অন্য রূপকথা,প্রথম পর্ব – শোভনের জীবনে অপু

অন্য রূপকথা,প্রথম পর্ব – শোভনের জীবনে অপু
মৌপর্ণা

দিন দুয়েক হলো শোভন এসে উঠেছে তার বরাদ্দ সরকারি কোয়াটারে। হুড়হুড় করে কেটে গিয়েছে দুটোদিন শুধু জিনিস পত্র গুছিয়ে উঠতে এবং আসে পাশের চারপাশ টা বুঝে নিতে। আর পাঁচটা ব্যাচেলর ছেলের চেয়ে শোভন অনেকটাই বেশি গোছানো কিনা!

আজ রাতে আবার গোপাল স্যারের বাড়িতে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোপাল স্যার, কাকদ্বীপ কলেজের অনেক পুরোনো প্রফেসর, কিছু না হোক এই কলেজে তাও নেই নেই করে ১৫ বছর তো বটেই…….

আর সেখানে শোভন – কালই তার প্রথম দিন নতুন চাকরির……..

যদিও কলকাতার এক নামকরা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছটা বছর কাজ করেছে শোভন – অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এর পদে এবং যথেষ্ট নাম আর খ্যাতিও পেয়েছে তাতে, তবু…….. কাল তো সত্যি সত্যি তার সদ্য জয়েন করা – স্বপ্নের সরকারি চাকরির প্রথম দিন, কাজেই প্রস্তুতি চলছে বিকেল থেকেই, আর প্রস্তুতি অপ্রয়োজনিও হলেও এটাতো সত্যি যে সারাদিন পড়াশোনা করাটা একটা দারুন উপায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার………

“মন ও মস্তিস্ক কে সারাদিন যতটা পারবেন ব্যস্ত রাখবেন, এটাই একমাত্র উপায় মিস্টার ভৌমিক আপনার ফেলে আসা কষ্ট গুলোকে এড়ানোর….
সময়ের সাথে সাথে দেখবেন সব কষ্টই কমে আসবে আসতে – আসতে….
সময় খুব বলবান জানেন তো, এই মুহূর্তে একটা নতুন চাকরি, নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ খুব দরকার ছিল আপনার জীবনে…….
আই মাস্ট সে – জীবন আপনাকে একটা নতুন সুযোগ দিয়েছে মিস্টার ভৌমিক……সব নতুন করে শুরু করুন! ”
– সাইকোলজিস্ট অম্লান চৌধুরীর শেষদিনের কথা টা সারাদিনই বাজতে থাকে শোভনের কানে ……….

*************************************************

মিনিট দশেক হলো, শোভন ফিরেছে গোপাল স্যারের ঘর থেকে রাতের খাবার পর্ব সেরে। উফফ কি অস্বস্তি !
ভেবেছিলো কলেজের পুরোনো এবং অভিজ্ঞ স্যার, অনেক কিছু জানা যাবে কলেজের ব্যাপারে, কিন্তু কোথায় কি! গোপাল স্যার তো প্রায় জোর করেই শোভন কে বসিয়ে রাখলেন তার একমাত্র কন্যার ঘরে, কি যেন নাম মেয়েটির – সে যাই হোক শোভনের তাতে সত্যি বিশেষ কিছু একটা এসে যায়না……
ভাগ্গিশ মেয়েটার সাবজেক্টে অংক নেই, নয়তো গোপাল বাবু বোধহয় রোজ জোর করেই ডেকে পাঠাতেন শোভন কে অংকের নাম করে।

*************************************************

ঘড়িতে ঠিক দশটা কুড়ি, খানিক আনমনা হয়ে শোভন এসে দাঁড়ালো ব্যালকনি তে, মৃণালিনী দেবী – মানে শোভনের মা চলে যাবার পর থেকেই দুএকটা সিগারেট খাবার অভ্যেস তৈরী হয়েছে শোভনের…….

ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে সিগারেটে টা ধরাতেই যাবে, তখনি শোভন দেখলো একটা ছেলে, বছর তেরো কি চোদ্দ হাতে একটা বড়ো প্লাষ্টিক নিয়ে এগোচ্ছে কোয়াটারের দিকে, প্লাস্টিকের ভেতরে নেই-নেই করে চার পাঁচটা কাগজের ঠোঙা…..

