অরুর সংসার,পর্ব-২৬,২৭

অরুর সংসার,পর্ব-২৬,২৭
লেখিকা-নিশিকথা
পর্ব-২৬

অনেকক্ষন ধরে অহনার ফোন টা বেজে চলেছে…
– অহনা ?? অহনা ??
-ওফফ…! চিল্লাচ্ছো কেন?
– বের হবা কখন তুমি? সেই ১ঘন্টা আগে ঢুকেছো শাওয়ার নিতে। এদিকে তোমার ফোন বেজেই যাচ্ছে……….
-আমার শাওয়ার নেওয়ার দিকে একদম নজর দিবা না। আর ফোন বাজছে তো কি? তুমি রিসিভ কর!!
-নাহ আমি তোমার ফোন কেন রিসিভ করবো ..? পরে বলবে যে ওয়াইফের ফোন চেক করে…….! তোমাদের মেয়েদের উপর ভরসা নেই……
-রাজ………………!!
-বের হও… আমার ওয়াশরুমের সব পানি শেষ করে দিচ্ছে রে……
(রাজ কথাটা বলে পিছনে ফিরতেই দেখে অহনা টাওয়াল পেচিয়ে দাড়িয়ে আছে কোমড়ে হাত দিয়ে…)
-আরে হিটলার
-কিহ???? তোমারে!!!!
(অহনা রাজের দিকে এগিয়ে যেতেই আবার ফোন বেজে উঠলো অহনার…………)
-নেও দেখো কে???
-হু
-হেলো
-।।।।।।।।।
– ……………….
(অহনা ফোন রেখে হু হু করে কেঁদে দিল…)
-অহনা??????? এই অহনা কি হয়েছে???
কাঁদছো কেন জান???
– …………….. (কেঁদেই চলেছে…..)
-অহনা প্লিজ বল কি হয়েছে…??
-ভাইয়ার এক্সিডেন্ট!!!!!!! খুব খারাপ অবস্থা
-চুপ এভাবে কেঁদো না….চল কাপড় চেঞ্জ করে নেও…. হাসপাতালে যাবো………
……..
…………………
হ্যা সেদিন অহনার সাথে রাজের ই বিয়ে হয়েছিল….. সাড়ে ৩ মাসের সংসার তার আর রাজের।
সেদিন বিয়ের পর যখন আয়নায় একে অপরের চেহারায় নজর পরেছিল তাদের অহনা দেখেছিল রাজ বাকা হাসছে……..
আয়না ধরে আরোহীও হাসছিলো ………
১বছর পর রাজ কে দেখে অহনা যেন ফ্রিজড হয়ে গেছিলো।
তার রাজের সাথে বিয়ে হয়েছে ………. ??
বিশ্বাস হচ্ছিল না অহনার……কিভাবে সম্ভব হল এটা?? সেদিন যখন রাজ কথা দিয়েও ফিরেছিল না সেদিন তো অহনা সারা দিন রাজের বলা জায়গায় অপেক্ষা করেছিল রাজের জন্য….
রাজ এসেছিল না…. সেদিন থেকে অহনা তো নিজের মন কে মেরেই ফেলেছিল তাহলে আজ??
রাজ তার স্বামী…… ♥
নিজের দেওয়া কথা রাজ রেখেছিল সেদিন …..
সেদিন অনেক সময় শক্ড থাকার পর অহনা রাজ কে নিয়ে ফাকে দিয়ে একটা রুমে গেছিল… গেস্ট রা সবাই তখন খাচ্ছিল ….

