অরুর সংসার,পর্ব-৩১ অন্তিম পর্ব

অরুর সংসার,পর্ব-৩১ অন্তিম পর্ব
লেখিকাঃতানহা ইসলাম (ছদ্মনামঃনিশিকথা)

১.৫ বছর পর……..

জয়া এয়ারপোর্টে বসে আছে মুখ ভার করে।
আর খানিক্ষন বাদে বিদেশে পাড়ি জমাবে সে আর আভি। কি করবে?
সেই পারলো না সিস্টেমের সাথে।অয়নের কথা মত তাকেও না পেরে আজ পাড়ি জমাতে হচ্ছে কানাডায়।
এইতো গতমাসের কথা।আবারো এক পেসেন্টের গ্যাস্টোলিভারের প্রব্লেম ছিল।নিজেকেত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভুল চিকিৎসা করে নিজেদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বাড়িয়েছে এ্যাপোলোর এক ডাক্টার।
পারে নি জয়া আটকাতে।
ডঃশুশান্ত ও পারে নি উপরি চাপের কারনে বিষয়টাকে সামনে আনতে।
শেষ যখন পেমেন্ট নিয়ে সব ফর্মালিটি পুরন করতে জয়া অয়নের কেবিনে গেছিল গত মাসে…..
-May i come in sir
-yes
-এইযে
-কোন দেশে যাচ্ছেন?
-কানাডা
-আমি বলেছিলাম ডঃ পারবেন না সিস্টেমের কাছে।
-হুম আফসোস!!!!!
-আমিও এই হাসপাতাল ছেড়ে দিচ্ছি
-কেন?
-চোখের সামনে আর এই অন্যায় দেখতে পারছি না।এতদিন ছিলাম কারন নিজের বিজনেস পুরোপুরী দাড়াতে সময় লাগছিল।আল্লাহ এর রহমতে ভালভাবে দাড়িয়ে গেছে এখন।আপনার এই ফর্মালিটিস পুরোন ইই আমার শেষ কাজ ডঃ
-যাক ভাল স্মৃতি হয়ে থাকবো এই দিক থেকে।
-Best of luck for future Dr.Joya.
-Thanks. Same to you.Good bye
-Good Bye
…………………
-জয়া
-হু
-চল এবার যেতে হবে
-চল
(জয়া আর অভি পাড়ি জমালো সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে নিজেদের উজ্জল ভবিষ্যতের আশায় আজ…….

[[[লেখিকার কিছু কথাঃঅরু অয়নের জীবিনে পার্শ্ব চরিত্র বা তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে জয়ার আবির্ভাব হলেও সে কিন্তু তাদের জীবনে বাধা হয়ে দাড়ায় নি কখনোই।হবেই বা কেন? জয়া সময় থাকতে বুঝে গেছিলো নিজের ছোট্ট জীবিনের মূল্য তবে আমাদের সমাজে অনেক এমন মেয়েরা আছে তারা এটা বোঝে না আর অন্যের দাম্পত্য জীবনে বাঁধ সাধে…. কিন্তু তাতে লাভ টা কি হয়??? সে মেয়ের ই জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নস্ট হয়….
তাদের বলছি জীবন টা অনেক ক্ষুদ্র। মরিচীকার পিছনে দৌড়ে তা নস্ট করা বোকামি ]]]

অয়ন সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফিরলো। কাল থেকে তার প্রফেশনার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। সাদ আর অয়ন মিলে এই ২বছরে একটু একটু করে দাড় করিয়েছে বিজনেসটাকে। সাদ ও এই মাসে চাকরী ছেড়ে দিয়েছে আর অয়নও।

কলং বেল দেবার সাথেসাথে মিনু এসে দরজা খুলল…. অয়ন ভ্রু কুঁচকে মিনুর দিকে প্রথমে তাকালো তারপর আশেপাশে ভাল করে দেখে নিল…
কি ব্যাপার???
আয়ু কথায়???
রোজ তো ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেটে হেটে চলে আসে এই সময় কলিংবেল বাজলেই… তাহলে আজ এলো না কেন???
অয়ন দ্রুত পায়ে উপরে চলে গেল নিজের রুমে…..

