অন্ধকার পল্লী,Part:1,2,3
Tabassum_Riana
Part:1
ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে।রাস্তাটা পানিতে ডুবে যাওয়ার অবস্থা।ছাতা হাতে অবনী দাঁড়িয়ে আছে।আজ বাস রিক্সা কিছুই পাচ্ছেনা ও।তাই অগত্যা হাঁটতে শুরু করলো।বাড়ি বেশ দূরে। হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয় তাহলে কি করবে এখন ও?হঠাৎ একটা গাড়ি দেখতে পেলো।গাড়িটা ওর দিকেই আসছে।কিছুনা ভেবে হাত নাড়তে লাগলো অবনী।গাড়িটা থামেনি বেশ দূরে চলে গেলো।কি করবে ও?ঠিক তখনই গাড়িটা আবার পিছে এলো। ওর কাছে এসেই থামলো।গাড়ীর দরজাটা কে জানি খুলে দিলো।কিছু না ভেবেই অবনী ঢুকে পড়লো।একজন ভদ্রলোক।চোখে সানগ্লাস,ব্লাক শার্ট আর ব্লু জিন্স প্যান্ট।অবনীর দিকে একটি রুমাল ধরলো লোকটা।অবনী কিছু না ভেবে রুমাল টা নিয়ে ওর হাত মুখ মুছতে লাগলো।
কই যাবেন আপনি?লোকটা বলে উঠলো।অবনী লোকটার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল শ্যাওলা পাড়া।ওহ।লোকটা কিছু না বলে গাড়িতে স্টার্ট দিলো।গাড়ি চলতে লাগলো।অবনী জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।বৃষ্টিতে বড়ই সুন্দর দেখাচ্ছে।হাত বের করে বৃষ্টির পানির ফোঁটা গুলো স্পর্শ করছে অবনী।
আফিন পাশে বসা অপরিচিতার দিকে এক নজর তাকালো।মেয়েটার মাঝে কি যেন একটা আছে,মনোমুগ্ধকর একটা জিনিস।বৃষ্টির পানি মুখে পড়তেই চোখ বন্ধ করে হাসা,হাত বাহির করে বৃষ্টি স্পর্শ করা সত্যিই অদ্ভুত এক মোহ কাজ করছে অাফিনের মাঝে।হাত ঢুকান অন্য গাড়ি আসলে এ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে।অাফিন সামনে তাকিয়ে বলে উঠলো।অবনী অাফিনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো।তারপর হাত ঢুকিয়ে নিয়ে বৃষ্টি দেখায় মনযোগ দিলো।রাস্তা যেন শেষই হচ্ছেনা।অজানার পথে চলছে গাড়িটা।ঘন্টা খানিক পর অবনীর বাসার সামনে গাড়ি এসে থামলো।অবনী বেরিয়ে গিয়ে সামনে চলে গেলো।অাফিন ভ্রু কুঁচকে অবনীর যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।কেমন মেয়ে একটা বার থ্যাংকস ও দিলো না।
অবনী পিছনে ফিরে এলো।গাড়ির জানালায় নক পড়ায় জানালা খুলে দিলো অাফিন।ইয়েস অাফিন বলে উঠলো।থ্যাংকস সাহায্য করেছেন তাই।মুচকি হেসে বলল অবনী।ওয়েলকাম। জানালা লাগাতে লাগাতে বলল আফিন।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।অবনী ঘরে ঢুকে পড়লো।অবনী মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।বাবা রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার,মা গৃহিনী আর ছোট বোন আফসানা ক্লাশ নাইনে উঠলো সবে।অবনী একটা পাবলিক ভার্সিটিতে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে।দুটো টিউশনি ও করছে কারন বাসার খরচ চালাতে হয়।অামেনা বেগম অবনীর দিকে এগিয়ে এলো। কিরে মা পুরো ভিজে গেছিস?আরে মা ছাতাটা মাঝখান দিয়ে ফুঁটো হয়ে গেছে।ছাতা বন্ধ করে বলে উঠলো অবনী।
ওহ, যাহ গোসল সেরে নেয়।নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।একনাগাড়ে বলে উঠলেন আমেনা বেগম।জি মা। রুমের দিকে এগোতে এগোতে বলল অবনী।
ড্রাইভ করছে আর পাশের সিটে তাকাচ্ছে অাফিন।পাশে তো মেয়েটি বসে ছিলো।
অাফিন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী প্রয়াত শফিক খানের একমাত্র সন্তান।বর্তমানে ব্যাবসায়ের সকল দায়িত্ব অাফিন সামলাচ্ছে।বেশ লম্বা ফর্সা আফিন।দেখতে হিরোদের হার মানাবে।কোন কিছুরই অভাব নেই ওর জীবনে শুঊু আছে মায়ের অভাব,মায়ের ভালোবাসার অভাব।বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো আফিন।একজন লোক এসে দরজা খুলে দিলো।
স্যার ফ্রেশ হয়ে নিন।আপনার খাবার গরম করতে বলছি।কাজের লোকটা বলে উঠলো।
হুম।আফিন ভিতরে চলে গেলো।
অবনী খাবার খেতে বসেছে সামনে বাবা বসে আছে।ভ্রু কুঁচকে রহমত সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।একটু কেঁশে বলতে শুরু করলেন রহমত সাহেব পড়াশুনার আর কতোবছর বাকি?
