অনুভূতির_সংঘাত_৯
ছামিনা_বেগম
নামাজে বসেই খেয়াল করল শেফালী বেগম বাসার পরিবেশ বেশ চুপচাপ । তুলন নিশ্চয়ই খেলছে এখন ! ভেবেই ধীরেসুস্থে নামাজ শেষ করলেন তিনি । দোয়া জিকির করতে করতেই আরো কুড়ি মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেল । কোনো কোনো দিন নামাজের আগেই তুলনকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নামাজে যান তিনি । তবে আজ তুলন তৌফিকের সাথে খেলছিল বলে তিনিও আর ঘুমানোর জন্য জোর করেননি । নামাজ শেষ করে ড্রয়িং , কিচেন সব জায়গায় খুঁজেও তুলনকে না পেয়ে চিন্তিত হলেন শেফালী বেগম । শিমুলের ঘরে গিয়ে ঘর ফাঁকা দেখে বাকি সবার ঘরেই খুঁজে এলেন । নাহ , কোথাও নেই তুলন । আচ্ছা , মেয়েটা কি খেলতে খেলতেই কোথাও ঘুমিয়ে পড়েছে ? ভাবতে ভাবতেই শেফালী বেগম এগিয়ে গেলেন বকুলের ঘরের দিকে । দরজার সামনে দাড়িয়েই ঈষাকে ডাকলেন তিনি ,
– বৌমা ? ও ছোট বৌমা ?
তৌফিককে ঘুম পাড়াতে গিয়ে সদ্য চোখটা লেগে এসেছিল । শাশুড়ির ডাক শুনে তাই বেশ বিরক্ত হল ঈষা । তবুও যথাসম্ভব স্বর নরম রেখে বলল ,
-কি হলো মা ?
-তুলন কি তোমার কাছে আছে ?
ঈষার বিরক্তির মাত্রা এবার বাস্তবিকই তরতর করে কয়েক ধাপ উপরে উঠে গেল । সারাদিন সবার মুখে শুধু তুলন আর তুলন শুনে শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে তার । ওর ছেলেটা যেন বানের জলে ভেসে এসেছে ! কই , তৌফিককে নিয়ে তো কেউ এত আল্লাদ করে না ? ভাবনাটাকে ফুলস্টপ লাগিয়ে ঈষা ঘুমঘুম কন্ঠে বলল ,
– দেখুন না , ড্রয়িং রুমেই খেলছে হয় তো ….
– কোথায় ? আমি সব জায়গায় দেখলাম । তুলন কোথাও নেই ।
– আছে কোথাও । অতটুকু মেয়ে , কোথায় আর যাবে ? আমি একটু আগেই তো দেখে এলাম ওর ডলটা নিয়ে খেলছিল । তৌফিক ঘুমানোর জন্য কাঁদছিল তাই রেখে এসেছি । খুঁজে দেখুন । কোথাও চুপটি মেরে বসে আছে হয় তো ! যা বদমাশ হয়েছে আজকাল …..! সবাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে মেয়েটা !
ঈষার কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না শেফালী বেগম । বরং এমন গা ছাড়া জবাবে বেশ বিরক্ত হলেন তিনি। বার কয়েক তুলনের নাম ধরেও ডেকে যখন তুলনের কোনো সাড়াশব্দ পেলেন না তখন শেফালী বেগমের আত্মারাম খাঁচা থেকে পালাই পালাই করছে । এক অজানা শঙ্কা বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটাতে লাগল । কি মনে করে যেন ছাদের দরজার কাছ থেকেও ঘুরে এলেন । নাহ , সেটারও হুক আটকে দেওয়া আছে ভেতর থেকে । কোথায় গেল মেয়েটা ? শেফালী বেগম ড্রয়িং রুমে সোফায় পেছনে , খাটের তলায় , আলমারিতে সব জায়গায় তন্ন তন্ন করে খুঁজল তুলনকে । একবুক নিরাশা নিয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখতে লাগলেন তিনি । শেফালী বেগমের অস্থিরতা ততক্ষণে ঈষাকেও ছুয়ে গেছে । তৌফিককে আলতো করে ছাড়িয়ে কাথা টেনে দিয়ে বেরিয়ে এলো । সেও তুলনকে খুঁজল ঘরময় । কোথাও নি পেয়ে অপরাধ বোধ আর ভয়ে সে তঠস্থ হয়ে গেল সে। সেই তো তুলনকে থাপ্পড় মেরেছিল । তাই বলে কতটুকু মেয়ে কি আর অভিমান করে কোথাও লুকিয়ে পড়তে পারে ! এ সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ । তবুও নিজের কৃতকর্মের কথা মুখ ফুটে বলার সাহস হলো না ঈষার ।
