#অনুভূতিটা_ছিল_ভালোবাসার
#পর্ব_০৮,০৯
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
পর্ব_০৮
আমি বললাম আচ্ছা এখন তোরা বাসায় যা আর শুন রিয়ার কথা কাউকে বলবি না ঠিক আছে।।এমন কি জারাকেও না।।
তারপর ওরা দুইজন বাসায় চলে গেল।।
আমি বাসায় আসতেই আম্মু বলল রাজ তোর সাথে কথা আছে।
আমি দেখলাম সবাই একসাথে বসে আছে।।তাই আমি আম্মুকে বললাম আম্মু আমার রুমে আসো।।
এইবলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।আসার সময় দেখলাম রিয়া কিছুটা চিন্তিত।।
কিছুক্ষণ পর আম্মু এসে আমার পাশে বলে বলল
-রাজ কাজটা কি ঠিক হচ্ছে বল।।
-আমি সেটা জানি না কিন্তু আমার কাছে এটাই ঠিক মনে হল।
-যদি কিছু হয় তাহলে?
-আচ্ছা আম্মু এখন যদি শুন তোমার কোনো ফ্রেন্ড কোন সমস্যায় আছে তাহলে তুমি কি এখন বসে থাকবে।না তার সাহায্য করতে যাবে।।
-আমি যদি সাহায্য করতে পারি তাহলে অবশ্যই তাকে সাহায্য করব।।
-সেই কারনেই আমিও আমার ফ্রেন্ডদের সাহায্য করতেই পারি।আর তারাও তো আমাদের পরিবারের অংশ তাই না।।।
আম্মু আর কিছু না বলে আমার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেল।।
রাতে সবাই একসাথে খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর আমি আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলাম।ঘুমাতে যাওয়া আগে ভাবিকে একটা কথা বলে এসেছিলাম
।ভাবি বলল ভাই তোকে এই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।।আমি সব সামলে নিব।।
সকালে কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।তাই আমি চোখ বন্ধ করেই বললাম ভাবি যাও তো এখন।আমাকে ঘুমাতে দেও।।
ঠাস করে এক থাপ্পড় দিল।।থাপ্পড় খেয়ে আমি খাট থেকে লাফ মেরে উঠে গেলাম।
থাপ্পড় খেয়ে আমার ঘুম পালিয়ে গেল।গালটা ব্যথা করছে অনেক।।
এখনো দেখি নাই কে থাপ্পড়টা দিল।
তাই সামনে তাকিয়ে দেখলাম।। আমি শুধু অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছি।।
কারন সামনে জারা দারিয়ে আছে।।
জারা আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।।
আমি চিন্তা করতে লাগলাম।আজ আবার আমি কি করলাম।
তাই জারাকে বললাম আমাকে মারলি কেন?আর এই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো??
এই কথা বলতে দেড়ি কিন্তু থাপ্পড় দিতে দেড়ি হয় নাই।
ঠাস করে আরেকটা থাপ্পড় দিল।আর বলল
-আমি তোর ভাবি লাগি তাই না।।
-আমি আবার কখন তোকে ভাবি বললাম।।
-রাজ তুই কিন্তু এখন আমার মাথাটা গরম করিস না।
– আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে বোন।।
ঠাস করে আরেকটা থাপ্পড় আমার গালে পড়লো।।
-আমার ভুল হয়েছে বললাম তারপরেও কেন মারলি।।
জারা এবার বলল তুই আবার আমাকে বোন বললি।।তোর এখানে আসাটা আমার ভুল হয়েছে।।এই বলে জারা রাগ করে আমার রুম থেকে চলে গেল।।
আমি নিজেকে নিজেই বলতাছি কার মুখ দেখে সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।।
আবার বলি মুখ দেখার আগেই তো থাপ্পড় খেলাম।।
না আর এইসব চিন্তা করে কোনো কাজ নাই।।
