আমার_হৃদয়ে_সে,২৪,২৫,২৬

#আমার_হৃদয়ে_সে,২৪,২৫,২৬
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৪

খালামণি কিছুটা অবাক হলেও পরক্ষণে হেসে উঠে বলেন,
“ভাই-আপা…? ”
“আসলাম সবাইকে দেখতে..!”(মা)
বলে মা চাপা হাসলেন।খালামণি বলেন,
” ভেতরে আসুন,ভেতরে আসুন?”

বাবা এবং মা ভেতরে ঢুকলেন।সোফার দিকে এগিয়ে আসতে বাবার আমার দিকে নজর গেলো।সরু চোখে তাকালেন ।কিছুটা ইতস্ততর চোখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলেন,

“কেমন আছিস,পারিসা?”

আমি বাবার দিকে সরাসরি তাকালাম না।অন্যদিকে দৃষ্টি রেখে বললাম,
“ভালো।”

বলে রুমে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে যাই।আসলে ব্যস্ত না একদম।বাবার সাথে কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে না তাই।রুমের দিকে পা ফেলতে বাবা পেছন থেকে বলে উঠেন,
“রুমে পরে যাস।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

দাঁড়িয়ে গেলাম।ঘাড় ঘুরে আর উনার দিকে তাকালাম না!বাবা পেছন থেকে আমার সামনে এসে দাড়ালাম।মাথা টা কেমন নতজানু করেন।ব্যথিত গলায় বলেন,
“গত দেড় মাস ধরে তোর সাথে দেখা করতে বারবার চেয়েছি।কিন্তু নিজের উপর নিজের ঘৃণা হয় বলে তোর সাথে দেখা করার সাহসটুকু পাইনি।তোর মাকে জিজ্ঞেস কর।”

বলে বাবা একটু থামেন।তারপর আবার বলতে থাকেন,
“দেড় মাস হলো অভিকে এবং অভির বউকে দেখেছি।একটা অনুষ্ঠানে গেলাম।সেখানে অভিও এবং অভির বউও আমন্ত্রিত ছিল।তুই ই ঠিক ছিলি।ওই ছেলেটা আসলেই খুব খারাপ ছিল।আমি ওকে অন্ধের মতন বিশ্বাস করেছি। ভুল করেছি আমি।আমার উপর মা রাগ রাখিস না।বাবা বুঝতে পারি নি।”

কি আর জবাব দিব!জবাব দিতে গেলে আবার সেই পুরনো কথা টানতে হবে।পুরনো কথা আর মনে করতে চাচ্ছি না।চুপ করে রইলাম। জবাব দিলাম না।বাবা আরো ব্যথাতুর কথা বলতে থাকলেন তারপরও আমার মুখ থেকে একটু শব্দ বেরুলো না।বাবা বুঝলেন আমি বাবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।বাবা আরো হতাশ হয়ে গেলেন,

“বাবা ভুল করেছি তার শাস্তি দিচ্ছিস, না মা?”

এত আবেগ জড়ানো মায়া জড়ানো কথা তখন বাবা কোথায় গেল আপনার?যখন চারপাশ থেকে আমি অসহায় তখন কেউতো আমাকে একটু মায়া-মমতা মাখানো কথা শুনায় নি।ভরসার হাত বুলায় নি।অথচ তখন কিনা এই টুকু কথাই আমার ভরসার হাত ছিল!কেউ আমার পাশে ছিল না।সবাই নিষ্ঠুর আর বেইমান ছিল!!সরাসরি তো আর বলতে পারি নি।নিরবে কথাগুলো গেঁথেছি!বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।আমি আর দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ করছি না।বাবাকে পাশ কেঁটে রুমে চলে এলাম।বিছানায় বসতে চোখজোড়া পানিতে জলে ভরে গেল।

কিছুক্ষণ এভাবে বসা থাকার মাঝে মা আসেন রুমে।এসে পাশে বসেন।বলেন,
“জানি তোর বাবার উপর খুব রাগ।আমারও তোর বাবার উপর রাগ!তারপরও নিজের ভুল যেহেতু বুঝতে পেরেছে মাফ করে দে বাবাকে।বাবা মানুষ।বাবাদের সাথে এভাবে রাগ করে থাকলে আল্লাহ কষ্ট পাবেন!”
“আর বাবা হয়ে মেয়েকে যে কষ্ট দিয়েছে সেটা কি আল্লাহ মাফ করে দেবেন!”

