অনুভূতিরা শীর্ষে 💗দ্বিতীয়ধাপ,পর্ব-১
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
সাদাদ ঘুম থেকে উঠেই দেখে তার বামপাশ ফাঁকা। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বামপাশে সুবাহর ঘুমন্ত মুখটা দেখে আনমনে হাসে সে৷ কিন্তু আজ জায়গাটা ফাঁকা দেখে তার ভ্রু কুঁচকে এলো। রুমের আশেপাশে খুঁজতে শুরু করলো, কিন্তু রুমের কোথাও সুবাহ নেই। সাদাদ রুম থেকে বেরিয়ে করিডরেও সুবাহকে খুঁজলো কিন্তু সে নেই। বাসার কাজের মানুষকেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে কিন্তু কেউ তার কোন খবর জানে না। অবশেষে রুবাইয়ার কাছে জিজ্ঞাসা করায় সেও সবার মতো, “বলতে পারি না” উত্তরটাই দিলো। সাদাদ এবার চিন্তায় পড়ে গেলো। এতো সকালে এই মেয়েটা গেলো কোথায়? সাদাদ কাউকে ফোন করার জন্য মোবাইলটা হাতে নিতেই বাসার মালিদাদু দৌড়ে এলো। সাদাদ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
–সাদ বাবা! বৌমনি কদম গাছে ঝুলছে!
সাদাদের চোখ বড় হয়ে গেলো। গাছে ঝুলছে মানে? সাদাদ কারো অপেক্ষা না করেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাগানে। কদম গাছের দিকে তাকাতেই সাদাদের চোখ স্থির হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো সেদিকে! আর সুবাহ! সে চোখ বন্ধ করে চিল্লাচ্ছে,
–কেউ আমাকে নামাও রে! আমি এখানে অসহায় ঝুলন্ত এক নারী। কেউ…..
বলতে বলতেই সুবাহর চোখ পড়লো সাদাদের দিকে। সাদাদ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বুকে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। যা দেখেই সুবাহ ঢোক গিললো। সাদাদ তার বর হলে কি হবে তার প্রতি সুবাহর বিন্দুমাত্র ভয়ও কমে নি বরং দিনকে দিন বাড়ছে। সাদাদ নিজেও চায় না সুবাহর এই ভয়টা ভেঙে যাক! সে তো তার ভীতু বউটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। সুবাহ মিষ্টি হাসি দিয়ে সাদাদকে বললো,
–আমি জানতাম আপনি আমাকে বাঁচাতে আসবেন! হিরোদের এন্ট্রি সবসময় সঠিক সময়েই হয়! হেহে!
সাদাদ চোয়াল শক্ত করে সুবাহর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। সাদাদ কাঠ কাঠ গলায় বললো,
–তুমি এতো সকালে এখানে কি করছো?
সুবাহ আগের ন্যায় হেসে বললো,
–কদম পাড়তে এসেছিলাম!
সাদাদ গম্ভীর ভাবে বললো,
–তো কদম পাড়তে এসেছো ভালো কথা! সেই হিসেবে তোমার হাতে কদম থাকার কথা কিন্তু এখানে তো উল্টো তুমি কদমের সাথে ঝুলছো! ব্যাপারটা কি?
সুবাহ চুপ করে আছে। সাদাদ যদি জানে যে সেই জোর করে গাছে উঠেছে তাহলে আজ তার আর রক্ষে নেই। যদিও সাদাদ বেশ বুঝতে পেরেছে আসল কাহিনী। এরমধ্যেই কিটকেট এসে সাদাদের পায়ের কাছে দাঁড়ালো। ভউ ভউ উচ্চারণ তার উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। সাদাদ কিটকেট কে কোলে তুলে নিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
–কিটকেট বেবি! তোমার মাম্মা এখানেই ঝুলে থাক! তার গাছে উঠে কদম পাড়ার শখটা মিটুক!
সাদাদকে চলে যেতে দেখে সুবাহ চিৎকার করে বললো,
–সাদাদ! আমাকে নামান! আমি নামতে পারছি না! সাদাদ!
সাদাদ মুচকি হেসে বললো,
–কিছু বললে? শুনতে পাই নি!
