অ্যান_আনটোল্ড_স্টোরি #তিতীর্ষু (পর্ব ১)

#অ্যান_আনটোল্ড_স্টোরি
#তিতীর্ষু (পর্ব ১)

বাদশার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হচ্ছে। যদিও ঘাম হবার কথা না। শীতের শেষ হলেও পার্বতীপুরে এখনও ঠান্ডা কমেনি, বিশেষ করে এই রাত পোনে বারোটার সময়। মোটরসাইকেলের পেছনে বসে উদ্বিগ্ন চোখে সামনে অযাচিত ট্রাফিক জ্যামের দিকে তাকিয়ে আছে। এসময় জ্যাম হবার কথা না, কিন্তু হয়েছে। এটাই হলো ভবিতব্য। বাদশার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে রাজাউলের উপরে। ওর শজারুর মতো খাড়া খাড়া চুলের দিকে তাকিয়ে রাগটা আরও বেড়ে যায়। বেটায় বলে, স্টেশনে পৌঁছাতে নাকি দশ মিনিট সময় লাগব। অথচ এখানেই ও পনের মিনিট ধরে বসে আছে। অফিসের একটা কাজে দু’দিন আগে এখানে এসেছিল। ইচ্ছে করেই রাতের টিকেট কেটেছে যাতে পরেরদিন পুরোটা সময় বাসায় থাকতে পারে। এর মধ্যেই রুনা দু’বার ফোন দিয়েছে ও স্টেশনে পৌঁছাতে পেরেছে কি না।

বাদশা অস্থির হয়ে মোটরসাইকেলের সামনে বসা রাজাউলকে আরেকবার তাড়া দেয়, ‘রাজাউল, অন্য পথে ঘুরে যাওয়া যায় না? আর তো মাত্র দশমিনিট সময় হাতে আছে ট্রেন ছাড়ার। তোমাকে বার বার জিজ্ঞেস করলাম, পৌঁছাতে পারব কি না, আর এখন এই অবস্থা।’

রাজাউলকে তেমন চিন্তিত মনে হয় না, ও আশ্বাস দেবার ভঙ্গিতে বলে, ‘স্যার, একদম চিন্তা করবেন না। এইখানে ট্রেন মিস করলে, সামনের ফুলবাড়ি স্টেশনে যেয়ে আপনার ট্রেন ধরিয়ে দেব।’

রাগে বাদশার শরীর কিড়মিড় করতে থাকে। ইচ্ছে হচ্ছে ওর খাড়া খাড়া চুল ধরে মাথাটা ঝাকিয়ে দিতে। পারলে বেটার শার্টের ভেতর দিয়ে টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতে। কী নিশ্চিন্ত! বলে এই স্টেশন মিস হলে পরেরটায় উঠিয়ে দেবে।

বাদশা অসহিষ্ণু গলায় বলে, ‘আর যদি পরের স্টেশনও মিস হয়ে যায়? তার চেয়ে এক কাজ করলে হয় না, তুমি আমারে তোমার এই পঙখীরাজ দিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দিয়ে এসো।’

রাজাউল নড়ে উঠে, জ্যামটা ছেড়েছে। খুশি খুশি গলায় বলে, ‘স্যার, জ্যাম ছাড়ছে। আপনারে ঢাকায় দিয়া আসতে পারলাম না। পার্বতীপুর জংশন থেকেই ট্রেন ধরতে পারবেন।’

জ্যামটা ছাড়তেই রাজাউল উল্কার বেগে মোটরসাইকেল ছাড়ে। পেছনে বসে থাকা বাদশার মনে হয় এই বুঝি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেল।

শেষ পর্যন্ত নিরাপদেই ওরা স্টেশনে পৌঁছায়। রাজাউল লাফ দিয়ে নামে, এক হাতে ওর ব্যাগটা নিয়ে বলে, ‘স্যার, আপনি আগে ট্রেনে ওঠেন। আমি ব্যাগ নিয়ে আসতেছি।’

