আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️,সিজন_২,পর্ব_২১
সাহেদা_আক্তার
ও আমারে টাইনা নিয়া গেল৷ আমার আর মডার্ণ কালারের নাম কওয়া হইলো না।
ওর রুমে আসতেই দরজা বন্ধ করে দিয়া সাহেদা বলল, তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? আরেকটুর জন্য তো দিয়েছিলি বিপদ করে। আমি বিছানায় বসতে বসতে বললাম, তার মানে আমি কি বলতে যাচ্ছিলাম তুই বুঝতে পেরেছিস।
– না বোঝার কি আছে। তবে ওদের মডার্ণ মাথায় হয়ত সেটা ঢোকেনি।
– মডার্ণের ঠেলায় কোনদিকে যে যাবো! আচ্ছা গতকাল থেকে আমি তোর চাচি থেকে কেবল ইয়ো ইয়ো শুনছি। এই ইয়োটা কে রে?
– কে আবার? আমার ঐ ভোটকা নাদুস নুদুস চাচাতো ভাইটা। নাম ইয়াশ রেখেছে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে ইয়ো হয়ে গেছে। আর মেয়েটার নাম ইরিন। বিদেশে নাকি ইরি ডাকে।
– হ, ইরি মরিচ। ঠোঁটে সারাক্ষণ লাল লিপস্টিক লাগাই রাখে ইরি মরিচের মতোই। বিদেশ না বল উগান্ডা। কি কথা বলার ছিরি।
– বোইন, এদের সাথে লাগিস না তাইলে আমার বিয়ের দফারফা করে ছাড়বে।
– ইহ, আমি আছি না।
সাহেদা ভেটকি মাইরা পানির গ্লাস নিয়া টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ঢকঢক কইরা পানি গিলতে লাগল। আমি কইলাম, সাহেদা, কালকে আমি রুম থেকে বের আগে কি হয়েছিল রে? আমার কথা শুইনা ও ভিমরি খাইল। মুখ থেইকা পানি ছিটকাই পড়ল। আরেকটুর জন্য মুখো নিঃসৃত পানির ঝরণায় আমারে গোসল করায় নাই। ও মুখ মুছে কইলো, কি হবে?
– আমার মনে হইসিলো বাইরে কি নিয়া ঝামেলা হইসিলো বন্ধু আর গাজরের মধ্যে।
– কি ঝামেলা হবে? আরে তোকে নিয়ে মানে তোর জন্মদিন নিয়ে খুব এক্সাইটেড ছিল আর কি। তুই এসেছিস ভালো করেছিস। শোন আজকে বাইরে যাবো। শপিংয়ে। তুই রেডি থাকিস। দুপুরে খেয়ে আমি নক দিবো।
– ওখে বান্ধপী। আর মাত্র চারিদন৷ উফ্! সো এক্সাইটেড। বিয়া খামু।
– হইসে আর উত্তেজিত হওয়া লাগবে না। বাসায় গিয়া রেডি হন।
– হুম হুম।
আমি রুমের দরজার বাইরে পা দিতেই চাচি আইসা খাড়াইলো সামনে৷ তার ভয়ঙ্কর খয়রী লিবিষ্টিকের হাসি দেখেই ভয়ে চিল্লাইতে লাগসিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলাই নিয়া হাসি দিয়া কইলাম, কিছু বলবেন?
– আমার ইয়োকে তোমার কেমন লাগে?
মনে মনে কইলাম, কালা ফুটবল। বাইরে হাসি দিয়া কইলাম, ভাই তো ভালোই দেখতে। চাচি সাথে সাথে প্রতিবাদী সুরে বলল, ভাই বলো কেন? ও তো তোমারই বয়সী। ওকে ইয়ো ডেকো। আমি সম্মতি স্বরূপ মাথা নেড়ে সেখান থেকে চইলা আসলাম। কখন আবার ইয়োর গল্প শুরু কইরা আমার মাথার পোক বাইর করে ফেলে!
.
.
.
.