আরো মিনিট দুয়েক শোভন চেয়ে রইলো ছেলেটার দিকে, মন দিয়ে শুনলো কোয়াটারের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা কেয়ারটেকার মহেন্দ্রর সাথে ওই ছেলেটির কথা বার্তা, সবটাই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল শোভনের কাছে।

বছর তেরো বা চোদ্দোর ছেলেটির নাম অপু, অপু কেয়ারটেকার মহেন্দ্রর সুপুত্র, হাতের প্লাস্টিক ব্যাগে রয়েছে রাতের খাবার রুটি – এখানকার স্যার ম্যাডামদের জন্যে।

*************************************************

ইতিমধ্যেই কেটে গিয়েছে আরো সাড়েপাঁচটা মাস, কিন্তু এই সাড়েপাঁচ মাসে, কোনো কিছুতেই সেরকম শান্তি পাইনি শোভন! তার জীবনে বন্ধু বলতে কেবল একজন – কেয়ারটেকার মহেন্দ্রর ছেলে অপু……

স্বপ্নের চাকরি পেয়েও ঠিক সন্তুষ্ট নয় শোভন, অংকের গ্রাডুয়েশন ক্লাসে এমনি খুব কম ছেলেমেয়ে আবার তার ওপর প্রতি ব্যাচে হাতে গোনা ঠিক চার পাঁচ জন কে ছাড়া পড়াশোনায় মন নেই কারুর, শোভন এমনি খুব বন্ধুত্বপূর্ণ শিক্ষক হলেও আদতে খুব কড়া, ক্লাসে দেরি করে আসা বা ঘরে করতে দেওয়া অংক না করে আনলে আগে ঢুকতেই দিতোনা কাউকে, কিন্তু এখানে সেই নিয়ম শুরু করলে তো ওই চার পাঁচ জন ছাড়া কেউ কোনোদিনই ক্লাস করতে পারবেনা শোভনের!

তারপর গোপাল স্যারের লবি বাজি তো আছেই এই কলেজে, প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে কলেজের বেশ কিছু প্রফেসর সারাদিন শোভনের দুর্বলতা খুঁজে বেড়ায় সবসময়, এর মধ্যেই খুঁজে খুঁজে ভালোই বের করেছে দুর্বলতা – শোভন খুব হাই লেভেলে গিয়ে বোঝায় বলে ছাত্র ছাত্রী কম ক্লাসে, অথচ শোভন নিজেই তাদের ঢুকতে দেয়নি দেরি করে আসার জন্যে বা বাড়িতে করতে দেওয়া অংক না করার জন্যে।

গোপাল স্যারের এই আচরণের কারণ কেবল একটাই – শোভন পরিষ্কার করে একদিন বলে দেয় – প্রতি শনি ও রোববার শোভন গোপাল স্যারের বাড়িতে লাঞ্চ ও ডিনার করতে পারবেনা আর অকারণে এরকম দুমদাম করে তার মেয়ের হাত দিয়ে যেন খাবার না পাঠায় শোভনের ঘরে, এটাই শোভনের একমাত্র অপরাধ!

এদিকে কোয়াটারের বাকি কিছু স্যারদের সাথেও ঝামেলা শুরু হয়েছে মাস চারেক হলো……..

শোভন আসার আগে বেশতো সবাই অপু কে দিয়ে ঘর সংসারের টুকি টাকি জিনিস, পাড়াঘরের দোকান থেকে টুকটাক বাজার, আবার ইলেকট্রিসিটি বিল দেওয়া থেকে শুরু করে, রেশন আনতে যাওয়ার মতো সব ছোট বড় কাজ করিয়ে নিতো, মহেন্দ্র কে আবার গেটে থাকতে হয় কিনা সারাক্ষণ……

কিন্তু শোভন আসতে না আসতেই নতুন নিয়ম চালু করলো – কোয়াটার গিন্নিদের যা ছোট বড় কাজ সেগুলো হয় নিজেদের করে নিতে হবে বা তারা চাইলে মহেন্দ্র কে দিয়ে একটু আধটু কাজ করাতে পারে, কিন্তু অপু কে দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবেনা! অপুর তো এখন লেখাপড়া, খেলাধুলা করার বয়েস!

এতো লড়াই করেও বাঁদর ছেলে কে পড়তে বসায়, কার সাধ্যি! কলেজ শেষে শোভন কে দেখলেই দৌড়…………
শোভন আবার ধরে বেঁধে পড়তে বসিয়ে দেয় যদি!

