অরুর সংসার,পর্ব-১৩,১৪
লেখিকা-নিশিকথা
দেখতে দেখতে ৭ দিন পার হয়ে গেল।
ওদিকে জয়ার বাবা অনেক অসুস্থ ! হার্টে ছিদ্র পাওয়া গেছে কয়েকটা। এই নিয়ে জয়া খুব ই টেনশনে আছে।
আজ জয়া তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে ডঃশুশান্ত এর কাছে।
গাড়ী তে বসে জানালার দিক তাকাতে তাকাতে হটাৎ জয়া একটা জিনিস খেয়াল করলো……..
সেদিন বাসায় ফিরে জয়ার মন খুব খারাপ ছিল অয়নের কথায়। কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছিল।
সেদিন রাতেই জয়ার বাবা অসুস্থ হয়ে যান।
!!! জয়ার বাবা অসুস্থ হবার পর থেকে জয়া যেন তাকে নিয়েই ব্যস্ত।
আশ্চর্য ওরপর থেকে এতদিন জয়ার একবারও অয়নের কথা মনে পরে নি!!!
তাহলে কি অয়নের কথাই ঠিক? জয়া কি নিজের উত্তর পেয়ে গেল??
জয়ার অয়নের বলা সেদিনের কথা মনে পরে গেল…..
♦অয়ন :ডঃ আমি আপনার জীবনের কোন অধ্যায় নই..মরীচিকা মাত্র!!!
আর মরীচিকার না শুরু আছে না শেষ………♦
and I can’t be your lifeline…
you know why??
— — — — — —
নাহ এটা আমি আপনাকে বলবো না! আপনি একটু ভেবে দেখবেন! নিজের এখোনো অবধি জীবন এবং ওই জীবনের সাথে জড়িত মানুষদের নিয়ে ভেবে দেখবেন! ” উত্তর পেয়ে যাবেন…..
হ্যা জয়া নিজের উত্তর পেয়ে গেছে…. জয়া এতদিন যার পিছনে ছুড়েছে সে জয়ার জীবনে মরীচিকা মাত্র! যার শুরু জয়া করেছিল কিন্তু যার শেষ নামানো জয়ার পক্ষে সম্বব নয়…
……………. আর একটা মানুষের অত্র জীবনে *পরিবার* সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ অংশ! তার থেকে বড় কিছু না।সেটা বাবার পক্ষের পরিবার হোক বা স্বামির পক্ষের!
আরও একটা কথা আজ জয়া বুঝেছে……
সেটা হল ভালবাসার কথা!
প্রেম – ভালবাসা একটা এমন অনূভুতি যা মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্দ অংশ। প্রেম ছাড়া মানুষ অনূভুতিহীন জড় বস্তুর মত।
কিন্তু…….
প্রেম নামক অনূভুতি যখন একটা সম্পর্কের মাঝে বিরাজ করে…. সেটা যে কোন সম্পর্কের মাঝে হতে পারে যেমন ঃ বাবা মা এর প্রতি সন্তানের বা সন্তানের প্রতি বাবা মা এর……..স্বামির প্রতি স্ত্রির কিংবা স্ত্রি প্রতি স্বামির…… অথবা ভাই বোনের একে অপরের প্রতি বা বন্ধু বান্ধব বা আত্বীয়ের প্রতি, কিংবা দেশের প্রতি………
তখন সেই
অনূভুতিটা সব থেকে পবিত্র অনূভুতি হয়।
তবে সম্পর্কহীন প্রেমানুভূতি নামহীন সম্পর্কস্বরূপ…………
আর নামহীন সম্পর্কের সমাজের কোন জায়গা নেই।
অয়নের প্রতি জয়ার ভালবাসাও সম্পর্কহীন প্রেম,এমন প্রেমানুভূতি অয়নই মেনে নেয় নি…তেমনই না সমাজ মেনে নিবে না জয়ার পরিবার।।
দীর্ঘস্বাস ফেলল জয়া….
…..
……….
……………
……….
…..
♦♦অরু নিজের সব কাজ শেষ করে,অয়নের লাঞ্চ পাঠিয়ে এখন বই পড়ছে। সামনে তার এইচ এস সি পরীক্ষা না!
এইতো গতকালই অয়ন তাকে সব বই কিনে এনে দিয়েছে ! অহনা তাকে পড়ায় হেল্প করছে।
২,৩ দিন আগে হবে অয়ন রাতে লেপটপে কাজ করতে করতে অরুকে জিজ্ঞাস করেছিল……..