সুবাহ জ্বিভ দাঁত দিয়ে হালকা কামড়ে বললো,
–ও বরসাহেব! নিয়ে যাও না সাথে করে! আরে! আরে আমার হাত…..
বলতে না বলতে সুবাহ ধুম করে পড়ে গেলো নিচে! সুবাহ বেশ ভয় পেয়ে গেছে কিন্তু মাটিতে পড়লে আজ শিওর হাড়গোর সব ভেঙে যেতো। সময় মতো সাদাদ ধরলেও নিজেকে বাঁচাতে পাড়লো না। সুবাহকে সহ নিচে পড়ে গেলো। কিটকেট ভউ করে উঠতেই দুইজনেই মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালো। সাদাদ আড়চোখে সুবাহর দিকে তাকিয়ে আছে! আর সুবাহ এক বার সাদাদের দিকে তাকিয়ে ভোঁ দৌড় দিলো। আর পিছু নিলো সাদাদ। দৌড়াতে দৌড়াতে সুবাহ রুবাইয়ার পিছনে চলে গেলো। সাদাদ অনেক ধরার চেষ্টা করছে আর তার সাথে বলছে,
–সুবাহ! সামনে আসো! এক্ষুনি! আমি ধরলে কিন্তু খবর আছে!
সুবাহ ও দৌড়াতে দৌড়াতে বললো,
–আর কখনো যাবো না সত্যি বলছি! কদমও পাড়বো না।
সুবাহ দৌড়াতে দৌড়াতে রুমে চলে গেলো। সাদাদ এবার আস্তে আস্তে হেঁটেই রুমের দিকে গেলো। গিয়ে দেখে সুবাহ কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। সাদাদ একটা হাফ ছেড়ে বেডবক্সের তিন নাম্বার ড্রয়ার থেকে ফার্স্টএইড বক্স বের করে খাটে সুবাহর পাশে বসলো। দুইবার সুবাহকে ডাকলেও সে কোন সাড়া দেয় না। সাদাদ মুচকি হেসে কাঁথা সরিয়ে দেখে সুবাহর চোখ থেকে পানি পড়ছে। সাদাদ সুবাহর গাল দু হাতে ধরে কপালে আলতোভাবে চুমু দিলো।
–কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?
সুবাহ মাথা দুদিকে দুলিয়ে বললো,
–কোথাও না!
সাদাদ হেসে ফেললো। টেবিলের উপর থেকে এক গুচ্ছ কদম এনে সুবাহর সামনে ধরলো। সুবাহ মুখ ফুলিয়ে একবার ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।
–কি হলো? ফুলগুলো চাই না? এগুলোর জন্যই তো এতো ঝুলাঝুলি!
ব্যস! সুবাহ এবার জোরেই কান্না করে দিলো। সে বেশ জানে এর জন্য যে তাকে কত খোঁটা শুনতে হবে সাদাদের কাছ থেকে! সাদাদ তাকে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেললো।
.
সকালের নাস্তা শেষ করে সাদাদ রুমে এসেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো। সুবাহকে সে পড়া পড়তে দিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এই মেয়ে বইয়ের উপর মাথা রেখেই ঘুম! ভোর সকালের উঠে যেই কান্ড ঘটিয়েছে তাতে ক্লান্ত হওয়ারই কথা! সাদাদ তাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো নিজের কাজে।
.
সাদাদ একটা টেবিলে বসে হাতে পেপারওয়েট নাড়াচাড়া করছিলো। মুখে এক হিংস্র হাসি! সামনে দাঁড়ানো দানব আকৃতির লোকটাও তার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো। সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে তার রেহাই নেই। সাদাদ হাতের পেপারওয়েট টা লোকটার মুখ বরাবর মারলো। সাথে সাথে দাঁত ভাঙার শব্দ শোনা গেলো।
–আজ সকাল নয়টার দিকে তুই দি কে ফলো কেনো করছিলি? কি উদ্দেশ্য? ভালো চাইলে এক্ষুনি বলে দে!
লোকটির আর্তনাদ শোনা গেলো।
(চলবে)…