রুমে ঢুকে অয়নের চোখ আটকে গেল….. অরু অরিন কে ফিড করাচ্ছে……অরু অয়নকে দেখে নিজেকে ঢেকে ফেলার ব্যর্থ চেস্টা করছে…. অয়ন আস্তে করে রুমে ঢুকে ফাইল পত্র রেখে ওয়াশরুমে গেল….
অয়ন বুঝতে পেরেছে যে অরু একটু আনইজি ফিল করছে কিন্তু তবুও ওখানে থাকলে বারবারর যেন অয়নের বেহায়া চোখ টা অরুর দিকে যেত তাই অয়ন ওয়াশরুমে চলে এলো ফ্রেশ হতে।আজব এত দিনেও এত কিসের লজ্জা অরুর………! ভেবে পায় না অয়ন……..

দুধ খাওয়া শেষে যেই না অরিন মায়া মায়া চোখ অয়নের দিকে তাকালো অয়নের বুক টা ছেঁত করে উঠলো……
ছোট্ট মেয়ে টা কেঁদে কেঁদে চোখজোড়া ফুলয়ে টেম করেছে……..
অয়ন অরুর দিকে তাকিয়ে বলল….
-আমার মা কাঁদছে কেন??
– ……………
-কি হল বল
(অরিন এবার কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে অয়নের কোলে গেল……)
-মাততে মাততে মা মাততে
-অরু !!!!!!
(অরু মাথা নিচু করে বসে আছে…. অয়ন অরিন কে কিছুক্ষন চুমু দিয়ে খাটে শুয়ালো। ওদিকে অরু নিজের শাড়ির আঁচল ২ হাতে নিয়ে পেঁচাচ্ছে…)
-অরু
-হু
-আয়ু কে মারছো কেন?
-ও খায় না কিছুই। কি করবো?
-তাই বলে মারবে?
-ও আপনার!!
-কি আমার???
-আপনার পাসপোর্টে আঁকিবুঁকি করে রেখেছে
-কিহ??
-জি
(অয়ন এবার করুন চোখে অরিনের দিকে তাকায়…..
অরিন গালে হাত দিয়ে পুতপুত শব্দ করছে আর হাসছে হাত পা ছড়িয়ে.।
অরিনের এই মনভুলানো হাসি যেন সেকেন্ডের মাঝে অয়নের অভিমান ভুলিয়ে দিল…
অয়ন উপুর হয়ে অরিন কে আদোর করতে করতে বলল……
-থাক। আমি পাসপোর্ট আবার রিনিউ করে নিব…..
-হুম
-তুমি ফারদার আর আমার মা এর গায়ে হাত যদি দিসো… তাহলে….
-তাহলে???
-তাহলে আর কি আমার সামনেই রোজ আয়ুকে ফিড করাতে হবে আমি তাকিয়ে থাকবো
-বেহায়া লোক (মনেমনে)
-তোমার প্রেমে(মনেমনে)
কিছু বললে….?
-না ত কই?
-হুম

♠ আপনারা ভাবছেন যে দেড় বছর আগে সেদিন অরু চলে যাবার পর আবার অয়ন তাকে ফিরে পেল কিভাবে ?? তাহলে চলুন একটু ঘুড়ে আসি অতীতে……..

অয়ন সারা বাড়ী তন্নতন্ন করে খুঁজলো….. কোথাও অরুকে পেল না…..অয়ন কেন জানি প্রচুর ঘামছে….

দৌড়ে নিজেদের উপরের রুমে ঢুকে অয়ন এবার চিল্লাতে লাগলো….
-অরু………. ??
অরু……………!!
কোথায় তুমি??
কোথায় গেলে??
দেখো আমি ফিরেছি…
তুমি জানো না আমি খুব ক্লান্ত অবস্থায় ফিরি….
তুমি না আমি বাসায় ফেরার সাথেসাথে আমাকে লেবুর পানি দেও রোজ??
আজ কই সেটা??? অরু…..!!!
দেও না আমায় লেবুর পানি….? আমার না খুব তেষ্টা পেয়েছে অরু……. গলাটা খুব শুখিয়ে গিয়েছে………..

অরু…………………
.