অয়ন: অরু।।। কতদুর লেখাপড়া করেছো???
অরু: ১২ ক্লাশ
অয়ন: হু? ১২ ক্লাশ পড়ে আর পরীক্ষা দেও নি?
অরু : পরিক্ষা তো হয় নি এখনও
অয়ন: মানে? তুমি কি এবারের এইস.এস.সি ক্যান্ডিডেট?
অরু: হুম
অয়ন: তা পড়ালেখা তো দেখি কিছুই কর না।
অরু : ………..
অয়ন: কোন কলেজে পড়?
অরু: ভিকারুন্নেসা
অয়ন: তাহলে তো লেখাপড়ায় ভাল তুমি।
কোন বিভাগ??
অরু : আর্টস
অয়ন: ওহ।চাকরি করার ইচ্ছা আছে নাকি।
অরু : এখন আর নেই
অয়ন: আগে ছিল বুঝি?
অরু : বিয়ে না হলে তো কিছু করে খাওয়া লাগতো। সৎ মায়ের সংসারে ছিলাম বলে কথা। আর আমার আম্মু বলতেন যে মেয়েদের লেখাপড়া অনেক বেশি দরকার। শুধু যে চাকরি করার জন্য তা নয়,!! কারন প্রতিটা বাচ্চাই একজন শিক্ষিত মা দরকার! কারন প্রতিটা বাচ্চা প্রাথমিক শিক্ষা মায়ের কাছেই পায়! সংসারে একজন শিক্ষিত বউ দরকার।
অয়ন: হুম। এখন পরীক্ষা দেবার ইচ্ছা থাকলে দিতে পারো। কিন্তু চাকিরী করা চলবে না। i am enough able to fullfill your needs.
(অরু অবাক? কি বলছে অয়ন? অরু পরিক্ষা দিতে পারবে?? )
অয়ন: কি বল? দিবা পরিক্ষা? তাহলে বই এনে দিব কাল পরশু
অরু : দিবো
অয়ন: এডমিট তুলছো?
অরু : না
অয়ন: ফর্ম ফিলাপ করছিলা??
অরু : হ্যা!
অয়ন : তাহলে আগে বল নি কেন? বোকা নাকি?
অরু: আমি ভেবেছিলাম আর লেখাপড়া হবে বা
অয়ন : হুম আর আন্ডার ইন্টার মেয়েকে আমি বউ করে ঘরে রাখবো তাই না?
(অয়নের মুখে বউ কথা টা শুনে অরু যেন একবুক সুখ পেয়ে গেল। নিমিষেই অরুর চোখ ভোরে এলো)
অয়ন:সবাই জিজ্ঞাস করলে বলবো যে আমার বউ মাধ্যমিকের গন্ডি পার হয় নি।লজ্জার বিষয়!!! তুমি ইন্টার, অনার্স,মাস্টারর্স সব পড়বা। আমি পড়াবো!
(অয়নের মুখে এমন কথা শুনে অরু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি…অয়নের পায়ের কাছে বসে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছিল)
অরু : আমি সত্যি পড়বো??
অয়ন অরুর এমন কান্ড দেখে অবাক। সাথেসাথে বসে পরলো অয়ন অরুর সামনে। এমন করছো কেন? লেখাপড়া যতদুর করতে চাও করবা। তবে যাই কর রাত তা আমার
(অয়ন চলে গেল)
অরু ভাবছিল যে…
তার মনে লোক টা একটু একটু করে সম্পুর্ণ জায়গা নিয়ে নিয়েছে, কবে যে সে তার মনে জায়গা করতে পারবো?
না অরুর চেস্টা ছাড়লে চলবে না।যথাসাধ্য চেস্টা চালয়ে যাবে সে। ♦♦
/
//
///
//
/
জয়া : May i come in sir?
অয়ন: yes
জয়া : স্যার এইযে এটা শুশান্ত স্যার দিয়েছেন!