৩বছর বাবা মাথা নিচু করে বলল অবনী।
হুম।তোর একটা ছবি দিস ভালো দেখে।রহমত সাহেব মুরগীর হাড়ে কামড় দিয়ে বললেন।
কেন বাবা।অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।
চলবে
#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:২
,,,,,,,,,,,,,,,,সকাল থেকেই মাথাটা বড় ব্যাথা করছে অবনীর।অবশ্য বাসের ঝাঁকুনি অসহ্য গরমের কারনেই এমন হচ্ছে।ক্লাশে বসে মন দিতে পারছেনা অবনী।পাশে বেস্টফ্রেন্ড অন্তরা সে কখন থেকে বক বক করেই যাচ্ছে।অবনী জানিস তো তোর রাফসান ভাই কেমন?ওর সাথে দেখা করতে গেলে ফোন টা পর্যন্ত টাচ করতে দেয়না। সরি রে আমি তোর ফোন ধরতে পারিনি রাগ করিসনা।আর কখনো হবেনা।একনাগাড়ে বলতে থাকে অন্তরা।আরেনা রাগ করিনি।আসলে এতো বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই কল দিচ্ছিলাম আরকি। যাই হোক মাথাটা পেইন করছে।চল কফি খেয়ে আসি।বলে উঠে সামনে এগোয় অবনী।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,কফিতে চুমুক দিতে দিতে কোথাও যেন হারিয়ে গেছে আফিন।আনমনেই কি যেন ভাবতে থাকে।বৃষ্টি পড়ছে।আফিন রাস্তা দিয়ে একাএকা হেঁটে চলছে।হঠাৎ কাউকে দেখে থেমে যায়।সামনে জলপরী দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে।সেই হাসি বড় রহস্যময়।সব উলটপালট করে দিচ্ছে আফিনের ভিতরের।আফিন মেয়েটার কাছে একপা একপা করে এগুচ্ছে।কিন্তু জলপরীকে ধরতে পারছেনা।যতোই এগুচ্ছে জলপরী ততোই পিছুচ্ছে।একসময় অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো জলপরী।আফিন কফির মগ টেবিলের ওপর রেখে মাথার পিছনে দুহাত রেখে বসে আছে।কি করবে এখন?এখন কাজে মনযোগ দেয়াই ভালো।ভাবতে থাকে আফিন। ল্যাপটপে খুটখাট শুরু করে দেয় আবার।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,অবনী ঐদিন কি করে বাসায় গেছিলি?অন্তরার কথায় ঘোর কাঁটে অবনীর।না মানে একজন লিফট দিয়েছিলো।আমতাআমতা করে বলতে থাকে অবনী।হি ছিল অর সি ছিলো? অন্তরা হেসে বলে উঠে।কেন কি করবি হি অর সি দিয়ে।যেই ছিলো সে হেল্প তো করেছে।আচ্ছা অবনী বলনা সে কি হ্যান্ডসাম ছিলো।অবনীর কাঁধে হাত রেখে বলতে থাকে অন্তরা।জ জানি না।বাদ দে তো।এসব কথা শুনতে ভালো লাগছেনা।কথা টা বলে উঠে যেতে থাকে অবনী।অন্তরা দৌড়ে ওর পিছু নিতে থাকে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,শুনি মেয়েটাকে বিয়ে দিবে কবে?তোমার তো অবসর হয়ে গেছে।মেয়েটার ও তো বিয়ের বয়স হয়েছে।এভাবে রাস্তায় একা একা চলাফেরা করে।সেটা তো ভালো দেখা যায়না। তাই বলছি ভালো একটা ছেলে দেখে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দাও।দিন কাল ভালো না।কখন কি হয়ে যায়।গড়গড় করে বলতে থাকলেন আমেনা বেগম।কি শুরু করেছো কি?এখনো সেকেলে রয়ে গেলে?উলটপালট বকছো কেন?কিছু হবেনা মেয়ের।ও কি একাই রাস্তায় থাকে নাকি।ওর বয়সী অনেক মেয়েই একা চলাফেরা করে।বলে চোখে চশমা জড়িয়ে সংবাদপত্রে মন দিলেন রহমত সাহেব।মেয়ের চিন্তা হচ্ছিলো বলেই বলছিলাম।মন খারাপ করেই বলে উঠলেন আমেনা বেগম।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,রুহী আজ ও দাঁড়িয়ে আছে বাসস্টপে।সামনে দিয়ে অনেক বাস ট্যাক্সি চলে যাচ্ছে তবে কোনটাকেই থামানোর জন্য মন সায় দিচ্ছিলো না ওর।কিসের আশায় কে জানে?অন্তরা অবনীর কাছে এসে দাঁড়ালো। কিরে যাবিনা?চল।অন্তরা অবনীর হাত ধরে বলে উঠে।আমি যেতে পারবো তুই চলে যা।রাফসান ভাই অপেক্ষা করছে তোর।সত্যি যেতে পারবি তো?অন্তরা বলে উঠলো।অবনী মাথা ঝাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অন্তরা রাফসানের সাথে চলে গেলো।