বাদশা আর দেরি করে না। লাল সবুজ রঙের একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটা ইতোমধ্যে লম্বা একটা হুইশেল বাজিয়ে চলতে শুরু করেছে। ব্যাগ থাকুক, ট্রেনে উঠতে পারলেই হলো। ও এক দৌড়ে একদম সামনে যে বগিটা পড়ে সেটাতেই উঠে পড়ে। ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে এবার প্লাটফর্মের দিকে তাকাতেই দেখে রাজাউল এক হাতে ওর ভারী ব্যাগটা নিয়ে বাঁকা হয়ে ছুটছে। বাদশা খুশি হয়, মনে মনে একটা গালি দিয়ে বলে, দৌড়া বেটা। বলে কিনা ওকে ঢাকা পর্যন্ত দিয়ে আসবে, ফাজিল।

শেষ পর্যন্ত রাজাউল ওর বগির সামনে পৌঁছাতে পারে। বাদশা একটা হাত বাড়িয়ে টান দিয়ে ব্যাগটা উঠিয়ে নেয়। ট্রেনের গতি একটু বেড়েছে। রাজাউল দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপানো গলায় বলে, ‘স্যার, আবার আসবেন। ফি আমানিল্লাহ।’

বাদশার এবার মায়া হয়, লোকটা সহজ, সরল। এমন মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমছে। সবাই কেমন যেন ধূর্ত আর স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। বাদশা গলা বাড়িয়ে বলে, ‘তোমার আর দৌড়াতে হবে না। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। ভালো থেকো।’

রাজাউল থেমে যায়, মুখে একটা সহজ সরল হাসি।
রাতের আঁধার কেটে ট্রেন এগিয়ে যায়, ধীরে ধীরে রাজাউল ছোট একটা বিন্দুতে মিশে যায়।

বাদশা এবার ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে কয়েকটা বগি পার হয়ে এসি বগিটায় ঢোকে। বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমোচ্ছে। শীতের রাত বারোটা মানে অনেক রাত। খুঁজে খুঁজে ওর সিটের সামনে আসতেই মন ভালো হয়ে যায়। সামনে টেবিলওয়ালা দু’সিটের আসনটাই ওর। যদিও জানালার পাশের সিটটা না। ব্যাগটা উপরের র‍্যাকে রেখে একবার ওর সহযাত্রীর দিকে তাকায়। মুখ দেখা যাচ্ছে না, সুন্দর একটা ধূসর রঙের চাদর দিয়ে ঢাকা। হাতে কাজ করা চাদর, নিচের দিকে কালো সুতোয় কাজ করা ছোট ছোট পাখি তারের উপর বসা। একদম জীবন্ত মনে হচ্ছে। ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবির উপর চাদরটা মানিয়েছে দারুণ। বোঝাই যায় লোকটা বেশ রুচিশীল, যত্নআত্তি করেন নিজের। বাদশা নিজের দিকে তাকায়, সেই তুলনায় ও যথেষ্টই অগোছালো, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পরনে একটা রঙচটা জিন্স। এমন পরিপাটি হয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আলসেমিতে হয় না। একটু আক্ষেপ হয়, তারপর মাথা ঝাকিয়ে আক্ষেপটা তাড়ায়। রুনাকে একটা ফোন দিয়ে জানায় যে ও শেষ পর্যন্ত ট্রেনে উঠতে পেরেছে। এমন তাড়াহুড়ো করে উঠতে হয়েছে সেটা অবশ্য বলে না, তাতে খামোখা টেনশন করবে বেচারি।

ফোন শেষ করে বাদশা একটু বোঝার চেষ্টা করে ঠান্ডা কি সহ্য করার মতো কি না, না হলে ট্রেনের চাদর নিতে হবে। এসব এসি কামরায় গরমের দিনেও ঠান্ডা লাগে। বাদশা গায়ের জলপাই রঙের জ্যাকেটের চেইন তুলে দেয়। নাহ, মনে হচ্ছে রাত বাড়লে ঠান্ডা আরও বাড়বে। এদিক ওদিক তাকাতেই সাদা উর্দি পরা ট্রেনের একজন স্টুয়ার্ডকে দেখেই হাত তোলে ডাকে। কাছে আসতেই বাদশা ইতস্তত গলায় বলে, ‘একটা পরিস্কার ধোয়া চাদর দিতে পারবেন? গায়ে দেব।’

স্টুয়ার্ড ওকে আশ্বস্ত করে হাসিমুখে বলে, ‘আজকের ধোয়া চাদরই পাবেন।’

