আমার_অপ্রিয়_আমি,পর্বঃ২ক,পর্বঃ২খ

আমার_অপ্রিয়_আমি,পর্বঃ২ক,পর্বঃ২খ
রিলেশন_সিরিজ
Ipshita_Shikdar (samia)
পর্বঃ২ক

মনটি তোমার কেন দুরুদুরু কাঁপছে
মনের মানুষ কি গো চেনা চেনা লাগছে
তুমি কি তারে কাছে ডাকবে
হৃদয়ের কাছে সে রয় অলোকে
(সঙ্গীতঃ আয়নাতে ঐ মুখ)
ফোনটা সুইচ অফ করে গানটি গুণগুণ করতে করতে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চুলগুলো আচরিয়ে নিচ্ছিলাম এমন সময় নিলাদ্রি, নিশিতা, অরিন, প্রণয়, আরাভ, আদিল আমাত রুমে ঢুকলো। বলা বাহুল্য এই চারজনই আমার খালাতো ভাইবোন।

—- কিরে এমন সাত মাসের রোগীর মতো বিছানায় লেপ্টে আসোস কেনো? কাব্য ভাইয়ের সাথে তো ভালোই সময় কাটিয়ে আসলে আমাদের নিয়ে গেলে কি আমরা তোদের কামড় দিতাম নাকি! হুহ!

তাদের কথা শুনে আর হাসি আটকাতে পারলাম না। মুখে মৃদু হাসি রেখেই কথা বলতে লাগলাম।
—- কেনো বাছা তোমাদের কি মুখ দিয়ে লালা নিঃসরণ হচ্ছে গো যাওয়ার জন্য? তাহলে বলো আমায় তোমাদের নিয়ে আমিই বাহিরে যাবো।

—- ইয়েস আপি বাইরে যাবো আমরা সবাই তবে ট্রিট তোমার। আফটার অল বিয়ে তোমার চাইলে কাব্য ভাইয়াকেও ডাকতে পারো। প্লিজ মানা করো না এটাই তো আমাদের সবার লাস্ট কাজিনস ডেট!

—- ওকেহ অরি বেবি তোরা রেডি হয়েনে তবে আম্মু? আই মিন আম্মুকে কোন ব্যক্তি মেনেজ করেছে?

—- নিলা আপু এন্ড আরাভ ভাইয়া খালা, খালু ও বড় ভাইয়াকে ম্যানেজ করেছে। বাই দ্য রাস্তা আমাদের সাথে বড় ভাইয়া আর সুমুও যাবে। তবে কাব্য ভাইয়াকে বলবি কি?

—- ওকেহ। তাহলে তোরা তৈরি হয়েনে আমার বেশি হলে পনেরো মিনিট লাগবে। আর কাব্য আসবে না সে একটু বিজি কাজে।

আরও কিছুক্ষণ আমার বেডরুমে বসে আড্ডা দিয়ে সবাই যার যার ঘরে চলে গেলো তৈরি হতে। আমিও একটা পেস্ট কালারের লং টপস ও হোয়াইট কালারের লেগিংস পড়ে নিলাম। চোখে মাস্কারা, ঠোঁটে রংহীন লিপবাম, মুখে বিবিক্রিম ও হালকা ফেস পাউডার, কানে হুক ইয়াররিংস, আর হিজাব! ইনাফ টু গো আউটসাইড। কিন্তু ফোন কি করে নিবো? উফফ! হাউ ডাফার আই এম! ছোট ভাইয়ার চারটা ফোন থেকে যেকোনো একটা নিয়ে যাবো।

আধঘণ্টা যাবত ড্রইংরুমের সোফার উপর বসে আছি কেউ নিজেদের কক্ষ হতে বেড় হওয়ার নাম নিচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে যেই না আবার নিজে ঘরে যাবো সবাই তৈরি হয়ে বেড় হলো। আর আমাকে তাড়া দিতে লাগলো। মেজাজ অনেক খারাপ লাগলেও কিছু বললাম না!