তারপর ফ্রেশ হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম।।গিয়ে দেখি মামা মামি আর জেরিনও এসেছে।।মামিকে দেখেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
তাই আমি আম্মুকে বললাম আম্মু আমার নাস্তাটা আমার রুমে দিয়ে যাও।
এই বলে আমি আমার রুমে আসতে যাব এমন সময় মামা বলল রাজ তোর মামি এসেছে তার সাথে কথা বল।।
আমি বললাম মামা আমার শরীরটা ভাল লাগছে না।আমি পরে এসে কথা বলল।।
এই বলে আমি আমার রুমে চলে গেলাম।।
মামা আমার বিষয়টা বুঝতে পেরে আমাকে আর কিছু বলে নাই।।
কারন মামা আমার আর জারার বিষয়টা জানে।।যে দিন মামি আমাকে ওই কথাগুলো বলেছিল তারপরে মামা মামির সাথে আমার বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে।।সেটা আমার কানে এসেছিল।।
আমি বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর মামার সাথে মাঝেমাঝে কথা হত।।মামা আমাকে সবসময় একটা কথা বলতো।
-রাজ জারাকে কখনো কষ্ট দিস না।।আমি তোদের সাথে আছি।।
আমি আমার রুমে আসার কিছুক্ষণ পর জেরিন আমার নাস্তা নিয়ে আসলো।।আর বলল ভাইয়া নাস্তাটা খেয়ে নেও।।
এই বলে জেরিন চলে যাওয়ার সাথেসাথেই জারা আমার রুমে আসলো।।
আমি জারাকে দেখে কিছু বললাম না।।
জারা আমার পাশে বসে বলল আমার তো আর তোর হাতে খাওয়ার সৌভাগ্য হবে না।।
তাই আমি তোকে খাইয়ে দিব তুই কিন্তু কিছু বলতে পারবি না ঠিক আছে।।
আমি তো মনে মনে মহা খুশি।।জারা আমাকে খাইয়ে দিবে।।জারার সামনে একটা ভাব নিয়ে বসে থাকলাম যেন জারা বুঝতে না পারে।।।
জারা আমাকে এমনভাবে খাইয়ে দিচ্ছে মনে হয় আমি কোনো বাচ্চা ছেলে।।
ঠিক উনিশ মিনিট সময় লাগলো আমার নাস্তা শেষ করতে।।তারপর জারা নাস্তার বাটিগুলো নিয়ে চলে গেল।।
আমি এখন একাএকা রুমে বসে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়।।কারন আজ হল শুক্রবার।।ভাইয়া ভাবি রিয়াকে নিয়ে এক জায়গাতে গেছে।।না হলে ভাইয়ার সাথে আড্ডা দেয়া যেত।।মামি যখন এসেই পরেছে তাহলে আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসি।যেই ভাবা সেই কাজ।।
তাই আমি আম্মুকে গিয়ে বললাম আমি বাহিরে যাচ্ছি।।এই বলে বাহিরে চলে গেলাম।আসার সময় মামা মামি আর জারা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।।
বাহিরে এসে চিন্তায় পরে গেলাম। এখন কি করবো।তাই তুহিনকে কল করলাম।
– তুহিন কোথায় তুই।
– রাজ আমি তো বাসায়।কেন কিছু কি হয়েছে??
– আরে না এমনেই।।আড্ডা দিব তাই তোকে কল দিলাম।
– রাজ তাহলে তুই আমার বাসায় আয়। আমি রাফিকেও আসতে বলি।।
– আচ্ছা ঠিক আছে।।তুই রাফিকে কল দিয়ে আসতে বল আমি আসতেছি।।
যাই তুহিনের বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আসি।।
তুহিনদের বাসার সামনে এসে বেল বাজালাম।দুইবার বেল বাজানোর পর কেউ দরজা খুলে দিল।সামনে তাকিয়ে দেখি মিম দরজা খুলেছে।।
আল্লাহ আমি তো ভুলেই গেছি তুহিনের বাসায় আসলে মিমের সাথে দেখা হবে।।কি যে করি মাথা কাজ করছে না।।
আমাকে দেখে মিম হেসে বলল আপনি বাহিরে দারিয়ে আছেন কেনো।ভেতরে আসুন।।
মিমকে দেখে বুঝা যাচ্ছে আমাকে এইখানে দেখে খুব খুশি।।
আমি ভেতরে গিয়ে সরাসরি তুহিনের রুমে চলে গেলাম।।কিছুসময় পর রাফিও আসলো।।।
To be continue…..
