অফুরন্ত প্রণয়,১৫,১৬

অফুরন্ত প্রণয়,১৫,১৬
তারিন_জান্নাত
১৫.
তোতাপাখিটির পেছনে ছুটতে ছুটতে একদম নওশাদের সামনে এসে পড়লো ইয়াশা।দু’হাত কোমড়ের দু’পাশের অংশে চেপে ধরে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। পাখিটি যাতে হাতের নাগালের বাইরে না যায় সেজন্য প্রাণপনে ছুটেছিলো সে। এভাবে ছুটতে ছুটতে এখন সে হাঁপিয়ে উঠেছে।
আসলো তো আসলো পাখিটা একদম বাড়ির পেছনের দরজার দিকটায় চলে এসেছে।ইয়াশা ভেবেছিলো এদিকে কেউ থাকবেনা। সচরাচর এদিকে কেউ অপ্রয়োজনে পা ও ফেলেনা। ইয়াশা নিভে আসা চোখজোড়া কোনমতে মেলে রাখার চেষ্টা করলো।বড়বড় করে নওশাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো ইয়াশা। নওশাদ দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।সাদা শার্ট শরীরে সাথে ল্যাপ্টে আছে। ইয়াশা সূগভীর দৃষ্টিতে খানিক দেখে দ্রুত চোখ সরালো।নওশাদ তখনো টুটির গায়ে হাত বুলাতে ব্যস্ত। ইয়াশার দৃষ্টিকোণের তার জন্য কীসব চিন্তাভাবনা চলছে সেটা নওশাদের অজানা।
টুটি ইয়াশাকে দেখে পুনরায় আওড়ালো,
–” য়াশা-লাপ ইউ!”
নওশাদ ভাবলেশহীন হয়ে অন্যদিকে ফিরে গেলো।ইয়াশার মুখের দিকে পিঠ রেখে৷ তাতে ইয়াশা ক্ষেপে গিয়েও নিজেকে সংযত রাখলো। মৃদু কোমল
স্বরে বললে,
–‘ এসব কী বলছে পাখিটা?’
নওশাদ তারপরেও চুপ থাকলো।
ইয়াশার ইচ্ছে করছিলো নওশাদের হাত ধরে
নিজের দিকে ফেরাতে। কিন্তু এ কয়দিন বেশ বুঝতে পেরেছে।নওশাদ উন্নতমানের ঘাড়ত্যাড়া।এতো সহজে গলবেনা।ইয়াশার মনটা পাখিটির কথায় মজে গিয়েছে একদম। মনে অদ্ভুত শিহরণ জাগছে তার।কী ক্ষতি হয় পাখিটির বলা কথা নওশাদ নিজে যদি একবার বলে।তাহলে হয়তো ইয়াশা নিজের অভিমত পাল্টানোর চেষ্টা করতো। মানুষটা তো কো ভ্রুক্ষেপও করছেনা। ইয়াশা নিজের ভাবনাকে একপাশে রেখে সোজা নওশাদের সামনে দাঁড়ালো।আচমকা নওশাদের হাত থেকে উড়ে টুটি ইয়াশার গালে অনবরত ঠোকর মারতে লাগলো। নওশাদ চমকে উঠে।ইয়াশা নিজের দু’হাত দ্বারা টুটিকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করলো। নওশাদ মুহূর্তে বিচলিত হয়ে পড়ে। থাবা মেরে টুটিকে এক হাতের মুঠোয় বন্দি করে বলে,
–” ব্যথা পেয়েছেন?”