একটু পর একটা চাদর হাতে নিয়ে এসে ওকে দেয়, আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে, ‘নাকের কাছে ঘ্রাণ নিয়া দেখেন, সার্ফ এক্সেলের ঘ্রাণ পাবেন।’

বাদশা সন্দিহান চোখে চাদরের দিকে তাকায়, বহু ব্যবাহারে সাদা রঙটা বিবর্ণ। হাতে নিতে অবশ্য বুঝতে পারে চাদরটা আসলেই আজকের ধোয়া, সত্যিই সাবানের ঘ্রাণ আসছে। একশ টাকা নেয় স্টুয়ার্ড।

চাদর পাশে রেখে ভাবে, নিরুপায় না হলে এটা গায়ে দেবে না। আপাতত থাকুক পাশে। বাদশা পাশের লোকটার দিকে তাকায়, এখনও লোকটা চাদর মুড়ি দিয়ে আছে। নড়াচড়া নেই। হঠাৎ করেই একটা দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় আসে, আচ্ছা, লোকটার মুখ থেকে চাদর সরিয়ে ট্রেনের এই চাদরটা দিলে কেমন হয়? ভাবতেই হাসি পায়। নাহ, এই রাত বিরেতে ঝামেলা পাকিয়ে লাভ নেই।

একটা সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে। পকেটে হাত দিয়েও থেমে যায়, রুনা কঠোরভাবে না করেছে সিগারেট খেতে। ইদানীং একটা কাশি হয়। ডাক্তার দেখিয়েছিল, তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। সিগারেট খাওয়ার কথা শুনে খেতে নিষেধ করলেন। আর এরপর থেকেই রুনা ওর পিছু লেগেছে। কান্নাকাটি, ঝগড়াঝাটি। মেয়েটা বোঝে না, এত সহজে সিগারেট ছাড়া যায় না। হ্যাঁ, ও সিগারেট খাওয়া অবশ্য অনেক কমিয়েছে। কিন্তু এখন এই হিম হিম শীতের মধ্যে একটা সিগারেট না খেলেই নয়। বাদশা মোবাইল খুলে রুনার ছবি বের করে, দুষ্টুমি ভরা একটা মুখ। বাদশা গম্ভীর গলায় বলে, ‘ম্যাডাম, একটা সিগারেট খেলাম।’

নিজের দুষ্টুমিতে নিজেই একটু হাসে। তারপর আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়। এক দু’জন জেগে আছে, বেশিরভাগই ঘুম। বাদশা এসি বগি পার হয়ে নন-এসি বগির দরজায় দাঁড়ায়। এখানে ঝকর ঝকর শব্দ হচ্ছে। একটু টেনে একপাশের দরজা খুলতেই হিম বাতাস গায়ে লাগে, একটু কুঁকড়ে উঠে বাদশা। সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে পকেট হাতড়ে লাইটার বের করে। বাতাস বাঁচিয়ে সিগারেট ধরাতেই খেয়াল করে একটা মাঝবয়েসী লোক, চাদর গায়ে। বাদশা চোখ কুঁচকে তাকায়, আরে এটা তো ওর পাশের সিটের লোকটাই। সেই পাখিওয়ালা চাদর। আচ্ছা, এটার নাম কি পাখি চাদর? যেমন পাখি ড্রেস আছে মেয়েদের। জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে যায়। লোকটার চোখেমুখে একটা আভিজাত্য আছে, চট করে এদের সাথে ফাজলামো করা যায় না।

বাদশা মুখ ঘুরিয়ে সিগারেট টানতেই লোকটা ভারী গলায় বলে, ‘আপনার লাইটারটা একটু দেবেন?’

বাদশা একটু চমকায়, এমন পরিপাটি একজন মানুষ ওর কাছে লাইটার চাচ্ছে ভাবাই যায় না। এদের পকেটে দামি কারুকাজ করা লাইটার থাকার কথা। বাদশা মাথা নেড়ে সংকোচের সাথে সস্তা গোলাপি রঙের লাইটারটা বাড়িয়ে দেয়। লোকটা হাত বাড়িয়ে লাইটার নেয়, তারপর দামী ব্রান্ডের একটা সিগারেট ধরিয়ে লাইটার ফেরত দিয়ে নিচু গলায় বলে, ‘থ্যাংকিউ।’

বাদশা উত্তরে ‘ওয়লেকাম’ বলবে কিনা এই নিয়ে যখন দ্বিধা করছিল ঠিক তখনই রুনার ফোন আসে। বুকটা ধক করে ওঠে, রুনা কি টের পেয়ে গেল ও সিগারেট খাচ্ছে?