এর মধ্যেই বড় ভাইয়া এসে আরাভকে বলে গেলো,
—- আরাভ আমার কিছু কাজ পড়ে গেছে আমি যেতে পারবো না। তুমি ওদের স্পেশাল্লি সামিয়াকে দেখে রাইখো। জানো তো রাস্তায় হাঁটার সময় এর হুশ থাকে না।

—- নো ওয়ারিস ভাইয়া। আমরা তো আছিই কোনো সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ!

ভাইয়ার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বেড় হয়ে পড়লাম। যাওয়ার সময় একটা কারে আমি, নিলাদ্রি, অরি ও নিতিশা গেলাম। আর আরাভ, আদিল ও প্রণয় তাদের বাইকে যেতে লাগলো। আমাদের গন্তব্য ছিলো হাতিরঝিল। কারণ রাতের ঢাকার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর চাইতে মনোরম স্থান আর নেই বলেই মনে হয়।

সবাই গাড়ি থেকে নেমে যে যার মতো মজা করছে হাঁটাহাঁটি করছে। আর আমি তাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ব্রিজের রেলিংয়ে ভর দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছি। বর্তমানে এখানে খুব বেশি একটা ভিড় নেই বললেই চলে যেহেতু রাত দশটার মতো বাজে তাই যেসব মানুষ ফ্যামিলি নিয়ে এসেছিলো তার নিজ গাড়ি অথবক ভাড়া গাড়ি করে বাড়ি ফিরছে। আর যারা বাইক নিয়ে এসেছিলো তারা ব্রিজের কোনো এক কোণা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বা বসে মোবাইলের দিকে মনযোগ স্থীর করে রেখেছে।

আচমকা মনে হলো, আচ্ছা! আমার কি এসব ভাবার কথা? নাহ তো। আমার তো কাব্যর কার্যকলাপে কষ্ট পেয়ে গৃহবন্দী হয়ে থাকার দরকার অন্যদের মতো। কিন্তু সেটাতো তখন হতো যখন আমি এই ব্যপারটা না মেনে নিতে পারতাম! আর আমি তো মেনে নিয়েছি। তবে কাব্যর ধোঁকাকে নয় বরং কাব্য ও ইশার কাছাকাছি থাকাকে…. ছোটবেলার অভ্যাস খুব তাড়াতাড়িই সবরকম পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পারলেও মেনে নিতে পারি! হয়তো এক্ষেত্রেও এই অভ্যাসটার জন্যই এতোটক স্বাভাবিক আমি।

হাতিরঝিলের ঝলমলে পরিবেশের দিকে দৃষ্টি স্থির করে এসবই ভাবছিলাম আচমকাই আরাভ এসে মাথায় এক টোকা লাগালো। আমি রেগে তাকে খামচি দিতে তার বাহুর উপর জোড়ে নখ বসিয়ে ধরতেই কোথা থেকে ক্লিক শব্দ এলো। শব্দের উৎস আবিষ্কার করতে পিছনে তাকাতেই দেখি অরি হাতে ফোন নিয়ে আমাদের ছবি তুলে ফেলেছে। অরির কাজে অবাক হলাম না কারণ মেয়েটার এমন হুটহাট আমার ছবি তোলার অভ্যাস আছে।

—- অরি কি করিসটা কি! আমার আর ইপশির ঝগড়া, মারামারির পিক তুললি কেনো গাঁধা! এটা আবার কোথায় ছাপাবি আই মিন পোস্ট করবি!

—- আরে ভাই এটা আমাদের লাস্ট ব্যাচেলার কাজিনস ডেট। এরপর তো আপুর বিয়ে হয়ে যাবে আর নিলাপুরও বিয়ে দুমাস পর তখন কি আমরা এভাবে হুটহাট ঘুরতে পারবো? তখন এই ছবিগুলোই হবে সুখকর দিনের স্মৃতিকথা।

—- হুম সেটাও ঠিক। তাহলে আয় ইপশু আমরা ছবি তুলি!

আমিও কিছু না বলে সবার সাথে যেয়ে নানা পোজের ছবি তুলতে লাগলাম। কিছু আমার ও বাকি সবার ক্যানডিড পিক, কিছু আমাদের গ্রুপ সেলফিস এভাবে অনেক ছবিই তুললো সবাই। তারপর আর কি! যার যার ইমো স্টোরিতে শেয়ার করে দিলো। এভাবেই সময় কাটতে লাগলো ছোটবেলার সাথীদের সাথে…..

