আমার_অপ্রিয়_আমি,শেষপর্ব
রিলেশন_সিরিজ
Ipshita_Shikdar samia
❤
ভেবে নিয়েছি বিশ্বাসের বলেই যেহেতু সবটা টিকে আছে তাহলে অবিশ্বাস করার উপায় কোথায়? বিশ্বাস করলাম তার এই কথাও। একটা গাঢ় বেগুনি রংয়ের জামদানি শাড়ি পড়ে তার সাথে হিজাব পড়ে তৈরি হয়ে নিলাম। আমি সাজগোজ করছি তেমন সময়ই কাব্য ওয়াশরুম থেকে নীল রংয়ের পাঞ্জাবি আর গ্যাবার্ডিং প্যান্ট পড়ে বের হলো। বের হয়েই বারান্দায় চলে গেলো তোয়ালে রোদ দিতে। আমি আয়নার দিকে মুখ করে থাকায় সে আমাকে দেখেনি তবে আয়নার দ্বারা আমি তাকে ঠিকই দেখছি। যদিও তাকে দেখতে বেশ ভালো লাগছিলো তবুও মনে হলো আমরা যদি সিরিয়ালের নায়কনায়িকা হতাম কত ভালো হতো, অজান্তেই আমাদের কাপড়ের রঙ মিলে যেতো।
খাণিক বাদেই আম্মু এসে বললো,
— তোর শশুরবাড়ির লোক এসে পড়েছে তোদের নিতে, তাই তাড়াতাড়ি গোছগাছ করে ড্রইংরুমে এসে পড়! বাবা তোমাকেও বিয়াই ডাকছে!
কাব্য মুচকি হেসে,
— আমি তৈরি তাই চলো আম্মু।
কাব্য চলে যেতেই আমি নিজের ও তার ব্যাগ, সুটকেসে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিলাম। যদিও সব বিয়ের দিনই নিয়ে গিয়েছিলাম তবুও কিছু জিনিসাদি বাকি ছিলো। নিজের ব্যাগটা গুছিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলমাম কিন্তু সোফায় চোখ পড়তেই চোক্ষু চড়কগাছ। কাব্যর স্যুটকেস খোলা ও অগোছালো অবস্থায় সেখানে পড়ে আছে, প্রচণ্ড বিরক্তি লাগা সত্ত্বেও গুছিয়ে নিলাম। গুছাতে গুছাতে আনমনেই হেসে উঠলাম।
হয়তো ভালোবাসার মানুষের জন্য কিছু করতে প্রতিটি মানুষেরই আনন্দ লাগে। বাবার বাড়িতে যে নারী এক গ্লাস পানি উঠিয়ে খায় না, স্বামীর সংসার সে একা হাতে সামলায়।
সব প্যাক করে রেখে ড্রইংরুমে গেলাম, ততক্ষণে রাত প্রায় আটটা সবাই কথা বলায় মশগুল আবার কেউ কেউ খেতে বসেছে। আমি যেয়েই মুচকি হেসে শশুরবাড়ির সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম,
— আসসালামুআলাইকু বাবা, মা আর ফুপিমা। কেমন আছেন আপনারা?
শাশুড়িমা সালামের জবাব দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ ‘ বললেন। শশুড়বাবাও তাই। তবে ফুপিমা ভেঙচি কেটে বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলেন,
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। তবে এতো দেরিতে আসলে যে? নাকি এটুকো জানো না শশুরবাড়ির লোক বাড়ি আসলে তাড়াতাড়ি দেখাসাক্ষাৎ করতে হয়, তাছাড়া পা ধরে সালাম দিতে কি কষ্ট লাগে নাকি!
তার কথায় বেশ মেজাজ খারাপ হলো তাই উত্তরে কিছু বলবো তখনই চোখে পড়লো আমার আম্মাজান ইশারায় চুপ থাকতে বলছে। অগত্যা মুখে কুলুপ এঁটে বসলাম। বিড়বিড় করে বললাম,
— ‘বাঙালি বাপমাও না অদ্ভুত জীব, ধুর! ভালো লাগে না!’
তখনই কাব্যর ধারালো বাণীগুলো কানে আসে,
— আসলে ফুপি আমি তো ফুপার মতো অতশত কাজ পারি না তাই সব কাজ আমার বউয়েরই একা শেষ করতে হয়। তাই একটু দেরি হওয়া স্বাভাবিক। তাছাড়া পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা হারাম কারণ আল্লাহ তাকে ছাড়া কোনো ব্যক্তির সামনে নত হতে নিষেধ করেছেন। কারণ প্রতিটি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব তাই যাদের সম্মান ও মর্যাদাই এক, তারা একে অপরের সামনে কি করে নত হতে পারে?
