আমার_ভীনদেশী_এক_তারা #পর্ব-(৪+৫+৬) #Raiha_Zubair_Ripte

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব-(৪+৫+৬)
#Raiha_Zubair_Ripte

বিছানায় এনাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বসে আছে ফারাহ্। ফারাহ্ সম্পর্কে এনার ভাবি। আরাভের বড় ভাই আমানের স্ত্রী। ফারাহ্ কানাডার মেয়ে। দেখতে বিদেশি লাগলেও আচারনে একদম বাঙালির মতো। ফারাহ্-র মা কানাডিয়ান হলেও ফারাহ্-র বাবা একজন বাঙালিয়ান। সেই সূত্রে ফারাহ্ তার বাবার মতোই হয়েছে। ফারাহ্ আর আমানের বিয়ে হয়েছে সাত বছর হবে। তারা একে ওপরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছে। প্রথম দিকে ফারাহ্-র মায়ের সমস্যা থাকলেও মেয়ের খুশির জন্য তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়। সবাই তো আর অ্যাডেলা না যে সব সময় শুধু নিজের মতামত নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবে। এনা ফারাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ফারাহ্ ভাবি কখন আসলে তুমি?

ফারাহ্ এনাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে বলে,,

” এই তো কেবলই আসলাম তোমার ভাইয়া কে রেখে এসেছি। সে তার বিজনেস মিটিং নিয়ে পড়ে থাকুক আমি পারবো না। আমার এনা কিউটি এসেছে আর আমি মিটিং নিয়ে পড়ে থাকবো ইম্পসিবল। আমি তো আর বিজনেসে হাত লাগাচ্ছি না। সারাটাদিন তোমার সাথে ঘুরবো সময় কাটাবো।

এনা বিছানা থেকে উঠে ফারাহ্ কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,

” ভাবি তুমি এতো সুন্দর করে বাংলা কিভাবে বলতে পারছো? আগে তো এতো সুন্দর করে বলতে পারতে না!

ফারাহ্ বিছানা থেকে উঠে এনার নাক চেপে বলে,,

” টানা এক বছর ধরে প্রাকটিস করে শিখেছি বুঝেছো। জানো তো বাংলা ভাষায় কিছু একটা আছে। এই ভাষায় কি সুন্দর মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। যদিও ইংলিশ ও কোনো অংশে কম না তবুও বাংলায় কথা বললে নিজেকে একদম খাঁটি বাঙালিয়ান লাগে।

” খালাম্মা কিছু বলে না যখন তার সামনে বাংলায় কথা বলো?

” আগে মা বিরক্ত হতো তখন তো বাংলা ভাষার কিছু বুঝতো না। এখন মা ও হালকা পাতলা বলতে পারে। আর হ্যাঁ শুনো আমার মা’কে এখন খালাম্মা ডাকলেও আমার মা খেপবে না।

এনা ফারাহ্ কে বিছানায় বসিয়ে বলে,,

” কেনো কেনো আগে তো খালাম্মা ডাকলে তোমার মা রেগে রণমুর্তি রূপ ধারন করতো।

” কেনো সেটা গেলেই বুঝতে পারবা। চলো আজ ঘুরতে যাই আরাভ তো বাসায়ই আছে।

” আজ তো আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা। আরাভ ভাই ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে।

” সমস্যা নেই ওখান থেকে তোমায় ভর্তি করিয়ে তার পর না হয় আমরা ঘুরতে যাবো।

” হ্যাঁ তাহলে যাওয়াই যায়।

” ঠিক আছে তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসো ডাইনিং টেবিলে। খেয়েদেয়ে তারপর বের হবো।

” আচ্ছা।

খাবার টেবিলে বসে আছে আরাভ ফারাহ্ এনা আর রত্না বেগম। সবাই খাচ্ছে শুধু আরাভ বাদে। ফারাহ্ বিষয়টা লক্ষ্য করতেই আরাভকে বা হাত দিয়ে খোঁচা দিয়ে বলে,,

” কি হয়েছে আরাভ খাচ্ছো না কেনো?

আচমকা ফারাহ্ -র কথা শুনে চমকে উঠে আরাভ। ফারাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলে,,

” কোথায় খাচ্ছি তো।

কথাটা বলে আরাভ খাবার মুখে তুলে নেয়। আরাভের এমন ব্যাবহারে বেশ অবাক হয় ফারাহ্। আরাভ কে আর কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয় ফারাহ্।

খাওয়া দাওয়া শেষে রত্না বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ফারাহ্, এনা,আর আরাভ। আসার আগে রত্না বেগম কেও বলেছিলো কিন্তু তিনি একা বাড়ি ফেলে যাবে না।

