অফুরন্ত প্রণয়,১৩,১৪(১ম অংশ)
তারিন_জান্নাত
১৩
নিস্তব্ধ অপরাহ্ন। গরম গরম এক কাপ চা হাতে নিয়ে রুমে আসলো ইয়াশা। আসার সময় খেয়াল করলো তার ভাইয়ের রুমের দরজাটা খোলা। ইয়াশার মনে অপরাধবোধ জাগলো। তার জন্য নওশাদ নিজের হাতে আঘাত করেছে।উপরন্তু এখানে আসার পূর্বেও নিজেকে আহত করলো।ইয়াশার মন আচমকা নওশাদকে দেখতে চাইলো। যাওয়ার সময় ড্রেসিং আয়নায় নিজের অবয়ব চোখে পড়লো।মুহূর্তেই ইয়াশার মুখ রক্তশূন্য ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করলো। শ্লেষপূর্ণ হাসি ঠোঁটে টেনে ফিরে এসে বিছানায় বসলো। মুখোমুখি আয়না নিজেকে দেখতে দেখতে নিশানের কথা মনে পড়লো।কতোই-না পাগলামি করেছিলো। ‘ভালোবাসি ভালবাসি’ বলে কান ঝালাপালা করে দিয়েছিলো তার। রাত-বিরেতে তার নানুর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। আর ইয়াশা আবেগে ডুবে নিশানের ফাঁদে পা দিয়ে বসেছিলো। ভাগ্যক্রমে জানতে পারলো সুমনা-ই নিশানকে তার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছিলো।যাতে তার বদনাম হয়।
ইয়াশা নিজের মোটা অঙ্গে পুনরায় চোখ বুলিয়ে দৃঢ় কন্ঠে সুর তুলে বলল,
–” ভ্রামন কী আর হাত বাড়ালে চাঁদের দেখা পায়।”
ইয়াশা উঠে দাঁড়ালো।ভাবলো নওশাদ যদি সত্যিই তাঁকে ফাঁদে ফেলতে আসে তাহলে এর জন্য চরম মূল্য চুকাতে হবে তাকে।নিজেকে শক্ত খোলসে আঁটকে পা-জোড়া নওশাদের কক্ষের দিকে বাড়ালো। ইয়াশা রুমে এসে দেখলো রুম ফাঁকা। নওশাদ নেই।ওয়াসরুমের দরজাও খোলা। ইয়াশার ভ্রু-জোড়া এক করে কিছু ভাবলো।এরপর ছাদে গেলো।সবখানে খোঁজে নওশাদের একটা চিহ্ন ও পেলোনা সে। হুঁট করে ইয়াশা নিজের ভেতর খারাপ লাগা অনুভব করলো। অপরাধবোধ থেকে হয়তো ভাবলো। নিজের রুমে ফিরে বই মনোনিবেশ করতে পারলো আর। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দেখলো চা একদম ঠান্ডা শরবতে রূপান্তরিত হয়েছে।
ফেরার পথে নওশাদকে দেখো চলন্ত গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লেন ইউসুফ সাহেব। আশেপাশে তাকিয়ে রাস্তার এপার থেকে অপারে চলে যান তিনি।মাথা নিচু করে আপনমনে হাঁটছিলো নওশাদ।সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে চাইলো। ইউসুফ সাহেবকে দেখে থমথম মুখে ম্লান হাসি দিলো নওশাদ। নওশাদের ম্লান হাসিটা ইউসুফ সাহেবের কেমন যেনো খটকা লাগলো। উনি বললেন,
–” কী ব্যাপার নওশাদ কোথায় যাচ্ছো?”
নওশাদ হাসার চেষ্টা করে বলল,
–” বাড়ি চলে যাচ্ছি আঙ্কেল।”
ইউসুফ সাহেব হালকা হেসে বললেন,
–” ওহ! তাহলে বাড়ির কথা মনে পড়েছে।”
নওশাদ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
–” মাফ করবেন আঙ্কেল আমি মিথ্যে বলেছিলাম।”
ইউসুফ সাহেব বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,
–“মানে? কী মিথ্যাে বলেছিলে?”