ফুপি আর কোনো কথা বললেন না বরং মুখটা কালো করে ফেললেন। আর বিড়বিড় করে বললেন,
— ‘বউয়ের গোলাম।’
উনি বিড়বিড় করে বললেও আমার কানে বেশ স্পষ্ট শুনা গেলো। কারণ তার পাশেই আমি দাঁড়িয়ে…
ব্যপারটা বেশ অদ্ভুত হলেও সত্য যখন পুরুষ বউয়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তখন সে বউয়ের গোলাম। আর যখন নিজের পিতামাতার হয়ে তাদের সাথে বউয়ের মন্দ আচারব্যবহার নিয়ে প্রতিবাদ করে তখন ফেমেনিস্টরা বলে মাম্মাস বয়, মায়ের আচলতলায় লুকিয়ে থাকা কাঠবিড়ালি। এটা এক বিশেষ কারণ ছেলেদের নারী জাতি নিয়ে ফ্রাস্ট্রেটেড থাকার।
হয়তো কাব্যর মাবাবাও শুনতে পেয়েছে। তাই কথা এড়াতে বাবা বললেন,
— আচ্ছা, বিয়ান অনেক তো সময় হলো এখন নাহয় খাওয়ার ব্যবস্থা করেন সবার। সেটা শেষ হলেই বউমা আর কাব্যকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।
— খাওয়ার ব্যবস্থা করছি তবে আজকের দিনটা থেকে যেতেন!
— নাহ, তা কি করে হয়? পরে কোনো সময় আসবোনে।
ফুপি আবার কাটকাট বাণীগুলো বললেন,
— হুম, তাছাড়া এতো মানুষ শোয়ানোর জায়গা কোথায় আপনাদের?
মায়ের শুভ্র মুখটা দেখলাম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে ফেললেন, ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার কোনোরকম নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যকেউ হলে হয়তো বেশকিছু কথা শুনিয়ে দিতো, তবে বোনের শশুরবাড়ির লোক বলে চুপ করে আছে। এবার আর আমি চুপ থাকতে পারলাম না।
বেশ শান্ত গলায় বললাম,
— ফুপিমা এই বাড়িতে শুধু আমার বংশের লোক থাকে… আমার চাচারা আর আমার এক ফুপি। যদি আমাদের ফ্লাটে না হয় কারো না কারো ফ্লাটে আপনাদের সুন্দরভাবে রাখা যাবে। আর তাতেও যদি না হয় আমার পরিবার ঢালা বিছানায় শুয়ে হলেও আপনাদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারবে। কারণ আমাদের পারিবারিক শিক্ষাই এমন।
— এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না তর্ক….
কাব্য আর বলতে না দিয়ে তীক্ষ্ম কণ্ঠে বলে,
— ফুপিমা এটাকে সাহস বা তর্ক বলে না ভুল কথা ঠিক করা কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বলে। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
তারপর কারো মাঝে কোনো কথা হয়নি। সবাই খাওয়াদাওয়া আমার বাসা থেকে বিদায় নেয় রহমান ভিলার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাই। তবে কাব্যর এমন সাপোর্টিভ আচারণে সবাই বেশ ইমপ্রেস। তার উপর ভাবি তো এক ফাঁকে আমাকে বলেই ফেলে,
— কপাল করে এমন স্বামী পাইছিস ইপশু! যে তোর উপর হওয়া সব অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদ করে। ভাগ্যবতীরাই এমন স্বামী পায় তাই স্বামীর মন যোগায় চলিস।
কথাটায় ভালো লাগার কথা হলেও মন্দই লাগলো। কারণ অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে এটাই তো স্বাভাবিক, বিশেষ কিছু নয়।
আসলে আমরা অস্বাভাবিকতার মাঝে বেশকিছুকাল ধরে বসবাস করছি তো তাই অস্বাভাবিকটাই স্বাভাবিক লাগতে শুরু করেছে। আর স্বাভাবিক ব্যপারটা অস্বাভাবিক বা বিশেষ।
