ চোখ মেলে তাকায় । কিশোর ভেতরে ঢুকে বলে,”ওপেন হার্ট সার্জারির পেশেন্টের কাছ থেকে দশহাজার টাকা বিল কম রাখার নির্দেশ তুমি দিয়েছো?”
_হ্যা। সো হোয়াট?
রাওনাফ বলে ওঠে।
_না, কিছুই হয়নি। তবে আমরা কেউ জানি না তো!
_প্রয়োজন মনে করিনি। অসুবিধা হলে আমার প্রফিট থেকে দশ হাজার কেটে রেখো।
_ভুল ভাবছো রাওনাফ। এমন কিছু মিন করিনি। বাই দ্যা ওয়ে, নেক্সট ওটি কটায় তোমার?
_দু ঘন্টা পরে।
কিশোর তথ্যটা জেনে চলে যায়।
ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দে রাওনাফ সেদিকে তাকায়। হাত বাড়িয়ে যন্ত্রটাকে তুলে নিয়ে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে শর্মীর ইংলিশ ম্যাম রাবিয়া রহমান বলে ওঠে,”আমি কি ডক্টর রাওনাফ করিমের সাথে কথা বলছি?”
_ইয়েস!
_আমি শর্মীর ইংলিশ টিচার রাবিয়া রহমান বলছি।
রাওনাফের ভ্রু কুঞ্চিত হয়। জিজ্ঞেস করে,”ম্যাম আপনি হঠাৎ! ইজ এভরিথিং ফাইন?”
_নট এ্যাট অল । শর্মী হঠাৎ খুবই অসুস্থ হয়ে পরেছে।
রাওনাফ উঠে দাঁড়ায়। উদ্বিগ্নতার সাথে চেঁচিয়ে ওঠে,”মানে! কি হয়েছে!”
_পেটে ব্যাথা।
_ঠিক আছে! আমি আসছি। ওকে বিশ মিনিট দেখে রাখুন। আমি এক্ষুনি আসছি।
ফোন কেটে রাওনাফ তাড়াহুড়ো করে পোশাক পাল্টে নিতে থাকে। দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় ডক্টর লামিয়া, স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ,সিটি মেডিকেয়ার হসপিটালের। রাওনাফকে দেখে বলে,”কোথাও যাচ্ছো তুমি? তোমার তো ও.টি. আছে দুই ঘণ্টা পরে।”
_শর্মী সামহোয়াট সিক! স্কুল থেকে ফোন দিয়েছে।
_ও গড! আচ্ছা যাও যাও!
লামিয়া দরজা থেকে সরে কেবিনে ঢোকে। রাওনাফ বলে,”কিছু বলবে?”
_হ্যা,ওই আমার একটু পরে ও.টি. আছে। আমি এ্যানেস্থেসিয়া স্পেশালিস্ট খাইরুল ইসলামকে কল করতে চাচ্ছি। মাহবুব আউট অব দ্যা সিটি যেহেতু। তুমি যদি পারমিশন দাও।
রাওনাফ অবাক হয়ে বলে,”ডেকে নাও। খাইরুলের সাথে তো আমার শত্রুতা নেই যে আপত্তি করবো!”
_না,তবুও। তুমিও তো একজন মালিক এই হসপিটালের।
রাওনাফ বলে,”ডেকে নাও।”
তারপর তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।
***
উর্বীর হাতে আজ তেমন কোনো কাজ নেই। অবশ্য অফিস জয়েনিং-এর পর থেকে কখনই কাজের ব্যাস্ততা ছিলো না তার। টুকটাক প্রজেক্ট নিয়ে ফিল্ড ম্যানেজারদের সাথে মিটিং আর কিছু ফাইলে সাইন। কাজ বলতে এতটুকুই। উর্বীদের এনজিওটা বহুমুখী কাজ করে থাকে।
হাত ঘড়িতে বারবার সময় দেখছে সে। চেহারায়ও নেমে এসেছে বিরক্তির ছাপ। তার কারণ আজ উর্বী একটু অসুস্থ। সকাল থেকেই ব্লাড প্রেশার অস্বাভাবিক লো মনে হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রওশান আরা ফোন দিয়েছিলেন প্রায় ঘন্টাখানেক আগে। উর্বী খেয়ালই করলো না! উর্বী কল ব্যাক করে কথা বলে নেয়। কোনো এক অদ্ভুত কারনে রওশান আরা নামের বৃদ্ধা মহিলাটির উর্বীর প্রতি ঢেলে দেওয়া অস্বাভাবিক মমতা উর্বী উপেক্ষা করতে পারে না। অবশ্য ভালোবাসা,মায়া জিনিসটা উর্বী কখনোই উপেক্ষা করতে পারেনি। যারা উপেক্ষা করতে পারে তারা বেঁচে যায়,যারা পারে না তারা জরিয়ে যায়, নিজেদের তুলে দেয় সর্বনাশের মুঠোয়।
দরজায় এসে দাঁড়ায় উর্বীর কলিগ মনিরুল ইসলাম। উর্বী বলে ওঠে,”আরে মনির ভাই! ভেতরে আসুন। ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?”