আফিন গাড়ি ড্রাইভ করে আগের জায়গার ঠিক কাছাকাছি এসে পড়েছে।শেষ ফুঁ দিয়ে সিগারেট জানালা দিয়ে ফেলে দিলো আফিন।জায়গাটার কাছে এসে গাড়ি সামনে চালিয়ে যেতে থাকলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,দুপুর দুটো বাজে রহমত সাহেব ঘরে ঢুকলেন রাগে গজগজ করতে করতে।শালার বাচ্চা শালারে ইচ্ছা করতেছিলো পুঁতে ফেলি। চাকরীটা থাকলে আজ রিমান্ডে দিতাম।কতবড় সাহস এত বড় কথা বলে।এদের দলকে শাস্তি দেয়া উচিৎ।নষ্ট পল্লির নষ্টা পোলাপান।রাগে গজগজ করে বলতে থাকে রহমত সাহেব। কি হয়েছেটা কি?ওভাবে চিৎকার করছো কেন শুনি?আমেনা বেগম শাড়ীর আঁচলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এসে বলতে লাগলেন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,অবনী শেষমেষ ট্যাক্সি টাকে ডাকতে লাগলো।এই ট্যাক্সি যাবেন?জি আফা।২০০টাকা ভাড়া দিতে হইব ট্যাক্সিওয়ালা বলে উঠে।১০০টাকা ভাড়া এখান থেকে অবনী বলতে লাগলো।আইলে আহেন না আইলে নাই।বলে ট্যাক্সিওয়ালা চলে যেতে লাগলো।অবনী অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কি করবে এখন?ঠিক তখনই গাড়ি এসে থামে অবনীর সামনে।গাড়ির দরজা আপনাআপনি খুলে গেলো ওর সামনে।অবনী মাথা নিচু করে দেখার চেষ্টা করলো।সেই আগের লোকটাই।অবনী আবার দাঁড়িয়ে গেলো।তারপর কি যেন ভেবে গাড়িতে চেপে বসলো।
,,,,,,,,,,,,,,আফিন লুকিং গ্লাসে অবনীকে আড় চোখে দেখছে।কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যা এক দেখাতেই এমন হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে আফিন।অবনীর চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো অাফিন।গাড়ি চলতে লাগলো অজানার পথ ধরে।
চলবে
#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:৩
,,,,,,,,,,,,থামান!!!থামান!!অবনীর কথায় ঘোর কাঁটে আফিনের।চোখের কোনা দিয়ে পাশে বসা অবনীকে দেখে নিলো আফিন।গাড়ি থামিয়ে আশপাশ দেখে নিলো অাফিন।দোতলা পুরোনো একটি বিল্ডিং।তবে বিল্ডিংটা লতানো গাছ দ্বারা ঢাকা।এর আগের দিন তো অন্য কোন জায়গায় নেমেছিলো মেয়েটা।আজ এ কোন জায়গায় থামলো বুঝতে পারছেনা আফিন।অবনী গাড়ি থেকে নেমে সামনে চলে যেতেই কি মনে করে আফিনের দিকে দৌড়ে এলো।জানালার কাঁচ নামালো আফিন।অবনী কি জানি বলার চেষ্টা করছিলো এতক্ষন বুঝতে পারছিলো না আফিন।এখন শুনতে পেলো অবনীর কথা।জানিনা কি বলে ধন্যবাদ দেবো? সেদিন ও সাহায্য করলেন আজ ও করেছেন।ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা।বলে আর এক মুহূর্ত ও অপেক্ষা না করে সামনে হেঁটে চলে গেলো অবনী।অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আফিন।ওর কন্ঠস্বর এতো মধুর কানে লেগে থাকার মতো।শুধু শুনতেই মন চায়।সেদিনকার ছেলে গুলো পথ আগলে দাঁড়ায় রহমত সাহেবের।এলাকার ছ্যাঁচড়া বখাটের দল এরা।আজ এলি?সাহস তো কম না তোদের।সরে দাঁড়া,নাহলে পুলিশে কমপ্লেন করবো।রাগী গলায় বলতে থাকে রহমত সাহেব।