বাসায় পৌঁছিয়েই নিজেদের বেডরুমে গেলাম। আমি বসে বসে রেস্ট নিচ্ছি, এর মধ্যেই কাব্য ঘরে ঢুকে আলমারি থেকে তার ট্রাউজার আর গেঞ্জি পড়ে আসলো। আমিও শাওয়ার নিয়ে একটা পাতলা কাপড়ের ধূসর রংয়ের শাড়ি পড়ে আসলাম। কাব্য তখন অফিসের কল এটেন্ড করতে ব্যস্ত। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এতক্ষণ আমার বেশ ক্লান্ত লাগলেও এখন বেশ ফ্রেশ লাগছে। আর চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। তাই চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় চলে গেলাম। সেখানের দোলনায় গা এলিয়ে তারাদের খেলা দেখতে লাগলাম।
এদিকে কাব্যর কথা শেষ হতেই ঘড়ির দিকে চোখ পড়ে। আনমনেই ভেবে উঠে,
— প্রায় আধঘণ্টা হয়ে গেলো মেয়েটা ওয়াশরুমে ঢুকেছে এখনো বের হলো না যে! আওয়াজও তো পেলাম না।
পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো বাথরুমের দরজা খোলা। তাই তাকে খুঁজতে বারান্দায় যেতেই তার চোখজোড়া স্থীর হয়ে গেলো সামনের রমণীর উপর… ভেজা চুলগুলো তার পিঠ ছড়িয়ে পড়ছে, ব্লাউজের ফাঁকে জলসিক্ত শ্যামা পিঠটাও দৃশ্যমান। নিজের আবেগকে আর ধরে রাখতে পারলো না কাব্য এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গেলো সেই নারীর দিকে। কোমরে কাব্যর স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠলো ইপশি। আবেশে খামচে ধরে কাব্যর হাত। সেও কোলে তুলে নেয় তার প্রিয়তমাকে এবং এগিয়ে যায় নিজেদের ভালোবাসাকে অপূর্ণতা দিতে।
রাত প্রায় দশটা আরাভ নির্জন এক লেকের পাড়ে বসে আছে। হাতে সিগারেট, চোখে অশ্রু, এলোমেলো চুল সবমিলিয়ে এযুগের দেবদাসের ন্যায়ই লাগছে তাকে। ভাবছে আজ কত নিস্তব্ধ ও স্থীর তার জীবন শুধুমাত্র একজন মানুষের অভাবে। হঠাৎ তার পাশে কেউ ধপ করে এসে বসায় তার ঘোর ভাঙে। পাশে তাকাতেই একটা ধাক্কা খেলো কারণ পাশে আর কেউ নয় ইশানি বসা। কিন্তু তার হাতে আজ শ্যাম্পেইন নেই বরং মৃদু এলকোহলিক বিয়ার। আরাভ অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলেও ইশা বেশ স্বাভাবিক গলায় বললো,
— এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমিও এখানে এসেছিলাম প্রকৃতির নির্জনতাকে নিজের একাকিত্বের সঙ্গিনী করতে। আর আপনাকে এখানে বসে থাকতে দেখে চলে এলাম।
আরাভ ছোট্ট করে বলল,
— ‘ওহ’
তার গলার স্বর পিঁপড়াও চাইতেও ক্ষীণ থাকায় ইশা শুনতে পেয়েছে কিনা বুঝা গেলো না। ইশা সামনের দিকে তাকিয়েই উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
— আপনার ভালোবাসা না পাওয়ার গল্পটা আজ বলার কথা ছিলো। বলছেন না কেনো তাহলে?
ইশার আচমকা প্রশ্নে আরাভ একটু অস্বস্তিবোধ করলো। তবুও আমতাআমতা করে বলতে শুরু করে,
— তেমন বিশেষ কোনো গল্প নয়। আমার প্রিয়তমা আর আমি হলাম খালাতো ভাইবোন… ছোটবেলা থেকে বেশ প্রটেক্টিভ এবং যত্নশীল ছিলাম তাকে নিয়ে। অবশ্য ব্যপারটা ভালোবাসার থেকে ঘটতো না কাজিন হিসেবে তা জানা নেই। কারণ ভালোবাসার উপলব্ধি হয় যৌবনকালে। তার প্রতি এই মায়া থেকে জন্ম নেয় ভালোবাসার বৃক্ষ। খুব করে আগলে রাখতাম তাকে সবসময়, তার ব্যথায় কাতর হতাম যা পরিবারের চোখের আড়াল হতে পারেনি। আম্মুও মামনির কাছে চেয়ে বসে তাকে আর সেও না করতে পারেনি। মোটামোটি বিয়ে ঠিক করা ছিলো আমাদের তাই তার কাছে ভালোবাসার প্রকাশ করা জরুরি মনে করিনি। ভেবেছি সে তো এমনিতেই আমার। তবে ভাগ্য বলে একটা কথা আছে তো! বিয়ের জন্য তাকে চাপ দেয়া হলে সে আমাকে ডেকে বললো তার হৃদমাঝে আরেকজনের বসবাস। যদিও সে জানতো না আমার সাথেই বিয়ে বরং সে চেয়েছিলো যার সাথে বিয়ে তাকে আমি জানাই। সেদিন ভাঙা হৃদয় নিয়ে হাসিমুখে বের হয়েছিলাম তার কাছ থেকে। এখন সে অন্যের স্ত্রী আর আমার জীবনে না পাওয়ার তালিকায় প্রথম স্থানে বসবাসরত এক ব্যক্তি।