আমি সাহেদার দিকে তাকাইলাম। সে আমার দিকে দাঁত কেলাইলো। শপিং করতে যাইতেসি তাতে মাইক্রো ভাড়া করা লাগে? কোন গুষ্টির শপিং করতে যাইতেসি? আমি গুনতে বসলাম আমি, সাহেদা, আঙ্কেল, আন্টি, চা…… এরা ক্যান। এদের দেইখাই জ্বর চইলা আসলো। এক একটারে ভাড়ের মতো লাগতেসে। মনে হচ্ছে আলু, টমেটো, ইরি মরিচ আর ঢেঁড়স। পার্ফেক্ট সালাদ। সাহেদাকে জিগাইলাম, মাইক্রো ক্যান? সালাদের জন্য? সাহেদা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাইতেই ওদের দিকে ইঙ্গিত করলাম। ও বুঝতে পেরে হাইসা দিল। মাইক্রোর দরজা খুলতেই চাচি চাচা বসলো প্রথম সিটে আর ইরি ইয়ো বসলো দ্বিতীয় সিটে। ব্যাস, ফার্স্ট আর সেকেন্ড রো ফিল আপ। আমি আর সাহেদা একে অন্যের দিকে তাকাতেই বুঝলাম মাইক্রো কেন ভাড়া করা হইলো। আঙ্কেল ড্রাইভারের সাথে আর আমরা বাকি তিনজন পেছেনের সিটে গিয়া বসলাম।
মাইক্রো থামলো বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে এর সামনে। একঘন্টার পথ। চাচিরা নামতেই মাইক্রোটা যেন হালকা হইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আমরা ধীরে সুস্থে নামলাম। গাড়িটা পার্কিং এরিয়ায় চইলা গেল। আমি শপিংমলে ঢুকতে যাবো তখনই সাহেদা হাত ধইরা বলল, দাঁড়া। এখন যাস না।
– কেন?
– অপেক্ষা কর।
আমি কিছু বলার আগেই সাহেদার ফোন বাইজা উঠল। ও ফোন ধরে কতক্ষণ শুনে বলল, হ্যাঁ, আমরা এসে গেছি।…… হুম হুম…… কতক্ষণ লাগবে? ……… আচ্ছা আচ্ছা। আমরা আছি। তোমরা আসো। সাহেদা ফোন রাখতেই জিগাইলাম, কে আসছে?
– আসলে দেখবি।
আমরা দাঁড়াই আছি এদিকে আলু আই মিন ইয়ো ন্যাকা ন্যাকা করে মাইয়াদের মতো বলতেসে, মমি, হাম্বারা খখোন ভিটরে ঝাভো?
– একটু ওয়েট করো ভাই।
সাহেদার কথা শেষ হতেই একটা সিএনজি আইসা আমাদের সামনে দাঁড়ালো। সেখান থেকে আয়ান ভাই, তার বাবা মা নামল। পর্ষীকে দেইখা সাহেদার কানে ফিসফিস কইরা কইলাম, এই পিচ্চি শাঁকচুন্নি এখানে ক্যান?
– তোর মেয়ে তাই।
– হুর……
সিএনজির ওপাশ থেকে গাজর নামতেই আমি আবার সাহেদার কানে কানে কইলাম, গাজ… আই মিন আকাশ এখানে ক্যান?
