অদ্ভুত_নেশা,পর্ব_০৭
অধির_রায়
ছোঁয়া পা বাড়াতেই তপেস ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলে।
— কি হলো আবার?
তপেস চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই৷ একেবারে নির্জন।
— সিদ্ধার্থ কোথায়? কিছুটা সন্দেহের সাথে বল?
— ছাঁদে।আর আমি সামনে থেকে ছাঁদের দ্বার বন্ধ করে দিয়েছি।
তুমি আমার কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছো ছোঁয়া। তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব জানা নেই৷(মনে মনে তপেস বলে যাচ্ছে)
— কি হলো কি ভাবছেন?
— ওকে তুমি এখন যেতে পার আমি ছাঁদে যাব।
— এই না। আপনি আমার সাথে নিচে আসেন?
— তাহলে তুমি আগে পা বাড়াও?
ছোঁয়া সিঁড়িতে পা রাখতেই তপেস ছোঁয়াকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়৷ যার ফলে ছোঁয়া সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে ছোঁয়ার মাথা বারি খায়৷ যার ফলে মাঝ সিঁড়িতে ছোঁয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
তপেস ছোঁয়ার বুকে হাত দিয়ে দেখে ছোঁয়ার হৃদপিণ্ড নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ শয়তানি হাসি দিয়ে কেউ দেখার আগেই তপেস সেখান থেকে চলে যায়।
ছোঁয়ার চিৎকারের শব্দ শুনে ছোঁয়ার মা বাবা ছোঁয়ার কাছে দৌড়ে এসে। এসে দেখে ছোঁয়া রক্তাক্ত অবস্থা ফ্লোরে পড়ে আছে৷ ছোঁয়ার এমন অবস্থা দেখে ছোঁয়ার মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ছোঁয়ার মা রক্ত দেখতে পারে না৷ ( যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় এক প্রকার রোগ বলে)
ছোঁয়ার চিৎকার সিদ্ধার্থদের কানেও পৌঁছে। কিন্তু তারা নিচে নামবে কিভাবে? তাদেরকে সামনে থেকে ছোঁয়া দ্বার বন্ধ করে দিয়েছে৷
— এখন আমরা নিচে যাব কিভাবে?(রিয়া)
— ছোঁয়া এভাবে চিৎকার করল কোন? ছোঁয়ার কিছু হয়নি তো?
— আমার মনে হয় ছোঁয়া মনে হয় সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে৷
— না কি বলছো এসব?
— হুম নিচ থেকে এমন শব্দই আসছে৷
— আমাকে এখনই নিচে যেতে হবে৷
— কিভাবে নিচে যাবেন?
— আমি নিচে যেতে পারব। তুমি চিন্তা কর না আমি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব।
সিদ্ধার্থ আর কিছু না ভেবে ছাঁদ থেকে গাছ বেয়ে নিচে নামে৷ দৌড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে৷ এসে দেখে তার মা জ্ঞান হারিয়ে অন্য পাশে পড়ে আছে৷ ছোঁয়া এক পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে৷ সিদ্ধার্থ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না৷
সিদ্ধার্থ কিছু আর না ভেবে দৌড়ে একটা কাপড় নিয়ে এসে ছোঁয়ার মাথা বেঁধে ফেলে। যার ফলে মাথা থেকে রক্ত জ্বরতে না পারে৷ মার আগে ছোঁয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ কিন্তু মাকে এভাবে একা ফেলে যাব কিভাবে?
হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় রিয়ার কথা৷ সিদ্ধার্থ দৌড়ে রিয়ার সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে যায়। ছাঁদের দ্বার খোলে,
— রিয়া নিচে মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। প্লিজ তুমি মার খেয়াল রেখো৷
সিদ্ধার্থ কি বলে গেছে এত তারাতাড়ি যার কোন কিছুই রিয়ার মাথায় ঢুকল না৷ রিয়া পিছন থেকে সিদ্ধার্থকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু সিদ্ধার্থ তার কথার কোন রিপ্লাই না দিয়ে সে নিচে চলে আসে।
সিদ্ধার্থ নিচে এসেই ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে।
মা আমি জানি তোমার কিছু হবে না৷ এখন তোমার থেকে আমার বোন বড়৷ তুমি ছোঁয়ার এমন অবস্থা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছ। রিয়া তোমার জ্ঞান না ফেরার আগ পর্যন্ত এখানে থাকবে৷ এটা আমার ভালোবাসার দৃঢ় বিশ্বাস।
সিদ্ধার্থ তার মাকে এমনেই ফেলে যায়নি৷ সে তার মায়ের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেছে৷ সেও তার মায়ের চোখে মুখে জলের ছিঁটা দিয়েছে। কিন্তু ফিরাতে পারেনি।
সিদ্ধার্থ আর কিছু না ভেবে ছোঁয়া নিয়ে হসপিটালে চলে যায়।
রিয়া ভাবনার মাঝে ঢুব দিয়ে অন্য মনস্ক হয়ে নিচে নামছে৷ সে ভাবছে সিদ্ধার্থ তাকে কি বলল? আমি তার কথার কোন রহস্য বুঝতে পারছি না৷ কিন্তু রিয়া সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে চিৎকার দিয়ে উঠে৷
–আন্টি📣
রিয়া দৌড়ে ছোঁয়ার মায়ের কাছে আসে। এসে দেখে ছোঁয়ার মায়ের কোন রেসপন্স নেই৷ কোথায়ও আঘাতের দাগ দেখতে পাচ্ছে না৷ কিন্তু ফ্লোরে এত রক্ত আসলো কোথায় থেকে।
রিয়া ছোঁয়ার মায়ের হাত ঘষতে থাকে। কারণ ঘর্ষণের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। এর ফলে দেহের রক্ত চলাচল আগের তুললায় বৃদ্ধি পায়৷
রিয়া কিছু সময় পর সফল হয় ছোঁয়ার মার জ্ঞান ফিরাতে।
–আমার ছোঁয়া কোথায়? কান্না করতে করতে বলে।
— আন্টি আপনার কি হয়েছে এভাবে কান্না করছেন কেন?
— আগে বলো আমার ছোঁয়া কোথায়?
— আমি এখানে শুধু আপনাকে দেখতে পেলাম। ছোঁয়াকে দেখতে পায়নি৷ ছোঁয়া কোথায় জানা নেই৷ প্লিজ আন্টি চোখের জল মুছেন।
–আমার ছোঁয়াকে আমার কাছে এনে দাও।
কান্না করতে করতে ছোঁয়ার মা আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ রিয়া অনেক কষ্টে ছোঁয়ার মাকে রুমে নিয়ে আসে৷
রিয়া এখন কাকে ফোন করবে ছোঁয়াকে নাকি ছোঁয়ার বাবাকে৷ রিয়ার মাথায় কিছুই ঢুকছে না৷ অবশেষে রিয়া ছোঁয়ার বাবাকে ফোন দেয়৷
–রিয়া বল। (ছোঁয়ার বাবা)
— আঙ্কেল আপনি প্লিজ তারাতাড়ি বাসায় আসেন৷ দরকার আছে৷
রিয়া এই মুর্হুতে খারাপ খবর দিল না৷ জানে হঠাৎ করে এই দূঃসংবাদ দিলে এর বিপরীত হতে পারে৷ এজন্য রিয়া ফোন কেটে দেয়৷
১৫.