এনাকে নিয়ে ফারাহ্ আর আরাভ প্রথমে আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে।
আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯০৮ সালে আলেকজান্ডার ক্যামেরন রাদারফোর্ড (আলবার্টার প্রথম প্রিমিয়ার) এবং হেনরি মার্শাল টরি (বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম প্রধান) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি পাবলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয় হলো কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি যা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সাধারণত U of A অথবা UAlberta বলা হয়। এটির অ্যাডমন্টনে চারটি ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্রোজে একটি ক্যাম্পাস রয়েছে। বর্তমানে ১৫৬ দেশ থেকে ৪০.০০০ এর উপরে শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ।

প্রধান ক্যাম্পাসটি উত্তর সাসকাচোয়ান নদী উপত্যকার প্রান্তে আলবার্টা প্রদেশের রাজধানী এডমন্টনের ১১৬ স্ট্রিট এবং ৮৫ অ্যাভিনিউতে অবস্থিত। এটি ৫০টি শহরের ব্লক কভার করে, যার ১৫০টি ভবনের মধ্যে প্রচুর সবুজ স্থান রয়েছে।

বাংলাদেশে থাকাকালীন এডমিশন প্রসেস কমপ্লিট করেছিলো বলে এনার এখন বেশি সমস্যায় পড়তে হয় নি। “Doctor of medicine” কোর্সে ভর্তি হলো এনা। সেপ্টেম্বর মাস থেকে যথারীতি ক্লাস করতে পারবে। ভর্তির কার্যক্রম সব শেষ করে তারা “bonnie doon shopping Center” নামের একটা শপিং সেন্টারে আসে কিছু কেনাকাটার জন্য। ফারাহ্ শপিং সেন্টারের ভেতর একাই ঢুকেছে। শপিং সেন্টারের বাহিরে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে টুকটাক কথাবার্তা বলছে আরাভ আর এনা। তাদের কথার মাঝে হুট করে এক বাচ্চা মেয়ে আরাভ আঙ্কেল বলে দৌড়ে এসে আরাভ কে জড়িয়ে ধরে। বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে এনার। পিচ্চি মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে আরাভ বলে,,

” আরে প্রিন্সেস , কেমন আছো?

” আমি ভাল আছি, আঙ্কেল।

” তা প্রিন্সেস তুমি এখানে কেনো,তোমার সাথে কেউ আসে নি?

” পাপা আর মম এসেছে সাথে। কথাটা বলেই পাশে থাকা এনার দিকে চোখ যায় মেয়েটির। আরাভের কোল থেকে নেমে মেয়েটা এনার সামনে এসে ডান হাত মুখের সামনে নিয়ে কিছু একটা ভাবার ভঙ্গি নিয়ে বলে,,

” আঙ্কেল জানো তো এই আন্টি টাকে কোথাও দেখেছি আমি।

আরাভ কিছুটা ঝুঁকে মেয়েটার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে,,

” তাই বুঝি তা কোথায় দেখেছো তোমার এই আন্টি টাকে?

” সেটাই তো মনে পড়ছে না।

এনা মেয়েটার কথা শুনে কিছু বলতে নিবে আর তখনই কোথা থেকে এক চব্বিশ বছরের যুবতী দৌড়ে আসে। মেয়েটার হাত ধরে রাগান্বিত চোখে বলে ,,,

” তোমার সমস্যা কি, অ্যাঞ্জেলিকা? আমাকে না বলে এখানে এসেছ কেন?

অ্যাঞ্জেলেকা তার মায়ের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,,

” রিলাক্স মম , আরাভ আঙ্কেল কে দেখে দৌড়ে এলাম।)

হেলেন এবার আরাভের দিকে তাকায়। পাশে থাকা এনাকে দেখে ভ্রুকুটি করে। আরাভের উদ্দেশ্যে বলে,,

” মেয়েটি কে? আরভ।

আরাভ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,

” ওর নাম এনা। আমার মনে হয় আপনি ওকে চিনেন

আরাভের কথা শুনে হেলেন তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে বলে,,

” হ্যাঁ, আমি কেবল তার সম্পর্কে শুনে এসেছি এতদিন । আজ আমি তাকে সামনা-সামনি দেখতে পেলাম। আমি তাকে যেমনটা ভেবেছিলাম সে তেমন নয় দেখতে।)

কথাটা বলে হেলেন এনার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অ্যাঞ্জেলেকা কে নিয়ে চলে আসে। এনা হেলেনের সেই দৃষ্টির মানে বুঝলো না।

৫।

গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। গাড়ির ভেতর বসে আছে পিটার,হেলেন,অ্যাঞ্জেলেকা। হঠাৎ একটা হসপিটালের সামনে গাড়িটা আসতেই পিটার ড্রাইভার কে গাড়িটা থামাতে বলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পেছন থেকে পিটার কে গাড়ি থেকে নামতে দেখে বলে,,

” কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

পিটার কটমট চোখে হেলেনের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” দেখতে পাচ্ছো না কোথায় যাচ্ছি। ওর যে মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে বলো নি কেনো আমায়।