*************************************************

তারপর ছুটির এক মনখারাপের শব্দহীন সন্ধ্যেবেলায় গঙ্গার ধারে হাঁটতে গিয়ে, দেখা মেলে বাঁদর ছেলের –
“অপু, ওই অপু………আজ পড়তে বসতে বলবোনা রে! আজ মনটা বড্ডো খারাপ জানিস….এদিকে আমার কাছে একটু আসবি?”

দূরের কোনো এক লাইটপোস্টের টিমটিমে আলোয় অপু দেখলো শোভনের ভেজা দুটো চোখ, খুব অবাক ভাবে চেয়ে রইলো শোভনের দিকে! শোভন কে এতদিন শুধু প্রতিবাদ করতে দেখেছে সে, চঞ্চল দুটো পা থমকে দাঁড়ায় আর এক নির্মম সরল গলা শোভন কে জিজ্ঞেস করে –

“কি হয়েছে শোভন দা? ওরা কেউ তোমার সাথে কথা বলেনা বলে তুমি কাঁদছো?”
ওরা বলতে বোধহয় অপু বুঝিয়েছিল কোয়াটারের স্যার – ম্যাডাম দেড় কথা……………

“ধুর পাগল! ওরা কথা না বললে আমার বয়েই গেলো!” বলতে বলতে শোভন আলতো করে ডান হাত টা রাখলো অপুর মাথায়…..

এভাবেই আলাপ শুরু হয়েছিল বছর আঠাশের শোভনের সাথে চোদ্দো বছরের অপুর!

মাস দুয়েক পর শীত কালের কোনো এক সন্ধ্যে বেলায়, মিড্ টার্ম পরীক্ষার খাতা দেখে, এক কাপ চা নিয়ে যখন শোভন বারান্দায় এসে দাঁড়ালো তখন ঘড়িতে প্রায় আটটা….
ডিসেম্বরের শেষ, পড়াশোনার চাপ অনেকটাই কম এই মরশুমে…..

বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে দেখলো পাড়ার কিছু ছেলে ছোঁকড়া ক্রিকেট খেলছে গলিতে। ব্যাটিং ক্রিজে বছর বাইশের অনির্বান, পাশের বাড়িতেই থাকে সে, কলেজে পরে, এক দুবার এসেছিলো শোভনের কাছে – অংক বুঝতে। ব্যাটসম্যানের দিকে চোখ রেখে একটা বড় চুমুক দিতেই যাবে কি কাপে, শোভন দেখলো বুলেটের মতন একটা বল ছুটে এলো অনির্বানের দিকে, অনির্বান বল না দেখেই ব্যাট চালালো হাওয়া তে, কেউ কিছু বোঝার আগেই বল টা ইনসুইং করে উড়িয়ে দিলো মাঝের উইকেট – ক্লিন বোল্ড! ব্যাটসম্যানের দিক থেকে সোজা নজর গেলো বোলারের দিকে – একি এতো অপু…………………………

ব্যাস! তারপরের দিনই ডাক পড়লো অপুর!

“কিরে! আমাকে বলিসনি কেন, এরম বুলেটের মতন বল করিস, কাল তো দেখলাম তোর বল কেউ দেখতেই পাচ্ছে না, ছটা বল ছয় রকম! অনুমান করাও অসম্ভব কোন বলটা কোন দিকে যাবে, আবার ব্যাটিং টাও বেশ ভালো! জানাসনি কেন এতদিন আমাকে?”

“তুমি তো অংকের মাস্টার মশাই, জোর করে ধরে বেঁধে অংক করাও রোজ! তুমি আবার ক্রিকেট বোঝো নাকি?”

“মারবো একটা ………অংকের মাস্টার তো কি? অংকের মাস্টার বলে কি গান, সুর কিছু বুঝিনা ?”

“গান!!! গান কথা থেকে এলো আবার?”

সত্যি তো আজ প্রায় বছর খানিক হলো সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছে, তাও চেয়েও কিছুতেই কেন সব ভুলতে পারেনা শোভন!

“ওওওওও শোভন দা! বলছি গান কথা থেকে এলো?”

“ক্রিকেটই তো বললাম! ছাড় এসব, তোর জন্যে ডিউস বল আনবো, তুই জানিস ওই বল এ ক্রিকেট খেলা হয়……”

“হ্যাঁ জানি, কিন্তু বাবা বলে তার তো অনেক দাম, তবুও তুমি আনবে?”

“হ্যাঁ আনবো, আর একটা ব্যাট ও আনবো ….তবে একটা শর্ত আছে!”

“কি শর্ত?”