-এতটা কষ্ট আমাকে সেদিন কিভাবে দিতে পারলে তুমি রাজ.?
-পারলাম…..
-কেন রাজ?
-আজকের এই সুখ দেবার জন্য সেদিন কষ্ট দিতে পেরেছিলাম……..
-আমি!! আমি ভেবেছিলাম সব শেষ…… আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছি(অহনা কেঁদে দিল…)
-এই খবরদার কাঁদবে না…আমি আমার বউ টার চোখে আর কোন দিন পানি দেখতে চাই না
-#বউ (কথা টা শুনে অহনার মুখে হাসি ফুটলো……. অহনা রাজ কে জড়িয়ে আবার কেঁদে দিল…….♥♥অবশেষে!! অবশেষে তাদের ৭বছরের প্রণয়ের শুভ পরিণয় সম্পন্ন হল ♥♥…….)
-কাঁদতে মানা করেছি কিন্তু অহনা… আমি এই দুনিয়ায় একটা জিনিস আছে যেটা সহ্য করতে পারি না…….
সেটা হল তোমার চোখের পানি.
– ………………
-(রাজ অহনার মুখটা নিজের হাতের মাঝে এনে বলল…..) আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি অহনা…..
-ইশ কই? লেট তুমি……
-মোটেই না বরং একদিন ফাস্ট
-কিভাবে ?
-আমি আমার কথা দেবার ১বছর পুরণ হবার আগের দিন ই তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি আব্বা আম্মাকে দিয়ে….
-ওহ হুম……
(রাজ অহনার ঠোঁটে ঠোট মিলিয়ে দিল….১০মিনিট… রাজের ছাড়ার নাম ই নেই…..অহনা পরে রাজকে চিমটি কাটলো.. …)
-আউচ ্্্্্্্্্্্ওই মেয়ে পাগল নাকি….
-তা তুমি আমার ঠোঁটজোড়া খেয়েই ফেলবে নাকি…!!
কিন্তু এসব এত ইজিলি পারলে কিভাবে??
-অয়ন ভাই এর জন্য…
-ভাইয়া?? ভাইয়া জানতো??
-হুম। উনি ই আমাকে হেল্প করেছে এসবে। বাবাকেও উনি ই রাজি করিয়েছে…
আমি উনাকে সব বলেছিলাম আমাদের কথা যা তুমি এত দিনে বলতে পেরেছিলে না….. তাও ভাই তো!! যথেষ্ট খোঁজ নিয়েছে আমার তারপর ই বিয়ে দিয়েছে তোমার সাথে……ইনফাক্ট জানো?? আমার লেখাপড়ার সেক্টোর তো জানোই electronic and telecommunication engineering…… বাংলাদেশে এই রিলেটেড জব ওপারচুনিটি অনেক কম।ভাই আমাকে এখানে USA Clipping Path এ ঢুকিয়ে দিয়েছে……

অহনা সেইদিন সাথেসাথে দৌড়ে গিয়ে অয়নকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল….. খুব কেঁদেছিল।………….. সবাই সেদিন ভাই বোনের ভালবাসার অটুট বন্ধন দেখেছিল…….
আরোহীও যোগ দিয়েছিল তাদের সাথে……. আরোহী, অহনা, আর অয়ন ৩জনের ভালবাসা সেদিন রাজ, অরু, সাদ,মৌ, নিসাদ হুসাইন, অনিক, সাথী চৌধুরী থেকে শুরু করে সেখানে উপস্থিত সবাই দেখে কেঁদেছে….
অয়ন আরোহী, অহনাকে জড়িয়ে সামনে তাকালো…. সাদকে উদ্দেশ্য করে অয়ন বলল…
-ওই বলদ ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস….. আয়……….!
(সাদ দৌড়ে ওদের কাছে দিয়ে কেঁদেছিল…….ওদের বন্ডিং দেখে উপস্থিত সবাই কাঁদলেও কাঁদে নি শুধু অয়ন…… অয়ন কখনো কাঁদে না…..সাথী চৌধুরী ওদের ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে আজ পর্যন্ত অয়নকে কেউ কাঁদতে দেখে নি… অয়ন নিজেই হয়তো নিজেকে দেখে নি কখনো)

অহনার বিদায় এর পর সাদ বলল…..
-দোস্ত অহন কত খুশি!!! দেখলি………?
-হুম ওর এইটুক হাসির জন্যই তো এত কিছু করা….
– সত্যি তুই বেস্ট ভাই!!! লাভ ইউ
– লাভ…..! বলবো না!
-কেনন /?
-আশেপাশে দেখে নে কেউ আছে কিনা….. পরে যদি ভাবে আমাদের দোস্তানা??????? (অয়ন ভ্রু নাচিয়ে বলল…)
-হা হা হা লল…. আমার ডায়লগ আমাকেই……!

♥……..সাদ আর অয়নের কথাগুলো দাঁড়িয়ে শুনছিল অরু…… লোকটা তার সাথে যাই করুক না কেন তাও যে সে লোকটার প্রতি পাগল….
লোকটার প্রতি যে ভালবাসা,সম্মান ব্যতীত রাগ, অভিমান এসব কোন ফিল ই আসে না…….♥

