অদ্ভুত_নেশা,পর্ব_১৩

অদ্ভুত_নেশা,পর্ব_১৩
অধির_রায়

৩০.
ছোঁয়া অধিরের সাথে পাহাড় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার কোন খোয়াল নেই সে কোথায় আছে। অধিরও ছোঁয়াকে পরম পরশে জড়িয়ে ধরে আছে।

কিছু পড়ার শব্দে ছোঁয়ার মা বাবার ঘুম ভেঙে যায়৷ তারা ভেবেছে বাসায় চোর প্রবেশ করেছে। তাকে ধরার জন্য তারা ছোঁয়ার রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল।ছোঁয়ার রুমের দ্বারের নিচ দিয়ে রক্তের জোয়ার বয়ে আসছে।

ছোঁয়ার মা রক্ত দেখে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সিদ্ধার্থ তারাতাড়ি করে রুমের ডবলিকেট চাবি নিয়ে এনে রুম খোলে৷ রুমে প্রবেশ করে ছোঁয়াকে দেখতে পায় না৷

ছোঁয়ার বাবা রুমের লাইট অন করে দেখতে পায় নিচে তপেস পড়ে আছে৷ মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে ছুরি দ্বারা আঘাত৷ সিদ্ধার্থ ভয়ে নিজেকে একটু একটু করে সামনে এনে তপেসের পাশে বসে৷ তপেসের কাছে এসে দেখে তপেসের অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হওয়ার জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।

— বাবা তপেসদা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তাঁকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে৷

— কিন্তু এই সময় কিভাবে নিয়ে যাব? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ এখন নিশিরাত। রাতের শেষ প্রহর শুরু হয়ে গেছে। কিছু সময় পর আরতি আর শঙ্কের ধ্বনি শুনতে পারবে৷

— বাবা আমি সবই বুঝলাম৷ কিন্তু এভাবে আমরা তপেসদাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। তপেসদাকে বাঁচানো দরকার৷ আর ছোঁয়া কোথায় আমরা জানি না৷ তপেস ছোঁয়ার খোঁজ দিতে পারে৷

ছোঁয়ার নাম নিতেই ছোঁয়া রুমে প্রবেশ করে। ছোঁয়া তপেসকে এই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায়৷ তপেস কিভাবে এখানে আসল?

[ছোঁয়ার নাম নিতেই অধির ছোঁয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়৷ ছোঁয়া অধিরের কথামতো দ্বার দিয়ে প্রবেশ করছে৷ অধির ছোঁয়াকে বলে দিয়েছে তার কোন দরকার পড়লে চোখ বন্ধ করে ২ বার অধির স্মরণ করতে। দুই বার অধির স্মরণ করলেই অধির ছোঁয়ার সামনে হাজির হবে৷ ]

— ছোঁয়াকে সুস্থ দেখতে পেয়ে ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়াকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে তোমার কিছু হয়নি? তুমি ঠিক আছো এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া৷

— বাবা তপেসদাকে সাহায্য কর? (সিদ্ধার্থ)

— দাদা তপেসের কি হয়েছে? আর তপেস এখানে কি করছে? তাও আবার আমার রুমে। (ছোঁয়া)

— এখন কথা বলার সময় নেই৷ তপেসদাকে বাঁচাতে হবে৷ পরে তোকে সব বলছি৷

সিদ্ধার্থ আর তার বাবা তপেসকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে আসে৷ তার বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় রাস্তায় এভাবে পড়েছিল। তারও কিছু প্রমাণ রেখে দিয়ে যায় ছোঁয়ার পরিবারের লোক।

— বাবা এভাবে ফেলে যাওয়া ঠিক হবে না।

— তপেস আমার মেয়ের সাথে যা করেছে। তার জন্য তাকে বাঁচানো আমাদের কোন প্রশ্নই উঠে না৷

— বাবা সে পাষাণ হতে পারে আমরা না৷ আমরা বরং তার মা বাবাকে খবর দিয়ে যায়।

— ওঁকে। তোমার যেমনটা মনে হয়৷

সিদ্ধার্থ তপেসের মা বাবাকে ফোন করে হসপিটালে আসতে বলে৷ তারা তপেসের ফোন পেয়ে খুব তারাতাড়ি হসপিটালে এসে পড়ে৷

— কি হয়েছে তপেসের? (তপেসের বাবা)

— আপনার ছেলে এক্সিডেন করেছে৷ আমরা তাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি৷ এখন আমরা যেতে পারি৷

সিদ্ধার্থ আর তারা বাবা হসপিটাল থেকে চলে যেতে নিলেই একটা নার্স এসে সিদ্ধার্থকে বলে রোগীর জ্ঞান ফিরেছে।আপনাদের সাথে কিছু কথা বলতে চায়।

— আমাদের সাথে কি কথা আছে? তার মা বাবা এখানে আছে। যা বলার তাদের সাথে বলতে পারে। (ছোঁয়ার বাবা)