“সকাল সন্ধ্যে নিয়ম করে পড়তে বসবি, আমি কলেজ থেকে ফিরে রোজ পড়া ধরবো, কিন্তু রোজ ভোরে তোর সাথে ক্রিকেট ও খেলবো…
আমি তোকে কথা দিলাম অপু, তুই ঠিকঠাক পড়াশোনা কর, আমি নিজে তোকে, ক্রিকেট কোচিং এ ভর্তি করে দেব….”

“এরম কোচিং হয় নাকি আবার?”

“হ্যাঁ হয়! এবারে বলতো আমার শর্তে তুই রাজি?”

“হ্যাঁ রাজি………”

এরপর থেকে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায় – শোভনের নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সাথী হয়ে উঠলো – অপু!
একসাথে সকালে ক্রিকেট প্র্যাক্টিস, তারপর অপু কে স্কুলে দিয়ে সোজা কলেজ, কলেজ থেকে ফিরেই, আবার অপু কে পড়তে বসানো, নিয়ম মাফিক পড়া ধরা, অংক কষা ইত্যাদি, আবার রাতে খাবার আগে, এক রাউন্ড বোলিং প্র্যাক্টিস….
হার ভাঙা খাটনির পর, রাতে খাবার খেয়ে আবার কলেজের পরীক্ষার খাতা দেখা, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বানানো কখনো সখোনো…….

“শোভন দা! তোমার খুব কষ্ট হয় না, দেখো তোমার চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে এসেছে, তবুও তুমি খাতা দেখেই চলেছো! শোনোনা শোভন দা, আর কলকাতায় ক্রিকেট কোচিং শিখতে যাবোনা ভাবছি! তোমার কত কত টাকা খরচা হচ্ছে বলতো, আর তারপর তোমার ছুটির দিন গুলোতে একটুও শান্তি পাওনা তুমি, আর তারপর স্কুলের সবাই তো বলে এসবে চ্যানেল না থাকলে…………..”

“একটা থাপ্পড় খাবি…….
তুই জানিস ওরা তোকে কোন স্টেজে খেলাচ্ছে?
তোর বয়েসী ছেলেরা তোর চেয়ে তিন ধাপ নীচে খেলছে …….আরে বছর দুয়েকের মধ্যে ইন্টার স্টেট খেলবি, মানে বুঝিস এসবের, আবার আমার জন্য চিন্তা ……আমার জন্যে চিন্তা না করে বোলিং কোচ কি শুধরোতে বলেছিলো সেইটা ভাব, মনে রাখবি ওই বল টাই তোর জীবন পাল্টে দেবে…..
আর মাধ্যমিক টাও দিতে হবে…….
মাঝ রাতে এটা বলতে এসেছে, বড় চিন্তা করার লোক জুটেছে আমার ……!”

অপু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে শোভনের টেবিলের সামনে, আর তারপর ঝড়ের মতন বেগে নীচে নেমে যায় সিঁড়ি দিয়ে………………………………

*************************************************

এই ভেবেই কেটে গেলো আরো দুটো বছর ………

আজ পূর্ণিমা, ঝকঝকে আকাশে চাঁদটা কে বেশ লাগছে গঙ্গার ধার থেকে, বাঁধানো ঘাটের এক কোনায় ফুরফুরে হাওয়া তে বসে শোভন আজ আবার বারেবারে আনমনা হয়ে যাচ্ছে………..

বিচ্ছুটা পরে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছে বলে আজ আসেনি প্র্যাক্টিসে, আর সেই জন্যেই আজ আরো একবার নিঃসঙ্গতা টুটি চেপে ধরেছে শোভনের, এদিকে ঘরে পরে আছে হাজার কাজ, কালকের পোশাক আইরন করা বাকি, রাতে খাবার খাওয়া বাকি, আর বাকি, বিচ্ছুটার হোমওয়ার্ক চেক করা……
কিন্তু আজ কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছেনা নদীর পার থেকে, বারেবারে চোখের সামনে ভেসে উঠছে মা, বাবা ও অন্বেষার মুখটা…..
আর মনে পড়ছে বিভিন্ন ছোট বড় ঘটনা, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে…..
আসতে আসতে চোখের জলে, সামনে টা ঝাপসা হয়ে আসছে……

“ভগবান! তুমি একসাথে একের পর এক সব কিছু কি ভাবে কেড়ে নিলে? আমার কি কিছুই প্রাপ্য নেই এই পৃথিবী থেকে?” – মনে মনেই যুদ্ধ করে চলেছে শোভন ভগবানের সাথে…..