নওশাদ নিজে ইয়াশার কাছাকাছি গিয়ে গাল দেখতে লাগলো। ঠোকরের জায়গায় লাল হয়ে আছে।যেনো এই মুহূর্তে চামড়া ফেটে রক্ত বেরুবে। নওশাদ দৃঢ়ভাবে ইয়াশার ঠোকর মারা স্থানে তর্জনী আঙুলের সাহায্যে বুলাতে লাগলো। নওশাদের রাগ হয় প্রচুর পাখিটির উপর। অকস্মাৎ নওশাদে হুস ফিরে সে কী করছিলো।বেশ বিব্রতবোধও করে। সরে আসার অভিপ্রায়ে আঙুল সরানোর আগেই ইয়াশা জাটকা মেরে নওশাদের হাত সরিয়ে দিলো।অতঃপর সে নিজেই নওশাদে বক্ষে মুখ গুঁজে দিলো।দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো নওশাদের পিঠ। আকস্মিক ঘটনায় নওশাদ নিজে হতভম্ব হয়ে যায়। সে নিজের খালি হাতটা তুলে পেছনের দেওয়ালে ঠেকিয়ে রাখলো।নওশাদ বুঝতে পারছে তার শ্বাসপ্রশ্বাসের পরিবর্তন। এভাবে বেশিক্ষণ থাকা তার পক্ষে অসম্ভব।
নওশাদ কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
–” কী হচ্ছে এসব?”
ইয়াশা চাপা কন্ঠে বলে উঠলো,
–” আপনি এতো খারাপ কেন? আমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছেন না আপনি? আপনি কথা বলছেন না সেটা আপনার ব্যাপার। তারজন্য আমার এতো খারাপ লাগছে কেন?”
নওশাদে ঠোঁট চেপে হাসলো।ইয়াশা কুঁকড়ানো চুলে চোখ বুলিয়ে বলল,
–” আচ্ছা!’
এরপর দুজনে নীরব। নওশাদ পূনরায় বলল,
–” এভাবে পরপুরুষকে জড়িয়ে ধরা অনুচিত।
সামনে আপনার বিয়ে। লোকে জানলে বদনাম
হবে আপনার।”
মুহূর্তে ইয়াশার ভ্রু কুঁচকে যায়।নিজেকে স্বাভাবিক করে নওশাদের বুক হতে সরে গেলো। নওশাদ এবার বুঝলো সে একটা বোকামি করে পেলেছে।কথাটা না বললে ইয়াশার স্থান এখনো তার বক্ষপিঞ্জরে হতো।
নওশাদের মুখে ঝামটা মেরে ইয়াশা বলল,
–” ছিঃ ভাইয়া! আপনি পরপুরুষ কেন হবেন? ভাই কখনো পরপুরুষ হয়না।’
নওশাদের মুখের রঙটা হঠাৎই পাল্টে গেলো। নাকমুখ এক করে তাকিয়ে রইলো ইয়াশার দিকে। ইয়াশা চলে যেতে নিলে নওশাদ বলে,
–” আপনার আদুরে গাল দু’টো নিয়ে আমার সামনে আসবেননা।দূরে দূরে থাকবেন।নয়তো আমারও ঠোকর মারতে মন চাইবে।”
নওশাদ নিজেই ইয়াশা পাশ কাটিয়ে চলে যায়।যেতে যেতে হাতের মুঠোয় বন্দি টুটিকে শ্বাসিয়ে বলল,
–” খবরদার ওই নাজুক গালে আর ঠোকর দিবিনা।ওই গাল আমার তোর না।”
ইয়াশা প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।তার মাথায় তালগোল পেকে যাচ্ছে।একটু আগের ঘটনার কথা পুনরায় ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠে। কী অস্বাভাবিক কাণ্ডটায় না করলো সে।নিজের এলোমেলো ভাবনাকে চাপিয়ে একটা কথায় ভাবলো ইয়াশা।নিজের মনকে ভালো রাখতে যা করতে হয় তাই করবে সে।নতজানু হয়ে হেঁটে নিজের রুমে চলে গেলো ইয়াশা।

ধরণী জুড়ে সাঁঝ সাঁঝ রব।ভ্যাপ্সা গরমকে থামিয়ে দিয়ে মৃদুমন্দ হিম হাওয়া বইছে। কিছুক্ষণ স্তব্ধ রয় তো কিছুক্ষণ ক্ষীণ হিম হওয়া।নাওশাদের পরিবেশটা বেশ লাগছে। আজ দিনটা তেমন বিরক্তিতে কাটেনি তার। হয়তো ওই বিরক্তিকর মহিলাগুলো নেই বলে।
ড্রয়িংরুম থেকে ইউসুফ সাহেবের ডাক নওশাদের কর্ণগোচর হলো। সে দেরী না করে সেদিকে ছুঁটলো।
নওশাদের উপস্থিতি পেয়ে ইউসুফ সাহেব টিবিতে মনোযোগ রেখে বসতে ইশারা করলো।
নওশাদ চুপচাপ মুখোমুখি সোফায় বসলো।টিবির দিকে একঝলক চেয়ে বলল,
–” স্পের্ট’স দেখেন না আঙ্কেল? ”
–“দেখি মাঝেসাঝে! তুমি দেখবে?”