অহনার বিদায় এর আগে অয়ন অরুকে বলেছিল…
-কি ভাবছো…..?
-অহনা আপুর কথা…. আপনি কি সুন্দর আপুর সব মনের কথা বুঝে গেলেন….
-আমি একজন খারাপ স্বামি হতে পারি অরু….কিন্তু অহন, আরু আপুর ভাই, আর বাবার ছেলে হিসেবে খারাপ না
-আপনি খারাপ স্বামি না
-কিহ?
-হুম
-lol….. best joke of the year…….
-আমার কাছে তো না…
-আমি নিঃসন্দেহে একজন খারাপ স্বামি কিন্তু তাকে আমার বিন্দুমাত্র যায় আসে না…..আমি খারাপ আমি সেটা তোমায় বলেই নিয়েছি…
আমার মাঝে তুমি কখনো কোন মিথ্যা পাবে না। আমি তোমাকে ভালবাসি বা অরু।আমি এটাও তোমায় অনেক আগেই বলেছি……
-হুম
-অভিযোগ কর মনেমনে আমায় নিয়ে??
-নাহ আমার কারো কাছে কোন অভিযোগ নেই….
-অভিযোগ করতেই পারো… পারমিশন আছে…
-হুম
-কিন্তু তাও তুমি আমায় ছেড়ে যেতে পারবে না কখনও…আমি তোমায় এই পারমিশন দেই নি
-♥যাবো ও না কখনো.. আপনি না বাসলেও আমি যে আপনাকে বড্ড বেশি ভালবাসি…. ♥ (মনেমনে বলল অরু)
-চুপ যে. …? জানি তাও চলে যাবা আমায় ফাঁকি দিয়ে
-সেটা সম্ভবা না
-হুম……..
…………………..
…………..

এ্যাপোলো হাসপাতালের লাকজারি ওয়ার্ডের আই সি ইউ এর সামনে ঠায় দাড়িয়ে আছে অরু..। চোখ দুটো থেকে অনবরত পানি পরছে…. ডঃশুশান্ত সহ ৩জন সার্জন্ট ওটি তে … সাদ যাবতীয় সব দৌড়াদৌড়ি করছে…… মৌ নিসাদ হুসাইন কে সামলাচ্ছে…….. মৌ এরা শরীর টা ভাল না বেশি একটা। ৭ মাসে পেট টা তার বেশ বড়। ডাক্তার বলেছে টুইন বেবী তার পেটে………….
অরু ভাবছে…….
কি হয়ে গেল এটা তার সাথে ?
কিভাবে হল?
অয়নের কিছু হলে সে যে বাঁচবে না…..অয়নের জীবনের সাথে যে তার তার ভিতরের ছোট্ট জানটার জীবন জড়িত….
না কেউ ই অরুর আপন না।এই পৃথিবীতে যাকেই অরু ভালবাসে সেই তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়……
প্রথমে আম্মু আর এখন অয়ন………
না অরুর ই দোষ…! সে ই কারো ভালবাসা ধরে রাখার যোগ্য না…

জয়া অয়নের এক্সিডেন্ট এর কথা জানতে পেরে আই সি ইউ এর কাছে গিয়ে থমকে গেল। অরুকে দেখছে সে……একদম পুতুলের মত একটা মেয়ে। মা হবে বলে হয়তো চেহারায় আরো মাধুর্যের সৃষ্টি হয়েছে তার….. জয়া অরুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল…
-আপু তুমি এভাবে দাড়িয়ে আছ কেন? এসো এখানে এসে বস।
– …………??
– এক্সকিউক মি?? (জয়া অরুর গায়ে হাত দিতেই অরু কেঁপে উঠলো..?)
– হু হু???? জ্বি????
-এই অবস্থায় এভাবে দাড়িয়ে থেকো না।এসো বস
-না না আমি এখানেই ঠিক আছি
-চল (জয়া অরুকে নিয়ে বসালো….) স্যার সুস্থ হয়ে যাবেন ডোন্ট ওয়ারি
-আপনি???
-আমি জয়া।এখানেই গাইনোক্লোজিস্ট
-ওহ।
– কয়মাস??
-সাড়ে ৫মাস
-গুড
-উনি ঠিক হয়ে যাবেন তো…?? আচ্ছা এখনো কেউ আই সি ইউ থেকে বের হচ্ছে না কেন? উনার কোন খবর দিচ্ছে না কেন??
-ডোন্ট পেনিক….! একটু দেরী হবে কিন্তু স্যার সুস্থ হয়ে যাবেন……..
-হু

অরু পেটে হাত দিয়ে বসে আসে।ভাবনার জগৎ এ পা দিল অরু আবার…..

চলবে………..

অরুর সংসার
পর্ব-২৭
লেখিকা-নিশিকথা

অরু পেটে হাত দিয়ে বসে আছে ………।ভাবনার জগৎ এ পা দিল সে……..

