অদ্ভুত_নেশা,পর্ব_০৮
অধির_রায়
১৬.
সিদ্ধার্থ অদ্ভুত লোকটির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে হঠাৎ করে কোন মা তার ছেলেকে কুড়ি বছর পর ফিরে পেয়েছে।
— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? (অদ্ভুত লোকটি / অধির)
— সিদ্ধার্থ আমতা করে করে তোমার নাম অধির না৷
— হুম। কিন্তু তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন?
— তোমার মৃত্যু ৪ বছর আগে হয়েছে। তাহলে তুমি এখানে আসলে কিভাবে?
— আমার মৃত্যু হয়েছে কি বলছো তুমি? বমি তো এখনও জীবিত তোমার সামনে স শরীরে দাঁড়িয়ে আছি৷
— তোমার সৎকার করা হয়েছে আমাদের সামনে। এটা কিভাবে সম্ভব।
তোমাকে কিভাবে বুঝাব আমার আবার পুঃজন্ম হয়েছে? আমি এমনি এমনি মারা যায়নি৷ আমাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। ভালোবাসার টানে মহাদেব আমাকে আবার ছোঁয়ার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে৷ (মনে মনে)
— কি ভাবছ? অধিরের দেহ স্পর্শ করে।
অধিরের দেহ স্পর্শ করে নিজেই কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। অধিরের দেহ প্রচুর ঠান্ডা। যেমনটা মৃত মানুষের দেহ ঠান্ডা থাকে৷ অধির ব্যাপারটা বুঝতে পেয়ে
— কি হলো?
— কই কিছু না? নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে৷
— এখানে কেন এসেছ?
ছোঁয়া কথা মনে পড়তেই সিদ্ধার্থের চোখ থেকে দু ফোঁটা জল কপোলে বেয়ে পড়ে যায়। এটাই মনে হয় ভাই বোনের ভালোবাসা। ভাই বোনের ভালোবাসা পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র ভালোবাসা।
— এভাবে চোখের জল ফেলছে কেন? সব ঠিক হয়ে যাবে৷
— চিন্তা কর না৷ ছোঁয়ার কিছু হতে দিব না৷
— তুমি ছোঁয়াকে চিন?
— ছোঁয়াকে না চিনার কি আছে? ছোঁয়ার জন্যই তো আমার আবার ফিরে আসা।
— ছোঁয়ার জন্য ফিরে আসা মানে কি?
— তেমন কিছু না। এখন ছোঁয়ার কন্ডিশন কেমন?
কিছুতেই সিদ্ধার্থকে বুঝতে দেওয়া যাবে না৷ আমি কেন এখানে এসেছি? তাহলে আমার পুঃজন্ম ব্যর্থ হয়ে যাবে৷ এবার কিছুতেই আমার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে দিব না৷ মহাদেব যে কারণে আমাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করবই।
— ছোঁয়ার কন্ডিশন তেমন ভালো না৷ ডাক্তার বলেছে ছোঁয়ার অনেক টেস্ট করাতে হবে।
— তাহলে করাচ্ছ না কেন?
— কিন্তু
— কিন্তু কি?
— ছোঁয়ার দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণের জন্য সমস্যা হতে পারে।
— ছোঁয়ার কোব সমস্যা হবে না৷ যা করার আমি করব।
— তুমি করবে মানে?
— হ্যাঁ আমি করব।
— কিন্তু ছোঁয়ার লাইফ রিক্স আছে!
— ছোঁয়ার কিছু হতে দিব না৷ ডাক্তারের সাথে আমার কথা বলিয়ে দাও৷
সিদ্ধার্থ অধিরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসে৷সিদ্ধার্থ ডাক্তারকে কিছু বলতে নিবে তখনই অধির সিদ্ধার্থকে থামিয়ে দেয়।
— তুমি বাহিরে যাও৷ আমি কথা বলে নিচ্ছি ছোঁয়ার বিষয়ে। (অধির)
— ওকে
সিদ্ধার্থ কেবিন থেকে বাহিরে চলে আসে। তবুও একটা দুর্বলতা কাজ করে৷ অধিরকে তেমন চিনি না। কিভাবে এতটা ভরসা করব। সেই কলেজে তার সাথে দেখা হয়েছিল। সে তো মারাও গিয়েছিল। কিভাবে ফিরে আসলো। হাজার টা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আসে সিদ্ধার্থ।
না এখানে বসে থাকলে হবে না৷ তার থেকে ভালো আমি মন্দিরে ছোঁয়ার জন্য পূজা দিয়ে আসি৷ এখনই মা বাবা চলে আসবে। ছোঁয়ার কোন সমস্যা হবে না৷
সিদ্ধার্থ আর দেরি না করে হসপিটালের পাশে একটা চেনা মন্দিরে পূজার দিতে চলে যায় ছোঁয়ার জন্য।সিদ্ধার্থ কোনদিন পূজা বিশ্বাস করতো না। কিন্তু তার বোন ছোঁয়ার জন্য এটা করতে পারে৷ ছোঁয়া মনে প্রাণে এসব বিশ্বাস করে।
১৭.
