অরুর সংসার,পর্ব-৯
লেখিকা-নিশিকথা
অয়ন জয়াকে নিজের থেকে বেশ ক্ষানিকটা দুরে সরালো কিছুটা জোরে ধাক্কা দিয়েই “”” অয়নের মেজাজ এখন চরম খারাপ….
তাও ঠান্ডা গলায় জয়াকে বলল……..
অয়ন:Dr.Joya….Relax….. Sit here!!! Come on !! come here sit here!!!
(অয়ন জয়াকে ধরে চেয়ারে বসালো…. এক গ্লাস পানি জয়ার দিকে এগিয়া বলল….
অয়ন: নিন
জয়া :……….( কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে যাচ্ছে জয়ার)
অয়ন:Dr please!! calm down…. take it
(জয়া পানি নিয়ে ঢলঢক করে পান করে নিল)
……….
অয়নের কেবিনে এখন
Pin Of silence
অয়ন নিরবতা ভেংগে বলল…
অয়ন: জয়া একটু আগে আপনি যে কাজ টা করলেন বা যেসব বললেন সেটা একজন ডাক্তার হয়ে আপনার করা বা এসব কথা বলা শোভা পায় না!!!
আপনি এটা করে কি বুঝালেন বুঝলাম না!!
ঠিক করেন নি আপনি এটা! আপনার এই বিহেভিয়ার একজন মাচুয়ার মেয়ের মত তো ছিল না
জয়া : আপনাকে ভালবেসা টা কি ভুল আমার ???
অয়ন : না ভালবাসা ভুল কি না জানিনা তবে আমি বিবাহিত এটা জানার পরও ভালবাসাটা ভুল।।।
জয়া: ……………….
অয়ন : Anyways!! Forget it.Go back to your work
জয়া : ফিরিয়ে দিচ্ছেন??
অয়ন: আপনার কাছে আসাটাকে মেনেই নেই নি” ফিরিয়ে দিব কি করে?
ডঃ আপনার যে পজিশন আপনি আমার থেকে হাজার গুন ভাল ছেলে পাবেন। যে কেউ আপনাকে ভালবাসতে বাধ্য!!
জয়া : যে কেউ কে তো চাই নি! আমি শুধু আপনাকে চেয়েছি।
অয়ন : তাহলে বলবো আপনার চাওয়া টা ভুল।
জয়া : অনেক ভালবাসেন নিজের স্ত্রী কে???
অয়ন : ভালবাসাটা কি সাভাবিক না????
জয়া : আমি কি করবো?? কিভাবে থাকবো????
অয়ন : যেভাবে আমি আপনার লাইফে আসার আগে ছিলেন!
জয়া : স্যার আপনি আমার জীবনে সেই
অধ্যায় যা আমার এন্টায়ার লাইফের ভালবাসার সর্বপ্রথম আর
সর্বশেষ অধ্যায়……..
You are my lifeline
♦অয়ন :ডঃ আমি আপনার জীবনের কোন অধ্যায় নই..মরীচিকা মাত্র!!!
আর মরীচিকার না শুরু আছে না শেষ………♦
and I can’t be your lifeline…
you know why??
— — — — — —
নাহ এটা আমি আপনাকে বলবো না! আপনি একটু ভেবে দেখবেন! নিজের এখোনো অবধি জীবন এবং ওই জীবনের সাথে জড়িত মানুষদের নিয়ে ভেবে দেখবেন! ” উত্তর পেয়ে যাবেন…..
এখন আসতে পারেন!!!!!
(জয়া অয়নের কেবিন থেকে বের হয়ে সরাসরি হাসপাতালের বাইরে চলে গেল)
অয়ন জয়ার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকয়ে ধপ করে বসে পড়লো! অয়ন ভাবছে….. কত ইজিলি সে জয়াকে বলে দিল যে সে তার স্ত্রি কে ভালবাসে!” কিন্তু আদোও কি এটা সত্য???
না তো!!! এটা তো সত্য নয়!” সে অরুকে ভালবাসে না।।। বাসতে পারে না……সে এই জীবনে মেয়ে জাতীর যে রুপ দেখেছে…. তাতে মেয়েদের ভালবাসা তো দুরে থাক মেয়েদের প্রতি মিনিমাম বিশ্বাসটুকু তার নেই….
…………..আরোহী আর অহনা ব্যতীত তার কাছে সব মেয়েই এক।
কিন্তু *অরু* !!!!! সে এতকিছু যে করছে সব যদি নাটক হয়? না এই মায়ায় সে জড়াবে না।সে অরুকে বলে দিবে যারে তার উপর অরু আর যাই হোক ভালবাসার আশা না করে!!! ।।।।।।।।।কারন সে অরুকে ভালবাসে না আর কখনো ভালবাসবেও না।।।।।।।।। অরু তার কাছে ভোগের খোড়াক ছাড়া কিছুই না।তবে হ্যা অরু তার জীবনে গত ৩ দিনে এমন এক স্থান নিয়েছে যাতে করে সে অয়নের জীবনে এই দুনিয়ার বাকি সবার থেকে আলাদা! অয়ন নিজে নিজেকে জিঙ্গাসা করলো……. অরুর আলাদা হবার কারন কি ভালবাসা?????