,,,,,,,,,,আরে ইন্সপেক্টর ঘরে এমন রসগোল্লা রাখলে শরীরের ঝাঁঝ তো বাড়বেই।তোর মাল মেয়েটা তো দিনে দিনে স্বপ্ন দোষের কারন হচ্ছে।দিবি তোর মেয়েটাকে একরাতের জন্য?বখাটে মামুন বলে উঠলো।ছেলেটা ওর গ্যাংগের লিডার।চেহারা দেখলেই বুঝা যায় হিরোইনচি।আমার মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়েছিস তো চোখ উপড়ে ফেলবো শালা হারামির দল।চেঁচিয়ে উঠলো রহমত সাহেব। তাহলে তোর মেয়েকে বের হতে দিস কেন?ঘরবন্দী করে রাখ।তাহলে আর আমাদের সমস্যা হবেনা।বলেই হেসে উঠলো ছেলে গুলো।আমার মেয়ে ঘরে বসে থাকবেনা আর তোরা ও কিছু করতে পারবিনা। আঙ্গুল তুলে ওদের শাঁসিয়ে ঘরের দিকে পা বাঁড়ালেন রহমত সাহেব।টিউশন থেকে মাত্রই ঘরে ফিরেছে অবনী।খোলা চুলগুলো কে খোপায় গুঁজে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো অবনী।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। অবনীকে দেখে রহমত সাহেব নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলেন। অবনী!!!রাস্তায় তোর কোন সমস্যা হয়না তো?হালকা কেঁশে বলে উঠলেন রহমত সাহেব।না বাবা কিন্তু কেন?প্লেটে ভাত বাঁড়তে বাঁড়তে বলে উঠলো অবনী।না এমনিতেই।রহমত সাহেব মেয়েকে চিন্তায় না ফেলার জন্য বলে উঠলেন।তাও বলছিলাম কি একটু সাবধানে থাকিস মা?একগাল ভাত মুখে নিয়ে বললেন রহমত সাহেব।
রাতে আফসানা অার অবনী শুয়ে আছে পাশাপাশি। বোনের দিকে একনজর তাকিয়ে অবনী বলে উঠলো বাবার কি কিছু হয়েছে?বাবা মাকে কথা বলতে শুনেছিলাম বিকেলে।মামুন, রাফাত আরো কয়েকজন আছেনা আমাদের এলাকায়?ওরা না কি বাবাকে খুব খারাপ কথা বলেছে।আফসানা একনাগাড়ে বলে দিলো।খারাপ কথা!!!কি খারাপ কথা?ভ্রু কুঁচকালো অবনী।অবনীর সম্পর্কে বলা প্রত্যেকটি কথা অাফসানা অবনীকে জানালো।আরে ওরা কিছুই করতে পারবেনা।বাবা মা শুধু শুধুই ভাবছে।নারে আপু শুনেছি পতিতা পল্লীর সাথে ওদের যোগসাজশ আছে।আফসানা বলে উঠলো।ওহ তাই নাকি?কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল অবনী।হ্যারে আপু।রাফসানা কিছুটা চিন্তিত মুখে বলে উঠলো।আচ্ছা থাক এখন এসব বাদ দেয়।ঘুম আসছে।অবনী বালিশে মাথা রেখে বলে উঠলো।পরদিন কলেজ থেকে বেরিয়ে সেই আগের জায়গায় এসে দাঁড়ালো অবনী।কত গাড়ি চলে গেলো তবু ও কারো অপেক্ষা যেন ওকে থামিয়ে রেখেছে।প্রায় ত্রিশ মিনিট পর আফিনের দেখা মেলেনি।অবনী হতাশ হয়ে বাসে উঠে যায়।আফিনকে না চাইতে ও আশা করেছিলো অবনী।
অফিস থেকে বের হতে খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে আজ।আফিন তো অধীর আগ্রহে ওর জল পরীর দেখা পাবার আশায় বসেছিলো।অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সে আগের জায়গায় চলে আসে আফিন।জানালা খুলে সে আগের জায়গায় তাকালো যেখানে অবনীকে দেখেছিলো আগে।কিন্তু আজ নেই।হয়ত আসতে দেরি হচ্ছে।ভাবতে থাকে অাফিন।গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় আফিন।