কথাটা শুনে হেলেন নিশ্চুপ হয়ে যায়। মাথা নিচু করে বলে,,

” আসলে মনে ছিলো না।

” মনে থাকবে কিভাবে সারাদিন আমার পেছন পড়ে থাকলে। অ্যাঞ্জেলেকার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে,,প্রিন্সেস বাসায় যাও মমের সাথে পাপা সন্ধ্যার আগে ফিরে আসবে। ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে,, টিমোথি সাবধানে নিয়ে যাবে ওদের। কথাটা বলে পিটার হসপিটালে ঢুকে পড়ে।

ফারাহ্, এনা,আরাভ বাসায় এসে পড়েছে ঘুরাঘুরি করে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে এনা তার পাশেই ফারাহ্ বসে আছে। ফারাহ্ এনাকে ভাবান্তর দেখে জিজ্ঞেস করে,,

” কি হয়েছে এনা বেবি কিছু ভাবছো নাকি?

এনা ফারাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলে,,

” না মানে হ্যাঁ ভাবি।

” তা কি ভাবছো?

” না কিছু না। আচ্ছা ভাবি আমান ভাইয়া আর চাচা আসবে কবে?

” এই তো কাল মনে হয়।

” ওহ আচ্ছা তাহলে থাকো তুমি আমি ঘরে যাই ভালো লাগছে না।

” আচ্ছা এনা তোমার ফ্রেন্ড জেমিরার কি খবর জানো?

এনা পেছন ফিরে বলে,,

” কই না তো কেনো কি হয়েছে?

” ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে বছর খানেক হবে। আমার ফ্রেন্ডের ভাইয়ের সাথে।

” ওহ শুনেছি বিডি থাকতে কিন্তু কার সাথে বিয়ে হয়েছে সেটা জানতাম না। কাল তো নক দিয়েছিলো হোয়াটসঅ্যাপে রিপ্লাই দিতে মনে নেই।

” ওহ্ আচ্ছা যাও রুমে গিয়ে শুয়ে থাকো ভালো লাগবে।

রুমে এসে শুয়ে আছে এনা বিছানায়। বারবার শপিংমলের সামনে থাকা মহিলাটার কথ মনে পড়ছে। নাহ অস্বস্তি হচ্ছে খুব। এনা রুম থেকে বের হয়ে সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এক খোলা মাঠের বসে আছে এনা। মাঝে মাঝে মনে হয় এনার কেনো আসলো এ দেশে আবার। না আসলেও তো পারতো। ফোনের দিকে তাকাতেই এনা খেয়াল করে তার ফোনে ফোন কল এসেছে। ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো। ফোনটা ধরতে যেতেই ফোন কল টা কে’টে গেলো। এনা নাম্বার টায় ঢুকে কল দিতেই ওপাশ থেকে সেই নাম্বারের মালিক এনাকে আবার ফোন দিয়ে বলে,,

” এই তোর সমস্যা কি দেশে এসেছিস জানাস নি কেনো?

” কে আপনি চিনি না সরি রং নাম্বারে ফোন দিছেন।

” একটা চ’ড় মে’রে সব দাঁত ফালায় দিবো চিনিস না আমায়। কাল ভদ্র মেয়ের মতো রেডি হয়ে থাকবি আমি আজ আসছি আলবার্টা।

” কেনো তুই এখন কোথায়?

” শশুর বাড়ি।

কথাটা শুনে বেশ অবাক হয় এনা।

” বাহ! বিয়েও করে ফেলছিস। কই আমায় তো বলিস নি। জেমিরাও বিয়ে করে ফেলছে এখন তোর ও হয়ে গেছে ভালোই। তা কবে বিয়ে করেছিস?

” এই তো ছয় মাস হলো। তুই বিয়ে করছিস না কেনে হ্যাঁ।

” ধুর বাদ দে তো বিয়ের কথা। বিয়ে করে কি হবে করবো না বিয়ে।

” আচ্ছা তোর খবর কি এনা?

” চলছে কোনো রকম তোর?

” জীবনের মোড় যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিক দিয়েই যাচ্ছে কোনোরকম । তোর ভাই কেমন আছে?

” কোন ভাই?