#অনুভূতিটা_ছিল_ভালোবাসার
#পর্ব_০৯
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
মিমকে দেখে বুঝা যাচ্ছে আমাকে এইখানে দেখে খুব খুশি।।
আমি ভেতরে গিয়ে সরাসরি তুহিনের রুমে চলে গেলাম।।কিছুসময় পর রাফিও আসলো।।।
রাফিকে দেখে খুশি মনে হচ্ছে।।তাই আমি রাফির কানেকানে বললাম কিরে আজ তোকে দেখে খুশি মনে হচ্ছে।।
রাফিও আমার কানে এসে বলল হ্যা।আসার সময় মিমের সাথে দেখা হয়েছে।আমাকে দেখে মনে হয় খুশি হয়েছে।।
আমি মনে মনে বলি রাফি তুই যদি মিমের খুশির কারন জানতে পারতি তাহলে আমার কপালে মাইর পড়ত।।
আমি রাফি আর তুহিন বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আর মিম কিছুক্ষণ পর পর তুহিনের রুমে উকি দিচ্ছিল।।তুহিন আর আমি সেটার কারন বুঝতে পারলেও রাফি মনে করছিল মিম তার জন্য উকি দিচ্ছে।।
প্রায় তিন ঘণ্টার মত আড্ডা দিলাম।।মিম এখন আর উকি দিচ্ছিল না।।কিন্তু কারনটা বুঝলাম না।। থাক এইগুলা নিয়ে চিন্তা করে কোনো লাভ নাই।।আড্ডা দিতে এসেছি আড্ডা দেই।।
কিছুসময় পর ফোনে কল আসা শুরু হল।।তাই ফোন বের করে দেখি জেরিন কল করেছে।।তাই আমি ফোনটা নিয়ে এক পাশে গিয়ে রিসিভ করলাম।।জেরিন বলল
-ভাইয়া তুমি আমাকেও নিয়ে যেতে তোমার সাথে।।
– জেরি তুই এসে কি করতিস বল।।
-আমি মিমের সাথে আড্ডা দিতাম।।
-আমি এইখানে এসেছি সেটা তোকে কে বলেছে?
-কে আর বলবে বল মিম বলেছে।।আর তুমি যে মিমদের বাসায় সেটার ভিডিও দেখেছি আমরা।।
-আমরা বলতে কার কথা বলছিস।।
-আমরা বলতে বাসার সবাই।।মানে সবাই দেখেছে।।
-জারাও কি দেখেছে আমি এইখানে এসেছি?
-হুম দেখেছে।কেনো ভাইয়া।।
-না কিছু না।।
আমি জারার কথা চিন্তা করছি ওমনি জারার কল আসা শুরু হল।তাই আমি জেরিনকে বললাম জেরি আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি।এই বলে জেরিনের কলটা কেটে দিলাম।।
এখন কি করি জারার কল রিসিভ করলেই শুরু হয়ে যাবে ওর বকবক।।
থাক ওর কল ধরাই দরকার নাই।।আরে আম্মু আবার কল দিতাছে কেন?কিছু কি হল নাকি।।আম্মুর কল রিসিভ করতেই আম্মু বলল
-রাজ এখন কোথায় তুই?
-আম্মু আমি তো তুহিনদের বাসায়।
-তুই এখনি বাসায় আয়।
-কেনো?কিছু কি হয়েছে?
-হ্যা হয়েছে।তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।।
-আচ্ছা আমি আসতেছি।।
কথাটা বলে কলটা কেটে দিলাম।।জারা হয়তো কিছু করেছে না হলে আম্মু আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলল কেনো??