কাব্য ইপশিকে বাড়িতে রেখে আসার পর থেকে এক গ্লাস পানিও পান করেনি। চিন্তায় তো ঠিকমতো শ্বাসই নিতে পারছে না পানি আর কি পান করবে! তার এই মাত্রাতিরিক্ত টেনশনের কারণ ইপশি। ইপশিকে রেখে বাসায় আসার পর থেকে কল করে যাচ্ছে তবে ইপশি একবারও পিক করেনি। আর এখন তো ফোনই সুইচ অফ দেখাচ্ছে! তাই কোনো সমস্যা হলো নাকি মেয়েটার সেই টেনশনেই মরছে কাব্য! অবশ্য ইপশির বাসায় কল করে জানতে পারে তবে আজ বাদে কাল বিয়ে তাই এখন কল করে খবর নিলে ব্যপারটা খাণিক দৃষ্টিকটুই দেখাবে বলেই মনে হচ্ছে। তাছাড়া ইপশির কোনো কাজিন বা তার জেনারেশনের কোনো আত্মীয়ের নাম্বারও তো নেই। আছে শুধু অরির ফোন নাম্বার আর এই মেয়ে জীবনেও কল পিক করেনা তা কাব্যর জানা।

এসব ভাবতে ভাবতেই সারা ঘর জুড়ে পায়চারী করছিলো কাব্য। হঠাৎই মাথায় আসে ইপশির মেঝো ভাই সায়নের কথা। কারণ সায়ন অনেক বন্ধুসুলোভ হওয়ায় কাব্যর সাথে তার ভালোই ভাব এবং অন্যান্যদের মতো সে কাব্যর কল করার বিষয়ে অতটা রিয়েক্ট করবে না। যেই ভাবা সেই কাজ! ইমুতে ঢুকে সায়নকে কল দিতে যাবে এমন সময় চোখ যায় অরির ইমো স্টোরিতে। কি মনে করে অরির স্টোরিতে ক্লিক করতেই যেই ছবিগুলো দেখে তা দেখে কাব্যর শুভ্র ও চিন্তায় ঘর্মাক্ত নাকটা পূর্বের ন্যায় লাল হয়ে ফুলে ওঠে।

কাব্য রাগে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, এদিকে আমি তোর টেনশনে মরছি আর তুই বাইরে যেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। সেটাও নাহলে মেনে নিলাম আজ যা হলো তার জন্য। কিন্তু তুই আরাভের সাথে….. তোকে কতবার মানা করেছি এই ছেলের সাথে না মিশতে আর তুই কিনা তার হাতের উপর হাত রেখেছিস! তোর ঘুরাঘুরি আমি ছুটাচ্ছি দাঁড়া!

কাব্য রাগে কিড়মিড় করতে করতে গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়ে গেলো হাতিরঝিলে উদ্দেশ্যে। ইপশিরা খাওয়া দাওয়া শেষ তাই বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড় হবে কিছু সময়ের মাঝেই। এর মধ্যেই তাদের গাড়ির ড্রাইভার এসে জানালো গাড়িতে সমস্যা হয়েছে আর ঠিক করতে ঘন্টা চারেক সময় লাগবে। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো অরিন প্রণয়ের বাইকে বসে যাবে, নিলা আদিলের আর ইপশি আরাভের। কারণ অনেক রাত হওয়ায় গাড়ি আনিয়ে তারপর যেতে অনেকি সময় লাগবে।

পরিকল্পনা অনু্যায়ী ইপশি আরাভের গাড়িতে বসতেই যাবে এমন সময় কেউ একজন হুড়মুড়িয়ে এসে তাকে বাইক থেকে একটানে দূরে সরিয়ে আনলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় ইপশি অবাক হয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকাতেই দেখে কাব্য।

—- ত-তুমি এখানে! তুমি এখানে কি করছো?