মা এবার আর কথা বলেন নি।আমিও আর চুপ থাকি নি,
” তুমি বাবাকে বলে দিও আমার কাছে এভাবে আর যেন না আসে।আমি এরকম দিন কোনোদিনই চাইনি কোনো বাবা তার মেয়ের কাছে এসে এভাবে মাফ চাইবে।আমার কপাল খারাপ যে বাবা এবং মেয়ের মাঝে এতটা ফাটল,এতটা রাগ,দুঃখ,কষ্ট।মা রুম থেকে যাও।একা থাকতে চাই আমি”

মা গেলেন না।চুপ করে ঠায় বসে থাকলেন।কিছুক্ষণ এভাবে কেঁটে যেতে এবার শব্দ তুললেন,
“তোর বাবা এসেছেন তার ভুল,তোর রাগগুলো ভাঙ্গিয়ে তোকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।এখানেই থাকবি?বাসায় ফিরবি না, মা?”
“আর কথা বলতে ভাল্লাগতাছে না!একটু একা থাকবল প্লিজ!”

মা এবার আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন।তারপর আর কিছু বললেন না।উঠে আলতো হেঁটে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।

৩৫.
দুপুরের শেষ প্রহরে মা-বাবা দুজনেই ফ্যাকাশাভ মুখে বাসায় ফিরে যান।খালামণিদের বাসায় এসেছেন মূলত আমাকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। আমি যাই নি!যাবোই বা কেন,বলুন?যখন থাকতে চেয়েছি, তখনতো থাকতে দেয়নি।এতিম বাচ্চাদের মতন ছেড়ে দিয়েছে।এখন তাহলে কেন ফিরে যাবো?ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না!অসময়ে খালামণির কাছে ঠাই পেয়েছি এখানেই থাকবো।এখানেই!আবারো জল গড়িয়ে পড়লো!

৩৬.
রাতে খাবার শেষ করে রুমে আসি।বিছানার উপর বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকি।ভাবতেছি খালামণির কথা!খালামণি ভুল বলেননি।হৃদয়কে আসলেই একবার সুযোগ দেওয়া উচিত।পৃথিবীর সব তো আর অভির মতন না।তাছাড়া হৃদয়ের সাথে ক’দিন চলাফেরা করলে বুঝতে পারবো ওকে।তারপর আরো অনেককিছু ভাবলাম।ভেবেটেবে টপ করে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকল ফোনটা হাতে নিই।।ব্লক লিস্টে ঢুকি।সবার প্রথমে হৃদয়ের আইডিটা সামনে পড়লো।ব্লক থেকে হৃদয়লে আনব্লক করি।মন যদিও একটু একটু ইতস্ততা বোধ করলো তারপরও মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন দুঃসাহসিক কাজটা করে ফেলি।পরক্ষণে আবার আরেকটা দুঃসাহসিক কাজও করে ফেলি।হৃদয়কে মেসেজ পাঠাই।লিখি,

“লাইনে থাকলে একটু রেসপন্স করবেন।”

পাঠিয়ে ফোনটা একদম বসা থেকে দুইহাত দূরে ছুঁড়ে মারি।ভেতরটা কেনজানি উসখুস লাগছে।কাজটা ঠিক করলাম মেসেজটা করে?আবার “বেহায়া’ভেবে বসবে নাতো?যদি সত্যিই বেহায়া বলে?উহহ…!!!এগিয়ে টপ করে ফোনটা আবার হাতে নিলাম।মেসেজটা ডিলিট করে দিব ।তারপর আবারো ব্লকে পাঠাবো!ভাবনার সুতো ছিঁরে মেসেন্জারের “টুন করা” শব্দে।স্ক্রিনে তাকিয়ে একটা বান্ধবীর মেসেজ।লেখা,

“দোস, তোকে কল দিচ্ছিরে।তোর সাথে আমার আর্জেন্ট কথা আছে।”

সিন করা মাত্রই ওপাশ থেকে বান্ধবীর কল ছুটে এলো।রিসিভ করলাম।রিসিভ করতেই ভে ভে করে কেঁদে উঠলো।
“কাঁদছিস কেন?বাচ্চা হইবো নাকি?”
“আশা তো ছিল বাচ্চা হইবো।একটা সংসার হইবো।আর ওই বাদাইম্মার বাচ্চা বাদাইম্মা আমার সব স্বপ্ন মাটির সাথে পিষিয়ে দিয়ে চলে গেলো।”

বলে আবারো ভে ভে করে কেঁদে উঠলো।
“আরেহ কান্না থামা!শান্ত হ।আমারে ভালো করে বুঝিয়ে ক কি হইছে?”

বান্ধবী এবার কান্না থামায়।ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে,
“শাওন আমার লগে ব্রেকাপ করছে।আমার লগে আর প্রেম করবো না।”
“কেন?”
“আমি নাকি মুটকি! ”
“তোরে আমি ভার্সিটিতে থাকতে বারণ করেছি ওই রকম রাস্তার পোলাপানগো লগে পিরীত করতি না।এবার লও ঠেলা!যাক যা হবার হয়ে গেছে।গেছে গা ভালো হইছক।ও তোকে মন থেকে ভালোবাসে নি।বেসেছে শরীরকে।যার মনের ভালোবাসা নেই সে মানুষ না।রোবট!ভুলে যা ওই রোবটকে।সেই সুবাধে এবার একটা ব্রেকাপ পার্টি কর!আমরা সবাই আসবো।”
“মজা করতেছিস আমার লগে?”
“মজা কেন করবো?সত্যি কইতেছি!”