শোভনের চিন্তা ভাঙলো চেনা গলার ডাকে – “শোভন দা, তুমি আমাকে না নিয়েই আবার একা একা এখানে এসেছো? ”

“………………উউফ এই বিচ্ছু, বাঁদর ছেলেটা একটু নিরালায় কাঁদতেও দেবেনা! আর আমায় মরতেও দেবেনা! কে জানে এই বিচ্ছুটা না থাকলে কবে আমি কি করে………….”

“ওওও শোভন দা….কি ভাবছো বলতোঃ জেঠিমনির কথা না জেঠুর কথা? নাকি তোমার সেই বান্ধবীর ………”

“খুব পেকেছিস জানিস তো! চল চল, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে এমনি, ঘরে অনেক কাজ পরে!”

“আমাকে কবে তোমার বান্ধবীর গল্প টা শোনাবে শোভনদা? জেঠু – জেঠিমনির তো কত গল্প শুনিয়েছো রোজ! কিন্তু অন্বেষা দিদির…”

“আমি তোকে বলেছি তো অপু, পরে একদিন বলবো সব! তুই যে বড্ডো ছোট অপু!”

“আমি এখন সাড়ে-ষোলো! পরের মাসে হায়দরাবাদ যাচ্ছি ক্রিকেট খেলতে বাংলার হয়ে, এবছর মাধ্যমিক দেব, আমি তবু ছোট তাইতো?”

শোভনের অস্থির মনটা শান্ত হয়েছে বেশ খানিকক্ষণ…ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা – অপুর কাঁধে হাতে রেখে বললো – “সত্যি অপু, তুই কত বড় হয়ে গিয়েছিস! আচ্ছা বেশ, বলবো পরে তোকে তোর অন্বেষা দিদির কথা…তবে আজ নয়….পায়ের ব্যাথা টা কম আছে একটু? দেখিস এরম দুমদাম পরে গিয়ে …………………………..
………………………………………………………….
………………………………………………………….”

*************************************************

“কিরে আমার পাশে এসে বসলি যে অপু? অপু ওখানে পুরো টীম একসাথে ……”

“এই শোভন দা, আমার খুব ভয় লাগছে! প্লিজ আমাকে তোমার পাশে বসতে দাও, এই সিটে যে আছে, কোচ বলেছে তাকে ম্যানেজ করে ওদিকে ব্যবস্থা করে দিয়েছে…. ”

“কিন্তু অপু…এরকম টীম ছেড়ে….”

“উফফ ছাড়ো না শোভনদা! আমার সত্যি খুব ভয় লাগছে….”

“কিসের ভয়? দিন রাত এক করে প্রাকটিস করেছিস, কোচ এতো ভালো …..”

“আরে ম্যাচের ভয় নয়, এই আকাশ পথে ভয়! সত্যি সত্যি আর ১০ মিনিট পর আমরা আকাশে উড়ে যাব শোভনদা? কিরকম বন্ধ সব কিছু…..”

শোভন হেসে ওঠে হো হো করে………….
হাসি কোনোরকমে থামিয়ে বলে –
“কিসের ভয় তোর, তোকে প্লেন চালাতে হবেনা, শুধু সিট বেল্ট লাগিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে হবে ঘন্টা দুয়েক” বলেই আবার হাসতে শুরু করে…..

“এই শোভন দা, আমার শরীরটা কেমন হালকা হয়ে যাচ্ছে! আমি সত্যি বলছি শোভন দা, গা হাত পা ছেড়ে দিচ্ছে সব আর….”

“সবে টেক অফ করলো অপু! এরম ছটপট করছিস কেন, এরম কাঁদো কাঁদো মুখ কেন বানিয়ে রেখেছিস, রঞ্জি প্লেয়ার ফ্লাইট উঠে ভয়ে কাঁদছে, লোকে শুনলে কি বলবে বলতো – অপু…….. ওহঃ ওরম চোখটা বন্ধ করার কি হলো? আচ্ছা, আজ অন্বেষা আর আমার গল্পটা শুনবি?”

অপু চোখ দুটো খুলে, তাকালো শোভনের দিকে আর তারপর বললো – “শোভন দা, তুমি তোমাদের গল্পটা বলবে?”

শোভন অপুর কাঁধে ডান হাতটা রেখে ফিরে গেলো সাত বছর আগের এক ক্লান্ত দুপুরে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here