–” না ঠিক আছে,নিউজ দেখি।”
নওশাদ সম্পূর্ণ মনোযোগ টিবিতে রাখতেই ইউসুফ
সাহেব বলে উঠলেন,
— “তোমার নিজ বাড়ি কোথায় নওশাদ?”
চোখ সরিয়ে নওশাদ উত্তর দিলে,
–” ঢাকার,গুলশানে।”
ইউসুফ সাহেব কিছু একটা ভেবে বললেন,
–” ইয়াশাকে কোথায় দেখেছো?”
নওশাদ কিছু একটা বলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেলো।
অন্ধকার গলির ভেতর থেকে শুধু ছোট একটা মাথা দেখা যাচ্ছে।মাথাটা আরিফার।আরিফার ইশারায়
না জানালো।তখনি নওশাদ বুঝে ফেলে,কথার মোড় ঘুরিয়ে বলল,
–” রাস্তায়।’
–” ঢাকা থেকে তুমি এসো কতদিন হচ্ছে।”
নওশাদ মেইন পয়েন্ট বাদ দিয়ে মূলকথা
প্যাচালো করে বলল,
–“কিছুদিন আগে ফ্রেন্ডের বিয়েতে এসেছিলাম এখানে।যাওয়ার পথে ইয়াশাকে দেখেছি। তারপর সতেরো দিন পর এখানে আবার এসেছি। তার দুইদিন পর আপনার বাড়িতে।”
ইউসুফ সাহেব ছোট করে হাসলেন,
এরপর বললেন,
–” তো তুমি কী করো? পড়াশোনা?
–” পড়াশোনা তো শেষ।”
ইউসুফ সাহেব রান্নাঘরের দিকে চোখ বুলিয়ে বলে,
–” বর্তমানে করছোটা কী? চাকরি,ব্যাবসা?”
নওশাদ ইউসুফ সাহেবের মুখের দিকে চেয়ে বলে,
–” আমি তো বেকার।”
ইউসুফ সাহেবের গলা বসে যেতে চাইলো।বেকার সেকথাটা কেমন নির্ভয়ে বলছে।অথচ উনি নিজে মিনু আরার বাড়িতে সাহসের অভাবে প্রস্তাব পাঠাতে পারেনি।শুধুমাত্র বেকার বলে।উনি বললেন,
–” একটা বেকার ছেলের হাতে আমি আমার
মেয়েকে তুলে দিবো কোন ভরসায়?”
নওশাদ ফট করে বলে উঠলো,
–” আমার ভরসায়।আমি কী পঙ্গু? হাত পা তো সচল আছে। যেকোনো কাজ করেই আয় রোজকার করতে পারবো।তাছাড়া বাবার ব্যাবসাটা তো বাবার পরে আমাকে দেখতে হবে।”
ইউসুফ সাহেবের মুখে রা নেই।খেই হারিয়ে ফেলেন নাওশাদের উত্তর শুনে।নিজেকে সামলে বললেন,
–” দাদার নামে গাধা,বাবার নামে আধ,
আর নিজের নামে শাহজাদা। মানে বুঝলে তো কেন বলেছি।”
নওশাদ বিস্তৃত হেসে বলল,
–” আঙ্কেল আমরা এখন যা খাচ্ছি সব আমাদের দাদার রেখে যাওয়া।তাই আমরা এখনো জয়েন ফেমেলিতে আছি। এখন সেগুলো খেতে খেতে আমরা আমাদের নাতিপুতিদের জন্য জমাবো।আপনার চিন্তা তো আপনার মেয়েকে নিয়ে। তাহলে বলবো, আপনার মেয়ের কোন কিছুতেই কমতি হবেনা।”
এরপর একটু থেমে নওশাদ আবারও বলল,
–” এরপরও যদি আপনার মনে হয় আপনার মেয়ে অসুখী থাকবে তাহলে আমি এখান থেকে গিয়ে বাবার অফিসে বসে যাবো।”
নওশাদ কথা শেষ করে পূনরায় টিবিতে মনোযোগ রাখলো।ইউসুফ সাহেব মুগ্ধ হয়ে গেলেন নওশাদের কথায়।মূলত নওশাদ ঘেঁটে দেখার জন্যই রেখেছিলেন উনি।ছোটখাটো পরীক্ষার মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করবেন।মুখিক পরীক্ষায় নওশাদ পাশ করেছে।এবার প্রেকটিক্যালি দেখার পালা।
ইউসুফ সাহেব মনে মনে একটা ফন্দি আঁটলেন।মনেমনে আওড়ালেন দেখা যাক কী হয় শেষমেশ!