[[[ ♥সব থেকে বড় সারপ্রাইজিং বিষয় ছিল অরুর কাছে এই কথা টা যে যেদিন রাতে অরু নিজের প্রেগন্যান্সির কথা অয়নকে জানিয়েছিল সেদিন অয়নের জন্মদিন ছিল।
মনের অজান্তেই অরু অয়নকে তার জীবনের সব থেকে শ্রেষ্ঠ গিফট দিয়েছিল সেইরাতে…. ♥

সে রাতে অরু অয়নকে নিজের প্রেগন্যান্সির কথা জানানোর সাথেসাথে প্রথম নিজের ভালবাসা প্রকাশ করেছিল।

সকল বাধা, ভয়,দ্বিধার অবসান ঘটিয়ে অয়নকে বলেছিল ‘I love you’….. অয়ন সেদিন প্রতিউত্তরে বলেছিল ‘ ঘুমিয়ে পর রাত হয়েছে…..’

সেদিনের পর থেকে ১মাস অনেক ভালই কেটেছিল অরুর।অয়ন শারিরীক কোন চাপ অরুকে দেয় নি… যথাসম্ভব খেয়াল রাখতো সে অরুর….অয়ন জানে প্রেগন্যান্সির ১ম ৩ মাস আর শেষের ৩মাস শারিরীক সম্পর্কে জড়ানো রিস্ক তার সন্তানের জন্য…..

বাধ সেধেছিল ওরপর থেকে। অরুর স্পষ্ট মনে আছে সেই রাতের কথা।তখন ৩ মাস পুরে প্রেগন্যান্সির ৪র্থ মাসে কেবল পা রেখেছে অরুর……
অয়নের বন্ধু সায়ন এর এনির্ভাসারি পার্টি ছিল। ওয়ন অরুকে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে ।

অরু সেদিন কালো জামদানি শাড়ি পরে গেছিল। কালো রং যেন অরুর সৌন্দর্যে চার চাঁদ লাগিয়ে গিয়েছিল। তার উপর অয়নের দেওয়া হীরার নাক ফুল,কালো মুক্তার কানের টপ , গলার মালা। অয়ন তো সেদিন অরুকে প্রথম দেখে ফ্রিজেড হয়ে ছিল কতক্ষন*

পার্টিতে সবাই অরুর রূপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রশংসা করছিল। অয়ন ও বারবার অরুর দিকে তাকাচ্ছিল..

মৌ আর অরু এক সাইডে বসে ছিল। অয়নের বন্ধু রা জোর করে অয়ন আর সাদ কে ফ্রুট ওয়াইন খাইয়ে দিয়েছিল….. হটাৎ সেখানে অয়নের দেখা হয়েছিল জাহিন নামে একটা ছেলের সাথে….. এক প্রকার ধাক্কা খেয়েছিল অয়ন জাহিনের সাথে।জাহিনকে দেখে অয়নের রাগ উঠে গেলেও অয়ন রাগ কন্ট্রোল করে নেয়েছিল প্রথমে …

মৌ অরুকে বলেছিল……..
-অরু
-হুম আপি
-আমি একটু ওয়াশরুমে যাচ্ছি….. তুমি বস।ওই ছেলেটাকে দেখেছো…..??? কথা বলতে আসতে পারে তোমার সাথে…. খবরদার কথা বলবে না….
-ঠিক আছে আপু। কিন্তু উনি কে…
-জাহিন। তোমার ওই বাজে শাশুড়ির ওইঘরের ছেলে …..
-ওহ। আপু তারাতার এসো……..
-হুম

কিছুক্ষন বাদে অয়ন অরুর কাছে এসে বলেছিল…
-অরু
-জ্বি
-ওঠো একটু
-হু
(অরু উঠতেই অয়ন ওর হাত ধরে বলেছিল … নে তোল ছবি….অয়ন ব্লাক সুট প্যান্ট পরে ছিল….. ব্লাক কালারের দুজনকে একসাথে রাজযোটক তো লাগছিল ই সাথে অনেক হট ও লাগছিল…… )
-দোস্ত অসাম!!! হট কাপল….. দেখ
-হুম । বড় করে দিস এটা
-ওকে….
(অরু আর অয়নের এই ছবি টা ই তাদের খাটের পিছনে বড় করে টাঙ্গানো…………….)