.
.
.
.
আবার অয়ন ই নিজেকে নিজে বলল …. না! ভালবাসা না শুধুই কামনা!!! অরু একারনেই আলাদা। অরুকে দেখে তার যে ফিল হয় তা বাকি কোন মেয়েকে দেখে হয় না!
কিন্তু অয়ন যেন নিজের মনকে আর নিজেকে কিছু থেকে কিছু বলেই শান্তি পাচ্ছে না !!!
শান্তি না পাবার কারন জয়া নয় বরং তার বিবাহিত স্ত্রি |
অনিক রুমে গেল ফ্রেশ হতে! আরোহীর কথা মত অরু সব খাবার রেডী করছে! অনিকে রুমে ঢুকে দেখে রুশা পুতুল নিয়ে খেলা করছে……
অনিক: মা! আমার মা টা কি করে?
(রুশা অনকের দিক তাকিয়ে হেসে দিল! খুব খুশি হয়েছে অনিকের আদুরে ডাকে।।অনিকের দিকে ২ হাত বাড়িয়ে দিল…কোলে উঠবে সে তার বাবার)
(অনিক রুশাকে কোলে নিতে যেয়েও থেমে গেল)
অনিক: মা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি? বাইরে থেকে এসে তোমাকে ধরা ঠিক হবে না।কিটানূ না!!!!
রুশা আবার খেলায় মন দিল! অনিকে ওয়াশরুমে গিয়ে দ্রুত শাওয়ার নিয়ে বের হল একটা হালকা আকাশি পাঞ্জাবী পরে!!
বের হয়ে দৌড়ে তার মেয়ের কাছে গেল অনিক!!! কোলে তুলে নিল রুশাকে। রুশার গালে,কপালে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে থাকলো!!!! আজ ১ মাস পর সে তার কলিজাটাকে আদরে ভরে দিচ্ছে!!!
রুশা তার বাবার কান্ড দেখে অবাক!!!!!
অনিক এবার কেঁদেই দিল রুশাকে জড়িয়ে……..
অনিক: মা রে আমাকে মাফ করে দে রে মা।আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি ” আর এমন হবে না!!! তোর বাবাই সব ঠিক করে দেবে
(রুশা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো…. বাবাকে চুমু দিয়ে বলল
রুশা : কাতে না বাবাই উশা নাভ উ (কাঁদে না বাবাই রুশা লাভ ইউ )
অনিক : না মা তুই বড্ড রাগ করেছিস আমার উপর তাই তো সেদিনের পর থেকে আর খেলতে চাস না বাবাই এর সাথে
রুশা: লাগ কলি নি। না কলচি কলচিলাম। আদো কসসো ভুয়ে গেসি
(রাগ করি নি! না করছি! করছিলাম,আদর করেছো ভুলে গেছি )
রুশা : খববো তো খেববো তো! তল
(খেলবো তো খেলবো তো চল)
অনিক : চল মা! আমি সব ঠিক করে দিব মা, সব আগের মত করে দিব
।
।।
।
( আরোহী রুমের বাইরে দাড়িয়ে শুনল সব! চোখের পানি বাধ মানছে না.. অবশেষে তাদের ছোট্ট মেয়েটার অভিমান ভেংগেছে!! আরোহী মনে মনে ভাবলো…. দেখেছো অনিক আমাদের মা টা বেশি কিছু তো চায় না শুধু একটু তোমার আদর আর সময় চায় “”” তুমি একটু আদর করেছো সে তো সব অভিমান ভুলে তোমাকে কাছে টেনে নিয়েছে…… কিন্তু আজ যদি তুমি এটা না করতে আমাদের মা টার ছোট্ট মনে কি বিরুপ আঘাত লাগতো বল তো!!!)
< আমি সব ঠিক করে দিব মা, সব আগের মত করে দিব> অনিকের এই কথা টা এখন আরোহীকে ভাবাচ্ছে!!! কিছু তো হয়েছিলো! জানতে হবে তার!
আরোহীর সকল অভিমানও যেন এখন উধাও!!! ভালবাসার মানুষের তো এই একটা গুন।বেশীক্ষন রাগ করে থাকটে পারে না।………
/
//
/
রাতে সবাই বাড়ী ফিরলো এক এক করে!
অহনা : হেই জিজু!!!!! আসসালামু আলাইকুম!!
অনিক: ওয়ালাইকুমআসসালাম
কোথায় গেছিলে? কলেজ বন্ধ না??