— ওহ! বেশ লাগে এখানটায় প্রিয় ব্যক্তিটিকে অন্যের সাথে দেখতে… জ্বোলেপূড়ে ছাড়খার হয়ে যায় হৃদয়ে। আর এই হৃদমাঝের দহন কমাতেই মাদকতায় তলিয়ে পড়ে প্রতিটি মানুষ।
— হুম, যেমন আপনি বিরহবেদনা হতে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পান এই কাঁচের শিশিতে। আর আমি এই নিকেটিনের ধোঁয়ার মাঝে।
এভাবে অনেক কথা হলো তাদের মাঝে। এমনকি ফোন নম্বরসহ, ফেসবুক আইডি, হোয়াট’স এপ নম্বরও বিনিময় করলো একে অপরের মাঝে। বহুদিন পর ইশা ও আরাভের মুখে তৃপ্তির হাসি, বেশ ভালো লাগছে একই ব্যথায় ব্যথিত ব্যক্তির সাথে সময় কাটাতে। অনেকদিন পর নিজেদের একা লাগছে না বরং সম্পূর্ণ লাগছে। তারা নিজেদের কথোপকথনের মাঝেই ডুবেছিলো এমনসময় কল আসলো মিসেস আয়েশার। আরাভ কল পিক করতেই খেলো এক ঝাড়ি,
— এই ছেলে কোথায় তুমি? কয়টা বাজে খবর আছে তোমার! বারোটা বাজে এখন!
— আসলে…
— রাখো তোমার আসলে নকলে। আধঘণ্টার মাঝে বাড়ি ফিরবে নাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন!
তীব্র রাগ নিয়ে কথাগুলো বলেই কল কেটে দিলো আয়েশা। আরাভ অসহায় মুখ নিয়ে ইশার দিকে তাকাতেই সে মৃদু হেসে বললো,
— চলেন বাড়ি ফিরা যাক। অনেক তো রাত হলো, তাছাড়া আর দেরি করলো আন্টি আপনাকে ঝাঁটা ধোঁয়াই দিবেন!
বলেই হুহা করে হেসে দিলো ইশানি। তার হাসির কলরবে নিস্তব্ধ পরিবেশটাও যেনো প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠলো। আরাভ মুগ্ধ নয়নে সেই হাসি দেখছে। মনে মনে ভাবছে,
— মেয়েটা সত্যিই দেখতে অমায়িক। শুভ্র তার গায়ের রং, পিঠ সমান লালচে কালো চুল, টানা টানা চোখজোড়া, সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ঠোঁটের কোণের লাল তিলটা। হাসলে তা আরও লোভনীয় ও সৌন্দর্যময় লাগে।
হাসির মাঝেই ইশার চোখ পড়ে আরাভের দিকে। তাকে একদৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে হাসি থামিয়ে দেয়। আর আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,
— চলেন, এখন যাই।
— হ-হুম চলেন।
এভাবেই শুরু হলো তাদের পথচলা। অবশ্য ভাগ্যের জোড়ে পথচলা তো অনেককাল আগেই শুরু হয়েছিলো তবে প্রেমের শুরুটা হয়তো এখান থেকেই হবে।
রাত প্রায় তিনটে ইপশি কাব্যর বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর কাব্যর চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই। কারণ তার মাথায় খেলা করছে বিভিন্ন ভাবনা কিংবা দুর্ভাবনাও বলা যায়। আনমনেই ভেবে উঠে,
— কতদিন সত্য আড়ালে থাকবে। যদি ইপশি কোনোভাবে জেনে যায় তখন… আমাকে যদি ছেড়ে চলে যায় আমি তো নিঃস্ব হয়ে যাবো! না! না! আমি ইপশিকে নিজেই বলবো একথা তবে সম্পর্কের সুতোটা আরও মজবুত হওয়ার পর।
সিদ্ধান্ত নিয়েই ইপশিকে শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে তলিয়ে যায় ঘুমের সাগরে। সূর্যের তীব্র আলোর আগমনে ঘুম ভাঙে ইপশির। কাব্য তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন। আলতোভাবে তাকে সরিয়ে নিজেকে ঠিক করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ইপশি।