ধরফরিয়ে উঠলো অয়ন। তখন সকাল। অয়ন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৬ টা বাজে ।
অয়ন আশেপাশে ভাল করে কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করলো…..
এই মানে এটা স্বপ্ন ছিল !
অয়ন কিছুক্ষনের জন্য প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলল…
হটাৎ… এটা স্বপ্ন ছিল???
তাহলে অরু কোথায়?????
অয়ন দ্রুত পায়ে বারান্দায় গেল. । না নেই অরু।
ওয়াশরুমে….. নেই।
রান্নাঘরে…? ড্রয়িং রুমে…..?
না নেই।
অয়ন বাড়ীর প্রতিটা রুমে দেখলো। কোথাও অরু নেই। তাহলে কি তার স্বপ্নই সত্যি হল?
হারিয়ে ফেলল সে তার অরুকে? হারিয়ে ফেলল নিজের ছোট্ট পরীকে??
অয়নের কেমন মাথা ঘুড়িয়ে এক।কোন রকম ঠেঁক দিয়ে দেওয়াল ধরে দাঁড়ালো অয়ন….
আজ নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে অয়নের। বড্ড নিঃস্ব মনে হচ্ছে…….

ছাদের দিক টা তো দেখা হয় নি……. তবে এই অবস্থায় অরুর পক্ষে ছাদে ওঠানামা পসিবল না।
অয়ন তাও দৌড়ে ছাদে গেল।বিশাল ছাদ। প্রতিটা কোণা তন্নতন্ন করে খুজলো। নেই অরু….
হটাৎ অয়নের নজর নিচে গেল। বাগানের পিলারগুলোর এক পাশে পরিচিত একটা লাল ওড়না দেখতে পেল সে…
অয়ন ছাদ থেকে আবার দৌড়ে নিচে গেল। বাগানে যেতেই পরিচিত সেই স্মেল।অরুর স্মেল। অয়ন পিলারের সামনে গিয়ে দেখলো অরুর পিলারে পিঠ ঠেঁকে দাড়িয়ে আছে চোখ বুঝে। অরুকে দেখে অয়ন মনে হয় নিজের প্রাণ ফিরে পেল।
-অরু (অয়ন গিয়ে অরুকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরলো।)
– অরু নিশ্চুপ! [বিয়ের ১বছর আড়াই মাসে এই প্রথম অয়ন অরুকে ভালবেসে জড়িয়ে ধরেছে। অরু ফিল করতে পারছে অয়নের এই ছোঁয়ার মাঝে ভালবাসা♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥ অয়ন এমন ভাবে অরুকে জড়িয়ে আছে যেন এখনি নিজের মাঝে অরুকে ঢুকেয়ে ফেলবে ]
-কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
-কই? কোথাও না তো
-এত সকালে এখানে কেন??
-এমনি ভোরের এই পরিবেশ টা ভাল লাগে
-আমি ভেবেছিলাম
– কি???
-তুমি কোথাও যাবে না আমায় ছেড়ে!! কোথাও না……!! বুঝেছো???
– ………….
-কি হল বল না কোথাও যাবে না??
-যাবো না কোথাও আপনাকে ছেড়ে ।
-তাহলে আমি এমন স্বপ্ন!!! কোথায় যেতে চেয়েছিলে তুমি???
কোথায় চলে যেতে আমায় ছেড়ে ?

(অয়নের এমন অস্থিরতা দেখে অরু অবাক। অরুকে জড়িয়েই কথাগুলা বলছে অয়ন……. অরুর চোখে পানি…. না বলা লাগবে না অয়নের তাকে যে এই অস্থিরতার মূলে কারন হল #ভালবাসা..)

-কোথাও না।
কেন যাবো?
কোথায় যাবো?
আপনি আমার স্বামী। আমি আপনার স্ত্রি।
বিয়ের মত পবিত্র বাঁধনে মহান আল্লাহু রব্বুল আল-আমিন আমাদের আবদ্ধ করেছেন। আপনার কারনে এই সংসার টা পেয়েছি। এটা আমার সংসার। #অরুর_সংসার।
আমি এই সংসার ছেড়ে আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো? আপনিহীন আমি আর আমাদের বাবু তো অস্তিত্বহীন।