আমার বাবার অপারেশনে যাবতীয় সব এক্সেসারিজ মিলিয়ে কেমন কি খরচ হবে তার একটা ডিটেইলস যদি আমায় দিতেন
অয়ন: ডঃ জয়া আপনি ফাইটা রেখে যান আমি আপনাকে সন্ধায় দিব
জয়া : ওকে স্যার! কিন্তু আমার তো আজ কোন সার্জারি নেই তাই এখনী বাসায় ফিরছি বাবাকে নিয়ে।।।কাইন্ডলি যদি ইমেইল করে দিতেন।
অয়ন: ইয়াহ শিওর
জয়া : ওকে গুড আফটার নুন স্যার
অয়ন: গুড আফটার নুন
(জয়া দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এলো)
জয়া: স্যার
অয়ন: হুম
জয়া : সেদিনের বিহেভিয়ার এর জন্য I am really sorry. That day i was wrong
অয়ন: It’s ok Dr.Forget it
জয়া : হুম আল্লাহ হাফেয
অয়ন: হুম
….
…….
……….
……..
সন্ধায় অয়ন বাড়ী ফিরলো। আজকাল কাজের চাপ কম।ফিরে রুমে ঢুকে অয়নের নজর অরুকে খুঁজছে! কেন? জানা নেই অয়নের। হয়তো এতদিনে ফিরেই অরুর মুখ দেখার অভ্যাস হেছে! জি অভ্যাস
ভালবাসা নয় কিন্তু।
♥♥♥♥
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে অরুকে দেখতে পেল অয়ন।হাতে সেই লেবুর শরবত।
অরু শাড়ি পরেছে!!
আজ কেন যেন অপ্সরীর মত লাগছে অরুকে অয়নের কাছে!
অরু বিয়ের পরের দিনের সেই গোলাপি মনিপুরি তাঁতের শাড়ি টা পরা। চুলগুলো ছেরে দিয়েছে। মুখে কোন সাজ নেই। হাতে গোলাপি সাদা ড়েশমী চুরি, গলায় কানে ছোট সোনার গহনা। মাশাআল্লাহ সুন্দর লাগছে অরুকে।
অরু তো সবসময় ই এমন , সাজগোজ করে না খুব একটা! তাহলে আজ স্পেশাল কিসে?
হয়তো আজ প্রায় ৮ দিন পর অরু শাড়ি পরেছে তাই হয়তো……..
অয়ন অরুর হাত থেকে গ্লাসটা নিল।সারাদিন পর ফিরে অরুর হাতের এই লেবুর শরবত টা অয়নের ক্লান্তি নিমিষেই শেষ করে দেয়!
অয়ন গ্লাস টা রেখে অরুর কোমড় ধরে কাছে টেনে নিল নিজের।
অয়ন: অরু
অরু : জ্বি
অয়ন: কেবল গোছল করলে বুঝি?( অরুর ভেজা চুলে হাত দিয়ে)
অরু : জ্বি।
অয়ন: এত বেলায় কেন?
অরু : ……………
রুশা তরকারি ফেলে দিয়েছিল গায়ে তাই
অয়ন: ওহ ! মানে ডবল করা লেগেছে??
অরু : হ্যা
অয়ন: ট্রিপল করা লাগলে??
অরু : হ্যা????????? , (চোখ বড়বড় করে)
অয়ন: হ্যা….
চলবে……….
অরুর সংসার
পর্ব_১৪
লেখিকা-নিশিকথা
অয়ন: অরু
অরু : জ্বি
অয়ন: কেবল গোছল করলে বুঝি?( অরুর ভেজা চুলে হাত দিয়ে)
অরু : জ্বি।
অয়ন: এত বেলায় কেন?
অরু : ……………
রুশা তরকারি ফেলে দিয়েছিল গায়ে তাই
অয়ন: ওহ ! মানে ডবল করা লেগেছে??
অরু : হ্যা
অয়ন: ট্রিপল করা লাগলে??
অরু : হ্যা????????? , (চোখ বড়বড় করে)
অয়ন: হ্যা….
অরু : না….. ( অরু নিজের কোমড় থেকে অয়নের হাত সরিয়ে একটু পিছে সরে এলো
অয়ন: ……….. (অয়ন আগাচ্ছে অরু পিছাচ্ছে…. একসময় অরু যেই না দৌড় দিতে যাবে …….
অয়ন খপ করে ধরে ফেলল…..
রাত ১০ টা…….
অরু উঠে অয়নের দিক তাকালো! নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে আছে।
অরু অয়নের একটু কাছে গেল!
অরু : ঘুমিয়ে গেল নাকি? দেখি তো
(অরু অয়নকে একটা চিমটি কাটলো.অয়ন কোন রিয়েক্ট না করায়…
অরু : ঘুম!!