অহনা:হা জিজু! একচুয়ালী আমি একটা
ব্যাংকে ইন্টিরশিপ এর জন্য ট্রাই করছিলাম ফাইলানি সেটা এপ্রুভ হয়েছে।।।।।তাই গিয়েছিলাম, আপাতত অফ!
অনিক :গ্রেট!! কেরি অন
যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, একসাথে খাবো।
বাবা এখন ও ফিরলেন না যে?
অহনা : আজ তো বাবার ও লাস্ট অফিস ডে!
করোনাভাইরাসের জন্য কাল থেকে সব অফিস আদালর বন্ধ! তাই মেবি কাজ সেড়ে ফিরয়ে দেরী হচ্ছে! জিজু আপনার ও তো অফিস বন্ধ!! আমাদের সাথে থাকবেন কিন্তু একয়দিন!
অনিক : ডান (অনিক তো আসলে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।।। একয়দিন অফিসে যাওয়া লাগবে না আর ওই রিটার চেহারাও দেখা লাগবে না….. আজ রাতে সে আরোহীকে সব বলবে! মনের সব কথা বলবে!!! তারপর ২ জন মিলে প্রব্লেমের সলুশন বের করবে! আসলে ভুল
অনিকের ই ছিল! প্রথমেই তার আরোহীকে সব খুলে বলা উচিৎ ছিল! আর এখানে তো অনিকের কোনই দোষ ছিল না!আজ যদি অনিক প্রথমেই সব বলে দিত তাহলে আজ তার দ্বারা অরোহী আর রুশাকে এত কষ্ট পেতে হত না.)
বাসার সবাই একইসাথে রাতে খেল শুধু অয়ন আর অরু বাদে! অয়ন জানিয়ে দিয়েছে তার আজকে ফিরতে দেড়ী হবে! তাই অরু ও খায় নি।
এদিকে অয়ন আর অরুর বৌভাতের অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিয়েছে…. বাইরের অবস্থা ভাল না।যে হারে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে।। এর মধ্যে অনুষ্ঠান হওয়া ইম্পসিবল… দেশের যা অবস্থা তাতে সচেতন থাকা ছাড়া বাচার উপায় নেই।
ওদিকে সবার অফিস ছুটি কিন্তু অয়নের কোন ছুটি নাই!! বরং এর সিচুয়েশনে হাসপাতালের খোলা থাকা সব থেকে প্রয়োজনীয়…..
রাত ১২ টা…….
অয়ন ফিরলো… রুমে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে চল গেল হাত মুখ ধুতে
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে অরু দাড়িয়ে আছে লেবুর সরবত নিয়ে।।
অয়ন অরুর দিকে তাকিয়ে আছে!!
কি আছে এই মেয়েতে??? এত মায়া কেন লাগে???
আচ্ছা আজ যদি সে বাবার কথায় বিয়েতে রাজি না হত তাহলে কি হত?? অরুকে তো পেত না!!!!!
অরু! তো তার ইদানিং প্রতি রাতের নিত্যনিয়মিত প্রয়োজন যার মুখখানি দেখলে সারাদিনের ক্লান্তি দুর হয়ে যায়….. কিন্তু আর যাই হোক অয়ন তো অরুকে ভালবাসে না…….
অয়ন অরুর হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে লেবুর পানি টা পান করে নিল
অরু : বলছি যে আমি নিচে খাবার দিয়েছি চলুন খেয়ে নিন।
(অয়ন কিছু না বলে নিচে চলে গেল)
(অরু অয়নকে খাবার বেড়ে দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে)
অয়ন: তুমি খেয়েছো??
অরু: না মানে খাবো পরে
অয়ন: পড়ে আর কখন?
অরু: আগে আপনি খেয়ে নিন
অয়ন: হুম
^^^^^
^^^
^
রাত ১ টা। অরু সব কাজ শেষে রুমে এল ! অয়ন রুমে নেই!! গেল কোথায়?? ওয়াশরুম ও তো খোলা!! হয়তো বারান্দায়! অরু দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ফ্রেশ হতে….
ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে
অরু বারান্দায় উকি দিয়ে দেখলো অয়ন দাড়িয়ে সিগারেট টানছে…..
অরু : বুঝলাম না ওই ধোঁয়ার কি খায় উনি। আমার একটুও ভাল লাগে না!!
অয়ন: শোনা যাচ্ছে কথা “”!!
(অরুর চোখজোড়া অয়নের কথা শুনে বড়বড় হয়ে গেল)
অয়ন : মিনমিন করে কথা বলো তা ঠিক ই স্পিষ্ট শোনা যায়!! আর কোন প্রশ্ন করলে উত্তর এতই আস্তে বল যে কানে শুনি না
(অরু এবার জিহ্বায় কামড় দিয়ে যেই না দৌড়াতে যাবে অয়ন ওমনি অরুর হাত ধরে ফেলল…. হাত ধরে একটানে অরুকে নিজের কাছে নিয়ে এলো..)
চলবে……