” আরাভ।

” ওহ আরাভ ভাই ভালোই আছে।

” ওহ্ আচ্ছা রাখি তাহলে কাল দেখা হচ্ছে।

কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় হেফজিবা। বেলকনিতে এসে আকাশের পানে চেয়ে বলে,,

” ভুলেও ভালোবাসার মানুষ ব্যাতিত অন্য কাউকে বিয়ে করিস না এনা। তাহলে আমার মতো পস্তাতে হবে। আমি যদি পারতাম আর সে যদি মুখ ফুটে একবার বলতো তাহলে চলে যেতাম তার সাথে। আফসোস তার চোখে নিজের জন্য এতো ভালোবাসা দেখেও মানুষটা আমাকে জানাতে পারলো না। প্রতিদিন এই মা’রামা’রি ঝ’গড়া করতে করতে আমি হাঁপিয়ে গেছি। একটু খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চাই। এখানকার অক্সিজেন গুলো কালো ধোঁয়ার মতো বি’ষাক্ত। যা প্রতিদিন একটু একটু করে আমায় শেষ করে দিচ্ছে। কথাটা বলেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া জল টুকু মুছে নিলো। নিচ থেকে শাশুড়ির ডাক আসায় তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে গেলো। নিচে নেমে তাকিয়ে দেখলো তার স্বামি আজও ম’দ খেয়ে বাড়ি ফিরেছে এই ভরদুপুরে। বিয়ের পর থেকে এখন অব্দি এটা যেনো রোজকার রুটিনে পরিনত হয়েছে। শাশুড়ীর দিকে তাকাতেই হেফজিবার শাশুড়ী এথালিয়া অসহায় চোখে হেফজিবার দিকে তাকায়। হেফজিবা তপ্ত শ্বাস ফেলে তার স্বামি স্যামিয়ুল কে ধরে রুমে নিয়ে আসে। আলমারি থেকে জামাকাপড় ব্যাগে ঢুকিয়ে শাশুড়ীর রুমে এসে বলে,,

” মা আমি আসি। আপনার ছেলে উঠলে বলে দিয়েন আমি চলে গেছি। কয়েক দিন পর চলে আসবো।

” স্যামিয়ুল শুনলে তো কেলেংকারী হয়ে যাবে। ও তো তোমার উপর আবার অ’ত্যাচার করবে। তার চেয়ে না গেলেই কি নয়।

” এভাবে আর কতোদিন মা। বিয়ের ছয় মাস হয়ে গেলো বাবার বাড়ি যাই না। আপনার ছেলে যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমার পক্ষে কি সংসার করা আদৌও সম্ভব হয়ে উঠবে। রোজ আপনার ছেলে মদ খেয়ে বাহিরের মেয়েদের সাথে মেলামেশা করে মাঝ রাতে বাড়ি ফেরে তো কখনো ভরদুপুরে। বুঝলাম এটা কানাডা এখানে এসব নর্মাল কিন্তু মা আমি তো চমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারবো না। আপনি ও চাইবেন না আপনার স্বামী বাহিরের মেয়েদের সাথে সম্পর্ক রাখুক। সম্পর্ক টা এখন তাদের বেড অব্দি চলে গেছে। সে যদি বাহিরের মেয়েদের নিয়েই বেড অব্দি যাবে তাহলে আমায় কেনো বিয়ে করছে। এসব কথা থাক এখন, আমি যাচ্ছি আপনার ছেলেকে বলে দিয়েন।

কথাটা বলে হেফজিবা ল্যাগেজ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। তিক্ততায় ভরা পরিবেশ থেকে অন্তত কয়েকটা দিন শান্তিতে থাকতে পারবে।

এনা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আকাশটা কালো মেঘে ঢাকা পড়ে গেছে। বৃষ্টি আসবে বোধহয় । এনা বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতেই সামনে তাকিয়ে দেখে পিটার এক বৃদ্ধ লোকের সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এনা কিছু একটা মনে করে দৌড়ে পিটারের সামনে চলে আসে। পিটার ডক্টর সাইমনের সাথে কথা বলতেছিলো। হঠাৎ সামনে এনাকে দৌড়ে আসতে দেখে হাঁটা থামিয়ে এনার দিকে তাকায়। ডক্টর সাইমন পিটারকে বলে,,

” পিটার আমি বাসায় গিয়ে তোমাকে ইনফর্ম করে জানিয়ে দিবো কেমন।

পিটার সায় জানালে ডক্টর সাইমন সেখান থেকে চলে যায়। পিটার এনাকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই এনা বলে উঠে,,

” কেমন আছেন পিটার?

কানাডায় আসার পর এখনও তাদের মধ্যে কথা হয় নি একে ওপর কে জিজ্ঞেস করা হয়নি কেমন আছে তারা।

পিটার মৃদু হেসে বলে,,

” যেমনটা রেখে গিয়েছিলে তেমনটাই আছি। তুমি নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো তাই না এনা।

এনা পিটারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে চেয়ে বলে,,

” হ্যাঁ দেখতেই তো পারছেন কতোটা ভালো আছি।

” হুমম তা তো দেখতেই পাচ্ছি। রাত জাগো কেনো হুমম এই বয়সে এতো চিন্তা কিসের তোমার?

” কে বললো রাত জাগি।

” তোমার এই চোখের নিচে কালি পড়ে যাও দুটি মায়াবী চোখ আমায় জানান দিচ্ছে।

” এখন আর এই চোখ মায়াবী নেই। এটা এখন বাঁধ ভাঙা নদীর মতো হয়ে গেছে। আপনার ওয়াইফ কেমন আছে পিটার? আপনাদের বুঝি সন্তান ও আছে?