অতিরিক্ত ছোটাছুটি আর চিন্তার কারণে শেফালী বেগমের ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে গেছে । তিনি হাঁপাতে লাগলেন । তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরে গিয়ে তেতুল জল গুলে মুখে দিতেই আনমনে চোখ চলে গেল সদর দরজার দিকে । দরজার ফাক গলে বিকেলের আলোর রেখা তির্যক হয়ে রান্নাঘরের সিঙ্কের ওপর পড়েছে । তৎক্ষণাৎ শেফালী বেগমের মাথার ক্লিক করে গেল একটি সম্ভাবনা । দরজা খোলা পেয়ে তুলন বাইরে চলে যায়নি তো ? গ্লাসটা সেখানেই রেখেই শেফালী বেগম ছুটলেন নিচে । হকবাড়ির সদর দরজার কাছে কামাল মিঞা বসে ছিলেন । তাকে তুলনের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারলেন না । কামাল মিঞার মতে তিনি সকাল থেকেই এখানে বসে আছেন কিন্তু তিনি শিমুলের মেয়েকে দেখেননি । শেফালী বেগম বুঝলেন তুলন বাইরে বেরিয়ে যায়নি কিন্তু হকবাড়ির চৌহদ্দির ভেতরেই আছে । কিন্তু এত বড়ো বাড়িতে কোথায় খুজবেন তিনি । এত পুরোনো বাড়ি , তার ওপর পেছন দিকে একটা বড়োসড়ো পুকুর ও আছে । খেলতে খেলতে যদি তুলন সেদিকে চলে যায় ? ভাবতেই শেফালী বেগমের মনে কু ডাকতে লাগল । তুলনের নাম ধরে ডেকে ডেকে সাড়া হলেন । কামাল মিঞা , ঈষাও ততক্ষণে ঝোপ ঝাড় , ফুলের গাছের আড়াল সব জায়গায় খুঁজে তুলনকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে গেল । শেফালী বেগম অজানা আশঙ্কায় কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলেন ।
কলেজ থেকে ফিরে সদর দরজা খুলেই বাড়ির সামনে মা , ছোট ভাবি সবাইকে চিন্তিত হয়ে কিছু খুঁজতে দেখে অবাক হলো পুতুল । মায়ের অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়ে শুধালো ,
-এখানে কি করছ তোমরা ? কি খুঁজছ অমন করে ? আর কাঁদছ কেন তুমি ?
– তুলনকে খুঁজে পাচ্ছি না পুতুল ।
মায়ের মুখে কথাটা শুনে এক মুহূর্ত নিষ্পলক তাকিয়ে রইল পুতুল । তারপরেই ক্রোধান্বিত হয়ে চিৎকার করে উঠল ,
– খুঁজে পাচ্ছ না মানে কি ? কখন থেকে খুঁজে পাচ্ছ না ?
– তৌফিকের সাথে খেলছিল বলে আমি নামাজ পড়তে গেছি । ফিরে এসে ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না । আধঘণ্টা হয়ে এলো …
– ছোট ভাবি , তুমি তো আর নামাজ পড়তে যাওনি । তুমি দেখনি ও কোথায় গেছে ?
– তৌফিক ঘুমানোর জন্য কাদছিল বলে ওকে আমি ঘুম পাড়াতে নিয়ে গেছি । তখনো তুলন ওর টেডি বেয়ারটা নিয়ে খেলছিল ড্রয়িং রুমে । কখন যে বেরিয়ে এসেছে …
কথাটা শেষ না হতেই পুতুলের অগ্নিমূর্তি দেখে চুপসে হয়ে গেল ঈষা । বাড়িতে সবাই জানে তুলনকে নিয়ে কি পরিমাণে পজেসিভ পুতুল ! তুলনের গায়ে একটা আচড় লাগলেও বাড়ি মাথায় করে তোলে সে । আর আজ তো ওকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না । না জানি আজ কি তুলকালাম কান্ড বাধাবে দুই ভাইবোন মিলে ! ঈষা মনে মনে স্রষ্টাকে ডাকতে লাগল তুলনের সুস্থতা কামনা করে ।
-এতোটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারো তোমরা ? একটা ছোট বাচ্চাকে দেখে রাখতে পারো না ? কি করো সারাদিন বাড়িতে , হ্যাঁ ? মাত্র কলেজের সময়টাই তো তুলনকে তোমাদেরকে দেখে রাখতে বলি । তাও সামলাতে পারো না ….. মা ? সব ঘরে দেখেছ ? কোথাও আবার ঘুমিয়ে পড়েনি তো ?
– হ্যাঁ । দেখলাম তো সব ঘরে ….