♦সেদিন অরুর কথায় অয়ন আবার নতুন করে বাঁচার আশ্বাস পেয়েছিল।
আর অরু পেয়েছিল অয়নের কথায়, ছোঁয়ায়, প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিজের প্রতি অয়নের ভালবাসা ফিল করতে। এটাই তো অরু চেয়েছিল ♥।।।।
হোক না তার প্রতি অয়নের ভালবাসা শব্দহীন। হোক না নিশ্চুপ…ক্ষতি কি?
অরু তো বাঙালী নারী।
আমরা বাঙালী মেয়েরা আর যাই হোক স্বামী সংসার ছেড়ে যেতে নারাজ। আর অয়ন স্বামী হিসেবে হয়তো নিজেকে প্রকাশ করতে পারে নি তবে তাকে দেখলে এটা স্পস্ট যে সে অনেক ভাল একজন #বাবা হবে।
অয়ন একজন ভাল স্বামী ও হবে তবে বাকি ১০জনের মত প্রকাশ্যে নয়।গোপনে হয়তো। হোক না তাইই।অরু তো অয়নকে ভালবাসে।প্রতিবারের মত নাহয় অরু ই অয়নের কাছে নিজের ভালবাসার জানান দিবে….. অয়নের ভালবাসার না বলা কথা না শোনাই থাক অরুর কাছে।
অরু অয়নকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে…..♦

♦♦সেদিন অরু অয়নের জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছিল যেখানে একজন প্রকাশ্যে বরাবরের মত নিজের ভালবাসার জানান দিয়েছিল আর একজন মনের মাঝে না বলা কথা নিয়ে পথ চলেছিল হাতে হাত রেখে।
তাদের দাম্পত্য জীবনের নতুন অধ্যায়ের পরিপূর্ণতা ঘটেছিল দুই মাস পর তাদের ছোট্ট পরীর আগমনে…… ♦♦

♦♦♦ অরুর শরীর টা নবম মাসে পা রাখার থেকেই খারাপ হতে থাকে। পরে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ডিসিশন নেওয়া হয়েছিল যে অরুর সিজার হবে।অয়ন অরুর খেয়াল রাখতো, অরুর দেখাশোনার জন্য সেকয়দিন তন্নিকে বাসায় এনেছিল অয়ন। আর অরিনের জন্মের ৬মাস পর অয়ন নিজ দায়িত্বে তন্নির বিয়ে দিয়েছিল।ছেলে বিদেশে থাকে।তন্নিরর ভাল জায়গায় বিয়ের কারনে সেই তার বাবা মাকে এখন আর্থিক সহায়তা দিতে সক্ষম…..

সময় টা ছিল জুন মাসের ২০ তারিখ।
ডঃজয়ার কথা মত অরুকে দুপুর ১২ টার সময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়!অরু কেবিনে বসে আছে। ডঃ মিম কেবল ই চেক করে গেল অরুকে। অরু কেবিনে আধশোয়া হয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে!… অয়ন মুখে প্রকাশ না করলেও অয়নের বুকের মাঝে খুব আকারে ধরফর করছিল…..
আরোহী, অনিক রুশা আর তাদের পিচ্চি ছেলে আহনাফ কে নিয়ে। আর সাদ, মৌ তো তাদের ২ পিচ্চি অনন্ত আর আয়াত কে নিয়ে অয়নদের সাথেই এসেছে……..
ওদিকে অহনা আর রাজ জ্যামে আটকে গেছে…

কিছুক্ষন পর নার্স বলল অরুকে ওটি তে নেওয়া হবে……..
আরোহী আর মৌ তো কাঁথা, কাপড়,টাওয়াল ঠিক করছে বাবুকে প্রথমে কোনটা দিয়ে পেঁচাবে….
এই দেখে নার্স বলল…
-আরে এসবের দরকার নাই।আমরা এসবে বাচ্চা ধরি না।আমাদের হাসপাতালের স্পেশাল কাপড় আছে। ২৫০টাকা পার পিস। ওই কিনেন।
নার্সের কথায় মৌ বলল…
-রাখেন আপনার স্পেশাল কাপড়। জানা আছে আমাদের। সব টাকা ইনকামে কৌশল। দরকার নাই আমাদের। আমার বাবুদের বেলাও নেই নি এবার ও নিব না।
মৌ আর নার্সের তর্ক শুনে যেই না অয়ন তাকালো..
-সরি স্যার। আমি যাচ্ছি…