সব ভালই চলছিল….
হটাৎ….. জাহিন নামে ছেলেটা অরুকে দেখে অয়নের কাছে গিয়ে কি যেন বলেছিল…. জানা ছিল না তখন অরুর কথাগুলা …. কিন্তু পরে অরু ঠিকই আন্দাজ করেছিল যে নিশ্চই সাথীকে নিয়ে অয়নের কাটা ঘা এ লবন ছিটিয়েছিল জাহিন সেদিন….
সেরাতে জাহিনের সাথে কথা বলার কিছুক্ষন বাদেই মৌ আর অরুকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল.. অয়ন…. .অনেক রাত করে ফিরেছিল অয়ন…. ফিরেই অরুর উপর ঝাপিয়ে পরেছিল………. অরু জানত সেদিন অয়নের হুশ ছিল না…বুঝতে পেরেছিল সেই.. ..তবে সেদিনের পর অরুর সুখের সংসারে নজর লেগেছিল……

পরে অরু সাদের কাছে জানতে পারে সেদিন জাহিন অয়নকে চুপিচুপি অনেক কথাই শুনিয়েছিল…. সাদ ও ছিল সেখানে…… জাহিনের বলা কথাগুলোর মাঝে কিছু কথা এমন ছিল…..

→অয়ন ভাই আপনার বউ টা তো সেই সুন্দরি আর হট ও একদম মামনির মত
→আমার তো আপনার বউ কে দেখে সে* উঠে গেছে……
→শুনলাম প্রেগন্যান্ট আপনার বউ।প্রেগন্যান্ট হয়ে দেখি আরো হট হয়ে গেছে…….
→ভাই দেখেন আপনার বউ ও মামনির মত আপনাকে আর আপনার বাচ্চাকে ছেড়ে না চলে যায় অন্য কারো সাথে….
মামনি যদি ৩ ছেলেমেয়ে থুয়ে চলে যেতে পারে আগেকার যুগের হয়ে তাহলে আপনার বউ তো এই যুগের…..
→ইশ খারাপ লাগছে আপনার বাচ্চার কথা ভেবে…….

জাহিনের বলা প্রথম কথা শুনার পর থেকেউ জাহিনকে মেরে রক্তাক্ত করেছে অয়ন….. তাও জাহিন থামে নি। বলেই গেছে…. অয়ন সে রাতে জাহিনকে মারতে মারতে মেরেই ফেলছিল যদি না সাদ,সায়ন মিলে না আটকাতো……..
}}}

তারপর একদিন হটাৎ……….
-অরু
-জ্বি??
-আমার এইট সন্তান চাই না……
-মানে??? (অরুর অয়নের কথায় সেদিন বিশ্বাস হচ্ছিলো না……….)
-মানে যা বুঝছো তাই
-এটা কি বলছেন আপনি? আমাদের সন্তান! চাই না আপনার????
-এই তুমি কি টিপিকাল বউ দের মত শুরু করলে নাকি??
আর কেন এই সন্তান জন্ম দিতে চাও??? ফেলে চলে যাবার জন্য?????
-ফেলে চলে যাবো মানে?
-যা সত্য তাই। এই দুনিয়ার সব মেয়ে রা এক।সাথী চৌধুরীর মত।
উনি আমাদের ৩ ভাই বোন আর বাবাকে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছেড়ে জাহিনের বাপের হাত ধরে চলে গেছিলেন। চরিত্রহীনা।
আমি চাই না আমার সন্তান এই দুনিয়ায় এসে আমার মত কষ্ট, লজ্জা সহ্য করুক……! এর থেকে সাথী চৌধুরী আমাদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতো…..তাও বিষয় টা কম যন্ত্রনার হত।কিন্তু উনি তো আমাদের শেষ করে দিয়ে গেল। কিন্তু আমি আমার সন্তানকে আমার মত জীবন দিব না
-সবাই এক হয় না….
-সবাই ই এক
-এটা ভুল ধারনা আপনার।আপনি নিজের অতীত থেকে বের হয়ে আসেন প্লিজ। আপনি ভুল ভাবছেন।ওই মহিলা আপনাদের, বাবাকে
ভালবাসতো না।তাই ছেড়ে চলে গেছে। আমি যে আপনাদের বড্ড বেশি ভালবাসি। আপনি জীবনের যে কষ্ট পেয়েছেন আমিও পেয়েছি। আমি এখনো পাচ্ছি । আপনি যেমন জানেন মা ছাড়া সন্তানের জীবন কত কষ্টকর আমিও জানি…… আমরা আমাদের সন্তানের উপর সেই কষ্টের আচঁ আসতে দিব না…..
-দিবা আমি জানি।মুখের কথায় বিশ্বাস নেই…..
-অনেক ভালবাসি আপনাকে
-আমি তোমাকে ভালবাসি না।আর কখনো বাসবো ও না…..
-লাগবে না ভালবাসা।
-মনে থাকে যেন কথা টা