আমি কথাটা খাণিকটা জোড়ে বললেও কাব্য তার উত্তর বলতে আমার কানের কাছে তার মুখটা নিয়ে আসলো। আর অত্যন্ত শীতল কণ্ঠে বললো,
—- হুম, আমি। কেনো আশা করোনি বুঝি নাকি অন্যকাউকে আশা করছিলে নাকি আমার আশায় তোমার কাজে ডিস্টার্ব হয়েছে?

কাব্যর এমন শীতল কণ্ঠেও যে রাগ স্পষ্ট ছিলো তা বুঝতে আমার সময় লাগলো না। তার রাগে আমার অনেক কিছু আবার কিছু নাও! কিছু না কারণ তাকে সকালের কথা মনে করলে নিজের জীবনে একবিন্দু গুরুত্ব দিতে মন চাইছে না। অনেক কিছু কারণ এই রাগের পরিণম স্বরূপ আমাকে কি শাস্তি দেয় সেই ভয়ে মন আশংকিত! ভাবনার মহাসাগরেই ডুবেছিলাম আরাভের কথায় আমার ঘোর ভাঙলো।

—- আরে কাব্য ভাই যে! আপনি কখন এলেন? ইপশিকে বলেছিলাম আপনাকে আসতে বলতে সে বললো আপনি বিজি। তা আরেকটু আগে আসলেও পারতেন কিন্তু….

—- আমিই ইপশিকে বিজি বলেছিলাম আমি বিজি থাকবো তবে কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ায় চলে আসি। সে যাই হোক বাকি সবাই কোথায়?

—- অরি প্রণয়ের বাইকে করে আর নিলা আদিলের বাইকে বাড়ির দিকে চলে গিয়েছে। আমি আর ইপশি এখন যেতে নিচ্ছিলাম এর মধ্যেই…. আসলে গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে তো তাই মেয়েদের বাইকে করেই নিয়ে যাচ্ছিলাম!

—- ওহ! তো আরাভ আমি যেহেতু এসেই পড়েছি তাহলে আমার বউকে আমিই বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। তুমি বরং একাই বাড়ি ফিরো। ওকেহ! চলো সামি বেবি!

কাব্যর এই নামে ডাকায় আমার আরও ভয় লাগছে কারণ সে তখনই এই নামে ডাকে যখন অত্যন্ত ভালো মুডে থাকে অন্যথায় যখন আমার উপর ভিষণ পরিমাণে রেগে থাকে। এই নাম শুনে তার সাথে যাওয়া আমার কাছে বাঘের গুহায় ইচ্ছাকৃত প্রবেশই মনে হচ্ছে তাই যেই না কোনো একটা বাহানা বলার জন্য মুখ খুলবো। ঠিক তখনই কাব্য আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে তার গাড়িতে বসিয়ে দিলো….

চলবে,,,,

#রিলেশন_সিরিজ
#আমার_অপ্রিয়_আমি
#Ipshita_Shikdar (samia)
#পর্বঃ২খ



কাব্য আমাকে গাড়িতে বসিয়ে ঠাস করে কারের ডোর লাগিয়ে আরাভের কাছে গেলো। কার থেকে বসে বসে দেখছি তাদের মধ্যে কি যেনো কথোপকথন হচ্ছে অবশ্য কি নিয়ে কথা হচ্ছে আমার জানা নেই। আর জানার দরকারও নেই বর্তমানে মস্তিষ্ক ও মন দুটোই একটি কথা বলছে আপন প্রাণ বাঁচা!

তাই ভাবতে লাগলাম কাব্যর বকা থেকে বাঁচার উপায়। এর মধ্যেই দেখি কাব্য গাড়ির দিকে ফিরে আসছে তাই ভেবেও কোনোকিছু না পেয়ে জানালার দিকে দৃষ্টি স্থির করে দু’কানে এয়ারফোন গুঁজে ফুল সাউন্ড দিয়ে গান শুনতে লাগলাম….. পরিকল্পনা কাব্যকে ইগনোর করবো। যাতে কিছু বলতেই না পারে আমাকে। কাব্য এসে কোনোকিছু না বলেই ড্রাইভ করতে লাগলো। মনে মনে একটু তৃপ্তিই লাগলো ভেবে যে কিছু বলবেনা তাই আরাম করে গান ইঞ্জয় করছিলাম।