পিটার এনার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসে।

” বাসায় যাও এনা বৃষ্টি আসবে আকাশের অবস্থা ভালো না।

” হুম যাচ্ছি। আপনার হাতে ওটা কি?

” মেডিসিন।

” কার জন্য?

” হ্যাভেনের জন্য।

” হ্যাভেনের কি হয়েছে।

” কিছু না বাসায় যাও।

এনা আর মুখ দিয়ে কোনো বাক্য বের না করে চুপচাপ পিটার কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। পিটার একবার এনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে সেও চলে আসে সেখান থেকে।

পিটার বাসায় এসেছে প্রায় ঘন্টা খানেক হবে। বিছানায় বসে সিগারেট জ্বালাতে নিবে এমন সময় পাশের ঘর থেকে অ্যাঞ্জেলেকার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। পিটার সিগারেট টা বিছানার উপর রেখে রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুমে গিয়ে দেখে হেলেন এনাকে বকছে। পিটার রুমের ভেতর ঢুকতেই অ্যাঞ্জেলেকা দৌড়ে পিটারের কোমড় জড়িয়ে ধরে। অ্যাঞ্জেলেকাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,,

” মাম্মাম কি করছো তুমি যে তোমার মম তোমাকে বকছে।

” পাপা আমি কিছু করি নি। আমি তো শুধু মম কে বলেছিলাম স্যুপ খাবো না আমাকে পাস্তা বানিয়ে দাও। সেটা বলায় মম বকছে আমায়।

পিটার অ্যাঞ্জেলেকা কে কোল থেকে নামিয়ে বলে,,

” মাম্মাম তুমি তোমার রুমে যাও আমি পাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি।

অ্যাঞ্জেলেকা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পিটার রাগান্বিত হয়ে হেলেনের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” সমস্যা কি তোমার সামান্য পাস্তাই তো বানিয়ে দিতে বলছিলো। সেজন্য কি বকতে হবে তাকে।

” আশ্চর্য আমি কি আমার মেয়েকে বকতেও পারবো না।

” হ্যাঁ বকতে পারবে না কেনো অবশ্যই পারবে। কিন্তু আমি তো কোনো অন্যায় দেখছি না অ্যাঞ্জেলেকার। অন্যের রাগ বাচ্চা মেয়েটার উপর না ঝাড়লেই কি হচ্ছিলো না।

হেলেন ছুটে এসে পিটার কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,,

” পিটার আপনি আমায় কেনো মানছেন না। এভাবে আর কতদিন থাকবো আমি। আমার ও শখ হয় কারো ভালাবাসা পাওয়ার। ঐ মেয়ের মাঝে কি এমন আছে? আজ তো দেখলাম এনাকে। নিঃসন্দেহে এনার চাইতে আমি বেশি সুন্দরী। তার মুখে জায়গায় জায়গায় ব্রণ চোখের নিচে ডার্কনেস। তার থেকে কি আমি কম সুন্দরী! এনাকে তো পাবেন না তাহলে আমায় কেনো মেনে নিচ্ছেন না।

পিটার হেলেন কে নিজেড় থেকে ছাড়িয়ে ধাক্কা মে’রে দূরে সরিয়ে দেয়। ঘৃনা ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলে,,

” ছিঃ হেলেন তোমায় দেখে আমার জাস্ট ঘৃণা লাগছে। তুমি এনার সাথে নিজের তুলনা করছো! তোমার লজ্জা করে না এসব বলতে। তুমি বিবাহিত তোমার স্বামী অসুস্থ হয়ে চার বছর ধরে কোমায় পড়ে আছে। আর তুমি কি-না তারই বড় ভাইকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো।

হেলেন পাশ থেকে ফুলদানি টা উঠিয়ে সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলে,,

” না আমার লজ্জা করে না। আপনার মা আমার লাইফ টা একদম হেল করে দিচ্ছে। সারাদিন কানের কাছে মাছি মতো ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। আমিও মানুষ আমার ও সহ্যের একটা সীমা আছে। আজ হ্যাভেনের এই অবস্থার জন্য একমাত্র আপনার মা দায়ী। তার কাছে শুধু নিজের ইচ্ছের ই দাম আছে নিজের ইচ্ছে অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়। তার একবার মনে হলো আমি হ্যাভেনের যোগ্য না আর এখন তার মনে হলো আমি আপনার যোগ্য। উনি একটা নারী তার পর মা হয়ে কি করে পারে ছেলে মেয়েদের সাথে এমন করতে। আপনার আমার হ্যাভেন অ্যাঞ্জেলেকার জীবন টাকে তচনচ করে দেওয়ার জন্য আপনার মা দায়ী। আমার মেয়েকে বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছে আপনার মা। আর আপনি পারেন না আপনার মা’কে বলতে সে কেনো বারবার আমার কাছে এসে আপনাকে নিয়ে এসব ভাবতে বাধ্য করে। আদৌও হ্যাভেন কোমা থেকে ফিরবে তো নাকি ম’রেই যা,,,,