( অরু ২,৩ টা ঘুসি দেখালো অয়নকে ইশারায়…আরও কয়েকটে চিমটি কাটলো…. )
অরু : পচা লোক, নির্দয়, পাষান! আমার আবার গোসল করা লাগবে এখন!! দুর!! একটা কামড়াবানি!! কি কামড়াবো নিজেই তো আমাকে কোনদিন কামড়ে খেয়ে ফেলবে!! যা মনে হচ্ছে না!! চুল টানবুনি!!!
এমন নানান বকাবকি করে অরু নিজের গায়ে শাড়ি কোনমতে পেচিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে (মুলত অয়ন ঘুম ভেবেই অরু এত সাহস পেয়েছে)
(অরু ঊঠে যাবার পর অয়ন চোখ খুলে তাকালো! অয়ন জাগাই ছিল…
অয়ন অরুর এমন রাগের হাস্যকর রুপ দেখে হাসবে না কাঁদবে ভাবছে!! অনশেষে হেসেই দিল!!
অয়ন: পাগলি ♥
(অয়ন ভালই সুযোগ পেয়েছে এবার অরুকে চাপে রাখার)
………..♥………………
অরু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অয়নকে দেখলো না!
বারান্দায় অয়ন দাড়িয়ে সিগারেট টানছে ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটে সুখটান দিয়ে অয়ন বলল…….
অয়ন: কি কি যেন বলছিলে?? ও হ্যা আমাকে কামড়াবে?
(অরু চোখ বড়বড় করে তাকালো অয়নের কথায়)
অয়ন: আর কি যেন , হ্যা আমি তোমাকে খেয়েই ফেলবো কোন দিন! ওও
হ্যা আমাকে ঘুসি দেখাচ্ছিলে!!! চিমটি ও কেটেছো ইচ্ছা মত!!
(অরু এবার নিজের নক দাত দিয়ে কাটছে!!!)
অয়ন: তোমাকে আমি লক্ষি একটা মেয়ে মনে করতাম অরু : কিন্তু তুমি?? আর সব থেকে মেইন! ” তুমি আমার চুল টানতে চেয়েছো!
মানে এই কর তুমি আমি ঘুমালে???
(অরু এবার দিল এক দৌড়!! অয়নের ত্রিসীমানায় আর ২,৩ দিনে অরু আসবে না এমন একটা ভাব………..
রাতে ডিনার টেবিলে সবাই একসাথে বসেছে….
অরু সবাইকে খাবার দিচ্ছে!
অনিক: বাবা আমাদের ফিরতে হবে কাল
বাবা : কি দরকার বাবা আরো কয়দিন থেকে যাও। নানুভাইয়ের সাথে কি সুন্দর সময় কাটে আমার।
আরোহী : না বাবা ওদিকে কিছু কাজ আছে
বাবা: না এখন অবস্থা ভাল না।যাবে না তোমরা। কাজ সব পরে।সচেতন থাকা আমাদের দায়িত্ব
আরোহী, অনিক : আচ্ছা বাবা
অয়ন: বাবা ভাবছিলাম যে দরিদ্রদের মাঝে চাল, ডাল,আলু মানে প্রয়োজনীয় খাবার বিতরন করবো।
কাজ কাম বন্ধ সবার।খাবে কি এভাবে চলতে থাকলে।
বাবা: বাহ অনেক ভাল আইডিয়া।
অয়ন: হুম তাহলে কাল হাসপাতালে যাবো না।এমনিও ডঃ শুশান্ত বলছিলেন কিছুদিন ছুটি নিতে
বাবা: হাসপাতালে ছুটি নিবে? প্রব্লেম হবে না?
অয়ন:আরে এ্যাপোলো হসপিটাল ধনীদের জন্য…
ধনীলোকেরা ছাড়া ওখানের এক্সপেন্স বহন করা সাধারণ মানুষ এর পক্ষে তো পসিবল না।ওই গোটাকয়েক ধনী ব্যাক্তিরা বা মন্ত্রী মিনিস্টার কিংবা হিরো হিরোইন রা আসে।কিন্তু আপাতত পেসেন্ট কাউন্ট কম।
তাই আর কি।
এখানের জেনারেল ওয়ার্ডেই যা খরচ!! তাই এফোর্ড করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অনেক টাফ্ট আর লাকজারি ওয়ার্ডের কথা তো বাদ ই থাক।
বাবা: হুম
অনিক : আরোহীর ডেলিভারি হল না ওখানে! প্রচুর পেরা! তাও তো অয়নের জন্য ডিস্কাউন্ট পেয়েছিলাম।
বাবা: হা কিন্তু ডিস্কাউন্ট যা পেয়েছিলে তার ডবল খরচ করে সারা হাসপাতালে মিস্টি বিতরন করেছিলে মনে আছে??