অরুকে যখন ওটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অরু অয়নের কাছে যেয়ে বলেছিল….
-আসছি।
-হুম।ভয় পেয়োনা অরু। আমি আছি তো
– দুয়া করেন আমাদের বাবুর জন্য
-হুম।
(অয়ন সেসময় আর কিছু বলতে পারে নি।অয়ন অরুকে ভয় না পাবার জন্য বলছিল কিন্তু অরুর থেকে বেশি অয়ন ভয় পাচ্ছিল)
অপারেশন চলা কালীন অয়ন শুধু পায়চারি করছিল আর নিজের ২ হাত ঘসছিল। এসির নিচে সে ঘেমে একাকার।
প্রায় দেড় ঘন্টা পর ডঃমিম বলল
-স্যার এই সাইডে আসেন। মেয়ে হয়েছে আপনার….. বাচ্চাকে ১০ মিনিটের জন্য সবাই এখন দেখতে পাবেন তারপর আর সন্ধ্যায় মা আর বাচ্চাকে কেবিনে সিফট করার পর।
-মেয়ের মা কেমন আছে?
-সুস্থ আছেন। সন্ধ্যায় দেখতে পাবেন তাকে।
-জানি

♣অয়ন গিয়ে যেই নানা দাড়ালো বাচ্চাটাকে আনা হল। ডঃমিম অয়নের দিকে বাবুকে এগিয়ে দিল।অয়নের হাত কাঁপছে। অয়ন কাঁপা কাঁপা ভাবে হাত এগিয়ে আবার পিছিয়ে নিল……♣
-না ওও অনেক ছোট্ট। ধরলে যদি ব্যাথা পায়?
(অয়নের কথায় মিম হেসে দিল।যে অয়ন স্যারের ভয়ে হাসপাতালে সব ডাক্তার কথা বলার সাহস পায় না তার কি না এই অবস্থা…..মিম তো সব সময় ভাবতো যে অয়নের সামনে ভুল কিছু করলে তার সেই মাসের বেতন বাদ….যতই হোক অয়ন হাসপাতালের CFO(Chief Financial Officer)….)

আরোহী প্রথম বাবুকে কোলে নিল……..
-ভাইয়া দেখ!! একদম তোর মতন দেখতে। চোখ, নাক সব তোর মত।

♣অয়ন একটু দুরে দিয়েই দেখছে বাবুকে। চোখের কোণে পানি জমে আছে তার। বাচ্চাটা পিটপিট চোখ একবার সামনে তাকালো.. অয়নকে দেখেই হেসে দিল। ♣
-ভাইয়া দেখ!!! একদম তোর মত হাসে ♥♥তোকে চিনেছে দেখ। নে কোলে
(অয়ন বাবুকে কোলে নিল কাঁপা কাঁপা হাতে….! বাবু অয়নের দুকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে…..
অয়ন বাবুকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু দিল….ততক্ষনে অহনা এসে হাজির….)
-ভাইয়া দেখি….মাশাআল্লাহ কি কিউট… একদিম তোর মত…দে আমাকে দে..)
-ভাইয়া বাবুর নাম কি ঠিক করলি??
– তোরা বল

-আমি ঠিক করেছি। ★ইনায়াত জান্নাত★

আরোহী সাথেসাথে বলে উঠলো….

-না★ অয়নন্দিতা হুসাইন★

মৌ এসে বলল……

-উহু।আয়রা জান্নাত অরিন

অয়ন এবার কনফিউজড… শেষে ভেবে বলল…..
-আচ্ছা অরু ই ঠিক করবে নাম…….

১০মিনিট পর বাবুকে নিয়ে গেল ন্ার্স এসে মায়ের কাছে…..

♥♥♥অরুকে সন্ধ্যা নাগাদ কেবিনে দেওয়া হল সাথে বাবুকেও।
অয়নের কিছু কাজ সেরে ফিরতে দেরী হয়ে গেছিল। কেবিনে ঢুকেই দেখে অরু বাবুকে কোলে নিয়ে ফিড করাচ্ছে। অয়নের এমন আচমকা আগমনে অরু হকচকিয়ে গেল……
মাথা নিচু করে আছে অরু।অয়ন ধীর পায়ে অরুর কাছে গিয়ে দাড়ালো…..
-অরু
-হু
-Thank you
-হুম
-নাম কি ঠিক করলে আমার মা এর?
-♥ইনায়াত হুসাইন♥ ডাকনাম ♥অরিন♥

[♥] অয়ন অরুর মুখ ধরে নিজের দিক ঘুড়ালো… অরু বাবুকে ফিড করাচ্ছে এমন অবস্থায় অয়ন অরুর কাল ধরে অরুর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিক[♥]

এভাবেই সুখে শান্তিতে কেতে গিয়েছে অরুর সংসারের দেড় বছর। এর মাঝে অয়ন অরুর জীবনে সুখের, ভালবাসার কোন কমতি রাখে নি…….