শেষের কথাটুকু আর বলতে পারলো না হেলেন। সাথে সাথে হেলেনের গালে চ’ড় বসিয়ে দেয়,,,

৬।

গালে হাত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হেলেন। তার সামনে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে অ্যাডেলা উইলসন। বারবার ঘনঘন শ্বাস ফেলছে অ্যাডেলা। তার শ্বাস ফেলার শব্দ জানান দিচ্ছে সে কি পরিমানে জেগে আছে। হেলেনের দিকে দু কদম এগিয়ে বলে,,

” তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হই। তুমি হ্যাভেনের মৃ’ত্যু কামনা করছো। আর আমি কখন তোমার মাথা খেয়েছি পিটার কে বিয়ে করার জন্য। যেখানে আমি তোমাকে হ্যাভেনের স্ত্রী হিসেবেই মানি নি সেখানে ভাবলে কি করে আমি পিটারের পাশে তোমাকে মানবো। তোমাকে ইচ্ছে করছে জা’নে মে’রে ফেলতে। তোমার কি মনে হয় পিটার জানে না। পিটার কে আগে থেকেই সাবধান করে দিয়েছিলাম। তোমার চালচলন দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম আমার ছোট ছেলেকে রেখে এখন আমার বড় ছেলেকে ফাঁসাবে।

হেলেন ভয়ে এক ঢোক গিলে। এই মহিলাকে দিয়ে তার ভরসা নেই। সত্যি সত্যি মে’রে ফেলতেও দু বার ভাববে না। মহিলা টা তো বাসায় ছিলো না। আসলো কখন তাহলে? এই তো একটা সুযোগ ছিলো পিটারের কাছে এই মহিলার ব্যাপারে এসব বলে কান ভাঙানোর। সব প্ল্যান ভেস্তে দিলো মহিলা টা। হেলেন কিছু একটা ভেবে অ্যাডেলার পা ধরে কান্নারত কন্ঠে বলে,,

” মা ভুল হয়ে গেছে কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলছি মাথার ঠিক ছিলো না। আমায় মাফ করে দিন। এই ভুল আর হবে না।

অ্যাডেলা হেলেনের থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নেয়। হুংকার দিয়ে বলে,,

” তুমি কেবল মাত্র এই বাড়িতে আছো অ্যাঞ্জেলেকার জন্য। ও আমার হ্যাভেনের সন্তান বলে তোমায় এবার ছেড়ে দিচ্ছি। দ্বিতীয় বার কিন্তু ছেড়ে দিবো না। আর তোমার লজ্জা হওয়া উচিত ছিলো আমার ছেলেটা কোমায় পড়ে আছে তার সেবা যত্ন না করে তুমি এখন আমার বড় ছেলের পেছন পড়ে আছো। ছোটলোক দের বিয়ে করলে তো এমন ই হবে। ক্যারেক্টারলেস মেয়ে একট।

কথাটা বলে বেরিয়ে যায় অ্যাডেলা। হেলেন বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রাগে তার সারা শরীর জ্বলছে। এই মহিলা উঠতে বসতে ছোটলোক বলে খোঁটা দেয়। শুধু সম্পত্তির জন্যই এখনো পড়ে আছি এই বাড়িতে তা না হলে কবেই চলে যেতাম এই বাড়ি ছেড়ে। পিটার টাও এক নারীতে আসক্ত শুদ্ধ পুরুষ। বেটাকে কিছুতেই নিজের বাগে আনতে পারলো না। কবে এই হ্যাভেন কোমা থেকে সুস্থ হবে আর নিজেদের সম্পত্তির ভাগ নিতে পারবে।

পিটার ছাঁদে এসে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে পিটার নিজেই অবাক হয় মানুষ কি করে পারে ভালোবাসার মানুষটার বিপদে তার পাশে না থেকে উল্টো নিজের সুখের সন্ধান অন্যত্র খুঁজতে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কালো মেঘের সাথে থাকা চাঁদ টার উদ্দেশ্যে বলে,,,

” আচ্ছা চাঁদ কিভাবে পারে তারা ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে অন্যত্র সুখ খুঁজতে। আমি তো পারি নি এনা ব্যাতিত অন্য কারো কাছে নিজের সুখ খুঁজতে। হ্যাভেন আর হেলেন তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো তাহলে হেলেন কি করে বদলে গেলো। আজ হ্যাভেন কোমায় না থাকলে হয়তো হেলেন এমন বদলে যেতো না।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এনা ফ্রেশ হয়ে পুরোপুরি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়। সাতসকাল এনা কে রেডি হয়ে নিচে নামতে দেখে ফারাহ্ বেশ অবাক হয়। এনার দিকে এগিয়ে এসে বলে,,