নওশাদ পিচডালা রোডের দিকে দৃষ্টি ছুঁড়লো। পূনরায় ইউসুফ সাহেবের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে,
–” আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি আঙ্কেল। আপনাদের বাড়িতে যাওয়ার মূল কারণ ছিলো ইয়াশ- এর বিয়েটা ভাঙা। কিন্তু সে নিজেই চায় এই বিয়েটা হোক। আমি আর বাঁধা দিবো কেন?
ভালো থাকবেন আঙ্কেল আসছি।”
ইউসুফ সাহেবের চোখোমুখে আজ রাজ্যের বিস্ময় চেয়ে গেলো।এতোটা অবাক কখনো হতে হয়নি উনাকে।এই ছেলের জন্য আজ উনি বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন।অকস্মাৎ নওশাদের হাত ধরে ফেলেন ইউসুফ সাহেব,মুখ ফসকে একটা কথা বেরিয়ে গেলো,
–” আমার মেয়ে তোমার কাছে ভালো থাকবে তার কী গ্যারান্টি?”
নওশাদ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
–” যার কাছে বিয়ে দিচ্ছেন,তার কাছেই বা ভালো থাকবে তার কী গ্যারান্টি আঙ্কেল?”
–” আমি তোমার কথা জানতে চেয়েছি নওশাদ।”
–” তাহলে বলবো সেটা আপনার এতক্ষণে বুঝে যাওয়া উচিত আঙ্কেল।”
ইউসুফ সাহেব ফিচেল হাসি হেসে বলে,
–” এতোটা সাহস যখন দেখিয়েছো,আরেকটু সাহস বাড়িয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যেতে
পারলে না?”
নওশার ইউসুফ সাহেবের হাসির ভঙ্গিতে মিলিয়ে হেসে জবাবে বলে,
–” আমি কাওয়ার্ড নয় আঙ্কেল।”
–” আচ্ছা বুঝলাম,তবে ব্যর্থ প্রেমিকের পরিচয়
দিয়ে তাহলে পালাচ্ছো কেন?”
ইউসুফ সাহেব মূলত নওশাদের ধৈর্য শক্তির পরীক্ষা নিচ্ছেন।নওশাদকে রাগিয়ে দিতেই এসব বলছেন।
নওশাদের সহজ গলায় স্বীকারোক্তি,
–” আমাদের মধ্যে প্রেম হয়নি আঙ্কেল। তাই, আমাকে ব্যর্থ প্রেমিক বলবেন না। আমি ইয়াশ- কে ভালোবাসি, সম্পূর্ণ একতরফা।”
একটু পর থেমে পুনরায় নওশাদ বলল,
–” আমি কাপুরুষ নয়,ব্যর্থ প্রেমিকও নয় আর না কোথাও যাচ্ছি।আমি এখন আপনাকে এবং আপনার মেয়েকে সময় দিচ্ছি ভাবার জন্য। আপনার মেয়ের মাথায় গিলু কম। দেখি কিছুটা গিলু বাইরে থেকে আপডেট করা যায় কি-না?”
ইউসুফ সাহেবের চোখ ছানাবড়া। এতক্ষণ ধরে যে একটা ছেলে নির্ভয়ে,সংকোচহীন হয়ে নিজের মেয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে ফেললো।শুধু তাই নয় নিজেকে আঘাত করে,চোখে চোখ রেখে নিজের দোষ স্বীকার করে মাফ চাইলো। এত নিঁখুত ব্যাক্তিক্তের ছেলেও হয়?দেখতে বৃত্তবান পরিবারের ছেলে মনে হয়,আচার-আচরণ ও বেশ মার্জিত।তবে কী নওশাদ-ওই সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ যার জন্য আমার মেয়েকে এতো উপেক্ষিত হতে হয়েছিলো? নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন রাখলেন ইউসুফ সাহেব।রুমাল দিয়ে ঘর্মাক্ত কপাল মুছলেন।মনেমনে অন্যরকম একটা জঠিল সিদ্ধান্ত নিতে নিতে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলেন।