আমি জানি এক না একদিন আমি আপনার ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হবই….. আর আপনি যখন আমাকে ভালবাসবেন তখন আমার থেকে সৌভাগ্যবতী কেউ হবে না।আপনি যখন আমাকে ভালবাসবেন সেই ভালবাসা এই পৃথিবীর প্রত্যেক স্বামীর ভালবাসাকে তুচ্ছ করে দিবে (মনেমনে বলল অরু)
-তবে আমি আপনাকে ভালবাসি নিজের থেকেও বেশি
-যায় আসে না।আর মিথ্যা বললা… এই পৃথিবী তে মানুষ নিজের থেকে বেশি আর কাজকে ভালবাসে না.. বাসতে পারে না।
-আমি তো বাসি
-বিশ্বাস করি না
-করতে হবে না।তবে আমি আপনার ভালবাসার অপেক্ষায় থাকবো আজীবন
-তুমি অনেক কথা শিখে গেছো অরু
-হুম
-আমি আগেই স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম তোমাকে যে আমি তোমাকে ভালবাসি না,কখনো ভালবাসতে পারবো ও না…..এবং তুমি আমাকে ভাল বাসো না বাসো আমার যায় আসে না।বলেছিলাম না আমি স্পষ্ট কথা বলি.. আমার মাঝে তুমি কখনো মিথ্যা পাবে না।কাজেই আমার কাছে ভালবাসা আশা করা তোমার বোকামি
-না।নিজের স্বামির কাছে ভালবাসা আশা কখনো বোকামি হতে পারে না।আর মনের এক কোণে ভালবাসা তো অবশ্যই আছে যার চিহ্ন আমার গর্ভে…. ।
যাকে আপনি কি না বলেন কামনা…. আচ্ছা তাহলে নিজের সন্তানকে কামনার চিহ্ন বলতে পারবেন??
– ……………… (অয়ন রুম থেকে বের হয়ে গেছিলো)

আর রাতে ফিরে বলেছিল…….
-তুমি এই সন্তান চাও খুব করে তাই না?
-হুম
-সেসময় কি যেন বলেছিলে…. তোমার প্রতি মনের এক কোনে হলেও আমার ভালবাসা আছে কামনা নয়?????
ভুল এটা।।।।।।
আমার তোমাকে দেখলে শুধু কাম সাধনা জাগে ভালবাসা না
-এমন হলে আমি গর্ভবতী জানার পর সন্তান আর আমার সেফটির কথা ভেবে দুরে থাকতেন না
-ওহ!!
-হু
-অরু!! আমার সন্তানকে কামনার চিহ্ন আমি বলি না…..তবে তুমি আমার কাছে কামনার খোরাক ই।ছিলে… আছো….থাকবে……
-একথা বলে নিজেকে সান্তনা দিচ্ছেন??
(অয়ন অরুকে সাথেসাথে আর কিছু বলতে না দিয়ে অয়ন কোলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গিয়েছিল……….শারিরীক ভাবে লিপ্ত হবার পর অয়ন উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলেছিল………..)
-নেও প্রমান…….. তুমি শুধুই আমার কামনার খোরাক…….. এমনটা করতে চাই নি বাধ্য করেছো তুমি…..

দিন এভাবেই যাচ্ছিল….
অরু বাচ্চা টা চায় জেনেও অয়ন তারপর কেমন পাল্টে গেল……… পাল্টে গেল বলতে নিজের মনকে স্যাটিস্ফাইড করার যুদ্ধে নেমেছিল অয়ন… সে অরুকে কোনভাবে বিশ্বাস না করাতে পারলেও নিজেকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়তে চেয়েছে যে সে অরুকে ভালবাসতে পারে না……….. প্রায় ই একারনে অরুর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতো সে…..অরুকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছিল অয়ন যে তার স্বামি একটা জানোয়ার যে কিনা শুধু শরীরের জালা মিটাতে অরুকে রাতে চায়…….. ..এর মাঝে অয়ন ভাবতো না যে এতে তার সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। ভাববে কি করে?? অয়ন তো হুশেই থাকতো না……… এক ছিল তার মনের নেশা যেটা অবস্তুগত আর এক ছিল তার বস্তুগত নেশা যেটা কোন ভাবে স্যাটেস্ফিক্সন না পেলে সে করতো…

সময় এভাবেই কাটছিল আর যতই সময় যাচ্ছিল অরু অয়নের ভালবাসার জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছিল… রোজ অয়নকে প্রেম নিবেদন করতে থাকলো অরু……. এটা নিয়ে অয়নও খুব বিরক্ত হতে থাকলো…………..
অয়ন তো বিয়ের প্রথম দিন থেকে যেমন ছিল তেমন ই আছে….. অরু কেন বদলাচ্ছে দিন কে দিন…?? অরুর এমন বিহেভিয়ার অয়নের কাছে দিন কে দিন অসহ্য লাগতে লাগলো…. আর অরু তো নিজেই নিজের অয়নের ভালবাসা পাওয়ার প্রতি অতিরিক্ত বিচলতা, অস্থারতা নিয়ে বিরক্ত ছিল……