(চলবে)

‘অফুরন্ত প্রণয়’
#তারিন_জান্নাত

১৬.
অতঃপর হঠাৎ শুরু হলো এক অদ্ভুত লুকোচুরি খেলা।নওশাদের এই জিনিসটা বুঝতে প্রায় তিনদিন লাগলো।নওশাদ নিজের দুর্বল ব্রেইনটাকে গালমন্দ করলো কতক্ষণ।নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করলো, এমন একটা ব্রেইন নিয়ে সে কীভাবে পড়াশোনা করেছিলো।নওশাদ ড্রয়িংরুমে ফোন হাতে নিয়ে পায়চারি করতে লাগলো।ভোরে নামাযের পর ইয়াশাকে রোজ ছাদে যেতে দেখেছিলো নওশাদ। আজ ভোররাত থেকে ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করেও ইয়াশার দেখা পাচ্ছেনা সে। ইয়াশার ছাদে যাওয়ার সময়টা পেরিয়েছে সেই অনেক্ষণ পূর্বে।
নওশাদ বিরসমুখে সোফায় বসলো। ফোনটা কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করলো সময় ব্যয়ের উদ্দেশ্যে। ফোনটাও ইদানিং তাকে বেশ বিরক্তি দিচ্ছে। ফোন হচ্ছে বিনোদনে মাধ্যম, সেই ফোন যদি একগাদা বিরক্তি ঢালে তাহলে কী মানা যায়। ফোনটা রেখে নওশাদ নিজের গালে একটা হালকা শক্ত একটা ঘুষি বসালো।চোখে মুখে একরাশ আফসোস মাখিয়ে
মনে মনে আওড়ালো,
–” সেদিন যদি গালে ঠোকর মারার কথা না বলতাম।তাহলে ইয়াশা এভাবে লুকিয়ে-চুরিয়ে পালাতো না আমার থেকে।”
গম্ভীর পুরুষ্ট কন্ঠে নওশাদের ভাবনার সুতোয়
টান লাগলো,
–” কী ব্যাপার নওশাদ নিজের গালে ঘুষি খাওয়ার মতো কী কাণ্ড করেছো তুমি?”
নওশাদ হকচকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।সম্পূর্ণ দেহ ঘুরিয়ে পুরুষ্টু কন্ঠের অধিকারীর দিকে দৃষ্টিপাত করলো।নওশাদের হকচকানো রূপ দেখে ইউসুফ সাহেব মৃদু হাসলো। চোখের চশমাটা মুছতে মুছতে এগিয়ে আসলো।দেয়াল ঘড়িতে নজর দিয়ে দেখলো ছয়টা সাতান্ন।জিজ্ঞেস করলো,
–” না ঘুমিয়ে এখানে কী করছো?”
–” ইয়াশাকে খুঁজছি আঙ্কেল।দরকারি কথা ছিলো।”
ইউসুফ সাহেবের কপালে তীক্ষ্ণ ভাঁজ পড়লো। মূলত নওশাদের বর্তমান আচরণে উনি অসন্তুষ্ট হলেন।
পূর্বের ন্যায়ে রাশভারি কন্ঠে বললেন,
–” কেন ইয়াশার সাথে কী দরকারি কথা তোমার?
সবচেয়ে বড় কথা আমার মেয়ের সাথে কথা বলার পূর্বে তোমার উচিত আমার থেকে অনুমতি নেওয়া।তা নয় কী?”