— কে তুমি?
— আমি ছোঁয়ার হাসবেন্ড। (অধির)
— কি বলছো তুমি? ছোঁয়ার তো বিয়েই হয়নি৷
— আমি বলতে চেয়েছি আমার ছোঁয়ার হবু হাসবেন্ড।
— ও আচ্ছা।
— ছোঁয়ার যা টেস্ট করা লাগে সব করে ফেলেন।
— এখন তো ছোঁয়ার লাইফ রিক্স আছে?
— ছোঁয়ার কিছু হবে না৷
— তুমি কি ডাক্তার? তুমি এসব কিছু জানো না।
— আমি ডাক্তার নয় ঠিকই৷ কিন্তু আমি আপনার থেকে বেশি কিছু করতে পারি৷
— হোয়াইট?
— আশ্চর্য হওয়ার কারণ নেই৷ আমার পরিচয় জানার পর আমার থেকে ভয় পাবেন না।
— আমি ডাক্তার। আমি কোন কিছুতেই ভয় পায় না৷
— ডাক্তাররা শুধু চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভয় পায় না৷ কিন্তু তাদের জীবন হঠাৎ করে কেউ চলে আসলে।
— কি বলতে চাও?
— বলতে চেয়েছি সত্য যুগের কাহিনি যদি এই কলি যুগে ঘটে।
— পাগল হলে নাকি৷ সত্য যুগের কাহিনি কিভাবে কলি যুগে ঘটবে৷ আর আমি সত্য যুগের কিছু বিশ্বাস করি না৷
— কেন?
— কারণ আমার সামনে কোনদিন তেমন কিছু ঘটে নি৷
— যদি এখন ঘটে
— হাস্যকর?এখন কিভাবে ঘটবে?
— কথা দেন। এমন কিছু আপনার সামনে আসলে আপনি ছোঁয়ার সব টেস্ট নিতে রাজি হবেন।
— হুম। আমি কথা দিচ্ছি। এমন কিছু সত্য আমার সামনে তুলে ধরতে পারলে আমি ছোঁয়ার সব টেস্টের ব্যবস্থা করব।
অধির মুচকি হেঁসে ডাক্তারের সামনে উধাও হয়ে যায়। ডাক্তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কিভাবে হলো। কোব কালতালিও নয় তো।
— এটা কোন কালতালিও না।
শূন্যে আওয়াজ ভেসে আসার জন্য ডাক্তার ভয়ে কাবু হয়ে যায়। সে এখন কি করবে? কিভাবে তার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে৷ যদি তার কোন ক্ষতি করে দেয়৷ ভয়ে কাঁপতে থাকে৷ কিন্তু এখনও হাল ছাড়েনি৷
–তুমি আমার সাথে মিজিক করছ?
— এটা কোন মিজিক না ডাক্তার। এখন আপনি যদি আপনার কথায় রাজি না থাকেন আমি আপনার সেই হাল করবো যেটা যেটা আমার ছোঁয়ার করা হয়েছে।
— আমি তোমার সব শর্তে রাজি৷ প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করো না৷
— আপনার কোন ক্ষতি হবে না৷
— তাহলে তুমি প্লিজ সশরীরে আমার সামনে আসো৷
অধির এবার সশরীরে ডাক্তারের সামনে আসে৷
— ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই আঙ্কেল। আপনি যেমন ছোঁয়ার আঙ্কেল লাগেন৷ তেমনি আমারও আঙ্কেল। আপনি শুধু ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরিয়ে দেন৷ তার পর তাকে সুস্থ করার দায়িত্ব আমার৷
— তুমি তাকে কিভাবে সুস্থ করবে?