মায়ের কথাটাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারলো না পুতুল । দৌড়ে নিজেদের ঘরে গিয়ে আতিপাতি করে খুঁজল তুলনকে । ছাদের দরজা খোলা আছে নাকি দেখে এলো । শেষে বাড়ির সামনের বাগান , পেছনের ঝোপঝাড় , পুকুর সংলগ্ন সবটা জায়গা খুঁজে শেষমেষ কেঁদেই ফেলল পুতুল ।
*******
চিৎকার , চেচামেচি আর কান্নাকাটির শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই আড়মোড়া ভাঙতে গিয়ে কিছুর সঙ্গে বাধা পেয়ে চোখ খুলে হতভম্ব হয়ে গেল বৃষ্টি । একটা বছর দেড় দুয়েকের ফুটফুটে মেয়ে ওর বুকের কাছে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে । দেখলেই মনে হবে কোনো শিশু তার মায়ের বুকের ওম পেয়ে ঘুমুচ্ছে নিশ্চিন্তে । বৃষ্টির মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে না তো ! হাত দিয়ে নিজেকে চিমটি কাটতেই ব্যাথায় ‘উফ’ করে উঠল । নাহ , সে স্বপ্ন দেখছে না । সত্যি সত্যিই একটা বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে ওর পাশে । এক মুহূর্তের জন্য বৃষ্টি ভাবুক হয়ে গেল । বালিশে নিজের মাথাটা একটু পিছিয়ে নিয়ে চোখ ভরে দেখল ঘুমন্ত শিশুটির আদুরে মুখখানা । কেমন যেন সব কিছু স্বপ্ন স্বপ্ন লাগতে লাগল ওর । অনেক পুরোনো একটা স্বপ্ন চোখের কোণে ভেসে উঠে চোখ দুটোকে আদ্র করে দিয়ে গেল । একদিন সেও তো স্বপ্ন সাজিয়ে ছিল প্রিয় মানুষটির অংশ কোল আলো করে আসবে তার । গুটিগুটি পায়ে ওর আঙিনায় হেটে বেড়াবে ছোট ছোট কদম ফেলে । সেই ছোট্ট মানুষটি মাতিয়ে রাখবে ওর সারাটি দিনরাত । সারাদিনের ক্লান্তিময় সুখের স্মৃতি গুলো জমিয়ে রাতে বুকের উষ্ণতায় তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে সে । কিন্তু নাহ! সব স্বপ্ন সত্যি হয় না । বড়োলোক বাবার কন্যা হওয়ার চূড়ান্ত মূল্য চুকাতে হয়েছিল তাকে । নিজের সব স্বপ্নকে নিজ পায়ে মাড়িয়ে বিসর্জন দিতে হয়েছে । চোখের কোল বেয়ে ভেজা কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করতেই বৃষ্টি চিন্তার ঘোর কেটে বেরিয়ে এলো ।
শিশুটিকে আলতো করে ছাড়িয়ে তাকিয়ে রইল । কে এই শিশু ? ওর ঘরেই বা এলো কি করে ? আচ্ছা , উপরের ভাড়াটিয়াদের মেয়ে নয় তো ? এতটুকু একটা বাচ্চাকে একা ছেড়ে নিশ্চিন্তে থাকে কি করে ? মানুষের এহেন বেখেয়ালি স্বভাবের কথা ভেবে বেশ বিরক্ত হলো বৃষ্টি । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে তিনটা বাজে প্রায় । ও ঘুমিয়ে ছিল দু টোর পরে । এতক্ষণ খোঁজ খোঁজ রব পড়ে গেছে নিশ্চয়ই । বৃষ্টি নিঃশব্দে ধীরে ধীরে নেমে এলো বিছানা থেকে । পড়নের কুর্তিটা ঠিক করে গায়ে একটা ওড়না জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো ।
হইচই শুনে নার্সের সাহায্যে আজিম সাহেবও বেরিয়ে এসেছেন । বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল ,
– কি হয়েছে বাইরে ? এত চেচামেচি কিসের ?
– ঠিক জানি না । মনে হয় বাচ্চাটাকে খুঁজছে …
– বাচ্চা ? বাচ্চা কোথা থেকে এলো ? কার বাচ্চা ?
– জানি না আব্বু । ঘুম ভেঙ্গে দেখি পাশে একটা ছোট বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে । মনে হয় উপরের ভাড়াটিয়াদের মেয়ে !
– ঢুকল কিভাবে ?
– কি জানি ?