নওশাদ পরনের স্লিভলেস গেঞ্জিটাকে নিচের দিকে টানলো। এরপর সরাসরি ইউসুফ সাহেবের চোখের দিকে তাকালো।ইউসুফ সাহেবের চেয়ে দ্বিগুন ভারি কন্ঠে বলে উঠলো,
–” ঠিক আছে।অনুমতি নিলাম না আর। আপনার মেয়েকে জানিয়ে দিবেন আমি আজ চলে যাচ্ছি।আমার উনাকে এতটুকুই বলার ছিলো।”
বলে নওশাদ তড়িঘড়ি করে রুমে চলে আসলো।সোফা থেকে কাধের ব্যাগটা নিয়ে নিজের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ঢুকালো। এরপর দ্রুত তৈরি হয়ে কাঁধে ব্যাগ উঠিয়ে রুম ছাড়লো।বের হয়ে ইউসুফ সাহেবকে আগের মতো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। নওশাদ পাশ কেটে যেতে যেতে বলল,
–” আসছি আঙ্কেল,ভালো থাকবেন।আন্টিকে জানিয়ে দিবেন একটু।”
নওশাদ দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। নওশাদের চলার গতি এমন যে সে কোন যুদ্ধে যাচ্ছে।ইউসুফ সাহেব নওশাদের কথার পিঠে যে কিছু বলবেন সে অবস্থাও হারিয়ে ফেলে।একদম বাকহীন হয়ে যায়। ইউসুফ সাহেবের অদ্ভুতভাবে খারাপ লাগতে শুরু করে।নওশাদের প্রতি এ কয়দিনে অন্যরকম এক মায়া জন্মে গিয়েছিলো উনার।মনে মনে নওশাদকে উনি জামাতার আসনে বসিয়েছিলেন।ছেলেটার হঠাৎ অভিমানে ইউসুফ সাহেব নিজের অপরাধ খুঁজতে লাগলেন।

ছাদের কোণে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলো ইয়াশা।নিজের বাড়ি থেকে শুভ্ররঙা শার্ট পরিহিত যুবককে বেরুতে দেখে ইয়াশা অবাক হলো।বেশি অবাক হলো যুবকের ব্যাকসাইডে ছড়ানো কাঁধ-ব্যাগটা দেখে।উৎকন্ঠিত হয়ে ইয়াশা ছাদ থেকে নেমে গেলো।ইয়াশা ছাদ থেকে নেমে তার বাবাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকালো। ভীতগ্রস্ত চাহনি মুহূর্ত নুইয়ে গেলো।ইয়াশার কিছু বলতে মন চাইলো,কিন্তু তার কন্ঠস্বর বসে গেলো। নিজের উৎকন্ঠিত রূপ লুকাতে ইয়াশা চলে যেতে চাইলো। গলিতে পা রাখতে যাবে তার আগেই ইউসুফ সাহেব বললেন,
–” তোর কাছে নওশাদের ফোন নাম্বার আছে?”
ইয়াশা এবার আরো বিস্মিত হলো।ভাবলো নওশাদের ব্যাপারে তার বাবা সব জেনে গেছে হয়তো।তাই সকাল সকাল তার বাবা রেগে নওশাদকে চলে যেতে বলেছে।শুধু তাই নয়,বাবার রাগ পরেনি বলেই পূনরায় ফোন দিয়ে গালাগাল করবে। ভাবতেই ইয়াশার এবার কান্না পাচ্ছে।নওশাদ কেন যে বাড়িতে আসতে গেলো। হঠাৎ ইয়াশার কান্নারত দৃষ্টি থামলো কিছু একটা ভেবে। নওশাদকে তো তার বাবা এনেছিলো।নাম্বার তার কাছে চাইবে কেন? নাকি নিজের এতক্ষণ ধরে ভাবা বিষয়গুলো অযুক্তিকর?ইউসুফ সাহেব পূনরায় নরম কন্ঠে বলে,
–” ওহ তোর কাছে তো ফোন নেই? নাম্বার কীভাবে রাখবি? ঠিক আছে যা।”
ইয়াশা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত রুমে আসলো।দরজা আঁটকে কবার্ড থেকে ফোনটা বের করে চালু করলো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেসেজ করলো,
–” আপনি কোথায় যাচ্ছেন এতো সকালে?ফিরে আসুন প্লিজ।”