আর আজ অয়ন তার গায়ে হাত তুলেছে।।। তবে বাড়াবাড়ি অরু ই করেছিল….. আজ অরুর জন্যই অয়ন……..!!!!!
কি করবে অরু? সে যে অয়নের ভালবাসা পাওয়ার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছিল…… সাথে সাথে অরুর মাঝে কাজ করছিল ইন্সিকিউরিটি….
আর এই ইন্সিকিউরিটি আজ কাল হয়ে দাড়ালো…. কি দরকার ছিল অয়নের উপর জোড় খাটানোর…? ভালই তো চলছিল সব…… অয়নের মাঝে তো পরিবর্তন এসেছিল না….এসেছিল অরুর মাঝে…
অয়ন তো প্রথমেই ক্লিয়ার করে দিয়েছিল যে অয়নের কাছে ভালবাসার আশা করাটা বৃথা……
তবুও অরু সেই বৃথা চেস্টা করেই গিয়েছিল…
অরুর জানা ছিল না এমন কেন হচ্ছে তার সাথে আর সে কেনই বা এমন করছে অয়নের সাথে….

অরু বা অয়ন কারোই জানা নেই যে অরুর সাথে কেন এমন হচ্ছে….. এটা যে তার প্রেগন্যান্সির মুড সুইং…………..

আর আজ সেই মুড সুইং এর বশে অরু ………
অয়ন অফিস থেকে ফিরে বেশ টায়ার্ড ছিল….. বাজে তখন রাত ৮ টা।।।।
অয়ন ফ্রেশ হয়ে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে ছিল। হটাৎ অরু এসে…..
-শুনুন
-শুনছি
-কেন এমন করছেন?
-কি করলাম???
-আমায় ভালবাসছেন না আপনি……কেন? কি হয় একটু ভালবাসলে??
-কিহ এসব কথা এখন আসছে কেন অরু?
-কেন আসবে না??আমি আপনার স্ত্রি!!
-তো ? স্ত্রি হলেই বুঝি ভালবাসতে হবে?? আমি কি প্রথমে তোমায় এসব কথা ক্লিয়ার করে নেই নি? তাও এসব কথা কেন?
-বলেছিলেন। তবুও আমি ভেবেছিলাম দিন যাবে দিন আসবে এক সময় আপনি ঠিক ই আমায় ভালবাসবেন
-সেটা ভাবা তোমার ভুল
-আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি।আমি আপনার ভালবাসা চাই। আমার বেবী আপনার ভালবাসা চায়
-তোমার বেবী না।আমাদের বেবী
-আমি আপনার ভালবাসা চাই
-দিতে পারবো না।তোমাকে ভালবাসার মত মন আমার নেই….
-কেন নেই?
-অরু!! প্লিজ যা যেমন চলছে চলতে দেও। কিছু পাল্টাতে যেয়ো না।কষ্ট পাবে
(অরু অয়নের অনেক কাছে চলে এলো …. বলল…..)
-আপনি আনায় স্ত্রি মানেন??
-তুমি তো আমার স্ত্রি ই
-তাহলে ভালবাসেন না কেন??
-বললাম তো স্ত্রি হলে ভালবাসা বাধ্যতামূলক তো না….. দেখো অরু আমি তোমায় বিয়ের প্রথম দিন থেকেই কখনো মিথ্যা আশা দিতে চাই নি।দেই ও নি। আমার তোমাকে মিথ্যা আশা দেবার থাকলে আমি তোমাকে বলতাম যে ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি। কিন্তু এটা ত সত্য না… তুমি ই বল মনে ভালবাসা নেইই তবুও তোমাকে তোমার মন রাখতে বললাম ভালবাসি। এটা কি ঠিক হবে?? হবে না।তাই প্লিজ এসব ছাড়ো ভাল লাগছে না
-আমি আজ কিচ্ছু শুনবো না আমি আপনার ভালবাসা চাই ই চাই
-অরু প্লিজ….!
-আমাকে ভালবাসতে আপনার কেন এত কিপ্টামো??
-আরে আজিব তো…এমনিইই আমি খুব বেশি টায়ার্ড আজ তার উপর তোমার এসব গায়েপড়া এসব ভাল লাগছে না।
-কেন ভালবাসবেন না??
-অরু!!!! সাট্্্্্ আপ
-নো আই এম নট
-আমি ভালবাসি না তোমাকে, ভালবাসবো ও না
-কেন বাসবেন না??? আমি আপনার বিয়ে করা বউ, আপনার ঘরে থাকি, আপনার সংসার করি, আপনার বাচ্চার মা হতে চলেছি, আপনার জামা কাপড় থেকে শুরু করে ঘর বাড়ী সব কিছুর খেয়াল রাখি, সামলে রাখি…. আমাদের বিয়ের এই ১১মাসে আমি আপনাকে সব দিয়েছি….নিজের শরীর, সংসারে নিজের শ্রম, আপনাকে নিজের ভালবাসা সব… তাহলে কেন ভালবাসবেন না আমায়??
-অরু এবার কিন্তু তুমি বেয়াদবি করছো…
-না আপনি বলেন কেন ভালবাসেন নি? কেন ভালবাসবেন না?? কেন কেন????
(অরু এবার অয়নের কলার ধরে কথা গুলো বলেছিল …… অরুর এমন বিহেভিয়ারে অয়নের মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল…..অয়ন অরুকে ছাড়িয়ে #ঠাস্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্ করে অরুর গালে চড় বসিয়ে দিয়েছিল……
– ভালবাসা My foot….. Hate you.I hate you oru……..
(অরু গালে হাত দিয়ে কাঁদছিল…. থাপ্পড় টা এতই জোড়ে ছিল যে অরুর ঠোঁটের এক সাইড ফেঁটে রক্ত পরছিল….)
-Listen!! look at me….আর কোন দিন তুমি আমার একটা কাজেও হাত দিবা না….সংসারের কিছু কর না কর আমার একটা কাজ ও করবা বা।খবরদারর……..
আমি নিজের কাজ নিজেইই করতে পারি। কিছু করে আবার সেটা বারবার বলা!! I hate it…. তোমাকে আর আমার কাজ করতেও হবে না আর এভাবে বারবার বলতেও হবে না…….
#Give_and_Take_relationship আমি হেট করি আর তুমি তাই করছো আজ আমার সাথে…..