এইসব চিন্তা করছি এমন সময় তুহিন আমাকে ডাক দিল।।
আমি তুহিনকে বললাম শুন আমি বাসায় যাচ্ছি।
তুহিন বলল কেন কিছু কি হয়েছে।।
আমি বললাম না কিছু না।একটা কাজ আছে।।
এই বলে আমি তুহিনদের বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।।
না জানি জারা আবার কি করলো।এইসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম।।
বেল বাজানোর সাথেসাথেই জেরিন দরজা খুলে দিল।।
তাই আমি জেরিনকে বললাম জেরি বাসায় কি হয়েছে রে??
জেরিন বলল ভেতরে যাও তাহলে বুজতে পারবা।।
বুঝলাম জেরিন কিছু বলবে নাই।তাই আমিই ভেতরে গেলাম।।সবাই চুপ করে বসে আছে।কিন্তু জারা আর মামি নাই।।
আমি আম্মু কে বললাম কি জন্য আসতে বলছিলে এত আগে??
আম্মু আমার কাছে এসে বলল আমার রুমে যা আমি এসে বলতেছি।।
আমিও গিয়ে আম্মুর রুমে চলে গেলাম।কিছুসময় হয়ে গেল কিন্তু আম্মু তো আসছে না।।না আর বসে থাকা যাচ্ছে না বাহিরে গিয়ে দেখি আম্মু কোথায়।
যেই আম্মুর রুমের বাহিরে যাব দরজায় দেখি মামি দারিয়ে আছে।।তাই আমিও দারিয়ে গেলাম।।
কেউ কোনো কথা বলছি না।।কিছুসময় পর মামি বলল রাজ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।।
আমি শুধু বললাম বলো।।
প্রায় দুই বছর পর আমি মামির সাথে কথা বললাম।।
মামি এসে খাটে বসে বলল রাজ এইখানে আয়।।
আমি কিছু না বলে মামির পাশে বসলাম।।
মামি আমার দিকে তাকিয়ে বলল রাজ তোর জন্য আমি একটা মেয়ে ঠিক করেছি।যার সাথে তোর বিয়ে দিব।।
আমি এতক্ষণ নিচে দিকে তাকিয়ে মামির কথা গুলো শুনছিলাম।বিয়ের কথা শুনে আমি মামির দিকে তাকালাম কিন্তু কিছু বললাম না।।
মামি আবার বলল আর শুন মেয়েটা কিন্তু তোকে খুব ভালবাসে।।
আমি এইবারও আমি কিছু বললাম না।।
মামি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল বিয়ে পরে কিন্তু জারাকে কোনো কষ্ট দিতে পারবি না বুঝছিস।।
আমি বললাম আমি কেন তোমার মেয়েকে কষ্ট দিব।
মামি আমার গালে হাত রেখে বলল আরে বোকা ছেলে তোর সাথে জারার বিয়ে। বিয়ে হওয়ার পর যদি তুই কষ্ট দিস তাই বলে রাখলাম।।
আমি অবাক হয়ে মামির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম তুমি এইগুলা কি বলছো।।
মামি বলল হ্যা তুই যা শুনছিস তাই।।তোর সাথে জারার বিয়ে হবে।।
আমি মামির কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলবার অবস্থা।।
কিছু সময় লাগলো আমার বুঝতে।মামি আমাকে এতক্ষনে কি বলেছে।যখন বুঝতে পারলাম মামি আমাকে কি বলল।এইবার আমার খুশি দেখে কে।।
আমি মামিকে বললাম শাশুড়ি আম্মু আমার বউ এখন কোথায়।।
মামি হেসে বলল পাগল ছেলে।।জারা তোর জন্য তোর রুমে বসে আছে।।
আমি আর মামিকে কিছু না বলে সরাসরি আমার রুমে গেলাম।
কিন্তু এ আমি কি দেখছি।।জারা আমার রুমে লাঠি হাতে নিয়ে দারিয়ে আছে।।
আমাকে দেখে বলল রাজ যদি পালানোর চেষ্টা করিস তাহলে তোর খবর আছে।।
আমি ভয় পেয়ে মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকছি।।কারন আজ আমার কি হবে আমি নিজেও জানি না।।
To be continue…..