সেন্ড করে ইয়াশা শান্ত হলোনা।জানালার ধারে দাঁড়িয়ে গেইটের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলো।

চলতি পথে নওশাদ ফোনের হালকা কম্পন অনুভব করলো।সেদিকে তোয়াক্কা না করে চলতে লাগলো।এরপর ফোনের কম্পন দীর্ঘ হলো। ফোনটা পকেট থেকে বের করে নওশাদ স্ক্রিনে অনাকাঙ্খিত নাম্বার দেখে শ্লেষপূর্ণ হাসি অধরে টানলো।এতোদিনের অপেক্ষাকৃত ফোনটা আজ আসতে হলো। নওশাদ ফোনটা পকেটে পুরে বিড়বিড় কন্ঠে বলে,
–” বাপ-মেয়ে দু’জনে একি ক্যাটাগরির।”
ফোনের দীর্ঘ কম্পন থামাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফোনটা ধরলো নওশাদ।রোষাগ্নি কন্ঠে বলল,
–” কি বলবেন বলুন জলদি।আমার হাতে
সময় নেই।’
ইয়াশা ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
–” কোথায় যাচ্ছেন আপনি?’
নওশাদ নিজের রাগটাকে বজায় রাখতে পারছেনা কোনমতে।ইয়াশার ব্যস্ত কন্ঠ তাকে ক্রমশ দুর্বল করে তুলে।নওশাদ চাপা স্বরে বললে,
–” যেখানে ইচ্ছে সেখানে..!”
ইয়াশা ভীতু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
–” বাবা কী সব জেনে গেছে? আপনাকে কী বলেছিলো? বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলো?”
নওশাদ চুপ থাকলো।ইয়াশা উত্তর না পেয়ে হতাশ হলো। নওশাদ ইয়াশাকে চুপ দেখে নিজেকে শান্ত করলো।একটা চায়ের দোকানের সামনে রাখা ব্যাঞ্চে বসে পড়লো নওশাদ।শান্ত গলায় বলল,
–” আমি কী বলেছিলাম আপনাকে? ‘আমার থেকে দূরে দূরে থাকবেন’।ওটা নিচক মজার ছলে বলোছিলাম।তাই বলে আপনি তিনদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন? আমার চোখের আড়ালে হচ্ছিলেন,কেন? আমার কথাটা কী খুব অশ্লীল ছিলো?”
ইয়াশা মিনমিন স্বরে নিজের হয়ে সাফাই দিতে বলল,
–” আমার লজ্জা লাগছিলো।”
নওশাদ তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল,
–” লজ্জা? সেটা আমার হওয়া উচিৎ ছিলো ইয়াশা।আমি নির্লজ্জের মতো নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আপনাদের বাড়িতে থেকেছি এতদিন।শুধুমাত্র আপনাকে দেখার জন্য।আমি চেয়েছি আপনার কাছাকাছি থাকতে।যাতে, একটু ফিলিংস অন্তত আমার প্রতি আপনার জাগুক।এটাই চেয়েছি শুধু।”
নওশাদের এতো অভিযোগের ঝুড়ি বহন করতে পারলো না ইয়াশা।নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।
নওশাদ ধমকে বলল,
–” স্টুপিড! কথা বলছেন না কেন এখন? ক্যান ইউ ইমেজিন গত তিনদিন আমার কেমন কেটেছে।সকাল থেকে নিজেকে অপরাধী ভেবে যাচ্ছিলাম।তার উপর বেহায়া চোখ দু’টোর তৃষ্ণা? মেটাতেই পারছিলাম না।
আজ ভোররাত থেকে আমি ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছিলাম আপনার জন্য।আপনি তো উধাও।”
ইয়াশা কোনমতে কান্না আঁটকে বলল,
–” স্যরি তো!”
নওশাদ শান্ত কন্ঠে বলল,
–” স্যরি রিজেক্টেড।”
কট করে লাইন কেটে দিলো নওশাদ।
ইয়াশা উপায়হীন হয়ে ফোন বিছানায় ফেলে দৌড়ে রুম থেকে বের হলো ইয়াশা।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here