অনিক : বেস্ট মোমেন্ট বাবা
(অয়ন বারবার আড় চোখে
অরুকে দেখছে আর অরু!! সে তো অয়নের আশেপাশে ঘেসছেই না)
অয়ন : আচ্ছা বাবা যেটা বলছিলাম। আমি একটা এমাউন্ট ভেবেছি দরিদ্রদের দিব, বাকি টাকা তুমি আর অনিক দিবে?
অনিক : ওয়াই নট
বাবা : ওকে। তাহলে কাল সকালে ৩ জনে বের হব কেমন?
অয়ন: হুম। কাল মাইকে ইনাউন্স করবো আর জিনিস কিনে আনবো। পরশু বিতরন করবো
বাবা : ওকে।
…………………………
খাবার টেবিলে বারবার অহনার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে! বারবার! অয়ন এটা ভাল করেই খেয়াল করলো।
মেজাজ টা অয়নের বিগরে যাচ্ছে এবার। অহনা বার বার ফোন কাটছে!
এক সময় যেই না ফোন বাজলো!!!
অয়ন অহনার হাত থেকে ফোন নিয়ে এক আছাড় মারলো! সবাই অবাক!!
খাবার টেবিল নিস্তব্ধ!!
অরু তো কেঁপেই উঠেছে!
বাবা: অয়ন! কি হল এটা?
অহনা: ভাইয়া!!!!!!!! কি করলি এটা? কেন করলি??
অয়ন:Shut up Ohon!! just shut up. কে ফোন দিচ্ছিল তোকে??? বল!!!
speak up damn it!!
কেন? কেন ফোন দেয় উনি তোকে?? কেন?? আর তুই!! তুই কেন কথা বলিস উনার সাথে?? কেন অহন কেন? কোন সাহসে তুই কথা বলিস উনার সাথে বল।
বল!!!!!!
অহনা : কথা বলেছি বেস করেছি। বেস করেছি আমি !! ভাইয়া তিমি আমার মা!!!!!!! আমাদের মা!! নিজের মা এর সাথে আমি কথা বলবো না????? কেন বলবো না?
ভাইয়া তুই পাথর হতে পারিস!! আমি তো পাথর না!!! আমি আমার মা এর সাথে এক বার কেন ১০০ বার কথা বলবো।
আর শুধু কথা না ভাইয়া আমি আমার মাকে খুব শীঘ্রহি আমাদের বাসায় ও নিয়ে আসবো। সে অনেক অসুস্থ।
অয়ন: খবরদার অহন! ভুলেও ওই মহিলাকে আমার বাড়ীতে আনবি না!
অহনা: এটা আমাদের ও বাড়ী ভাইয়া।আর বললাম তো মা অসুস্থ
অয়ন: অসুস্থ সো ওয়াট?? তার ছেলে মেয়েরা আছে না!! তারা দেখাশোনা করবে
অহনা : ভাইয়া! তারা তো আর আপন না। সৎ!!!
অয়ন : তো! তাদের কারনেই তো আমাদের ছেড়ে একদিন চলে গিয়েছিলেন তিনি।
অহনা : ভাইয়া প্লিজ। ঊনাকে মাফ করে দে।উনি অনেক অসুস্থ
(অয়ন উপরে চলে যেতে নিলে অহনা চিৎকার করে বলল….. )
অহনা: ভাইয়া মায়ের ক্যান্সার!!!!!!!!
(অয়ন থেমে গেল! ওদিকে নিসাদ হুসাইন অহনার শেষ কথা শুনে স্তব্ধ!!! বুকের এর কোণে চিনচিন করে ব্যাথা হচ্ছে তার…. আরোহী অনুকেত হাত টা শক্ত করে ধরে কথা গুলো শুনছে!! তার চোখেও পানি।
আর অরু? সে তো কিছুই বুঝতে পারছে না! কোন মা? সে তো জানতো তার শাশুড়ি মা মারা গিয়েছেন!
