অদ্ভুত_নেশা,পর্ব_১১
অধির_রায়
২৫.
ছোঁয়া কলেজে প্রবেশ করতে তার উপরের গোলাপের পাপড়ি পড়তে শুরু করে। ছোঁয়া নিজেকে এখানকার বিএইপি লোক ভাবতে শুরু করে। দু হাত দিয়ে কিছু ফুল নিজের হাতে নিয়ে নেয়৷
কিন্তু প্রশ্ন হলো এই কাজ কে করতে পারে?ছোঁয়া কি ভুল করে ঢুকে পড়েছে৷ সেটা ভেবে পা পিছিয়ে নিতে নিলেই সকলে বলে উঠে এই ব্যবস্থা ছোঁয়ার জন্য।সাথে সাথে কিছু লোক সামান থেকে সরে দাঁড়ায় সেখানে গাধা ফুল দিয়ে লেখা আছে পাপড়ির তৈরি রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসো।
ছোঁয়া দ্বিধায় পড়ে যায়।সে যাবে কি না যাবে না? কিন্তু কিসের রহস্য এটা জানার জন্য ছোঁয়া গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সকলে ছোঁয়াকে হাত তালি দিয়ে ভাহবা জানাচ্ছে।
ছোঁয়া গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে কলেজের ভিতরে বট তলায় দিয়ে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে দুজন ছেলে সাদা সিল্কের কাপড় দিয়ে রাস্তার পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া সেখানে যেতেই সাদা সিল্কের পর্দা সরিয়ে ফেলে।
সাদা সিল্কের পর্দা সরিয়ে ফেলার সাথে সাথে প্রার্থ হাঁটু গেরে বসে পড়ে ছোঁয়ার সামনে৷ হাতে একটা হলুদ গোলাপ নিয়ে
— Do you merry me?
ছোঁয়া কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছে৷ সে ভাবছে সে এই সব স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এসব স্বপ্ন নয়।
— কি হলো ছোঁয়া এক্সেপ্ট কর?(চারিদিক থেকে বলে উঠল)
ছোঁয়া প্রার্থের হাত থেকে গোলাপ নেওয়ার সাথে সাথে সকলে খুব ভাহবা দিতে লাগল।কিন্তু সব ভাহবা ছোঁয়ার গায়ে কাটার মতো লাগে৷ ছোঁয়া প্রার্থের হাত ধরে দাঁড় করিয়ে গোলাপ ফুল পায়ে পিশে ফেলে।
এই ঘটনা দেখে সবাই অভাগ। এত সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেকে কেউ রিজেক্ট করেছে এটা দেখে। প্রার্থের চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে মাটিতে।
ছোঁয়া প্রার্থের গালে দুই টা থাপ্পড় দিয়ে
— তোর কি মনে হয় গতকাল তোর সাথে ভালোভাবে কথা বলেছি বলে তোকে ভালোবাসে ফেলেছি৷
— ছোঁয়া আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবাসে ফেলেছি৷
— তাহলে এটা বল আমি কত নাম্বার সিরিয়ালে আছি৷ এই কথা তুই কত জনকে বলেছিস প্লে বয়।
প্লে বয় কথাটা শুনে প্রার্থ কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তবে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে
— কি বলছো ছোঁয়া এসব?
— আমি তোর বিষয়ে আরও ২ মাস আগে জেনেছি৷ তুই যেদিন মিরা রিজেক্ট করে দিয়েছি তখনই সব জানি।
–কোন মিরা? আমি মিরা নামে কাউকে চিনি না৷
— মিরা আর কেউ না৷ মিরা আমারই মামুর মেয়ে ছিল৷ যাকে তুই তোর ভালোবাসার মায়াজালে ফাঁসিয়ে তার সর্বত্র কেড়ে নিয়ে তাকে তুই অস্বীকার করেছিলি৷
— ছোঁয়া আমাকে বিশ্বাস কর?