— আমি কোন সাধারণ মানুষ নয়৷ তাঁকে সুস্থ করতে আমার তেমন সময় লাগবে না৷
–ওঁকে। তুমি যা বলবে তাই হবে।
— সময় নষ্ট না করে তারাতাড়ি কাজ করেন। আমি ছোঁয়াকে সব জায়গায় পৌঁছে দিব৷ কেউ কিছু জানতে পারবে না। নার্সরা শুধু ছোঁয়ার দেহ নিয়ে যেতে পারবে। আসলে ছোঁয়াকে আমি নিয়ে যাব।
— যেমনটা বলবে তেমনই হবে৷
ডাক্তার আর অধির ছোঁয়ার কেবিনে প্রবেশ করে। ছোঁয়াকে মরার মতো শুয়ে থাকতে দেখে অধিরের চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। অধির কষ্টে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে। অধির কিছুতেই তপেসকে ছাড়বে না৷ যেভাবে তার ছোঁয়াকে মারার চেষ্টা করেছে ঠিক একই ভাবে তপেসকে অধির মারবে।
১৮.
ছোঁয়ার মা বাবা এতক্ষণে হসপিটালে এসে পরেছে। ছোঁয়ার এমন কন্ডিশন দেখে ছোঁয়ার মাযের অব্স্থা আরও খারাপ হয়ে পড়েছে৷ সন্তানের বিপদ হলে মা ঠিক থাকতে পারে না৷ এটাই হলো নাড়ির টান৷
— আন্টি নিজেকে সামলান। আপনি যদি ভেঙে পড়েন তাহলে ছোঁয়ার কি হবে? আপনি তো ছোঁয়াকে সাহস জোগাবেন।(রিয়া)
— ছোঁয়া ঠিক হয়ে যাবে তো?
–হুম আন্টি কোন চিন্তা করবেন না ছোঁয়া ঠিক হয়ে যাবে৷
— ডাক্তারকে বলে আমাকে একবার ছোঁয়ার কাছে নিয়ে যাও।
— ডাক্তার বলল ছোঁয়ার কিছু টেস্ট করাচ্ছে। তার পর ছোঁয়ার সাথে দেখা করতে পারবেন৷
_______________
ডাক্তার অধিরের সাহায্যে ছোঁয়ার সব কিছু টেস্ট করিয়ে নেয়৷ টেস্ট দেখে ডাক্তার বলে
— এখনই ছোঁয়ার মাথায় একটা অপারেশন করাতে হবে৷
— কেন?(অধির)
— ছোঁয়ার সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার সময় মাথায় প্রচুর আঘাত পায় সাথে ঘাড়েও আঘাত পায়৷ তার ঘাড়ের একটা শিরা অনেকটা টান পড়ে আছে। যার কারণে ছোঁয়ার মাথা এখন বেকা হয়ে আছে।
— এতে ছোঁয়ার কোন ক্ষতি হবে না।
— সিউর বলতে পারি না৷ এখনই এই আপারেশ করতে না পারলে ছোঁয়ার ঘাড় আর কোনদিন সোজা হবে না৷
— আমি আপনাকে অনুমতি দিলাম। কিন্তু?
— কিন্তু কি?
— ছোঁয়ার মা বাহিরে আছে তাঁকে কিছু বলে আসেন।
–ওঁকে।
ডাক্তার ছোঁয়ার ব্যাপারে ছোঁয়ার মাকে অনেক কিছু বলে। এখন ছোঁয়ার একটা অপারেশন দরকার অনুমতি জানতে এসেছে ডাক্তার।
— আপনি যদি অনুমতি দেন। আমি এখনই ছোঁয়ার অপারেশন করতে পারি।
ছোঁয়ার মা অপারেশনের কথা শুনে একটা ঘুরে চলে যান৷ কোন কথা বলছে না৷ শুধু তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।
— আপনি অপারেশন শুরু করে দেন৷ ছোঁয়ার বাবা।
— আপনারা বন্ডে সাইন করে দেন৷ আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি৷
— ওকে। (ছোঁয়ার বাব)
–
–
–
অপারেশনের পর ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরছে না৷ ডাক্তার বলে দিয়েছে ১ ঘন্টার মাঝে ছোঁয়ার জ্ঞান না ফিরলে ছোঁয়া কোমায় চলে যাবে৷
চলবে,,
ব আকার ল গল্প একটা