এমন সময় ফোনে আবার “টুন করে” শব্দ হয়।কান থেকে ফোনটা নামিয়ে হৃদয়ের মেসেজ!হৃদয় মেসেজ করেছে।ইয়া আল্লাহ মেসেজটা সে দেখে ফেলেছে!আমার খবরও নাই ডিলিট করতে!রাগ বেড়ে গেলো বান্ধনীর উপর!

“ওই মুটকি,তোর জন্যে আমার আত্মসম্মানের তেরোটা বাজলো!কল ক্যান দিলি!উফস!”
“তুইও শেষপর্যন্ত মুটকি কইলি!দেখিস এক সপ্তাহের ভেতর স্লিম ফিগার বানামু।আর তোদের গ্লেমার করমু!”

আমি আর ওর কথা কানে নিলাম না।ফোনটা তরতর করে কেঁটে দিলাম।ঢুকলাম হৃদয়ের মেসেজে।লেখা,
“দুঃখিত,সেই কখন মেসেজ করলেন রেসপন্স করতে পারিনি।আসলে আমি ফোনের কাছে ছিলাম না।স্টুডেন্টদের এক্সাম খাতা দেখেছিলাম।”

আমি মেসেজটির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ঠাই বসে থাকলাম!ছেলেটির এরমাঝে আরেকটা মেসেজ এলো,
“কিছু বলবেন?”

এবার সাথে সাথে উত্তর করি,
“জ্বী।”
“জ্বী বলেন?”
“আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।দেখা করতে পারবেন আমার সাথে?”

সাথে সাথে উত্তর এলো না।তার দুই মিনিট বাদে উত্তর এলো,
“হঠাৎ দেখা?কোনো রিজন আছে?”
“থাকতে তো পারে।মেসেজ তো তাহলে দেওয়ার কথা না,তাই না?”
“কোথায় দেখা করতে চান?”
“আগের সেই রেস্টুরেন্টেই!”
“রেস্টুরেন্টে দেখা করছি না।”
“কেন?”
“আপনি সেদিন কিছু না খেয়ে উঠে গেলেন।আপনাকে খামোখা রেস্টুরেন্টে নিয়ে লাভ নাই। তারচে বাইরে রোদ দেখা করবো এটাই ভালো।”

ছেলেটির এই মেসেজটা দেখে খুব হাসি চলে এলো।লিখলাম,
“আচ্ছা ঠিক আছে।কাল খেতেও পারি।সো রেস্টুরেন্টই।”

হাসির ইমোজি এলো।

৩৭.
রেস্টুরেন্টে আসা মাত্রই দেখি হৃদয় আগেভাগে হাজির।ওকে দেখে আমার কেনজানি কিছুটা লজ্জা লজ্জা লাগছিল।নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম।জোরপূর্বক হাসলাম।বসলাম।সে ওমনি বলে উঠলেন,

“কি খাবেন?ওয়েটার?ওয়েটার?”

ওয়েটার সাথে সাথে হাজির।আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।ওয়েটার খাবারের ম্যানু শিটটা নিচে রাখলো,
“ম্যাম খাবার সাজেস্ট করুন।”

বসে থাকলাম ওভাবে ই।ওয়েটার তাড়া দিতে থাকলো,
“ম্যাম,তাড়াতাড়ি করুন, কাইন্ডলি।”

অগত্যা খাবার সাজেস্ট করলাম।ওয়েটার চলে গেলো।আর ওপাশে বসা ব্যক্তি নিচের দিকে তাকিয়ে মুচমুচে হাসছে!কী চালাক!সে হাসি থামিয়ে এবার আমার দিকে ফিরলো,

“সরি!তাগাদা না দিলে সেদিনকার মতন আপনি হয়তো আজও আমাকে বোকা বানিয়ে না খেয়ে চলে যেতেন।সো অগত্যা তাগাদা না করে পারলাম না।রাগ করেছেন!?”
“রাগ করিনি!অবাক হয়েছি।খালামণি এবং আপনার ফ্রেন্ড রাকীব স্যারের থেকে শুনলাম আপনি খুব ভদ্র ধাচের আমার চোখে আপনি তা মোটেও নন।আপনি একটা দুষ্টুর হাড্ডি!”

সে ফিক করে হেসে দিলো।বললো,
“দুঃখিত, আর দুষ্টমি করবো না।খাওয়ার জন্যে এই দুষ্টমিটা করতে বাধ্য হয়েছি।”

তারপর খাওয়াদাওয়া শেষ হলে হৃদয়কে কিছু বলতে নিজেকে যথেষ্ট প্রস্তুত করি।ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলি,
শুনলাম আপনার সাথে আমার খালামণির ফোনে যোগাযোগ হয়?”
“হ্যাঁ।”
“যোগাযোগ কেন করেন?”