” কি ব্যাপার ননদীনি সাতসকাল বেলা কোথায় যাওয়া হচ্ছে।

এনা হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,,

” ভাবি হেফজিবা এসেছে শশুর বাড়ি থেকে। তাি মিট করতে যাচ্ছি।

” তার জন্য এতো সকালে।

” শুধু কি হেফজিবা আসছে নাকি আমাদের পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড,ক্লো, আনন্দ, আসছে।

” বাপ্রে সবাই তাহলে মিট করছো।

” হ্যাঁ ভাবি তুমি ও চলো তাহলে।

” না তোমার ভাই আসবে আজ। এসে আমায় বাসায় না দেখলে বাবু রাগ করবে।

এনা কিছু না বলে মুচকি হেসে বেড়িয়ে যায়।

বোর্ডেন্স পার্ক শহরতলী এলাকায় অবস্থিত। পার্ক টির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এনা এখানল আরও একটি পার্ক যা ঠিক এডমন্টন সিটি এক্সিবিশন সেন্টারের সামনে অবস্থিত। পার্কের আরেক পাশে রয়েছে নর্থল্যান্ড ফার্ম যেখানে গ্রীষ্ম কালে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ করা হয়। এই পার্কটি এত আহামরি কিছু নয় বা এখানে আহামরি কিছু দেখবার আছে। পার্কের ভিতরে নানা ধরণের ভাস্কর্য রয়েছে যার কারণে অন্যান্য পার্ক থেকে এটা একদমই আলাদা। পুরো পার্কটি সবুজের চাদরে ঢাকা, ভিতরে হাঁটার জন্য আলাদা ওয়াকওয়ে রয়েছে। শিশুদের জন্য আলাদা প্লে- গ্রাউন্ড রয়েছে। বনভোজনের জন্য অনেকগুলো শেড রয়েছে। মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াক করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বসার বেঞ্চের অভাব নেই। সপ্তাহশেষে কিংবা বিশেষ কোন দিনে এখানে ভিড় একটু বেশি থাকে। যেমন গত জুলাই ১ এ অনুষ্ঠিত কানাডা ডে তে এখানে ভিড় লক্ষ্যনীয় ছিল। এবং গত রোজার ঈদের দিনেও এখানে অনেক বাঙালী পরিবার এবং অনেক মুসলিম পরিবার এসেছিলেন সময় কাটাতে। এই পার্কে সারি সারি পাইন গাছ এবং ঝাউ গাছ লক্ষ্যনীয়। গ্রীষ্মকালে এই স্থানটি চিরসবুজ থাকলেও, শীতকালে তা হয়ে ওঠে চিরশুভ্র। শীতকালীন সময়ে এই পার্ক জনমানব শূন্য থাকে সবসময়।

এনা বারবার হাত ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে সে দাঁড়িয়ে আছে এখানে কারো দেখা মিলে নি। সাইড ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে আনন্দের নাম্বারে ফোন করতেই আনন্দ ফোন কেটে দেয়। এনা বিরক্ত হয়,ফের আনন্দর নাম্বার রেখে হেফজিবার নাম্বারে ফোন করে। হেফজিবা ও ফোন কেটে দেয়। এবার এনার প্রচন্ড রাগ লাগছে। এতোক্ষণ ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাদের আসার নাম গন্ধ নেই তার উপর ফোনটাও ধরছে না। হেফজিবার ফোনে ছোট করে একটা টেক্স দেয় সে চলে যাচ্ছে। মেসেজ টা সেন্ট করতে দেরি কিন্তু পেছন থেকে হুড়মুড়িয়ে পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড,ক্লো, আনন্দর আসতে দেরি হয় নি। এনা হঠাৎ তাদের দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। সন্দিহান চোখে জিজ্ঞেস করে,,

” কি রে তোরা এখন কোথায় থেকে আসলি। ফোন দিয়েছিলাম ধরিস নি কেনো একটাও।

হেফজিবা এগিয়ে এসে এনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” দোস্ত কতগুলো বছর পর তোকে জড়িয়ে ধরলাম। সব বিষাক্ত তিক্ততা যেনো উধাও হয়ে গেলো। আর আমরা কেবলই এসেছি তুই যখন ফোন দিলি তখন গাড়ি থেকে নামছিলাম তাই আর রিসিভ করি নি।

এনা হেফজিবা কি জড়িয়ে ধরলো। কতোগুলো বছর পর প্রানপ্রিয় বান্ধবী কে দেখতে পেলো। আনন্দ এনার থেকে হেফজিবা কে ছাড়িয়ে এনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” দোস্ত আমাকেও একটু জড়িয়ে ধর। আমি তোর বাংলাদেশে তোর বাসার পাশে ছিলাম না। আমিও কানাডাতেই ছিলাম ছয় বছর পর আমিও তোকে দেখলাম।

আনন্দের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেঁসে ফেলে। আনন্দের মাথায় চাটি মে’রে বলে,,

” হয়েছে আর সেন্টি খেতে হবে না।

কথাটা বলে পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড, আর ক্লো এর দিকে তাকাতেই তারা এগিয়ে আসে। ক্লো এনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” ভালো আছিস তুই?