সন্ধ্যা সাতটা||
শাড়ির দোকানে বসে শাড়ি দেখছেন জয়নাব বেগম। একবার ইয়াশার দিকে তাকাচ্ছেন তো একবার শাড়ির দিকে। মোটকথা উনি এমন একটা শাড়ি খুঁজছেন যে শাড়িতে ইয়াশাকে মুড়িয়ে নিলে দেখতে অপ্সরী ন্যায় লাগবে। জাবির বিরক্তিমুখে অল্পস্বল্প অধরে হাসি এঁটে তনয়া আর আরিফার সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। সুমনা দৃষ্টি অসহ্যকর হিংসেই ভরপুর। সে সহ্য করতে পারছেনা। ইয়াশার সুখটা তার জন্য চক্ষুশূল। পরিবারের বড় নাতনি হওয়ায় তার আদরের শেষ ছিলোনা।
ব্যাঘাত ঘটলো ইয়াশার মতন নরম তুলতুলে এক পুতুল জন্ম নিয়ে।তার তুলুর ন্যায় মসৃণ গোলপি অঙ্গ সবাইকে আকর্ষিত করতো।সবার নজর তখন ইয়াশার প্রতি ছিলো। শ্যামবর্ণের সুমনা এসব টের পেয়ে ছোট্ট মনে হিংসে পুষে ফেলে।সেই হিংসে এখনো বিদ্যমান।
অনেক্ষণ পর ইয়াশার চোখ আঁটকে যায় ঝলমল করা মেহেরুন রঙা বেনারসি শাড়ির উপর। যার পাড় সোনালি স্টুনের কাজ। মুগ্ধ চোখে চেয়ে হাত বাড়িয়ে সেটা স্পর্শ করলো ইয়াশা।জয়নাবও ইয়াশা পছন্দ করা শাড়িটির দিকে তাকালো। জয়নাব বেগমের চোখ ভরে যায় এতে সুন্দর শাড়ি দেখে। উনি কিছু বলতে যাবেন তার পূর্বেই সেল্সম্যান বললেন,
–” স্যরি ম্যাম! এই শাড়িটি সেইল হয়ে গেছে।আপনি অন্য শাড়ি দেখুন।” বলেই অন্যসাইডে রেখে দিলেন। কিন্তু ইয়াশার বেহায়া দৃষ্টি সেই শাড়িতে আঁটকে রয়।মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় তার।এমনিতেই আজ মনটা আগে থেকে খারাপ ছিলো।এখন সেটা আরে একগুণ বাড়লো। জয়নাব বেগম ইয়াশার মুখ দেখে কষ্ট ফেলেন। শাড়িগুলে সরিয়ে বললেন লেহেঙ্গা দেখাতে। মিনু আরা ইয়াশাকে বলল,
–” ইয়াশা মা আমার মন খারাপ করিস না।বাকিগুলে দেখ তো।”
জয়নাব বেগম একটা লেহেঙ্গা নিয়ে ইয়াশাকে ট্রায়াল রুমে যেতে বললেন।কিন্তু ইয়াশা তাতে যেতে মন চাইছিলোনা।আবার না করাও সম্ভব না। অগত্য ওকে যেতে হয়। কিন্তু ট্রায়াল রুমে ঢুকার পর ঘটলো অদ্ভুত ঘটনা।ইয়াশা নিজে দরজা আঁটকানোর জায়গায় বাইরে থেকে কেউ একজন দরজাটা আঁটকে দিলো। ইয়াশা ভয়ের চোটে কেঁদে উঠে। মনে মনে সুমনাকে কয়েকটা গালি দেয়।এ কাজ সুমনা ছাড়া আর কারোর পক্ষে করা সম্ভব নয়।
(চলবে)
‘অফুরন্ত প্রণয়’
#তারিন_জান্নাত
১৪.
ট্রায়াল রুমের দরজা আঁটকে লাইট বন্ধ করে পৈশাচিক হাসি দিয়ে পিছুন ফিরলো সুমনা।তাৎক্ষণিকভাবে তার ডান গালটায় এক পুরুষালি বলিষ্ঠ হাতের চড় পড়ে। মাথা তুলে আগুন্তকটির দিকে তাকালো সুমনা।রেগে ঝাঁঝালো গলায় বলে,
–” আপনি..!