হৃদয় ফোনটা সামনে থেকে নিচে নামিয়ে ফের আমার দিকে ফিরে।বলে,
“যোগাযোগ না রাখলে আমি কীভাবে জানবো উনি বিয়েতে মত হয়েছে।”
“আচ্ছা,এটা কি আপনার পাগলামি মনে হয়না?”
“কেনো পাগলামি মনে হবে?কাউকে যদি কখনো মন থেকে ভালোবেসে থাকেন তাহলে পাগলামীর কারণটা ঠিকই বুঝবেন।”
“কখনো কাউকে পছন্দ করিনি।এবং ভালোও বাসি নি।আর স্বামীকে বাসতে চেয়েছি তা কপালে সহায় হয়নি।”
“কপাল না।কপাল বলে কোনো কথা নেই।যাকে চেয়েছেন সে হয়তো চায়নি।এই যেমন আমি আপনাকে চাচ্ছি আপনি রাজি হচ্ছেন না এরকম!মানুষের মন ভীষণ অদ্ভুত,পারিসা!মন কখন কি চায় বলা যায় না।”
“আপনি এসব বলে কি আমার মন গলানোর চেষ্টা করতেছেন?”
“চেষ্টা করলে আপনাকে অনেকভাবেই পটাতে পারতাম।ওরকম আমি নই।আজ আপনি বলাতে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি।নাহলে কখনোই আপনার সামনে উপস্থিত হতাম না।”

চুপ করে থাকলাম।এই ছেলেটার সাথে কথার ফাঁদে বারবার যেন আমি কথা বলার খেই হারিয়ে ফেলতেছি। খানিক্ষন চুপ করে থাকলাম।তারপর আবারো ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বললাম,
“আপনার মা-বাবা মানবে না।”
“মা-বাবা বাসা থেকে প্রচন্ড বিয়ের চাপ দিচ্ছেন।এমনো বলেছেন কেউ পছন্দের থাকলে তার বাসার এড্রেস দিতে।তাকে দেখবেন।হতভাগা কপাল আমার। জীবনে যাকে প্রথম পছন্দ করলাম সে আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।মা-বাবাকে বলতেও পারছি না পছন্দের কেউ আছে।”
“মা-বাবা যদি শুনে আপনার পছন্দের সে ডিভোর্সি!?”

সরাসরি প্রশ্ন।হৃদয় সরু চোখে আমার দিকে তাকালো।মৃদু হাসলো।বললো,
“পৃথিবীতে একজন ভালো মনের মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন,পারিসা!কারণ তার মানসিকতার কাছে অন্যসব তুচ্ছ!”

নিচের দিকে তাকালাম।নাহ এই ছেলের সাথে আর একটা কথাও বলবো না!এ মন চুরি করতে চাইছে!এই পারিসা এত সহজে কাউকে মন দেবে না।পারিসা এখন ছোট্ট না।সে যথেষ্ট ম্যাচিউরড।আগে যে ভুল করেছে।সামনে তা করবে না।আবেগ দিয়ে চলবে না।বিবেক দিয়ে চলবে।প্রয়োজনে সময় দীর্ঘ হউক।এই ছেলেটাকে দূরত্বে রাখতে হবে।আরো দূরত্বে।

চলবে….

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৫

সেদিন রেস্টরেন্ট থেকে আসার পর থেকে আমি হৃদয়ের কথা কেনজানি একটু বেশিই ভাবছি।এই যেমন,ওর কথার ফাঁকে মুখে মৃদু হাসি টানা,অঞ্চলকর দৃষ্টি মেলা এবং প্রয়োজনের বেশি কথা না বলা এই দিকগুলো বারবার মনে পড়ছে।এরকমটা কেন হচ্ছে নিজেও জানি না।চেষ্টা করছি ছেলেটার সব ইগনোর করতে।কিন্তু দেখা যায় যতই ইগনোর করছি,ততই মনে পড়ে বেশি।কাজেও ঠিকমতো মন বসাতে পারছি না!

৩৮.
তার বিশ দিনের পরের কথা…
একটা কোম্পানিতে এসেছি বিজ্ঞাপন প্রজেক্ট ডিল করতে।কোম্পানির সাথে সাক্ষাৎকার শেষ করে বাসায় ফিরতে ওয়েটিং রুমের সামনের বড় করিডোরটা ধরে যেই পা বাড়ালাম,ওমন সময় পেছন থেকে একটা মেয়েলও কন্ঠস্বর ভেসে আসে।আমি পেছনে ফিরি।পায়ে হাই হিল,গোলাপী রঙ্গের একটা থ্রী পড়া মেয়ে এসে আমার সামনে হাজির।মেয়েটিকে অবশ্যি চিনলাম না।ভ্রু যুগল কুঁচকে আনতে মেয়েটি বলে উঠলো,

“আমার যদি ভুল না হয় আপনি পারিসা,রাইট?”
“জ্বী।তবে আপনি কে?”
“আমি শিমলা।বাসা ধানমন্ডি।”
“আমাকে চেনেন আপনি?”