হঠাৎ ব্রেক করায় একটু বিরক্ত হয়ে কাব্যর দিকে তাকাতেই সে আমাকে অবাক করে আমার কান এবং ফোন থেকে এয়ারফোন খুলে ফেলে।

—- দুমাস আগেই না কানে ব্যথা ছিলো তোর! ঠিক হতে না হতেই কানে এমন সারাদিন ফুল ভলিউমে এয়ারফোন গুঁজে বসে থাকলে ঘন্টা ঠিক থাকবে। আর যেনো না দেখি কানে এয়ারফোন নাহলে আমি এগুলো কুচিকুচি করে কাটবো বলে দিলাম।

আমি কাব্যর কথা শুনে বড়বড় চোখ করে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কয়েকটা ছোট ছোট ঢোক গিলে বললাম,
—- আচ্ছা!

ইপশির কথার পরিপ্রেক্ষিতে কাব্য কিছু না বলে কারের মিউজিক ছেড়ে দিলো। কাব্য হয়তো রেগে আছে আরাভ ও ইপশিকে একসাথে দেখে তারপরও সে বিষয়ে কিছু বলার অধিকার কি আদৌ তার আছে! নাহ, কোনোমতেই নেই। সকালের ঘটনার পর সেই অধিকার কাব্য নিজ দায়ে হারিয়েছে। নিজে অন্য মেয়ের কাছাকাছি এসে প্রিয়তমাকে কোনো ছেলের সাথে কথা না বলতে বলার অধিকার কোনো প্রেমিক পুরুষেরই নেই। তাই সেটা বর্তমানের জন্য ভুলে গিয়েছে তাছাড়া ইপশির তার কল না ধরা কিংবা ফোন সুইচ অফ করে রাখাও কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়! তাই ইপশিকে রাগ দেখানোর কোনো মানে নেই। বর্তমানে সে আবার চিন্তিত ইপশির অদ্ভুত বিহেভিয়ারে। কারণ এতোটা স্বাভাবিক আচারণ কি করে থাকতে পারে ইপশি। সে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত ইপশির মস্তিষ্কে কোনো খিচুড়ি তো রান্না হচ্ছে আর সেটা যে তার জন্য বিষ তুল্য তাও তার জানা!

এদিকে ইপশি গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে নিজেই বলতে পারবে না। ইপশির বাসায় পৌঁছে পাশের সিটে তাকাতেই কাব্য খেয়াল করে ঘুমন্ত ইপশিকে। যা দেখে কাব্য মনে মনে বলে উঠে,

—- আজ যদি এটা কোনো গল্প বা নাটক হতো তাহলে আমি ইপশুকে কোলে তুলে তার বেডরুমে নিয়ে যেতে পারতাম। তবে এটা তো বাস্তব জীবন! এখন ওকে কোলে কেন হাত ধরেও যদি ভিতরে নিয়ে যাই সিনিয়ার সিটিজেন সহ বড় ভাইয়া এমনে তাকাবে যেনো আমি কোনো পাপ করে ফেলেছি। আর ছোট ভাইয়া ও আমার শ্যালকশ্যালিকা আমাকে আচ্ছা মতো পচানো শুরু করবে! মাঝেমাঝে মন চায় সিরিয়ালের আত্মীয়স্বজনদের সাথে নিজেরগুলোকে এক্সচেঞ্জ করিয়ে ফেলতে!

কাব্য আর কোনো উপায় না পেয়ে ইপশিকে ডাকতে শুরু করে। কাব্যের ডাকে কিছুক্ষণের মাঝেই ইপশির ঘুম কেটে যায় এবং সে কিছু না বলেই কাব্যকে রেখে কার থেকে বেড় হয়ে নিজের বাসায় চলে যায়। কাব্য ইপশির যাওয়ার দিকে কিছুসময় তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও বাড়ি ফিরে যায়।

আমি বাড়িতে ফিরে দেখি যে যার থাকার ঘরে যেয়ে ঘুমিয়ে আছে তাই আমিও নিজের ঘরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে যেয়ে দাঁড়িয়েছি এমন সময় কেউ একজন আসলে আমি না তাকিয়েই বলে উঠি,

—- কিরে এসে পড়েছিস নিজের প্রাপ্য নিতে?