এই আর একটা কথা…. এত ভালবাসা ভালবাসা করছো না এই কয় মাস ধরে…… এমন করতে থাকলে তোমাকে আমার চাই না নিজের লাইফে। just get out from my life…… বাকি দশটা স্ত্রির মত তোমাকে আমি চাই না।
এদিকে তাকাও….. তাকাও…………….
আজ ই চলে যাবে তুমি আমার লাইফ আর এই সংসার থেকে….
আজ ই….
আমি যেন ফিরে তোমাকে আর এই আমার বাড়ীতে না দেখি… ]]]

সাদের ডাকে অরুর ভাবনায় ছেদ পরলো…
-ভাবী
-হু
-কিছু খেয়ে নেন। এই অবস্থায়…..
-ভাইয়া আই সি ইউ এর লাইট টা এখনো অফ হচ্ছে না।এতক্ষন ধরে কি করছে তারা?
-সব ঠিক হয়ে যাবে ভাবি
-আপনার হাতে ওটা কিসের টেপ?
-ওহ।ব্লাড দিয়েছি একটু আগে
-কাকে??
-অয়নকে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে ওর
(অরুর বুক টা মোচর দিয়ে উঠলো সাদের কথায়…আরোহী পিছন থেকে সাদের কথা শুনে বসে পরলো……. আর মাসের পেট নিয়ে আরোহী নড়তেই পারে না ঠিক মত।পায়ে পানি জমে ইদানিং খুব……অহনাও কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এলো আরোহীর কাছে… .. অনিক অহনাকে ইশারা করলো আরোহীকে সামলানোর জন্য ……

রাত ৩:৩০……….
ডঃশুশান্ত ওটি থেকে বের হল…………..
অরু এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে বলল….
-ডাক্তার….!
-আস্তে প্লিজ এই অবস্থায় এত দৌড়াদৌড়ি ঠিক না….
-বলুন না উনি কেমন আছেন.??
– ……….
সাদ উনাকে নিয়ে বসাও বলছি
-ভাবী চল
-না। বলেন না ডাক্তার??
(অহনা অরুকে জোড় করে বসালো)
-দেখেন বেশ বড় এক্সিডেন্ট ছিল….. মাথায় আঘাত পেয়েছে খুব, ডান হাত,আর বাম পা!!!
-কি ডাক্তার?
-ভেঙ্গে গেছে। খুব বাজে ভাবেই ভেংগেছে… আর মেইন হল ইন্টারনাল আঘাত বেশি পেয়েছে প্রচুর রক্ত ক্ষরন হয়েছে….. আগামী ২২ ঘন্টা অবসারভেশনে রাখা হবে….
-অরু এবার হুহু করে কেঁদে দিল…

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here