মেয়েটি এ’কথার পিঠে খানিকটা হাসার মতন ভঙ্গিমা করলো।তারপর স্বাভাবিকতা এনে বললো,
“আপনিতো হৃদয়কে চেনেন যে আপনাকে ভালোবাসে।সরি শুধু ভালোবাসে না।ভীষণ ভালোবাসে।তবে আপনি তাকে পাত্তা দেননা।”
“আমাকে এসব কেন বলছেন?”
“বলছি আপু।”

বলে মেয়েটি এবার চোখমুখ করুণ করে ফেলে।এতক্ষণে চোখমুখে যে উত্তেজিত ভাবটা ছিল।এখন তা নেই।মেয়েটি বললো,
“আমি হৃদয়ের কলিগ।শাহীন মডেল কলেজের হিসাববিজ্ঞান টিচার।জানেন?হৃদয়কে আমি খুব ভালোবাসি।গত ছ’মাস ধরে ওকে ভালোবেসে আসছি। সাতদিন আগে তাকে আমি আমার ভালোবাসার কথা জানাই।সে সরাসরি আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে।কী বলে জানেন?তার নাকি কেউ পছন্দের আছে যাকে সে তার থেকেও বেশিই ভালোবাসে।তাকে ছাড়া সে অন্যকারো কথা ভাবতেই পারবে না।খুব জানতে ইচ্ছে হয়েছিলো কে সেই মহিয়সী নারী ?যাকে আমার প্রিয় মানুষটি খুব ভালোবাসে?প্রশ্নগুলোর উত্তর অতঃপর হৃদয়ের মার থেকে জানলাম।হৃদয়ের মা আমাকে আগ থেকেই চেনেন। শিক্ষক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একবার এসেছিলেন আর তখন থেকে উনার সাথে আমার পরিচয়।উনার থেকে জানলাম হৃদয় পারিসা নামের কোনো এক মেয়েকে ভালোবাসে।কিন্তু মেয়েটি তাকে ভালোবাসে না।মেয়েটিকে সে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে।মেয়েটি তাতেও রাজি হয়নি।তারপরও সে মেয়েটির জন্যে অপেক্ষা করবে।আরো অপেক্ষা করবে।অপেক্ষা করতে করতে যেদিন মেয়েটি বিয়েতে সম্মতি হবে সেদিন সে আবারো প্রস্তাব নিয়ে তার সামনে হাজির হবে।আপনার আরেকটা ব্যাপারও বললো আপনি বিভিন্ন কোম্পানিতে একজন খ্যাতিমাম এডভার্টাইজার হিসেবে কাজ করেন।আপনার সাথে দেখা করতে খুব শখ জাগে।ব্যাসিকেলি আপনাকে দেখতে।আমার একটা কাজিন এই কোম্পানির এম্প্লেয়ার।তারথেকে জানলাম আজ আপনি এখানে আসবেন।তাই কলেজটা আজ মিস করে আপনার সাথে দেখা করতে ছুটে এলাম।”

চুপ করে থাকলাম।চোখমুখ আমার একদৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে নিবদ্ধ হয়ে রইলো।দু একটি কথাও আমার মুখ থেকে বেরুলো না।মেয়েটি আবারো বলে উঠলো,

“তবে আপনি ভীষণ সুন্দর, আপু।হৃদয়ের পছন্দ বলে কথা।মন্দ না।”

বলে মেয়েটি কিঞ্চিৎ থামে।তারপর আবার বলে,
“হৃদয় আপনাকে ভালোবাসে।আপনি বাসেন না।হৃদয় যদি কখনোই আপনার ভালোবাসা না পায় সেদিন অগত্যা হৃদয় আমাকেই বাসবে।খামোখা মাঝখানটা দিয়ে আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে,না আপু?”

