আমার_ভীনদেশী_এক_তারা #পর্ব৩ #Raiha_Zubair_Ripte

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব৩
#Raiha_Zubair_Ripte

কানাডার রাত ১১ টা বাজে। চারদিকে নিস্তব্ধতা। ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে এনা। রুমে কিছুতেই এনার ঘুম আসছিলো না। বারবার শুধু পিটারের মুখটা ভেসে উঠছিলো। তাই তো ছাঁদে এসেছিল মনটাকে একটু ফ্রেশ করার জন্য।

” রাত তো অনেক হলো এনা। এবার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। সকাল সকাল উঠে যেতে হবে তো সেখানে।

এনা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে হাঁটা দেয় রুমের উদ্দেশ্যে। সিঁড়িতে পা ফেলতেই পেছন থেকে আরাভ বলে উঠে,,

” আচ্ছা এনা তুমি কি এখনো পিটার কে ভালোবাসো? তাকে কি আদৌও মন থেকে ভুলতে পেরেছো?

কথাটা কর্ণকুহর হতেই থমকে যায় এনা। সাথে সাথে দু কদম পিছিয়ে আসে । সামনে ঘুরে আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হঠাৎ এ কথা কেনো বলছো আরাভ ভাই?

আরাভ রেলিং থেকে সরে এসে এনার সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে বলে,,

” না এমনি। ভালোবাসো তাকে এখনো?

” না বাসি না ভালো।

” বিশ্বাস হচ্ছে না।

” বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে।

” তোমার চোখ তো সে কথা বলছে না এনা। তোমার চোখে এখনো তার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই। চোখ তো কখনো মিথ্যা কথা বলে না এনা।

” আমি আসি আরাভ ভাই ঘুম পাচ্ছে।

কথাটা বলে এনা পেছন ফিরতে নিলে আরাভ আবার বলে উঠে,,

” পালাতে চাইছো?

এনা এবার আর না ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,,

” আমি যদি পালাতেই চাইতাম আরাভ ভাই তাহলে দ্বিতীয় বার এই দেশে আর ফিরতাম না। তার প্রতি যা আছে তা এখন সব লুকায়িত। সেসব জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চাই না। আর এখন সে তার সংসার নিয়ে ব্যাস্ত সে অনেক সুখি আছে। তাই এই কথা দ্বিতীয় বার বলে আমায় আর অস্বস্তিতে ফেলো না দয়া করে।

আরাভ এনার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসে। ফোনের গ্যালিরিতে ঢুকে সেই হাস্যজ্বল মেয়ের ছবিটা বের করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” এনা তুমি বড় বড্ড বোকা জানো তো। না জেনেই কত কিছু ভেবে ফেলেছো। যদি সত্যি টা জানতে।

এনা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। আরাভ ভাই জেনেশুনে কেনো বারবার পিটারের কথা তুলছে? কষ্ট হয় আমায়। মানুষটাকে তো নিজের থেকেও অনেক ভালোবাসি। ছয় বছর আগেও আমার ভালোবাসা যেমন ছিলো এখনও তেমনই আছে। কথাটা ভাবতেই চুলগুলো দু হাত দিয়ে টেনে ধরে এনা। ভাগ্য এতো খারাপ কেনো আমাদের। ভালোবেসেও পেলাম না দুজন দুজনকে। এই বিচ্ছেদের থেকে তো ম’রণই ভালো ছিলো। ছয়টা বছর ধরে বিচ্ছেদের যন্ত্র’ণায় শেষ হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা পিটার আপনিও কি আমার মতো প্রতি রাতে বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। নাকি নিজের স্ত্রী কে বাহুডোরে নিয়ে ভলোবাসার ঊষ্ণতে মেতে উঠেন। না আর ভাবতে পারছি না কথাটা বলে বেডের পাশে থাকা টেবিলের ড্রয়ার থেকে একপাতা ঘুমের ঔষধ বের করে। সেটা থেকে একটা ট্যাবলেট বের করে সেটা মুখে নিয়ে পানি খায়। পানির গ্লাস টা টেবিলে রেখে বিছানায় শুয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,