গোসল করে বের হয়ে দেখি জনাব এখনো ঘুমুচ্ছে তাই তাকে না বিরক্ত করে কিচেনে চলে। ইচ্ছে আজ নাস্তা নিজ হাতে বানানোর। কিচেনে যেতেই দেখি শাশুড়িমা কাজ করছে। আলতো হেসে বললাম,
— আসসালামুআলাইকুম মা, আমি কোনো হেল্প করবো।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম মামনি। তুমি পারবে রান্নাবান্না করতে? কখনো কাজ করেছো বলে তো মনে হয় না, আমাদের ছুটকি সেও ননির পুতুল এক গ্লাস পানিও নিয়ে পান করে না।
— সে তো এখনো ছোট, মাত্র এসএসসি দিয়েছে। আর আমি পুরোপুরি না পারলেও সখের বশে কখনো কখনো রান্না করতাম বা করার চেষ্টা করতাম। ইনশাল্লাহ পারবো আমি। আর তুমি তো আছোই একটু দেখিয়ে দিয়ো? ওহ! সরি আপনাকে তুমি বলে ফেলেছি আসলে আম্মুকে তুমি বলি তো…
— আরে তাতে কি আমিও তো তোর মা। আজ থেকে আমি তোকে তুই করেই ডাকবো আর এসব মাটা বলবি না আমাকেও আম্মু বলে ডাকবি।
— ওকেহ আম্মু।
আমি আলু ভাজি ও লুচি রান্না করলাম সবার জন্য। মা ততক্ষণে চা ও চিকেন তৈরি করে ফেললেন। কাব্যর জন্য এক পিস স্যান্ডুইচ ও কফি ট্রে করে নিয়ে আমি বেডরুমে চলে গেলাম। বেশ ডাকাডাকির মাঝেও তার ঘুম না ভাঙাতে আমি তার এক আঙুলে জোড়েসোড়ে এক কামড় দিয়ে বসলাম। সে কোকিয়ে উঠে লাফ দিয়ে বসে পড়লো যা দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
— ইপশুপাখি এগুলো কোন ধরনের বাচ্চামি? আমার মাংস তো একটু হলে…
— বেশি কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে এসো তোমার কফি গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু আবার গরম করতে কিংবা রান্না করতে পারবো না, বলে দিলাম!
— ধুর!
বলে সে কোনরকম ওয়াশরুমে গেলো। ততক্ষণে আমি বেডশিটটা বদলিয়ে খাট ঝাড়ু দিয়ে ফেললাম। কাব্য গোসল থেকে এসেই ভেজা গায়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
— উফফ! ছাড়ো আমার শাড়ি ভিজে যাচ্ছে আমার!
— তাতে আমার কি?
— আপনার নাস্তা!
— হাহ! যাও ছেড়ে দিলাম।
— কি যে ভালোবাসা! নাস্তার জন্য বউকে ছেড়ে দেয়।
— আজিব তো, তোমার ছটফটানিতে ছাড়লাম… ওয়েট, তুমি কি চাও আমি ধরি?
— একদম না! কফি আর স্যান্ডুইচ খেয়ে চলো। আজ আমি নিজ হাতে তোমার পছন্দের আলু ভাজি, লুচি রান্না করেছি। আবার আম্মু কড়াই চিকেন আর মালাই চা করেছে। সব তোমার পছন্দের।
— আর এই কফি এন্ড স্যান্ডুইচ?
— আমিই।
বলতেই কাব্য মুখের সামনে ধরলো আমি এক বাইট নিতেই সে খাওয়া শুরু করলো। তারপর সে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিলো। একটা চেক শার্ট হোয়াইটের মধ্যে, ধূসর রংয়ের স্যুট। আমি তাকে বেডে বসে দেখছি এমনসময় এক মেয়ে ঝড়ের গতিতে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। মুহূর্তেই আমার মুখটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। তবে পরমুহূর্তেই আমি আগের মতো হয়ে গেলাম কারণ কাব্য এক ধাক্কায় মেয়েটিকে নিচে ফেলে দেয়।
— উফফ! কাব্য কি করলি, ব্যথা পেলাম তো!
— তো তোকে কতবার বলেছি ঐশি আমাকে এভাবে হুটহাট ধরবি না। এমনকি একবার থাপ্পড়ও খেয়েছিস আমার হাতে। তারপরও কুত্তার লেজ সোজা হয় না।
— কাব্য! তুই এক বাইরের মেয়ের সামনে আমাদের ব্যক্তিগত কথা বলছিস!