মেয়েটির এই কথাটায় আমার সারা শরীর কেনজানি খুব কাঁটা দিয়ে উঠলো।আমি হালকা নড়ে উঠলাম।ঠোঁটজোড়া বেশি নড়লো।তবে কোনো কথা এলো না
।মেয়েটি নৈঃশব্দে হাসলো।হাসি বজায় রেখেই বললো,
“নিয়তি বলে কথা।কে কাকে পায় বলা যায় না।যাইহোক আসি আপু।আপনার সময় নষ্ট করলাম।কিছু মনে নিবেন না।বায়।”

বলে মেয়েটি হর্ণপায়ে বিপরীত দিকে বা বাড়িয়ে চলে গেলো।মেয়েটি চলে যাবার পর আমার চেতন আসে।আমি নড়েচড়ে চারদিক তাকাই।তারপর হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিন অন করে ফোনের দিকে।টাইম দেখি।বেলা তিনটে বেজে চল্লিশ মিনিট ।শশব্যস্ত হয়ে যাই।বাসায় ফিরতে হবে।খুব লেট হয়ে যাচ্ছে।

৩৯.
ওখান থেকে আসার পর একদম চুপচাপ হয়ে যাই।খাবার শেষ করে খালামণির সাথে দুই তিনটে কথা বলে রুমে ঢুকি।আর বের হই নি।বেলকনির বেতের চেয়ারটায় এখনো বসে আছি।অথচ সন্ধে কিনা সাতটা বাজতে চললো।দৃষ্টিটা দেয়ালের দিকে নিবদ্ধ। দৃষ্টির পর্দাতে শিমলা বারবার ভাসছে।দেখতে সিমসাম।গোলগাল মুখ।চিকন নাক।পাতলা ঠোঁট।কাঁচা হলদে গায়ের রং।তুলনা করলে আমার থেকে সৌন্দর্যে এগিয়ে!অথচ হৃদয় কিনা আমার জন্যে তাকে রিজেক্ট করে।আমি শিমলার সাথে যাইনা।হৃদয় শিমলাকে ডিজার্ভ করে।হৃদয়ের ফ্যামিলিও। আমাকে নয়।আমি ইদানীং-ও-না হৃদয়ের প্রতি একটু দুর্বল হয়ে পড়েছি।এতটা ম্যাচিউরড বয়সে কৈশোরীপনা খাটে না।হৃদয়ের ভূত আমার মাথা থেকে সরাতে হবে যতটা।শিমলা হৃদয়কে খুব ভালোবাসে।শিমলার ভালোবাসা শিমলাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।হৃদয় এখন আবেগে আছে।হৃদয়ের আবেগ তাড়াতে হবে।আমাকে সরে যেতে হবে যে করেই হোক।ভেবে ঠাই বসে থাকলাম অনেকক্ষণ।এরমাঝে খালামণির আবারো দরজায় টোকা পড়লো।এবার আর বসে থাকলাম না।দরজা খুলে দিলাম।খালমণি ছটাং কপালে হাত রাখলেন,

“মাথাব্যথা করছে,মা?দরজা খুলিস নি কেন এতবার যে টোকা দিলাম?”
“নাহ খালামণি আমি ঠিক আছি।এমনিই দরজা বন্ধ করে রাখছি।একটা কথা বলতাম খালামণি?”
“হ্যাঁ,বল?”
“খালামণি?তুমি আমার জন্যে পাত্র দেখো।আমি বিয়ে করবো।তবে, হৃদয়কে এ’কথা একদমই বলবে না।”
“মানে হৃদয় ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবি?”
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু হৃদয় কি সমস্যা করেছে?ওকে বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়?”
“খালামণি হৃদয়ের কথা বাদ দাও।এতদিন বললে না?বিয়ে করতে করতে?অভিকে ভুলে যেতে?অভিকে ভুলে গিয়েছি।এবার বিয়েতে রাজি হয়েছি। অন্যকিছু টানবে আর না।”

খালামণি নির্লিপ্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমি আর দাঁড়ালাম না।খালামণিকে পাশ কেঁটে বেরিয়ে এলাম।ফাহিমের রুমে ঢুকলাম।ফাহিম রুমে নেই।বেলকনিতে গেলাম।এবার আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালাম।আর হুহু করে কেঁদে উঠলাম।ভারী কান্নায় চোখের কিণার কাণার পানিতে ভিঁজে গেলো!তবে আমি কেন কাঁদছি?কেন?আরে পাগল নাকি আমি?আবারো ধামাচাপা দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলাম!

চলবে…

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৬

৪০.
সকাল বেলায় ঘুমটা হঠাৎ হালকা হয়ে আসে অনেকগুলো গলার কন্ঠস্বরের আওয়াজে।ভাবলাম খালামণির প্রতিবেশী কেউ।তাই ঘুমতে আবারো উদগ্রীব হই।কম্বলটা বুকের কাছে টেনে এনে আবারো চোখজোড়া বন্ধ করি।তবে লাভ বিশেষ হলো না।ওপাশের খালামণি ছাড়া অন্যান্য গলার কিছু ধ্বনি এপাশে বেজে উঠে।আর ধ্বনিগুলো বেশ পরিচিত পরিচিতও লাগছে!শুয়ে থাকতে পারি নি।কম্বলটি একপাশে সরিয়ে উঠে বসি।কয়েক সেকেন্ডস লাগে ঘুমের আড়মোড়া ভাঙ্গতে।তারপর নেমে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়াই।সোফার দিকে তাকাতেই চোখজোড়া চমকে উঠে।খালামণির সামনের সোফা টায় হৃদয়।সে খালামণির সাথে কথা বলছে।আমি দরজা থেকে ছিটকে ওমনি কিছুটা দূরে সরে আসি।ব্যাপার কি?হৃদয় এখানে?এখানে আসার তার কি এমন উদ্দেশ্য?খানিক্ষন চুপ করে থাকি।পরক্ষণে মনে পড়ে কালরাতে ই ত খালামণিকে বললাম পাত্র দেখতে!খালামণি সেই কথাটা হৃদয়কে আবার বলে দেয়নি তো?ভাবনার মাঝে দরজায় টোকা পড়ে।