বর্তমানে……..
আরোহী, অনিক তাদের ২সন্তান রুশা আর আহনাফকে নিয়ে অনেক সুখে আছে…… বাচ্চাদের জন্য আরোহী আর অনিকের বন্ডিং আরো ডিপ হয়েছে……
এক ই অবস্থা মৌ আর সাদের ও…..বরাবর ই তাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভাল আর এখন আয়াত আর অনন্তের আগমনে মৌ আর সাদের দুস্টমিস্টি সম্পর্ক আরো মজবুত হয়েছে……..
এদিকে অহনা সন্তানসম্ভবা…. রাজ খবর টা পাওয়ার পর থেকে যেন অহনাকে চোখ হারায়…

আর অরু, অয়ন??

সব ই ঠিক
আছে অরু অয়নের জীবনে…….তবে আজ পর্যন্ত অয়ন অরুকে একটা কথা আছে যেটা বলতে পারে নি…… কথাটা হল #ভালবাসি ।

তবে অয়নের বলার প্রয়োজন ও হয় নি অরু জানে যে তার স্বামি তাকে ভালবাসে।অরু অয়নের না বলা সেই কথা অনুভব করতে পারে অয়নের চোখের ভাসায়,অয়নের ছোঁয়ায়……

[[লেখিকার কিছু কথা ঃআমাদের সমাজে, আশেপাশে এমন অনেক ছেলেরা আছে যারা খুব চাপা স্বভাবের। নিজের মনের কথা স্পেশালি ভালবাসার কথা ভালবাসার মানুষ কিংবা অন্য কারো কাছে প্রকাশ করতে নারাজ! ভালবাসি ভালবাসি এই কথাটা মুখে তারা হয়তো বলে না তবে এই টাইপের ছেলেরা নিজের ভালবাসার মানুষকে লিমিটলেস ভালবাসে। এইট রকম ই একজন চরিত্র হল #অয়ন….. অয়ন প্রথমে অরুকে ভালবাসে নি।অনেক কষ্ট ও দিয়েছে অনেক….. তবে আজ যখন অরু নিজের ভালবাসা,শ্রদ্ধা দিয়ে অয়নকে জিতে নিয়েছে তখন অয়ন নিজের থেকে বেশি অরুকে ভালবাসে।হ্যা তবে অয়ন সেটা প্রকাশে নারাজ। এই ধরনের মানুষেরা কখনো চেঞ্জ হয় না।তাই অয়নকেও চেঞ্জ না করা আমি বেটার মনে করেছি ]]

আজ অরু,অয়ন নিজের ছোট্ট পরী অরিনকে নিয়ে অনেক সুখে আছে। অরুর সংসারে সুখ স্বাছন্দের কোন কমতি নেই।থাকবেই বা কেন?
অরুর সংসারে অরুর মত একজন লক্ষি বউমা আছে,,, অয়নের মত কর্তা আছে যে কিনে একজন ভাল ছেলে,ভাই,বন্ধু নয় বরং এখন একজন ভাল স্বামী, বাবা,,, নিসাদ হুসাইনের মত বাবা,,,আরোহী আর অহনার মত ভাল ননদ আছে,,, অনিক রাজ এর মত ভাল ননদাই আর লাস্ট বাট নট দা লিস্ট সাদ আর মৌ এর মত বেস্ট বন্ধু, ভাই, বান্ধুবী বা বোন যাই বলা চলে এমন মানুষের উপস্থিতি আছে,,, আর সংসারের সব থেকে ছোট সদস্য আরিন,আয়াত, অনন্ত, রুশা,আহনাফ এদের তো ভুললে চলবেই না……
আর সাথী চৌধুরী কেও এলাও করে নি অয়ন অরুর সংসারে….. তাই নেগেটিভিটির বিচরন নেই এই এই সংসারে….
মোটমাট সকলকে মিলিয়ে অরুর এক সয়ংসম্পন্ন সংসার…….

রাত ১০টা……….
অরিনকে খাইয়ে এখন ঘুম পড়াচ্ছে অরু।অয়নকে বাইরে যেতে দেখে অরু বলল…
-এই সময় কোথায় যাচ্ছেন?
-ছাদে
-কেন?
– ….. (অয়ন হাত দিয়ে ইশারা করলো যে সিগারেট টানতে যাচ্ছে)

অয়ন এখন অরিনের জন্য ঘরে সিগারেট টানে না।এমনকি আগের থেকে কমিয়ে দিয়েছে তবে কথায় আছে না অভ্যাস সহজে পাল্টায় না আর বদঅভ্যাস হলে তো কথাই নেই।
অয়নের অবস্থা তাই….