ছোঁয়া প্রার্থের কথা না শুনে প্রার্থকে আরও একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
— তোর অপবিত্র মুখে তুই আমার নাম নিবি না৷
— বিশ্বাস কর এরপর থেকে আমি কোন খারাপ কাজ করব না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি।
— তুই জানিস তোকে কেন মানুষ ভালোবাসতে চায়৷ তোর টাকা দেখে। তোর মতো হুনুমান খাটো ছেলেকে ছোঁয়া কোনদিন ভালোবাসবে না৷ যা এখান থেকে৷ আর এটা মনে রাখিস মিরার মৃত্যুর শাস্তি তোকে আমি দিব৷
ছোঁয়া কিছু না বলে ক্লাসে চলে যায়।ক্লাস শেষ করে ছোঁয়া আর রিয়া মনের সুখে ফোসকা খাচ্ছে। সাধারণ ভারতবর্ষে সকল মেয়েদের ফোসকা সব চেয়ে প্রিয় খাবার৷
ছোঁয়া ফোসকা খাওয়া শেষ হতেই প্রার্থ ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে কলেজের বাহিরে৷
— তোর সাহস কম নয়। তুই আমাকে টার্চ করিস?
— তোকে আবার বলছি ভালোই ভালোই আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট কর?
— তোর মতো প্লে বয়কে কোন দিন না৷
— এখনও বলছি আমার কথা মেনে নে৷
ছোঁয়া আবারও প্রার্থের গালে ঠাস ঠাস করে বসিয়ে দিল।
— তোর এই সুন্দর চেহারা নিয়ে খুব অহংকার তাই তো?
— তুই যদি আর এক বার আমার সামনে আসিস তোকে মেরে ফেলতে আমার হাত দ্বিধা বোধ করবে না।
প্রার্থ একটা অ্যাসিডের বোতল নিয়ে এসে এটা হলো এসিড৷ আজ তোর এই সৌন্দর্য হারাতে হবে৷
ছোঁয়া এই সময়ও ধৈর্য হারিয়ে ফেলেনি৷ ছোঁয়া খুব বুদ্ধি খাটিয়ে এসিডের বোতলে লাথি দেয়৷ যার ফলে এসিড প্রার্থের মুখে ছিঁড়ে যায়।
— তোদের মতো ছেলেদের এমনই হওয়া উচিত।
প্রার্থ নিজের মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করতে করতে রাস্তায় ভিতরে চলে আসে৷ রাস্তা দিয়ে বার বার বয়ে যাচ্ছে বড় বড় গাড়ি৷ প্রার্থ রাস্তার ভিতরে আসার সাথে সাথে মালবাহী ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায়। যার ফলে প্রার্থের সমস্ত দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। প্রার্থ সেখানেই তার কর্মের শাস্তি পায়।
২৬.
বর্তমান।
— এটা প্রার্থের ছবি৷(ছোঁয়া)
— হ্যা এটা প্রার্থ। (তপেস)
— এর মতো লোক দুনিয়াতে নেই বলে আজ আজ অনেক মেয়ে দুনিয়াতে ঠিক ভাবে বেঁচে আছে৷ এটা বললে ভুল হবে। এখন তো তুই আছিস সেই প্রার্থের মতো।
— প্রার্থকে তুই মেরে ফেলেছিলি। জানিস প্রার্থ আমার কি হয়৷
— মুখ সামলে কথা বলবি। তোর প্রার্থকে আমি কেন মারতে যাব? প্রার্থের মতো লোকদের বেঁচে থাকার কোন রাইট নেই।
তপেস ছোঁয়ার গাল চেপে ধরে প্রার্থ আর কেউ না আমার দাদা হয়৷ তুই আমার দাদাকে মেরে ফেলেছিস। তোকে আমি ছাড়বো না৷
ছোঁয়ার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। গলা চেপে ধরায় মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না৷ ছোঁয়ার চোখ পড়ে হাতের কাছে ট্রি টেবিলে রাখা ফুলের টপের উপর৷ ছোঁয়া ফুলের টপটা খুব কষ্ট নেয়।
ছোঁয়া ফুলের টপ নেওয়ার পর নিজেকে তপেসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তপেসের মাথায় খুব জোরে বারি মারে। যার ফলে তপেস ছোয়ার গলা ছেড়ে দিয়ে নিজের নাথায় হাত দেয়৷ ছোঁয়া এই সুযোগে তপেসের মাথায় আরও একটা বারি মারে যার ফলে তপেস ফ্লোরে পড়ে যায়।