এনা ক্লো এর পিঠে হালকা চ’ড় মে’রে বলে,,

” ছাড় বেদ্দপ আমার জান বেরিয়ে গেলো। এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে।

ক্লো এনাকে ছেড়ে দেয়। পাবলো, অ্যানিয়াস,জ্যারেড। এনার সাথে হ্যান্ডসেক করে। পাবলো এনাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,

” এনা তুই অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস। বাংলাদেশে কি ভাতের অভাব ছিলো নাকি তোর বাপ তোরে ভাত দিতে পারে নি কোনটা।

জ্যারিড অ্যানিয়াস ও পাবলোর কথায় সায় জানিয়ে বলে,,

” তাই তো রে এনা তোর চেহারার এই অবস্থা কেনো। যখন ভিডিও কল দিতি তখন তো এমনটা দেখাচ্ছিলো না।

এনার এদের এতো প্রশ্ন করা দেখে বলে,,

” তোরা চুপ করবি। মিট করতে এসেছিস নাকি আমায় এটা ওটা জিজ্ঞেস করে সময় ব্যায় করতে এসেছিস।

হেফজিবা এনার কথাকে সমর্থন করে বলে,,

” হ্যাঁ বাদ দে এসব কথা। চল আগে ঘুরি ফিরি খাওয়াদাওয়া করি তারপর কথাবার্তা।

শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র জ্যাস্পার এভিনিউ থেকে কিছুদূর হাঁটলেই চোখে পড়বে এক বিশাল খোলা জায়গা যেখানে কবুতরেরা বিচরণ করছে। খোলা স্থানটি ঠিক এডমন্টন পাব্লিক লাইব্রেরীর সামনে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার উইন্সটন চার্চিলের নামে এই স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই খোলা স্থানে অনেক ফুলের গাছের সারি আপনার চোখে পড়বে, যা এখানকার পরিবেশকে রঙিন করে তুলেছে। একপাশে পাব্লিক লাইব্রেরি এবং এর অপর পাশে স্থাপিত হয়েছে এডমন্টন কমিউনিটি হল যা একটি মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য কর্ম। দুটো পিরামিড আকৃতির ভবনের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে এই কমিউনিটি হল যার একপাশে আছে একটি লম্বা মিনার এবং এর উপরে একটি বড় ঘড়ি ফিট করা আছে। পিরামিড আকৃতির স্থাপত্য দুটি সম্পূর্ণ কাঁচের তৈরি এবং সূর্যের আলোর প্রতিফলন এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলে। ওপেন স্কয়ারের ঠিক মাঝখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে যার সম্পর্কে আমার কোন সঠিক ধারণা নেই। তাছাড়াও এখানে আরও কয়েকটি স্ট্যাচু রয়েছে। এই ওপেন স্কয়ারের ঠিক নিচেই রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড এল আরটি ট্রেইন স্টেশন এবং পূর্বপাশের রাস্তা পার হলেই চলে যাতে পারেন আলবার্তো আর্ট গ্যালারিতে । এখানে প্রায় সময়ে বিভিন্ন ওপেন সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য সময়ে এই স্থানটি প্রায় ফাঁকা অবস্থায় থাকে। অনেকেই এখানে ইভিনিং ওয়াক করতে আসেন। তাছাড়াও জ্যাস্পার এভিনিউতে অবস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীগণ অফিস ব্রেকে এখান থেকে ঘুরে যান। এখানে বিশ্রাম নেবার জন্য অনেকগুলো সিটিং বেঞ্চ রয়েছে। সিটিং বেঞ্চ গুলোতে বসে আছে এনা, হেফজিবা পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড,ক্লো, আনন্দ। ঘুরাঘুরি করে হাপিয়ে গেছে তারা। তাই খানিকটা বিশ্রাম করার জন্য তারা এখানে বসেছে।

হঠাৎ সামনের দিকে তাকাতেই বেশ চমকে উঠে এনা সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে। পিটারের স্ত্রী অন্য এক লোকের সাথে হাতে হাত ধরে ঘুরছে। আর লোকটার কোলের এক বাচ্চা আনুমানিক বয়স হবে তিন। এনা কথার মাঝেই হঠাৎ উঠে দাঁড়াতেই হেফজিবা পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড,ক্লো, আনন্দ, সবাই ভ্রু কুঁচকে এনার দিকে তাকায়। এনা কিছু না বলে সামনে থাকা লোকটার কাছে দৌড়ে চলে যায়।

#চলবে?

( ভুল ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)

আগের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=299843615758139&id=100071975089266&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here