–সরি স্যার৷ কিন্তু রোগী আপনার নাম বলেছে। সে আপনার সাথে কথা বলতে চায়৷ (নার্স)

— চল বাবা কি বলতে চায়? জেনে নেওয়া ভালো। আমরা তো আর খুনি পরিবারের সদস্য না৷

(সিদ্ধার্থ কথাটা খোঁচা দিয়ে বলে তপেসের পরিবারের সামনে। সিদ্ধার্থের কথা শুনে তপেসের মা বাবা মুখ কালো করে মাথা নিচু করে ফেলে)

— হ্যাঁ। ঠিক বলছ তুমি। চল দেখা করে আসি৷

ছোঁয়ার বাবা আর সিদ্ধার্থ তপেসের কেবিনে ঢুকে৷ তপেস চোখে জল নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

৩১.
তপেস শুধু তাদের দিকে চেয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। কিভাবে তাদের কাছে ক্ষমা চাইবে তার কোন ধারণা তার কাছে নেই।

— চোখের জল ফেলে লাভ নেই৷ কি বলবে? তা বলে দাও,আমাদের হাতে তেমন সময় নেই৷ (সিদ্ধার্থ)

— আঙ্কেল আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না।

— কিসের সুযোগ?(ছোঁয়ার বাবা)

— আঙ্কেল বিশ্বাস করেন আমি ছোঁয়ার সাথে এসব কাজ ইচ্ছা করে করি নি৷ আর ছোঁয়াকে আমি ইচ্ছা করে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয় নি৷ একটা এক্সিডেন।

— তোমার বাজে কথা শোনার মতো আমাদের সময় নেই৷ তোমার কাছে আমি কিছুতেই আমার মেয়ে ছোঁয়াকে বিয়ে দিব না৷

— আঙ্কেল আমি ছোঁয়াকে বিষণ ভালোবাসি। তাঁকে ছাড়া বাঁচতে পারব না৷

— তুমি বাঁচা মরা আমাদের কিছু যায় আসে না৷ তোমার লাইফে আমরা কোন ভাবেই ইন্টারফেয়ার করতে চায় না৷ বুঝতে পেরেছ।

— তাহলে কেন বাঁচালেন? মরতে কেন দিলেন না৷

— মানবতার খাতিরে তোমাকে বাঁচিয়েছি৷ তোমার মাঝে মানবতা না থাকতে পারে কিন্তু আমাদের কাছে মানবতাহীম নয়৷ তোমার জায়গায় একটা ফকির হলে আমরা সেই কাজ করতাম৷

— আমাকে যত পারেন অপমান করেন৷ ফকিরের সাথে তুলনা করলেন শেষে৷ তবুও আমি আপনার উপর একটুও ক্ষেপে নেই।প্লিজ আঙ্কেল আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেন৷

— তোমাদের না৷ বল তোমার সম্পর্ক ছোঁয়া কোনদিনও তোমাকে মেনে নিবে না৷

তপেসের মা এসে ছোঁয়ার বাবার সামনে হাত জোর করে বলে৷

— প্লিজ আমাদের একটা সুযোগ দেন৷ ছোঁয়াকে না পেলে আমাদের ছেলে মারা যাবে৷

— আর তেপেসের সাথে বিয়ে হলে আমার মেয়ে ছোঁয়া প্রতিটি মুহুর্তে মুহুর্তে মারা যাবে৷

— প্লিজ আমার ছেলের বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করেন। আমি কথা দিচ্ছি ছোঁয়ার কোন অসম্মান হলে আমি আপনার বাসার কাজের লোক হয়ে থাকব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

ছোঁয়ার বাবা অনেক ভেবে দেখে ছোঁয়াও তপেসকে পাগলের মতো ভালোবাসে৷ এই এক মাস তপেসের বিরহে ছোঁয়া প্রায় মৃত হয়ে বেঁচে ছিল।

— আমি কিছু বলতে পারব না৷ আপনার যদি ছোঁয়াকে রাজি করাতে পারেন তাহলে আমার কোন দ্বিমত থাকবে না৷

— ওঁকে আমরা ছোঁয়ার কাছেও ক্ষমা চাইবো৷

— তাহলে আজ সন্ধ্যায় আপনারা আমাদের বাড়িতে আসেন।

— বাবা তুমি কি পাগল হলে শত্রু পরীতে ছোঁয়াকে পাঠাতে চাইছো।

— বড়দের মাঝে কথা বল না৷ আমি জানি ছোঁয়া এখনও তপেসকে খুব ভালোবেসে।

ভালোবাসার কথা শুনে তপেসের মুখে এবার হাসির রেখা ফুটে উঠে৷ তার খুশির কারণ সে বলে প্রকাশ করতে পারছে না। মনে মনে সে মহান খুশি৷ যদি এটা প্রকাশ করে তাহলে এর বিপরীত হবে৷


🍁
সন্ধ্যায় তপেসের মা বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে ছোঁয়াদের পরিবারের সামনে। কি করে তারা বলবে? বুঝতে পারছে না৷
তেপেস হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে৷ ছোঁয়া তাদের দেখে দেখে জ্বলছে আর রুচির মতো ফুলছে।