কিন্তু এখনে তো আরেক সত্যের আংশিক মুখামুখি হল অরু!)
(অয়ন আর একটা কথাও বলল বা অহনার সাথে। অয়ন নিসাদ হুসাইনের কাছে গিয়ে বলল বাবা তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?
কষ্ট পেয়ো না। ছেলেদের কষ্ট পেতে নেই!
অয়ন আর কোন দিক তাকালো না।ঘটঘট করে বাড়ীর বাইরে চলে গেল।। অরু অয়নের যাওয়ার পানে চেয়ে আছে। )
অহনা আরোহীর কাছে গিয়ে বলল….
অহনা: আপি তুমি ভাইয়াকে বুঝাও। একটা মানুষ মৃত্যুর মুখি! তাও আবার সে আমাদের মা! ৯ মাস গর্ভে রেখে আমাদের এই দুনিয়ার মুখ দেখিয়েছে সে।! এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হওয়া যায় আপু??
আরোহী : বোনু! তুই তখন ২ বছরের ছিলি…কিছুই বুঝতি না। তাই এখনো বুঝবি না যে আমার আর ভরাইয়ার জ্বালাটা ঠিক কোথায়!
অহনা আর কিছু না বলে চলে গেল নিজের রুমে।
নিসাদ হুসাইন এখনো ঠায় বসা! অনিক তাকে ধরে রুমে নিয়ে গেল।
…..
…………..
…..
রাত ২:০০
অয়ন এখনো ফেরে নি বাসায়।অরু অয়নের অপেক্ষায় ড্রয়িং রুমে বসে। মাথায় অয়নকে নিয়ে টেনশন আর একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার সম্পর্কৃত নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়!!
অরোহী : অরু! এখনো ভাইয়া ফেরে নি
অরু: না আপু।
আরোহী : ভাইয়ার মাথা টা গরম তবে সে কিন্তু অনেক শান্ত স্বভাবের! মানে মানুষের প্রতি রাগ হলেও ঠান্ডা মাথায় তাকে অপমান করে এমন আর কি! তবে কিছুকিছু সময় ভাইয়ার রাগের সীমা যখন পার হয়ে যায় তখন এমন করে যা আজ করেছে। তারপর মাথা ঠান্ডা করতে আর একাকী সময় কাটাতে একটা জায়গায় যায়। চলে আসবে। তুমি চিন্তা কর না।শুয়ে পর
অরু : আপু কোথায় গিয়েছেন উনি?
আরোহী : অয়নের সিক্রেট জায়গায়। সেটা হল পাশে গ্যারেজে ওর প্রিয় মার্সিডিজ এর ভিতরে। ওই গাড়ি ওর প্রিয় জায়গা। কাজকে ওই গাড়ীতে চড়তে দেয় না!
আগে এমন কত হয়েছে যে অয়ন রাত ৩ টা বাড়ী ফেরে নি, আমি বাবা চিন্তা শেষ! সারা শহর খুজে বেড়াতাম আর অয়ন থাকতো এই বাড়ীর মধ্যেই!
অরু: ওহ
আরোহী: কি ভাবছো অরু? এই যে আমাদের মা মারা গিয়েছে জানতে হুট করে এসব কি তাই তো?
অরু জিজ্ঞাসু নজরে আরোহীর দিকে তাকালো…….
আরোহী : বস্তুগত ভাবে আসলে উনি বেচে আছেন তবে আমাদের কাছে মৃত!
অরু : কেন আপু? কি করেছিলেন উনি?
আরোহী: অহনার তখন কেবল ১ বছর…. আমরা তখন বাংলাদেশেই। কানাডার থেকে কেবল এসেছি! আমরা তো এখনো কানাডায় ইজিলি যাওয়া আশা করতে পারি কারন আমাদের জন্ম ওখানে! যাক যা বলছিলাম…… এখানে এসে বাবার অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল! খুব কখারাপ অবস্থা ছিল বাবার! চার হাত পা ই প্যারাল্যাইসড্ হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন বড় বলতে ১৬বছর আর ভাইয়ার ১৪! মা ভালই তো ছিলেন কিন্তু অহনা পেটে আসার পর থেকে কেমন কেমন বিহেভ যেন করত।। বাবা ইগনোর করতেন মায়ের চেঞ্জ হওয়াকে,বলতেই মুড সুইং!!