বৃষ্টি চুলে হাত খোঁপা করতে করতে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল । মেয়ের ঘরে উকি দিয়ে শিশুটিকে এক পলক দেখে পেছন পেছন বেরিয়ে এলেন আজিম হক । দরজা খোলার শব্দে কামাল , ঈষা , শেফালী বেগম সবাই পিছন ফিরে চাইল । এক পলক কাটল কেবল, তাতেই বৃষ্টির চোখে বিস্ময় আর পুতুলের চোখে স্পষ্ট ঘৃণা ফুটে উঠল । পরিস্থিতি এমন যে নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়ার মতো মনোভাব বা ইচ্ছা কোনোটাই কারোর মধ্যেই বিদ্যমান নেই । আজিম হক এগিয়ে গেলেন সামনে । জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই কামাল হড়বড় করে বলে উঠল ,
– উনার নাতনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না স্যার ….
– ওহ । ওই বাচ্চাটার কথা বলছেন মনে হয় । আমার মেয়ের সাথে ঘুমুচ্ছিল ।
– কিহ !
শেফালী বেগম সহ পুতুল , ঈষা সবাই অত্যাধিক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইল কিছুক্ষণ । তাদের কারো মাথাতেই আসলো না তুলন অপরিচিত কারো কাছে কিভাবে ঘুমিয়ে পড়ল ? পরক্ষণেই পুতুল প্রায় ছুটে ঢুকে গেল বৃষ্টিদের ঘরে । পেছন পেছন বৃষ্টিও এলো । বৃষ্টির নির্দেশিত ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত তুলনকে দেখে জানে পানি আসলো পুতুলের । কাছে গিয়ে আলতো করে কপালে চুমু দিয়ে অতি সন্তপর্ণে কোলে তুলে নিল তুলনকে । অন্য হাতে টেডি বেয়ারটা হাতে নিতেই বৃষ্টি বলল,
– থাক না । ঘুমুচ্ছে ঘুমাক । জেগে গেলে নিয়ে যেতেন …..
বৃষ্টির কথায় শ্যেন দৃষ্টিতে তাকাল পুতুল । কাঠকাঠ স্বরে জবাব দিল ,
– প্রয়োজন নেই ।
বলেই বড়ো বড়ো পা ফেলে বাইরে বেরতে উদ্যত হয়েও পিছন ফিরে চাইল পুতুল । গম্ভীর স্বরে বলল,
– মানুষের নূন্যতম কমনসেন্স টুকু থাকলেও অন্যের বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার আগেও একবার জিজ্ঞেস করে । আর আপনি ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন । একবার ও কি মনে হয়নি ওর বাড়ির লোক চিন্তা করতে পারে ! অতটুকু একটা বাচ্চাকে খুঁজে না পেলে কি অবস্থা হবে সবার ? কিন্তু আপনি সেটা না করে চুপটি করে ছিলেন ।
বৃষ্টি কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল । শান্ত দৃষ্টিতে পুতুলের চলে যাওয়া দেখতে দেখতেই অনুভব করল পুতুলের কথার সাথে মিশ্রিত সুপ্ত ক্ষোভের অঙ্গার টুকু । এর কারণ জানা না থাকলেও একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো অজান্তেই । বাচ্চাটা কি শিমুলের ? ভাবতেও এক দলা পাকানো কান্না উঠে আসতে চাইল বৃষ্টির বুক চিরে। এলোমেলো পায়ে আবার বিছানায় গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল বৃষ্টি । সিলিংয়ের ঘূর্ণয়নরত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নীরব অশ্রু ঝরে গিয়ে বালিশ ভেজালো । চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয় কথাটা ডাহা মিথ্যে কথা বলে মনে হলো বৃষ্টির । কই , সাতটা বছর পেরিয়ে গেল , আজও কেন শিমুলের কথা ভাবলে বুকে তোলপাড় হয় বৃষ্টির ? সে অন্য কারো হয়ে গেছে ভাবতেও কেন এত কষ্ট হচ্ছে ? ওই শিশুটিকে দেখে কেন বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল তবে ? সাত বছরে এই প্রথমবার আজ সত্যি সত্যিই অভিযোগের ডালি নিয়ে বিধাতার সামনে বসতে ইচ্ছে হলো বৃষ্টির । প্রশ্ন করতে চাইল যদি সব তোমার ইচ্ছে মতোই করবে তুমি তাহলে কেন মন সৃষ্টি করলে , বলো ? যদি নাই দেবে ইচ্ছে পূরণের চাবি তবে কেন এতো অনুভূতি ঢেলে দিলে ? কেন ভুলে যাওয়ার এই খেলায় ঘুরে ফিরে আবার তার সামনেই দাড় করিয়ে দিলে ? সেবার নিঃশব্দে হারিয়ে গেলেও এবার কি নৈশব্দ কৈফিয়তের ভাষা হবে ? উত্তর জানা নেই বৃষ্টির । কার কাছে উত্তর খুঁজবে তাও জানা নেই ।
( চলবে …)