—- ইয়াপ ইশিপু! তুমি তো সবার আড়ালে তোমার আর আরাভ ভাইয়ের কিছু ক্যানডিড পিক তুলে তা ইমো স্টোরিতে দিতে। জানো আমি কত কষ্ট করে কত বাহানা দিয়ে মাথা খাটিয়ে ছবিগুলো দিয়েছি।

—- ওলেলে মাই লিল সিস্টার! বেডের সাইডটেবেলের তিন নম্বর ড্রয়ারে তোর জন্য চকোলেটস, দুহাজার টাকা এবং একটা গিফট বক্স আছে।

—- থ্যাংক ইউ ইপশিপু! বাট আপুই তুমি এগুলো আমাকে দিয়ে কেন করালে?

—- ওহ মাই প্রিন্সেস এগুলো বড়দের বিষয় তুমি বুঝবে না। তাই এসব জেনে তোমার কাজ নেই। তুমি শুধু এই কথাটা কাউকে বলো না তাহলেই হবে। ওকেহ?

—- আচ্ছা ইপশিপু তাহলে আমি যাই। গুড নাইট এন্ড সুইট ড্রিমস!

অরিন চলে গেলে আমি মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারাগুলোর তাকিয়ে থেকে আনমনেই বলতে লাগলাম,

—- কাব্য একসময় আমায় তোমার ড্রামাকুইন বলে ডাকতেনা আজ দেখো তোমায় ভালোবেসে সত্যিই ড্রামাকুইন হতে বাধ্য হলাম! হুম, সেদিন তোমায় ইশার সাথে দেখে ভিষণ কষ্ট পেয়েছিলাম এবং এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম তোমাকে ছেড়ে সবকিছু ছেড়ে চলে যাবো। হঠাৎই মাথায় আসলো আমি তো ইশাকে তোমায় জড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তবে তোমাকে তাকে নয় বরংচ তোমার অঙ্গভঙ্গিমায় বোঝা যাচ্ছিলো তুমি তার কার্যকলাপে এতোটাই বিরক্ত এবং অস্বস্তি বোধ করছিলে যে একজন মেয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরার পরও তুমি তাকে ধরছিলে না। তাহলে তোমার এই কাজের নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। আমি এমন মেয়ে নই যে সামান্য অবিশ্বাসে নিজের ভালোবাসাকে ছেড়ে চলে যাবো। অবশ্য এসবের কারণ শুধুমাত্র সেটাও নয়…..

আরেকটি কারণ হলো বাবা, পাপ্পা ও ভাইয়ারা! আমি যার জন্য এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে গিয়েছি সেই মানুষটাকে এখন বিয়ে করবো না বললে তারা কতটা ভেঙে পড়তো আমার অজানা নয়! হয়তো তোমার অপরাধের কথা জানলে নিজেদের সম্মান ও কষ্টকে ভুলে যেয়ে আমার সিদ্ধান্তেই সায় দিতো কিন্তু….. কিন্তু সমাজ কি আদৌ সেসবের পরোয়া করো? পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন সবাই জানে তোমার সাথে আমার পূর্বেই সম্পর্ক ছিলো আর এখন বিয়ে। যদি তোমার চরিত্র দোষে বিয়েটা ভাঙি তারপরও আমিই হবো চরিত্রহীনা! তাছাড়া তোমাকে ছেড়ে আমার লাভ কোথায় বলো তো! সংসার হয়তো তুমি করবে ইশার সাথে আর আমি ঘরের এক কোণঘেঁষা হয়ে থাকবো কখনোই নাহ! তাই সব হিসাব করে পরিকল্পনা করে নিলাম কি করে কি করবো!