– তোর জামাই তাই।
ওর উত্তর শুইনা এক বালতির পানিতে ডুব দিতে ইচ্ছে হইলো। যাহোক তারে দেইখা হাত পা অযথাই মিরগী (মৃগী) রোগীর মতো কাঁপা-কাঁপি শুরু করল। লজ্জায় তার দিকে তাকাতেই পারতেসি না আবার হাসিও আসতেসে। গালে সারাক্ষণ স্টিকার লাগাই ঘুরসে কালকে বাচ্চাদের মতো। ইচ্ছে করতেসিলো গালটা টিপে দেই।
ওরা আসার পর ঢুকলাম শপিংমলে। সাহেদা ঢুকতে ঢুকতে বলল, রাতুল ভাইকে দেখলাম না যে? বাসায়? আমি কইলাম, না, সকালে কি যেন কাজে বের হইসে। ফোন দিসিলো মাঝে। আমি তোদের সাথে বসুন্ধরা আসবো শুনেই সাথে সাথে বলল সেও নাকি আসবে।
– ও।
শুরুতেই শাড়ি আর লেহেঙ্গার দোকানগুলা ঘোরা হইলো। সবগুলাই সুন্দর। পারলে পুরা দোকান তুইলা নিয়া যাইতাম। আয়ান ভাই সাহেদার জন্য একটা গাঢ় খয়রী রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করলো। সাহেদা পাশের আরেকটা দোকান থেকে ওর সাথে মিলিয়ে একটা সাদা পাঞ্জাবি কিনলো। এর মাঝে রাতুল আইসা হাজির কোথায় থেকে। আমাকে দেখে হাসতে হাসতে যখন আকাশের দিকে তাকাইলো সাথে সাথে টিউবলাইটের মতো হাসি অফ হই গেল। কি যে হইসে দুইটার মধ্যে! আমরা এদিক ওদিক ঘুরতেসি। ইয়োও আমাদের পেছন পেছন ঘুরতেসে। যেন চম্বুক। যেদিক যাই আকর্ষণে সেও সেদিক যাইতেসে৷
সাহেদা আমাকে একপাশে ঢেকে কানে কানে বলল, ওয়াশরুম যাবো। আমার চল। আমি ওরে নিয়া ওয়াশরুম রওনা দিলাম। ইয়োও চইলা আসল৷ আমি দরজার কাছে এসে পিছনে ফিইরা কইলাম, এটা মহিলাদের ওয়াশরুম। তুমিও যাবে? আলুটা হেসে বলল, না না, ঝাও ঝাও। হামি এখানে ওয়েট খরছি। ডোন্ট ওরি, ডোন্ট ওরি, হে হে হে…। আমরা ভেতরে চইলা আসলাম।
– এই ইয়োর কি সমস্যা? এমন ঘুর ঘুর করতেসে কেন পেছনে?
– তোর জন্য।
– আমি কি বলসি আমার পেছনে ঘুরো?
– আরে তোকে চাচির পছন্দ হইসে।
– কার জন্য? ঐ আলু? ইম্পসিবল। দেখতেই ফুটবলের আব্বা। তার উপর সারাদিন মমি, হাম্বা ছাড়া বাক্যই আওড়ায় না।
সাহেদা হাসতে হাসতে ওয়াশরুম চইলা গেল। আমি গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম কেমনে এই জোঁকের পিছা ছাড়া যায়।
বের হইয়া দেখলাম আলুটা নাই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দোকানে গিয়া দেখি ইয়োর এক পাশে আকাশ আর অন্য পাশে রাতুল। দুইজনে তার কাঁধে হাত রেখে বলতেসে, এটা কেমন ইয়ো? ওটা কেমন? আর ওদের দুইজনের মাঝে আলু পটেটো চিপস হয়ে যাইতেসে। ভাবতেই হাসি পাইলো। যাক! আর কষ্ট করে জোঁক ছাড়াইতে হইলো না।
আমরা এটা ওটা দেখছি এর মাঝে চাচি কি নিয়া জানি দোকানদারের সাথে তর্ক লাগসে৷ একহাতে আয়ান ভাইয়ের শার্ট খামচে ধইরা আছে। গিয়া শুনলাম সে নাকি একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করসে। একটা টুকটুকে লাল ভারি কাজ করা। আর আয়ান ভাইকে বলসে কিনে দিতে। দামই পনেরোর উপরে। আর সে দর কষাকষি করতেসে দাম কমানোর জন্য। মনে হইতেসে সাহেদার না তাঁর বিয়া। আমার মেজাজটাই খারাপ হইলো। আমি কিছু বলার আগেই সাহেদা বলল, চাচি, এখানে সব ফিক্সড প্রাইজ। দাম কমাবে না। চাচি মুখ খিঁচড়ে বলল, তাহলে যা দিতে বলসে দিয়ে দে, তোদের কথা ভেবেই তো বলসি দাম কমাইতে। আমি মনে মনে কইলাম, ছ্যাচড়া মতো কি বলতেসে জামাইর সামনে! কি রকম খচ্চর!