সুমনাকে বলতে না দিয়ে আগুন্তকঃ আবারও কষে চড় লাগালো তার বাম গালে।সুমনার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠে।চোখমুখ অন্ধকার হয়ে আসে তার।এমন শক্তহাতের চড় জীবনেও খায়নি সে।চড় দুটো খেয়ে নাক দিয়ে সর্দি ঝড়তে লাগলো তার। সুমনার মুখে দিকে চেয়ে নওশাদে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,
— ” আরেকটা চড় দেওয়ার আগে দরজা খুলো।”
সুমনা ভয়ে নেতিয়ে উঠে।কাঁপা হাতে দরজা মেলে দিলো। নওশাদের দৃষ্টি স্থির হয়। কান্নারত যুবতির দিকে পলকহীন ভাবে চেয়ে থেকে কিছু একটা ভাবে নওশাদ। খোলা দরজার বাইরে সুমনাকে দেখে রেগে গেলো ইয়াশা।নিজের ক্রোধ সংবরণ করে পাশের পরিচিত যুবকের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।শরীর বেয়ে এক শীতল অনুভূতি চেয়ে যায় ইয়াশার।মাস্ক,আর ক্যাপের মধ্যমণি টানা ছোট চোখজোড়া চিনতে এখন তার বেগ পেতে হয়না। রাগের মধ্যে অদ্ভুত স্বস্তি পায় সে। মন বাজেভাবে খারাপ ছিলো। একটা মানুষের চলে যাওয়া এতোটা পুড়াবে সে তা কোনকালেই ভাবেনি। নওশাদের চোখাচোখি হতেই ইয়াশা ঘাবড়ে যায়।রক্তলাল চোখ নওশাদের।যেনো এখুনি রক্তা ঝড়বে।নওশাদ ইয়াশার ধূসর আঁখিদুটির চাহনি উপেক্ষা করে রাগান্বিত দৃষ্টি নিয়ে চলে যায়।
কেনাকাটা মাঝে ইউসুফ সাহেব কেমন যেনো নিশ্চল হয়ে বসে রইলেন। মন-মেজাজ এখন তুমুল যুদ্ধে। ইউসুফ সাহেবে দোনামোনায় ভুগছেন।মেয়ের জন্য কে আসলে যোগ্য। মন,মস্তিষ্ক উভয়ে বলছেন নওশাদ যোগ্য। আর বাস্তবতা? সে এখন জাবিরের উপর আবদ্ধ।আরিফা,আর তনয়াকে মিনু আরার সাথে দিয়ে কিছু জিনিস কিনতে পাঠিয়ে দেন ইউসুফ সাহেব।এরপর গম্ভীর গলায় জয়নাব
বেগমকে বললেন,
–” আপা আপনাদের কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”
ইউসুফ সাহেবের কথায় জাবির পাঞ্জাবি থেকে নজর সরিয়ে ইউসুফ সাহেবের দিকে তাকালেন।
ইউসুফ সাহেবের গলাটা আঁটকে আসতে চাইছে।আঁড়চোখে সেল্সম্যানটির দিকে তাকালেন।সেল্সম্যান নিজের কাজে ব্যস্ত। অকস্মাৎ নওশাদের টান টান শ্বেত মুখশ্রী ইউসুফ সাহেবের মানসপটে ভেসে উঠলো। নাওশাদের তখনকার নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি অনুসরণ করলেন,এরপর বললেন,
–“আপা আমি জানিনা কথাটা এখানে বলা উচিত কি-না তবে আমাকে বলতেই হবে।এটা আমার মেয়ের জীবন।সেটাকে আমি এভাবে জলে ভাসিয়ে দিতে পারছিনা।”
জয়নাব বেগম ভ্রু কুঁচকে বললে,
–” ইউসুফ ভাইয়া আপনি কী বলতে চাইছেন নিঃসংকোচে বলেন।”
ইউসুফ সাহেব নওশাদের মতো করে
সহজ কন্ঠে বললেন,
–” মাফ করবেন আপা। আমার মেয়ের বিয়েটা আমি আপনার ছেলের সাথে দিতে পারছিনা।সে অন্যএকজনকে ভালোবাসে।আমি জেনশুনে আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করতে পারিনা আপা।”
জয়নাব বেগম জাবিরের মুখের দিকে তাকালেন।জাবিরের মুখে মৃদু খুশীর আভাস দেখা যাচ্ছে। উনি চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চোখেমুখে কঠিন্যভাব তুলে জাবিরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–” জাবির আমি ইউসুফ ভাইয়ের সাথে সম্মন্ধ রাখতে চাই।”