সিদ্ধার্থ অনেক জোরে গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ তবুও গাড়ি যেন পিছিয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধার্থের এক কাঁধে তার বোন অন্য কাঁধে তার বোনকে হারানোর বেদনা৷
সিদ্ধার্থ হসপিটালে ছোঁয়াকে কোলে করে নিয়ে আসে৷ ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করতে থাকে৷ সিদ্ধার্থের চিৎকার শুনে অনেক ডাক্তার এসে পড়ে৷ [বড়লোকদের জন্য সব সময় সব কিছু তৈরি থাকে।]
— ডাক্তার আঙ্কেল ছোঁয়াকে বাঁচান৷
— নার্স ছোঁয়াকে এখনই ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাও (ডাক্তার)
নার্সরা যত তারাতাড়ি পারে ছোঁয়াকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায়৷ রক্ত মাখা সিদ্ধার্থ করিডোর বসে ছোঁয়ার জন্য প্রার্থনা করছে৷
কিছু সময় পর ডাক্তার বের হলো,
— ডাক্তার ছোঁয়া ঠিক আছে তো? টলমল চোখে
— ডাক্তার মুখ কালো করে বলে আসলে আমরা ডাক্তার তোমার কাছে কিছু লুকাতে চায় না৷
— আসলে কি? আর কি লুকাতে চান না? আমি আপনার পায়ে পড়ি আমার বোনকে ঠিক করে দেন৷
— সিদ্ধার্থ সব কিছু বিধাতার হাতে৷ ছোঁয়া মাথায় প্রচুর আঘাত পেয়েছে৷ তার মাথার অনেক টেস্ট করাতে হবে৷ কিন্তু তার যা কন্ডিশন। এই কন্ডিশনে তাকে এসব টেস্ট করালে এর বিপরীত হতে পারে।
— ডাক্তার আপনারা টাকার চিন্তা করবেন না৷ আমি সব ব্যবস্থা করবো৷
— বুঝার চেষ্টা কর? প্রচুর রক্তক্ষরণে তার দেহের এসব সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। একটা কথা বলো তো এসব কাজ কিভাবে হলো?
— ছোঁয়া সিঁড়ি থেকে পা স্লিপ করে পড়ে গিয়েছে৷
— চিন্তা কর না৷ ছোঁয়ার কিছু হবে না৷ বাসায় সবাইকে জানিয়ে দাও ছোঁয়া ঠিক আছে৷
–
–
–
ছোঁয়ার বাবা বাড়িতে এসে এসব দেখে অভাগ। রিয়া ছোঁয়ার বাবাকে ছোঁয়ার বিষয়ে কোন খবর দিতে পারছে না৷ ছোঁয়ার মা জ্ঞান ফিরার পর থেকে কান্না করেই যাচ্ছে।এমন সময় সিদ্ধার্থের ফোন আসে ছোঁয়ার মায়ের ফোনে।
— হ্যালো মা,, তুমি ঠিক আছো তো।
— সিদ্ধার্থের কথা শুনে তার মা আরও কান্না শুরু করে দেয়৷ কিছু বলতে পারছে না৷
রিয়া সিদ্ধার্থের মায়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে
— এখন আন্টি ঠিক আছে?কিন্তু ছোঁয়াকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না৷
— ছোঁয়া এখন ঠিক আছে৷ ছোঁয়াকে নিয়ে আমি “জতীয় বিজ্ঞান ” হসপিটালের নিয়ে এসেছি৷
ছোঁয়ার নাম শুনে সিদ্ধার্থের মায়ের মুখে কথা আসে৷
— আমার ছোঁয়া ঠিক আছে?
— হুম মা ছোঁয়া ঠিক আছে৷
সিদ্ধার্থ আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। এমন সময় সিদ্ধার্থের কোন কথা বের হচ্ছে না৷ হতাশ হয়ে চোখের জল মুছে করিডোর বসে আসে৷
হঠাৎ সিদ্ধার্থ মাথায় কারো হাতের ছোঁয়া পেল। কিন্তু তাকে সিদ্ধার্থ দেখতে পাচ্ছে না৷ অথচ শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধার্থ ভয় পেয়ে চিৎকার করতে নিলেই,,
— ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না৷ তুমি শান্ত হয়ে বসো।
— আপনি কে? ভয়ে ভয়ে কথা বলে সিদ্ধার্থ।
— আমি সশরীরে আসছি ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷
সিদ্ধার্থ অদ্ভুত লোকটিকে দেখে খুব অবাক।
চলবে,,,