— তোর কি মনে হয় প্রার্থ কোন অন্যায় করেনি৷ প্রার্থের জন্য আজ আমার মামুর চোখে জল আসে৷ আজও মাঝ রাতে মিরা মিরা বলে কেঁদে উঠে। তোদের দুই ভাইয়ের মাঝে কারো বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই৷
তপেস ঝাপসা চোখে শুধু ছোঁয়াকে দেখে যাচ্ছে। ছোঁয়া কোব কথা তপেসের কর্ণধারে পৌঁছে না৷ ধীরে ধীরে তপেস জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ছোঁয়া তপেসকে সেখানে রেখেই চলে আসে। ছোঁয়া রুমে এসেই ফ্রেস হতে চলে যায়।প্রায় এক ঘন্টা সময় নিয়ে শাওয়ার নেয়। তার মাথায় কিছু ঢুকতে পারছে না। অতীত তার চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে৷ যাকে সে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসত সেই আজ তার বড় শত্রুর ভাই৷
তপেসের দাদা প্রার্থ আমার বনুর জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। আর তপেস এতদিন আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। কিছুতেই আমি তপেসকে ছাড়বো না৷
পরিবারের কেউ যেন কিছু জানতে না পারে সেজন্য ছোঁয়া রাতে সবার সাথে বসে ডিনার করে। কিছু খেতে মন চাচ্ছে না। সব কিছু ছোঁয়া নষ্ট করছে। এমন ভাব করলে সবাই বুঝে ফেলতে পারে সে জন্য ছোঁয়া হালকা কিছু খেয়ে চলে আসে৷
রাতে ছোঁয়া কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। চোখের নোনা জলের কুনিশ লেগে আছে কপোলযা দেখে অধিরে খুব কষ্ট হচ্ছে। কেন হচ্ছে জানা নেই৷ অধির ছোঁয়াকে ছড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
ছোঁয়া মাঝ রাতে জেগে উঠে। তার গা জ্বরের কারণে পুরে যাচ্ছে। সে আজ নিজে থেকে অধিরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
অধির ছোঁয়াকে ছড়িয়ে ধরে।কিন্তু কিছুতেই ছোঁয়ার জ্বর কমছে না৷ অধির নিজের গায়ের পোশাক খোলে ছোঁয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷
ছোঁয়া অধিরের লোমযুক্ত মুখে মুখ লুকিয়ে রয়েছে। তার কাছে আজ অধিরের বুকটা সব চেয়ে নিরাপদ মনে হচ্ছে।
কিছুতেই ছোঁয়ার গা থেকে জ্বর নামছে না৷ জ্বর কমানোর জন্য অধির ছোঁয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়৷ ঘুমের ঘোরে থাকার জন্য ছোঁয়াও অধিরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
সারা শরীর ব্যথার জন্য কিছুতেই ছোঁয়া উঠতে পারছে না৷ ছোঁয়া নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে আজও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু আজ তার শরীর প্রচন্ড ব্যথা করছে।
ছোঁয়া কষ্ট করে নিজেকে কন্ট্রোল করে শাওয়ার নিয়ে রোমে আসে৷
আবার আগের মতো চিরকুট। চিরকুট খোলে দেখে
প্রিয়❤
ট্রি টেবিলের উপর দুধ রাখা আছে। সব টুকু দুধ খেয়ে নিবে৷ তোমার পড়ার টেবিলে মেডিসিন রাখা আছে সে গুলো খেয়ে নাও ব্যাটার ফিল করবে৷ হ্যাঁ আমার কথার এপিট ওপিট করার চেষ্টা করবে না৷ যা বলছি তাই কর সুইটহার্ট।
ইতি
তোমার
অধির🖤
ছোঁয়া রেগে সেই চিরকুটটা পুরিয়ে ফেলে। মেডিসিন গুলো ফেলে দেয়৷
তোর কি মনে হয়৷ আমি তোর কথাতে হাঁটবো। তুই আমার দেহের উপর তোর চাহিদা মেটানো৷ দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি।
ছোঁয়ার রাগ আরও বেড়ে যায় অধীরের উপর৷ ছোঁয়া অধীরকে আরও ঘৃণা করতে শুরু করে।
চলবে….