দ্রুত হাতে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে রুনার গলা পাওয়া যায়, ‘এই শোনো, তোমার তো আসতে আসতে সকাল নয়টা বেজে যাবে। এসে কী নাস্তা করবে? খিচুড়ি আর ডিম রান্না করি?’

বাদশার মনটা ভালো হয়ে যায়, মেয়েরা এমন মায়াবতী কেন হয়! নরম গলায় বলে, ‘আচ্ছা, রেঁধো। রাত জেগো না, ঘুমিয়ে পড়ো। টুনি ঘুম?’

কথার শেষ দিকে গলা খুশখুশ করে উঠে, প্রাণপণ চেষ্টা করেও কাশিটা আটকাতে পারে না। ওপাশ থেকে রুনা তীক্ষ্ণ গলায় বলে, ‘তুমি সিগারেট খাচ্ছ?’

বাদশা পাখি চাদরওয়ালা লোকটার দিকে একবার তাকায়, তারপর অস্বস্তি নিয়ে বলে, ‘আরে নাহ, কি যে বলো। আমি সিগারেট খাব কেন। ঠান্ডা বাতাস আসছে, তাই একটু গলা খুশখুশ করে উঠল। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।’

ওপাশ থেকে রুনার সন্দিহান গলা পাওয়া যায়, ‘এসি কামরায় আবার ঠান্ডা বাতাস কোথা থেকে আসবে? আর ট্রেনের এত জোর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কেন? তুমি নিশ্চয়ই বাইরে এসেছ সিগারেট খেতে।’

বাদশা এবার মরিয়া গলায় বলে, ‘আরে নাহ। আমি একটা চাদরের খোঁজে এসেছিলাম, ট্রেনের লোকদের কাছে। এই যে চাদরটা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ব। আর তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো।’

রুনা এবার উদ্বিঘ্ন গলায় বলে, ‘ঠান্ডা লাগছে? ইশ, আমি কেন যে তোমাকে একটা চাদর দিয়ে দিলাম না। আচ্ছা, তুমি চাদর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’

বাদশা আর কথা বাড়ায় না। ফোন রেখে সামনে দাঁড়ানো লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা অপ্রস্তুত হাসি দেয়। লোকটা মিটিমিটি হাসছে। ওর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বউকে মিথ্যে বললেন বুঝি?’

বাদশা সংকুচিত গলায় বলে, ‘আপনিই বলুন, এত সহজে এই সিগারেট ছাড়া যায়? যদি সত্য বলতাম তাহলে তুলকালাম হতো। কী দরকার শান্তি নষ্ট করে।’

লোকটা মাথা নাড়ে। সিগারেটে লম্বা একটা টান দেয়, তারপর সম্মতিসূচক গলায় বলে, ‘ঠিক বলেছেন, কি দরকার শান্তি নষ্ট করে। বউকে তো আর সব সত্য বলা যায় না। মিথ্যে দিয়ে যদি শান্তি বজায় থাকে তবে তাই ভালো।’

বাদশা ভ্রু কুঁচকে তাকায়, আচ্ছা লোক তো। ওকে একদম ঘোর মিথ্যেবাদী বানিয়ে দিচ্ছে লোকটা। চোখমুখ শক্ত করে দৃঢ় গলায় বলে, ‘নির্দোষ ছোট খাটো মিথ্যে বলি বটে, কিন্তু বড় কোনো মিথ্যে বলি না কখনও। সেটা যত তিক্ত সত্যই হোক, লুকাই না আমি।’

লোকটা থমকায়, একটু ভারী কালো ফ্রেমের চশমার ভেতর থেকে সরাসরি ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর ভারী গলায় বলে, ‘আমি লুকিয়েছি। আমার স্ত্রীর কাছে গত উনিশ বছর ধরে একটা বড় সত্য লুকিয়ে এসেছি। যেটা জানলে হয়ত ও আমাকে কখনোই ক্ষমা করবে না। এমনকি আমাকে ছেড়ে চলেও যেতে পারে।’