রাত ১১:৫০। ২জোড়া নয়ন সজাগ……. অয়নের ঘাড়ে অরিন ঘুমানো….. একটু আগেই কাঁদতে কাঁদতে জেগে গেছিল পিচ্চিটা।অয়ন ঘুম পরায় দিয়েছে আবার……
আর ১০ মিনিট…. কাল অরুর জন্মদিন। অয়ন অরিনকে দোলনায় শুইয়ে দিল।
আজ অয়ন ডিসিশন নিয়েছে অরুকে নিজের মনের কথা বলবে… যেঁ করে হোক…
রাত ১২:০০
অরু নিজের কোমড়ে কারো হাতের শীতল পরশ অনুভব করলো। অরুকে মাতাল করা সেই পরিচিত স্মেল জানান দিচ্ছে এটা আর কেউ না অয়ন….
অরু চোখ বন্ধ করে আছে আর অয়ন পিছন থেকে জড়িয়ে বলল…
-অরু
-জ্বি
-Happy Birthday
-Thank you
(অরুর অরুকে ছেড়ে নিজের সামনে ফিরালো…
-এটা তোমার জন্য
(অরু খুলে দেখল এক জোড়া সোনার চিকন চুড়ি)
-ধন্যবাদ
-হু। আর একটা কথা বলার ছিল
-বলুন
-অরু….♥
-হ্যা….???
-♥ ভালবাসি ♥ (মনেমনে বলল অয়ন)
(আর অরু একবুক আশা নিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে….
-কিছুনা অরু
-হু। থাক বলতে হবে না
-হুম
-শুনুন
-♥ভালবাসি♥
(অয়ন অরুকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিল………)

♥অয়ন অরুর মুখ নিজের দুই হাতে আবদ্ধ করে যেই না ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো সেই অরিনের কান্না শুরু
……… আবববববব্বু আমমমমম্মু…………..
অয়ন অরু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল আর হাতে হাত দিয়ে অরিনের কাছে গেল….♥

-কি হয়েছে মা? আসো। বুঝেছি তুমি থাকতে আর নিজের ছোট ভাই বোন হতে দিবা না………..
-কি যে বলেন আপনি!! দুই দুই টা বাচ্চার বাবা হতে যাচ্ছেন আর তাও…!!
-হুম তা ঠিক
– অরু হাসছে
-এক মিনিট….! কি বললে…?? দুই দুই টা বাচ্চা মানে…????
– ……………
-U mean to say????
-(অরু মাথা নেড়ে সম্মতি দিল……)
-কয় মাস??
– আড়াই
♥……অয়ন অরিন কে সহ অরুকে জড়িয়ে ধরলো…♥

♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥

আসসালামুআলাইকুম…..খুব ইই সাধারন প্লট নিয়ে আমি তানহা ইসলাম ছদ্মনামে(নিশিকথা) নিজের প্রথম গল্প অরুর সংসার লেখা শুরু করেছিলাম……. আজই তার সমাপ্তিও খুব সাধারন ভাবে দিলাম। গল্পটা কেমন হয়েছে জানিনা আর গল্পের সমাপ্তিও আপনাদের মন কাড়তে পেরেছে কিনা জানা নেঈ আমার…তবে গল্প নিয়ে আপনাদের ভাল লাগা খারাপ লাগা সব ই কমেন্ট বক্স এ জানাবেন আশা করি….. আপনাদের বক্তব্য,মতামত ই আমার আগামী দিনের অনুপ্রেরণা…. ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন……

4 COMMENTS

  1. Ami ei golper neshay pore gechilam khub baje vabe khub valo laglo amr ei story taa besh ghoroya just bole bojhate parbo na koto ta valo laglo r golper ending ta happy ending taii jome galo puro❤️❤️❤️❤️ thank you thank you so much ei golpo ta upohar dewar jonno🥰🥰

  2. Darun hoyeche darunn ….ato sundor ato romantic..golpotar neshay pore gechi ami…mathar moddhe sudhu 2to character Ayan & Oru….uffff kono vasha ney amr kache ..ato 🥰🥰🥰🥰🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here