প্রথমে তোমার বাড়ি গেলাম অবশ্য সেখানে যা হয়েছে সেটা প্লানিং ছিলো না বরং ফ্রাস্টেশন ছিলো আমার। তবে যখন তুমি কোনো সত্য আমায় জানাতে নিলে ইশা আটকালো তখন অনেকটাই শিউর হয়ে গেলাম কিছু তো আমার আড়ালে আছে যা তুমি এবং বিশেষ করে ঐ মেয়েটা চায় না আমি জানি। তবে নিজের হাত কাটতে নেয়াটা ইচ্ছাকৃত ছিলোপুরোপুরি শিউর হতে।কারণ যদি আমার হিসাবে ভুল হয়ে থাকে তাহলে তুমি আমায় বাঁচাবে নয় ইশাকে! আর তুমি করলেও তাই ইশার হাতে যখন ছুড়ি ধরেছিলাম তখন তোমার চোখেমুখে শুধুই বিরক্তবোধ ছিলো কিন্তু যখন আমাকে আঘাত করতে নিলাম তখন তোমার চোখেমুখে ছিলো শুধুই ভয় ও আতংক! সেই আতংকের ফায়দা নিয়েই তোমাকে বিয়ে করে নিলাম কারণ ভয় ছিলো যেই সত্যটা আমার থেকে আড়াল করছো সেটার জন্য আবার আমার থেকে দূর না হয়ে যাও!

তারপর বাড়ি ফিরে চিন্তা করে নিলাম কি করে সত্যিটা তোমার মুখ দিয়ে বেড় করবো এবং কষ্ট দিবো! হ্যাঁ, তোমার দোষ যদি নাও পাই তারপরেও তুমি কষ্ট পাবে যতটা আমি তখন তোমাদের একসাথে দেখে পেয়েছিলাম তার হতেও বেশি! আর কষ্ট দেয়ার হাতিয়ার আরাভের চাইতে ভালো কে হতে পারে? অরি তো ছোট মানুষ সে ওতোশতো বুঝবে না তাই তাকেই নিশ্চিত করলাম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। আর দেখো আই ওয়াজ রাইট! তুমি রাগলে, কষ্ট পেলে, আতংকিত হলে তবুও কিছু বলতে পারলে না। অবশ্য ভয়ও পাচ্ছিলাম ভিষণ তুমি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা! এটা তো মাত্র শুরু একবার বিয়েটা হোক…..

তারপর কিছুটা থেমে বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলি,

—-বিয়েও হবে তোমার সাথে, আমার আমিও হবে তুমি, আমার উপর অধিকারও পাবে তুমি তবে এই যে তোমার প্রতি আমার উদাসীনতা, অধিকারবোধের অভাব, তোমাকে না চাওয়া সেটাই কষ্ট দিবে তোমায়। একসময় এই তীব্র মানসিক যন্ত্রণা ও কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তুমিই সত্য স্বীকার করবে। জানি এই পথটা মুশকিল তবে বিশ্বাসযোগ্য! আসলে কি জানো তো কাব্য!

প্রেমে পড়াটা সহজ তবে কাউকে ভালোবাসা ভিষণ কঠিন আর তার চাইতে বেশি কঠোর সেই মানুষটাকে পেয়েও ধরে রাখা। সারাটা সময় জীবন কারণ দেখিয়ে যাবে তাকে ছেড়ে যাওয়ার, অবিশ্বাস করার, নতুন কাউকে নিয়ে মেতে ওঠার কিন্তু জয়ী তো সে-ই হবে যে এগুলোকে ছাড়িয়ে ভালোবাসার মানুষটাকে ধরে রাখতে পারবে। নয়তো জীবন কোনো গল্প নয় যে লেখক আবার ভালোবাসার সাথে মিলনায়তন রচিত করবে।

তাই শুধুমাত্র একটি দৃশ্যপটের জন্য আমি তোমায় ছাড়ছি না তবে আমার হিসাবটা যদি তোমার বিপরীতে আসতো হয়তো সিদ্ধান্ত এটা হতো না। কারণ অন্যায় প্রশ্রয়দানকারী আমি কখনোই নই! তখন যদি এই সিদ্ধান্তটা নিতামও বাধ্য হয়ে নিতাম আর কারণ হতো শুধুই পরিবার তুমি নয়। তবে এখন উভয় কারণই সমান দায়ী!

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here