— তোমার কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইব আমাদের কাছে জানা নেই৷ জানি তপেস তোমার সাথে অন্যায় করেছে আমরা মেনে নিচ্ছি। প্লিজ এবার তপেসকে ক্ষমা করে দাও৷(তপেসের বাবা)

— তাদের আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হক। তাদের সমস্যা তারাই মিটিয়ে নেক৷ এতে তাদের লাইফ কোন আচ আসবে না৷ (ছোঁয়ার বাবা)

— ঠিক বলছেন।

ছোঁয়া তপেসকে নিজের রুমে নিয়ে যায়৷ ছোঁয়ার কোন কথা বলার ইচ্ছা নেই৷ তবুও মানবতা খাতিরে কথা বলতে হবে৷ কিভাবে কথা বলবে?

এয়ারকন্ডিশনের নিচেও ঘেঁমে একাকার হয়ে যাচ্ছে তপেস।মুখ থেকে কোন বুলি বের হচ্ছে না৷

৩২.
তপেস হুট করেই ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলে।ছোঁয়া হাত ধরায় কিছুটা অপ্রস্তুত ছিল। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য একটু চেষ্টা করতেই তপেস

–“আউচ”

— কি হলো আপনার?

— তেমন কিছু না৷ হাতে একটু ব্যথা পেয়েছি৷ কিন্তু সেড়ে যাবে৷

— কিভাবে পেলেন?

— নিজেকে দেখে রাখতে পারেন না৷

— কার জন্য দেখে রাখব? যার জন্য দেখে রাখতাম সেই তো আমাকে ভুলে গেছে।

— আমি আপনাকে ভুলে যায়নি। আপনিই তো আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন।

— আমি আসল ঘটনা জানতাম না৷ আমি শুধু দাদার বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম তুমি আমার দাদাকে তুমিই নিজ হাতে হত্যা করেছ।

— আপনার দাদাকে আমি মারতে যাব।আপনার দাদা নিজেই আমার উপর এসিড নিক্ষেপ করতে এসেছিল৷ উপস্থিতি বুদ্ধির জন্য বেঁচে যায়।

— হুম আমি জানি৷ আর সেই এসিড পড়ে আমার দাদার মুখে৷ সেই এসিডের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে দাদা গাড়ির নিচে চাপা পড়ে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে৷

— হুম। এবার সত্য ঘটনা জানতে পেরেছেন।

— আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি তোমাকে আর কোন কষ্ট দিব না৷ কথা দিচ্ছি সারাজীবন আমি তোমার পাশে থাকব।

— যে কাচ ভেঙে যায় সে কাচ জোড়া লাগে না৷ আমি আর এই সম্পর্কে এগিয়ে যেতে চায় না৷

— ভাঙা কাচকে তে আমার জোড়া লাগানো যায়৷

— হ্যাঁ জোড়া লাগানো যায়।কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি মুছে যায় না৷

–ভালোবাসার চাদর দিয়ে আমি সেই ক্ষতগুলো ঢেকে দিব৷ কোনদিন সেই ক্ষত সামনে আসতে দিব না।

— কুয়াশার চাঁদরে মেঘের সন্ন্যাসীতে ভালোবাসার চাঁদর হার মানতে বাদ্য হয়৷

— কুয়াশার চাঁদর ঢেকে রাখতে পারে না সারাজীবনের ভালোবাসা। বসন্তের ফাগুনের কাছে কুয়াশার চাঁদর হার মানতে বাদ্য৷ আমার ভালোবাসা সব সময় ফাগুনের বসন্তের মতো তোমার হৃদয়ে বয়ে যাবে।

— উত্তরী ঘন কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে আর জাগিয়ে তুলতে চায় না আমি৷ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন।

–উত্তরী হয়ে হিমালয়ের চূড়ায় তুমি লুকিয়ে থাকলে সেখানেই তোমাকে ভালোবাসবো৷ প্লিজ আমার ভালোবাসা এক্সেপ্ট কর?

— আমি আপনার ভালোবাসা স্বীকার করতে পারব না৷

— ওঁকে স্বীকার করতে হবে না৷ আমি আমার নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিব৷

তপেস ফল কাটার ছুরি নিয়ে নিজের হাত কাটতে নিলেই ছোঁয়া বাঁধা দেয়।।

— কেন বাঁধা দিচ্ছ।তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমার জীবন অচল।

— আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।

ছোঁয়া আজ নিজ থেকে তপেসকে জড়িয়ে ধরে৷ তপেসও নিজের বাহুতে ছোঁয়াকে লুকিয়ে রাখে।



আবার নতুন করে শুরু হচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠান৷ কিন্তু তপেস বিয়ে বাড়িতে এখন পৌঁছে নি৷ বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়াকে লগ্নবষ্টা হওয়া থেকে কে বাঁচাবে?

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here