আমার_রূপকথায়_তুমিই_ছিলে পর্ব ৬,৭ শেষ

আমার_রূপকথায়_তুমিই_ছিলে
পর্ব ৬,৭ শেষ
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৬

তারপর থেকে তারিব ফারিনের নাম দিয়েছিল রানু মন্ডল কারন আমার আরেকটা কাজিন আছে নাম শ্রেয়া ও আর ফারিন প্রায় সমবয়সি হওয়ায় দুইজন একসাথে থাকে তাই শ্রেয়ার নাম হিমেশ আর ফারিনের নাম রানু মন্ডল আমাদের বাসার সবাই তো তারিবের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। ও তো এখন ফারিনকে দেখলেই বলে রানু মন্ডল একটু গান গাও তো। জানেন আমাদের বাড়িতে কোনো বিয়ে লাগলেই খাট ভাঙে। খাটের উপর খুব পাতলা একজন বসে থাকলেও খাট ভাঙবেই।কালকেও আমার হলুদের কিছুক্ষন আগে আমার ঘরের খাট ভেঙে গেছে!এটা এখন আমাদের ফ্যামিলির ট্রেডিশন হয়ে গেছে আজকে যদি ও সারাদিন খুব ধকল যাবে তাও আজকে একটু তাড়াতাড়ি উঠেছি কারন কালকে রাতে আমরা সবাই মিলে গল্প করতে করতে আর ঘুম হয়নি এখন ঘুমিয়েও লাভ নেই কারন একটু পরেই আবার উঠে যেতে হবে তাই এতটুকু সময়ের জন্য না ঘুমানোই ভালো। একটু পরে পার্লারে যাওয়ার জন্য রেডি হবো আমার মেজ আন্টি ও নাকি যাবে আমার সাথে কিন্তু আন্টি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি তাই এখনো বসে আছি।

বিয়েতে কনেকে একটু ভারীই মেকআপ করাই লাগে। একে তো এতো ভারী ভারী জুয়েলারি তার উপর আবার এই গাদা গাদা মেকআপ। জীবন টা পুরাই মেকআপ ময় লাগছে। মাএ আমার ছোট ভাই জীম বলল তারিব না নাকি এসেছে। তারজন্য যতো পিচ্চি পাচ্চি আছে সব গেট ধরতে গেছে। বাসা থেকে আম্মু আসার সময় বারবার বলেছিল এক প্যাকেট হলেও জুস আনতে গেট ধরার টাইম এ নাকি খাওয়াবে কিন্তু আমাদের কারোরই এই বিষয়টা মনে নেই এখন পানি খাওয়াতে হবে। গেট যে ধরবে কারোরই একটা ফিতাও আনতে মনে নেই তাই যাওয়ার সময় আমার খালাতো বোনের মেয়ে মানে আমার ভাগ্নি নুধারের ওরনা নিয়ে গেছে।

পিচ্চি পাচ্চিদের এই গেট ধরাধরি শেষ করে তারিব এসে আমার পাশে বসল আমার দিকে তাকিয়ে বলল কি সুন্দর লাগছে সাথী তোমাকে মাশাল্লাহ। এতো সুন্দর ও মানুষ হয়? বলাই বাহল্য আমি এতো সুন্দর না তারিব যে কেনো আমাকে এতো সুন্দর বলে ওটা ওই জানে!
একটু পর পর একেকজন আসে বস্তা বস্তা পিক তুলে আর আমাকে আর তারিবকে না চাইতেও হাসতে হয়। আমার গালগুলি এখন ব্যাথা করতেছে! আর সাইডে তো ক্যামেরা ম্যান এর বকবকানি আছেই! আপু এভাবে তাকান ওভাবে তাকান!

চলবে

#আমার_রূপকথায়_তুমিই_ছিলে
পর্ব ৭ শেষ

কিছুক্ষন আগে আব্বু আম্মু আমাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে গেছে।যে-ই সেন্টার-এ আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা হয়েছে ওটার-ই ২য় তলায় আমাদের বাসরঘর সাজানো হয়েছে।আমাকে বিদায় দেওয়ার সময় আমি কাঁদিনি! কারন কিছুদিন পরেই তারিব আবার আমেরিকা চলে যাবে তারপর আমি আবার আমাদের বাসায় চলে যাবো। আমার আর তারিবের দু’জনের-ই ইচ্ছা ছিলো যে রাতের বেলা একবার আমাদের বাসা থেকে ঘুরে আসার কিন্তু আমরা দুজনেই বেশ ক্লান্ত আজকে সারাদিন যে-ই ধকল গেলো! আমি মাএ ফ্রেস হয়ে এসেছি।এখন বাসর ঘরে বসে আছি। তারিব ও ওয়াশরুমে ফ্রেস হচ্ছে। বসে বসে ভাবছিলাম আমার জীবনের মোড় কোন দিক থেকে কোনদিকে ঘুরে গেলো। হঠাৎ তারিব এসে আমার কোলে মাথা রাখলো আমি মৃদু হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। আমরা দুজনেই চুপচাপ আছি কেউ কোনো শব্দ করছিনা। হঠাৎ তারিব বলে উঠলো জানো সাথী আমি আজকে অনেক খুশি।আর খুশির কারন একটাই সেটা হলো তুমি। আমি কোনো দিন তাহাজ্জুদ এর নামাজ পড়িনি তোমাকে পাওয়ার আশায় আমি প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ এর নামাজ পড়ে আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছি।যখন তোমার বিয়ে হলো আমি তখন সবেমাএ আমেরিকায় গিয়েছি।তখন একটা জব ও ছিলো না আমার কাছে। তোমার বিয়ের খবর শুনে আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। সত্যি বলতে আমি কোনোদিন-ই চিন্তা ও করিনি আমি তোমাকে পাবো। মহান আল্লাহ তায়ালার কী লীলাখেলা তাই না? আমাদের কার ভাগ্যে কে লিখা আছে আমরা কেউ-ই জানি না! ওই কটা দিন আমার রূপকথায় শুধু তুমিই ছিলে! আমি একটু গাল ফুলিয়ে বললাম এখন বুঝি তোমার রুপকথায় আমি আর নেই। তারিব আমার দিকে না তাকিয়েই উওর দিলো না নেই! তুমি এখন আছো আমার সবটা জুড়ে! তারিবের কথা শুনে আমার চোখটা হঠাৎই কেনো জেনো ভিজে উঠলো!আচ্ছা এত সুখ ও কী আমার কপালে ছিলো?

সমাপ্ত

এই গল্পটি আমার খুব কাছের একজনের জীবন থেকে নেয়া।তারা বতর্মানে খুব ভালো আছে। দোয়া করবেন তাদের জন্য।আপনাদের উদ্দেশ্য একটা কথাই বলবো কখনো নিজের জীবন নিয়ে নিরাশ হবেন না। মহান আল্লাহ তায়ালা কার ভাগ্যে কাকে রেখেছেন আমরা কেউই তা জানি না। ভরসা রাখুন আল্লাহ তায়ালার উপর তিনি সব ঠিক করে দেবেন।
Happy Reading.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here