এরপর ইউসুফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–” আপনার তিন ভাতিজির মধ্যে যে কোন একজনকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন।ইয়াশা আমার পছন্দের ছিলো। এবারের পছন্দটা জাবির নিজেই করুক। তবে দোয়া রাখবো ইয়াশা মা যেনো ভালো থাকে।”
মায়ের কথায় জাবিরের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।বাকি তিনজনের মধ্যে আরিফার নামের মেয়েটিই সুন্দর। সুমনাও মোটামুটি বলা চলে।বাকিজনটার মুখে শ্রী নেই বললেই চলে।জাবিরের দ্বিধান্বিত রূপ দেখে শ্লেষাত্মক হাসি হাসলো জয়নাব।ছেলে উনার সৌন্দর্যের পূজারি।দেখা যাক কী হয়।
মিনু আরা আসার আগে আগেই নিজেদের স্বাভাবিক রূপ ধারণ করলেন উভয়ে।পরিস্থিতি পূর্বেব মতোই শান্ত।যেমনটা হওয়ার তেমনটায় হবে সব।শুধু মানুষটা বদলাতে যাচ্ছে শুধু।মিনু আরা আসলেই জয়নাব তাগড়া দিলেন বাকিসব কেনাকাটা সম্পূর্ণ করার।ইউসুফ সাহেব ব্যাপারটা বাকিদের অগোচরে রাখলেন।
সুমনাকে এবারের মতো ছাড় দিলো ইয়াশা।যতোটা রাগ সুমনাকে দেখে লেগেছিলো,নওশাদকে দেখে তা নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়। ইয়াশা আশেপাশে উঁকিঝুঁকি দেয়। আরেকটু যদি দেখতে পেতো নওশাদকে।হয়তো মনটা ভালো হয়ে যেতো তার। ইয়াশা জয়নাব বেগমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।লেহেঙ্গাটা সাইডে রেখে বলল,
–” আন্টি লেহেঙ্গা না,শাড়ি পড়তে চাই আমি।”
জয়নাব বেগম ইয়াশার মুখের কৃত্রিম হাসিটা দেখে মাশাল্লাহ বললেন। ইয়াশার চোয়ালে হাত রেখে বলে,
–” তোমার যেটা পছন্দ সেটা নেওয়া হবে।”
কেনাকাটার পর্ব সম্পূর্ণ শেষ। রাত এগারোটা।জয়নাব বেগম জাবিরকে নিয়ে চলে যায়। ইউসুফ সাহেব শপিংমনের বাইরে এসে আশেপাশে উঁকি দিলেন।বারবার উনার মনে হচ্ছে নওশাদ এখানে কোথাও আশেপাশে আছে। ইউসুফ সাহেব হঠাৎ পেছনে তাকালেন।তখনি উনার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।নওশাদ এগিয়ে এসে মিনু আরাকে সালাম দিলেন।উনি সালাম নিয়ে বললেন,
–” তোমার ঘুরাঘুরি শেষ বাবা।আসলে আমাদের আজ হঠাৎ কী হলো জানিনা।সবাই একসাথে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।ফলে তোমার খবর রাখতে পারিনি বাবা।”
নওশাদ বলে,
–” ব্যাপার না আন্টি।যাওয়ার সময় আঙ্কেলকে
বলে গিয়েছিলাম।”
হঠাৎ নওশাদের চোখ সুমনার উপরে পড়লো।
সুমনা বিস্ফোরিত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
তারমানে তখনকার চড়টা তাহলে নওশাদ মেরেছিলো তাকে।ভীত চোখে চেয়ে থাকলো।
ইউসুফ সাহেব নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
–” বাসায় চলো নওশাদ।”
নওশাদ কিছু বললনা।
আরিফা এগিয়ে এসে বলল,
–” ভাইয়া আপনার হাতে এটা কিসের ব্যাগ?”
নওশাদ আলতো হেসে সূগভীর দৃষ্টিতে শপিং ব্যাগটার দিকে তাকালো।বলল,
–” আমার শার্ট!”
বলতে বলতে ইউসুফ সাহেবের হাত থেকে
অর্ধেক ব্যাগ নিতে চাইলো।উনি চোখ দিয়ে ইশারায়
না প্রকাশ করলেন।নওশাদ হালকা কেশে বলে,
–” ইট’স ফর্মালিটি আঙ্কেল! ”
(চলবে)