বাদশার গলায় সিগারেটের ধোঁয়া আটকে যায়, খকখক করে কেশে ওঠে। লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নেয়, তারপর অবাক চোখে পাখিওয়ালা চাদর পরা লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটা এখন বাইরে তাকিয়ে আনমনে সিগারেট খাচ্ছে। বাদশা তীব্র কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করে, কিন্তু লোকটা আর তেমন কিছু বলে না।

একটা সময় ওরা দু’জন সিটে ফেরে। বাদশাকে পাশের সিটে বসতে দেখে একটু অবাক হয়, ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘আপনি আমার পাশের সিটেই বসেছেন? বাহ, বেশ তো।’

বাদশা ঠিক কি উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারে না। ওর মাথায় শুধু একটা কথা ঘুরছে, লোকটা এমন কী মিথ্যে বলেছিল যার জন্য এত বছরের সংসার ভেঙে যেতে পারে! নিশ্চয়ই বিবাহ বহির্ভূত কোনো সম্পর্ক ছিল লোকটার। অথবা আগে একটা বিয়ে করেছিল। মাথা ধরে যায়, কেমন উল্টোপাল্টা চিন্তা করছে ও। কিন্তু লুকানো সত্যটা জানতে ইচ্ছে করছে খুব।

বাদশা উশখুশ করে, কিন্তু লোকটা যেন বেমালুম ভুলে গেছে যে ওকে একটা কথার অর্ধেক বলেছে। বাদশা কথা শুরু করার জন্য মুখ খোলে, কিন্তু কি বলবে ভেবে পায় না। চাদরের দিকে চোখ পড়তেই স্বস্তি ফুটে উঠে, পাওয়া গেছে কি জিজ্ঞেস করবে।

বাদশা আগ্রহের সাথে বলে, ‘আপনার চাদরটা কিন্তু খুব সুন্দর। কোথা থেকে কিনেছেন?’

লোকটা চাদরের দিকে তাকায়, তারপর হেসে বলে, ‘ওহ এটা আমার বউ এর করা। ওর একটা চালু অনলাইন জামা কাপড়ের সাইট আছে। খুব সুন্দর ডিজাইন করতে পারে। এক্সক্লুসিভ সব ডিজাইন, চড়া দামেই বিক্রি হয়।’

বাদশা সুযোগটা ছাড়ে না, বলে, ‘বাহ, আপনার বউ তো বেশ গুনী।’

লোকটা মাথা দোলায়, বলে, ‘হ্যাঁ, দারুণ গুনী। চারুকলায় পড়ত। তাই ওর সুন্দর ভাবনাগুলো নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু আমি..’

কথা শেষ করে না, কেমন যেন আনমনে হয়ে যান। বাদশা বুঝতে পারে লোকটার মনে একটা ঝড় চলছে। হয়ত বলতে চাচ্ছেন সেই লুকোনো সত্যটা। সময় পার হয়ে যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুখ খোলেন না উনি।

বাদশা অপেক্ষা করে, লোকটা এখনও কোথাও হারিয়ে আছে। বাদশা আশা ছেড়ে দেয়, নাহ বলবে না আর কিছু। রাত একটা বাজে। ঘুমিয়ে পড়া যাক।

চোখ বন্ধ করতেই একটা নিচু গলা পাওয়া যায়, ‘মিরাকে আমি ঠকিয়েছিলাম, মিথ্যে বলেছিলাম।’

বাদশা দ্রুত চোখ খোলে, লোকটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে, চোখে একটা ঘোলা দৃষ্টি। ওকে চোখ খুলতে দেখে ঠোঁট জোড়া নড়ে উঠে, বলা শুরু করেন সেই না জানা গল্পটা।

(চলবে)

**তিতীর্ষু অর্থ যে ত্রাণ লাভ করতে ইচ্ছুক। গল্পের নাম নিয়ে দ্বিধা আছে। প্রিয় পাঠক কোনটা ভালো হবে, তিতীর্ষু না অ্যান আনটোল্ড স্টোরি?

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here