“ম্যাডাম,আসবো?”

হৃদয়ের কন্ঠস্বর!খালামণির উপর প্রচন্ড রাগ উঠতাছে।খালামণি এটা কি একদমই ঠিক করলো তাও আমাকে কিছু না বলে?পেছনে ফিরলাম।সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

“কেন এসেছেন এখানে?”
“আমার হবু বউকে দেখতে!”
“ফাজলামোর একটা লিমিট থাকে হৃদয়!আপনি লিমিট ছাড়া ফাজলামো করতেছেন।”
“ফাজলামো এই হৃদয় করে না কখনো।এবং সামনে করেও না।”
“তাহলে কেন এলেন?”
“বললাম না হবু বউকে দেখতে?”
“এই যে এবারো ফাজলামো করলেন!”

এ’কথার পিঠে হৃদয় ফিক করে হেসে দিলো এবার।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।ওর ওই হাসির দিকে তাকালে আবার নিজেকে দুর্বল করে ফেলবো।বেসিক্যালি, ওর ওই হাসির কাছেই দুর্বল হয়ে গিয়েছি সেদিন।সেই হাসিটা তার এড়াতে হবেই এ্যানিহাউ।ভাবনার মাঝে,

“পারিসা?”

নড়ে উঠলাম।তবে সরাসরি তার চোখের দিকে তাকালাম না।সে বললো,
“আমার চোখের দিকে একটু সরাসরি তাকাও।”

এই বাক্যটি প্রকাশের ধরণ খুবই হৃদয় স্পর্শনীয়।আমি তাকানোর সাহস পেলাম না।বা কিছু বলারও।যেভাবে ছিলাম সেভাবেই।হৃদয় এবার আমার দিকে এগিয়ে এলো।বললো,
“সত্যি করে বলো ত পারিসা,আমাকে তোমার ভালো লেগেছে কি না?বেশি ভালোলাগার আবার দরকার নেই।একটুও লেগেছে কিনা এটা বলো।”

এবারো জবাব দিলাম না।
“জবাব তো দেবে, পারিসা?”
হৃদয়ের স্বর এবার আগের থেকে অনেকটা জোর গলার।আমি ভেবে না পেরে হৃদয়ের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলে দিলাম,

“একজন ডিভোর্সি আমি!আপনি আমার পেছনে পড়ে কেন নিজের লাইফটা এভাবে নষ্ট করতেছেন?আমার থেকেও তো কত ভালো মেয়ে আপনি ডিজার্ভ করেন!শিমলা আমার থেকেও কত গুণে সুন্দরী!ওকে কেন পাত্তা দিচ্ছেন না!”

সাথে সাথে আমার বাম গালে খুব জোরে একটা চড় পড়লো।আমি টলমল চোখে ফের সামনে ফিরলাম।হৃদয় ই চড়টা মেরেছে।হৃদয় নিজের হাতের দিকে তাকালো।চড়টা মেরে সে এবার খুব অপ্রস্তুত হয়ে গেল।টগবগ চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।তারপর আমার দিকে ফিরলো,

“সরি পারিসা!আমি ঠিক ছিলাম না।”

বলে খানিক থামে।তারপর আবার বলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি পারিসা।শিমলাকে না।শিমলার ব্যাপারে তুমি কতটুকু জানো,বলো?ওকে যতটুকু আমি চিনি তুমি হয়তো তাকে চেনো না।তাই প্লিজ ইগনোর হার।আমি তোমাকে কেন ভালোবাসি জানি না।তবে আমার অপরিসর মাথায় একটুকুই ব্যাখ্যা করছি তোমার মাঝে মায়া দেখেছি।তোমার মাঝে সততা দেখেছি।এবং তোমার মাঝে সুন্দর একটা মন দেখেছি।
যদি আবারো প্রশ্ন করো এটুকু দেখেই ভালোবাসি?তাহলে এই উত্তরগুলোও ভুল হবে।ওগুলো জাস্ট হালকা রিজন।তবে তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি তার পরিমাণ জানি না।আর জানতেও চাই না।তাই প্লিজ বারবার আমাকে একই প্রশ্নে ফেলো না।তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউরড!বারবার বাচ্চাসুলভ ব্যবহার করে যাচ্ছো।এসব মানায় না তোমাকে।তোমার এই বয়সের জ্ঞানের গভীরতা আমাকে এতদিনে ধাচ করে ফেলা উচিত ছিল।তা পারো নি।আর আবারো দুঃখিত,তোমাকে চড় মেরেছি।রাগ কন্ট্রোলে ছিল না।সরি।”

তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে।তার চড়ে আমার রাগ না।
রাগ হচ্ছে এখন আমার নিজের উপর।তার সাথে দেখা হবার পর থেকেই বার বার শুধু ওভার থিংকিং ই করে যাচ্ছি।এতটা ভেবেচিন্তে ক’জনকে জাস্টিফাই করা যায়?হৃদয় ছাড়া অন্য আরেকজন যে ভালো হবে বা আমাকে এরকম ভালোবাসে অথবা আমাকে সে মেনে নেবে তার গেরান্টি দিতে পারবো?পারবো না!কখনোই পারবো না।তাছাড়া ইদানীং এই ছেলেটার প্রতি আমারওতো কেমন যেন পরিবর্তন এসেছে।প্রতিরাতেই তো ছেলেটির কথা ভাবি।তার মেসেজ অপশনে যেয়ে ঘুরে আসি।অস্থিরতায়,উত্তেজনায় থেকেছি এই বিশটা দিন!এই দিনগুলোর কথাও কি ভুলে যাবো?এসব কি তার প্রতি আমার এক ভালোলাগা কাজ করা নয়?হ্যাঁ,এক অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা! এই ছেলেকে আমার এক অদ্ভুত রকমের ভালো লেগে গেছে।ভাবনার মাঝে,

“পারিসা?”

কাঁপা কাঁপা চোখে হৃদয়ের দিকে তাকালাম।বললো,

“আমি তোমাকে জোর করবো না।যদি আমাকে একসেপ্ট করার ইচ্ছে না থাকল অথবা থাকে তাহলে খালামণিকে জানিয়ে দিও।আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো বিকেল পর্যন্ত।আসি।ভালো থেকো।”

বলে হৃদয় পেছন ঘুরলো।দুই কদম এগিয়ে দরজার দিকে যেতে,

“শুনুন? ”

হৃদয় আমার দিকে আবার পেছন ঘুরলো।বললাম,
“উত্তরের অপেক্ষায় আপনাকে থাকতে হবে না।আমি রাজি!”

হৃদয় যেন আমার কথা বুঝলো না।চোখ জোড়া বোঁজার মতন একটু নাড়িয়ে উঠলো।আমি দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মুখে লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি টেনে উল্টোদিক ঘুরে দাঁড়িয়ে গেলাম।এবার হয়তো বুঝেছে সে,তার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি।মানে তাকে আমিও ভালোবেসে ফেলেছি!”

৪১.
সন্ধের পর পর বাসায় মেহমানের হামাগুড়ি খায়।এদের মাঝে একজন হৃদয়ের মা,আরেকজন চাচী,আরেকজন চাচা,আরেকজন খালা,আরেকজন কাজিন, আরেকজন কাজী এবং আরেকজন হৃদয় নিজেই।এনগেজমেন্টের মোটামুটি সবকিছু নিয়ে হাজির হয়েছে।অবশ্যি শুনলাম আজই নাকি বিয়ে পড়িয়ে নিয়ে যেতো।কিন্তু হৃদয়ের বাবা তাদের গ্রামের বাড়িতে গেছে।গ্রামের বাড়ির জমিজমাতে কি নাকি সমস্যা হয়েছে সেগুলোর বন্দোবস্তো করতে এই দিন বিবেকের মতন লাগবে।তাই আজ বিয়ে পড়িয়ে রাখতে আপাতত।পরে উনি শহরে ফিরলে অনুষ্ঠান করা হবে।তাছাড়া হৃদয় আজ ই যে একরম কান্ড করে বসবে আমিতো জানতামই না।এবং খালামণিও না।খালামণি হতবুদ্ধিকর অবস্থায় পড়ে গেছেন।হুটহাট কি করবেন।না করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না!দৌড়ে আমার রুমে চলে আসেন।তাগাদা দিয়ে বলেন,

” তোর ফোন দিয়ে তোর খালুজানকে কল করে বল তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসতে।বাসায় মেহমান এসেছে।আর আমি তোর মা-বাবাকে কল করছি।”

বলে খালামণি আবার দ্রুতপায়ে বাইরে চলে যান।খালুজানকে কল করি।খালুজানের কল রাখার পর এই হৃদয়ের উপর এবার একটা চাপা রাগ ফুঁসে উঠে,
“কী দরকার ছিল,হুটহাট সবাইকে এরকম বিব্রতকর অবস্থা ফেলার?!পরে মজা বুঝাবো!আসুক!”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here