কিন্তু অরু কথায় আছে না!! ” স্ত্রী কে চেনা যায় স্বামীর দারিদ্রতায় আর স্বামীকে চেনা যায় স্ত্রির অসুস্থতায় ” বাবার ক্ষেত্র উল্টো হয়েছিল, বাবার দারিদ্রতার ছোঁয়া ছিল না তবে বাবার অসুস্থতা ই মায়ের আসল রুপ প্রকাশ করেছিল!….
মা বাবার অসুস্থ থাকা কালীন একদম পাল্টে গেলেন। বাবার সেবা তো দুরে থাক অরু যান বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। বাবা রো তখন কথা বলতে পারতেন না শুধু চোখের জল ফেলাতেন। মায়ের এমন চামারের মত ব্যবহার অয়নের চোখ এরায় নি! আর একদিন মা হুট করেই আমার বাবার এক বন্ধকে বিয়ে করবে বলে। আমরা সেদিন মায়ের পা ধরতে বাকি ছিলাম! বাবার ওই বন্ধুর স্ত্রি মারা গেছিলেন! ২ ছেলে! অর্থিক অভাব উনার ও ছিল না সাথে ছিল যৌবন!! আমার মাকেও দেখলে মনে হত না যে ৩সন্তানের মা সে। তাই হয়তো নিয়েছিল উনি মাকে!! না না মা বললে ভুল হবে! ও তো মা হবার যোগ্য না! কিন্তু অরু দেখ!! আমার বাবাকে অসুস্থতায় ছেড়ে গিয়েছিল না ওই মহিলা!!! আজ ওই মহিলার অসুস্থতায় ওর বর তাকে ছেড়ে দিয়েছে!! আ
Tit for tat
আমার ভাইয়া ওই মহিলা কে খুব ভালবাসতো যান অরু!! খুব!
মা বলতে পাগল ছিল! ছোটবেলায় তো রোজ সকালে উঠে ভাই যদি মায়ের চেহারা না দেখতে পেত তাহলে তুলকালাম বাধিয়ে দিত!
যেদিন মা আমাদের ছেড়ে, বাবাকে ছেড়ে ওই লোকের হাত ধরে চলে গিয়েছিল সেদিন ভাইয়া মায়ের পাও ধরেছে। বলছিলো ♠মা ছেড়ে যেয়ো না আমাকে, ছেড়ে দিয়ো না বাবাকে। অহন কে দেখো মা, কত্ত ছোট্ট!! ওকে ছেড়ে যাবা তুমি? এই আপু কিছু বল না♠
চিৎকার করে কাঁদছিল ভাই মায়ের পা জড়িয়ে আর এসব বলছিল।
কিন্তু ওই মহিল শোনে নি!! পা ঝারি মেরে চলে গেছিলো!!
আরোহী হুহু করে কেঁদে দিল! অরু সেই তখন থেকে কাঁদছে!!
আরোহী : অরু যান ওই লাস্ট ভাইয়া কেঁদেছিল। ওর পর থেকে ভাইয়া আর কোন দিন কাদে নি।
ঘেন্না করে ভাইয়া ওই মহিলাকে। ঘেন্না করি আমি ওই মহিলা কে।
<অরু আরোহীকে জড়িয়ে ধরলো!! >
আরোহী : যান এই। কারনে ভাইয়া এমন পাথর হয়ে গেছে! নারী জাতকেই ঘেন্না করে! ভাইয়াকে কি বলবো বল? আমি নিজেই তো করি!!
মা নামক শব্দটার নামে কলঙ্ক ওই মহিলা।
তখন ভাইয়া কেবল ক্লাশ ৮ এ পড়তো! তখন থেকে এস এস সির আগ পর্যন্ত ভাইয়া বাবার সেবা শুরু করে। বাবাকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে,গোসল,টয়লেট সব ভাইয়া দেখতো। ভাইয়ার সেবায় বাবা আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে।কথা বলতে পারতেন তখন বাবা ভাইয়ার কারনে!
ভাইয়ার এস এস সির সময় কামরুল চাচা বাবাকে দেখতো! বাবাই বলেছিলেন পড়ায় মন দিতে! এস এস সি তে ভাইয়া গোল্ডেন পেল +সারা ঢাকা বোর্ডে ১ম হয়েছিল ব্যবসায় বিভাগ থেকে! এরপর বাবার আদেশে ভাইয়াকে আবার কানাডায় পড়তে পাঠানো হল! বি বি এ কম্পিট করার মাঝে বাবা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন।আবার ব্যবসার হাল ধরেন। আর ভাইয়া আই বি এ কম্পলিট করে দেশে ফিরল !! এ্যাপোলোতে জইন করলো!