— বাইরের মেয়ে ইপশি না। ও কাব্য রহমানের স্ত্রী এবং রহমান বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ। আর কয়েকদিনের মেহমান তো তোরা। বিয়ে উপলক্ষে এসেছিস খেয়ে চলে যাবি,কোনো ঝামেলা করবি না।
মেয়েটা সাপের মতো ফোঁসফোঁস করতে করতে চলে গেলো। আমি কাব্যর দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,
— এটা ফুপিমার মেয়ে, একদম চিপকু আর বেশ কুটনিও। আমাকে ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে বাট আই জাস্ট হেট হার! ব্লাডি ইরেটেটিং! যাই হোক এর থেকে দূরে থাকবা।
বলে কাব্য হরহর করে চলে গেলো। আমি ভাবছি, ইশা কি কম ছিলো আবার এই ঐশি আসছে? এক তো ইশা যে তার জীবনে কেনো আছে জানা নেই আরেকজন এই ঐশি দেখতেই লাগছে গাঁয়ে পড়া মাইয়া। ধুর! নিচে যাই আমি।
নিচে যেতেই আবার ফুপিমা আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলেন,
— তোমার কপাল পুড়ছে ভাবি! কি বউ আনসো, সে থাকতে তোমার সকালের এতো পদের নাস্তার আয়োজন একা হাতে করতে হয়। মা কি শিখাইসে খোদা জানে!
— আপনি ভুল বুঝছেন আপা আমি শুধু চা আর মাংসই করেছি। বাকি খাবার মামনি রান্না করেছে।
— আর ফুপিমা কারো দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের মেয়ের দিকে তাকাও আমার বউ যেমনই হোক পরপুরুষের ঘরে ঢুকে তার বউয়ের সামনে দিয়ে তার গলায় ঝুলে না তো এটলিস্ট!
ফুপিমা রেগে চেঁচিয়ে বললেন,
— কাব্য!
বাবাও তাকে সায় দিয়ে বললেন,
— কাব্য, মুখে লাগাম টানো।
— মুখে লাগাম তোমার বোনকে টানতে বলো। সারাটা জীবন আমার মাকে জালিয়েছে, মা শক্তিহীনা ছিলো তোমার মতো স্বামী ভাগ্যে থাকায়। তাই চুপ করে সহ্য করেছে। আমি প্রতিবাদ করতে গেলেও থামিয়ে দিয়েছে। আমি সহ্য করতে না পেরে একা থাকতে শুরু করেছিলাম। তা দেখে তোমার বোন ভেবেছে আমার বউকেও… নেভার! আজকের মধ্যে তোমার বোনকে তার পরিবারসহ বের করবে নাহলে কাল সকালে আমি… মনে রেখো দাদান আমার নামেও কম কিছু রেখে যায়নি।
বলে কাব্য আমার হাত টেনে বেডরুমে নিয়ে গেলো। আর যাওয়ার আগে সার্ভেন্টকে বললো,
— আমাদের নাস্তা উপরে নিয়ে এসো।
আমি বেডরুমে গালে হাত দিয়ে বসে আছি আর কাব্য সারাটা রুম ধরে হাঁটছে আর রাগে কুমুচ্ছে। সামনে নাস্তা,পড়ে পড়ে ঠাণ্ডা হচ্ছে। প্রায় দশ মিনিট পরও সে না থামলে আমি তার হাত টেনে তাকে বেডে বসাই তারপর নিজেও খাই এবং তাকেও খায়িয়ে দেই।
সে হঠাৎ হেসে বলে,
— যে নিজেই অন্যের হাতে খায় সে আমায় খায়িয়ে দিচ্ছে। ভাবা যায় এসব?
আমি জবাবে শুধু বললাম,
— ভালোবাসি।
এর মধ্যেই আমার আদুরে ননদ এসে জানালো ফুপিমা তার খানদানসহ চলে গিয়েছে। ফলে কাব্যর রাগ আগের থেকে কমে গেলো। মনে মনে বললাম, এট লিস্ট এবার পাবো শান্তির সংসার।
চার মাস পর,
ইপশি আজ ভিষণ চিন্তিত হয়ে তার মেডিকাল টেস্টের রিপোর্ট দিবে বলে। বহুদিন ধরেই শরীর খারাপ কাব্যকে বলেনি ভয়ে, যদি কোনো দুঃসংবাদ হয়। কোনোরকম হিজাব পেঁচিয়ে ও বোরখা পড়ে হাসপাতাল চলে যায়। এখন ডাক্তার মায়ার ক্যাবিনে বসে আছে সে, ভয়ে এসি থাকা সত্ত্বেও দরদর করে ঘামছে।
— ম্যাম রিপোর্টে কি এসেছে? ইজ সামথিং রং?
— নাথিং মাচ। বাট দেয়ার ইজ আ গুড নিউস মিসেস ইপশিতা।
— গুড নিউস মিনস… আই মিন হোয়াট?
— ইউ আর প্রেগন্যান্ট মাই চাইল্ড!
কথাটা শুনতেই ইপশির সারা শরীরে এক আলাদা শিহরণ বয়ে গেলো। অজান্তেই চোখজোড়া থেকে একবিন্দু জল গড়িয়ে পড়লো এবং একটি হাত আপনা আপনিই পেটের কাছটায় চলে গেলো। ডাক্তার মায়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
— আপনি কি সত্যি বলছেন আমি… আমি মা হতে চলেছি!
