আমার রূপকথায় তুমিই ছিলে
পর্ব ২,৩
নুজহাত আদিবা
পর্ব ২
আমি কথায় কথায় আম্মুকে বলে ফেললাম বিষয়টা আম্মু বলল আয়হায় কি বলিস আমি বললাম আম্মু এখন কার আধুনিক যুগে এইসব কোনো ব্যাপার-ই না। আম্মু ও আর বেশি কথা বাড়ালো না। আমি প্রায়-ই রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখতাম আতিফ জেনো কার সাথে কথা বলে প্রথমে খুব একটা পাওা দিতাম না বিষয়টাকে কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকলো। একদিন আমার একটা ছোট কথায় ও ঝগড়া শুরু করে দিলো। আমি রাগ করে আমাদের বাসায় চলে এলাম আম্মু কাছে বিষয়টা গোপন রাখলাম। পরে যখন আতিফ ফোন দিলো আমরা কথা বলতে থাকলাম ও হঠাৎ কথার মাঝে বলে উঠলো আমরা অনেক মিথ্যা কথা বলতে পারি একবার শুরু করলে পুরো মিথ্যার বন্যা ভাসিয়ে দিবো। আমার ওর এই কথায় প্রচুর সন্দেহ লাগলো আমি আম্মুকে প্রথম থেকে সব খুলে বললাম আম্মু ও সব আব্বুকে জানালো পরে যখন আমার কাজিনরা জানলো তখন আমার একটা কাজিন বলে উঠলো ও নাকি আতিফকে নেশা করতে দেখেছে আতিফ ও নাকি ওকে দেখেছে ওর পায়ে ধরে মাফ চেয়েছে বলেছে আর কোনোদিন করবেনা। কিন্তু আমার কাজিন আমাদের কে বলে নি কারন ও ভেবেছে এর জন্য বোধ হয় আমার সংসার ভেঙে যাবে। আব্বু তো এই কথা শুনে আমাকে ওই বাসায় যেতে নিষেধ করে দিলো পরে আব্বু খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছে যে আসলে ওর কোনো রোগ নেই ও সম্পুর্ন সুস্থ আর ও নাকি এই বিয়েতে রাজি ছিলো না কারন ওর সাথে আরেকটা মেয়ের সম্পর্ক আছে। এখন ও এই সম্পর্কে জরিয়ে আছে। আমাকে বিয়ে করেছে শুধুমাএ আমার সম্পওির লোভে ওর ফুল ফ্যামেলি নাকি ওকে অনেক চাপ দিয়েছে আমাকে বিয়ে করার জন্য। এইসব শুনে আমি আব্বু আম্মু তো পুরা শকড হয়ে গেলাম কি শুনলাম এগুলো।আব্বু তো রেগে আতিফের নামে কেস করলো। আমাকে বলল কোনো টেনশন করতে না। আম্মু ও বলল সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করতে না। আমি জানতাম আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে তবু ও আমার মনে একটা ক্ষীন আশা ছিলো যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সব কি আর ঠিক হওয়ার ছিলো! ডিভোর্স হয়ে গেলো আমাদের। কোর্ট থেকে অনুমতি দিলো আমাদের বাসা থেকে যা যা দিয়েছে সব ফেরত নিয়ে নিতে আব্বু আম্মু সব জিনিসপএ নিয়ে আসলো তবে আমাদের অনেক জিনিসপএ তারপর অনেক গোল্ডের জুয়েলারি ওনারা ফেরত দেননি। তবে আমার এতে আফসোস ছিলো না আমার আফসোস একটাই আমার কি দোষ ছিলো যে শুধু শুধু আমার জীবন টা ওনারা এভাবে নষ্ট করলো। আমি কি দোষ করেছিলাম? আমি ওইদিন সারারাত প্রচুর কান্নাকাটি
করলাম। আমি ঘুমাতে পারতাম না রাতে খালি এইসব ঘটনা মনে পড়তো।আমার আব্বু আম্মু আমাকে প্রচুর সার্পোট করত। আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে নিয়ে এখানে ঘুরতে নিয়ে যায় ওখানে নিয়ে যায়। এই কিনে দেয় ওই
কিনে দেয়। ওদের সাথে থাকলে আমি একটু সময়ের জন্য হলেও এইসব থেকে দূরে থাকতাম। আমি পুরো ডিপ্রেশন এ চলে গিয়ে ছিলাম তবে আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে অনেক ভাবে এইসব থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো………
চলবে…
#আমার রূপকথায় তুমিই ছিলে
পর্ব ৩
বাসায় থাকলে আমার আরো খারাপ লাগতো। কি করবো বুঝতে পারছিলাম। তারপর চিন্তা করলাম এভাবে বাসায় থাকলে আমার আরো খারাপ লাগবে তাই আমি মিরপুর ঢাকা গালর্স আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইন্সটিটিউট এ জবের জন্য ইন্টারভিউ দিলাম। মহান আল্লাহ তায়ালার কী অশেষ রহমতে আমি খুব তাড়াতাড়ি জবটা পেয়ে গেলাম।তারপরে আস্তে আস্তে আমি জেনো আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছিলাম। স্টুডেন্টদের ক্লাস নিতাম ওদের সাথে গল্প করতাম। বলতে গেলে আমি সারাদিন ব্যস্ত থাকতাম আর আমার অতীতটা তখন চাইলেও আমার সামনে আসতে পারতোনা কারন আমার ব্যস্ততা তাকে আমার থেকে দূরে রাখতো।
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে
একদিন কলেজ শেষ করে এসে শুনি আব্বুর ফোনে নাকি তারিব নামের কেউ কল দিয়ে আমার কথা জিজ্ঞেস করেছে। আমি প্রথমে চিনতে পারিনি কার কথা বলছে পরে আম্মু বলল ও নাকি তোর সাথে একসাথে কলেজে পরতো। পরে আমার মনে পরলো। তারিব তো নাকি এখন আমেরিকা থাকে তাহলে হঠাৎ ফোন দিলো কেন? কিন্তু কলেজ থেকে এসেছিলাম ক্লান্ত থাকায় আর বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এসে ফোনে একটু কাজ ছিলো ওটা কমপ্লিট করছিলাম।তখন হঠাৎ আম্মু এসে বলল সাথী শোন একটু তোর সাথে না আমার একটু জরুরি কথা আছে। শুনছি আমি তুমি বলো। আম্মু বললো সাথী তোর ওই ফ্রেন্ডটা আছে না সকালে যে ফোন দিয়েছিলো ওই যে তারিব নামের ছেলেটা। আমি বললাম হুম।আম্মু বলল ও তোর অতীতের ব্যাপারে সব জানে তাও ও তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আম্মু পুরো কথা শেষ করার আগেই আমি বললাম তোমার যদি আমার বিয়ে নিয়ে কোনো চিন্তা থাকে তাহলে ওটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো আমার পক্ষে সম্ভব না। আম্মু বলল শোন সাথী ও নাকি তোকে কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসে এতো কিছু হয়ে গেলো তোর জীবনে তাও ও শুধু তোকে চায় একটু যদি ভেবে দেখতি। আমি বললাম আমার পক্ষে সম্ভব না আম্মু।আম্মু আর কিছু বললো না চলে গেলো। আসলে আমি যদি এখন বিয়ের জন্য হ্যা বলে দিতাম তাহলে সারাজীবন আমি ওর কাছে করুনার পাএী হয়ে থাকতাম।আমি কারো কাছে করুনার পাএী হয়ে থাকতে চাইনা।যেমন আছি তেমনি ভালো আছি।
চলবে