ইরিকে আসার পর থেকে দেখতেসিলাম আকাশের সাথে চিপকাই আছে ইয়োর মতো আর কিছুক্ষণ পর পর ঠোঁটে লিপস্টিক ঢলতেসে। পারলে মরিচ ডইলা দিতাম। কিভাবে ড্যাব ড্যাব কইরা গাজরের দিকে তাকায়। এখন ন্যাকা কান্নার ভাব কইরা আকাশের হাত ধইরা বলল, আকাশ ভাই, বলেন না কিনে দিতে। মমির খুব পছন্দ হয়েছে। আমি একবার চাচিকে ঐ লাল লেহেঙ্গায় চিন্তা কইরা ইচ্ছে হইলো হাসিতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাই। লেহেঙ্গার বডি সাইজ চল্লিশ। কিন্তু তার তো ছেচল্লিশেও হবে না মনে হয়। কেমনে কি! ইরির জন্য হলেও কথা ছিল। তারে বহু কষ্টে আধা ঘন্টা পর বোঝানো গেল তার সাইজে হবে না। সে ওড়নার কোনা দিয়ে চোখ মোছার ভঙ্গি কইরা বলল, বললেই তো হয় কিনে দিতে পারবি না। যা যা নিজেদের কেনাকাটা কর। বইলা ঢংয়ের কান্না করতে লাগল। এগুলারে সাহেদার বিয়ে পর্যন্ত সহ্য করা লাগবো ভাইবা কান্না পাইলো!
সবাই সবার মতো জামা কাপড় কিনছে। আমি কি করব বুঝতে পারতেসি না। কারণ আমার পকেটে এত দামী জিনিস কেনার টাকা নাই। হঠাৎ পর্ষী আইসা আমারে তার কাছে টেনে কানে কানে বলল, আম্মু তোমাকে ঐ সাদা লেহেঙ্গায় অনেক সুন্দর লাগবে।
– কোনটা?
সে আমারে একটা ঘুপচিতে নিয়া গেল। সেখানে একটা পুতুলের গায়ে সাদা রঙের লেহেঙ্গা রাখা। তাতে ছোট ছোট করে স্টোন, পুতি আর সোনালী সুতার নকশা করা। গলার দিকে আর নিচে ভারি নকশা করা। আর বাকি পুরাটায় ছোট ছোট করে নকশা। সহজে কারো চোখে পড়বে না। এত ঘুপচিতে এটা চোখে পড়ল কেমনে ওর! আমার এক নজর দেখেই ইচ্ছে করতেসে এখনই পরে বসে থাকি। লেহেঙ্গায় প্রাইস ট্যাগ লাগানো ছিল। আমি দেখেই পর্ষীকে বললাম, এটা এমন কি সুন্দর? চলো চলো ঐদিকে দেখি। বইলা ওকে নিয়ে অন্যদিকে চইলা আসলাম। আসবার সময় তিনবার তাকাইলাম। যে দাম! সাহেদারটার দেড়গুণ। এত দাম দিয়ে কিনার থেকে ফুসকা খাইয়া বাসায় যামু। পেটটা ভরবো।
জামাকাপড় শেষে গয়নার দোকানে ঢুকে মনে হইলো চোখ ঝলমল করতেসে। এত সুন্দর গয়না ক্যান? সাহেদা গলাজোড়া চোকার সেট আর কয়েকটা সীতাহার কিনল। গয়নাগুলোর ডিজাইন সুন্দর ছিল। আমি বসে বসে দেখতে লাগলাম গয়না। সাহেদা চুড়ি পছন্দ করার সময় আমাকে ডাক দিলো। আমি পছন্দ কইরা দিলাম। তখনই আমার একটা হাতের চেইনের দিকে নজর পড়ল। একটা চিকন চেইন। তাতে একটা মসৃণ লাভ সেইপ আছে। কিইনা ফেললাম চটপট। শুভ কাজে দেরি করতে নাই। কিন্তু ঐ লেহেঙ্গাটার কথা মনে পড়তেই কান্না পাইলো। এত সুন্দর ছিল!
কেনাকাটা করতে করতে বিকাল গড়াইলো। আকাশে মেঘ জমসে। শপিমলের বাইরে পা দিসি কি দেই নাই ঝুম কইরা বৃষ্টি নামল। কি একটা অবস্থা! এত জিনিস নিয়ে যাওয়াও সম্ভব না। রাতুল বলল, আমি মাইক্রো নিয়ে আসছি। বলে পার্কের দিকে ছুইটা গেল। এদিকে আকাশকে দেখতেসি না। গাজরটা আবার কই গেল!
চলবে…