— একশভাগ সত্য।
ইপশি নিজের আনন্দ এবং এতো বড় খবর কাব্যকে না দেয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাবে না। তাই ডাক্তারের সাথে কোনোরকম কথা বলে ড্রাইভারকে নিয়ে সোজা কাব্যর অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
এদিকে ইশানি বসে আছে কাব্যর অফিসে, তার সামনে কাব্য বসা। তার দৃষ্টিতে শুধুমাত্র গম্ভীরতা বিদ্যমান যেখানে ইশা একসময় একসাথে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলো। তবে আজ সবটাই অতিত। ভেবেই মৃদু হাসলো সে আর মুখে বললো,
— আজ সবটা পিছু ফেলে নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে পা বাড়াচ্ছি। তাই অতিতকে একবার স্বচক্ষে দেখতে এলাম, যাতে কখনো মন ও মস্তিষ্কে কোনো পিছুটান কাজ না করে। চলে যাচ্ছি আজ এই দেশ ছেড়ে, বিদায়বেলায় কি কিছু বলবে না তুমি?
— বলার কোনো কথা নেই ভাণ্ডারে তাই নিরবতাই পালন করছি। তবে একটা কথা বলতে চাই কারো জন্য কারো জীবন বসে থাকে না। নিজের জীবনে কাউকে সাথী করে আগাও হয়তো রঙিন হবে সবকিছু।
— হুম। আচ্ছা এই শেষবারের মতো একবার নিজের ছোঁয়া দিতে পারো আমাকে?
— নাহ, আমার ধর্ম ও ভালোবাসা এই কাজটি করায় বাধা দেয়।
— ঠিক আছে। তুমি নাহয় ছোঁয়া দিলে না তবে আমি তো নিতে পারি!
বলে কাব্য ডান হাত সামনে টেনে এনে গভীর চুমু দেয়, সেই সাথে একফোঁটা অশ্রুরও বর্ষণ হয় সেখানে। আর এই দৃশ্যটিই কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে ইপশি। মুহূর্তেই ‘কাব্য’ বলে চেঁচিয়ে উঠে দৌড়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে কাব্যও পিছু যায় তার। ইশা তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল এগারোটা। পার্কের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে কারণ তার জন্য কেউ অপেক্ষারত।
পার্কে বসে আরাভ ভাবছে তার কি করা উচিত… ইশানিকে সে ভালো না বাসলেও তার প্রেমে পড়ে গিয়েছে, মায়ায় আটকে পড়েছে মেয়েটির। সব তো ঠিকই চলছিলো গতকাল হঠাৎ কল করে বললো আমেরিকা চলে যাচ্ছে তার বাবার সাথে। তখন থেকেই অজান্তেই অস্থির হয়ে রয়েছে সে। নিঃস্ব পাখি সবেই তো নীড় পেয়েছিলো আবার হারিয়ে ফেলবে! তার ভাবনার মাঝেই ইশা আসলো।
— কেমন আছো?
— ভালো। তাহলে কখন ফ্লাইট?
— দুপুর সাড়ে তিনটায়।
— যাওয়াটা কি খুব বেশি জরুরি? থাকা যায় না নিজ দেশে, দেশের মানুষদের সাথে, নিজ পরিবেশে!
— থাকা তো যায়ই তবে এই চেনা পরিবেশটা যে বড্ড পোড়ায় অতিতকে মনে করিয়ে।
— নতুন স্মৃতির সৃষ্টি করো, পুরনো স্মৃতিরপাতা তার নিচে ডেবে থাকবে।
— সেই সুযোগটা কোথায় কিংবা সেই মানুষটা কোথায়? আমার মতো হৃদয় ভাঙা নেশাখোর মেয়ের সঙ্গি কোন ছেলে হবে…
— যদি বলি আমি হবো। তাহলে দিবে কি আমায় সেই সুযোগ?