মনিরুল হেসে বলে,”আপা আমাদের নতুন অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট জয়েন করেছে। তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো আপনাকে। তাকে নিয়ে এসেছি।”
উর্বী উঠে দাঁড়ায়,”হ্যা নিশ্চয়ই! ওনাকে নিয়ে আসুন।”
মনিরের পিছু পিছু একজন সাতাশ-আঠাশ বছরের ছেলে উর্বীর কেবিনে ঢোকে। ছেলেটি উর্বীকে বিনয়ের সাথে সালাম দেয়। উর্বী ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিয়ে সালামের উত্তর দেয়। মনিরুল ইসলাম উর্বীর সাথে ছেলেটির পরিচয় করিয়ে দিতে বলে ওঠে,”আপা ওর নাম হচ্ছে উচ্ছাস! ও এখন থেকে আমাদের অফিস এ্যাসিস্ট্যান্ট!”
উর্বী যেনো কেঁ’পে ওঠে উচ্ছাস নামটি কানে যেতেই। মুখভঙ্গি মুহুর্তেই বদলে যায় পুরোপুরি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ঠোঁট কাঁপছে তার।
উচ্ছাস নামের ছেলেটি উর্বীর দিকে বিনয়ী হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। উর্বী তার দিকে তাকায়। সেই পরিচিত ব্যাথাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মস্তিষ্কে।
মনিরুল ইসলাম বলতে থাকে,”উচ্ছাস! ইনি হচ্ছেন তোমার সিনিয়র। মৃদুলা উর্বী।”
***
শর্মীর দিকে তাকিয়ে থেকে রাওনাফ গভীর নিঃশ্বাস ফেলে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। শর্মী পেটে হাত চেপে কাতরাচ্ছিলো, নরম গলায় বলে ওঠে,”ভীষণ পেটে ব্যাথা করছে আমার পাপা।”
_চলো, বাড়িতে চলো। মেডিসিন দিয়ে দেবো। সেরে যাবে।
মেয়েকে পাঁজাকোলা করে স্কুলের কমনরুম থেকে বের হয়ে গেইটের কাছে যায়। গেইটের বাইরে রাওনাফের গাড়িটা রাখা। আব্দুল দরজা খুলে দিতেই শর্মীকে বসিয়ে নিজেও বসে। আব্দুলকে বলে,”বাড়িতে চলো। ওকে বাড়িতে রেখে আমি হসপিটাল যাবো।
শর্মীকে বাড়িতে রেখে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে আমীরুনকে সব বুঝিয়ে দিয়ে রাওনাফ গাড়িতে এসে বসে। আব্দুল গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগেই রাওনাফের ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ বলে ওঠে,”আমি কি ডক্টর রাওনাফ করিম খানের সঙ্গে কথা বলছি?”
_ইয়েস,হু’স দিজ?
_স্যার,আমি দিগন্তের রিসিপশনিস্ট আঁখি বলছি।
রাওনাফ বলে ওঠে,”হ্যা বলুন!”
_স্যার,মৃদুলা ম্যাম হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। আপনাকে আসতে হবে!
চলমান………
#নোটবার্তা: জিরিয়ে জিরিয়ে লিখেছি। জানিনা নেক্সট পর্ব আবার কবে দিতে পারবো। এই গল্পটা শুরু থেকেই দিনে দুই পর্ব দিয়ে শেষ করার কথা ছিলো। অথচ দেখুন কি থেকে কি হয়ে গেলো। আমি পাঠক হিসেবে পাঠকের অনূভুতি বুঝি। অপেক্ষা করতে বিরক্ত লাগলে গল্পটি আপনারা স্কিপ করে যান। মাস খানেক পরে শেষ হলেই পড়বেন না হয়। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি এক দিনেই পুরোটা উপহার দিতাম আপনাদের।
আর হ্যা,গল্পটি নিয়ে কিছু কথা। অনেকেই অপেক্ষা করে আছেন উর্বীর অতীত জানার জন্য। প্লিজ তাড়াহুড়ো লাগাবেন না। উর্বীর অতীত অবশ্যই সামনে আসবে,তবে সেজন্য তো একটা পরিবেশ পরিস্থিতির প্রয়োজন। সেটা তৈরি করতে দিন আমায়।
আমার জন্য দোয়া করবেন। আগামীকাল স্টিচিং খোলা হবে। আর যেন জটিলতা না ধরা পরে। সবাই দোয়া করবেন।