এভাবে অনেকসময় পার হয়ে গেলো,কিন্তু অবনী আসলো না।আফিনের খুব বেশি রাগ হচ্ছে অজানা মেয়েটার প্রতি।গাড়িতে বসে আশেপাশে অনেক খুঁজলো অবনীকে কিন্তু পেলো না।অবশেষে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো আফিন।অবনী জানালার সামনে বসে আছে।আজ কি সে এসেছিলো?ওর জন্য অপেক্ষা করেছিলো?নাহ কেন করবে?ও কে হয় লোকটার?আর লোকটাই বা কেন ওর জন্য অপেক্ষা করবে?ও কেন ভাবছে লোকটাকে নিয়ে? মাত্র দুদিন দেখেছে,তেমন কথা ও হয়নি।বারান্দায় বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আফিন।অজানা মেয়েটাকে দেখার নেশা দিনে দিনে বেড়ে চলছে ওর।কেন এমন হচ্ছে?এই নেশা কোনভাবেই কাঁটানো সম্ভব না।পরদিন প্রায় পনের মিনিট আগেই সেই একই জায়গায় পৌছে যায় আফিন।গ্লাস খুলতেই জলপরীকে দেখতে পেলো আফিন।মেয়েটা ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।কিছুসময়ের মাঝেই অবনী আফিনের গাড়িতে উঠে বসলো।কাল অপেক্ষা করেন নি যে?সামনে তাকিয়েই প্রশ্ন করে উঠলো অাফিন।
কথা শুনে আফিনের দিকে অবাক চোখে তাকায় অবনী।ন না মানে অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু আপনি আসেননি।আর দেরি ও হচ্ছিলো।আমাদের বাসার গলিটা ভালো না।একনাগাড়ে বলে উঠলো অবনী।
কেউ জ্বালিয়েছে আপনাকে আপনাদের গলিতে?আচমকা প্রশ্ন করে উঠে আফিন।উহুম। মাথা নাড়ায় অবনী।অাফিন আড়চোখে অবনীর দিকে তাকায়।কলাপাতা রংয়ের জামাটায় এতো অপরুপ লাগছে মেয়েটাকে।কপালে কালো টিপ, চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।এতো মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে।এই মায়া কেঁটে উঠা সম্ভব না।ইসস একটু ছুঁয়ে দিতে পারলে……..ছি!!!! ছি!!!!!কি ভাবছি এসব?ভাবতে থাকে আফিন।অবনীর দিকে আড়চোখে আবার তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো আফিন।গাড়ি চলছে। অবনী আড়চোখে আফিনকে দেখছে।সাদা শার্ট কালো ডেনিম প্যান্ট,চোখে সানগ্লাস।শার্টের হাতটা কুনুই পর্যন্ত উঠানো।হিরো হিরো ভাব লোকটার মাঝে।ভেবেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে হাসে অবনী।বাসার সামনে আসতেই অবনী চেঁচিয়ে উঠলো থামান থামান।আফিন গাড়ি থামালো।আপনার নম্বর দিন কিছু টা অন্যমনষ্ক ভাবে বলে উঠলো আফিন।
আফিনের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো অবনী।জ জি?তোতলিয়ে উঠলো অবনী। জি।আফিন বলে উঠলো।কিন্তু কে কেন?অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।আপনি আর একা আসবেন না।আমার জন্য অপেক্ষা করবেন।আমি আসবো।সেজন্যই নম্বর চাইছি যেন আমার দেরি হলে আপনাকে জানাতে পারি।দাঁতে দাঁত চেপে বলল আফিন।
আরে না না এতো কষ্ট করতে হবেনা আপনাকে।আমি চলে আসতে পারবো।কিছুটা ভয় পেয়ে বলে উঠলো অবনী।অবনীর দিকে কিছুটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো আফিন।দিচ্ছেন কি দিচ্ছেন না?অবনী চুপ করে আছে।Yes or no?কিছুটা রাগী গলায় বলল আফিন।দিচ্ছি।লিখেনিন।বলে উঠলো অবনী।আফিন ফোন বের করে অবনীর নম্বর টি কন্টাক্ট লিস্টে জলপরী নামে সেভ করে নিলো।অবনী আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে দৌড়ে গেটের ভিতরে ঢুকে গেলো।
চলবে