ইশানি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। আসলে এই ছয়মাসে শুধু আরাভের হৃদমাঝেই প্রেমের সঞ্চার হয়নি, ইশার হৃদমাঝেও হয়েছে। তবে বলা বা মানার সাহস পায়নি। তবে আরাভ যেহেতু নিজ থেকে হাত বাড়িয়েছে সেও এই সুযোগ ছাড়তে চায় না। সে দৃঢ় গলায় বলে উঠে,
— দিলাম আজ থেকে সুযোগ শুধু তোমায়।
সূচনা হলো নতুন প্রেমের গল্পের। হয়তো ভালোবাসা নেই তবে বন্ধুত্ব, প্রেম, বিশ্বাসই যথেষ্ট বিবাহ সম্পর্কের জন্য।
কাব্য ইপশির পিছু নিলেও ধরতে পারে না তাকে। তার ধরাছোঁয়ার আগেই মেয়েটি গাড়িতে চরে বসে, এবার আর ইপশি রহমান ভিলায় যায়নি নিজের বাড়ি এসেছে। কাব্যও তার পিছু যায় তবে ইপশির ঘরে ঢুকতে পারেনি কারণ তার শাশুড়ি আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইপশি দরজা আটকিয়ে ইচ্ছেমতো কাঁদছে। খাওয়াদাওয়া করিয়ে কাব্য রুমে ঢুকতেই দেখলো ঘরে এককোণে এলোমেলো অবস্থায় বসে আছে তার প্রিয়তমা। কাব্য তাকে ধরতে আসতেই সে ইগনোর করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। বড় ভাবি বাপের বাড়ি গিয়েছে তাই তার ঘরেই একাকি থাকছে ইপশি।
ঘণ্টা তিনেক পর ইপশির খালা আসলো বাড়িতে। তাকে বেশ আনন্দিত ও খুশি লাগছে, কিন্তু কি জন্য তা সেটা কেউ বুঝতে পারছে না। সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললো,
— আরাভের বিয়ে হবে এক সপ্তাহের মাঝে!
— কি বলেন আপা! এতো তাড়াতাড়ি সব…
— তাতো জানি না গতকাল ছেলে আমায় বললো তার এক মেয়েকে পছন্দ, আজ তাকে বিয়ের কথা বলবে। আর একটু কল করে জানিয়েছে মেয়ে নাকি হ্যাঁ বলেছে।
— কে এই মেয়ে? কেমন দেখতে?
— এখানেই আসছে ওরা।
বলতেই আরাভ ও ইশা প্রবেশ করলো ড্রইংরুমে। ইশা তো বাসায় আসার মুহূর্ত হতেই অবাক কারণ সে ইপশির বাড়িতে কি করছে, পরে বুঝতে পারলো ইপশিই আসলে আরাভের ভালোবাসা এবং কাজিন।
— ওইতো এসে পড়েছে।
— আরে এটাতো আমাদের ইশা মামনি। ইপশির ছোটবেলার বান্ধুবী যাকে আরাভ ছেলেটা ভালো মেয়েই পছন্দ করেছে।
আরাভ বুঝতে পারে কাব্যই ইশার অতিত আর ইপশির বর্তমান।
এদিকে ইপশি রাগ উঠছে ইশাকে দেখে কারণ একটু আগেই কাব্যর সাথে এখন আবার… নিজের মুখ খুলবে তার আগেই তাকে কাব্য বেডরুমে নিয়ে আসে। বলে দেয় সম্পূর্ণ অতিত। যতোই হোক সে নিজের সংসার বাঁচাতে অন্যকারো ক্ষতি করতে পারে না। প্রথমে বেশ খারাপ লাগে ইপশির কাব্যর পূর্ববর্তী বিয়ের খবরটা শুনে পরে আবার ভাবে কাব্য তো নিজেই বিয়ের বিষয়ে জানতো না। বরং ইশা ছলনা করে সাইন করিয়েছিলো। তাই তার খারাপ লাগার সমাপ্তি হলেও অভিমান হয় কাব্যর উপর প্রচুর। কারণ সত্যটা আগে বললে কাউকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।
— এটা বলতে এতোগুলো দিন নষ্ট করলে। কত কষ্ট পেয়েছি আমি! তোমার কি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই আমার উপর যে আমি কোনটায় কেমন রিয়েক্ট করবো! ধুর আমি কথাই বলবো না তোমার সাথে… বেবিও বলবে না। আড়ি নিলাম আমরা তোমার সাথে।
— বেবি?
— হ্যাঁরে বোকা, আমি প্রেগন্যান্ট।
— সত্যি!
উত্তেজিত হয়ে কাব্য জড়িয়ে ধরতে চায় কিন্তু ইপশি দূরে সরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
— না, আমাদের একদম ধরবে না তুমি। অনেক কষ্ট দিসো আমাকে, আমি রাগ করেছি।
বলেই ঘর থেকে বের হয়ে গেলো সে। কাব্য ভাবছে রাগ কি করে ভাঙাবে তার প্রিয়তমার। এভাবেই রাগ, অভিমান, ভালোবাসা, প্রেম, হাসি, কান্নার মাঝে এগিয়ে যাবে তারা। শত বাধা পেড়িয়ে প্রতিবার জয় হবে তাদের ভালোবাসা ও বিবাহবন্ধনের শুধুমাত্র বিশ্বাসের জোড়ে। ভালো থাকুক প্রিয় মানুষগুলো।
সমাপ্ত।