বাবার সুস্থতায় আরেকজনের অবদান আছে! ডঃ শুশান্ত! ভাইয়ার হাসপাতাল এর সি ই ও!
আরোহী : অরু আমি জানি ভাইয়ার মেয়েদের নিয়ে এমন মেন্টালিটি তোমাকে ডিরেক্ট বা ইন্ডিরেক্ট অনেক সময় কষ্ট দেয়! ভাইয়া যে তোমাকে ভালবাসা দেয় না..তোমার ভালবাসা চায় ও না আর সে তোমাকে কেন কিজন্য চায় এটা একটা মেয়ে হয়ে তোমাকে দেখেই বুঝি।
তাও বলবো বোন!!!
ভাইয়াকে চেঞ্জ করার চেস্টা কর না। ভাইয়া যেমন আছে তাকে সেভাবেই মেনে নেও। ভালবাস♥ তোমার ভালবাসায় সে যদি নিজে থেকে চেঞ্জ হয়ে চায় হবে। তুমি করতে চেয়ো না
অরু: আপু আমি তো এত কিছু কিছুই জানতাম না।তাও তাকে ভালবেসেছি। উনাকে যে আমি নিজের থেকে বেশি ভালবাসি। আমি এসব জানার আগেও তাজে বদলাতে চাই নি , এসব জানার পরো তাকে বদলাতে চাই না।আমি তো শুধু তার মনের কোনে ছোট্ট একটু জায়গা করতে চেয়েছিলাম। তার চেস্টায় ই আছি! যদি ফেইল ও হই!! হব।
তিনি যদি আমায় ভাল না ও বাসেন কখনো তাও অভিযোগ করবো না। আমি তাকে ভালবাসি ♥ ভালবেসে যান আজীবন ♥♥♥♥♥♥♥♥♥
আপু তুমি এখন শুতে যাও। আমি অপেক্ষা করছি উনার জন্য! রুশা একা আছে!
আরোহী : হুম
(আরোহী চলে গেল)
(ফজরের আযান দিয়ে দিয়েছে অয়নের ফেরার নাম নেই। অরু ওযু করে নামায আদায় করে নিল )
ওদিকে নিসাদ হুসাইন নামাযের পাটিতে বসে চোখের জল ফেলছেন!!
বারবার অহনার কথা টা তার কানে বাজছে!!
*মায়ের ক্যান্সার*
কি করবে এখন সে? নিয়ে আসবে বাসায় সাথী চৌধুরী কে??
না!! কেন আনবে?? কোন সম্পর্কে?? সে যে প্রতারণা করেছিল, বিয়ের পবিত্র সম্পর্কের অপমান করেছিল! তার সন্তানদের পবিত্র মনে আঘাত দিয়েছিলো! না সাথীকে মেনে নিতে পারবে না সে কোনদিন….. ভালবাসা মরে গেছে তার।তবে ঘৃণা ও করতে পারে না!!
যাই হোক ভালবাসা না থাকুক, সম্পর্ক না থাকুক মানবতার খাতিরে কি সাথীকে আনবে বাসায়, চিকিৎসা করাবে???
না অয়ন যা বলবে তাই!! অয়ন যদি না করে তাহলে তার মতের বিরুদ্ধে তিনি যাবেন না।কি করেই বা যাবেন? যে ছেলে তাকে বিপদের সময় ছাড়ে নি! সেবা করে সুস্থ করে তুলেছে…. যে ছেলে আল্লাহ এর নিয়ামত নিসাদ হুসাইনের কাছে তার মতের বিরুদ্ধে কিভাবে যাবেন সে??
প্রেমের বিয়ে ছিল নিসাদ হুসাইনের আর সাথী চৌধুরীর!
৩ সন্তান!! সব সম্পর্ক, ভালবাসা, আগামী দিনের আশা, স্বপ্ন একেবারে পায়ে পিশে চলে গেল সাথী!!!
৫ টায় অয়ন বাসায় ঢুকলো! অয়ন ঢুকার সাথেসাথে অরু দাড়িয়ে পড়লো!!!
অরুকে দেখে অয়ন অবাক
অয়ন : কি তুমি কি সারা রাত জাগা ছিলা????
চলবে………