” প্রতি রাতের সঙ্গী এটা জানেন তো। এই এক সঙ্গী আমার। একমাত্র এই সঙ্গীই পারে আমাকে খানিকটা সময় আপনাকে ভুলিয়ে রাখতে।

______________________

সাত বছরের এক বাচ্চা মেয়ের মাথার কাছে বসে আছে পিটার। বাচ্চা মেয়েটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। পিটার বাচ্চাটার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,

” you are my little Princess Angelica (তুমি আমার ছোট রাজকন্যা অ্যাঞ্জেলিকা)

” i know i am your little Princess papa (আমি জানি আমি তোমার ছোট রাজকন্যা পাপা)

হঠাৎ অ্যাঞ্জেলেকার মুখ থেকে এমন কথা শুনে চমকে উঠে পিটার। সরু চোখে অ্যাঞ্জেলেকার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” You’re still awake Princess! I thought my Princess was asleep. (তুমি এখনো জেগে আছো প্রিন্সেস! আমি তো মনে করেছি আমার প্রিন্সেস ঘুমিয়ে পড়েছে।)

অ্যাঞ্জেলেকা শোয়া থেকে উঠে পিটারের কোলে বসে বলে,,

” No’ Papa I was asleep. When you kissed my forehead my sleep was broken.(না ‘পাপা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তুমি যখন আমার কপালে চুম্বন করলে তখন আমার ঘুম ভেঙে গেল।)

পিটার অ্যাঞ্জেলেকা কে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমের চেয়ারে অ্যাঞ্জেলেকা কে বসিয়ে দিয়ে বলে,,

” Your Papa is responsible for breaking your sleep.(তোমার পাপা তোমার ঘুম ভাঙার জন্য দায়ী।)

” হ্যাঁ পাপা।

” বাহ! প্রিন্সেস আবার বাংলা ও বলছে। কি খাবে এখন আমার প্রিন্সেস টা।

” nothing. (কিছু না।)

” Why?(কেনো?)

” you know আগামীকাল স্কুলে প্যারেন্টস মিটিং।

” হ্যাঁ তো কি হয়েছে প্রিন্সেস।

” সেখানে বাবা মা দুজন কেই থাকতে বলেছে টিচার।

” সমস্যা কোথায় আমি যাবো কাল তোমার স্কুলে।

” তুমি যাবে!

” হ্যাঁ কেনো?

” না মানে ওটা তো প্যারেন্টস মিটিং।

কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে পিটার।

” হ্যাঁ আমি জানি ওটা প্যারেন্টস মিটিং। ওখানে বাবা মা দুজনকেই থাকতে হ….

কথাটা আর শেষ করতে পারে না পিটার। অ্যাঞ্জেলেকার দিকে তাকাতেই দেখে অ্যাঞ্জেলেকা চেয়ার থেকে উঠে ছুটে রুমে চলে যায়।

সকাল হয়ে গেছে জানালার পর্দা ভেদ করে সূর্যের আলো এনার চোখ মুখে এসে পড়ছে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে এনা। পাশে থাকা চাদর টা শরীরে হালকা টেনে নিতেই হঠাৎ এনা অনুভব করলো কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। হঠাৎ এমন অনুভূত হওয়ায় ঘুম সব উবে যায় এনার। চোখ খুলে জড়িয়ে ধরা মানুষটাকে দেখে এনা ভরকে যায়।

জড়িয়ে ধরা মানুষটা মাথা উঁচু করে মেকি হাসি দিয়ে বলে,,

“বাউন-ঝুর এনা বেবি”

#চলবে?

( ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। বাউন-ঝুর মানে সুপ্রভাত ফ্রান্সের ভাষায়। বোঝার সুবিধার্থে জানিয়ে দিলাম। আর কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগছে গল্পটা। হ্যাপি রিডিং)

আরো সুন্দর সুন্দর গল্প এবং গল্পের লিঙ্ক পেতে হতে গ্রুপটিতে জয়েন করুন।গ্রুপটি সম্পর্কে (রিভিউ আলোচনা সমালোচনা) করতে গ্রুপটিতে জয়েন হওয়ার অনুরোধ রইল।

https://facebook.com/groups/273212672043679/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here